প্রিয়ঃ_আপডেট পর্ব ৮
মোর্শেদা রুবীঃ

-“কি হলো, কথার জবাব দিচ্ছো না কেন?”
শারদ পাঞ্জাবী খুলে সেটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।প্রিয়া নিরবে ওর হাত থেকে পাঞ্জাবীটা নিয়ে সেটা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে দিয়ে বললো-“রাতে চা টা খেতে ইচ্ছে করলে ঐ ফ্লাক্সটা থেকে নিয়ে খাবেন।আপনার জন্য বেশী করে চা বানিয়ে ফ্লাক্সে ভরে রেখে দিয়েছি।আপনি যেহেতু রাত জাগেন,তাই এখন থেকে চা এর জন্য আর কষ্ট করতে হবেনা!”
-“আমি কি তোমাকে চায়ের কথা জিজ্ঞেস করেছি?”
-“আপনি করেননি কিন্তু আমিই বলে রাখলাম।না বললে তো আপনি জানবেন না!”
-“প্রিয়া……!”
-“জ্বী…?”
-“আমি তোমাকে কিছু একটা জিজ্ঞেস করেছিলাম।”দুহাত কোমড়ে রেখে ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে শারদ।
প্রিয়া মুখ নিচু করে বললো-“এটা আমি এখন বলতে পারবো না!”
-“কেন?”শারদের কন্ঠ রূঢ় শোনালো!
-“কারনটা বলতে চাচ্ছি না,প্লিজ জোর করবেন না।”বলে প্রিয়া ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

সকালে টেবিলে নাস্তা দেয়া থাকা সত্ত্বেও শারদ খিদে নেই বলে অফিসের জন্য তৈরী হতে শুরু করলো।
প্রিয়া শারদের পিছু পিছু ঘরে এলো-“খিদে নেই মানে?আমি আপনার জন্য নাস্তা তৈরী করেছি,আপনি খাবেন না কেন?”
-“ইচ্ছে নেই তাই খাবো না!”
-“আপনি কি আমার ওপর রাগ করে আছেন?”
শারদ কোনো জবাব দিলো না, চুপচাপ টাই বাঁধতে লাগলো।প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৃদুষ্বরে বললো-“এসব ছেলেমানুষী কেন করছেন?”
-“এটা কোনো ছেলেমানুষী না!তুমি আমার কাছে কথা লুকাচ্ছো।কই আমি তো নীরার ব্যপারে কোনো কথা লুকাই নি!”

প্রিয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো-“আচ্ছা,ঠিকআছে।আপনি নাস্তাটা খেয়ে অফিসে যান।আপনি অফিস থেকে ফিরলে আপনাকে সব বলবো!”
শারদ টাই বেধে তার ঝুলন্ত অংশটা কাঁধের পেছনে ফেলে দিয়ে দু হাত কোমড়ে রেখে তাকালো-“অফিস থেকে ফিরলে বলবে তো?”
প্রিয়া মাথা নাড়লো-“ইনশাআল্লাহ্!”
-“হমম…..!”
শারদ টেবিলে এসে বসলো।প্রিয়া ওর দিকে নাস্তা এগিয়ে দিয়ে চা করতে রান্নাঘরে চলে গেলো।চুলায় চায়ের হাড়ি চড়িয়ে এসে দেখলো শারদ হাত গুটিয়ে বসে আছে।
-“কি হলো খাচ্ছেন না কেন?”
-“তুমি বসো এখানে!”
প্রিয়া যন্ত্রচালিতের মতো বসলো!
-“বসেছি,বলুন।”
-“একটা নামই তো,তাই না ! তা সেটা শুনতে বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে কেন!এখন বললেই বা সমস্যা কি! বলতে তো মাত্র দুমিনিট সময় লাগবে!”

প্রিয়ার ঠোঁটগুলো পরস্পরেরর উপর চেপে বসলো!কিছুটা চাপা ক্ষোভের সাথে বললো-“আমি বুঝতে পারছিনা,এই ছোট্ট একটা ব্যপারকে আপনি এতো সিরিয়াসলি কেন নিচ্ছেন!”
-“সিরিয়াস নয়?আমার বিয়ে করা বউ তার প্রথম প্রেমকে মনের ভেতর পুষে রেখে আমার সামনে ঘুরঘুর করবে,আমাকে নাস্তা খাওয়াবে।এটা আমি মেনে নিতে পারবোনা!”
-“ওহ্,আর একই কাজ আমি কিভাবে মেনে নেবো?”
-“পুরুষদের একই সঙ্গে চারজন বউ রাখার অনুমতি ইসলাম দিয়েছে আর তা নারীজাতির কল্যানার্থেই!তাই আমাদের মনটা বড় রাখতে হয়,বুঝলে?”শারদ হেসে ফেললো।
প্রিয়া হাসলো না!সে বললো-
-“কিন্তু চারজনকে স্বতন্ত্র সত্তা হিসেবে গন্য করার এবং তাদের মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার শর্তও সাথে বেঁধে দিয়েছে!নইলে একজনেই সন্তষ্ট থাকার কথাও বলে দিয়েছে! এটা ভুললে চলবে কেন?”
-“হ্যাঁ,তা দিয়েছে।কিন্তু আমি তো তোমার কোনো অমর্যাদা করিনি!”
-“আমার মাঝে নীরাকে খুঁজতে যাওয়া মানে আমার সত্তাকে বিলীন করে ফেলা!এটা আমার সাথে অন্যায় নয়?”
-“স্বীকার করছি,হয়তো আমার প্রকাশভঙ্গিটা ভুল ছিলো তাই বলে তুমি অন্যায় ভাবে বাইরের একটা লোককে মনের ভেতর পুষে রাখবে।তাকে ভাববে,ফিল করবে,মিস করবে এটা তো ইনটলারেবল!”
-“আমার প্রথম প্রেম মোটেও বাইরের কেউ নয়,সে আমার জীবনের একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ।তার আগে আমি কারো সাথে কখনো কোন সম্পর্কে জড়িত হইনি!”গড়গড় করে কথাগুলো বলেই প্রিয়া মুখ নামিয়ে নিলো!
শারদ অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো -“সে তাহলে কে?”
প্রিয়া চুপ করে রইলো!শারদ আবার বললো-“সেটা কি আমি….?”
প্রিয়া চা আনার ছুতোয় উঠে রান্না ঘরে চলে গেলো।শারদ কিছুক্ষণ একা আপনমনেই চিন্তা করলো।ওর ঠোঁটের কোণায় এবার হাসির রেখা ফুটে উঠলো।হাত বাড়িয়ে নাস্তার প্লেট টেনে নিয়ে নাস্তা করতে লাগলো।

প্রিয়া এসে চায়ের কাপটা সামনে দিয়েই দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো।শারদ কোনো কথা না বলে চায়ের কাপটা টেনে নিলো।
শারদ চুপচাপ অফিস চলে গেলে প্রিয়া যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।সারাদিন সংসারের নানা কাজে ব্যস্ত থেকে আর বাকিটা সময় প্রিয়কে নিয়ে পার করলেও প্রিয়ার মনে শারদ ফেরার পরের সময়টুকুর চিন্তা গেঁথে রইলো।শারদ কি বলবে এসে কে জানে।

দেখতে দেখতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো।প্রিয়কে ঘুম পাড়িয়ে ওর পাশ দিয়ে প্রিয়া নিজেও যে কখন ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেলোনা।ওর ঘুম ভাঙ্গলো চোখে মুখে হালকা পানির ছিটা লাগায়।চোখ খুলতেই দেখলো,শারদ ওর দিকে ঝুঁকে আছে।

প্রিয়া তাকাতেই ঠোঁটের উপর লম্বালম্বি করে আঙ্গুল দেখিয়ে বললো-
“শশশ…..শব্দ না করে উঠে পড়ো!”
প্রিয়া কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ উঠে বসলো।এসময় সাধারনত ও ঘুমায় না।আজ ঘুমিয়ে পড়ায় সবকিছু অন্যরকম লাগছে।শারদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
-“বেশ ভালোই ঘুম দিয়েছো দেখি।চোখটোখ একেবারে ফুলে আছে দেখছি !”
প্রিয়া মৃদু হেসে বিছানা ছাড়লো।
শারদ অফিসের পোষাক ছাড়েনি এখনো।প্রিয়া বললো-“আপনি আজ এতো তাড়াতাড়ি?”
-“তোমার জন্যে!”
-“মানে!”
-“দ্রুত তৈরী হয়ে নাও।তোমাকে নিয়ে বাইরে যাবো!”
-“কোথায়?”
-“গেলেই দেখতে পাবে!”
-“আসরের নামাজটা পড়ে নেই।কিন্তু…প্রিয় যাবেনা?”
-“আরে নাহ্।”চাপা কন্ঠে ধমক লাগালো শারদ।

প্রিয়া আর কথা না বাড়িয়ে নামাজ পড়ে দ্রুত তৈরী হয়ে নিলো।শারদ মৃদুস্বরে বললো-“একদিন বোরকা না পরলে হয় না?”
প্রিয়া চমকে তাকালো -“কি বললেন?”
-“না,মানে তুমি তো এমনিতেই শালীন ভাবে পোষাক পড়েছো!তাই ভাবলাম….!”
-“শালীনতা আর পর্দার মাঝে বিস্তর পার্থক্য।শালীনতার সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেক রকম।কারন স্লিভলেস জামার চেয়ে হাফহাতা জামা শালীন,আবার হাফহাতার চেয়ে ফুলহাতা শালীন।পর্দা এসবের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।পর্দার নির্দিষ্ট মানদন্ড আছে।দেশকাল পাত্রের বিচারে পর্দার সংজ্ঞা কখনোই বদলায় না!”
-“উফ্,খালি লেকচার।নাও এবার চলো!”
প্রিয়া শ্বাশুড়ীর সঙ্গে দেখা করে প্রিয়র ব্যপারে কয়েকটা নির্দেশনা দিয়ে শারদের পিছু পিছু বেরিয়ে এলো।সাজেদা ওদের দুজনকে একসাথে বাইরে যেতে দেখে খুব খুশী হলেন।

শারদ একটা ট্যাক্সি ক্যাব নিলো।গাড়ী চলতে শুরু করলে শারদ হঠাৎ বললো,তোমাকে আমার এক ঘনিষ্ট বন্ধুর বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছি!আমার এই বন্ধুটা কিছুদিন হলো দেশে ফিরেছে।বিয়ে করেছি শুনে ধরলো তোমাকে ওর বাড়ীতে নিয়ে যেতে।”
-“কিন্তু…..আপনার কোনো বন্ধুর সামনে আমি যেতে চাচ্ছিলাম না।আগে জানলে আমি আপনাকে নিষেধ করতাম!”
-“আরে ওর ওয়াইফ আছে সেখানে, বাচ্চা আছে!”
-“ওহ্ তাহলে আমি ওনার ওয়াইফ বা বাচ্চাদের সাথেই কথা বলবো।আপনার বন্ধুর সামনে বসবো না!”
-“মিনিমাম সৌজন্য সাক্ষাৎটুকু করবে না?এটা কেমন কথা?”
-“দেখুন এভাবে পরপুরুষের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের অনুমতি ইসলাম দেয়না!”
-“আমি বুঝিনা,একজন ভদ্রলোকের সাথে কার্টেসী মেইনটেন করতেও কেন এতো সমস্যা তোমাদের!এটা তো সাধারন ভদ্রতা!”
-“আপনাকে কি দিয়ে বোঝাই।সাধারন ভদ্রতা দেশ কালের বিচারে একেক রকম।আমেরিকায় যেটা সাধারন ভদ্রতা বাংলাদেশে সেটা অশ্লীলতা।সেখানে সৌজন্যসাক্ষাতে পরস্পর জড়িয়ে ধরে গালে চুমু খায় বাংলাদেশে এসব চলেনা।কাজেই আমি একজন মুসলিম হিসেবে আমার কাষ্টম মেনে চলবো তাতে কার কি বলার আছে!আপনিই বা বিরক্ত হবেন কেন!”

-“তুমি নিশ্চিত থাকো সে তোমাকে চুমু খাবেনা!”
-“এতো সোজা না।আমাকে চুমু খেতে আসলে ওর মুখ ভেঙ্গে দিবো!”
-“তুমি যে এতো ঝগড়াটে আগে বুঝিনি!”
-“আর আপনি যে আমাকে এভাবে বিপদে ফেলে দেবেন জানলে আমি আপনার সাথে আসতে রাজী হতাম না।”
-“তাহলে এখন কি করবো?ওদের তো জানিয়ে দিয়েছি যে আমরা যাচ্ছি!”
প্রিয়া কিছুটা মনমরা হয়ে বললো-“তাহলে আর কি….চলুন কিন্তু আমি ভেতরে ওনার ওয়াইফের কাছে চলে যাবো।আপনি আমাকে আপনাদের সাথে বসার জন্য ডাকবেন না!”
-“আচ্ছা !”বলে লম্বা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাইরে তাকালো শারদ।

প্রায় পঁয়ত্রিশ মিনিটের মাথায় ওরা শারদের বন্ধুর বাড়ী পৌঁছুলো।শারদের বন্ধু গেটের কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো।সে সাদরে অভ্যার্থনা জানাতে এগিয়ে এলো-
-“আরে ইয়ার…এতো দেরী করলি কেন?য়্যু আ টু লেইট!”
-“অফিস থেকে ফিরেই রওনা দিয়েছি।পথেই যা দেরী হলো!”
-“আচ্ছা,ভেতরে চল্।আরে…ভাবী আসুন।এই হলো আমার গরীবখানা!”

প্রিয়া নিকাবের আড়াল দিয়ে একপলকে বাড়িটা দেখে নিলো।বিশাল জায়গার উপর সুন্দর দোতলা বাড়ী করা কয়েছে।বাড়ীর চারিদিক ঘেরাও করা,সামনে ফুলের বাগানও আছে।গাড়ীও দেখা যাচ্ছে।এটা যদি গরীবখানা হয় তাহলে ধনীখানা কোনটি!প্রিয়া ভাবলো।

শারদের বন্ধুটির নাম মিলন।সে ওদের নিয়ে ড্রইংরুমে বসালো।ড্রইংরূমটিও দেখার মতো সুন্দর।
লোকটি শারদের সাথে হাত মিলিয়ে প্রিয়ার দিকে তাকালো।
-“ভাবীকে যদিও এখনো দেখিনি তবে প্রোফাইল বলছে ভাবী খুব কিউট হবেন!”
শারদ ফ্যাকাশে হেসে তাকালো প্রিয়ার দিকে।
-“আরে ভাবী,বসুন প্লিজ।”বলেই কাউকে ডেকে জুস দিতে বললো।

প্রিয়া এবার উসখুস করতে লাগলো।শারদের দিকে তাকালো।সে সহাস্যে গল্প করছে অথচ ওকে ক্যাবে থাকতেই বলেছিলো যে ওকে যেন ভেতরে পাঠিয়ে দেয়া হয়।প্রিয়াকে মুখ নিচু করে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে মিলন হেসে বললো-“আরে ভাবী,আপনি এভাবে চুপচাপ বসে আছেন কেন,ঘোমটা খুলুন,আমরাও আপনাকে দেখি!আপনাদের বিয়েতে তো আমি যেতে পারিনি,দেশের বাইরে ছিলাম!”
শারদের যেন হঠাৎ মনে পড়লো।
ও তাড়াতাড়ি বললো-“ভেতরে ভাবী আছেনা!প্রিয়াকে ভাবীর কাছে পাঠিয়ে দে।ওরা ভেতরে বসে গল্প করুক!”
মিলন কি বুঝল কে জানে।হেসে উঠে বললো-“ওহ্,ভাবী খুব লাজুক বুঝি।চলুন আপনাকে ভেতরে নিশীর কাছে দিয়ে আসি!”

বলতে বলতেই নিশী নামক মেয়েটি ড্রইংরুমে এসে উপস্থিত হলো।প্রিয়ার ওকে দেখে চোখ কপালে ওঠার দশা।মহিলা স্লিভলেস জামা পড়ে কি অনায়াসে সবার সামনে এসে বসলো।প্রিয়ার হঠাত শারদের উপর রাগ হলো।নিশী হাত বাড়িয়ে শারদের সাথে হ্যান্ডশেক করলো।প্রিয়া নিরবে সেটা দেখলো।শারদ কি মনে করে যে ওকে এদের বাড়ী বেড়াতে এনেছে…আল্লাহই জানেন ! হতাশ হয়ে ভাবলো প্রিয়া।

নিশী কয়েকবার সবার সামনেই প্রিয়ার বোরকা খোলার জন্য পীড়াপিড়ি করলো।প্রিয়া বিনয়ের সাথে সেটা প্রত্যাখ্যান করলো।অবশেষে শারদ নিজেই বললো-“ভাবী,ওকে আপনার সাথে ভেতরে নিয়ে যান।ও এখানে কমফোর্ট ফিল করছেনা!”
-“উউ….শারদ ভাই।তোমার বউ খুব সুন্দরী বুঝি তাই মুখ খোলেনা।চলো সুন্দরী, ভেতরে চলো!”

ভেতরে এসে প্রিয়াকে নেকাব খুলতে হলো।নিশী বোরকা খোলার জন্য বারকয়েক বললেও প্রিয়া রাজী হলোনা।নিশী প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে বললো-“এবার বুঝেছি,শারদ তোমাকে কেন বিয়ে করেছে।নীরা মারা যাবার পর তো সে কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি।বন্ধুমহল থেকেই খুব চেষ্টা করেছি বিয়ে দিতে।অথচ তোমাকে বিয়ে করতে রাজী হয়ে গেলো।কারন তুমি খুব এট্রাকটিভ দেখতে!”

প্রিয়া কোনো জবাব দিলোনা একথার।কিইবা জবাব দেবে সে!মনে মনে ভাবছিলো কখন বেরোবে এখান থেকে।নিশীর খোলামেলা পোষাক আর উদ্ধত বুকের দিকে তাকানো যাচ্ছিলো না।নিশী তার জীবনের নানান প্রসঙ্গে কথা বলে যাচ্ছিলো।এর মধ্যে একটা সাত আট বছর বয়েসী বাচ্চা একটা খেলনা বন্দুক হাতে ঘরে ঢুকে একবার ওদের দিকে তাকিয়ে আবার বেরিয়ে গেলো।নিশী ছেলেকে ডেকে বললো-“সানাক,এটা একটা আন্টি।সে হাই টু আন্টি!”
সানাক কথাটাকে পাত্তাই দিলোনা।নিজের কাজ সেরে বেরিয়ে গেলো।একপর্যায়ে প্রিয়া স্মিত হেসে বললো-“ভাবী,কিছু মনে করবেন না।আপনি কি এই জীবনে সুখী?”
-“দ্যাট মিনস……?”
-“না মানে,এই যে পাশ্চাত্য কালচারকে আপন করে নিয়েছেন।কেমন লাগছে আপনার!”
-“নট ব্যাড।এখানে কোনো হিপোক্রেসী নেই।এখানে সবাই আমরা সোজা সাপ্টা বিহেভ করি।ন্যাকামী নেই আমাদের মাঝে।তোমার কাউকে ভালো লাগলে তুমি সরাসরি তাকে বলতে পারো,ইনিয়ে বিনিয়ে তাকে প্রেম নিবেদনের দরকার নেই।আসলে তো তাকে বেড পার্টনার হিসেবেই চাও তো সেটা সরাসরি বললেই তো হলো!”
প্রিয়া মনে মনে শিউরে উঠলো নিশীর কথা শুনে।সে বললো-
-“এতে সে কি পেলো?”
-“কি আবার,আনন্দ পেলো।নির্ভেজাল আনন্দ!”
প্রিয়া মৃদু হেসে বললো-“ভাবী আপনার থিউরী অনুযায়ী, এ জাতীয় লোকেরা পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ হবার কথা ছিলো কিন্তু বাস্তবে এদের চেয়ে দুখী কেউ নাই।”
-“কেন,এতে দুঃখের কি হলো?”
-“কারন দেখুন,আপনার পেটে খিদে থাকলেও যে কোনো খাবারই কিন্তু আপনি গোগ্রাসে খান না,আপনার স্বাস্থ্য শরীরের ভালোমন্দ বিবেচনা করেই তবে খাবারটা গ্রহন করেন।সেই এথিকসে আমরা মুসলিমরা যার তার সাথে রিলেশন করাকে অস্বাস্থ্যকর এবং প্রানহানীকর মনে করি।তাই যেভাবে আমাদের আত্মার ডাক্তার বলে দিয়েছেন সেভাবেই আমরা আত্মাকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করি।এটা আপনিও স্বীকার করবেন,ডাক্তার যেটা করতে বলেন সেটা আপনার করতে ইচ্ছে হলেও আপনি করেন না রাইট?”
-“হ্যাঁ,তা তো অবশ্যই।সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে তো ডাক্তারকে মানতেই হবে।কিন্তু আত্মার ডাক্তার এটা আবার কি?”
-“ইনি আমাদের পথ প্রদর্শক আমাদের রাহবার আমাদের জন্য আল্লাহর রহমত রাসুলে কারীম সাঃ,যিনি আমাদের জীবনের প্রতিটি মোড়ে কর্তব্যকর্ম সম্পর্কে আমাদের উচিত অনুচিত শিখিয়েছেন।আপনি যদি তাকে মেনে চলা শুরু করেন দেখবেন,আপনার জীবনটাও হবে অন্যরকম সুন্দর।আমার কেন যেন আপনাকে দুখী মনে হচ্ছে।আর আপনি আপনার দুঃখটাকে এসব পোশাক আর ফ্রী লাইফষ্টাইলের আড়ালে ঢাকতে চাচ্ছেন!”
নিশী হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো।

এরপরে কথা আর বেশিদুর এগোলো না।মিলন রাতে ওদের না খাইয়ে ছাড়লোনা।কাছেই এতটা রেষ্টুরেন্টে বলে রাখা হয়েছিলো।ঠিক আটটার দিকে ওরা খাবার পৌঁছে দিয়ে গেলো।
প্রিয়াকে ভেতরে আলাদা খেতে দেয়া হলো।নিশী স্টিক দিয়ে একটা লবষ্টার প্রিয়ার প্লেটে তুলে দিতে গেলে প্রিয়া বাধা দিয়ে বললো-“ভাবী, এতবড়টা আমি একা খেতে পারবোনা।এটা হাফ করুন।আপনিও নিন।”
-“আমি চিংড়ী খাইনা।সহ্য হয়না।এলার্জি আছে তো!”নিশী বললো।
সুযোগ পেয়ে প্রিয়া হেসে বললো-“আসলে চিংড়ী যতই দামী মাছ হোক না কেন তাতে যার এলার্জি সে ছোবেও না।এই যেমন আপনি।আমাদের মুসলিম নারীদের জন্য তেমনি গায়ের মাহরাম পুরুষেও ভয়ংকর এলার্জি তাই আমরা এ থেকে বিরত থাকি!”

নিশী অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।তারপর হঠাৎ বললো-“ভাবী,তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি লাইফ সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ।তোমার ফোন নম্বরটা আমাকে দাও তো,কিছু কথা তোমার সাথে শেয়ার করবো।আই থিংক তুমি একটা ভালো পথ দেখাতে পারবে!”
-“আসলে আমি কোনো বিশেষজ্ঞে নই।তবে জীবনের জটিল বিষয়গুলো ইসলামের সুত্র দিয়ে সমাধান করতে চেষ্টা করুন,সুন্দর সমাধান পাবেন ইনশাআল্লাহ।”

রাত দশটার দিকে ওরা বিদায় নিলো।মিলন নামের লোকটা প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো-“ভাবিকে দেখার সৌভাগ্য হলোনা আমার।তবু আপনি এসেছেন খুব খুশী হয়েছি ভাবি।শারদ,আমরা চলে যাবার আগে ভাবিকে নিয়ে আবার আসবি কিন্তু।”
-“চেষ্টা করবো!”
-“চেষ্টা না শারদ ভাই।আমি প্রিয়ার সাথে আরো অনেক কথা বলতে চাই।ওনাকে নিয়ে আসবেন কিন্তু একদিন।ইটস আ রিকোয়েষ্ট!”নিশী বললো।
প্রিয়া নিশির সাথে হাত মিলিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলো।
নিশি ওর কানে কানে বললো-“আই নিড টু টক টু ইউ প্রিয়া।আবার আসবে তো?”
-“ইনশাআল্লাহ।”

গাড়ীতে বসে শারদ প্রিয়াকে হাসিমুখে বললো-“কি ব্যপার,নিশীকে একেবারে মুগ্ধ করে ফেলেছো মনে হচ্ছে।ও তো তোমাকে ছাড়তেই চাচ্ছিলো না!”
প্রিয়া মুচকি হাসলো কোনো জবাব দিলো না।ওর হঠাৎ মনে হচ্ছে, এখানে এসে খুব একটা খারাপ হয়নি।আচমকা গায়ের সাথে শারদের ছোঁয়া লাগায় চমকে তাকিয়ে দেখলো শারদ অনেকটা সরে এসেছে ওর দিকে।প্রিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো-“আমারও একটা প্রবলেম আছে সেটা তোমাকে সলভ করে দিতে হবে কিন্তু,আজ রাতেই!”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here