#প্রহেলিকা
#পর্ব_২৩
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ)
———————–

মৃদুমন্দ বাতাস বইছে চারিদিকটায়। চাঁদের সাথে মেঘেরা লুকোচুরি খেলছে আকাশে। হাইওয়েতে শাঁ শাঁ করে অবিরাম ছুটে চলছে গাড়ি। হালকা আলো গাড়ির ভেতরটায় ঝিলিক দিচ্ছে। সেই আলোর ঝলকানিতে জেহেরের রাগী চেহারাটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে, যা আড়চোখে দেখছে ইনশিতা।

হাত আঠালো হয়ে আছে তার। পরনের জামাতেও তরকারির ঝোল লেগে আছে। অস্বস্তি ঘিরে ধরেছে ইনশিতাকে। পেছনের সীটে কালো গোলাপের বড় একটা বুকে অবহেলায় পড়ে আছে। গাড়ির লাইট অফ। গাড়ির মধ্যকার নিস্তব্ধতা ভালো লাগছে না ইনশিতার। প্রায় একঘন্টা ধরে এমন নিস্তব্ধতার সাথে থাকতে হয়েছে তাকে। আর কতক্ষণ কে জানে?

ইনশিতা বার কয়েক ঢোক গিলল। তখন জেহের ইনশিতাকে সবার সাথে খাবার টেবিলে দেখে কোনো কথা না বলে ইনশিতাকে এঁটো হাতেই টেনে উঠিয়ে নিয়ে বের হয়। ওঠার সময় অসাবধানতায় ঝোল পড়ে যায় ইনশিতার জামায়। জেহেরকে দেখে সকলে ভড়কালেও কিচ্ছুটি বলার জন্য মুখ খুলতে পারেনি। ইনশিতা খেয়াল করেছিল জেহেরের হাতে কালো গোলাপের খুব সুন্দর একটা বড় বুকে। গাড়িতে উঠিয়ে প্রচন্ড রাগ সহকারে বুকেটা পেছনে ফেলে রাখে জেহের। সেই তখন বের হয়েছিল, এখন পর্যন্ত রাস্তাতেই তারা। কোথায় যাচ্ছে ইনশিতা নিজেই জানে না। কথা বলার চেষ্টা করেছিল কয়েকবার। তবে অজানা কোনো কারণবশত কথাগুলো গলা অবধি এসেই জ্যাম ধরে আটকে গেছে।

প্রায় বিশ-পঁচিশ মিনিটবাদে ইনশিতা খেয়াল করল গাড়িটা হাইওয়েতে নেই। একটা সুনসান জঙ্গলের মধ্যকার সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলছে। ভ্রু কুঁচকে কৌতুহল নিয়ে জানালার বাহিরে মাথা বের করল ইনশিতা। রাস্তার দুপাশে ঘন জঙ্গল। সোডিয়ামের আলোটুকুও নেই, তবে গাড়ির হেডলাইটের আলোয় বুঝতে পারছিল ইনশিতা। জঙ্গল থেকে অদ্ভুত সব আওয়াজ ভেসে আসছে কানে, যা ইনশিতার শরীরে ভয়ের উদ্রেক বাড়াতে সক্ষম।

আচমকা ইনশিতার মাথায় হাত দিয়ে চেপে ভেতরে ঢুকাল জেহের। হতচকিত হয়ে ইনশিতা তাকাল জেহেরের দিকে। জেহের রাগী চোখে দেখছে তাকে। বেশ ধমকের স্বরে বলল,

-“এভাবে গাড়ি থেকে মাথা বের করা কতটা রিস্কি জানো তুমি?”

বলেই জেহের সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালানোয় মনোযোগ দিলো। ইনশিতার বিরক্তি লাগল। এইখানে তো আর কোনো গাড়ি চলছে না যে অ্যাক্সিডেন্ট হবার আশংকা আছে। সে নিজেও ঠোঁট বেঁকিয়ে জেহেরের কথাটা নকল করে ব্যঙ্গোক্তি সুরে বলল,

-“উঁউঁহ…এইভাবে গাড়ি থেকে মাথা বের করা কতটা রিস্কি জানো তুমি? উউউঁউউঁ…”

ইনশিতার এমন ব্যঙ্গ্যার্থে জেহের চোখ পাকিয়ে তাকালে চুপসে যায় ইনশিতা। ঠোঁটে তর্জনী ঠেকিয়ে চুপ করে থাকে।

.

.

জিহাদ অস্থির হয়ে পায়চারি করছে নিজের রুমে। একটু আগে লোকদের দিয়ে খবর নিতে চেয়েছিল জেহের কোথায় আছে। তবে জানা যায়, তারা জেহেরের গাড়িকে হাইওয়েতে দেখার পর আর খুঁজে পায়নি। সেই চিন্তায় জিহাদ অস্থির হয়ে গিয়েছে। কোথায় গেল ইনশিতাকে নিয়ে জেহের? তাও আবার এত রাতে! চিন্তারা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে মস্তিষ্ককে।

দ্রুত পা চালিয়ে জেবার রুমের দরাজায় নক করল। রাফিদের হাসিমুখের ছবি দেখে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিল জেবা। আর হারিয়ে যাচ্ছিল অনাগত ভবিষ্যতের সুখে, যেখানে রাফিদের সাথে সংসার গড়ার স্বপ্নে বিভোর সে। করাঘাতে স্বপ্নে ব্যাঘাত ঘটে। দরজা খুলে দেখে চোখেমুখে অস্থিরতা জড়ানো জিহাদ দাঁড়িয়ে আছে। ভিতরে ঢুকে জিহাদ প্রথমেই জেবাকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,

-“ইনশিতা আর ভাই কোথায় গিয়েছে কিছু জানিস? খোঁজ পেয়েছিস?”

জেবা কপাল কুঁচকে বলে,

-“আজব! আমি কী খোঁজ নিয়েছি না কি, যে জানব? আর এমনিতেও জেহের ভাইয়ের খোঁজ নেওয়ার কোনো ইচ্ছেই আমার নেই।”

শেষের কথাটায় সমস্ত রাগ ঢেলে বলল জেবা। জিহাদ বিরক্তিকর আওয়াজ করে চলে যেতে চাইলে জেবা বাঁধা দেয়।

-“তুই এত অস্থির হচ্ছিস কেন? গেছে হয়ত কোথাও, বউ নিয়ে ঘুরতে গেছে বোধহয়।”

জেবার মুখে ইনশিতাকে জেহেরের বউ সম্বোধন করাটা বুকে আঘাত হানলো জিহাদের। আজ যদি জেহের না থাকতো তাহলে হয়ত ইনশিতা আজ জিহাদের বউ হতো। কষ্টটা নিজের মনে সুপ্তাবস্থায় রেখে দ্রুত পদে বেরিয়ে গেল জেবার রুম থেকে। জেদ, রাগ আর কষ্টের মিশ্র অনুভূতিতে মনটা পুরে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

.

.

গাড়ি এসে থামে অন্ধকার এক উঠোনে। হেডলাইটের আলোয় সামনে একটা ঘর দেখা যাচ্ছে। জেহের গাড়ি থেকে নেমে কোথায় যেন চলে যায়। হঠাৎ ভয়টা ঝেঁকে ধরে ইনশিতাকে। একা গাড়িতে তার মনে হয় এই বুঝি পেছন থেকে কেউ এসে কল্লা কেটে নিয়ে যাবে কিংবা জানালার কাঁচে বড় বড় লাল চোখের রক্ত মাখানো ভুত কামড়ে দিবে তাকে। ইনশিতা ভয় পেয়ে জোরে জোরে জেহেরকে ডাকতে চাইল। তবে ভয়ে কথাগুলো দলা পাকিয়ে মিনমিনে আওয়াজে বের হলো। ইনশিতা একটু শক্তি যোগার করে ডাকল জেহেরকে। সেই মুহুর্তেই ইনশিতার পাশের দরজা খট করে খুলে একটা হাত তাকে ধরে।

চোখ বন্ধ করে গলা কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠল সে। তবে অবাক হলো এই ভেবে যে আওয়াজ শোনা গেল না কেন? ভয়ে ভয়ে এক চোখ টিপে খুলে দেখল, তার মুখ বন্ধ কারো হাত দ্বারা। আর মুখের সামনে আবছা আলোয় কারো হৃদয় কাঁপানো দৃষ্টির চেহারা দেখতে পাচ্ছে সে।

-“চেঁচাচ্ছ কেন? ভয় পাচ্ছ বুঝি?”

ইনশিতা কিছু বলতে পারল না। জেহেরের হাত মুখ থেকে সরিয়ে দিলো। তার শরীর প্রচন্ড কাঁপছে। জেহেরের হঠাৎ এত সামনে আসাতে নিজেকে খাপছাড়া লাগছে। কপাল বেয়ে দরদর করে ঘাম ঝরছে।

জেহের ইনশিতার ভয়াতুর চেহারা দেখে অন্য এক ঘোরে পড়ে গেল যেন। নিজের মুখটা আরেকটু বাড়িয়ে ঠোঁট ছোঁয়ালো ইনশিতার গালে। কেঁপে উঠে ইনশিতা পরনের জামা মুঠ করে ধরল। বুকটা ধকধক করছে। ধুকপুকানি আরো বাড়িয়ে দিতেই বোধহয় জেহের ইনশিতাকে কোলে তুলে নিলো। নিজেকে সামলাতে জেহেরের শার্ট খামচে ধরল। জেহেরের শরীর থেকে মনমাতানো ঘ্রাণ ভেসে আসছে।

ইনশিতাকে কোলে নিয়েই ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল জেহের। ইনশিতা ঘরের বাহিরটা ঠিকমতো খেয়াল করতে পারল না। এমনকি ভেতরটাও কিছু আন্দাজ করতে পারছে না কারণ ঘরে একটা টিমটিমে আলোর হলুদ বাতি জ্বলছে। তবে বোঝা যাচ্ছে ঘরটা হয়ত বেশ বড়সড়ই হবে।

একটা রুমে এনে ইনশিতাকে খাটে শুইয়ে দিলো জেহের। চোখে এখনো ঘোর লেগে আছে। ইনশিতা তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। জেহেরের কালচে নীল চোখের মায়াজালে বোধহয় সে নিজেও বেঁধে যাচ্ছে।

জেহেরের অপলক দৃষ্টিতে নিজ অজান্তে ডান হাতটা জেহেরের গালে ছোঁয়ায় ইনশিতা। সেই মুহুর্তেই জেহের কিছু একটার গন্ধে ঘোর থেকে বেড়িয়ে উঠে গালে হাত দেয়।

জেহের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখল ঝোলে মাখামাখি হয়ে আছে তার পুরো গাল। বিরক্ত নিয়ে বলল,

-“শিট!”

ততক্ষণে ইনশিতার নিজেরও ঘোর ভেঙে গেছে। ইনশিতাও এবার খেয়াল করল নিজের এঁটো হাতে। মনে মনে নিজেকে ধমকে সুধালো,‘ভাগ্যিস, ঝোল মাখা হাত জেহেরের গালে লেগেছে। নয়তো আজ একটা কান্ড ঘটেই যেত। ইশ! কী যে করতে যাচ্ছিলাম!’

জেহেরের ইচ্ছে করছে দুনিয়ার সমস্ত তরকারির ঝোলকে এক্ষুনি কিছু একটা করে ফেলতে। আজ এই কারণে তার রোমান্টিক মুডটার বারোটা বেজে গেল। এই ঝোল যদি আজ না থাকতো তাহলে হয়তো রোজকে সে নিজের করে ফেলত।

রাত এগারোটা বেজে পঁয়তাল্লিশ। ইনশিতা নিজের জামা খুলে জেহেরের একটা সাদা শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার পরে চাদর জড়িয়ে বসে আছে বিছানায়। নিজের সাথে যুদ্ধ করে জেহেরকে তখন বলেছিল এটা কোথায় আর এখানে কেন নিয়ে এসেছে? জেহেরের উত্তর ছিল, এটা তার নিজস্ব বাগানবাড়ি। যেটা একমাত্র সবার অজান্তে কিনে নিয়েছিল। আর মাঝে মাঝে এখানে এসেই থাকত সে। আর এখানেই এখন থেকে রোজ থাকবে।

ইনশিতা এমন কথা শুনে মাথা ঘুরে যাওয়া থেকে নিজেকে থামাল। কাউকে কিছু না বলে হুট করে এখানে এসে থাকাটা একদমই মেনে নিতে পারছে না সে। তাও আবার বাড়িটা লোকালয়ের বাহিরে। তার উপর, তার প্রয়োজনীয় জিনিস কিছুই নেই। আবার তার উপর, এখানে একা একা থাকতে পারবে না।

জেহের তখন ধমকে বলেছিল,

-“আমি নিজেই নির্জন জায়গা দেখে বাড়িটা নিয়েছি। তোমার প্রয়োজনীয় জিনিস আমি এনে দেব। আর আমি সবসময় চাইতাম তুমি আমার সাথে একা থাকো। কেউ যাতে ধারে কাছেও না আসে। তার জন্য পারফেক্ট প্লেস এটা। তোমাকে আমি বলেছিলাম নিচে গিয়ে কারো সাথে না মিশতে। বাট তুমি কী করলে? সবার সাথে হো হো করে হেসে খাওয়া দাওয়া শুরু করে দিলে। আমার সাথে কথা বলার সময় তো কখনো এত হাসোনি। হাসি কেন, ঠিকমতো কথাও বলোনি। অথচ ঠিকই তখন সবার সাথে হেসেছিলে। তোমার সাথে কথা বলার জন্য তোমার ফেভারিট কালো গোলাপ নিয়ে গিয়ে দেখি তুমি অলরেডি আমাকে রেখে সবার সাথে মজামাস্তি করছো। সেখানে জিহাদ তোমার দিকে কীভাবে তাকিয়েছিল! অার তুমি, আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে হাসবে, কথা বলবে, খাবে, কী করে মেনে নিই? আমার রাগ হয় না? সো তখনই ডিসাইড করেছি তোমাকে নিয়ে এখানে চলে আসবো, এবং এসেও গিয়েছি।”

ইনশিতা মুখ অন্ধকার করে কিছু বলতে চেয়েছিল, জেহের আবারও ধমকে থামিয়ে বলেছিল,

-“নো মোর ওয়ার্ডস।”

ইনশিতাও কিছু বলতে পারেনি। পরে ইনশিতাকে জেহের নিজের একটা শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার দিয়েছিল। ইনশিতা পরতে চাইছিল না, তবে ঝোল মাখানো জামা পরে থাকতেও অসুবিধা হচ্ছিল। তাই পরে নিয়ে বিছানায় চাদর জড়িয়ে বসে আছে। ঘরটা ঘুরে দেখতেও পারল না সে।

.
বন্য প্রানীর অদ্ভুত আওয়াজে ইনশিতার ঘুম ভেঙে গেল। পাশে জেহের ঘুমিয়ে আছে হাত পা ইনশিতার উপর দিয়ে। একদম দড়ির মতো করে পেঁচিয়ে ধরেছে তাকে। আর জেহেরের মাথা ইনশিতার গলার মধ্যে দেওয়া। দীর্ঘ গরম নিঃশ্বাস ইনশিতার গলায় পড়ছে। কোনোরকম ছাড়িয়ে উঠে পড়ল ইনশিতা। ঘড়িতে চারটা বাজে।

রুম থেকে বেরিয়ে এলো সে। একতলা ঘর। সে ঘর ঘুরে দেখল এবার। এখানে বেডরুম দুটো আর একটি বড় ডাইনিং রুম। ডাইনিং রুমের সামনেই ছাদ থেকে নীচ পর্যন্ত কাঁচ দিয়ে বাঁধানো। ওপাশে লম্বা বারান্দা দেখা যাচ্ছে। ইনশিতা এগিয়ে গেল বারান্দায়। বারান্দায় পাতা রয়েছে কয়েকটি চেয়ার টেবিল। এখান থেকে লাফ দিয়েও মাটিতে নামা যাবে। সামনে জঙ্গল ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে জঙ্গল আর বারান্দার মাঝে একটি ছোটোখাটো উঠান রয়েছে যেখানে হালকা আলোর বাল্ব জ্বালানো। পুরো উঠান সবুজ ঘাসে মোড়ানো। হালকা শীত শীত করছে। শীত নামতে আর কতদিন? বেশি দিন নেই বোধহয়। রেলিং ধরে ইনশিতা আজগুবি সব চিন্তা ভাবনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

রোজের উপস্থিতি টের না পেয়ে জেহের তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। ঘুম উড়ে গেল তার। হাত দিয়ে আরেকবার চেক করে দেখল, আসলেই কোথাও নেই রোজ। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে একবার বারান্দা আর বাথরুম চেক করেও পেল না রোজকে। বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল জেহেরের।

দরজা খোলা দেখে ব্যস্ত পায়ে রুমের বাহিরে বেরিয়ে আশপাশ খোঁজ নিতে গিয়ে দেখল, ডাইনিংয়ের সামনের বড় বারান্দায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে। এবার সে বারান্দার সামনে এসে দাঁড়াল। রোজ একপাশ হয়ে কার্ণিশে কনুই ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে কোনো এক ভাবনায় ব্যস্ত। কাঁচের দরজা ঠেলে নিঃশব্দে রোজের পেছন গিয়ে দাঁড়াল। রোজের চুলের ঘ্রাণে মন উতলা হয়ে গেল তার। থ্রি কোয়ার্টার পরায় হাঁটু থেকে নিচ পর্যন্ত উন্মুক্ত হয়ে রয়েছে যা জেহেরের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলো। এক হাঁটু ভেঙে নিচে বসে আচমকা ইনশিতার উন্মুক্ত পায়ে অধর ছুঁইয়ে দিলো জেহের।

পায়ে ঠান্ডা স্পর্শ পেতেই কেঁপে গিয়ে পেছনে ফিরল ইনশিতা। নিচে চোখ নিয়ে দেখল জেহের তাকিয়ে আছে তার পায়ের দিকে। কয়েক কদম সরে গিয়ে দাঁড়াল ইনশিতা। ছিঃ ছিঃ! জেহের কী করছে? তার পায়ে…! জেহের দাঁড়াল ইনশিতার সামনাসামনি। চোখে মাতাল করা চাহনি। সেই চাহনি দেখে ইনশিতার বুক কাঁপতে লাগল।

ইনশিতার বুকের উপর শার্টের একটি বোতাম অজান্তেই খোলা রয়েছে। যেখানে কালচে নীল চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো হঠাৎ। উন্মুক্ত গলা আর বুক যেন জেহেরকে সম্মোহিতের মতো টানছে। মাথা ঝিমঝিম করে উঠছে। চারপাশের সবকিছুকে ধোয়াসা লাগছে। নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে জেহেরের। সেই কষ্টকে আর বাড়তে দিলো না সে। ইনশিতার কোমড় পেঁচিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে অধর ছোঁয়াতে লাগল। চোখ বন্ধ করে ফেলল ইনশিতা। তপ্ত নিঃশ্বাস ইনশিতার ভেতরে শিহরণ জাগিয়ে দিচ্ছে। জেহেরের হাত বেসামাল হয়ে পড়েছে ইনশিতার সারা শরীরে।

ইনশিতা বাঁধা দিতে চাইল। তবে বাঁধা দিতে সাহস পাচ্ছে না সে। অদৃশ্য এক শক্তি শেকলের মতো বেঁধে রেখেছে তার সমস্ত সাহসকে। রোজের বাঁধা না পেয়ে জেহের যেন আরও প্রশ্রয় পেয়ে গেল রোজকে কাছে পাওয়ার। ইনশিতাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে নিয়েই বারান্দার চেয়ারে বসে পড়ল। শার্টের ভেতরে জেহেরের হাত ঢুকে পড়েছে। আবেশে ইনশিতার সমস্ত শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে। চোখ মুদে এলো। অদ্ভুত ভালোলাগায় হৃৎপিন্ড তুমুল গতিতে ছুটে চলছে। জেহের গলা থেকে মুখ তুলে তাকাল রোজের দিকে। জেহেরের চোখে চোখ রাখতেই ইনশিতা নিজেও সম্মোহিত হয়ে গেল। হারালো নিজের হিতাহিত জ্ঞান। জেহেরের নীল চোখের মণি ঘোলা হয়ে আছে। এ যেন অন্য এক জেহেরকে দেখছে সে।

ইনশিতার ওষ্ঠাধর ক্রমাগত কাঁপার কারণে কাল বিলম্ব না করে নিজের গোলাপী অধরযুগলের মাঝে নিয়ে নিলো জেহের। নিস্তব্ধ পরিবেশে মৃদু বাতাসে মনটা অন্যরকম ফুরফুরে লাগছে ইনশিতার। ইচ্ছে করছে সায় দিতে জেহেরের ভালোবাসায়। কোনো অন্যায় তো আর হবে না। জেহের তো তার স্বামী। তার অর্ধাঙ্গ।

ইনশিতার সাড়া পেয়ে জেহের গভীরভাবে কাছে টেনে নিলো ইনশিতাকে। ঠিক সেই মুহুর্তেই ঘেউ ঘেউ করে কুকুর ডেকে উঠল। চমকে উঠে ইনশিতা দাঁড়িয়ে গেল। হঠাৎ এমন আওয়াজে ভয় পেয়ে গিয়েছিল। রোজকে উঠতে দেখে জেহেরের সম্মোহনে ব্যাঘাত ঘটে। ঘাড়ের রগ ফুলে উঠল। দপ করে জ্বলে উঠল চোখ। ঘাড় কাত করে দাঁতে দাঁত চেপে একবার দেখল কুকুরটির দিকে। কুকুরটি একদম উঠোনের মাঝখানে গলা উঁচিয়ে ডাকছে। জেহেরের মেজাজ তুঙ্গে উঠে গেল। বাম হাত দিয়ে ঘাড়ের পেছনটা চেপে ধরল।

ইনশিতা তাড়াতাড়ি শার্টের বোতাম লাগিয়ে রুমে ছুট লাগাল। তার প্রচুর লজ্জা লাগছে সাথে রাগও হচ্ছে। এমন একটা মানুষ যে তাকে সবসময়কার জন্য বন্দী করতে চায় তার ডাকে সাড়া দিলো কীভাবে সে? স্বামী বলেই না-কি অন্য কোনো অনুভূতির কারণে নিজের মধ্যকার ইনশিতাকে হারিয়েছিল সে? উফফ!

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here