#ধারাবাহিকগল্প
#ভৌতিক থ্রিলার
#পাপের ক্ষরণ
পর্ব-পাঁচ
মাহবুবা বিথী

রশ্নি বললো,
—–আমার বিয়ের আগের কথা তো বলতে পারবো না। তবে বিয়ের পর এবাড়িতে তেমন কিছু ঘটেনি।
বিয়ের আগের বিষয়ে জানতে হলে আমার শ্বশুরকে জিজ্ঞাসা করতে পারিস।
খাওয়া শেষ করে জয়া বললো,
—-আমিও ভাবছি আঙ্কেলের সাথে কথা বলা দরকার।
—-রশ্নি তোদের এ বাড়িতে কখনও জ্বীনের উৎপাত হয়েছে।
—–কখনও তো শুনিনি।
এমন সময় আতরের তীব্র সুবাস জয়ার নাকে লাগলো। বেসিনে হাত ধোয়ার সময় ওর শরীরে ঠান্ডা হিমেল বাতাসের ছোঁয়ায় গায়ের পশম কাঁটা দিয়ে উঠলো।
জয়া রশ্নিকে বললো,
—-তুই কি আতরের তীব্র সুবাস পাচ্ছিস?
—–নাতো,
—–রশ্নি আমার মনে হয় আমরা ছাড়াও তোর এই বাংলো বাড়িতে আরোও কেউ থাকে?
—–কি সব আবোল তাবোল বলছিস। জয়া তোর এগুলো ভুল ধারনা।
এমন সময় বানিজ্যমেলা থেকে শখ করে রায়হানের কেনা বড় ফুলদানিটা ঠাস করে পড়ে ভেঙ্গে গেলো।
রশ্নির শ্বশুর উপরের রুম থেকে বের হয়ে করিডোরে এসে বললো,
—–কি ভাঙ্গলো রশ্নি?
—–বাবা রায়হানের শখের ফুলদানিটা দেখেন কোনো কারণ ছাড়াই পড়ে ভেঙ্গে গেলো।
জয়া নীচের খাবার টেবিল থেকে উপরে রশ্নির শ্বশুরের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো,উনি যেন একটু আঁতকে উঠলেন। তাড়াতাড়ি উনার রুমের দিকে যাওয়ার সময় করিডোরে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলো। জয়া দৌড়ে উপরে চলে গিয়ে দেখলো,রশ্নির শ্বশুর মাটিতে পড়ে আছে আর মাথাটা ফেটে গলগল করে রক্ত পুরো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়েছে। জয়া চিৎকার দিয়ে রশ্নিকে বললো,
—-ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বল। আঙ্কেলকে এখনি হাসপাতালে নিতে হবে। মাথাটা ভালই ফেটেছে। মনে হয় স্টিচ দিতে হবে।
ততক্ষণে রশ্নির মা বাবাও ওদের রুম থেকে বের হয়ে এসেছে। উনার এই অবস্থা দেখে রশ্নির মা বললো,
—বেয়াই পড়ে গেলো কিভাবে?
—-আমি তো বুঝতে পারছি না। একটু আগে ফুলদানিটা পড়ে ভেঙ্গে গেলো।
জয়া একটা কাপড় দিয়ে রশ্নির শ্বশুরের ক্ষত স্থানটা
বেধে দিলো। ইতি মধ্যে জব্বার চলে এসেছে। রশ্নির বাবা আর জব্বার হাসান সাহেবকে সিঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নীচে নামিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো। রশ্নির বাবা আর রশ্নি হাসপাতালে চলে গেলো।
রশ্নির মা জয়াকে বললো,
—-রায়হানের দাফন কাফনের ব্যবস্থা হয়েছে কিন্তু সেভাবে দোয়া দরুদ পড়ানো হয়নি। আত্মাটা মনে হয় বাড়ির ভিতর ছটফট করছে। জয়া আমার খুব ভয় ভয় লাগছে। একটু আগে আমার রুমে আঁতরের তীব্র সুবাস পেয়েছি। রশ্নিকে বলতে হবে রায়হানের জন্য এতিম বাচ্চাদের দিয়ে দোয়া খতম করে দিতে হবে।
জয়ার কেন যেন মনে হচ্ছে ওদের আশে পাশে অদৃশ্য কেউ হাটাঁহাঁটি করছে। জয়া রশ্নির মাকে বললো,
—-আন্টি বাসার ভিতর আমার একটু অস্বস্তি লাগছে। আমি বাগানটা ঘুরে আসি।
—-বেশী দেরী করো না। একটু পরে মাগরিবের আযান হবে। আমারও অস্বস্তি লাগছে।
জয়া বাগানের দিকে চলে গেলো। বাগান থেকে হঠাৎ অদ্ভুত জিনিস ওর চোখে পড়লো।
হাসান সাহেবের রুমের জানালাটা আটকানো রয়েছে। বাহিরে অনেক ধুলো জমেছে। সেই ধুলোর উপরে বড় বড় নখের আঁচড়ের দাগ রয়েছে। মাগরিবের আযান শুরু হলো। দূর থেকে কুকুরের করুন সুর ভেসে আসছে। হঠাৎ একটা কালো ঘুর্ণি এসে জয়াকে ঘিরে ধরলো। জয়া শ্বাস আঁটকে জ্ঞান হারিয়ে বাগানে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো। জ্ঞান ফেরার পর ও নিজেকে ওর রুমের মধ্যে দেখতে পেলো। পাশে রশ্নির মা বসে জয়ার মুখে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। আর দোয়া পড়ে ফুঁ দিচ্ছে। জয়া প্রথমে কিছুই মনে করতে পারছিলো না। আস্তে আস্তে মনে পড়লো। রশ্নির মা জয়াকে বললো,
—-তোমাকে আযানের আগে ফিরে আসতে বললাম। আযানের সময় অশরীরি আত্মা খারাপ জ্বীনেরা ছটফট করে। তাই ঐ সময় বাইরে থাকা ঠিক না। এখানে পুরো বাড়িতে প্রচুর গাছ রয়েছে। এজন্য আরোও সাবধান থাকা উচিত।
—-আন্টি আমি এখানে কিভাবে আসলাম?
—-আমি জব্বারকে বললাম তোমার জয়া ম্যাডাম কোথায় দেখো। ও তোমাকে খুঁজতে গিয়ে দেখলো তুমি বাগানে পড়ে আছো। তারপর আমাকে বাগানে ডেকে নিলো। আমি আর কাজের খালা রহিমা ধরাধরি করে তোমাকে উপরে নিয়ে এসেছি।
ওদিকে হাসপাতাল থেকে রশ্নি ফোন দিয়ে জয়াকে বললো,
—-আমি বাসায় চলে আসছি। বাবাকে আজ রাতটা আইসিইউতে রাখবে। আমার শরীরটা ভালো
লাগছে না। আব্বা আজ রাতটা থাকতে চেয়েছে। জব্বারকে কাল সকালো পাঠিয়ে দিবো। আব্বা বাসায় চলে আসবে।
—-ঠিক আছে তুই তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়।

জয়া রশ্নিকে ওর উপর ঘটে যাওয়া ঘটনাটা বললো না। শুধু শুধু বেচারাকে ভয় পাইয়ে দিয়ে লাভ নেই। কিছু একটা সমস্যা এ বাড়িতে এটা জয়া ভালভাবেই উপলব্ধি করতে পারছে।
রশ্নি রাত ন,টায় বাসায় চলে আসলো। ওরা সবাই মিলে ডিনার করে তাড়তাড়ি শুয়ে পড়লো। হঠাৎ মাঝরাতে রশ্নির মার চিৎকার শুনতে পেলো। জয়া আর রশ্নি রুম থেকে বের হয়ে রশ্নির মার রুমে ঢুকে দেখলো,চোখ বন্ধ করে ভয়ে উনি ঠক ঠক করে কাঁপছেন। রশ্নি ওর মাকে জিজ্ঞাসা করলো,
—-মা চোখ খোলো।
—-জানালায় একটা বিশাল বড় লাল রঙের চোখওয়ালা বাদুড় দেখেছি। আমাকে ধরতে আসছিলো। আমি চোখ খুলবো না।
—-মা তুমি দেখো জানালায় কেউ নাই। তুমি মনে হয় স্বপ্ন দেখেছো।
চোখ খুলে রশ্নির মা এদিক ওদিক তাকাতে লাগলো।তারপর বললো,
—–না আমি স্বপ্ন দেখেনি। আমি আমার গায়ে চিমটি দিয়ে দেখেছি আমি জেগে ছিলাম।
জয়া রশ্নিকে বললো,
—-আন্টিকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দে। তুই বাকি রাতটা আন্টির সাথে থেকে যা।
রশ্নি বাকি রাতটা ওর মায়ের সাথে কাটিয়ে দিলো।
জয়া নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো। একটু তন্দ্রাভাব এসেছিলো। ও যেন নুপুরের আওয়াজ শুনতে পেলো। করিডোরে কে যেন নুপুর পড়ে হাঁটছে। নুপুরের শব্দটা ওর দরজার কাছে এসে থেমে গেলো। জয়া যেন অবচেতন মনে এই শব্দের অপেক্ষায় ছিলো। ও জানালা দিয়ে পুলের দিকে তাকিয়ে দেখলো জিন্নাত ওকে হাত ইশারা করে ডাকছে। ও সম্মােহিত হয়ে দরজা খুলে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো। নুপুরের শব্দটা ওর পিছনে আসতে লাগলো। নিচের রুমের দরজা খুলে বাগান পেরিয়ে পুলের কাছে জয়া চলে আসলো। জিন্নাত ওকে বললো,
—-আজ আসতে দেরী করলে কেন জয়া? ঘন্টা খানিক পরে রাত ফুরিয়ে যাবে।
—-একটু ব্যস্ত ছিলাম। জিন্নাত তুমি তোমার বন্ধু হারানোর গল্পটা আজ আমায় বলতে চেয়েছিলে।
—-তুমি শুনতে চাইলে আমি অবশ্যই বলবো।
এরপর জিন্নাত কাহিনীটা বলা শুরু করলো।

আমার বন্ধুটি নার্সের চাকরি করতো। দেখতেও বেশ সুন্দরী ছিলো। নার্সিং এর উপর ট্রেনিং ছিলো। একদিন একটা রোগীর দেখভাল করার কন্ট্রাক্ট পেলো। ওই রোগীর বাড়িতে এসে চব্বিশ ঘন্টা রোগী দেখাশোনা করতে লাগলো। রোগীর হাসবেন্ড ওকে স্নেহ করতো। কিন্তু রোগীটা বাঁচলো না। মারা যাবার পরও আমার বন্ধুটি ও বাড়িতে থেকে গিয়েছে। আসলে এতিমখানায় বড় হওয়া ওর যাওয়ার কোনো জায়গা ছিলো না। ভাবছিলো একটু গুছিয়ে এ বাড়ি থেকে ও চলে যাবে। এর মাঝে বন্ধুটি রোগীর ছেলেটার প্রেমে পড়ে যায়। ছেলেটা ওর প্রেমে সাড়া দেয়। ছেলেটার এক রাত্রিতে প্রচণ্ড জ্বর আসে। সেদিন ওর বাবা ব্যবসার কাজে বাইরে ছিলো। বাড়িতে আর একজন বয়স্ক বুয়া ছিলো। জ্বর বেড়ে যাওয়াতে বুয়া বন্ধুটিকে ছেলেটির রুমে ডেকে নেয়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here