#প্রিয়ঃ (#আপডেট)
১৮(শেষপর্বঃ)
মোর্শেদা রুবিঃ
দুজনের মাঝখান দিয়ে সময় গলে যাচ্ছে চুঁইয়ে পড়া বরফের মতো।
যতটা সাবলীলভাবে প্রিয় ঘরে ঢুকে অনায়াসে বোরকা খুলে সহজ হতে পেরেছিলো,ততটাই কঠিন হচ্ছে ত্বাকীর অপলক দৃষ্টির সামনে বসে থাকা।
ত্বাকী কোনো কথা বলছেনা।
নিরবে জরিপ করছে প্রিয়কে।
প্রিয় এবার উসখুস করে উঠলো।
-“এভাবে তাকিয়ে থাকার মতো কি হলো?”
-“দেখছি! নিজের সৌভাগ্যে বিশ্বাস হচ্ছে না!”
-“বিশ্বাস না করার কি হলো।আমাদের তো গতকালই এক হবার কথা ছিলো!”
-“একসিডেন্টের পর যখন জ্ঞান হারাচ্ছিলাম তখন কি মনে হচ্ছিলো জানো?”
প্রিয় তাকালো।ত্বাকী বলে চললো-
-“অমন চরম মুহূর্তেও তোমার কথাই মনে হচ্ছিলো।মনে হয়েছিলো,আর বুঝি তোমার সাথে দেখা হবেনা!”
প্রিয়’র চোখে পানি চলে এলো।ত্বাকী সযত্নে তা মুছিয়ে দিয়ে বললো।
-“মহান রব আমাদের কবুল করেছেন।আমার সামনে তুমি।আমার অর্ধাঙ্গিণী রূপে।এরচে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে!”
প্রিয় ত্বাকীর ব্যন্ডেজ করা পায়ের উপর হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো!
-“কিভাবে কি হলো বলুন তো!এতো বড় একটা দুর্ঘটনা কিভাবে ঘটলো!কোথায় যাচ্ছিলেন আপনি?”
ত্বাকী ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রিয়’র হাতটা টেনে নিয়ে নিজের বিশাল মুঠোর মধ্যে পুরে নিলো।আর প্রিয় তার চব্বিশ বছরের জীবনে প্রথমবারের মতো পুরুষালি ছোঁয়ায় বাঁশপাতার মতো থিরথির করে কেঁপে উঠলো।
ত্বাকী হাসলো-“কি হলো?”
-“কিছুনা!”
-“কাঁপছো তো!”
-“না, এমনি।”
-“জানো,আমি যেদিন তোমাকে প্রথম দেখি তোমার পরনে হলুদ টিউলিপ রঙা একটা জামা ছিলো,মনে পড়ে?”
প্রিয় মাথা দোলালো।ত্বাকী হেসে বললো-
-“তুমি অবশ্য আমাকে দেখেই ঘোমটায় নিজেকে আড়াল করে ফেলেছিলে।তবে আমি ঐটুকুতেই কুপোকাত হয়ে গিয়েছিলাম।বাকি তোমার সম্পর্কে সবকিছু জানার পর মনে হলো,আরে একেই তো এতোদিন ধরে খুঁজছি!আমার কাছে তোমাকে একটা আস্ত টিউলিপ ফুলই মনে হচ্ছিলো!”
প্রিয় মুচকি হেসে বললো-“তাই বয়সের ব্যবধানটাও মানলেন না!”
ত্বাকী অসহিষ্ণু কণ্ঠে বলে উঠলো-
-“বয়স নিয়ে এতো মাথা ঘামাবার কি আছে বুঝলাম না।এটা আসলে আমাদের একটা প্রেজুডিসে দাঁড়িয়ে গেছে যে স্বামীকে সর্বক্ষেত্রে স্ত্রী থেকে বড় এবং শ্রেষ্ঠতর হতে হবে।এটা আমাদের মানসিকতার দৈন্যতা ছাড়া আর কিছুই না।তোমার বয়স ত্রিশ হলেও আমি তোমাকেই বিয়ে করতাম!মা খাদীজা রাসুল সাঃ এর পনের বছরের বড় ছিলেন।অথচ তারা ছিলেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দম্পতি!”
প্রিয় মৃদুস্বরে প্রশ্ন করলো-“টিউলিপ নিয়ে কি যেন বলছিলেন?”
-“ও,হ্যাঁ!তোমার ঐ রঙের পোশাক দেখে ভেবে রেখেছিলাম ঠিক তোমার ওড়নার রঙের মতো টিউলিপ ফুল খুঁজে বের করবো।বাসর রাতে তোমার হাতে একগুচ্ছ টিউলিপ ধরিয়ে দিয়ে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসার কথাটা প্রকাশ করবো।কিন্তু সব এলোমেলো হয়ে গেলো!”
প্রিয় মুখ নামিয়ে ফেললো।
এমন সময় দরজায় নক হতেই প্রিয় দ্রুত হিজাবের দিকে হাত বাড়ালো।
বয়স্কা একজন নার্স ঢুকলেন।ত্বাকীর পালস ও অন্যান্য কন্ডিশন চেক করে একটা ইঞ্জেকশন পুশ করে চলে গেলেন।জানালেন,ঘন্টাখানেক পর বড় ডাক্তার এসে ওকে দেখে যাবে।
ডাক্তার চলে যাবার পরপর ইরা আর প্রিয়া ঢুকলো।ত্বাকী প্রিয়াকে সালাম দিলে প্রিয়া কাছে এসে ত্বাকীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলো।
বিকেলের দিকে ডাক্তার এসে ত্বাকীকে দেখে জানালো।ত্বাকীর পায়ে আরেকটা ছোট্ট অপারেশন লাগতে পারে আর তারপরেই বোঝা যাবে সে স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারবে কিনা।কথাটা শুনে ইরা কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলেও প্রিয়’র মধ্যে কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেলোনা।
পরদিন অপারেশনের টাইম ফিক্স হলো।দ্বিতীয়বারের মতো অপারেশন টেবিলে ওঠার আগে প্রিয় ত্বাকীর মুখোমুখি হলো!
প্রিয়র চোখ ভিজে আসতে চাইছিলো বারবার।ত্বাকী হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে প্রিয়র চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো-
-“কেঁদোনা।তোমার কান্না আমার সব আনন্দকে মুছে দেয়!”
প্রিয় নাক টেনে বললো-“যা’ই ঘটুক না কেন!আমার তাতে কিছুই এসে যায় না।
আমি আমার সমস্ত সত্ত্বা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো!”
বিকেল চারটেয় অপারেশন শুরু হলো।প্রায় ঘন্টাদুয়েক চললো অপারেশন। ছয়টার দিকে ডাক্তার বেরিয়ে জানালেন,অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।রুগী ভালো আছে।
শুনে প্রিয় সাথে সাথে শোকরানা সিজদা দিলো।
টানা বিশদিন হাসপাতালে থাকার পর ত্বাকী আজ বাড়ী ফিরেছে।
দুপরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিয়ের তারিখ কিছুদিন পিছিয়ে দেয়া হয়েছিলো।ত্বাকী এখন ক্রাচে ভর করে অনায়াসে হাঁটতে পারে।তবে ডাক্তার বলেছে ধীরে ধীরে ক্রাচ ছাড়া হাঁটার অভ্যাস করতে।
এরই মধ্যে বিয়ের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলো।
এবং বসন্তের এক নাতিশীতোষ্ণ সন্ধ্যায় প্রিয়’র বিবাহোত্তর সংবর্ধনার অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়ে গেল।
ত্বাকীর এরই মাঝে চলে যাবার কথা ছিলো।কিন্তু সে একসিডেন্টের কথা উল্লেখ করে নিজের ছুটি বাড়িয়ে নিয়েছে।ঠিক হলো এর মধ্যে কাগজপত্র ঠিক করে প্রিয়কে সাথে নিয়েই একবারে ফিরবে সে।
বাসর ঘরে ঢুকে স্থির হয়ে গেল ত্বাকী।
প্রিয় আজ টুকটুকে বউটি সেজে বসে আছে।আজ তার শরীরে বাড়তি পর্দা নেই।পাতলা ঘোমটার আড়ালে তার চাঁদ মুখখানি ত্বাকীর হ্রদয়ে ঝড় তুলল।
সে প্রিয়র সামনে বসে নিজের ডানহাত মুঠো করে বাড়িয়ে ধরে বলল-“আচ্ছা,আমাকে চিমটি কেটে দেখো তো আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি ?”
প্রিয় লাজুক হেসে ওর দিকে তাকাল।
ত্বাকী ওর চাহনীর জবাবে হেসে বলল-
-“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি বোধহয় স্বপ্ন দেখছি!একটু পরেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাবে! ”
প্রিয় এবার হেসে ত্বাকীর হাতে ছোট্ট চিমটি কেটে মৃদুশব্দে বলল-“আমাদের কিন্তু নামাজ পড়তে হবে।”
ত্বাকী সায় দিয়ে বলল-” তার আগে তোমার কপালে হাত রেখে দুআটা পড়তে হবে”!
বলে সে প্রিয়’র এক নিঃশ্বাস ব্যবধানে বসে তার মাথায় হাত রেখে দুআটা পড়লো।ত্বাকী বলল-“চলো,এবার দুজনে নামাজটা আদায় করে নেই”!
প্রিয়া খাট থেকে নামার জন্য সাবধানে পা বাড়ালো।ত্বাকী সতর্ক করে বলল-“পুরোনো দিনের পালঙ্ক স্টাইলে বানানো হয়েছে তাই একটু উঁচু,সাবধানে নামতে হবে কিন্তু।পরে গিয়ে হাড়গোড় ভেঙ্গো না!নয়তো এক কাজ করো আমার হাঁটুতে পা দিয়ে নামো!”
বলে ত্বাকী নিজেই হঠাৎ পালঙ্কের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে গিয়ে বলল-“এসো!”
প্রিয় দ্রুত মাথা নাড়ল-“আরে,না না…আপনার গায়ে পা দেবো?”
ত্বাকী হাসল-“দেবে না মানে,আমার বুকে পা রাখতে হলে বুক পেতে দিবো”!
প্রিয় হাসলো-“যাজাকাল্লাহ,তার দরকার নেই”!
-“দরকার আছে,দাম্পত্য জীবনে রাসুল সাঃ এর প্রতিটি সুন্নত আমি পালন করবো ইনশাআল্লাহ!”
-“তাহলে আপনার উপর যে পা রেখে নামবো, এটা আবার কোন্ সুন্নত?”
ত্বাকী হেসে বললো-“জানো কিনা জানি না।আমাদের আম্মাজান সাফ্যিয়া রাঃ বেশ খাটো ছিলেন বিধায় উটের পিঠে উঠতে ওনার কষ্ট হতো।একবার ওনার ওঠার সময় আমাদের রাসুল সাঃ হাঁটু গেড়ে উটের সামনে বসে যান,আর আম্মাজান তাঁর উরুতে পা রেখে উটের পিঠে আরোহন করেন।”
প্রিয় মুচকি হেসে পা বাড়ালো!
-“মাশাআল্লাহ্, কি দারুন তো !”
ত্বাকী ডান হাত বাড়িয়ে বলল-“নাও,এটার সাহায্য নাও।নয়তো গড়িয়ে পড়বে!”
অবশেষে প্রিয় ত্বাকীর হাঁটুতে পা রেখেই নামলো।
দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করলো।
প্রিয় অবাক হয়ে ত্বাকীর ভরাট কন্ঠের সুললিত সুরের তেলাওয়াৎ শুনে মুগ্ধ হয়ে গেলো।
দুজনে গভীর রাত পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললো।
এক পর্যায়ে প্রিয় দুষ্টুমী করে
ত্বাকীকে প্রশ্ন করল-“আচ্ছা, বিয়ের সব সুন্নত পালন করবেন তো বুঝলাম। একাধিক বিয়ে করাও তো সুন্নত।
এই সুন্নতটা পালনের ইচ্ছে কতটুকু?”
বলেই প্রিয় খিলখিল করে হাসতে লাগলো।হাসি চাপতে চেষ্টা করলেও পারলো না বরং হাসির দমকে তার শরীর কাঁপতে লাগল।ত্বাকী প্রিয়র কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলো।প্রশ্ন শুনে সে আধা উঠে বসে প্রিয়র মুখটা ভালো করে দেখতে চেষ্টা করল।
প্রিয় ডান হাত দিয়ে নিজের মুখটা আড়াল করে রেখেছে।
ত্বাকী মুচকি হেসে বলল-“সবাই ইসলামের এই দিকটি তুলে মুসলিমদের বেকায়দায় ফেলতে চায়।তাদের কাছে মুসলমানদের চারটা বিয়ে নিয়ে হাজারটা কথা।
অথচ বিয়ে না করে শত শত গার্লফ্রেন্ড বা রক্ষিতা পুষলেও ঐসব লোকদের কোনো সমস্যা নেই।তাদের যাবতীয় সমস্যা কেবল মুসলিমদের লিগ্যালি চারটা বিয়ের অনুমতি থাকাতে।অথচ কুরআন স্পষ্ট বলেছে একাধিক স্ত্রীদের মধ্যে সমতা বিধান করতেই হবে নতুবা অধিক বিয়ের অনুমতি নেই।একজনেই সন্তষ্ট থাকতে হবে।
তাই কোনো ব্যক্তির একাধিক স্ত্রী গ্রহন তখনই যায়েজ হবে যখন সবগুলো স্ত্রী’র সাথে সমান আচরন করতে পারা যাবে নতুবা একজন নিয়েই থাকতে হবে এটা ক্বুরআনের স্পষ্ট আদেশ”।
প্রিয় চুপ মেরে গেলো।
ত্বাকী বলল-“আমি বোধহয় তোমার প্রতি আমার ভালোবাসাটা সমানভাবে কাউকে দিতে পারবোনা তাই…..একজনেই সন্তষ্ট থাকতে চাই! কাল কেয়ামতের ভয় তো আমাদের সবারই থাকা উচিত।আমি তোমার হক্বটা পুরোপুরি আদায় করতে চাই! কারন রাসুল সাঃ বলেছেন-“তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে তার স্ত্রী’র জন্যে ভালো।”
প্রিয় ত্বাকীর কাঁধে মাথা রেখে বললো-“আমি আপনার জীবনে রাসুল সাঃ এর খাদীজা হতে চাই।জানি,আমার চাওয়াটা কঠিন।তবু,এটা আমার একমাত্র চাওয়া।
★★★
প্রিয় আজ দেশে ফিরছে।
পুরো বাড়ীতে আনন্দের ধুম পড়ে গেছে।বিয়ের কয়েকমাস পরেই প্রিয় স্বামীর হাত ধরে চলে গিয়েছিলো প্রবাসে।
বাবার স্নেহধন্যা মায়ের আঁচলধরা ঘরকুনো মেয়েটি আজ স্বামী সোহাগিনী এবং দুই কন্যাসন্তানের জননী।
প্রিয়া দুই নাতনীর ছবি এতদিন মোবাইল আর কম্পিউটারেই দেখে এসেছে।আজ দুই নাতনীকে সামনা সামনী দেখবে।সেই আনন্দেই শারদ আর প্রিয়া উদ্বেল।
প্রিয়’র আগমন দিন উপলক্ষ করেই হিয়ার বিয়ের অনুষ্ঠান ফিক্সড করা হয়েছে।যেন বিয়েতে প্রিয় সপরিবারে উপস্থিত থাকতে পারে।
প্রিয়কে পেয়ে শারদ নিজেও আজ পিতৃস্নেহে বিগলিত।মেয়েকে এক মুহূর্তের জন্য কাছছাড়া করছেন না।কয়েক বছরের জমানো গল্প জুড়েছে বাপ মেয়ে দুজনে।
এমন সময় দুই মেয়েকে দুই কোলে নিয়ে ত্বাকী ঘরে ঢুকে প্রিয়কে ডাকলো।
-“এ্যাই,খাদিজা।ওদের নাও তো।পাগল করে ফেললো আমাকে।”
শারদ অবাক হয়ে তাকালো প্রিয়’র দিকে।
-“”খাদীজা কে?”
প্রিয়’র চেহারায় শেষ বিকেলের লালিমা।সে দ্রুত কথাটাকে পাশ কাটিয়ে মেয়েদের টেনে বাপের কোল থেকে নামালো।
মৃদু তিরস্কারের সুরে বলতে লাগলো-
-“তোমরা বাবাকে বিরক্ত করছিলে কেন? এখানে নানাভাইয়ের কাছে বসো।গল্প করো।”
সাথে সাথেই দুই ফুটফুটে শিশু শারদের গলা ধরে বলতে লাগলো-“নানা ভাই,আমাদের নূহ নবীর গল্প শোনাও না!বাবা শোনাতে চাচ্ছে না!”
ত্বাকী দুহাত কোমড়ে রেখে দাঁড়িয়ে আছে।মেয়েদের দিকে আঙ্গুল তুলে বললো-“এ পর্যন্ত দুটো গল্প বলে ফেলেছি।তারপরেও তোমাদের আব্দারের শেষ নেই!
প্রিয় হেসে ত্বাকীকে মৃদু ঠেলা দিয়ে বললো-“হয়েছে তুমি যাও,এখন বিশ্রাম নাও।ওরা আব্বুর কাছে থাক্।”
-“এদিকে আসো তোমার সাথে কথা আছে!”
বলে প্রিয়কে টেনে ঘরে নিয়ে গেলো ত্বাকী।
প্রিয় অসহিষ্ণু কন্ঠে বলে উঠলো!
-“কি শুরু করেছো!কেউ দেখলে কি ভাববে!এখানে এসেও হাত ধরে টানাটানি।দুই মেয়ের বাপ হয়ে গেছো তবু এখনো তোমার হাবভাব দেখলে মনে হয় গতকালকেই আমাদের বিয়ে হয়েছে।আর আব্বুর সামনে খাদীজা খাদীজা করছো কেন?”
-“কারন তুমি যে আমার খাদীজা এজন্য।আমার ফাতিমা আর জাহরার মা।আম্মাজান খাদীজা রাসুল সাঃ এর সত্যিকারের সহধর্মিনী হতে পেরেছিলেন।তুমি আমার জীবনে অনেকটা তাই।”
প্রিয় ত্বাকীর বুকে মাথা রেখে বললো-“খাদীজা রাঃ কিন্তু রাসুল সাঃ কে ছেড়ে অনেক আগেই পৃথিবী থেকে চলে গিয়েছিলেন।আমিও যদি…..!”
প্রিয়কে শক্ত আলিঙ্গনে বেঁধে ফেললো ত্বাকী।ওর মাথার চাঁদী বরাবর নিজের থুতনী রেখে বললো।
-“মুত্যুকে কেউ অস্বীকার করতে পারেনা।আমরাও পারবো না।তবে রাসুল সাঃ তাঁর জীবদ্দশায় খাদীজা রাঃ কে ভোলেন নি।রাসুল সাঃ এর এক আত্মীয়া ছিলেন যার কন্ঠ ছিলো খাদীজা রাঃ এর মতো।রাসুল সাঃ তাঁর কন্ঠ শুনলেও ছটফট করে উঠতেন।খাদীজা রাঃ এর মৃত্যুর পরেও তিনি তাঁর ভালোবাসার স্মরণে তার বান্ধবীদের বাড়ীতে মাংস হাদিয়া পাঠাতেন।
খাদীজা রাঃ রাসুল সাঃ এর সেই স্ত্রী যার মৃত্যুর পরেও তার প্রতি রাসুলের অস্থিরতা দেখে মা আঈষা জেলাসড হতেন।আর তুমি হলে আমার খাদীজা।আল্লাহ তোমাকে নিয়ামত হিসেবে আমাকে দান করেছেন।যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন আমি আল্লাহর কাছে জান্নাতে তোমাকে আমার চিরসঙ্গিনী হিসেবে চাইতে থাকবো।দুনিয়ার এই ছোট্ট জীবনে তোমাকে পেয়ে আমার মন ভরছেনা।আমার যে তোমাকে আরো চাই।”
স্বামীর মুখে স্তুতিবাক্য শুনতে কোন নারীর না ভালো লাগে।প্রিয় নিজেও ভালোলাগায় ডুবে যেতে যেতে রবের দরবারে দুআ করলো-“এই বাহু দুটো আমার জন্যে কবুল করো মা’বুদ!”
~সমাপ্ত~
প্রিয় গল্পটা মুলতঃ গত পর্বেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো।তারপরেও একটা মধুরেণ সমাপয়েৎ মানে মধুর সমাপ্তি টানলাম।মনে আকাঙ্খা,আমাদের প্রতিটি দাম্পত্য যেন হয় রাসুল সাঃ আর মা খাদীজা রাঃ এর মতো।নিগুঢ় ভালোবাসা,কঠিন আত্মত্যাগ আর স্বামীর চলার পথ মসৃণ করার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবার মাহাত্ম্য দেখিয়েছিলেন সেই মহিয়সী নারী।সম্পর্কের মাধুর্য্য তৈরীতে বয়স বা সৌন্দর্য্য কোনো ভূমিকাই পালন করেনা। যদি করতো তবে পৃথিবীর সব সুন্দর কাপলরা জীবনে সুখী হতো।সব অবৈধ প্রেমের বিয়েগুলো সফল হতো কিন্তু জরিপ বলছে সবচে বেশী ডিভোর্স হচ্ছে প্রেমের বিয়েগুলো।সেসব সংসারের ভাঙনের শব্দে গোটা পৃথিবী আজ প্রকম্পিত।চলুন,নিজেদের অহংকে বিসর্জন দিয়ে সংসারটাকে সুন্দর আর সুখী করে তুলি।স্বামী নামের মানুষটিকে নিজের প্রতিযোগী না ভেবে নিজের গন্তব্য ধরে নেই।আর স্ত্রীকে দাসী না ভেবে পথ চলার সাথী ভেবে নেই।তাহলে ইনশাআল্লাহ,সংসারগুলো হবে এক একটা জান্নাতের বাগিচা।
যাজাকুমুল্লাহ।