#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৮
#Sanchita(writer)

“আমার জীবনের চরম সত্য হলো আমি আমার মা-বাবার মেয়ে কখনোই ছিলাম. া!বিয়ের পর জানতে পারলাম আমি আমার শ্বশুড় বাড়ির এক আশ্রিতা মালির মেয়ে!কথসটা সেদিন মানতে পারিনী যখন আমার পালিত মা আমাকে সব প্রমান দিয়েছিলো তখনই মেনে নিয়েছিলাম আমি আমার মা-বাবার মেয়ে না আমার শ্বশুড় বাড়ির এক আশ্রিতা মালির মেয়ে!আর এই কথাটা যখন আমার শ্বাশুড়ি মিসেস কণা জানলেন ঠিক তখন থেকেই উনি ঘৃণা,দাপটে আমায় চিলেকোঠায় বসবাস করতে দিলেন আর আ্রতি পদে আমাকে আশ্রিতা মালির মেয়ে বলে অপমান করতেন।আমার আসল জন্মদাত্রী মা এইসব সহ্য না করতে পেরে তিনি স্ট্রোক করে মারা যান!আমার জীবনে কখনো খুশি নামক কোনকিছু তখনও ছিলোনা এখনও নেই।
জীবনের একটা সময়ে এসে আমি এত বড় একটা‌ সত্যর‌‌ মুখমুখি হবো ভাবতেই পারিনী!অন্যদিকে নির্ঝর আর আমার বিয়েটা এরেন্জ ম্যারেজ হলেও আমি নির্ঝরকে ভালোবেসেই বিয়ে করেছিলাম।তবুও বিয়েটা এরেন্জ ম্যারেজ নামেই পরিচয় পেলো।
আমার জীবনে আমি মরেও বেচেঁ আছি কারনটা আমার অনাগত সন্তানের জন্য!(মলিন স্বরে)

তিথি ব্যালকনির রেলিং ঘেষেই নিস্প্রভ মুখে পূর্ণিমার মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে।পৃথিবীর নিয়ম হলো সুখ,দুঃখ নিয়ে বেচেঁ থাকা তবে সবসময় কি সবার কপালে সুখ জোটে!নাহ্ সবার কপালে সুখপাখি ধরা দেয়না কিছু কিছু মানুষের কপালে সুখপাখির বদলে কালো মেঘেরা ধরা দেয় জীবনটাকে বিষিয়ে তোলার জন্য।
ষেমনটা পূর্ণিমা আর তিথির ক্ষেত্রে হচ্ছে।
এরিই মধ্যে নিদিয়াও আছে,আছে সেই অসহায় মহিলাটি।
তবে তাদের খবর কেউ কারোরটা জানেনা কেউ।

” তিথি তুমি অন্তিককে নিজের চাইতেও অনেক ভালোবাসো তাইনা!(স্মৃত হেসে)

তিথি নির্বাক চোখে পূর্ণিমা দিকে চেয়ে রইলো। সে যে অন্তিককে কতটা ভালোবাসে,অন্তিককে না পাবার কতটা আক্ষেপ,কস্ট,হাহা কার জমে আছে
তার তার বুকটা চিঁড়ে দেখলেও পারতো কেউ।।

“ভোর হয়ে গেছে তিথি,তুমি অফিসে যাবেনা!

তিথি স্মৃত হেসে বলে উঠলো।

” আমি জবটা ছেড়ে দিয়েছি পূর্ণি আপু!ওই নর-পশুদের মধ্যে আমি টিকে থাকতে পারবোনা তা জানা হয়ে গেছে দেখেই আমি জবটা ছেড়ে দিয়েছি।জানতে চেয়ে আমার হৃদয়ের কস্ট বাড়িয়ে দিও না আমি বলতে পারবোনা মুখে আটকায় আমার।কথাগুলো মনে পড়লে লজ্জায়-ভয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করে দম বন্ধ করে।অবশ্য আমি মরে যেতেই চাই অন্তিককে পেলাম না,ভালোবাসাটাকে পরিবারের লোকজনই মেরে ফেলল,সুখপাখিটাকে উড়িয়ে দিলো তাহলে বেচেঁ থেকে কি লাভ আমার!(স্মৃত হেসে)

পূর্ণি মাথা নিচু করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো তিথির জন্য তার অনেক খারাপ লাগে।ভালোবাসা না পাওয়ার কস্টটা যে কতটা ভয়ংকর সে জানে।তবে কার প্রতি তার ভালোবাসা সেতো নতুন বিয়ের করে স্ত্রী নিয়ে সুখে আছে।
সেতো কখনোই তাকে ভালোবাসেনি যেটুকু বেসেছিলো সেটুকু শুধু লোক দেখানো ছিল।
পূর্ণি দীর্ঘশ্বাস নিলো।
বলতে গেলে এককথায় কাল সারা রাত তারা ঘুমায়নি।পূর্ণি ছিলো তার ভাবনায় মত্ত আর তিথি ছিলো তার ভালোবাসাকে আর না দেখার অসহ্য যন্ত্রণায়।
.
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰

https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share
.
🍂
কফির মধ্যে বিষ মিশাচ্ছে নিদিয়া আজকে এই স্পেশাল কফি‌‌ দুকাপ সে মি.অভিনব রায় চৌধুরি আর কণা রায় চৌধুরিকে দিবে।
নিদিয়াে মুখে সয়তানী হাসি সাথে তৃপ্তির হসসি।
রায় চৌধুরি বাড়িকে সে মৃত্যুপুরি করে তুলবে যেখানে দিনের পর দিন এক এক জনকে করে মৃত্যু দান করবে।কস্টদায়ক যন্ত্রণা দিয়ে মারভে সবাইকে।ভালো মতো গুলিয়ে সয়তানী হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে একপা একপা করে কণা আত অভিনবের রুমের দিকে এগোচ্ছে নিদিয়া।
আজ যে মিসেস কণা আর মি.অভিনবের শেষ দিন সেটা নিদিয়া ডায়েরীর পাতায় লিখে রেখেছে।
রুমের সামনে গিয়ে একটু হেসে বলে উঠলো।

“আসবো শ্বা-শুড়ি মা!
রুমের মধ্যেই ছিলেন অভিনব আর কণা।তারা তাদের বিজনেস নিয়ে কথা বলছিলেন।

” আরে আরে নিদিয়া যে,,আসো ভেতরে আসো!একি তুমি কফি নিয়ে এসেছো সার্ভেন্টরা কোথায়!(ভ্রু কুচঁকে)

নিদিয়া খানিক হাসলো।
“একটা সার্ভেন্টই নিয়ে আসছিলো আমি বলকাম আমি কফিটা দিয়ে দেই তাই নিয়ে আসলাম।নিন খেয়ে নিন

বলেই অভিনব আর কণাকে কফি দুই কাপ দিলো নিদিয়া।নিদিয়ার মুখে সয়তানী হাসির রেখা।নিদিয়া অপেক্ষা করছে কখন ওরা কফি গুলো খাবে আর যন্ত্রণা পেতে পেতে মরবে।
নিদিয়ার কথা মতো অভিনব আর কণা কফি দুই কাপ খেয়ে নিলো।
কফি খাওয়ার সাত মিনিটের মধ্যেই প্রচন্ড কাশিঁ উঠতে লাগলো দুজনের।তাদের নাক মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো এদিকে নিদিয়া লোক দেখানোর জন্য চিন্তিত গলায়,মুখে ওদের ডাকতে লাগলো।সাথে বাড়ির সবাইকে।
সবাই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসলো।নির্ঝরও আসলো।
মা আর বাবার এই‌ অবস্থা দেখে নির্ঝর দ্রুত ডক্টরকে ফোন দিতে লাগলো তবে ততক্ষণ দেরি হয়ে গেলো অভিনব আর কণার মুখ,নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে হতে বড় বড় নিশ্বসস নিয়ে সেখানেই দুজনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো।
নির্ঝর বাকরুদ্ধ হয়ে অভিনব আর কণার দিকে চেয়ে আছে
নিরব,অর্ণব কান্নায় ভেংগে পড়েছে।মিশু লোকদেখানো কান্না করছে দাড়িয়ে দাড়িয়ে।।মিসেস মৌমি বাকরুদ্ধ হয়ে অভিনব আর কংার দিকে চেয়ে আছে।ক্ষণিকের মধ্যেই কিভাবে দুজন জলজ্যান্ত মানুষ মরে যেতে পারে।
নির্ঝর বাকরুদ্ধের সাথে অবাক হয়ে কণা আর অভিনবের দিকে চেয়ে আছে।তাদের দুজনের নাক,মুখ থেকে রক্ত বের হচ্ছে।
এর তো কোন কারণই নেই।নির্ঝর নিদিয়ার দিকে তাকালো।নিদিয়া কান্না করছে তবে তার মুখ,চোখ বলছে সে শোকাহত না বরং তার আনন্দ হচ্ছে।

নির্ঝর নিদিয়ার হাত টেনে এক কোনায় নিয়ে গেলো
“মা-বাবার এমনটা কিভাবে হয়েছে।তুমি ওনাদের কি খাইয়েছিলে যে ওনাদের মুখ,নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে!সত্যি করে বলো নিদুয়া তুমি কি খাইয়েছিলে ওনাদের?(ভ্রু কুচঁকে)

নিদিয়া কাদোঁ কাদোঁ মুখ করে বলে উঠলো।

” আমিদের কফি‌ দিয়েছিলাম যেই আমি রুম থেকে বের হতে লাগলাম তখনি ওদের কাশিঁর শব্দে আমি পিছু ফিরলাম দেখলাম তখনি ওদের মুখ থেকে রক্ত বের হতে লাগলো এরপর তোমাদের সবাইকে ডাকলাম!ওই সার্ভেন্ট টা মনে হচ্ছে ওই কফিতে নিশ্চিত কিছু মিশিয়েছে!ধরো ওই সার্ভেন্ট কে পালিয়ে যাবে নয়তো!(কাদোঁ কাদোঁ মুখ করে)

নির্ঝর হতবাক হয়ে নিদিয়ার মুখের দিকে তাকোয়ে আছে নিদিয়া কান্নার ভান করে অভিনব আর কণার পায়ের সামনে গিয়ে পা ধরে কান্না করতে লাগলো।
.
.
তিথি পূর্ণিকে নিয়ে আজ ঘুড়তে বেরিয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে একটা পার্কে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য বসবে।এরপর একটা বৃদ্ধাশ্রমে যাবে।
পঞর্ণি আজ অনেকদিন পর বাহিরে মুক্ত আকাশের নিচে বেড়িয়েছে মন খুলে শ্বাস নেওয়ার জন্য।
পূর্ণি চোখ বন্ধ করে খোলা- মুক্ত পরিবেশ উপভোগ করছে।আর তিথি চুপ করে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছে।কারন তিথি এখন যেই পার্কে আছে সেই‌পার্কেই তিথি আর অন্তিক প্রতিটা দিন আসতো, তারা কতোই না মজা করতো। আইসক্রিম খেতো এখানে থাকা একটা ছোট্ট ঝর্ণার পানি হাতে নিয়ে দুজন দুজনের গায়ে ছিটিয়ে দিতো। বাচ্চাদের সাথে দৌড়া- দৌড়ি করতো সব স্মৃতি গুলোই আবার তরতাজা হয়ে উঠলো এখানে এসে।
তিথি মন ভরে অন্তিকের সব মুহূর্ত গুলো চোখ বম্ধ করে উপভোগ করছে।
.
“তিথি তুমি কি তোমার জীবনটা এভাবেই একাকিত্বে কাটিয়ে দিবে!
.
.
তিথি খালি গলায় জবাব দিলো।
” হুম অন্তিককে ভুলে ওর জায়গায় আমি আর কাউকে আশা করতে পারবোনা বা আশা রাখিনা।অন্তিকই হলো আমার প্রথম ভালোবাসা, স্মৃতি আর শেষ ভালোবাসা, স্মৃতি সেই ভালোবাসা আর স্মৃতিতে আমি অন্য কাউকে আশা করিনা আর আশা করতেও পারিনা। আমি শুধু অন্তিক কেই ভালোবাসি পূর্ণি আপু সারাজীবন ওকেই বেসে যাবো। (খালি গলায়)
পূর্ণি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকালো।পরিবেশটা অনেক স্নিগ্ধ,‌ আমদ দায়ল হলেও কেনো জানি তিথি আর পূর্ণি এউ স্নিগ্ধ আমদ দায়ক পরিবেশটা উপভোগ করতে পারছেনা।
তিথি পুড়ছে তার ভালোবাসা না পাওয়ার দহনে। আর পূর্ণি পুড়ছে তার জীবনটা এভাবে ছাড়খাড় হয়ে যাওয়ার জন্য।

#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here