নীল ধ্রুব তারা

দ্বিতীয় পর্ব * ধারাবাহিক গল্প

শাহানা জেসমিন

———————————

ম্যাম বললেন,
——-কি ব্যাপার বলো তো,আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছো,বিশেষ কোন প্রয়োজন? ক্লাসে পড়া কি বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে? অবশ্য অর্থ নীতি বিষয় একটু ক্রিটিক্যাল, আচ্ছা আমি তোমাদের এক্সট্রা ক্লাস নিব বুঝলে।নিরাময় মূলক ক্লাস।

আমি বললাম,
——-জ্বি না ম্যাম , আমি অন্য কাজে এসেছি।

——-ও আচ্ছা , কি কাজ অবশ্য ই শুনবো।শোন আমি একজন প্রাইভেট শিক্ষক খুঁজছি।আমার মেয়ে অরুন্ধতী র জন্য। সে মূলত অরুনকে সঙ্গ দেবে,গল্প করবে আর পুরোনো পড়াগুলো রিভাইস করাবে।আসলে পড়ার চেয়ে সঙ্গী দরকার।

——–আমি এ কাজটা চাই। আর ম্যাম আপনার লিখা গল্প কবিতা ভিষণ ভালো লাগে আমার।

——তাই, আচ্ছা তোমার কি অর্থের বিশেষ প্রয়োজন? আমি সেটারও নোটিশ দিয়েছি। যদি কারো এ বিষয়ে হেল্প লাগে আমি হেল্প করবো সাধ্য মতো। কিন্তু তোমাকে দেখে তো খুব স্বচ্ছল মনে হচ্ছে। তোমার নাম কি?

——আমি মুগ্ধ , আমার আর একটা নাম আছে। আমি পৈতৃক নাম পাল্টে ফেলেছি।

—–কি আশ্চর্য ! তোমার নাম পছন্দ হয় নি? আমার নামও মুগ্ধ কিন্তু এটা তেমন কেউ জানে না।

——আমাকে আমার ফুপ্পি দেবযানী বলে ডাকে।

—-তোমার এ নামটাও খুব সুন্দর দেবযানী। আচ্ছা কি জন্য এসেছো আমার কাছে? আর তোমার কোন আপত্তি না থাকলে অরুন্ধতী কে পড়াবে?

——জ্বি ম্যাম পড়াবো,আমার কোন আপত্তি নেই। আমি একটা পত্রিকার সম্পাদক। আমি আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে চাই। আপনি গল্প , কবিতা লিখেন।আপনার লিখা আমি খুব পছন্দ করি।

——কিন্তু আমি তো ইন্টারভিউ দিই না।

আমি বললাম, আমার কাছে দিবেন।আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাই।

——আচ্ছা এ বিষয়ে আজ কোন কথা বলব না। অন্য দিন কথা হবে, আমি ভেবে চিন্তে জানাবো। আজ আমার গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস আছে।বিকেলে মিটিং আছে চেয়ারম্যান স্যার এর সঙ্গে স্টাফ মিটিং। আমি খুব বিজি।

আমি বললাম,
আজকে আসি ম্যাম, অরুন্ধতী কে বলবেন আমি পড়াব।

আমি ম্যাম এর চেম্বার থেকে উঠে এলাম।

আমার বিকেলে ক্লাস আছে কিন্তু করতে ইচ্ছে করছে না। বাইরে এলাম। মনে হচ্ছে বৃষ্টি নামবে, তুমুল বৃষ্টি। হোক আজ তুমুল বৃষ্টি, আজ বৃষ্টি তে ভিজবো।

আজকে একা একা হাঁটবো। একা একা হাঁটার মধ্যে অন্য রকম মজা,আজ হেঁটে হেঁটে যাব পল্লবী,সেখান থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেনে। একা অনেক ক্ষন বসে থাকবো।কি শান্তি অসংখ্য বৃক্ষের সঙে কথা বলা একা একা। পাখিদের উড়ে যাওয়া দেখা। এখানে আমার একটা পছন্দের জায়গা আছে।আমি মাঝে মাঝে ই একা একা বসে থাকি। অনেক ক্ষন দোলনায় দুলবো। আজকে কেন যে দোলনায় দুলতে ইচ্ছে করছে।

বৃষ্টি নামছে এ মুহুর্তে। আমার মনে হলো অরুন্ধতী এ বৃষ্টি র মধ্যে একা একা বসে আছে।সে ম্যাম এর জন্য অপেক্ষা করছে।সে আয়নার সামনে এসে দাড়ালো।সে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।এ বয়সে আয়নায় নিজেকে দেখতে ভিষণ ভালো লাগে। আয়না তে নিজেকে দেখতে এরকম মনে হয় যেনো সে জলের আয়নায় নিজেকে দেখছে। সে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে দেখছে।

আজকে অরুন্ধতী সুন্দর একটা নীল শাড়ি পড়ে আছে।নীল শাড়িতে অসম্ভব রকম সুন্দর লাগছে তাকে। সে হাত ভর্তি নীল কাঁচের চুড়ি পড়েছে। নীল টিপ দিয়েছে।মনে হচ্ছে একটা নীল পরী আকাশ থেকে নেমে এসেছে।
আমি বৃষ্টি তে ভিজছি, তুমুল বৃষ্টি। আমি অরুন্ধতী কে ডাকলাম এসো দুজনে মিলে বৃষ্টি তে ভিঁজি।

অরুন্ধতী বলল,

আমি বৃষ্টি খুব পছন্দ করি, কিন্তু ভিঁজলে আমার টনসিল বাড়ে। আমি বৃষ্টি তে ভিজলে মা রাগ করবে।

আমি বললাম,
কিচ্ছু হবে না এসো। তোমাকে বৃষ্টি তে ভিজলে অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগবে নীল মেঘ যেনো তুমি।

পেছন থেকে আমাকে ডাকলো অনুসুর্য।

বলল,

এই মুগ্ধ এরকম করে বৃষ্টি তে ভিজছিস কেন জ্বর আসবে তোর,তোর না টনসিল সমস্যা।

আমি বললাম,
হোক টনসিল , আজকে বৃষ্টি তে ভিজতে ভিষন ভালো লাগছে।

আমার মনে হলো টিনের চালে ঝমঝম বৃষ্টি পড়ছে। আমারও অরুন্ধতী র মতো নীল শাড়ি পড়ে ভিজতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমার কোন শাড়ি নেই। এবার বন্ধে ফুপ্পি র শাড়ি আনবো।

অনুসুর্য আবারও ডাকলো,এতো ভিজিস না উঠে আয়।

আমি তুমুল বৃষ্টি তে ভিজঁছি। অনুসূর্য ও আমার সঙ্গে বৃষ্টি তে ভিজতে যোগ দিল। অনুসূর্য আমাকে বৃষ্টি র পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। আমি অনুসুর্য কে বললাম,

—-জান অনুসুর্য অরুন্ধতী দেখতে খুব সুন্দর। মনে হলো আমি এতক্ষণ অরুন্ধতী র সঙে বৃষ্টি তে ভিজছিলাম।
অনুসূর্য বলল,
অরুন্ধতী কে,আর তোর সঙ্গে সে ভিঁজবে কেন ই বা।

আমি বিরবির করে বললাম, সে আমার কেউ না,তবুও মনে হয় সে আমার অনেক কিছু ই। আমি তার প্রতি এক ধরনের টান অনুভব করছি।

অনুসুর্য বলল,
—– তুই কি সব আজগুবি টাইপ কথা বলিস বলতো, আমি কেমন যেনো বুঝতে পারছি না। আমাকে খুলে বলতো অরুন্ধতী সম্পর্কে। আমি জানতে চাই দেবযানী।

আমি বললাম,
—– আজকে না অন্য আরেক দিন বলবো অরুন্ধতী কে নিয়ে। একদিন আমি অরুন্ধতী আর তুমি এক সঙ্গে কফি খাব। আজকে তিথির সেই বল্টু স্যার এর রূপবতী মেয়েটির কথা খুব মনে হচ্ছে এই মুহুর্তে। সেই রূপবতী মেয়েটির নাম কাজল লতা। তার সঙ্গে তার কম বয়সী স্বামীর ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে অল্প কিছু দিন আগে। তিথি আমাকে সে গল্প বলেছে। পরবর্তী তে সে এক বয়স্ক লেখক কে বিয়ে করে আবার ও হইচই ফেলে দেয়। এখন তারা খুব ভালো আছে।
তিথি প্রায় ই বলতো,
— জানিস দেবযানী, বল্টু স্যার এর মেয়ে ছিল পরীর মতো সুন্দরী।
আমি মনে মনে বলতাম,ইস আসলেই কি পরী পৃথিবীতে আছে নাকি এটা মানুষের অবচেতন মনের ধারনা। আমার সত্যি ই পরী দেখার খুব শখ, কোন এক চাঁদনি রাতে যদি কোন পরীকে দেখতে পেতাম আহা!

অনুসুর্য আমার দিকে হা করে তাকিয়ে গল্প শুনছে।

ক্রমশ ০০০

৪/১১/২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here