#প্রণয়াভিলাষী
অন্তিম পর্ব
আফসানা

বাসায় এসে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেছে আনাহিতা। সেই সাথে কান্নাও পাচ্ছে। সামনে ওর তৃতীয় বর্ষ পরীক্ষা। এখনই বিয়ের জন্য পাগল হয়ে গেল সবাই! ক্লাস শেষে নিম্মির সাথেই ওর বাসায় গিয়েছিল আনাহিতা। সেখান থেকে শেষ বিকেলের দিকে বাসায় আসে। এসেই শুনতে পায় আজ পাত্রপক্ষ এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। এটা শুনে আরো অবাক হলো যে বিয়েটা না-কি নিম্মির মা এনেছে। স্থবির হয়ে বসে আছে আনাহিতা। সবাইই যখন বিয়েতে রাজী, তার মানে আটকানোর আর কোনো পথ নেই। নতজানু হয়ে মুখ গুঁজে কেঁদে ফেললো সে। মেয়েদের জীবনটা কচু পাতায় জমে থাকা পানির মতো। সে কখন কোথায় টুপ করে গড়িয়ে পড়বে বুঝতেও পারে না।

আনাহিতার বড়োআব্বু রাজী হতেন না। তার আগেই উনার স্ত্রী বলে রেখেছিলেন এই ব্যাপারে। বলেছে আনাহিতার মা-ও না-কি রাজী। আর পাত্রপক্ষের সবাইকেই তো উনাদের চেনা। উনারা দেখেছেন নিম্মির শ্বশুরবাড়ির পরিবারটা। উনাদের মতোই জয়েন্ট ফ্যামিলি। বাড়তি ঝামেলাও নেই। তাই আর অমত করেননি। যেদিন প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল সেদিনই নিমরাজি ভাবটা বুঝিয়ে দিলেন। এরপর দাওয়াত দিয়ে গেলেন বিয়ের দিনতারিখ ঠিক করার জন্য।

অবশেষে নীলাভ এক বছর পর বাড়ি আসতে রাজী হয়েছে। আকিবা কেঁদেকেটে বলেছেন বিয়েতে যদি সে না আসে তাহলে উনার মরা মুখ দেখবে। আনাহিতাও খুব কান্নাকাটি করেছে। একমাত্র বোনটা শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে। মনটাকে আর পাষাণ করে রাখতে পারেনি। বলেছে বিয়ের দুদিন আগে চলে আসবে।
___

নিম্মি বিয়ের আগের দিন চলে এলো আনাহিতার কাছে। সাজিদকে বুঝিয়ে আসতে হয়েছে। নয়তো আনাহিতা সন্দেহ করতে পারে। ওর কান্নাকাটি দেখে খুব খারাপ লাগছে। নিজের মতো করে সান্ত্বনাও দিচ্ছে। কিন্তু সারপ্রাইজের জন্য আসল কথাটা বলতে পারছে না। মাথায় হাত বুলিয়ে কেবল মনে মনে বললো “বেশি না। কেবল আজকের দিনটা একটু কষ্ট করে কাটিয়ে নে সোনা। কালকে তোর সকল কষ্টের অবসান হবে। এতগুলো দিনের কষ্ট, য/ন্ত্র/ণা এক নিমিষেই সব কর্পূরের মতো উবে যাবে। তোর মানুষটা তোকে সর্বোচ্চ সুখে রাখবে। যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।”

মেরুন রঙা ভারী শাড়ি গায়ে জড়িয়ে বসে আছে আনাহিতা। পুতুলের মতো লাগছে ওকে। বারোটার দিকে পার্লার থেকে দুইজন মেয়ে এসেছিল সাজাতে। এর আগেই নিম্মি জোর করে কয়েক লোকমা ভাত খাইয়ে দিয়েছিল। এরপরই সাজাতে শুরু করেছিল। একটু আগেই সাজানোর কাজ শেষ হয়েছে। নিম্মির হাত ধরে বসে আছে আনাহিতা। কেন যেন চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। নিম্মির অনুরোধে মন খুলে কাঁদতেও পারছে না। মেয়েটা চোখ রাঙাচ্ছে ওর এই মুহূর্তেও। একটুখানি মলিন হেসে বললো
—“এমন সময়েও আমায় চোখ রাঙাচ্ছিস! আর তো পাবিই না। কই যে বিয়ে হচ্ছে! তুই থাকবি এক দেশে আমি আরেক দেশে। আগের মতো আর…”

গলা কেঁপে উঠলো আনাহিতার। চোখও অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো। মাথা নত করে বসে ছিল বিধায় টলটলে অশ্রুকয়েক গাল বেয়ে না গড়িয়ে ডিরেক্ট কোলের ওপর পড়লো। নাক টেনে হালকা করে টিস্যু চেপে বাকি পানিটা মুছলো। ভাগ্যে যা ছিল তা-ই তো হচ্ছে। কেঁদে আর কী হবে?

কাজি আসলো। রুম ভর্তি হয়ে গেল মানুষে। বুকটা ধরাস করে উঠলো আনাহিতার। পূর্ণতা যখন পাবেই না তাহলে কারো জন্য এমন অনুভূতির জন্ম নেয় কেন? “আমাকে ক্ষমা করে দিবেন রেজওয়ান। যে কষ্ট আপনাকে দিয়েছি, সে একই কষ্ট আমিও ভোগ করেছি। আমাদের ভাগ্যে যদি এটাই লেখা ছিল তাহলে প্রকৃতি কেন আমাদের সাথে এমন খেলা খেললো?”

আচমকা ‘রেজওয়ান’ নামটা শুনে চমকে গেল আনাহিতা। ভাবলো সে কী কানে ভুল শুনেছে না-কি মনের কথাটাই কানে এসে বেজেছে? কাজি ‘কবুল’ বলতে বলছে। অদূরে আকিবা মুখে আঁচল চেপে কাঁদছে। নীলাভ বোনের পাশে বসেছে। মাথায় হাত বুলিয়ে কবুল বলার জন্য অনুরোধ করছে। চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে কবুল বলে দিল। এর পরেই রেজিস্ট্রি খাতাটা এগিয়ে দিল ওর দিকে। ঝাপসা চোখে দেখলো পাশের জায়গাটা শূন্য। কম্পিত হাতে সইটা করে দিল আনাহিতা। সবাই চলে যেতেই নিম্মির কাঁধে মুখ গুঁজে ডুকরে কেঁদে উঠলো। অস্ফুটস্বরে বললো
—“মানুষটা আমাকে কক্ষনো ক্ষমা করবে না রে নিম্মি। সেই দায় নিয়ে সারাটা জীবন পার করতে হবে। আমি কীভাবে নিজেকে সামলাবো, বলে দে না নিম্মি। আমার বুকটা ছিঁড়ে যাচ্ছে য/ন্ত্র/ণা/য়। কোথায় গেলে একটু শান্তি পাবো বলতে পারিস?”

—“যে তোর সারাজীবনের সঙ্গী হচ্ছে সে-ই তোর সকল দুঃখ, কষ্ট, য/ন্ত্র/ণা ভুলিয়ে দিবে দেখিস। শুধু একটু ধৈর্য ধর! আমার কথাটা রাখ সোনা। তুই অনেক সুখী হবি, অনেক সুখী। আর আমাকে ক্ষমা করে দিস দোস্ত।” নিম্মি কেবল এতটুকুই বললো। ওর গলায়ও কান্না দলা পাকাচ্ছে সত্যিটা না বলতে পেরে। কারণ যে কারণে আনাহিতা কাঁদছে সেটা যে অনর্থক কান্না তা ও বাদে সবাই জানে। আর সেটা বলতে না পেরেই নিম্মির কষ্টে কান্না পাচ্ছে।

সাজিদ নিম্মির কাছেই এসেছিল কোনো একটা কাজে। দরজার বাইরে থেকে আনাহিতার কান্নারত সবগুলো কথা-ই শ্রবণগোচর করলো সে। অতঃপর নিম্মির সাথে দেখা না করেই চলে গেল রেজওয়ানের কাছে। ততক্ষণে বিয়ে পড়ানো সম্পন্ন হয়ে গেছে। সাজিদ রেজওয়ানের পাশে বসে ধীর স্বরে কথাগুলো বললো। আনাহিতার কান্নার কথা শুনে বুকটা মোচড় মারলো রেজওয়ানের। ওর পাগলকরা ভালোবাসাটা টের পাচ্ছে রেজওয়ান। খেতে বসেও খেতে পারলো না আনাহিতার কথাগুলো ভেবে। ওকে না জানিয়ে কি ভুল করলো তবে! এত কষ্ট পাবে ভাবতে পারেনি। ভেবেছে হয়তো তাকে এতদিনে ভুলতেও শুরু করেছিল। কিন্তু এখন তো রীতিমত বিস্মিত হচ্ছে সে।

শত ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আনাহিতা নিম্মিকে বলতে পারেনি ওর সাথে যেতে। এখন তো ওর বিয়ে হয়ে গেছে। কেউ ভালো চোখে দেখবে না। আর সাজিদ ভাইয়া-ই বা অপরিচিত জায়গায় ছাড়বে কেন তার বউকে? অথচ ছোটোবেলা থেকে দুজনে বলে এসেছে একে অপরের বিয়ের সময় সাথে যাবে। এটাও তো বলতো দুজনে দুই ভাইকে বিয়ে করবে। তাহলে সারাজীবন একসাথে থাকতে পারবে। কিন্তু মানুষ যা ভাবে তার বাস্তবায়ন হয় কী সবসময়! এই যেমন রেজওয়ানের সাথে ওর মিলন হলো না।

কেঁদেকেটে চোখমুখ ফুলিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে আনাহিতা। গাড়িতে বসতেই আবারো পানি পড়া শুরু হলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়েই গাড়ি ছুটে অজানা গন্তব্যে। নাহ, অজানা না তো। বরং এখন থেকে ঐটাই তার স্থায়ী ঠিকানা। পাশে বসা মানুষটা একদম চুপচাপ। এ কেমন বিয়ে! না দেখেছে ওকে কেউ, আর না দেখেছে ও কাউকে। এই স্বামী নামক পুরুষটা কেমন সেটাও জানে না। ওকে অবাক করে দিয়ে একটা রুমাল এগিয়ে দিল মানুষটা। মুখের দিকে তাকানোর সাহস হলো না। মেহেদী রাঙা চুড়ি ভর্তি হাত বাড়িয়ে রুমালটা নিল। ভেজা কপোল ও চোখ মুছে হাতেই রাখলো সেটা।

এতগুলো বছরের লালিত ইচ্ছেটা পূরণ করতে আনাহিতার দিকে এগিয়ে গেল রেজওয়ান। ওর সাথে ঘেঁষে বসতেই কেঁপে উঠলো আনাহিতা। নত মাথা আরো খানিকটা নত করে ফেললো। তা দেখে নিঃশব্দে হাসলো রেজওয়ান। হাত বাড়িয়ে আনাহিতার ডান হাতটা নিজের হাতে নিল। আনাহিতা অবাকের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছে। ওর অনুমতি ছাড়াই লোকটা ওকে স্পর্শ করলো! চরিত্রে সমস্যা নেই তো! ভেবেই ভয়ে ঘামতে লাগলো। ঝটকাটা অবশেষে দিয়েই দিল রেজওয়ান। তিলটায় বারকয়েক স্পর্শ করলো প্রথমে। ফর্সা হাতে আবছা আলোয় তিলটা আকর্ষণ করছে রেজওয়ানকে। বুকের ভিতর কেমন সুখ সুখ অনুভূত হচ্ছে। কাঁপুনিতে বহাল থাকা আনাহিতাকে সর্বোচ্চ পরিমাণে কাঁপিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে তিলের ওপর মৃদু শব্দে চুমু খেলো রেজওয়ান। আনাহিতার মনে হচ্ছে সে এখনই অজ্ঞান হয়ে যাবে। থরথর করে কাঁপতে লাগলো সে। রেজওয়ান আরো দুইবার শব্দ করে চুমু খেলো সেখানে। এবার আর নিজেকে আটকাতে পারলো না আনাহিতা। প্রাণপুরুষের ইচ্ছেকর্মের কথা উনি কীভাবে জানে? ঠিক এই জায়গায়ই কেন চুমু খেলো? তাও আবার তিনটা। তবে কী…! দম বন্ধ করে বিস্ফোরিত চোখে ভাবনাতীত কাজ করা মানুষটার দিকে তাকালো। মেরুন রঙা শেরোয়ানি গায়ে স্বল্প পরিচিত কল্পনাতীত মানুষটা ভ্রু উঁচিয়ে মুখে নজরকাড়া রহস্যময়ী হাসি ঝুলিয়ে নির্নিমেষ তাকিয়ে আছে ওর দিকে। নিজের জায়গায়ই জমে গেল আনাহিতা। আরেকটু সেটিয়ে গেল জানালার দিকে। ডান হাতটা তুলে একবার হাতের দিকে তাকালো। আবারো তাকালো রেজওয়ানের দিকে। ওর মনে হচ্ছে চোখে ভুল দেখছে। নয়তো এই লোকটা এখানে কী করে?

বউ সাজে আনাহিতাকে এই প্রথম দেখলো রেজওয়ান। দেখতে পেয়েই চোখ দুটো শান্তি পেল, তৃপ্তি পেল। তৃষিত হৃদয়ের তৃষ্ণা দূর হলো। ওর উদ্দেশ্যে প্রথম কথা
—“এতো ভীতু কেন তুমি?”

আগের মতো সোজা হয়ে বসে মুখে হাত দিয়ে অস্ফুটে কেঁদে ফেললো আনাহিতা। এটা কী সুখের কান্না! না-কি ভয়ের! না-কি অন্যকিছু! এখন কী করা উচিত তার? চিৎকার করে কেঁদে সুখানুভূতিটা বোঝাবে! না-কি মানুষটার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে বুক ভাসিয়ে ফেলবে! কীভাবে নিজের ভিতরে বয়ে চলা অনুভূতির ঘূর্ণিঝড়টা বোঝাবে? কীভাবে নিজের অস্থিরতা পাশের মানুষটাকে বোঝাবে? পাগল পাগল লাগছে আনাহিতার। প্রশ্নের উত্তর আর দেওয়া হলো না। কাঁপতে লাগলো নিরন্তর।

গেইট দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করে বাড়ির মূল দরজার সামনে থামতেই হইচই লেগে গেল। এরপর গাড়িতে আর একটা কথাও আদানপ্রধান হয়নি দুজনের মাঝে। আনাহিতা কখনো নিঃশব্দে কখনো ফুঁপিয়ে কেঁদে গেছে নিরবধি। আর রেজওয়ান নির্নিমেষ দৃষ্টিতে দেখে গেছে তার প্রণয়িনীর সুখাশ্রু ঝরে পড়া। একবারের জন্যও থামায়নি ওকে। এতগুলো দিনের বিচ্ছেদের পর পূর্ণতার শেষ কান্নাটা আজ মন খুলে কেঁদে নিক। এরপর থেকে আর এক ফোঁটা পানিও ঝরতে দিবে না এই সুন্দর দুটো চোখ থেকে। রেজওয়ানের মনে পড়ে গেছে পরিচয়ের কয়েকদিন পরই আনাহিতা কেবল ওর দুটো চোখ কয়েক লাইন ক্যাপশনের সাথে পোস্ট করেছিল। সেদিনই বুকে ধাক্কা মতোন খেয়েছিল। তখন থেকেই ওর চোখ দুটো রেজওয়ানের এত প্রিয়। তাই তো সেদিন যখন সামনাসামনি দেখে তখন ওর চোখ খুব পরিচিত লাগছিল। কিন্তু এই কয়েক বছরে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে বিধায় চিনতে পারেনি। কী অবাক কাণ্ড! দুই ভাই-ই দুটো মেয়ের চোখের প্রেমে পড়েছে প্রথমে। এটা মনে হতেই মনে মনে হাসলো রেজওয়ান।

বরণ করার সময় দরজার মুখে দুই শাশুড়ীর পাশে নিম্মিকে চাপা হাসি মুখে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিল আনাহিতা। এই মেয়েটা এত খারাপ! ওকে একটাবার বলেনি পর্যন্ত। অথচ ওর পেটে কথা চেপে রাখতে পারে না বলেই এতদিন জানতো আনাহিতা। কিন্তু এখন যেন মুখে পাথর বেঁধেছে। বোম্ব মারলেও কথা বের হয় না। বধূবরণ শেষ হতেই আনাহিতাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসানো হলো। রাবেয়া ওর পাশে বসে বললো
—“অবশেষে রত্নটাকে ঘরে তুলতে পারলাম। আমার ঘাড়ত্যাড়া ছেলেটাকে একটু ঠিক করে দিও। আমার কথা তো শুনেই না। বউয়ের কথা না শুনে যাবে কই? বাউণ্ডুলেদের মতো ঘুরে বেড়ায়। বউকে পেয়ে এবার যদি পাগল ছেলেটা একটু ঘরমুখো হয়!”

শাশুড়ীর এমন খোলামেলা কথায় লাজে রাঙা হচ্ছে আনাহিতার মুখ। গাল ভারি হচ্ছে ক্রমশ। শাশুড়ী উঠে চলে যেতেই নিম্মি এসে পাশে বসে আনাহিতাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। হাসতে হাসতে বললো
—“অবশেষে আমার জা হয়েই গেলি দোস্ত।”

আনাহিতা নিজেকে ছাড়ানোর মিছে চেষ্টা করে অভিমানী স্বরে বললো
—“ছাড় তুই আমাকে। তোর সাথে আমার কোনো কথা নেই। বিয়ের আগেই পর করে দিয়েছিস। এখন এত আহ্লাদ করতে হবে না।”

নিম্মি জড়িয়ে ধরেই দুলতে দুলতে বললো
—“রাগ করে না সোনা। মনে মনে তো লাড্ডু ফুটছে। তা গাড়িতে রোমান্স-টোমান্স কিছু হলো? তোর কথা ভেবেই কিন্তু একা ছেড়েছিলাম তোদের। কয়টা চুমু দিয়েছে ভাইয়া?”

এবার লজ্জা ভেসে উঠলো চোখে মুখে। তিনটা চুমু দেওয়ার মুহূর্তটা মনে পড়ে গেল। মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে আবছা একটা হাসি চলে এলো। অধরযুগল কাঁপতে লাগলো তিরতির করে। নিম্মি ওর সুখী সুখী মুখটা দেখে ধরাবস্থায়ই কাঁধে মাথা রেখে বললো
—“আমি খুব খুশী দোস্ত। তোর সুখী মুখটা দেখতে আমার কী যে ভালো লাগছে!”

কথাগুলো বলতে বলতেই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো নিম্মির। আনাহিতার চোখেও পানি চিকচিক করছে। কতক্ষণ নিশ্চুপ বসে থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিম্মির দিকে তাকাতেই নিম্মি ওকে ছেড়ে সোজা হয়ে বসলো। অনুসন্ধিৎসু চোখে কয়েকপল পরখ করে ঠাণ্ডা স্বরে বললো
—“তোর সেদিনের বলা কথাটা আমি এখন বুঝতে পারছি। সেদিন মনে খটকা লেগেছিল ঠিকই। কিন্তু আসল কারণটা বুঝতে পারিনি। এখন চোখের সামনে সবটা পানির মতো পরিষ্কার। কেবলমাত্র আমার জন্য তুই এমন একটা কাজ করেছিস। আমার জন্য নিজের জীবনটা শেষ করেছিস। এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করার ইচ্ছে তোর কোনোকালেই ছিল না। শুধু আমার জন্য…”

বাকি কথাটুকু বলতে পারলো না আনাহিতা। কান্নায় গলা বুঁজে এলো। ওর জন্য এই মেয়েটা এত বড়ো সেক্রিফাইস করলো! ওকে আবারো কাঁদতে দেখে নিম্মি আলতো করে জড়িয়ে ধরলো । ধীরস্বরে বললো
—“একদম নিজেকে দোষারূপ করবি না। হ্যাঁ বলা যায় একপ্রকার তোর জন্যই আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর, এই পরিবারের মানুষগুলো এত ভালো যে আমাকে বুঝতেই দেয়নি আমি এ বাড়ির বউ। সবাই এমনভাবে ট্রিট করেছে যেন আমি এ বাড়ির মেয়ে। বিয়ে না হলে আমি বুঝতেই পারতাম না সাজিদের এমন পাগলকরা ভালোবাসা। আমার একটুও কষ্ট হয় না জানিস! সাজিদ এত ভালো একজন জীবনসঙ্গী যে আমি মনে মনে বলি আরো আগে কেন আমাদের দেখা হলো না! তাহলেই তো আরো আগে বিয়ে করতে পারতাম। আর নতুন নতুন সব অনুভূতির সাথে পরিচিত হতে পারতাম। এগুলো ভেবে মনে মনে তোকে ধন্যবাদ দিতাম। আমার সুখী হওয়ার পিছনে কিন্তু তুই-ই দায়ী। আর তোর মানুষটাও এত ভালো, এ কয়দিনে আমি বুঝে গেছি। তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে। যা তুই কল্পনাও করতে পারবি না। যখন থেকে তোর পরিচয় জেনেছে সারাক্ষণ কেবল তোর কথা-ই বলে গেছে। তোর কথামতো খালুজানের যেহেতু লাভ ম্যারেজে সম্মতি নেই, তাই প্ল্যানমাফিক অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের জন্যই সাজিদ আমাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। যাতে করে আম্মুর আনা প্রস্তাবে খালুজান নাকচ না করতে পারে। হয়তো অন্যভাবে প্রস্তাব দিলে কোনোমতেই কেউ রাজী হতো না তোকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে। তাই আমি যেহেতু এখানে আছি তাতে কেউ অরাজি হবেন না। তাছাড়া তোর সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। যদিও ভাইয়া কিছুতেই রাজী হচ্ছিল না। উনার জন্য আমরা সেক্রিফাইস করবো তা মানতে পারেনি। কিন্তু আমরা দুজন অনেকভাবে বোঝালাম। শেষে হার মানে আমাদের জোর এবং জেদের কাছে। আর উনার কথামতোই তোকে কিছু জানাইনি। তার জন্য প্লিজ মাফ করে দিস।”

কথাগুলো শুনে শূন্য মস্তিষ্কে বসে রইলো আনাহিতা। একটা প্রশ্ন মনে উদয় হতেই জিজ্ঞেস করলো
—“কিন্তু উনি আমাকে চিনতে পেরেছেন কবে আর কীভাবে? আমাকে তো আগে দেখেনি।”

নিম্মি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
—“প্রথম দেখা হওয়ার দিন। তোর ফোনের ওয়ালপেপার দেখে। আমার তো কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না এটা। তোর অথৈ নামটা বোধহয় ভাইয়ার জানা ছিল। তোকে অজ্ঞান হয়ে যেতে দেখে পাগলের মতো বিহেভ করছিল জানিস! তারপর আমাকে বললো যেভাবেই হোক সত্যিটা যেন জেনে উনাকে জানাই। সাজিদ আমাকে সব বলেছে। হঠাৎ করে কেন তুই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করলি সে চিন্তায় উনি ভালো ছিলেন না একটুও। খুব কঠিন সময় পার করেছেন। তোকে দেখার পরই যেন উনি প্রাণে বাঁচলেন।”

—“আমি কীভাবে উনাকে ফেইস করবো নিম্মি? আমার তো ভয়ে গলা থেকে বুকের ভিতর অবধি শুকিয়ে যাচ্ছে। সাহারা মরুভূমির মতোই খাঁ খাঁ করছে ভিতরে। যদি কিছু জিজ্ঞেস করে তাহলে কীভাবে জবাব দেব? গাড়িতে একটা কথাও বলতে পারিনি অজানা ভয়ে। উনাকে এমন শান্ত দেখে আমার ভয় বেড়ে গেছে।” চোখ মুখ করুণ করে কথাগুলো বলেই একটা শুকনো ঢোক গিললো আনাহিতা। এরপর নিম্মির হাত খামচে ধরে বললো “আমি আজ উনার মুখোমুখি হতে পারবো না রে নিম্মি। আমার ভয় করছে। আজ তোর সাথে থাকি প্লিজ? দ্যাখ, ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে।”

আনাহিতা ওর হাতদ্বয় বাড়িয়ে দিল সামনে। নিম্মি দেখলো সত্যি সত্যিই কাঁপছে। কিন্তু সেটা ভয়ে না, উত্তেজনায়। হাসিটা খুব কষ্টে আটকে গম্ভীর স্বরে বললো
—“আরে না, আমি সাজিদকে ছাড়া ঘুমাতেই পারবো না। তোরটা তুই বুঝে নে। ভাইয়ার বকা খেতে চাই না আমি। পরে দেখা যাবে তোকে না পেয়ে বাসরঘরে বসে কাঁদছে আর আমাকে অভিশাপ দিচ্ছে। না বাবা, আমি এটা পারবো না।”

আনাহিতা হতাশার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো
—“ড্রামাকুইন! এখন জামাই-ই তোর সব। তাকে ছাড়া তোর চোখে ঘুম ধরা দেয় না এখন। তুই আসলেই একটা পাষাণ। আমার কষ্টটা বুঝলি না। এত বড়ো সেক্রিফাইস করতে পারলি আর এই মামুলি কাজটা করতে পারবি না। বিয়ে করে তুই পর হয়ে গেছিস বুঝতে পেরেছি। এখন আমি তোর কেউ না।”

নিম্মি ফিসফিস করে বললো
—“আমার কেউ না হলেও কেউ একজনের কাছে অনেক বেশি কিছু তুই। এবং সেটা খুব দ্রুতই টের পাবি।”

আনাহিতা অজানা উত্তেজনায় ফের কেঁপে উঠলো। শিহরণ বয়ে গেল রন্ধ্রে রন্ধ্রে। কেবল আজকের জন্য যদি ও অদৃশ্য হয়ে যেতে পারতো! তাহলেই সকল অস্থিরতা, ভয় ও মিশ্র অনুভূতিদের দ্ব/ন্দ্ব/যু/দ্ধে/র অবসান হতো। কিন্তু আসলেই কী তাই! একবার না একবার মুখোমুখি তো হতেই হবে। সেটা যত দেরিতে হবে ততই তো রাতের ঘুম হারাম হবে ওর। আজকের রাতটা যদি এক পলকেই পার হয়ে যেত! তাহলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেত। কিন্তু তা কী আর সম্ভব! অলীক সব চিন্তাভাবনা।

কিছুক্ষণ আগে নিম্মি এসে আনাহিতাকে রেজওয়ানের রুমে বসিয়ে দিয়ে গেল। কাঁদোকাঁদো মুখে নিম্মির দিকে তাকিয়ে ছিল ও। কিন্তু নির্দয়া নিম্মি হেসে রুম ত্যাগ করে। ওকে একটুও বোঝার চেষ্টা করেনি। দুরুদুরু বুকে অস্থিরতার সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে অপেক্ষা করছে রেজওয়ানের জন্য। একদমই দেরি করেনি রেজওয়ান। সে নিজেও যে অপেক্ষায় আছে কখন বউটাকে একা পাবে। আনাহিতা রুমে আসার মিনিট দশেকের ব্যবধানেই হাজির হলো রেজওয়ান। দরজা লাগানোর মৃদু আওয়াজ কানে আসতেই অস্থিমজ্জায় কাঁপুনি উঠলো আনাহিতার। আবারো বুকের ভিতরটা সাহারা মরুভূমি হয়ে গেছে। ফাঁকা ঢোক গিলে বিছানা থেকে নেমে ধীরস্বরে সালাম দিল। কারণ পায়ে হাত দিয়ে সালাম করার নিয়ম নেই।

গুরুগম্ভীর স্বরের সালামের প্রত্যুত্তরে আনাহিতার শরীর বরফ হয়ে এলো। প্রার্থনা করছে পায়ের নিচের মাটিটা যেন ফাঁক হয়ে যায়। কিন্তু এটা কি আদৌ সম্ভব? রেজওয়ানকে এগিয়ে আসতে দেখে শাড়ি মুঠোয় চেপে ধরে চোখ কুঁচকে বন্ধ করে ফেললো। শক্ত কাঠ হয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ বন্ধ করতেই একটা মাতালকরা ঘ্রাণ নাকে বারি খেলো। যা নাসারন্ধ্র বেয়ে সোজা মস্তিষ্কে গিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করলো। কপাল ও নাকের একাংশে তাঁর নিঃশ্বাস আছড়ে পড়ছে। চিবুকে স্পর্শ করতেই শরীরের শক্তি নিঃশেষ হওয়ার প্রথম ধাপ শুরু হলো। কুঁচকানো আঁখিদ্বয় ছুঁয়ে দিল আলতো হাতে। জলে পূর্ণ টলটলে অক্ষুব্ধ দীঘির মতোই শান্ত সুরে রেজওয়ান ডেকে উঠলো
—“অথৈ, তাকাও একবার।”

হৃদকম্পন বেড়ে গেছে আনাহিতার। কতগুলো দিন, কতগুলো মাস পর প্রাণপুরুষের মুখে এই নামটা শুনতে পেল! কর্ণদ্বয় আজ ধন্য হয়ে গেল। রেজওয়ানের এক হাত এখনো আনাহিতার চিবুকে। আরেক হাতে ওর ডান হাতটা তুলে নিল। অতঃপর ওকে চমকে দিয়ে সেই তিলটাতে আবারো চুমু খেলো নিবিড়ভাবে। হাতটা ছাড়াতে চাইলো কিন্তু পারলো না। অবশেষে আর থাকতে না পেরে চোখ খুলে তাকালো। মুখশ্রী উঁচু করে রাখা ছিল বিধায় সরাসরি রেজওয়ানের চোখে চোখ পড়ে গেল। সে মনেপ্রাণে চাইলেও দৃষ্টি সরাতে পারলো না। সম্মোহিনী দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো কৃষ্ণকালো একজোড়া গভীর আঁখির দিকে। তাকিয়ে থাকতে থাকতেই চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো আনাহিতার। রেজওয়ান মাথা নেড়ে না করলো। এবং অবিশ্বাস্যভাবে চোখের পানি চোখেই শুকিয়ে গেল। রেজওয়ান অধর প্রসারিত করে বললো
—“জড়িয়ে ধরবে একবার?”

আনাহিতা বিলম্ব করলো না এক মুহূর্তও। বুকে মুখ গুঁজে খামচে ধরলো পিঠের কাছের গেঞ্জিটায়। তিরতির করে কাঁপতে থাকা ছোট্ট শরীরটাকে আদুরে বিড়ালছানার মতোই বুকের গভীরে মিশিয়ে নিল। দাউ দাউ করে তুষের আগুন জ্বলতে থাকা বুকে ঝরঝর করে শান্তির বর্ষণ নামলো। রেজওয়ান হুইস্কি স্বরে বলতে লাগলো
—“ভাবিনি তোমাকে কখনো এভাবে নিজের করে পাবো। ভেবেছিলাম তোমাকে বোধহয় হারিয়েই ফেলেছি। বোকা মেয়ে, একটাবার সমস্যার কথাটা বলতে তো পারতে! একটু বিশ্বাস রাখতে আমার উপর! যেভাবেই হোক আমি সমাধান করতাম। এভাবে তিলে তিলে কষ্ট পেতে হতো না কাউকেই। তোমার একটু সাহসের অভাবে দুই প্রান্তে দুইজন কেবল ধুঁকে ধুঁকে কষ্টই পেয়ে গেলাম। আমাদের গল্পটা অন্যরকমও হতে পারতো।”

বুকে মুখ গুঁজেই অস্পষ্ট স্বরে বললো
—“প্লিজ, ক্ষমা করে দিন আমাকে!”

কথাটা বলতে না বলতেই ওকে কোলে তুলে নিল রেজওয়ান। আঁতকে উঠে গলা জড়িয়ে ধরলো আনাহিতা। পা ফেলে ব্যালকনিতে চলে গেল রেজওয়ান। ওকে কোলে নিয়েই বসে পরলো সে। গলায় মুখ ডুবিয়ে দিল অস্থির হয়ে। গয়নার খোঁচা লাগতেই বিরক্তিতে ‘চ’ আকারান্ত শব্দ করে মুখ সরিয়ে আলতো হাতে গলার গয়নাগাটি খুলে সামনের কফি টেবিলে রাখলো। অতঃপর আবারো দু’হাতে কোমর পেঁচিয়ে ধরে গলায় মুখ ডোবালো। নিঃশ্বাস আটকে গেছে আনাহিতার। প্রলম্বিত শ্বাস নিয়ে রেজওয়ান নম্রস্বরে বললো
—“শ্বাস নাও। এভাবে নিঃশ্বাস আটকে বসে আছো কেন?”

কথাগুলো বলার সময় কণ্ঠদেশে অধরের ছোঁয়া পেয়ে আনাহিতা কুঁকড়ে যেতে লাগলো জোঁকের মতো। আচমকা চুমুর বর্ষণে দু’হাতে চুল খামচে ধরলো। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে বললো
—“কী করছেন?”

—“বউয়ের ইচ্ছে পূরণ করছি।” রেজওয়ানের নির্লিপ্ত জবাব।

বিস্ময়ের আতিশয্যে মুখ হা হয়ে গেল আনাহিতার। চোখ বড়ো বড়ো করে বললো
—“আমার ইচ্ছে মানে?”

রেজওয়ান মুখ তুলে মায়াবী আলোয় আনাহিতার চোখের দিকে তাকালো। এরপর ঠোঁট কামড়ে হেসে বলে
—“তোমাকে খুব আবেদনময়ী লাগছে।”

এমন উত্তরে ভাষা হারিয়ে ফেললো আনাহিতা। লাজ মুখে হাসি আটকে বললো
—“অসভ্য।”

—“আগেও বুঝি এভাবেই লজ্জা পেয়ে হাসতে!”

—“হুম, আপনাকে বলেছে! আমি অযথা হাসবো কেন?”

—“আমি দেখতাম তো।”

আনাহিতা বিবশলোচনে বললো
—“কীভাবে?”

সাথে সাথেই প্রতিউত্তর
—“মনের চোখ দিয়ে।”

চোখ নামিয়ে হেসে ফেললো আনাহিতা। রেজওয়ান এবার সিরিয়াস হয়ে বললো
—“আচ্ছা, প্রথম দেখা হওয়ার দিন আমার নাম শুনে তুমি সন্দেহ করোনি?”

আনাহিকা একবার তাকিয়ে ফের মাথা নত করে বললো
—“আমি চমকে গিয়েছিলাম। আপনি ফ্রিল্যান্সার এটা জানতাম। কিন্তু সাজিদ ভাইয়ারটা জানতাম না। নিম্মিকে কখনো জিজ্ঞেস করা হয়নি। আর সেদিন আপনিও ভেঙে বলেননি। তাই সন্দেহ হলেও পাত্তা দিইনি। কেবল নামটা শুনেই অস্থির লাগছিল।”

আনাহিতাকে বুকে চেপে ধরে তালুতে চিবুক রেখে বললো
—“তোমার ফোনের ওয়ালপেপার না দেখলে হয়তো আমিও তোমাকে পেতাম না। আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। নয়তো সেদিন আমার সামনেই কেন তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে? আর সাজিদের ফোন তখনই বা সাইলেন্ট ছিল কেন? নিম্মির নাম্বার আমার কাছে ছিল না। ওকে ফোন দেওয়ার জন্যই তোমার মোবাইল হাতে নিয়েছিলাম। আল্লাহর কী কুদরত! লক সিস্টেম চালু ছিল না। তাই তো ওয়ালপেপারটা চোখে পড়লো। তখনও পর্যন্ত আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। তারপর আমার ফোন নাম্বারের কয়েকটা সংখ্যা ডায়ালপ্যাডে তুলতেই নক্ষত্রের মতোই ভেসে উঠলো সেইভ করা নামটা।”

চুপচাপ মনোযোগী হয়ে কথাগুলো শুনলো আনাহিতা। সে নিজেও ভাবতে পারেনি এমন নাটকীয়ভাবে রেজওয়ানের সাথে দেখা হবে, অবশেষে বিয়ে হবে। ভাবতেই সর্বাঙ্গ শিহরিত হলো। রেজওয়ানকে ছেড়ে তার মুখের দিকে তাকালো। পলক না ফেলে তাকিয়েই রইলো অনেকটা ক্ষণ। মায়াঘোরে হারিয়ে গিয়ে অতৃপ্ত হৃদয়ের তৃষ্ণা মেটাতে পাগল হলো। প্রবল অনুভূতির জোয়ারে ভেসে গিয়ে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাস মেলালো। আগ্রাসীর মতোই একে অপরের মাঝে নিলীন হয়ে যেতে লাগলো। সকল সংযমের বাধ ভাঙলো চুরচুর করে। স্বপ্নের মতোই মানুষটাকে পেল ও। জীবনে আর কিছুই চাওয়ার নেই। তাঁকে পেয়েই শূন্য ঘটি পূর্ণ হয়ে গেল আনাহিতার। এমন একটা মানুষ যার জীবনে আছে। সুখী হতে আর কিছুর প্রয়োজন আছে কী তার! প্রত্যেকটা মুহূর্তে কেবল মানুষটার অশান্ত, অবাধ্য, উদ্ধত, উত্তাল এবং উন্মাদনায় উত্তপ্ত ভালোবাসার খুব দরকার। জীবনে ওর এটুকুই তো চাওয়া।

_______সমাপ্ত_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here