#
#পর্ব_৭
একা_বেঁচে_থাকতে_শেখো_প্রিয়#Adharer_Musafir (ইফ্ফাত)
একমাত্র আমিই বোধহয় দেরি করে ফেলেছি।
ইশশ এখন কি হবে?
ছাদে যাওয়ার সাথে সাথেই তো সবাই তাকিয়ে থাকবে আমার দিকে, ধ্যাৎ।
মাথায় গাট্টি মেরে ছাদের শেষ সিড়িতে পা রাখবো ঠিক তখনই কেউ আমায় সামনে থেকে ধাক্কা দেয়।
ধাক্কার জোড়ে আমি ব্যালেন্স না রাখতে পেরে যেই না পেছনে পরতে যাচ্ছিলাম তখনই এক জোড়া ঠান্ডা হাত আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে।
ভেবেছিলাম আমি পড়েই যাবো।
কিন্তু কোমড়ে ঠান্ডা অনুভব হতেই আমার চোখ আপনা আপনিই খুলে যায়।
রেহান ভাইয়া আমাকে শক্ত করে ধরে আছেন।
আচ্ছা আমি কি সত্যিই উনার দু’হাতের ভেতর আবদ্ধ হয়ে আছি?
নাকি পুরোটাই আমার ভ্রম?
মনে হচ্ছে উনার চোখের মধ্যে আমি হারিয়ে যাচ্ছি।
সময়টা মনে হচ্ছে যেনো সত্যিই থেমে আছে।
আমাকে আমার কল্পনা থেকে টেনে নিয়ে এলেন রেহান ভাইয়া।
বাস্তবে ফিরে আসতেই আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেলাম।
উনার গালে, কপালে, নাকে হলুদ মাখানো।
হলুদ পাঞ্জাবীতে উনাকে আহামরি না লাগলেও আমার কাছে রেহান ভাইয়াকে হিমু-র থেকে কম সুন্দর লাগছে না।
যদিও আমি আমার হিমুকে কল্পনা করে নিয়েছিলাম কিন্তু আজকে রেহান ভাইয়ার এই রুপ দেখে উনাকেই হিমু মানতে আমার আর কোনো বাঁধা নেই।
উনি এক হাতে আমার থুতনি শক্ত করে ধরে বললেন–
— কোথায় ছিলি এতক্ষণ?
এত সময় লাগে শাড়ি পড়তে?
সেই কখন লিপিকে রুমে পাঠিয়েছি।
সবাই অপেক্ষা করছে তোর জন্য, আর হ্যাঁ মন দিয়ে শোন আমার কথা।
রেনু আপুকে হলুদ লাগিয়ে চুপচাপ ছাঁদের এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকবি।
কোনো ছেলে যদি তোর গাঁয়ে হলুদ লাগাতে আসে তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না মনে রাখিস।
উনার ঠান্ডা হাতের স্পর্শে আমি এমনিতেও জ্বমে যাচ্ছিলাম, তার উপর উনার এই কড়া কড়া কথা শুনে আমার ভেতরটাই কেঁপে উঠলো।
আমাকে শ্বাসিয়ে উনি আবার চলে গেলেন ছাঁদে।
যাওয়ার আগে পেছন ফিরে আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিলেন।
আচ্ছা উনি কি জানেন উনার ঐ হাসিতে আমার ভেতরটা কেমন করে!
🥀
ছাঁদে যেতেই এতো মানুষের ভিরে রেনু আপুকে আমি খুঁজেই পাচ্ছিনা।
হেঁটে হেঁটে রেনু আপুর কাছে যাচ্ছি তখনই পেছন থেকে লিপি আপু আমাকে বললেন–
— হ্যাঁ রে উপমা, আসতে না আসতেই তোকে হলুদ লাগিয়ে দিলো?
ইশশ কোথায় ভেবেছিলাম সবার আগে আমিই তোকে হলুদ লাগাবো, তার আগেই দেখি তোর গাল ভর্তি।
লিপি আপুর কথায় আমি আমার গাল ছুঁয়ে দেখি সত্যিই আমার গালে হলুদ লেগে হালকা শুকিয়ে আছে।
কিন্তু আমি তো এখনও কারো কাছ থেকে হলুদ লাগাইনি তাহলে কে করলো এটা?
মুহূর্তেই আমার রেহান ভাইয়ার কথা মনে পড়লো।
সাথে সাথেই আমি আমার কোমড়ের দিকে তাকিয়ে দেখি কোমড়ের প্রায় অর্ধেকটা অংশেই হলুদ মাখানো।
রেহান ভাইয়া কি তবে ইচ্ছে করেই আমাকে ধাক্কা দিলেন?
না না হয়তো আমিই বেখায়ালি ছিলাম।
ইশশ রেহান ভাইয়ার হাতে লাগানো হলুদই তবে আমার গাঁয়ে প্রথম লাগলো!
ভাবতেই লজ্জা লাগছে আমার।
🥀
🥀
🥀
রেনু আপুকে হলুদ লাগিয়ে রেহান ভাইয়ার কথা মতো ছাঁদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।
একে একে সবাই রেনু আপুকে হলুদ লাগাচ্ছে।
রেনু আপুকে দেখে আজ কোনো দিক থেকেই অপূর্ণ লাগছে না।
সঠিক বয়স পেরিয়েও বিয়ের খুশিটা রেনু আপুকে আষ্টে পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে।
ভালোই লাগছে রেনু আপুকে দেখতে।
ওদিকে আমাকে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে বলে রেহান ভাইয়া সবার সাথে আড্ডায় মেতে উঠেছেন।
নিজে তো ইচ্ছে মতো হলুদ মাখিয়েছে, আমাকে কেউ হলুদ লাগাতে আসলেই উনার বড় বড় চোখের সামনে পড়তে হয়, কি মুশকিল রে বাবা।
আমারো খুব ইচ্ছে হয় উনাকে হলুদ লাগিয়ে দেই।
কিন্তু ইচ্ছেকে ইচ্ছেতেই চাপা দিতে হবে, উনাকে নিয়ে এই কল্পনা আমার বাস্তব হবে কিনা কে জানে।
খুব ইচ্ছে হয় আমার।
আপনাকে হলুদ লাগিয়ে সারা বাড়ি দৌড়াবো।
আপনিও কোনো এক বসন্ত আসার আগেই চলে আসবেন।
কাঁচা বেলীফুল আর সুবাসিত গোলাপের কলিতে হলুদ পাড়ে সবুজ শাড়িতে আমি সেজে বসে থাকবো, আপনি লাল শাড়ি আর কাচেঁর চুড়ির ডালা সময় মতো পাঠিয়ে দিবেন।
সেই বৃহস্পতিবার আপনার জন্য আমাকে হলুদ ছোঁয়ানো হবে, আর পরদিন আমি সাজবো লাল বেনারসীতে।
আলতা দিয়ে রাঙ্গাবো ধবধবে সাদা দুটি পা, হাত ভর্তি মেহেদীতে আড়াল করবো আপনার নাম।
আপনি আগ্রহভরে মেহেদীর ভাজে সে নাম খুঁজবেন।
এই বসন্ত আসার আগেই আমি এই অপূর্ণ সম্পর্কের তকমা হতে মুক্তি হতে চাই।
বউ হতে চাই, আপনার বউ৷
আপনার জন্য লজ্জা মাখা মুখ নত করে মৃদুস্বরে কবুল বলতে চাই।
এক বৃহস্পতিবার আমার হলুদ হবে,
তার পরদিন শুক্রবার বিয়ে।
হ্যাঁ আপনার সাথে আমার আমরা হওয়ার অপেক্ষার অবসান হবে।
দরজায় কড়া নাড়ার অপেক্ষা করবেন না, আপনি কেবল পালকি সমেত চলে আসবেন।
আমার ইচ্ছেগুলোকে পুরোন করতে এইটুকু কষ্ট তো আপনি করতেই পারেন।
আপনি কি জানেন, আপনাকে নিয়ে আমার সকল ইচ্ছে গুলোকেও আজকাল পবিত্র মনে হয়।
🥀
রাতের খাবার খেয়ে বাড়ান্দায় কানে হ্যাডফোন লাগিয়ে বস আছি আমি।
রাতের অন্ধকারে প্রিয় গান শুনতে মন্দ লাগছে না।
আমারো পরানো যাহা চায় তুমি তাই তুমি তাই গো…
গানটা যতবারই শুনি ততবারই আমার মন ছুঁয়ে যায়।
তবে এই মুহূর্তে আদা দিয়ে এক কাপ রং চা হলে মন্দ হতো না।
রুমে উম্মি মরার মতো ঘুমিয়ে আছে।
আমার চোখে একদমই ঘুম নেই।
ঘুম আনা কি এতোই সোজা?
ওমম বোধহয় হুমায়ুন আহমেদ স্যার বলেছিলেন-
একা জেগে থাকা বেশ কষ্টকর
জেগে থাকলেই প্রিয় মানুষটির সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে।
কিন্তু আমার তো শুধু প্রিয় মানুষটার কথা মনে পড়ে না।
আমার তো প্রিয় মানুষদের ভালোবাসার মুহূর্তগুলো খুব মনে পড়ে।
আচ্ছা আমি কি দিন দিন ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়ে যাচ্ছি?
হয়তো! জীবনে ভালোবাসা তো খুব বেশি পাইনি তো
তাই হয়তো উচ্ছিষ্ট যায়গা থেকেও ভালোবাসা খুঁজে ফিরি।
তবুও পাইনা আমি। নির্লজ্জের মতো ভালোবাসা খুঁজি।
কিন্তু চোখের সামনে যখন অন্যদের ভালোবাসা পেতে দেখি, খুব হিংসে হয় আমার খুব হিংসে হয়।
আমি কখনো কারো আপন হতে পারিনি।
সকল ভালোবাসার চাদর মেখে যখনি কাউকে আঁকড়ে ধরতে চেয়েছি,
অবাঞ্ছিত খড় কুটো ভেবে, সেই দূরে ঠেলে দিয়েছে।কখনো কারো প্রিয় হতে পারিনি।
যখনি কারো প্রিয় হওয়ার জন্য নিজেকে তার মনের মতো করে গড়ে তুলেতে গিয়েছি।
ঠিক তখনি অবহেলার চাদর আমাকে জাপটে ধরেছে।আর ভালোবাসার কথা বলে লাভ নেই।
যখনি একটু একটু করে কারো ভালোবাসায় নিজেকে বাঁচাতে শিখেয়েছি,
দিনশেষে সেই আমাকে আঘাত করেছে।
কেউ কখনো আমাকে আগলে রাখেনি।
কষ্ট ভুলে যখনই আমি নিজেকে সামলে নিয়েছি , তখনি আগলে রাখার বাহানায় প্রিয় মানুষগুলো অল্প অল্প আঘাতে আমার ভেতর টা ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছে।
আমি বুকভরা ভালবাসা নিয়ে বারবার
ভুল দরজায় কড়া নেড়েছি।
নিঃস্ব হয়ে শূন্য হৃদয়ের হাহাকার সইতে না পেরে এই হৃদয়ে ভালবাসা নিষিদ্ধ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছি।
নিজের বিরুদ্ধে গিয়ে এখন নিজেকে ভালোবাসতে শিখতে শুরু করে দিয়েছি।
.
.
🥀
🥀
🥀
.
.
সিঁদুর লাল লেহেঙ্গায় রেনু আপুকে আজ পাক্কা বউ বউ লাগছে।
বউয়ের সাজে সব বয়সি মহিলাদের সামনে লজ্জা রাঙা মুখে বসে আছেন রেনু আপু।
পাশের রুমেই রেনু আপুর বর বসে আছেন।
এদিকে আমি সবুজ গাউনটা পড়ে রেনু আপুর রুমেই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছি।
বসে থাকার যায়গাটা একদমই নেই আজ।
দাঁড়িয়ে থাকার নূন্যতম যায়গাটা যে পেয়েছি এই তো অনেক।
বসে বসে খুনসুটি মূলক কথা-বার্তা শুনছেন রেনু আপু।
পাশে দাঁড়িয়ে আমি সেসব দেখে মুচকি হাসছি।
ইশশ লজ্জায় রেনু আপু লাল হয়ে গেছেন।
একটু পর প্রায় বেশ কয়েকজন মহিলা রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই রেহান ভাইয়া কাজি সহ রেনু আপুর রুমে প্রবেশ করলেন।
এখনই হয়তো কবুল বলবেন রেনু আপু।
রেনু আপুর কাছে গিয়ে বসতে যাবো তার আগেই….
চলবে…