#প্রহেলিকা
#পর্ব_১৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

(অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ।)
———————–

ইনশিতা ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরল। ভুত দেখার মত চমকে উঠল সে। ওর হার্ট বের হওয়ার উপক্রম প্রায়। ব্ল্যাক হুডি, ব্ল্যাক জিন্স, ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট স্নিকারস, এক হাত জিন্সের পকেটে ঢুকানো, আরেকহাতে কপালের মসৃণ চুলগুলো পেছনে ঠেলছে, ঠোঁটে ঘায়েল করা বাঁকা হাসি, হাতে ব্ল্যাক ওয়াচ, চোখে হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পাওয়ার আনন্দ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেহের। ইনশিতার অবচেতন মন এক সেকেন্ডের জন্য বলতে চাইল, ‘হ্যাঁ রে পাগল, আমি হারিয়েছি তো, তোর ঘায়েল করা রূপে হারিয়েছি আমি।’ কিন্তু তৎক্ষণাৎই ইনশিতার হুশ ফিরল। সে কী স্বপ্ন দেখছে না কি? জেহের এখানে কীভাবে আসবে? জেহের তো জানেই না যে সে এখানে। চোখ ভালো করে একবার কঁচলে নিলো ইনশিতা। এটা নিশ্চয়ই ভ্রম! কিন্তু সত্যিই তো জেহের তার সামনে দাঁড়িয়ে। আর একটু একটু করে এগিয়ে আসছে তার দিকে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তার হাত টান লাগল। জেহের এক হাত ধরে টানছে। ইনশিতা জোরে একটা চিৎকার দিলো। জেহের কানে হাত দিয়ে চেহারায় বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,

-“ওহ, রোজ। এত চেঁচাচ্ছ কেন সোনা? আমি জানি তোমায় কিডন্যাপ করে নিয়ে এসেছে ঐ বাস্টার্ড রাফিদ। এখন তোমার চিন্তা নেই। তোমার জেহের এসে গেছে না।”

ইনশিতা ভয়ে ভয়ে বলল,
-“আমি যাবো না কোথাও।”

-“কেন? ঐ রাফিদ তো তোমাকে জোর করে এনেছে। তুমি তো ওর কাছে থাকতে চাও না। ওর ব্যবস্থা পরে করব। আগে তোমায় নিয়ে ফিরি।”

-“আমি রাফিদের কাছে যাব। ও আমাকে জোর করে আনেনি।”

জেহের চোয়াল শক্ত রেখে বলল,
-“ও, তার মানে তুমি ইচ্ছে করেই ঐ রাফিদের কাছে থাকতে চাও? আমার সাথে যেতে চাও না?”

-“না। ছাড়ুন আমায়। আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।”

জেহের ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

-“রোজ! তুমি এটা নিশ্চয় ভুলে যাওনি যে জেহের বেঁচে থাকতে রোজ কারো হতে পারে না? চলো চলো, আমাদের এখনি ফিরতে হবে। আবার বিয়ের আয়োজন করতে হবে না? তোমার কারণেই দেরী হয়ে গেছে; আর দেরী করতে চাই না। আজই ফিরে গিয়ে বিয়ে করবো। তারপর…”

ঠোঁট কামড়ে হাসল জেহের। থেমে বলল,

-“আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু বি লেইট এনিমোর। লেট’স গো মাই লাভ।”

ইনশিতা মূর্তির মতোই দাঁড়িয়ে আছে। সে বিশ্বাসই করতে পারছে না জেহের এটা। কিন্তু জেহের তার হাত ধরে তাকে টানছে তার মানে এটা ভ্রম না। সত্যি সত্যি জেহের চলে এসেছে তার কাছে। ইনশিতা হাত ছাড়াতে চেয়েও পারল না। লোহার মতো শক্ত হাতের শক্তির কাছে তার নরম হাতের শক্তি তুচ্ছ। জেহের টেনে হিঁচড়ে তাকে গাড়ির কাছে নিয়ে যাচ্ছে। ইনশিতার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধির উদয় ঘটল। তাড়াহুড়া করে বলতে লাগল,

-“জেহের, দেখুন দেখুন।”

জেহের ভ্রু কুঁচকে যেই না পেছন ফিরল তখনই ইনশিতা ইনশিতা হাতে থাকা আইসক্রিম জেহের মুখে ছুঁড়ে মারল। রেগে উঠল জেহের,

-“হোয়াট দ্যা..!”

জেহেরের পুরো মুখে ছড়িয়ে আছে আইসক্রিম। যার কারণে জেহের হাত ছেড়ে নিজের মুখের আইসক্রিম সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। এই সুযোগে ইনশিতা নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে জেহেরের বুকে জোরে ধাক্কা মারল। জেহের ছিটকে পড়ল রাস্তায়। চোখেমুখে আইসক্রিমের জন্য কিছুই ঠাওর করতে পারল না। ইনশিতা দিলো ভো দৌড়। যেখানেই চোখ যায় সেখানেই ছুটতে লাগল। তার একটাই কথা, যে করেই হোক, জেহেরের থেকে দুরে পালাতে হবে। ছুটতে ছুটতে কারো সাথে ধাক্কা খেল ইনশিতা। দেখল রাফিদ দাঁড়িয়ে আছে। চোখমুখে আতঙ্ক ইনশিতাকে খুঁজে না পাওয়ায়। রাফিদ হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগল,

-“কোথায় গিয়েছিলে তুমি? কত জায়গায় খুঁজেছি তোমায়।”

ইনশিতা সেই জবাব না দিয়ে বলল,
-“আমি-আমি, ঐ জেহের, এখানে…”

-“কী বলছো ইতু?”

ইনশিতার সব কথা এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল। কিছুই গুছিয়ে বলতে পারল না।

-“বলো, কোথায় গিয়েছিলে? পুরো মার্কেট খুঁজলাম তোমায়, পেলাম না। কোথায় গিয়েছিলে?”

-“আমি হাঁটতে হাঁটতে কোথায় এসে পড়েছিলাম জানি না। তবে রাফিদ, আমি জেহেরকে…”

-“ওয়েট। রাফিদ বললে! যাক বাবা, শেষ পর্যন্ত ভাই ডাক বন্ধ করতে পেরেছি তাহলে।”

ইনশিতা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে,
-“আমি জেহেরকে দেখেছি। একটু আগে, উনি আমার হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইছিল। উনি খোঁজ পেয়ে গেছেন আমার।”

রাফিদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে হো হো করে হেসে উঠল। যেন ইনশিতা পৃথিবীর সবচেয়ে মজার জোকস বলেছে। হাসতে হাসতে চোখে পানিও এসে গেছে। হাসি থামিয়ে কোনোরকম পেট চেপে বলল,

-“তুমি মজা করছো ইতু? জেহের এখানে কোথা থেকে আসবে? তুমি কাকে দেখতে কাকে দেখে ফেলেছ…”

-“আমি সত্যি বলছি রাফিদ। জেহের এখানেই আছে। বিশ্বাস করো। উনি…উনি আমায় আবার নিয়ে যাবে… আমাকে বন্দী করে রাখবে।”

বলতে বলতে কেঁদেই ফেলল ইনশিতা। রাফিদের খারাপ লাগল। ইনশিতা হয়ত পথ হারানোর ভয় থেকে এখনো বেরোতে পারেনি। আর জেহেরের ভয় মন থেকে কাটেনি, তাই হয়ত মনের ভুলে বকছে। রাফিদ শান্তনা স্বরে বলল,

-“ইতু, দেখো, জেহের নেই এখানে। ওটা তোমার মনের ভুল জাস্ট। আর কিছুই না। জেহেরের কখনো জানতেও পারবে না আমরা এখানে। ইট’স ইম্পসিবল ফর হিম।”

-“তাই নাকি মি. রাফিদ? ইজ ইট রিয়েলি ইম্পসিবল? দ্যান লেট মি ক্লিয়ার ইউ, নাথিং ইজ ইম্পসিবল ফর জেহের চৌধুরী।”

ইনশিতা আর রাফিদ চমকে পেছনে তাকাল। দেখল জেহের দুই পকেটে দুই হাত ঢুকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এবার রাফিদও নিজেও বেশ চমকাল। দু চোখ যেন বের হয়ে যাবে এমন। জেহের এক হাত বের করে চুলে আঙুল চালাতে চালাতে বলল,

-“‘পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে’দ্যা প্রভার্ব ফিটস ইউ পারফেক্টলি মি. রাফিদ।”

বলেই ঘায়েল করা বাঁকা হাসি হাসল আবার। রাফিদ ইনশিতার এক হাত শক্ত করে ধরলে যেই দৌড়াতে যাবে তখনই চারপাশ ঘিরে ধরল কালো পোশাক পরিহিত গার্ড। রাফিদের নিজেরও অসহায় লাগতে লাগল। যেখানে জেহের একা তাকে মেরে ফেলতে পারে সেখানে এতগুলো গার্ডের মার খেলে এক সেকেন্ডও লাগবে না ওপারে চলে যেতে।

ইনশিতার পা থরথরিয়ে কাঁপছে। যেকোনো মুহূর্তে পরে যেতে পারে সে। ইনশিতা শক্ত করে ধরল রাফিদের শার্ট। অথচ ও জানেই না, এই ধরার জন্য রাফিদকে চরম মূল্য দিতে হবে। জেহের এগিয়ে আসল ইনশিতার সামনে। একদম কাছাকাছি। জেহেরের মুখমন্ডল ভেজা। বোধহয় ধুয়েছে। চুল বেয়ে গড়িয়ে পানি পড়ছে গোলাপী ঠোঁটে। ইশ! ঘোর লাগানো দৃশ্য। জেহের এক ঝটকায় ইনশিতাকে কাঁধে তুলে নিলো। যার কারণে ইনশিতা পেটে কিছুটা ব্যথা পেল। গার্ডসদের ইশারা করে ইনশিতাকে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো।

ইনশিতাকে ফ্রন্ট সিটে বসিয়ে নিজেও যেই বসতে যাবে তখন ইনশিতা দরজা খুলে আবারও ভো দৌড়। তবে এবার রাফিদের কাছে দৌড়ে গেল। গন্ডারের মতো দেখতে গার্ডসরা রাফিদকে মারতে আসছে। একজনের একটা ঘুষি খেলেই তো হ্যাংলা পাতলা রাফিদ পগারপার। ইনশিতা রাফিদের কাছে পৌঁছতেই জেহের দৌড়ে এক হাতে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে উঠিয়ে নিলো ইনশিতাকে। এক হাতে উঠিয়েই গাড়িতে ঢুকিয়ে এবার ব্যাক সীটে ছুঁড়ে মারল জেহের। ইনশিতা উঠতে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখল গাড়ি অলরেডি চলতে শুরু করেছে।

ইনশিতার বুদ্ধি যে একেবারেই কম তা না। রাস্তাঘাটে হাঁটতে চলতে কীভাবে নিজেকে বাঁচাতে হয় সেটা কিছুটা হলেও জানে সে। যেভাবে তখন জেহেরের মুখে আইসক্রিম ছুঁড়ে হাত থেকে পালিয়েছিল সেভাবেই এখন পালাবে। এবার যা করবে সেটা ভাবতে ইনশিতা বেশ কয়েকবার ঢোক গিলল। জেহের লুকিং গ্লাসে ইনশিতাকে দেখছে আর গাড়ি চালাচ্ছে। রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় গাড়ি চালাতে অসুবিধা হচ্ছে না তার। ইনশিতা একবার হাতের দিকে তাকায় আরেকবার জেহেরের দিকে। হাতের দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠল ইনশিতা।

-“আল্লাহ দেখুন আমার হাতে কী?”

বলে ইনশিতা দুই হাত জেহেরের মুখের সামনে নিয়ে গেল। জেহের দেখতে যাবে কী আছে হাতে সেই মুহুর্তে ইনশিতা নিজের মিডিয়াম সাইজের নখ দিয়ে জেহেরের দুগাল চেপে ধরতে চাইল। উদ্দেশ্য জেহেরকে খামচিয়ে গাড়ি থামানো। কিন্তু এবার আর সফল হতে পারল না ইনশিতা। খামচি দেওয়ার আগেই জেহের দুহাতে ইনশিতার হাত ধরে ফেলল। ইনশিতার এবার ভয় হতে লাগল। জেহের বিরক্তি নিয়ে গাড়ি থামিয়ে ব্যাক সীটে আসল। ইনশিতার ওড়না খুলে জোর করে হাত বেঁধে দিলো। ক্রুদ্ধ হয়ে বলল,

-“আমি আগেই জানতাম তুমি কিছু একটা করবে। কিন্তু এমন বোকার মতো কাজ করবে সে ভাবতে পারিনি। নেক্সট টাইম এসব মাথায়ও এনো না। রেজাল্ট খারাপ আসবে।”

ইনশিতার মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
-“ফুল গার্ল।”

জেহের গাড়ি চালানো শুরু করল। ইনশিতার বলার আর কিছুই নেই। সীটে চুপচাপ বসে ভাবছে আগামী দিনের কথা। এবার তো জেহের তাকে বিয়ে করেই ছাড়বে। তারপর সে হবে জেহেরের বন্দিনী। সব কিছু জেহেরের আদেশ মতো করতে হবে। ভাবতে ভাবতে ইনশিতার চোখের কার্ণিশ গড়িয়ে নোনাজল পড়ল।

.
রাফিদ বেধড়ক মার খেয়ে পড়ে আছে। আধমরা হয়ে আছে সে। বাকিটা জেহের মারবে। তাই একজন গার্ড রাফিদের হাত ধরে টেনে গাড়িতে উঠায়। পুরো হাত মুখ, পা রাস্তার সাথে লেগে ছিলে গেছে। গালের এক সাইড গড়িয়ে তাজা লাল রক্ত পড়ছে। গাড়ি ছুটল গন্তব্যে। গার্ডসরা আফসোস করতে লাগল রাফিদের অবস্থা কী হবে ভেবে। একজন বলল,

-“হুদাও স্যারের সাথে লাগতে গেছিলি ক্যান? প্রাণের ডর ভয় নাই? স্যার যা চায় তা এমনি এমনি নেয় না, কাইড়া নেয়। সাত বছর ধইরা আছি। চিনি তো স্যারেরে। একবার এক মেহমান আইছিল স্যারের বাসায়। তার চৌদ্দ বছরের ছেলে ভুলে স্যারের প্রিয় একখান শোপিস ভাইঙ্গা ফেলাইছিল। স্যারের সে কী রাগ! ভাইরে ভাই! মেহমানের সামনেই তার পোলারে দু’হাত বাইধা পুলে ফালায় দিছিল। কেউ আটকাইতে পারছিল না। পোলারে শাস্তি দিতে পাইরা স্যারের চোখেমুখে কেমন ভয়ংকর হাসি! পরে ঐ পোলারে আল্লাহ রহমতে বাঁচান গেছিল। তয় হাসপাতালে থাকতে হইছিল অনেকদিন। ঐ মেহমান তো আর ভুলেও এই বাড়ির দিকে আর চোখ উডায় নাই। আর তুই তো স্যারের জানরে কাইড়া নিতি চাইছিলি। এবার স্যার যে তোর কী করবো, আল্লাহ মালুম।”

বলে মুখ দিয়ে আফসোসোর আওয়াজ করল। কিন্তু রাফিদ কী আর সেসব শুনেছে? সে তো অজ্ঞান হয়ে আধমরা।

.

.

জেহের ইনশিতাকে সেই আগের মতোই কাঁধে তুলে হোটেলের রুমে নিয়ে আসে। ইনশিতাকে খাটে শুইয়ে হাতের ঘড়ি খুলতে লাগে। তারপর গায়ের হুডিটা খুলে দূরে ছুঁড়ে ফেলে। ইনশিতা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। জেহের কী করতে চলেছে সে কিছুটা মাত্র আন্দাজ করতে পারলেও পুরোপুরি নয়। জেহের ক্রমাগ্রহ হিংস্র হয়ে উঠছে। চোখমুখ রক্তিম। যেন এতক্ষণ ধরে রাগটা নিজের ভেতর চেপে রেখেছিল, আর এখন সুযোগ পেয়েছে রাগ ঝাড়ার। ইনশিতার হাতের বাঁধন খুলতে ইনশিতাকে খাটে উল্টে ফেলল। হাতের বাঁধন খুলে ইনশিতাকে সোজা করল। ইনশিতার এবার আর বুঝতে বাকি রইল না জেহের কী করবে? চোখে আবার অশ্রু জমতে লাগল। জেহেরের থেকে দূরে যাবার জন্য সরতে জেহের দুহাত দুদিকে রাখল। উপরে জেহের, নিচে খাট, দুপাশে হাত, বন্দী হয়ে গেল ইনশিতা। জেহের দাঁতে দাঁত পিষে বলল,

-“খুব শখ না ঐ রাফিদের কাছে যাওয়ার? ওর হাত জড়িয়ে ধরার? তাহলে চলো, আজ সেই শখ মিটিয়ে দেব তোমায়।”

বলেই একদম শরীরের ভার ছেড়ে দিলো ইনশিতার উপর। ইনশিতা ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে জেহেরকে সরতে বলল। জেহের তো সরবেই না। এত ভারী মনে হচ্ছে তাকে পাথরে চাপা দেয়া হয়েছে। জেহের ইনশিতার চুল হাতে নিয়ে শুকতে লাগল। আরেকহাতে ইনশিতার গলায় হাত বুলাতে লাগল। ইনশিতা ভয়ে কেঁদে ফেলল। কান্নাকাটি করে আকুতি মিনতি করতে লাগল জেহেরের কাছে,

-“প-প্লিজ জেহের। দোহাই লাগে, আমায় ছেড়ে দিন। আ-আমি আর কোত্থাও যাবো না। আমি-আমি, এখন আপনার কাছেই থাকব, তবুও এমন ক্ষতি করবেন না আমার। প্লিজ…”

জেহের রক্তবর্ণ চোখ তুলে তাকাল।
-“তুমি পুরো একটা দিন রাফিদের সাথে থেকেছ, এর শাস্তি আগে তো তোমায় দিয়ে নিই।”

ইনশিতার ঘাড়ে মুখ গুঁজল জেহের। ইনশিতার কান্না বেড়েই চলেছে। এ কোন বিপদে পড়ল সে? শেষ সম্বলটুকুই এখন না জানি হারাতে হয়! জেহের ইনশিতার কাঁধে খুব জোরে কামড় দিলো একটা। ইনশিতা চিৎকার করে উঠল। কান্নার চোটে কিছুই বলতে পারছে না সে। এমন করে আরো কয়েকটা কামড় দিয়ে জোরে জড়িয়ে ধরল ইনশিতাকে। কান্নার কারণে এমনিতেই ইনশিতার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার উপর জেহেরের জড়িয়ে ধরায় যেন দম বন্ধ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। জেহের একনাগাড়ে বলতে থাকল,

-“তুমি চলে আসার পর জানো আমার কত কষ্ট হয়েছিল? আমাকে রেখে কী করে পারলে ঐ ছেলেটার সাথে চলে যেতে? আমার কী কমতি আছে? হু? টাকা পয়সা, ভালোবাসা, সব সব আছে আমার। তাও কেন আমার থেকে পালিয়ে বাঁচতে চাও তুমি? আমি যদি মরে যাই না, তাহলে তোমাকে মেরে মরব। আমি মরে গেলে তুমি অন্য কারো হবে এটা তো আমি হতে দিতে পারি না। তুমি-তুমি শুধু আমার রোজ। আমি ছাড়া তোমায় আর কেউ ভালোবাসতে পারবে না।…”

এরকম হাজারো কথা বলছিলো জেহের। সেসব কিছুই ইনশিতার কানে ঢুকছে না। সে জেহেরের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য ব্যস্ত। তখন জেহের ইনশিতাকে কোলে উঠিয়ে নিলো। বাথরুমের শাওয়ারের নিচে দাঁড় করিয়ে বলল,

-“তোমায় ঐ রাফিদ টাচ করেছে? তাই না?”

ইনশিতা কাঁদতে কাঁদতে বলল,
-বিশ্বাস করুন, রাফিদ আমাকে স্পর্শ করেনি।

জেহের অগ্নিদৃষ্টি মেলে বলল,
-“আমাকে মিথ্যে একদম বলবে না। আমি দেখেছি তো, ও তোমার হাত ধরেছে, তুমিও ওর হাত ধরেছ। ও তোমাকে জড়িয়েও ধরেছে। আমি তো ওকে ছাড়বোই না। তার আগে ওই ইডিয়টের স্পর্শ তোমার শরীর থেকে উঠিয়ে নেব আমি।”

শাওয়ার ছেড়ে দিলো জেহের। দুজনেই ভিজতে লাগল। ইনশিতা কান্না করছে আর জেহের ইনশিতার গলা, পিঠ বাহু ধরে জোরে জোরে ঘষতে লাগল যেন প্রচুর পরিমাণে আবর্জনা লেগে আছে। ঘষতে ঘষতে ইনশিতার জামার হাতা ছিঁড়ে ফেলল, নখের আঁচড় বসে গিয়ে লাল হয়ে গেল তবুও ইনশিতাকে ছাড়ল না জেহের। জেহের পাগল হয়ে গেছে তখন ইনশিতাকে রাফিদের বাহুডোরে দেখে। তার রোজের শরীরে অন্য কারোর ছোঁয়া মেনে নিতে পারছে না সে। ইনশিতা কাঁদতে কাঁদতে জেহের পা জড়িয়ে ধরে বসে পড়ল।

-“ছেড়ে দিন জেহের। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। প্লিজ।”

জেহের ইনশিতাকে ধরে উঠিয়ে দেয়ালে চেপে ধরে বলল। ইনশিতার বাহুতে অস্থির হয়ে চুমু দিতে দিতে বলল,

-“তোমার এই হাতে শুধু আমার ছোঁয়া থাকবে। আর কারো না। আর কেউ তোমার দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করলে তার হাত কেটে ফেলব আমি। তোমার উপর একমাত্র আমার অধিকার আছে। শুধু আমার।”

জেহেরের এত জোরাজুরি, ঠান্ডা পানি সহ্য হচ্ছিল না ইনশিতার। ঢলে পড়ল জেহেরের বুকে। জেহেরের সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার রোজের শরীর থেকে অন্য কারো স্পর্শ ধুয়ে ফেলার চেষ্টায় আছে।

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here