#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৭
#সামিয়া_মেহেরিন

মাস্কপরা লোকটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসাদ। আসাদ বলল
-স্যার, ঈশা ম্যাম এর এক্সিডেন্ট করানোর চেষ্টা তো করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।

মাস্কপরা লোকটির চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করে আছে। পাশে থাকা চেয়ারটায় সজোরে লাথি মেরে ভেঙে ফেলল। মুখের মাস্কটা খুলে ছুঁড়ে মারলো।

-এটা কীভাবে হতে পারে? তাহলে কি ওরা আমার পরিচয় জেনে গেছে? (একটু থেমে) এতো সতর্কতার সাথে সব করলাম তবুও ওকে ধরতে পারলাম না। আমার সব প্ল্যান ভেসতে গেলো।

-ছিহ্, আহিয়ান ছিহ্ । তুই এতটা নিচে নেমে গেছিস।

পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে আহিয়ান আর আসাদ দুজনেই রুমের দরজার দিকে তাকালো।

-মাহাদী! তুই কখন এলি?
-যখন তোরা ঈশার এক্সিডেন্ট করানোর প্ল্যানের ব্যাপারে আলোচনা করছিলি তখন। আমিতো ভাবতেই পারছিনা আহিয়ান, তুই এত নিচু কাজ করবি। ঈশার যদি কিছু একটা হয়ে যেতো।

আহিয়ান নিজের রাগ সংবরন করে বলে
-আমিতো ছিলামই সেখানে। কিছু হওয়ার আগেই ঈশাকে সরিয়ে নিয়েছিলাম সেখান থেকে।
-মানলাম ঈশার কোনো ক্ষতি হয় নি। কিন্তু সময়মত না সরালি কি হতো বুঝতে পারছিস?

আহিয়ান কোনো জবাব দেয় না। সে জানে আজকের কাজটা সে ঠিক করে নি। সে নিজেও এর জন্য অপরাধবোধে ভুগছে।

-কি হলো উত্তর দিচ্ছিস না কেন? এতদিন ধরে তুই ঈশার সাথে আছিস, তবুও কি ওর জন্য তোর মনে কোনো মায়া জন্মায় নি আহিয়ান? এসবের মাঝে ঈশাকে জড়িয়ে ওর জীবন নিয়ে ছিনিমিনি কেন খেলছিস তুই? এসবের মাঢে ঈশার তো কোনো দোষ নেই।

আহিয়ান কোনো জবাব না দিয়ে বেরিয়ে যায়। মাহাদী তাকে কয়েকবার ডাকলেও সে দাঁড়ায় না।

পরের দিন সকালবেলা আরিয়া আর নিশা ড্রইংরুমে বসে আছে। আরিয়া শপিং এ যাবে বলে নিশাকে সাথে যাওয়ার জন্য জোর করছে। কিন্তু নিশা যাবে না বলে জেদ ধরেছে।

-এই নিশা চলো না প্লিজ। আভি একা একা অনেক বোর হবো। প্লিজ চলো।
-আমার এখন কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না, আরিয়া।

সেই সময় মাহাদী ড্রইংরুমে প্রবেশ করে। তাদের দুজনের কথাবার্তা শুনে সে বলে
-আরে আরিয়া, তুমি বুঝতে পারছো না, নিশা তো একটা বাচ্চা মেয়ে। শপিং এ গেলে হারিয়ে যাবে। চলো আমি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি।

-সত্যি মাহাদী ভাই, আপনি আমাকে শপিং এ নিয়ে যাবেন।

বলে আরিয়া লাফিয়ে ওঠে। এদিকে নিশা মাহাদীর কথা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে। কিছু বলবে তার আগেই আরিয়া বলে
-এই নিশা, শেষবারের মতো বলছি যাবে কিনা বলো।

নিশা মাহাদীর দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে রেডিহতে চলে যায়।

আজ সকালে আমার এক বান্ধবী আননোন নাম্বার থেকে কল করে আমাকে দেখা করতে বলে। জরুরী দরকার আছে বলাতে আমি আর কথা বাড়ালাম না। ভাবলাম দেখা হলেতো জানতেই পারবো। তার দেয়া ঠিকানায় এসে অপেক্ষা করছি। কিছুটা অস্বস্তি লাগছে কারণ জায়গাটা অনেক নির্জন। এমন একটা জায়গায় আমাকে কেন ডেকেছে তাইতো বুঝতে পারছি না।

হঠাৎ দুটো গাড়ি এসে আমার সামনে দাঁড়ালো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই গাড়ি থেকে কিছু লোক বেরিয়ে এসে আমার মুখে একজন রুমাল চেপে ধরে। কিছুক্ষণ তাদের সাথে ধস্তাধস্তি করে আমি নিস্তেজ হয়ে গেলাম।

কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরলো জানা নেই। মাথা ঘুরছে, চোখেও ঝাপসা দেখছি। আমাকে একটা অন্ধকার ঘরে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। দৃষ্টি স্বাভাবিক হতে আমি আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বোঝার চেষ্টা করছি আমাকে কোথায় আনা হয়েছে। আমার ডান দিকে খানিকটা দূরে দুজন মানুষের অবয়ব দেখতে পেলাম। তারা কিছু একটা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তাদের কথা স্পষ্ট শুনতে পেলাম না। যতটুকু শুনেছি তাতে এটুকু বুঝেছি, তারা নিশাকেও কিডন্যাপ করার চেষ্টা করবে, তাও আবার আমার আর নিশার সুরক্ষার জন্য। কিন্তু কেন? আর এই লোকগুলোইবা কারা? আমার মাথায় কিছুই আসছে না। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ঐদুটো অবয়বের মধ্যে একজনকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে। তার কণ্ঠস্বরও চেনা চেনা লাগছে।

বাড়ির বাইরে থেকে আসা অনবরত গুলির আওয়াজে ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরলাম। ভয়ে আমার হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়ার উপক্রম।

ক্যার ক্যার আওয়াজে আমার সামনের দরজাটা খুলে গেলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটাকে চিনতে আমার একটুও কষ্ট হয় নি।আমার সব ভয় নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।

আহিয়ানের সাথে আসাদ এবং আরো কয়েকজন রয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাদের সকলের কাছেই বন্দুক। আর তাদের পোশাকেও কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে।

অবয়ব দুটিকে আর দেখতে পেলাম না। আহিয়ান তার সাথের লোকগুলোকে বাড়িটার পেছনের দিকে তল্লাশি চালাতে পাঠিয়ে দিলেন। আমার কাছে এসে আমার হাতপায়ের বাঁধন খুলে দিলেন। একা একা উঠে দাঁড়াতে গিয়েও পারলাম না, আবার বসে পড়লাম। আহিয়ান আমার হাত ধরে আমাকে দাঁড় করালেন। আমি তার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকালাম।

আহিয়ান হয়তো আমার মনে থাকা প্রশ্নগুলো বুঝতে পারলেন। নিজেই বলতে শুরু করলেন।
-খুব অবাক হচ্ছো আমাকে এভাবে দেখে, তাই না?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here