#পরিশেষে_ভালোবাসি
#পর্ব_০৬
#সামিয়া_মেহেরিন
আধা ঘণ্টা ধরে গাড়িতে বসে আছি। আমার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি ড্রাইভ করছেন আহিয়ান। এখন অবধি পনেরো বার জিজ্ঞেস করেছি তিনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। অথচ তিনি কোনো উত্তর দিচ্ছেন না। আমি বুঝি না, আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে তার কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে। গম্ভীরতার জন্য যদি পুরস্কার দেয়া হতো, আমি নিশ্চিত আহিয়ান এতে নোবেল প্রাইজ পেতেন।
হঠাৎ গাড়ির ব্রেক কষলেন তিনি। আশেপাশে দেখে বোঝার চেষ্টা করছি আমাকে কোথায় এনেছেন। চোখ গোলগোল করে আহিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললাম
-একি আপনি আমাকে এখানে এনেছেন কেন? আমার মতো মাসুম ভোলোভালা বাচ্চাকে আপনি অনাথ আশ্রমে রেখে আসবেন নাকি? ( কাঁদো কাঁদো ফেস করে)
-কীহ! বাচ্চা আর তুমি! (অবাক হয়ে) শোনো, সময়মতো বিয়ে হলে তুমি এখন এক ডজন বাচ্চার মা হতে আর তুমি বলছো তুমি নিজেই বাচ্চা।
চোখ ছোট ছোট করে প্রশ্ন করলাম
-তাহলে আমাকে এখানে এনেছেন কেন?
-এই অনাথ আশ্রমটা আমার বাবা তৈরি করেছিলেন। আর এখন আশ্রমটা আমি চালাই। মাঝে মাঝে আসি বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে। তাই ভাবলাম আজ তোমাকেও সাথে নিয়ে আসি।
আশ্রমের ভেতরে গিয়ে আমি পুরো অবাক। এই গম্ভীর মানুষটা যে বাচ্চাদের সাথে এত হাসিখুশি থাকবেন আমি ভাবিনি। আর বাচ্চারাও তাকে অনেক ভালোবাসে।
এই অল্প সময়ের মধ্যেই বাচ্চাদের সাথে আমার খুব ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে। আহিয়ান এতক্ষণ বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন। ডোনেশনের ব্যাপারে কথা বলতে তিনি আশ্রমের অফিসরুমের দিকে গেলেন। এদিকে আমি বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলছি।
ডোনেশনের ব্যাপারে কথা বলে আহিয়ান আশ্রমের মাঠের দিকে এসে দেখে ঈশা বাচ্চাদের সাথে কানামাছি খেলছে। কেন যেন আজ তার সকল নিষেধ উপেক্ষা করে ঈশার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই কয়েকদিনেই তার ঈশার প্রতি ধারণা বদলে গেছে। সে বুঝেছে ঈশার সৌন্দর্যের মতো তার হৃদয়ও স্বচ্ছ, নির্মল। আজ সে প্রচণ্ড অপরাধবোধে ভুগছে। কেননা এতদিন সে ঈশার সাথে যা করে এসেছে এবং ভবিষ্যতে যা করবে, তার কোনোটাই ঈশার প্রাপ্য নয়।
বাচ্চাদের বিদায় জানিয়ে আমি আর আহিয়ান বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম। যদিও আমার বাচ্চাদের সাথে আরো সময় কাটানোর ইচ্ছে ছিল, তবুও আহিয়ানের জন্য তা হলো না।অর্ধেক রাস্তায় এসে তিনি গাড়ি থামালেন।
-কি হলো গাড়ি থামালেন কেন?
প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি গাড়ি থেকে নামলেন। আমিও নেমে পরলাম।
-ঈশা, আমার কিছু দরকারি কাজ আছে। তুমি এখানে একটু অপেক্ষা করো।
বলেই তিনি রাস্তার ওপারে চলে গেলেন। আমি গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তার জন্য অপেক্ষা করছি আর বাচ্চাদের সাথে কাটানো মুহূর্ত গুলো ভাবছি। সত্যিই বাচ্চাদের সাথে থিকলে সময় কখন চলে যায় বোঝাই যায় না।
আমার এসব ভাবনার মাঝে ফোনের রিংটোন বেজে উঠল। আহিয়ান কল করেছেন। ফোন রিসিভ করতেই আমাকে রাস্তার ওপারে আসতে বলে কল কেটে দিলেন। আমিও সব ভাবনা বাদ দিয়ে রাস্তার ওপারে যেতে উদ্যোত হলাম।
ঈশা রাস্তা পার হতে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু একটা গাড়ি যে তার দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে সেদিকে তার কোনো খেয়াল নেই। গাড়িটা যে ড্রাইভ করছে তার কানে ফোন। ফুনের ওপাশ থেকে মাস্কপরা লোকটা বলল
-ঈশা যখন রাস্তার ঠিক মাঝখানে আসবে, তখন ওর ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেবে।
-কিন্তু স্যার….
-যেভাবে বলেছি, সেভাবে কর।
গাড়িটা যখন ঈশার একদম কাছে চলে আসে তখন ঈশা বিষয়টা খেয়াল করে। কিন্তু সেই মুহূর্তে তার কী করা উচিত, সে বুঝে উঠতে পারে না। হঠাৎ আহিয়ান কোথা থেকে এসে ঈশার হাত ধরে হেচকা টান দেয়।
-দেখে রাস্তা পার হতে পারো না? ( কিছুটা চেঁচিয়ে)
-আসলে…খেয়াল করিনি।
-আচ্ছা বাদ দাও। ড্রাইভার হয়তো খেয়াল করে নি।
-কিন্তু…আমারতো তা মনে হচ্ছে না। লোকটাকে চেনা চেনা লাগছিল।
-ক..কী বলছ? চেনা লাগবে কেন? ভুল দেখেছো হয়তো। চলো বাড়ি যাওয়া যাক।
আমি আর কথা বাড়ালাম না। কিন্তু আজকের ঘটনা আহিয়ানের প্রতি আমার মনে কিছুটা সন্দেহ সৃষ্টি করেছে। আহিয়ান কী লুকাচ্ছে আমার থেকে?
এদিকে মধ্যবয়স্ক লোকটা হো হো করে হাসছে। তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে দুটোর ঠোঁটেও ঝুলছে বাঁকা হাসি। লোকটা বলতে শুরু করে।
-কী ভেবেছিল ও, আমাকে ধরা এত সহজ? ওর আসল পরিচয় আমি জেনে গেছি। ওর সব প্ল্যান ও জেনে গেছি।
হঠাৎই লোকটার চোখ রাগে লাল হয়ে গেল। পাশে থাকা টেবিলে জোরে ঘুষি মেরে বলল
-কিন্তু ও আমার প্রাণভোমরার খোঁজ পেয়ে গেছে। আর এসবের মাঝে আমার প্রাণভোমরাকে এনে ঠিক করে নি।
ছেলে দুটোর মধ্যে একজন বলল
-তাহলে এখন কী করব আমরা স্যার?
-আগে নিজের প্রাণভোমরাকে সুরক্ষিত করি। তারপর ওকে চিরদিশের জন্য ঘুম পাড়িয়ে দিবো।
সন্ধ্যার আবছা আলোয় একটি যাত্রীছাউনিতে দাঁড়িয়ে আছে নিশা। আজ ভার্সিটির পরে এক বান্ধবীর বাড়ি গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরতে দেরি হয়ে গেছে। আধা ঘণ্টা মুষলধারে বৃষ্টি পরার পর এখন বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমেছে। কিন্তু বাস আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। এদিকে নিশা পরেছে বেশ অস্বস্তিতে। কিছুটা ভিজে গেছে সে আর তার দিকে কিছু ছেলে বারবার আড়চোখে তাকাচ্ছে। হঠাৎ একটা মোটর সাইকেল এসে তার সামনে থামে।
-বাইখে ওঠো। বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি তোমাকে।
অচেনা একটা লোক তাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে বলতেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে নিশা।
-কি বললেন? চেনা নেই, জানা নেই, অথচ বলছেন বাড়ি পৌঁছে দেবেন। মেয়ে মানুষ দেখলেই আপনাদের অসভ্যতামি শুরু হয়ে যায় তাই না?
লোকটা তড়িঘড়ি করে নিজের হেলমেট খুলে।
-আরে!আমি মাহাদী। আর একটু হলেইতো গণপিটুনি খাওয়াতেন আমাকে।
নিশা কিছুটা অবাক হয়।
-সরি, আমি বুঝতে পারিনি।
-তাহলে এবার ওঠো বাইকে।
নিশা আর কথা বাড়ায় না। যথেষ্ট দূরত্ব রেখেই সে বাইকে উঠে বসে। তা দেখে নিঃশব্দে হাসে মাহাদী।
মাহাদী প্রায়ই কাজের ফাঁকে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অজানা উদ্দেশ্যে। এতে তার মন ভালো হয়ে যায়। আর আজ তার মন ভালো থাকাটা আরো একধাপ বেশি হয়ে গেছে অনাকাঙিক্ষত ভাবে নিশার সাথে সাক্ষাতে।
মাস্কপরা লোকটির সামনে দাঁড়িয়ে আছে আসাদ। আসাদ বলল
-স্যার, ঈশা ম্যামের এক্সিডেন্ট করানোর চেষ্টা তো করলাম। কিন্তু কোনো লাভ হলো না।
চলবে
গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। সকলের কাছে অনুরোধ গল্পকে গল্পের জায়গায় রাখুন, বাস্তবের সাথে মেলাবেন না।