প্রিয়ঃ_আপডেট পর্ব ৪
মোর্শেদা রুবী
**************

৪.
মিজানুর রহমান গলা ফাটিয়ে ধমকাচ্ছেন স্ত্রী’কে।পাপিয়া সামিয়া ভয়ে নিজেদের ঘরে চুপ করে বসে আছে।প্রিয়া নিজেও ভয়ে এঘরে আসেনি।সালেহা মুখ চুন করে বসে আছেন।
মিজানুর রহমান জেরা করার ভঙ্গিতে বলছেন-“তোমার মতলবটা কি আমাকে বোঝাও।কেন মিথ্যা বলেছো ওদেরকে যে প্রিয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে?”
সালেহা চুপ!
-“কি চুপ কেন?নাকি চাওনা প্রিয়ার বিয়েশাদী হোক।ওওহ্…..আমি তো ভুলেই গেছি,প্রিয়ার বিয়ে হলে তোমার বাঁদী খাটবে কে?”
-সালেহা মুখ তুলে তাকালেন কিন্তু কোনো জবাব দিলেন না।
মিজানুর বলতে লাগলেন-
-“নিজের মেয়েদের খাটের উপর বসিয়ে রেখে দিনের পর দিন প্রিয়াকে কাজের বুয়ার মতো ট্রিট করেছো।দেখেও দেখিনি,ভেবেছি আল্লাহ আল্লাহ করে মেয়েটাকে বিয়ে দিলে বেঁচে যাবে।এখন দেখছি ওকে বিয়ে দিতেও তোমার আপত্তি!”
-“না…..ভেবেছি ,প্রিয়া বাচ্চা মেয়ে তাই…..!”
সালেহা দুর্বল স্বরে বলতে চেষ্টা করলেন।

কিন্তু মিজানুর রহমানের বাঁজখাই ধমকের সামনে চুপসে গেলেন!তিনি ধমকে উঠে বললেন-
-“বাচ্চা মেয়ে?ও পাপিয়ার ছয় মাসের বড়।বাচ্চা মেয়ে হলে পাপিয়াকে বিয়ে দিচ্ছো কেন?”
সালেহা আর কোনো জবাব দিলেন না।

মিজানুর রহমান রাগে গরগর করতে করতে ফোন উঠালেন।
ফোন করতে গিয়ে ফের স্ত্রীকে বললেন-“আমি ওদের বাসায় ডাকছি।ওদের সাথে কথা বলবো,আর ছেলের খোঁজখবরও নেবো।ছেলে ভালো হলে আমি আর দেরী করবো না।ওরা যেদিন যেভাবে বলবে সেদিন,সেভাবেই বিয়ে হবে! এ নিয়ে আর কোনো ঝামেলা চাই না,এই বলে দিলাম!”
বলে তিনি পাপিয়ার শ্বাশুড়ীর নাম্বারে ফোন করলেন।

প্রিয় আজ খুশিতে আটখানা।তাকে বলা হয়েছে, ‘চলো তিয়া যাবো’ তাতেই সে খুশি।তবে মেয়ের তুলনায় বাপ গম্ভীর।বিকাল থেকেই মুখ কালো করে রেখেছে।
যেন ওর ফাঁসির আদেশ হয়েছে।সাজেদা বার কয়েক বলে বলে ওকে পাত্রী দেখতে যেতে রাজী করিয়েছেন।কথাবার্তা যা বলার তাও আজই বলতে বলেছেন।

শারদ গোমড়া মুখে বলেছে-“কথা বলে লাভ কি।ভালো লাগুক না লাগুক তোমার উত্তর হতে হবে “হ্যাঁ”! তাহলে আর আমি গিয়ে কি করবো!”

-“তুই না যেতে চাইলে তো ওদের আসতে হবে তোকে দেখতে।আজ তুই গেলে মেয়ে আর ওর চাচাও তোকে দেখতো আবার তোর যা বলার আছে সেটাও বলে নিতে পারতি।আমি কাজটা দেরী করতে চাচ্ছিনা!”

-“এতো তাড়াহুড়াই বা কিসের?”

-“সে তুই বুঝবি না!”

শারদ আর কিছু না বলে নিজের ঘরে চলে এলো।অবশেষে সন্ধ্যের পরপরই রওনা হলো ওরা।প্রিয়কে নিয়ে শারদ,শারদের বাবা,সাজেদা আর মাজেদা।একটা গাড়িতে করে রওনা হয়ে গেলেন ।সাজেদা একদিনের জন্য গাড়িটা বড় ননদের কাছ থেকে চেয়ে আনিয়েছেন।তাতে করেই রওনা হলো সবাই।

সময়মতোই ওরা পৌঁছে গেলো প্রিয়ার চাচার বাড়ী মমতা ভিলাতে।মমতা মিজানুর রহমানের মায়ের নাম।তার নামানুসারেই বাড়ীর নামকরন করা হয়েছে।
মিজানুর রহমান নিজেই এগিয়ে এলেন অতিথিদের সমাদর করতে।শারদের বাবা নিজেই সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন। শারদও নেমে সালাম দিলে মিজানুর রহমান হাত বাড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলেন।শারদকে তার একনজর দেখেই পছন্দ হয়ে গেছে।

সাদরে অতিথিদের অভ্যার্থনা জানিয়ে ভেতরে নিয়ে গেলেন তিনি।
ভেতরে গিয়ে বসার পর সালেহাও সালাম দিয়ে এগিয়ে এসে হাত মেলালেন।সালোহার চেহারায় চাপা সংকোচ।সাজেদা তা দেখেও না দেখার ভান করে সহজ ভঙ্গিতে কথা বললেন।
কিছুক্ষণ পর ওদের নাস্তা দেয়া হলো।নাস্তার বহর দেখে সাজেদা বুঝলেন মিজানুর রহমান প্রিয়াকে যথার্থই মেয়ের চোখে দেখেন কারন আপ্যায়নে তিনি কোনো কার্পন্য করেননি।

প্রিয় বারবার বিরক্ত করছিলো দেখে সালেহা হাত বাড়িয়ে ওকে চাইলেন-
-“দিন ওকে প্রিয়ার ঘরে নিয়ে যাই!”
সাজেদা মৃদু হেসে বললেন-“এক কাজ করলেই তো ভালো হয় আপা ,প্রিয়াকেই নিয়ে আসুন না।তাতে দেখাদেখিটাও হয়ে যাক আর এদিকে প্রিয়ও খুশি হবে।”

সালেহা ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর প্রিয়াকে নিয়ে আসলেন।প্রিয়া এসে মৃদু স্বরে সালাম দিলে মাজেদা সরে ওকে সোফায় বসতে জায়গা করে দিলেন।সাজেদা মৃদুহাস্যে প্রিয়ার দিকে তাকালেন।
প্রিয়াকে আজ সেদিনের চেয়ে অনেক বেশী সতেজ আর সুন্দর লাগছে।চওড়া নীল ওড়নায় নিজেকে পেঁচিয়ে রেখেছে সে।আপাদমস্তক হালকা গোলাপী রঙের ঢোলা স্যালোয়াড় কামিজে আচ্ছাদিত।কব্জি আর মুখটুকু বাদে পুরো মানুষটা যেন পাখির পালকের মতো আবৃত হয়ে আছে।সাজেদার দেখতে খুব ভালো লাগছে।প্রিয় নিজে থেকেই প্রিয়ার কোলে চলে গেলো।

সাজেদা হাসিমুখে ছেলের দিকে তাকালেন।শারদ গভীর মনোযোগে মোবাইলে টেক্সট লিখতে ব্যস্ত।কপালটা কুঁচকে রেখেছে।
সাজেদা মৃদু কেশে একটু জোরের সাথেই প্রিয়াকে বললেন-“কেমন আছো মা?”
প্রিয়া মাথা সামান্য কাত করে প্রায় ফিসফিস করে বললো-“আলহামদুলিল্লাহ!”

সাজেদা প্রিয়র কান্ড দেখে মুখ টিপে হাসলেন!সে চুপচাপ প্রিয়ার কোলে বসে বারবার অবাক হয়ে প্রিয়াকেই দেখছে আর কিছুক্ষণ পর পর প্রিয়ার ওড়নার প্রান্ত ধরে টানাটানি করছে।সাজেদা ওকে টেনে নিজের কাছে নিলেন।প্রিয়া ওর দিকে তাকিয়ে সামান্য মুচকি হাসল।

সাজেদা ছেলের দিকে তাকিয়ে ওর হাতে কনুই দিয়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললেন-“তোমার কিছু বলার থাকলে বলো!”
শারদ এবার মোবাইল রেখে মুখ তুলে তাকালো।প্রিয়াকে একপলক দেখলো আর সাথে সাথেই ওর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো।মাথা নেড়ে বললো-“না,কিছু জিজ্ঞেস করার নেই!”

বাকি সময়টা শারদ আর কোনো কথা বললো না।কেবল মিজানুর রহমান আর শারদের বাবাই কথা বলছিলেন।মাঝে মধ্যে শারদ মিজানুরের বিভিন্ন টুকটাক প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলো।

রাতে ফেরার আগে সাজেদা বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও মিজানুর রহমান না খাইয়ে ছাড়লেন না।সালেহা মাজেদাকে বাড়তি যত্ন করলেন কারন হাজার হোক তার মেয়ের হবু শ্বাশুড়ী।

খাওয়াদাওয়া শেষে প্রিয়কে নিয়ে শারদ ‘আসছি’ বলে বাইরের দিকে গেলে সাজেদা সালেহার হাত ধরে মিজানুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বললেন-“আমি আপনাদের কোনোরকম চাপে ফেলতে চাইনা ভাই।আমি শুধু মেয়েটাকে নিয়ে যাবো।আমার কোনো দাবী দাওয়া নেই।যেভাবে আপনারা মেয়েকে তুলে দেবেন আমি সেভাবেই নেবো।তবে আমার বিশেষ অনুরোধ,আমি দেরী করতে চাইনা ভাই!আমার বাচ্চাটাকে তো দেখেছেন।কি পরিমাণ ভক্ত হয়ে গেছে প্রিয়ার!”

মিজানুর রহমান হাসলেন-“প্রিয়া আমার মেয়েই বলতে পারেন।ওর বিয়েতে আমি সাধ্যমতো সবই করতে প্রস্তুত।কিন্তু আপনারা তো জানেন যে আগামী তিনমাস পর পাপিয়ার……!”

এবার মাজেদা নিজেই মিজানুর রহমানের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন!
-“সে তো এখনো অনেক দেরী ভাইসাহেব।তাই বলছিলাম কি, যেহেতু কোনো দাবী দাওয়া নেই।তাই এ মাসের মধ্যেই যদি বিয়েটা হয়ে যেতো খুব ভালো হতো।কারন এই বিয়েতে আমরা অত জাঁকজমকও করতে চাচ্ছিনা কারন বুঝতেই পারছেন….!”

মিজানুর রহমান মাথা নাড়লেন-“আমার আপত্তি নেই।তবে আমার মেয়ের মতামতেরও তো একটা গুরুত্ব আছে।যদিও জানি ও আমার কথার উপর কোনো কথা বলবেনা তবু বাপমা মরা ভাইঝির উপর কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইনা আমি!”

সাজেদা সাথে সাথেই বললেন-“না না তা তো অবশ্যই।

কথাবার্তার একফাঁকে মিজানুর প্রিয়ার রুমে গিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলে আসলেন।বারবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও প্রিয়ার একটাই উত্তর ছিলো-“চাচাজান,আপনি যা বলবেন।”
মিজানুর রহমান বললেন-
-“ছেলেটা পূর্ব বিবাহিত।আবার মেয়েও আছে একটা! দেখেছিসই তো!তোর মনে এ নিয়ে যদি কোনো কিন্তু থাকে তো বল্! আমি ওদের অন্যভাবে মানা করে দেবো!”
প্রিয়া জানালো,তার কোনো আপত্তি নেই!”

অবশেষে সেদিন রাতেই স্থির হলো, আগামী সপ্তাহেই আকদ হবে এবং সেদিনই ঘরোয়া পরিসরেই প্রিয়াকে তুলে দেয়া হবে!

সাজেদা মনে আনন্দ নিয়ে বাড়ী ফিরলেন।কিন্তু বাড়ী পৌঁছানোর পর পরই শারদ রাগে ফেটে পড়ার উপক্রম হলো।সে মাকে বললো-
-“মা,তুমি তো বলেছিলে মেয়ের বয়স পচিশ ছাব্বিশ।এর বয়স তো আরো কম
একুশ হবে কিনা সন্দেহ।আমি এতো ডিফারেন্সে বিয়ে করবোনা।এতে আন্ডারষ্ট্যান্ডিং এ কি পরিমান সমস্যা হয় তুমি জানো?”
-“কোনো সমস্যা হয় না।যদি স্ত্রী তার নিজের অবস্থানে থাকে।যখন স্ত্রী স্বামীকে টেক্কা দিতে চায়,নিজের বড়ত্ব জাহির করতে দাঁড়ায় সমস্যাটা তখনই বাঁধে।তুই দেখিস এই মেয়ে তেমন হবেনা!”

-“আল্লাহই জানে কি দেখেছো তুমি এই মেয়ের মধ্যে!”বলে রেগে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো শারদ।

সাজেদা ওর কথায় তেমন বিচলিত হলেন না কেবল আপনমনে বললেন-“সময় আসুক,তুই ও দেখবি।এই চোখ ভুল দেখেনি।বিয়েটা হয়ে যেতে দে,তুই নিজেই বুঝবি যে প্রিয়া একটা সোনার মেয়ে!”

পরের সপ্তাহেই ঘরোয়া পরিসরে প্রিয়ার আকদ সম্পন্ন হয়ে গেলো।
ঘনিষ্ট কিছু আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতে প্রিয়াকে বিদায় দেয়া হলো।বিদায় বেলায় মিজানুর রহমান প্রিয়ার কপালে চুমু দিয়ে কেঁদে ফেললেন।

চাচার বাড়ীর অনাড়ম্বর জীবনের পাট চুকিয়ে প্রিয়া রওনা হলো নিজের নতুন জীবনে।গাড়ীতে প্রিয় ওর কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো।প্রিয়া সাবধানে ওকে দুহাতে ধরে রেখেছে।শারদ গাড়ীতে পুরোটা সময় ধরে মোবাইলে ব্যস্ত ছিলো।একবারও চোখ তুলে তাকায়নি,কথাও বলেনি।

বাড়ী পৌঁছে নিজের বাসর ঘরে ঢুকে প্রিয়া কিছুটা হলেও চমকে গেলো।চিরাচরিত রীতি মেনে ফুল দিয়ে সাজানো হয়নি রুমটা।পরিপাটি করে গোছানো বড়সড় একটি রুম।রুমের মাঝখানে পুরোনো দিনের রাজা বাদশাহদের মতো বিশাল এক গোল খাট।কিন্তু তাতে কোনো সাজসজ্জা নেই।
প্রিয়া দ্বিধাজড়িত পায়ে হেঁটে খাটের একপাশে গিয়ে বসে রইলো।বেশ কিছুক্ষণ বসে থাকার পর সাজেদা এসে প্রিয়াকে পোষাক বদলে ফ্রেশ হয়ে নিতে বললেন।আরো বললেন, শারদের প্রচন্ড মাথা ধরেছে তাই সে সাজেদার রুমেই প্রিয়র পাশে শুয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে!তাই নাকি ওকে আর ডাকেননি।

প্রিয়া কি বুঝলো কে জানে।কেবল মাথা নেড়ে বললো-“আমার লাগেজটা কোথায়? মানে আমি শাড়ীটা বদলাবো তো!”
-“ওহ্,ওটা বোধহয় ঐ রুমে রয়ে গেছে।দাঁড়াও আমি পাঠিয়ে দিচ্ছি।”বলে সাজেদা বেরিয়ে গেলেন।

প্রিয়া ঘন্টাখানেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে ঈশার নামাজ পড়ে নিলো।এর পরপরই সাজেদা একটা প্লেট হাতে ঘরে ঢুকলেন।
-“তুমি সেই সন্ধ্যা থেকে একরকম না খেয়েই আছো।একটু খেয়ে নাও।
প্রিয়া কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে শ্বাশুড়ীর দিকে তাকালো।ওর আসলেই খিদে পেয়েছে।প্রিয়া প্লেট নিয়ে যখন খেতে বসলো তখন সাজেদা কাছেই একটা সোফায় বসে মৃদুস্বরে বলতে লাগলেন-
-“আমি জানি তুমি কি ভাবছো।শারদের আচরণ দেখে হয়তো ভাবছো ও তোমাকে অপছন্দ করছে বা এরকম কিছু।আসলে ব্যপারটা এরকম না।শারদ নীরার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি।ও একটু আবেগী ধরনের ছেলে তো..।নীরা মারা যাবার পর অনেক বদলে গেছে।আগে খুব হাসিখুশি ছিলো।নীরার হঠাৎ মৃত্যুটা ও আসলে মন থেকে মেনে নিতে পারেনি।”
প্রিয়া ছোট ছোট লোকমা তুলে নিরবে খাচ্ছিলো।

সাজেদা বলতে লাগলেন-
-“এক সাথেই পড়াশোনা করতো দুজন।ক্লাস মেট ছিলো নীরা।নিজেদের পছন্দে বিয়ে করেছিলো ওরা।তিন বছরের মাথায় প্রিয় ওর গর্ভে এলো।প্রিয়’র জন্মের সাতদিনের মাথায় ও হঠাৎ স্ট্রোক করলো।অভাবনীয় একটা আঘাত আমার ছেলেটাকে শেষ করে দিয়েছে।ওকে একটু সময় দাও,দেখবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে!”

প্রিয়ার খাওয়া হয়ে গিয়েছিলো।সে হাত গুটিয়ে বসে চুপচাপ কথা শুনছিলো।সাজেদা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন-“আমার উপর রাগ করোনা মা।তুমি হয়তো ভাবছো,তোমাকে এতিম পেয়ে হয়তো নিজের ছেলে আর নাতির বোঝা তোমার ওপর চাপাচ্ছি…..!”
-“না না…..”! প্রিয়া সাজেদার একহাত চেপে ধরলো!”আমি মোটেও এসব ভাবছিনা।আমি বিশ্বাস করি আল্লাহর ইচ্ছে ছাড়া গাছের পাতাটিও পড়ে না।তিনি চেয়েছেন বলেই আজ আমি এখানে।হয়তো এতেই আমার কল্যান রয়েছে!”

-“তোমার কথা শুনে খুবই খুশী হলাম মা!নাও এবার শুয়ে পড়ো।একা শুতে তো ভয় লাগবে তোমার তাই আমিও আসছি, শোবো তোমার সাথে।দাঁড়াও প্রিয়কে নিয়ে আসি।ও জেগে আবার আমাকে না দেখলে কাঁদবে!”

প্রিয়কে মাঝখানে রেখে বউ আর শ্বাশুড়ী দুজন বিছানার দুপাশে গড়িয়ে পড়লো।অনেক রাত অবধি দুজনে নানা বিষয়ে কথা হলো।প্রিয়া নিজের জীবনের কিছু কথা শেয়ার করলো।একসময় সাজেদার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেয়ে প্রিয়া বুঝলো তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন।কিন্তু প্রিয়ার চোখে ঘুম নেই।নিজের বিয়ের রাতের অবস্থা দেখে নিজেই ফিক করে হেসে ফেললো।এরকম অভিনব বাসর রাত কারো জীবনে এসেছে কিনা কে জানে।স্বামী আরেক ঘরে নাক ডাকিয়ে ঘুমাচ্ছে,আর এদিকে শ্বাশুড়ী বেচারী তার একাকীত্ব ঘোচাতে ওকে সঙ্গ দিচ্ছে।ভাগ্য কাকে বলে।
ভোরের দিকে ঝিমুনী আসতে চাইলে সটান উঠে বসলো প্রিয়া।বাথরুমে গিয়ে অযু করে এসে তাহাজ্জুদ পড়ে ফজরের আযানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

চোখ মেলতেই প্রিয়া দেখলো সোনালী রোদে ভরে গেছে রুমটা।চোখ কচলে ঘড়ির দিকে তাকালো ।এমা,সকাল দশটা!ছিঃ ছিঃ এতক্ষণ সে মড়ার মতো ঘুমিয়েছে! পাশে তাকিয়ে দেখলো প্রিয় ঘুমাচ্ছে তবে শ্বাশুড়ী নেই।তিনি ওদের ঘুমে দেখে উঠে চলে গেছেন।প্রিয়া দ্রুত উঠে চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে শ্বাশুড়ীর আসার অপেক্ষা করতে লাগলো।
প্রিয়কে একা রেখে বেরোতে দ্বিধা বোধ করছে ও।কিছুক্ষণ পর সাজেদা এসে উঁকি দিলেন-“উঠেছো তুমি?”
-“জ্বী…..আম্মা!”
-“এর আগেও একবার এসে আমি দেখে গেছি।চলো নাস্তা করবে!তোমার শ্বশুড় তোমাকে ডাকছে!”
-“ইয়ে….প্রিয় একা থাকবে…?”
-“না,ওর বাবাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।ও থাকবে।তুমি চলে এসো!”
বলে সাজেদা চলে গেলেন।প্রিয়া কিছুক্ষণ বসে থেকে প্রিয়কে দেখলো।ওর মাথাটা বালিশ থেকে নেমে গেছে।প্রিয়া আলতো করে ওর মাথাটা ঠিক করে দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই শারদকে দেখে হকচকিয়ে গেলো।শারদ কখন গেটের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে সে খেয়ালই করেনি!
দ্রুত চোখ নামিয়ে মাথা নিচু করে ওর পাশ কাটিয়ে চলে এলো সে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here