#প্রহেলিকা
#পর্ব_৩৩
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

বিকেলে চেকাপের জন্য বেরোয় জেহের আর ইনশিতা। মানিক রহমান কেবিনে বসে ফাইল চেক করছিলেন। তখনই ইনশিতা আর জেহের নক করে ঢুকে। তাদের দেখে উৎফুল্লিত হন তিনি। চেকাপ শেষে ইনশিতা মানিককে জিজ্ঞেস করে,

-“আঙ্কেল, আপনার কাছে রাগ কমানোর কোনো ঔষধ থাকলে বলুন। ওনার রাগ দিনকে দিন বাড়ছেই।”

জেহের চোখ রাঙানি দিলো ইনশিতাকে। বিপরীতে ভেঙচি কাটল ইনশিতা। মানিক তা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন। ইনশিতা বলল,

-“সত্যি বলছি আঙ্কেল। উনি রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। কী থেকে কী করে ফেলেন তা নিজেও জানেন না।”

মানিক কিছু বলবে তার আগেই জেহের ইনশিতার হাত ধরে টেনে উঠায়। গম্ভীর স্বরে বলে,

-“আসছি আঙ্কেল। পরশু লন্ডন ছাড়বো। দেশে গেলে অবশ্যই বাড়ি আসবেন।”

বলেই আর এক সেকেন্ডও দাঁড়ায় না। ইনশিতাকে টেনে বের করে নিয়ে আসে। কেবিনের বাহিরে আসতেই ইনশিতা হাত ছাড়িয়ে নেয়।

-“সমস্যাটা কী?”

-“তোমার সমস্যাটা কী সেটা বলো।”

-“আমার কী সমস্যা থাকবে? সব সমস্যা তো আপনাকে নিয়ে। সারাক্ষণ রেগে থাকেন কেন?”

-“রেগে থাকার মতো কাজ করো কেন?”

-“তা আমার কোন কাজটা আপনাকে রাগিয়েছে?”

-“এরিক তোমার পেছন ঘুরছে প্রথম থেকে সেটা কেন বললে না?”

ইনশিতা চুপ হয়ে গেল। মিইয়ে পড়া কন্ঠে বলে,

-“আপনি রেগে যাবেন তাইতো বললাম না।”

-“তুমি না বলায় আমি রেগে গিয়েছি।”

-“হয়েছে হয়েছে। আর তর্ক করতে হবে না। যত্তসব, চলুন।”

ইন‌শিতা হনহন করে লিফটে ঢুকে গেল। লিফট বন্ধ হওয়ার পূর্বেই দুজন নার্স জেহেরের পাশাপাশি ঢুকল। জেহের ফোনে ব্যস্ত হলো। ইনশিতা রাগে ফেটে পড়ছে নার্সদের দেখে। নার্স দুইজন যেন চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে জেহেরকে। মনে হয় যেন তাদের চোখের সামনে চকলেট ঝুলছে। জেহেরের সবকিছুই চোখে পড়ার মতো। ছয় ফুট সুঠাম দেহের অধিকারী সুদর্শন জেহের বড় থেকে ছোট সব মেয়েরই দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম। এই যে, এখন ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্টের সাথে হোয়াইট শার্ট, উপরের কয়েকটা বোতাম খোলা তাই ফর্সা বুক বেরিয়ে আছে, কনুই পর্যন্ত হাতা গুটানো, পেশিবহুল বাহু যেন শার্ট ছিঁড়ে আসবে, এক হাত পকেটে আরেক হাতে মোবাইল, চোখে সানগ্লাস আর সিল্কি চুলে কত হ্যান্ডসাম লাগছে তা কি জেহের জানে? তার উপর চমৎকারভাবে অ্যাটিটিউড নিয়ে দাঁড়ানো।

ইনশিতা একবার হিংসাত্মক নজর বুলালো নার্সদের দিকে। নার্স দুইজন ধবধবে সাদা। ঠোঁটে কড়া লাল লিপস্টিক। হাঁটু থেকে পুরো পা বেরিয়ে আছে। পায়ে কত লম্বা হিল! ইনশিতার থেকেও দ্বিগুণ সুন্দরী তারা। সে তো তাদের নখেরও যোগ্য না। ইনশিতার কান্না পেয়ে গেল। এত সুন্দরী মেয়েরা জেহেরের পেছনে ঘুরলে জেহের যদি তাকে রেখে চলে যায়? ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল সে। এই প্রথম তার ইচ্ছা করল দুনিয়ার সব সুন্দরী মেয়েদের নিমিষেই বোম মেরে উড়িয়ে দেয়। লক্ষ্য করল যেই নার্সটা জেহেরের পাশে দাঁড়িয়ে সেই নার্সটা এপ্রোনের উপরের দুইটা বোতাম খুলছে। উদ্দেশ্য এই সুদর্শন যুবকটিকে তাদের প্রতি আকর্ষিত করা। ইনশিতা হাত মুঠ করে চেয়ে রইল শুধু। নার্সটি এপ্রোনের বোতাম খুলে তার ক্লিভেজ দেখিয়ে সুদর্শনটিকে নিজের দিকে টানার চেষ্টা করল। ইনশিতা হা হয়ে গেল। মেয়েটার সাহস কত বড়! বউয়ের সামনে বরকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা? তাও আবার এমন নোংরা উপায়ে?এবার কান্নার সাথে রাগও পেল তার। কিন্তু কী করবে ভেবে পেল না। শুধু ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস ফেলতে লাগল।

জেহের আড়চোখে খেয়াল করছিল রোজকে। নার্সদের সে দেখতে পেয়েছে, তার খুব রাগ হচ্ছিল এদের প্রতি। কিন্ত সে চাইছিল রোজ কিছু করুক। যখন দেখল রোজের চোখে পানি তখন জেহের আর নিজেকে দমাতে পারল না। ফোনটা রেখে ইনশিতার হাত টেনে একদম নিজের কাছাকাছি নিয়ে এসে ওষ্ঠাধর দখল করে নেয়। বিস্ময়ে ইনশিতা কিছুই বলতে পারল না। কয়েক মুহুর্ত বাদেই জেহের ছেড়ে দেয় ইনশিতাকে। একহাতে মোবাইল বের করে নিয়ে আরেকহাতে বুকের সাথে পেঁচিয়ে ধরে ইনশিতাকে।

কয়েক মুহুর্তে ঘটা ব্যাপারটা যেন জেহেরের কাছে খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আর এই দেশে এসব নরমাল। তবুও ইনশিতার লজ্জায় মরিমরি অবস্থা। জেহের যে হুট করে এমন কাজ করে ফেলবে সেটা ভাবনার বাইরে ছিল। আড়চোখে তাকাল নার্সদের দিকে। নার্সদের চেহারা হয়েছিল দেখার মতো। খুব হাসি পেল ইনশিতার। কেমন চোখ বড় বড় করে অবাক হয়ে তাকিয়ে ছিল। তাদের যে জ্বলুনি হচ্ছে সেটা বুঝতে পারল ইনশিতা। ইনশিতা তাদের দিকে তাকিয়ে ফিচেল হাসল। সাথে ভাবটাও বেড়ে গেল। এবার সে নিজেই জেহেরের চোখের সানগ্লাসটা খুলে চোখে পরল। তারপর একহাতে জেহেরের হাত জড়িয়ে বুকে আয়েশ করে মাথা রাখল। জেহের মিটমিট করে হাসছে। রোজ এতটাই জ্বেলাস?

নার্সগুলো যেন আগুনে পুড়ছিল। চোখ মুখ বিকৃত করে ইনশিতার দিকে তাকিয়ে ছিল তারা। আর ইনশিতার মুখে টানটান হাসি। লিফট থামতেই গটগট করে বেরিয়ে গেল নার্স দুজন। জেহের অট্টহাস্যে হেসে উঠল তৎক্ষণাৎ। ইনশিতা রাগী রাগী চোখে তাকাল। তবে বক্র দৃষ্টিতে জেহেরকে দেখছে সে। জেহের এমন করে হাসতেও পারে? বাপরে বাপ!

জেহের কোনোরকমে হাসি থামিয়ে বলল,

-“তুমি এতটাই জ্বেলাস? সিরিয়াসলি?”

ইনশিতা শক্ত মুখে বলে,

-“মোটেও না। জ্বেলাস হবো কেন? যাস্ট একটু ভাব মেরেছি। আর কিছুই না। হুহ।”

জেহের মুচকি হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলো। পার্কিং লটে আসতেই হাত টানল ইনশিতা। এখানে আরো অনেক মেয়ে আছে যারা বেশ কয়েকবার জেহেরকে দেখছে নির্লজ্জভাবে। ইনশিতার রাগে হাত পা রি রি করছে। পারছে না মেয়েদেরকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলে। জেহেরকে নিজের দিকে ফিরিয়ে শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিলো। হাতা কনুই থেকে নামিয়ে দিলো। চুলগুলো হাত দিয়ে উশকোখুশকো করে সোজা করে দিলো। একবারে গুড বয়। কিন্তু এ কি! এই লুকে যেন জেহেরকে আরও মারাত্মক রকমের হ্যান্ডসাম লাগছে। ইনশিতার রাগ লাগল। সে দ্রুত জেহেরকে ঠেলে গাড়িতে উঠাল। তার ইচ্ছে করছে জেহেরকে সবসময় লুকিয়ে রাখে। পুরুষ মানুষের এত সুন্দর হওয়ার কী দরকার?

জেহের চুপচাপ উপভোগ করছিল এতক্ষণ। তার প্রতি রোজের ভালোবাসাটা যে অনেক সেটা রোজ না বুঝাতে না চাইলেও সে বুঝে গিয়েছে। মুখে মৃদু হাসি নিয়ে গাড়ি চালাতে লাগল। মনে মনে বলল, এইবার বুঝেছ তো রোজ? তোমার দিকে কেউ তাকালে আমার কেমন লাগে?

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here