#প্রমত্ততা_তুই
#আফসানা_মিমি
||১৫তম পর্ব||

গভীর রাতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরে জারিফ। পরিহিত শার্টের অবস্থা নাজেহাল। শার্টের বোতাম তিন চারটে খোলা, সেট করা মাথার চুলগুলো এলোমেলো। চোখ দেখে মনে হচ্ছে বিগত কয়েকদিন ধরে নির্ঘুমে কেঁটেছে জারিফের। সারাঘরে নজর বুলিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে এবার কেঁদে ফেলল জারিফ।

– কোথায় হারিয়ে গেলে বোম্বাইমরিচ? ফিরে এসো, সত্যি বলছি আর কখনও অবহেলা করব না।

জারিফ চিৎকার করে কাঁদছে। জারিফের আর্তনাদে আশেপাশের সবকিছু স্তব্ধ হয়ে আছে। দরজার কাছে জারিফের মা আঁচলে মুখ গুঁজে কাঁদছেন। তাঁর ছেলে যে আয়নাকে পাগলের মতো ভালোবাসে তা দেখেই বুঝতে পারছেন।
আজ দুই মাস হলো আয়না নিখোঁজ। বাংলাদেশের ডিবি পুলিশ থেকে শুরু করে বড়ো বড়ো সিআইডিও আয়নার হদিস পায়নি। জারিফ দিনরাত চোখের পাতা এক না করে শুধু আয়নাকে খুঁজে। আয়নার পরিবারে ফারিয়া জারিফদের বিয়ের কিছুদিন পরই লন্ডন চলে যায় স্বামীর সাথে। দর্পণ জারিফের বাসায়ই থাকে আপাইয়ের নিখোঁজে সেও পাগল প্রায়।
অগোছালো অবস্থায়ই বিছানায় শুয়ে পড়ে জারিফ। দু’চোখ বেয়ে অবাধ্য অশ্রুকণা অনবরত ঝড়ে যাচ্ছে। জারিফ ডুব দেয় বিয়ের রিসেপশনের দিনে।

রিসেপশনের দিন,

বেগুনি রঙের লেহেঙ্গার সাথে হালকা গহনা আর হালকা সাজে দারুন লাগছে সাজিয়াকে। মাথার চুল হালকা কার্লী করে এক হাতে চুল পেঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারাবাড়ি। সিড়ির কাছে আসতেই দর্পণকে এক পিলারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। হাতে আঙ্গুরের থোকা নিয়ে হাত উঁচু করে থোকা থেকে একটা একটা করে আঙ্গুর খাচ্ছে সে। সাজিয়া একটা ভেংচি কেঁটে দর্পণের পাশ দিয়ে যেতে নিলেই দর্পণ খপ করে সাজিয়ার হাত ধরে নেয়।

– অসভ্য লম্বা রোগী ভাইয়া হাত ছাড়ুন নয়তো আমি আপনাকে কামড় দিবো।

সাজিয়ার বাচ্চামো কথা দর্পণের সদা-ই পছন্দের। এজন্যই সাজিয়াকে সবসময় জ্বালাতন করে দর্পণ। সাজিয়াকে আরেকটু জ্বালাতন করার জন্য দর্পণ এবার বলে উঠে।

– আগে ক্ষমা চাও আমার কাছে তারপর ছাড়ার চিন্তা ভাবনা করব।

– কিসের ক্ষমা? আমি কোন দোষ করিনি।

– অবশ্যই দোষ করেছ! সেই প্রথম দিন থেকেই আমার সাথে বেয়াদবি করে যাচ্ছো। ছোট হয়েও সর্বদা অসম্মান করে সম্বোধন করেছ। এভাবে তো আর তোমাকে ছাড়তে পারি না তাই না! এখন ফটাফট ক্ষমা চাও নয়তো আমার হাতে যতগুলো আঙ্গুর আছে সবগুলো চটকিয়ে তোমার ঐ সুন্দর কার্লি চুলে লাগিয়ে দিবো। এখন বলো কি করবে তুমি।

দর্পণের কথায় সাজিয়া কাঁদো কাঁদো চোখে তাকিয়ে থাকে যেন পলক ফেললেই অশ্রুকণা ঝড়ে যাব।

– আমি কিছু করিনি ছেড়ে দিন ভাইয়া।

এতটুকু বলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কান্না শুরু করে দেয় সাজিয়া। সাজিয়ার কান্না দেখে দর্পণ চমকাল, ভরকাল চিন্তিত সুরে বলতে শুরু করল।

– আরে আরে বাচ্চা মেয়েটা এভাবে কাঁদছে কেন? কান্না থামাও বলছি। আমি কী তোমাকে মেরেছি যে কান্না করছ?

সাজিয়া এবার নাক টেনে প্রত্যুওরে বলল।

– আপ আপনি আমার চুল নষ্ট করে ফেলবেন এই ভয়ে কাঁদছি।

সাজিয়ার কথা শুনে দর্পণ হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না। সাজিয়ার কাঁদো মুখ দেখে হাত ছেড়ে দেয় দর্পণ। হাত ছাড়া পেয়ে এক মুহূর্তও দাড়ায় না সাজিয়া এক দৌঁড়ে প্রস্থান করে সেখান থেকে। আর যাওয়ার আগে দর্পণকে তার বিখ্যাত ডাকে সম্বোধন করতে ভুলেনি।

– পঁচা রোগা লম্বু ভাইয়া।

সাজিয়ার এহেন কর্মে দর্পণ বুকে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।

লাল টকটকে লেহেঙ্গা পরিধান করে বসে আছে আয়না আয়নার সামনে। গায়ে স্বর্ণের অলংকার পরে নিজেকে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে আয়নায় পর্যবেক্ষণ করছে নববধূ। আজ আয়না আর জারিফের রিসেপশন সকাল থেকেই পার্লারের মেয়েরা এসে আয়নাকে বধু রূপে সাজাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। এপ্রথম আয়না নিজেকে দেখে লজ্জা পাচ্ছে। জারিফের জন্য আয়নার অনুভূতিগুলো একদম আলাদা। আয়না জারিফের মনে আয়নার জন্য শুধুমাত্র ঘৃণার সৃষ্টি হোক তা চায় তবেই তো আয়না জারিফকে মনের মত ভালবাসতে পারবে।

কক্ষের দরজা খোলার আওয়াজে আয়নার ধ্যান ভাঙ্গে। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে জারিফ হতভম্ব চোখে তাকিয়ে আছে আয়নার পানে। জারিফকে দেখে আয়না খানিকটা লজ্জা পেয়ে যায় সাথে সাথে মাথা নিচু করে ফেলে আর জারিফ সে তো তার সামনে ফুটন্ত লাল টকটকে গোলাপকে দেখছে যার রূপের মায়ায় জারিফ পাগল হয়ে যাচ্ছে।

আয়না জারিফের দিকে তাকিয়ে দেখে কেমন ঘোর লাগা চোখে তার পানে চেয়ে আছে। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে দোপাট্টাবিহীন লেহেঙ্গা পরিধান করে দাঁড়িয়ে আছে আয়না। আয়নায় লজ্জা রাঙা চেহারা দেখে জারিফ আরো পাগল হয়ে যায়। আস্তে আস্তে আয়না কাছে আসতে থাকে। জারিফের আগানো দেখে আয়না পেছনে ফিরে যায় ফলে আয়নার সামনের আয়নাতে জারিফের প্রতিবিম্ব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আয়না দেখতে পাচ্ছে জারিফের চোখে আজ অন্যরকম নেশা।
জারিফ আস্তে আস্তে আয়নার কাছে এসে পেছন দিক থেকে আয়নার ঘারে মুখ ডুবায়। আয়নার সজ্ঞানে থাকা অবস্থায় এই প্রথম জাইফের স্পর্শে আয়না কেঁপে উঠছে। দুহাতে লেহেঙ্গার নিচের অংশ খাঁমচে ধরে। আর জারিফ সে তো অন্য জগতে বসবাস করছে। আয়নার ঘারে অনবরত নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিচ্ছে জারিফ। আয়না চোখ বন্ধ করে জারিফের স্পর্শ অনুভব করছে।
হঠাৎ ফোনের রিংটোনের আওয়াজে জারিফের ঘোর ভাঙ্গে। ছিটকে সরে যায় আয়নার থেকে। আর আয়না! সে তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে জারিফের পানে। আয়না মনে মনে ভাবছে একটু আগেও তো ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ কী হলো?
জারিফ নিজের করা কাজে লজ্জিত হয় কিন্তু তা প্রকাশ করল না বরঞ্চ আয়নার দিকে আঙ্গুল উঠিয়ে বলা শুরু করল।

– এই মেয়ে, মায়া জানো তুমি? তোমার রূপের মায়ায় আমাকে বশ করতে চাচ্ছো? বিয়ে করেছি বলে ভেবো না যে আমি তোমার ওই রুপে পাগল হয়ে গিয়েছি আমার জায়গায় অন্য ছেলে থাকলে তাই করত। তোমার এই রূপ দেখে ঘায়েল হয়ে যেত। ছেলে মানুষ তো আমি আমার মন আছে চোখের সামনে এমন হট সেক্সি মেয়েকে দেখলে কার না কামুকতা বাড়ে বলোতো!

জারিফের মুখে আয়নার সম্পর্কে এমন বিশ্রি বিশ্রি কথা শুনে আয়না কষ্ট পায় কিন্তু তা বাহিরে প্রকাশ না করে বাঁকা হেসে বলতে থাকে।

– জামাই সাহেব চিন্তা করবেন না, একদিন আপনিও আয়নার রূপে মাতাল হবেন, মুগ্ধ হয়ে থাকবেন আয়নাকে দেখে, মাতাল হয়ে যাবেন আয়নার চোখে চোখ রেখে। সেদিন কিন্তু আমি আপনাকে নিজের কাছে আসতে দেবো না শত চেষ্টা করেও আপনি আমাকে কাছে পাবেন না।

আয়নার শেষের কথাগুলো বলার সময় চোখমুখ শক্ত হয়ে যায়। যা আয়নার চেহারা দেখে বুঝতে পারা যায় যে সে খুবই কষ্ট পেয়েছে কিন্তু জারিফ তো অসহায় সে আয়নার সামনে নিজের মনের অনুভূতি প্রকাশ করতে পারছে না। জারিফ এবং আয়নার কথার মাঝেই সাজিয়ার আগমন ঘটে।

– মাশাআল্লাহ আমার কিউট ভাবিটাকে সুন্দর লাগছে। একটা জিনিসের কমতি আছে দাঁড়াও ঠিক করে দেই। ভাইয়ু আমাকে একটু সাহায্য করতো ভাবির দোপাট্টা অনেক ভারি। আমি একা পারব না।

– পারব না আমার কাজ আছে।

– মাকে ডাক দেবো ভাইয়া ঝটপট আমার কাছে আসো আর ভাবিকে গোছগাছ করতে সাহায্য করো।

সাজিয়ার কথায় না চাইতেও জারিফ এগিয়ে যায় আয়নার দিকে। আয়নার মাথায় সুন্দর করে পিন দিয়ে আটকে দেয় জারিফ। আয়নাকে এখন পরিপূর্ণ লাগছে জারিফের মুখ দিয়ে আনমনেই উচ্চারণ করে ফেলে মাশাআল্লাহ।

——–

হামে তুমছে পেয়ার কিত্না
এ হাম নেহী জানেতে,,,,
মাগার জী নেহী ছাকতে তোমহারে বিনা!
হামে তুমছে পেয়ার,,,,
ছোনা গাম জুদায়িকা ওঠাতেহে লো
জানে জিন্দেগী কেছে বিতা তেহে লো
দিনভী হা হাতো লাগে বারেছকে ছামা,,,,
হামে ইনতেজার কিত্না এ হাম নেহী জানেতে
মাগার জী নেহী ছাকতে তোমহারে বীনা!
হামে তোমছে পেয়ার,,,,,,,

হুডি পরিহিত লোকটি আয়নার একটি ছবির সামনে দাঁড়িয়ে ছবিতে আয়নার ঠোঁটে বিশ্রী ভাবে স্পর্শ করছে আর গান গাইছে। লোকটি আবার মাথা থেকে কালো হুডি সরিয়ে ভয়ঙ্কর হাসি দেয়।

– এবার কোথায় পালাবে সুন্দরী! তোমাকে আটকে রাখার সকল ব্যবস্থা করে ফেলেছি আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা এরপর থেকেই তোমার ঐ নরম শরীরে আমার ছোঁয়া থাকবে আর কারো নয়।

লোকটির কথার মাঝেই জারিন ঘরে প্রবেশ করে।

– আপনি কিন্তু আপনার কথা রাখবেন। ভুলেও জারিফকে ফুলের টোকা পর্যন্ত দিবেন না। মনে রাখবেন জারিফ শুধু আমার আর আমার জন্য আপনি আয়নাকে পাচ্ছেন।

জারিনের কথায় লোকটি এবার গায়ের কালো জ্যাকেট টা খুলে দূরে ছুড়ে মারে। লোকটি জারিনের দিকে তাকাতেই জারিনন হা করে তাকিয়ে থাকে লোকটির দিকে। জারিনের সামনে থাকালোকটি দেখতে ইংরেজদের মত। মাথায় সোনালী চুল আর ধবধবে সাদা শরীর। মুখশ্রীতে অসংখ্য আচড়ের দাগ। লোকটির চেহারার ভ্রু যুগলে গভীর গর্ত করা লম্বাটে চিন্হ। দেখে মনে হচ্ছে কেউ ধারালো অস্ত্রের সাহায্যে আঘাত করেছে।
লোকটি এবার জারিনের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে থাকে।

– আমি আমার শিকারীকে একাই স্বীকার করি। কারোর সাহায্যের প্রয়োজন হয় না। তুমি তো আমার এই খেলায় একমাত্র টোপ। অনেক দিন হয় কোন নারীকে ছুঁয়েও দেখিনা চলো তোমাকে দিয়ে শুরু করি। আজ শরীরটা কেভন ম্যাচম্যচ করছে নারীর সঙ্গ নিতে।

কথাগুলো বলে লোকটি পৈশাচিক হাসি দিয়ে জারিনের দিকে এগিয়ে আসে। জারিন লোকটির এগিয়ে আসা দেখে বুঝতে পারে আজ তাঁর রেহাই নেই। কাঁপা কাঁপা গলায় জারিন লোকটিকে প্রশ্ন করে।

– আপনি কে? কি আপনার পরিচয়?

– আমি রকি, আয়নার বাড়ির একসময়ের কেয়ারটেকার ছিলাম। আয়নার শরীরের প্রতি আমার সেই ছোট থেকে লোভ। যেই শরীরটা আমার চোখের সামনে বড়ো হয়েছে। আয়নার শরীরে আমার হাত বিচরণ করতে অনেক ইচ্ছা হতো তাইতো আজ থেকে কয়েক বছর আগে আয়নার বাবার অবর্তমানে আয়নার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু শত আঘাতপ্রাপ্ত হয়েও আমার হাত থেকে রেহাই পেয়ে যায়। তাইতো রাগে-ক্ষোভে আয়নার বড়ো বোনের উনর ক্ষোভটা মিটিয়ে ফেলি। মেয়েটা যা ছটফট করছিল না! দেখে আনন্দ হচ্ছিল। এই যে এখন এত বছর পর কোন বাঙালি নারীকে ছুঁয়ে দেখবো অন্যরকম আনন্দ হচ্ছে এতে। এই মেয়ে তোমার এক একটা আর্তনাদ আমার মনে প্রশান্তি ছেয়ে যাবে সুতরাং দেরী করোনা ভালোই ভালোই আমার কাছে ধরা দাও নয়তো তোমার অবস্থা খুব খারাপ হবে।

জারিন রকি নামক লোকটির থেকে দৌড়ে পালাতে চেষ্টা করল কিন্তু পারল না। রকি জারিনকে ধরে বিছানায় ছুঁড়ে ফেলল এবং নিজের কার্যসিদ্ধি হাসিল করতে শুরু করল।

কথায় আছে পাপ বাপকেও ছাড়ে না। জারিন আয়না আর জারিফের সাথে যে খারাপ কাজ করতে চাচ্ছিলো তা প্রতিফল জারিন পেয়ে গিয়েছে।

গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here