#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৫
#Sanchita(Writer)
পূর্ণির বুক কেপেঁ উঠছে ডায়েরীর ভাজে থাকা ছবিগুলো দেখে। অন্তিকের ভয়ানক কয়েকটা ছবি যেনো কেউ অনেকক্ষণ ধরে টর্চার করেছে। মুখ শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ যেনো মনে হচ্ছে কেউ ব্লাড,ছুড়ি দিয়ে শরীরে অনেক্ষণ যাবৎ আকাবুকি করেছে।পুরো শরীরের বিশ্রী অবস্থা।পূর্ণির মাথা ঘোড়াচ্ছে অন্তিকের এমন ভয়ানক বিশ্রী অবস্থা দেখে।
ডায়েরীর মাঝে এইসব ছবি কখনো পূর্ণি আশা করেনি। চোখ বন্ধ করে ছবিগুলো দ্রুত পাশে রেখে দিলো এইরকম ছবি তার সহ্যর নয়। পূর্ণি ডায়েরীর পাতার দিকে নজর দিলো কাঁপা কাঁপা দৃষ্টিতে।
০৪.০৪.২০২১
আজ অন্তিক আর আমার ভালোবাসার এক বছর পূর্ণ হলো।অথচ আজই অন্তিক আমাকে সারাজীবনের জন্য একাকিত্বের মাঝে ঠেলে দিয়ে আমাকে একা রেখে পরপারে চলে গেলো। আমি জনমের জন্য একা হয়ে গেলাম,যেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ভালোবেসে থাকবো পাশে আজীবন সেই অন্তিক আমাকে একা রেখে চলে গেলো।আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে চলেছিলো তবে পূর্ণতা পেয়েও রয়ে গেলো অপূর্ণ। সাহস নিয়ে বাবা,ভাইয়াকে বলেছিলাম আমি অন্তিককে ভালোবাসি বোধহয় এই বলাটাই কাল হয়ে দাড়াবে এটা জানতাম না।মেরে ফেলল আমার অন্তিককে নিজেরই বাবা-ভাইয়া।আমার ভালোবাসাকে স্বীকৃতি না দিয়ে অপূর্ণ করে দিলো তারা।ঘৃণা হচ্ছে প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে নিজের বাবা-ভাইয়ার উপর তারা আমার বাবা আর ভাইয়া না তারা হলো বাবা-ভাইয়ার নামে কলঙ্ক।ভালোবেসে কি দোষ করেছিলাম যে নিয়তিও অন্তিককে আমার কাছে থেকে ছিনিয়ে নিলো। আমি বাকহীন,নির্বাক হয়ে গেছি।প্রতিটা মুহুর্তে শ্বাস নেওয়া বড্ড দায় হয়ে পড়েছে।আমার জীবনের খুশি আমার পরিবার কেড়ে নিলো!বোধহয় এখানেই তিথি নামক অধ্যায়ের শেষ হবে?(লাল কালি দিয়ে)
পূর্ণির শ্বাস থেমে যাচ্ছে।মানুষ,নিয়তি কিভাবে এতটা কঠিন হতে পারে।তিথিকে বাহির থেকে দেখলে মনে হবে তার মতো সুখি আর কেউ নেই তবে ভেতরটা খুজলে,দেখলে নিশ্চিত মৃত্যুকে দেখতে পারবে ।তিথি ভালোবাসা না পাওয়ার দহনে জ্বলছে প্রতি নিয়ত। কিভাবে সে এই গোটা একটা বছর নিশ্বাস নিয়েছিলো,বেচেঁ ছিলো।
পূর্ণি আর কিছু পড়লোনা। কখনো ভাবতে পারেনি প্রেমময় একটা স্থানে এসে এইরকম বিভীষিকাময় কিছু একটা তার চোখে পড়বে।
পূর্ণি ডায়েরীটা বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নোলো। ব্যাপারটা সে কিছুতেই মাথা থেকে সরাতে পারছেনা। জেনো অন্তিকের সেই চেহারা,তিথির লেখা অক্ষর গুলো তাকে ক্রমশ এক আলাদা ভালোবাসা না পাওয়ার যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
পূর্ণি সবকিছু বাদ দিয়ে দ্রুত ব্যালকনিতে গেলো আর জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো।এই ব্যালকনি থেকে আসেপাশের সব কিছু দেখা যায়। এখানে আরও অনেক ফ্ল্যাট আছে।
পূর্ণির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামও জমেছে। খোলা আকাশের দিকে দৃষ্টিপাত করলো পূর্ণি। আকাশে কত মুক্ত পাখিরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াচ্ছে। আকাশ,পাখিগুলো পূর্ণিকে ভিষণ ভাবে ভাবাচ্ছে যদি সেও এই মুক্ত খোলা আকাশে এই পাখি গুলোর মতো ডানা নেলে উড়তে পারতো। যদি সব চিন্তা,কস্ট গুলো থেকে মুক্তি পেতো।
পূর্ণি ব্যালকনির রেলিং ঘেষে এক ধ্যানে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে আর জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে। অন্তিক আর নেই তিথির ভালোবাসা অপূর্ণ রয়ে গেলো। ভাবতেই খারাপ লাগছে।
যখন নিজের পরিবারই ভালোবাসার বিরুদ্ধে যায় তখন কেমন একটা অনুভূতি হয় তা পূর্ণি জানে তবে ভাই,বাবা হয়ে কিভাবে মেয়ের ভালোবাসাকে নিজ হাত নরক যন্ত্রণা দিয়ে মৃত্যু দান করতে পারে।
তারা মানুষ না জানোয়েরের চেয়েও খারাপ বলে মনে করে পূর্ণি।
নিয়তি আর এই পৃথিবীর মানুষ গুলো যে খুব স্বার্থপর,নিষ্ঠুর তা বেশ ভালোই টের পাচ্ছে পূর্ণি।
তার পূর্ণিমা নামক অধ্যায়ে ছিলো ভালোবাসা আর ভালোবাসা তবে বর্তমানে সেই ভালোবাসার বদলে রয়েছে একরাশ অবহেলা,স্বার্থপরতা,দম বন্ধকর যন্ত্রণা।
পাুর্ণি দুহাতে নিজের কান চেপে ধরলো আর মস্তিষ্ককে বলে উঠলো।
“আমি মুক্তি পেতে চাই,খোলা আকাশে উড়তে চাই নিজের মতো করে রঙে রঙিন করতে চাই।হ্যাঁ খুব করে বাচঁতে চাই আমি আমার অনাগত মায়ারণের জন্য।
.
.
“মানুষের কিডনি,চোখ পাচার নারী পাচার করাই তোমার ব্যাবসা তাইনা মি.নির্ঝর রায় চৌধুরি! এতদিন তুমি মানুষকে দহনের আগুনে পোড়াতে এখন আমি তোমাকে দহনের আগুনে পোড়াবো!
” তোমার গড়া ইতিহাস,আনবে তোমার সর্বনাশ!(ছুড়ি দিয়ে ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে)
মেয়েটার কথা শুনে ভয়ে নির্ঝরের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো।অন্ধকার রুমে মেয়েটাকে স্পষ্ট ভাবে বোঝাও যাচ্ছেনা,নির্ঝর কিছু বলতেও পারছেনা কারন মেয়েটা তার ঠোঁটের উপর ছুড়ি দিয়ে স্লাইড করছে কিছু বললেই নির্ঘাত ঠোঁট কেটে যাবে।
নির্ঝর এক মুহূর্তের জন্য সামনে থাকা মেয়েটিকে নিজের কাল মনে করে নিয়েছে।
মেয়েটা তার ঠোঁটের উপর ছুড়ি দিয়ে স্লাইড করা বন্ধ করে দিয়েছে।
নির্ঝর তার সামনে কারো উপস্থিতি টের না পেয়ে সামনের দিকে হাত বাড়ালো আর সাথে সাথে কেউ তার হাতে ধারালো কিছু দিয়ে কড়াঘাত করলো। নির্ঝর কলিজা কাপাঁনো আত্বচিৎকার দিয়ে উঠলো।
নির্ঝর আরও বুঝলো তার হাত থেকে প্রচন্ড বেগে ব্লিডিং হচ্ছে + হাত অনেক জ্বলছে।
হঠাৎ রুমের লাইট জ্বলে উঠলো।
নির্ঝর ব্যাথা কাতর চোখ চারদিকে চোখ বোলালো তবে কাউকে দেখতে পেলোনা। নির্ঝরের হাতের রক্তে ফ্লোর ভেসে যে লাগলো।
নির্ঝর দ্রুত ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গেলো।
একটা ডিল করতে ক্লাইন্টের সাথে দেখা করতে সে রেস্টুরেন্টে এসেছিলো। তখনই একটা মেয়ে তার গায়ে ভুল করে নুডুলসের বাটি ফেলে দেয় নির্ঝর সেটা পরিস্কার করতেই ওয়াশরুম আসে অতঃপর সেখান কার লাইট আপনাআপনি অফ হয়ে যার আর এতকিছু ঘটে যায় তার সাথে।
নির্ঝর বাহিরে আসতেই রেস্টুরেন্টের মালিক সহ সকল স্টাফরা তাকে ঘিড়ে ধরে।
“এটাতো জাস্ট ট্রেইলার ছিলো মি. নির্ঝর রায় চৌধুরি!পিকচার তো এখনো বাকি আছে।ট্রেইলার দেখেই যদি এমন ভাবে আত্বচিৎকার করেন তার নিজের মৃত্যুর পিকচারে কি করবেন?(মুচকি হাসি দিয়ে)
.
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰
https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share
.
” মিস তিথি আপনি যদি আমার সাথে বিনা সংকোচে এক ঘন্টা কিংবা দু ঘন্টা কাটান তাহলে আমি আপনাদের কোম্পানির সাথে ডিল করবো কি করবোনা তা ভেবে দেখতে পারি!ইউ নো হোয়াট আই মিন?কি বলেন মি.আশরাফুল খান আপনার পিএ তো পুরোই সোনায় সোহাগা,কি রুপ তার?(সয়তানী হেসে)
কথাটা কর্নকুহরে আসতেই তিথি থমকে দাড়ালো।আজকে প্রথম তিথি কারো কাছ থেকে এত বিশ্রী কথা শুনেছে। তিথির মাথা ঘোড়াচ্ছে,তিথি রিয়েশন বিহীন তার বস এর দিকে তাকালো। তার বসের মুখেও এই একই সয়তানী হাসি।
তিথির কানে কথাগুলো বারবার প্রতিফলিত হচ্ছে। যতবারই কথা গুলো মনে পড়ছে ততবারই শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠছে তার। এক মুহূর্তের জন্য তার অন্তিকের কথা মনে পড়ে গেলো। তিথি নিজের মনকে শক্ত করে আড়ালে নিজের ফোনের লাইভ রেকর্ডার অপশন চালু করলো,ফোনটার ক্যামেরাটা তার সামনে বসা ক্যারেক্টারলেস দুজন মানুষের আড়ালে ধরে রাখলো।আর মুখে কাঠ্যিনতা ফুটিয়ে শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
“জ্বী কি বললেন স্যার দয়া করে একটু আবার বলুব?(শক্ত কন্ঠে)
লোকটা আবারো পুনরায় সেই বিশ্রী শব্দগুলো বলতে শুরু করলো।
কথোপকথন টি সরাসরি লাইভ হতে লাগলো।সব জায়গায় দেখাচ্ছে লাইভটি।
মুহূর্তেই সব জায়গায় হৈইচই পড়ে গেলো।সনামধন্য মি.ইশান চট্টোপাধ্যায়ের এই অশ্লীল প্রস্তাবের ব্যাপারটি দেখে।
তিঠি মি.ইশানের কলার ধরে ওনাকে চেয়ার থেকে উঠিয়ে টানতে টানতে বাহিরে রাস্তায় নিয়ে যেতে লাগলো। ততক্ষনে রেস্টুরেন্টের সামনে মানুষের হৈইচই শুরু হতে লাগলো।
তিথি মি.ইশানের কলার ধরে সবার সামনে তাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দিলো। আর শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো।
” আপনার সাথে যে কোন কোম্পানির ডিল করতে হলে যে সেই কোম্পানির বসের পিএর সাথে সময় কাটানো লাগে তা আগে জানতাম না মি.ইশান চট্টোপাধ্যায়!আপনাকে বরাবরই সবাই সম্মান করে আমিও করি তবে আপনার ভালোমানুষির মুখের ভেতর যে একটা জঘন্য মুখোশ আছে তা আগে জানতাম না!(শক্ত কন্ঠে)
চারদিকে ততক্ষণে মানুষের ভিড় জমে গেছে রেস্টুরেন্টের সামনে।তিথি তার বসের দিকে তাকালো তার দিকে ক্যামেরা তাক করে আঙুল তুলে বলে উঠলো।
“আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করতাম মি.আশরাফুল খান তবে আপনি যে এমন চরিত্রহীন লোক আগে জানাছিলোনা।নিজের কোম্পানিকে উন্নত করতে আপনি এভাবে নিজের পিএ দের সর্বনাশ ঘটাতেন!আগেও আপনার অনেকগুলো মেয়ে পিএ ছিলো তাদের সাথেও আপনি এমনটা করতেন তাইনা আর এখন আমার সাথেও এইরকম করতে চেয়েছেন?আমি সবার উদ্দেশ্যে তেমন কিছু বলবোনা শুধু বলবো নারীজাত কোন ভো*গ*ব*স্তু না যে নিজের স্বাধ্যসিদ্ধির জন্য তার উজ্জত*হ*রণ করাবেন?
আমি এই দুজনকে আপনাদের কাছে দিয়ে গেলাম এখন এদের আপনারা কি শাস্তি দিবেন সেটা আপনারাই ঠিক করুন।
তিথি লাইভ অফ করে দিলো।তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে অনবরত। জীবন যে অনেক নিষ্ঠুর তা সে উপলব্ধি করছে প্রতিটা ক্ষণে।
#চলবে,,