#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_২_৩
#Sanchita(Writer)
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে একটা অচেনা জায়গায় দেখে ভয়ে চমকে উঠলো পূর্ণি।তার হাতে ক্যানেলা লাগানো। গায়ে সেই হসপিটালের পোশাকের পরিবর্তে অন্য একটা পোশাক!
ভয়ে ভয়ে পুরো কক্ষে চোখ বোলালো পূর্ণি ডান পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো চশমা পড়া কম বয়সী একটা মেয়ে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বইয়ের দিকে মনোযোগ তাকিয়ে আছে।
ভয়ে ভয়ে একটু নড়াচড়া করতেই ক্যানেলায় টান পড়লো আর ব্যাথায় পূর্ণি হালকা স্বরে সাউন্ড করলো।
এতে সোফায় বসা মেয়েটি হতচকিত হয়ে উঠলো আর তার দিকে তাকালো।
“একি তুমি উঠে গেছো! তোমার কি কোন সমস্যা হচ্ছে কোথাও ব্যাথা পাচ্ছো?(হতচকিত গলায়)
পূর্ণি ভয়ে কোন কথা বলছেনা তার মাথায় ঘুড়ছে সে কোথায় আছে!তার তো গাড়িটার সাথে ধাক্কা লাগার পর আর কিছুই মনে নেই!আর সামনে বসা এই মেয়েটিই বা কে?
এইরকম হাজারো প্রশ্ন পূর্ণির মাথায় ঘুড়ছে।এরই মাঝে মেয়েটা আবারো বলে উঠলো।
“থ্যাংক গড তোমার জ্ঞান ফিরেছে, আমরা তো ভেবছিলাম তোমার জ্ঞান আর ফিরবেনা!পুরো সাত ঘন্টা পর তোমার এখন গিয়ে জ্ঞান ফিরেছে!আচ্ছা তুমি কি কথা বলতে পারোনা নাকি এইযে কত কথা বলছি তুমি একটাও উত্তর দিচ্ছোনা?(ভ্রু কুচঁকে)
পূর্ণির নির্বাক চোখে মেয়েটিকে লক্ষ্য করলো সুতির একটা থ্রী-পিস,গলায় ওড়না জুলানো,মাথায় ঝুটি করা আর মুখের সামনে দুইপাশ বেয়ে কিছু চুল ছেড়ে রাখা।চোখে চশমা দেখে একদম ভদ্র ঘরের মেয়ে মনে হয়।
পূর্ণি শুকনো গলায় বলল।
” আমি কোথায় আছি?
মেয়েটি মুচকি হেসে বলে উঠলো।
“তুমি এখন আমাদের বাড়িতে আছো!আচ্ছা তুমি তখন প্রেগনেন্ট অবস্থায় রাস্তায় রাস্তায় কি করছিলে?গায়ে হসপিটালের পোশাক ছিলো,তুমি কি হসপিটাল থেকে পালিয়ে টালিয়ে আসছো নাকি?(ভ্রু নাচিয়ে)
পূর্ণির মনে পড়তে লাগলো আগের ঘটনাগুলো। গত চব্বিশ ঘন্টা ধরে তার সাথে নিয়তি এতটা নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলো যেনো পূর্ণির প্রতিটা নিশ্বাস ফেলাও কস্টকর হয়ে গেছিলো!প্রতিটা ক্ষণ বিষামদয় এক যন্ত্রণা অনুভব করেছিলো।
পূর্ণির নির্ঝরের কথা মনে পড়লো! সে তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করেছে তাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়েছে!
পূর্ণির সবচেয়ে বেশি ঘৃণা লাগছে নিরব,মিসেস কনা আর তার বোনের মতো বড় জা আর অভিনব রায় চৌধুরির উপর।
পূর্ণির নিজের উপরও নিজের ঘৃণা লাগছে
বামুন হয়ে সে ভুলবশত চাদেঁর উপর হাত বাড়িয়েছিলো যার ফলে নিয়তি তাকে এইরকম কঠোর শাস্তি দিচ্ছে।
পূর্ণি নির্ঝরের সাথে থেকে থেকে নিজের জায়গাটাই ভুলে গেছিলো সেতো রায় চৌধুরি বাড়ির সামান্য মালি,আশ্রিতার মেয়ে ছিলো।
মালি,আশ্রিতার মেয়ে হয়ে কি এত বড় বাড়ির বউ হওয়া যায়।
সব ভেবে পূর্ণির চোখ বেয়ে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।
সোফায় বসে থাকা মেয়েটি এবার উঠে তার কাছে এসে বসলো আর বলল।
” আচ্ছা তুমি তোমার বাড়ির ঠিকানাটা দাও আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে পৌঁছে দিবো!
মেয়েটির কথা শুনে ভয়ে আতঁকে উঠলো পূর্ণি। ও বাড়িতে যদি সে পুনরায় আবার যায় তাহলে তার সাথে সাথে তার অনাগত সন্তানটাও বাচঁতে পারবেনা।
পূর্ণি ভয়ে ভয়ে দ্রুত বলে উঠলো।
“না আমি বাড়ি যাবোনা!আমার কোন বাড়ি নেই বাড়িতে গেলে আমার সাথে সাথে আমার অনাগত সন্তানটাও বাচঁতে পারবেনা।পৃথিবীর আলো দেখতে পারবেনা!আমাকে মা বলে ডাকবেনা?(ভয়ে ভয়ে)
পূর্ণির কথা শুনে মেয়েটি ভরকে যায়।
পূর্ণি এবার সব বলতে লাগলো মেয়েটিকে। গত দুদিন থেকে এই পর্যন্ত তার সাথে কি কি হয়েছে!
সব শুনে মেয়েটি মুখে হাত দিয়ে চোখ বড় বড় করে বলে উঠলো।
” ও মাই গড! তোমার সাথে এতকিছু ঘটে গেছে।মানুষ এতটা হার্টলেস কিভাবে হতে পারে সামান্য আশ্রিতা,মালির মেয়ে বলে কি এতটা অবহেলা,অত্যাচার করাটা তাদের কি ঠিক হয়েছে!আর তোমার হাসবেন্ডই বা কেমন তোমাকে এইরকম প্রেগনেন্সির টাইমে ডিভোর্স দিয়ে অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করে! এরা তো জানোয়ারের চেয়েও অধম?(হালকা রাগী স্বুরে)
পূর্ণির চোখ বেয়ে আপন গতিতে জল বের হয়ে লাগলো। পূর্ণি কাদঁছে তবে নিস্বঃব্দে! কখনো ভাবেনী লাইফে এমন একটা সিচুয়েশনে এসে তাকে দাঁড় হতে হবে।
মেয়েটি আর পূর্ণি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো।
“তোমাকে আর তোমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি নামক কিট দের কাছে রেখে আসা যাবেনা!আজ থেকে বরং তুমি এখানেই থাকবে আমার সাথে আমি এই ফ্ল্যাটে একলাই থাকি আমার মা,বাবা-ভাইয়া সবাই ইউএস এ থাকে কিছুদিন পর তারাও বিডিতে ব্যাক করবে!ওহ হ্যাঁ তোমার নামটাই তো জানা হলো না।আমার নাম তিথি আর তোমার নাম?(উচ্ছ্বাসিত কন্ঠে)
পূর্ণির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে এখনো।ডান হাতের কনুই দিয়ে নিজের চোখের জল মুছে নাক টেনে মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো।
” পূর্ণিমা।
তিথি চোখে-মুখে উচ্ছ্বাসের ছায়া রেখে উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠলো।
“পূর্ণিমা! আসলেই একদম তুমি তোমার নামের মতোই,তোমার চোখে মুখে পূর্ণিমার উজ্জল আলোই বিরাজমান!আমি ভাবছি নির্ঝর ছেলেটা কিভাবে তোমার মায়া কাটিয়ে এইরকম একটা সিরিয়াস মোমেন্টে ডিভোর্স দিয়ে দ্বিতীয় বিয়েতে আবদ্ধ হলো!
তবে তোমার জন্য আগামীতে সমস্যা হতে পারে! জানো তো এই সমাজের লোক তোমার এই সন্তান নিয়ে অনেক কথা শোনাবে!অবৈধ বলে জাজমেন্ট করবে,অপমান করার চেষ্টা করবে!তোমার পক্ষে একা ওকে এই পৃথিবীতে মানুষ করা সম্ভব না?(চিন্তিত কন্ঠে)
তিথির কথা শুনে পূর্ণির বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো।
পূর্ণি ভাবছে কিভাবে তার অনাগত সন্তানকে পিতৃহীনা ভাবে মানুষ করবে।কিভাবে সমাজের লোকজনের থেকে আড়াল করে ওকে নিজের মতো করে গড়ে তুলবে।
পূর্ণি নিশ্বাস নিতে কস্ট হচ্ছে,তিথির কথাগুলো যেনো তাকে শ্বাস রুদ্ধ করে দিচ্ছে।
“আচ্ছা তুমি এখন এইসব চিন্তা বাদ দাও আমি কিছু খাবার আনছি খেয়ে নিবে!
বলেই তিথি রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
পূর্ণি বেডের সাথে হেলান দিয়ে ভাবছে কিভাবে সে একা তার অনাগত সন্তানকে মানুষ করবে,নিজের মতো করে গড়ে তুলবে,অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।
পূর্ণির ভাবতেও কস্ট হচ্ছে এগুলো সমাজের লোক যদি তাকে আর তার সন্তানকে মেনে না নেয় প্রতিনিয়ত অপমান করে,অবৈধ বলে আখ্যায়িত করে,বিশ্রী বিশ্রী উপাধি দেয়
পূর্ণি চোখ বন্ধ করে মাথা চেপে ধরেছে।
.
.
“গোটা আস্ত একটা মেয়ে পালিয়ে গেছে হসপিটাল থেকে আর তোমরা চেয়ে চেয়ে খালি দেখছিলে!ওকে আটকাও নি কেনো?(রাগান্বিত স্বরে)
মিসেস কণা রায় চৌধুরি” র চেচাঁমেচিতে সকল নার্স,স্টাফরা মাথা নিচু করে রইল।
এদিকে দুহাতে চুল খামচে মাথা নিচু করে চেয়ারে বসে আছে নিরব
“তোমরা চেয়ে চেয়ে কি করছিলে! এতগুলো লোকের চোখকে ফাকিঁ দিয়ে পূর্ণি পালিয়ে কিভাবে গেলো!ওকে যদি এখন না পাই তাহলে এই হসপিটালের যে কি অবস্থা করবো জাস্ট ডোন্ট নো?(রাগী কন্ঠ)
স্টাফ,নার্সরা মাথা নিচু করে রেখেছে এদিকে মিসেস কণা আর নিরব চেচাঁমেচিই করে যাচ্ছে।
পূর্ণির বড় জা মিশু হাতের সামনে আয়না নিয়ে তাতে মুখ দেখতে দেখতে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে ভাব নিয়ে বলে উঠলো।
“ঢংয়ের আর শেষ নেই,ন্যাকা শুনুন মা ওই মেয়ে পালিয়েছে তো আরও ভালো হইসে!এত বছরের আপদ ঘাড় থেকে নেমেছে! আর যেখানেই যাক না কেনো কস্ট ওর পিছু ছাড়বেইনা অলক্ষণে মেয়ে!আমাদের আর ওকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কোন আজাইরা প্রয়োজন নেই!(মুখ ভেংচি দিয়ে)
নিরব ভ্রু উচিয়ে মিশুর দিকে তাকালো আর বলে উঠলো।
” বৌদি তোমাকে এতক্ষণ আমি লক্ষ্যই করিনী মনে হচ্ছে আগের চেয়ে আরও হ*ট,সুন্দরি হয়ে যাচ্ছো!কি ব্যাপার কি ক্রিম ইউজ করো?ওয়াও কি রুপ তোমার যদি বড় ভাইয়া না থাকতোনা তাহলে তোমাকে আমিই বিয়ে করতাম!(ভ্রু উচিঁয়ে)
মিশু লজ্জার মুচকি হাসি হাসলো। মিসেস কণা বিরক্তিকর মুখ করে আরেকদিকে ফিরলেন।নার্সরা একেকজন লজ্জায় মাথা নিচু করে অন্য নার্সের সাথে ফিসফিস করতে করতে অন্যদিকে চলে যেতে লাগলো।
“দেখেছিস হিয়া এই লোকজন গুলোকে! মানুষ কতটা খারাপ হলে নিজের আপন বৌদিকে এইসব কু-কথা বলে?
” যার জন্ম দাত্রী মা-বাবারই চরিত্র খারাপ তাদের ছেলে তো খারাপ হবেই!গাছ যেমন তার ফলও তো তেমনই হবে?(ফিসফিস করে)
#চলবে,,
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰
#পূর্ণিমা🍂
#পর্ব_৩
#Sanchita(Writer)
“পূর্ণিমার রাত! চলো তুমি আর আমি এই হালকা আলোময় পথে একটু হাটি তোমার হাতটা ধরে!কতদিন তো তোমাকে ছুঁই না আচ্ছা তুমি কেনো রাগ করে চলে গেলে বলোতো অন্তিক!(ভাংগা স্বুরে)
বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে তিথি। তার থেকে দুহাত দূরেই বেলকনির রেলিং ঘেষেঁ দারিয়ে আছে অন্তিক। তিথির চোখে স্পস্ট জল গুলো পূর্ণিমার উজ্জল আলোতে চিকচিক করছে । অন্তিক বাকহীন হয়ে ঠোঁটে একরেখা হাসি ফুটিয়ে উঠলো।ধিমি কন্ঠে বলে উঠলো।
” ভাগ্যতে যা পাওয়ার নেই তার দিকে ফিরে তাকাতেই নেই তিথি!তেমনই আমি তোমার ভাগ্যতে ছিলাম না তাই আমাদের দুজনের মিল হয়নি! বলো পৃথিবীতে তো আর সব ভালোবাসা পূর্ণতা পায়না কিছু কিছু ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েও অপূর্ণ থেকে যায় তেমনি আমাদের প্রেমকাহিনীও পূর্ণ হয়েও অপূর্ণ! থাক না আমি নাহয় ভ্রম হয়ে তোমার সপ্নতে আসবো প্রতিদিন এই ভাবে।আজ তাহলে আসি আমাকে যেতে হবে ভালো থেকো কাল পর্যন্ত!(ধিমি স্বরে)
বলতে বলতে অন্তিক হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো।এদিকে তিথির চোখ বেয়ে আপন-গতিতে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আচ্ছা নিয়তিকে শুধু তার সাথেই এমন করছে নাকি আরও অনেকের সাথেই এমনটা করছে। অন্তিক কে প্রকৃত ভালোবেসেও কখনো তাকে নিজের করতে রাখতে পারেনি একটা ঝড়ের মতো কিছু সময়ের জন্য তার জীবনের মরে যাওয়া বাগানটাতে ভালোবাসার এক আলাদা রঙিন ফুল ফুটিয়েছিলো। বাচাঁর নতুন করে সপ্ন দেখিয়েছিলো তবে সপ্নটা কিয়ৎক্ষণের জন্যই স্থায়ী ছিলো! ঝড় যেমন কয়েক ঘন্টা বা ক্ষণের মতো থাকে তেমনি অন্তিকও ছিলো কয়েকদিনের সপ্ন দেখানোর, নিজেকে নিজের মতো বাচঁতে দেওয়ার সঙ্গী ছিলো। যখন তিথির জীবনে আবারো ভালোবাসার ফুল ফুটলো ঠিক তখনই এক দমকা হাওয়ায় আবারো সেই ফুলটা নুইয়ে ভেংগে গেলো। অর্ধ পথেই অন্তিক তার হাত ছেড়ে দিলো।
তবে হাত ছেড়ে দিয়েও সম্পর্কের বাধঁনটা প্রকৃত ছিলো বলেই অন্তিক ভ্রম হয়ে তার কল্পনা-জল্পনাতে আসে শুধু কিয়ৎক্ষণের শান্তি মেলানোর জন্য।
তিথি চোখের জল মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করে রুমে আসলো। তিথির নজর গেলো বেডে শুয়ে থাকা পূর্ণির দিকে। জানালা খোলা দেখে পূর্ণিমার এক টুকরো উজ্জল আলো এসে পূর্ণির মুখশ্রীতে বিচরণ করছে।
চোখ-মুখ উজ্জল হয়ে উঠেছে।
তিথি শত দুঃখের মাঝেও বিরবিরিয়ে বলে উঠলো
“পূর্ণিমা! তাইতো পূর্ণিমার আলো চোখে-মুখে পড়াতে এমন উজ্জল,স্নিগ্ধ লাগছে!ভাগ্য হয়তো পূর্ণিমাতিথির কপালে অশিষ যন্ত্রণা লিখে রেখেছে তাইতো পূর্ণিমা তার সংসার,ভালোবাসা ঠিকমতো পায়নি আর তিথি সেও তার প্রকৃত ভালোবাসা সেও পায়নি!দমকা হাওয়ায় দুজনের একই কস্ট মিলিত হয়েছে একই ধারাতে;(বিরবিরিয়ে)
তিথি জানালাতে পর্দা টেনে নিজেও পূর্ণির পাশে দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো।
এদিকে তিথি শুতেই কিছুক্ষণ পর চোখ মেলে তাকালো পূর্ণি। পূর্ণির একটা বিশেষ গুণ আছে আর সেটা হলো হাজারো কস্টকে লুকিয়ে ঘুমানোর নাটক করা।
এরপর যখন রাত্রি গভীর হবে আর একটা কাক-পক্ষিও জেগে থাকবেনা তখনি নিজের কস্টগুলোতে নিশ্চুপ অশ্রু ধারায় প্রকাশ করবে।
পূর্ণি চুপচাপ নিজের চোখের অশ্রু বিসর্জন করছে। রাত প্রায় গভীর এখন। চোখের অশ্রুকণায় বালিশ ভিজে যেতে লাগলো তরিৎ গতিতে।
” নিশ্চুপে অশ্রু বিসর্জন দিলে যে কস্ট কমে যাবে তা কিন্তু না পূর্ণি আপু। কস্টকে কখনো চাপা দিয়ে রাখতে নেই সবার মাঝে বিলীন করে খুশি থাকতে চেস্টা করতে হয় তাহলেই সুখেরা একে একে ধরা দিবে।(ভাংগা স্বরে)
পূর্ণি চমকে উঠলো তিথির গলার ভাংগা স্বরে কথাটা শুনে। তিথি কিভাবে বুঝলো যে সে কান্না করছে, পূর্ণি তো একদম নিশ্চুপে কান্না করছিলো তাহলে কিভাবে বুঝলো।
“ভাবছো কিভাবে বুঝলাম! এত বড় আঘাত পেয়েছো, রাত্রে ঘুমানোর বদলে যে অশ্রু বিসর্জন দিবে তা কিন্তু আমার বেশ জানা আছে? একটুর জন্য তোমার আর তোমার বেবির ক্ষতি হয়ে যেতো যদি সঠিক সময়ে ডক্টরের কাছে নিয়ে না যেতাম! আমি তো ভেবেই বসেছিলাম আমার বেখেয়ালির কারণে একটা নিস্পাপ শিশু মায়ের পেটেই মারা যাবে তবে ডক্টর আশা দিয়েছিলো।(হালকা গলায়)
পূর্ণি কান্নারত স্বরে তিথিকে বলে উঠলো
” তুমিও তো আমার মতোই রাতে কান্না করো!তাহলে আমার কান্নাকে কেনো আটকাতে চাইছো!আমার ভাষ্যমতে কান্না করলেই দুঃখ গুলো একটা সময় বিরক্ত হয়ে কমে আসে! ভালোবাসা না পাওয়াটা যে কতটা কস্টের তা আমার ভেতরটা দেখলে বুঝতে পারতে! আমার জীবনের দু বছর আমি নির্ঝরকে দিয়েছি তার সকল চাহিদা পূরণ করেছি, এই দু বছরে যে তার হাতের কত মার খেয়েছি হিসাব নেই প্রথমত সে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও বিয়ের এক মাস পর থেকেই সে পাল্টে যায় টর্চার করা শুরু করে আমাকে!তবুও কেনো তার কাছে পরে ছিলাম জানো? কারন ভালোবাসিতো তাকে!জানো আমি তো ভুলেই গেছিলাম যে আমি সামান্য তাদের বাড়ির আশ্রিতা,মালির মেয়ে ছিলাম।বামুন হয়ে যে চাঁদের দিকে আঙ্গুল বারিয়ে ভুল করেছিলাম তাই মিসেস কণা রায় চৌধুরি ভালো মতো বুঝিয়ে দিলো আমার মাতৃত্বে আঘাত করে?( কান্নারত স্বরে)
তিথি আর কিছু বলল না অন্ধকারে চুপ করেই রইলো। থাক না পূর্ণি পূর্ণির মতো অশ্রু বিসর্জন দিয়ে একটু হালকা হোক। হাজারো কস্টের মাঝে,কিছু কিছু সময় কাদাঁ ভালো। তিথি কাদেঁ তখন যখন অতীতের স্মৃতিটা মনে ভাসেঁ। আজ পূর্ণির কস্ট গুলোকে দেখে সেও কাদঁলো তবে একান্তে না অন্তিকের সামনে।
তিথি মাঝে মাঝে ভাবে অন্তিক কি আসলেই তার ভ্রম হয়ে আসে নাকি সত্যি হয়ে। না না মৃত মানুষ কিভাবে সত্যি হয়ে আসতে পারবে? হয়তো গভীর কস্টের মাঝে অন্তিকের ভ্রম তার কাছে আসে একটু কস্ট কমানোর জন্য।
.
🌼
.
নিয়মিত গল্প পেতে আমাদের লিংকে দেওয়া গ্রুপে জয়েন হয়ে সাথে থাকুন।🥰
https://www.facebook.com/groups/999645603764557/?ref=share
নতুন ভোরের আগমন! নতুন এক রুপে।
যে মানুষ গুলো সারাটা রাত কান্না,ডিপ্রেশন,ভাংগা অনুভূতির সাথে জড়িত থাকে গভীর রাতের প্রতিটা ঘন্টা,প্রতিটা মিনিট,প্রতিটা সেকেন্ড তারাই নতুন ভোরের আলোতে লোকজনের সামনে ডিপ্রেশন জনিত মুখ আড়ালে রেখে।নতুন এক হাসি,খুশি-প্রাণচ্ছ্বল মুখে ঘুড়ে-ফেরে।
সবাইকে দেখায় আমি হেরে গিয়েও খুশিতে আছি বেশ ভালো আছি।
তিথি ঘুম থেকে উঠে গেলো। পূর্ণি এখনো গভীে ঘুমে আকৃষ্ট হয়ে আছে। হয়তো কাল সারাটা রাত নির্ঘুমে ছিলো তাই..
তিথির আজকে অফিস থেকে এক জায়গায় প্রেজেন্টেশনের জন্য যেতে হবে। তাই সে তারাতারি রেডি হয়ে নেয়। আর কিছু না খেয়েই পূর্ণির জন্য একটা চিঠি লিখে তার বেডের উপর রেখে চলে আসে।
তিথি ইদানিং হাপিয়ে উঠেছে একবার কলেজ তো একবার অফিস। দুদিক সামলাতে সামলাতে তার সারাটা দিন ব্যায়বহুল হয় এতে দুবেলা খেতেও পারেনা সে।
অথৃ তার বাবার এত টাকা পয়সা থাকতেও সে নিজের চেস্টায় প্রতিনিয়ত বেচেঁ চলেছে।
.
.
ভেজা চুলে সিড়িঁ দিয়ে গুনগুন করে গান গাইতে গাইতে নিচে নামছে নিদিয়া।
নিচেই ডাইনীং টেবিলে বসে আছে নিরব,নির্ঝর,নির্ঝরের বড় ভাই অর্নব,মিশু, মিসেস কণা,মি.অভিনব বসে আছে।
সাথে বাড়ির বড় কত্রী মিসেস মৌমি রায় চৌধুরি।মূলত ওনার কথাতেই পুরো সংসার চলে। মিসেস কণা তো নামে মাত্র বাড়ির বড় বউ।
“ছিঃহ্হ ছিঃহ্হ ছিঃহ্হ বড় -ভাসুর,দেবর,শ্বশুড় বসে আছে আর তার সামনেই ঢেং ঢেং করতে কেতে ঘোমটা বিহীন নিচে নাচঁতে নাচঁতে আসছে!নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার!এই মেয়ের মোহে পড়েই আমার বাড়ির লক্ষী আজ বাড়িছাড়া হয়েছে!বলি সংসারে আগুন লাগলো বলে!(নাক-মুখ ছিটকে)
মিসেস মৌমির কথা শুনে ভ্রু কুচঁকে সিড়িঁর দিকে তাকালো মিসেস কণা।আর বিরক্তিতে কপালে হাত দিয়ে বিরবিরিয়ে বলে উঠলো।
” এই বুড়িটাও না এই যুগে কি কেউ বড়-ভাসুর,শ্বশুড়ের সামনে ঘোমটা দেয়!অবশ্য এই বুড়ি কি বুঝবে আদিযুগের মানুষ তাই তো আধুনিক যুগ বুঝেনা।(বিরক্তি নিয়ে)
নিদিয়া নিচে নামতেই সবার আগে তার নজর গেলো ডাইনীং টেবিলের নিচে। নিরব মিশুর পায়ে পা সিয়ে স্লাইড করছে।নিদিয়া ভ্রু কুচঁকে মনে মনে বলে উঠলো।
“এবাড়ির ছেলেরা খারাপ জানা আছে তবে যে বাড়ির ছেলে বড় বৌদির সাথে পরকীয়া করে তা জানা ছিলোনা!অবশ্য তা দেখে আমার কি আমি তো এসেছি প্র..(মনে মনে)
#চলবে,,