নীলিমায় কালো মেঘ
পর্ব ৬
আবির তার মাকে ছোট ভাই আপনের বাসাতে রেখে এসেছে মাত্র পনেরো দিন আগে। এর মধ্যেই তার মা আপনের বউয়ের বিরুদ্ধে ডজন খানেক নালিশ করা শেষ। মায়ের কাছে ফোন করলেই এই নালিশ সেই নালিশ। আপনের বউ তার কাপড় ধুয়ে দেয়না। সময় মত খেতে দেয়না, আপনের বউ সারাদিন মোবাইল হাতেই ব্যস্ত থাকে তার সাথে কথাবার্তা বলার সময় পায়না আরো কত নালিশ।
আবির পুরোপুরি বিরক্ত নালিশ শুনতে শুনতে।
– মা, তুমিই তো চেয়েছো আপনের বাসায় থাকতে । তুমি আমার বাসায় থাকতে কমফোর্ট ফিল করোনা তাই আপনকে বড় বাসা নিতে বলেছি যাতে তোমার থাকতে অসুবিধা না হয়। আপনকে সেই বাবদ টাকা দিয়ে দিচ্ছি। আর কি করতে বল আমাকে? এই মুহূর্তে তোমার গ্রামে যাওয়া পসিবল না। পনেরো দিন পর পর তোমার ডাক্তারের কাছে চেক আপে যেতে হবে। তোমার কিডনিতে প্রবলেম ধরা পড়েছে। কদিন পরপরই হাত পা ফুলে যাচ্ছে কিছু কি বুঝতে পারছোনা। কিছুদিন ফলোআপে থাকার পরে তোমার ডায়ালসিস লাগবে কিনা ডাক্তার জানাবে। না লাগলে গ্রামে যেতে পারবে। কিন্তু ততদিন তোমাকে এডজাস্ট করতে হবে ,মা। ভাবনার সাথে তোমার সমস্যা ভাবনা চাকরি করে তাই, সেটা না হয় বুঝলাম। কিন্তু আপনের বউয়ের সাথেও একই সমস্যা কেন হচ্ছে।
– তোর কাছে তাহলে আমারই দোষ তাইতো!
– সেটা কখন বললাম?
– সেটা বলিসনি আবার বলতে বাদও রাখিস নি। আপন তো মুখের উপর সকাল বেলা সে কথাই বলে গেল।
– মা, আপন কি বলেছে জানিনা। আমি আবির , আপন না। আমি তোমাকে এমন কিছুই বলিনি। আমি এখন কি করতে পারি বল? আমার বাসাতে আসতে চাইলে আমার বা ভাবনার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার একা থাকতে হবে। এটা মেনে নিয়ে আসতে চাইলে আমি তোমাকে নেক্সট উইকে নিতে আসবো।
– তুই আর কি করবি? সবই আমার কপাল? নইলে এমন বউ কপালে পড়বে কেনো? তাও দুইটাই!
– ভাবনা চাকরি করে এটাই তো তোমার বড় সমস্যা! ভাবনা কিন্তু কখনই তোমাকে অসম্মান করেনা। ভাবনা সবসময়ই তোমার ভালো হবে কিসে সেটাই ভাবে। ভাবনা না হয় আমার পছন্দের ছিলো তাই তোমার ওকে কোন কালেই পছন্দ না । এমনকি ওর পরিবারের কাউকেও তুমি পছন্দ করোনা। কিন্তু আপনের বউকে তো তুমি নিজে পছন্দ করে এনেছো। তোমার বাপের বাড়ির এলাকার মেয়ে তবে সেখানেও কী সমস্যা?
– খোঁচা মারা কথা বউয়ের কাছে থেকে থেকে ভালোই শিখেছিস। নীতুকে তখন তো ভালোই দেখেছিলাম। ভাবছিলাম বয়স কম , যেমনে বলবো তেমনে চলবে। তাছাড়া ওর মা বাবা আমার পরিচিত আগে থেকে। কিন্তু এই মেয়ে তো দেখছি পুরাই বেয়াদব । বড়দের সম্মান কী জিনিস সেটাই বোঝেনা। আমার মুখে মুখে তর্ক করে যা না তা বলে। গতকাল কতগুলি সবজি বাইরে ফেলে রেখে রেখে নষ্ট করছে দেখে মেয়েটাকে হিসেবি হতে বললাম অমনি মুখের উপর বলে নষ্ট হলে হবে তাতে আমার কি! আমি ঠিকঠাক খাবার পেলেই নাকি হলো। আরে বাবা, আমার ছেলের কষ্টের উপার্জনের টাকায় কেনা জিনিস নষ্ট হতে দেখলে আমি বলবোনা? প্রায়ই এমনে করে খাবার নষ্ট করে করে ফেলে দেয়। সেগুলি দেখলেও কিছু বলতে পারবোনা। নামাজ রোজার তো খবর নেই। বেলা দুপুর করে ঘুম দিয়ে উঠে। সারাদিন মোবাইল হাতে টিপতেই থাকে। এর সাথে কথা, ওর সাথে কথা। আমার রুমে এসে একটু উঁকি মেরেও দেখেনা। টেবিলে খাবার ফেলে রেখে সে তার মতো ব্যস্ত থাকে। আরে আমরা শাশুড়িকে খাবার দিয়ে সামনে টুনির মত সোজা হয়ে দাঁড়াই থাকতাম কখন কি লাগে না লাগে ডাক দিলে যদি না পায় সেই ভয়ে। আর এদের তো কোন ভক্তি শ্রদ্ধাই নাই।
– মা, তোমাদের যুগের সাথে এ যুগের বউদের কেনো মিলাও? ও নামাজ পড়েনা তুমি ডাক দিয়েছো ব্যস ! বারবার বলে তুমি নিজেও যেমন বিরক্ত হচ্ছো তেমনি সেও। আর মোবাইল চাপুক না যা খুশি করুক তুমি তোমার মত থাকো। এত ভুল ধরলে চলা যায়না। আর কিছুদিন আগে তো খুব প্রশংসা করে বললে তোমার বউ খাবার নিজের হাতে তুলে তুলে খাওয়ায় আর এখন বলছো অন্য কথা। কোনটা বিশ্বাস করবো বলতো!
– আরে তখন তো ভেবেছিল দুদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে চলে যাবে তাই যত্নআত্তি করেছে । ওগুলি সব হলো দেখানো আর স্থায়ীভাবে থাকতে এসেছি দেখে মাথায় বাজ পড়ছে। পুরাই অন্য মানুষ। বয়স কম হলে কি হবে পুরাই হিটলারি বুদ্ধিতে মাথা গিজগিজ করে। সেদিন দরজার পাশে দাঁড়াই শুনি ফোনে মায়ের কাছে নালিশ করতেছে তোর নামে।
– আমার নামে? আমার নামে আবার কি নালিশ ? আমি কি করেছি?
– বলতেছে আমাকে রাখার জন্য অতিরিক্ত বাসা ভাড়ার টাকা দিচ্ছিস কিন্তু খাওয়া খরচ বাবদ নাকি কিছুই দিচ্ছিস না । সব আপনের ঘাড়ে পড়েছে এই নিয়ে মা মেয়ের কত হা হুতাশ।
– আবির খানিকক্ষণ দম নিয়ে বলল, মন্দ কী বলেছে ? ঠিকই তো বলেছে। আমি তো খাওয়া খরচ বাবদ কিছু দিচ্ছিনা। আসলে আমারই ভুল হয়েছে । এ মাস থেকে দিয়ে দিব আপনের কাছে। তো তোমার ডাক্তার খরচ যে টোটাল টা আমি বিয়ার করি সেটা তোমার বউ তার মায়ের কাছে বলেনি?
– তা কি আর বলে? তবে আমি বলতে আর ভুল করিনি। আমি বলেছি । সেটা বলাতে আরো চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করছে। আমি আড়ি পেতে কথা শুনেছি এজন্য যা মুখে আসল কতক্ষণ বলল। তারপরে বলে “ তারা জামাই বউ দুইজনই বড় চাকরি করে তাগো কী টাকার অভাব আছে? মাইয়া ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে এত্ত টাকা খরচ কইরা পড়ায় তয় মায়েরে খাওয়ার খরচ দিতে কিসের অসুবিধা?”
– হুম, ঠিকই তো বলেছে। ভুল তো আমারই। আপন বিশ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি করে। নতুন সংসার। কত খরচ! আর তুমি এসব ব্যাপারে কথা বলতে যেওনা। আমি আপনের কাছে আজই টাকা পাঠিয়ে দিব। আরেকটা কথা তুমি এভাবে দরজার পাশে আড়ি পাততে যেওনা। এটা খারাপ অভ্যাস। আর ভুলেও এসব কথা আপনের কানে দিওনা। শুধু শুধু সংসারে অশান্তি হবে।
– হ্যা , সারাজীবন ন্যায় নীতি তোদের শিখাইতে শিখাইতে আমি চুল পাকাই ফেললাম আর এখন তোদের কাছ থেকেও শিখতে হবে। এক টাকাও দিবিনা তুই। বাড়ীর ফসলের টাকা তো সব আপনই নিয়ে আসে। কই তখন তোকে তো এক পয়সাও দেয়না। তাইলে আবার আমার খাওয়া পরার হিসেব নেয় কোন মুখে ওর বউ?
– মা, এত হিসেব করলে চলেনা। প্লিজ, আর কথা বাড়িও না। আমার লাগেনা তাই নেইনা। এসব বাদ দাও। ঠাণ্ডা মাথায় দোয়া দুরূদ পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়। আর আপনের বউ কেমন তা তো জেনেছোই তাই তার সব ব্যাপারে কথা বলার দরকার নেই। তাতেই শান্তি। এখন রাখলাম । সকালে আবার অফিস আছে। ঘুমুতে যাবো । ভালো থেকো।
ফোনটা রেখে আবির থ’ মেরে বসে আছে দেখে ভাবনা এগিয়ে এসে বলল, কি ব্যাপার মা ভালো আছে তো? এমন মুখ করে বসে আছো। চল, পরশু দিন তো তোমারও ছুটি । বাবুকে নিয়ে মাকে দেখে আসি। মার ভালো লাগবে। মা যাবার পর থেকে ঘরটা খালি খালি লাগছে খুব। রাতে ঘুমুতে যাবার আগে মায়ের রুমে একবার উঁকি মারা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল যে ঠিকমত ঘুমিয়েছে কিনা সেটা দেখতে। এখনও মনের ভুলে উঁকি মেরে ফেলি ঐ রুমে। জারাও রাতে গল্প শুনতো। ওরও খুব মনে পড়ছিলো মার কথা!
– হুম , ভালো আছে। এমনিতেই বসে আছি। তুমি ঘুমাওনি? আমি তো ভাবলাম ঘুমিয়ে গেছো। আচ্ছা, দেখি কি করা যায়! সময় হলে যাবো । একবার যাওয়া উচিত। মা গিয়েছে পনেরো বিশ দিন তো হলো। একবার দেখে আসা উচিত আমাদের ।
– সেটাই তো বলছি। এই তো ঘুমাবো। জারাকে ঘুম পারিয়ে ওর সকালের ড্রেস আয়রন করলাম আর স্কুল ব্যাগ রেডি করে রাখলাম। না হলে সকালে একদম তাড়াহুড়া লেগে যায়।
– ভালো করেছো। চল ঘুমাতে যাই।
– চল!
আবিরের ঘুম আসছেনা কিছুতেই। এপাশ ওপাশ করছে শুধু। শুয়ে শুয়ে তার মার কথা ভাবছে। এতদিন বেচারি একা একা থেকেছে কি খেয়েছে কি না খেয়েছে ? এখন বুড়ো বয়সে ছেলেদের কাছে থাকবে অথচ! সে এখানে থাকতে পারলোনা তাই তার ইচ্ছাতেই আপনের বাসায় পাঠিয়েছে এখন সেখানেও সমস্যা। আপনের বউ নীতুকে দেখতে সোজা সরলই মনে হয় ।কিন্তু মেয়েটার মধ্যে এত প্যাচ ভেবেই অবাক হচ্ছে আবির। সবচেয়ে অবাক হচ্ছে এটা ভেবে, ছেলের ঘরে মা থাকছে সেখানে খাওয়ার খোঁটা সে দেয় কোন মুখে? কত বড় দুঃসাহস । ঘুমন্ত ভাবনার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছে ! কই ভাবনা তো কোনোদিনই এমন করে তার মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করেনি। সবসময় শ্রদ্ধার চোখেই সে তার মাকে দেখে , তার সুবিধা অসুবিধা, খাওয়া দাওয়ার খোঁজখবর করে তারপরেও ভাবনাকে নানান কথা শুনতে হয় ! তবে কি তারা অন্যায় করছে ভাবনার সাথে? ভাবনার ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে ওর চুলে হাত বুলাতে বুলাতে আবির কখন ঘুমিয়ে গেল নিজেই টের পেলনা।
এদিকে ভাবনাকে আজকাল কেন যেনো প্রধান হিসাবরক্ষক দিলরুবা বেগমও পছন্দ করেন না। ভাবনা ব্যাপারটা টের পাচ্ছেনা তা না। কিন্তু কেন এমন করছে সে নিজেই বুঝতে পারছেনা। আসলে দিলরুবা বেগম খুব নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আজকাল ভাবনার সাথে উপরে মহলের সবার সাথে খুব ভাল সম্পর্ক। এটা তার জন্য মোটেই সুখকর নয়। মেয়েটা প্রচুর ট্যালেন্ট। না জানি কখন তার পোস্ট তাকে হারাতে হয়। কোম্পানীর সব ক্লায়েন্টের খোঁজখবর একদম তার নখদর্পণে। অন্যান্য ইমপ্লয়ীরা যেখানে একটু সুযোগ পেলেই খোশগল্পে ব্যস্ত হয়ে পড়ে সেখানে ভাবনা সেই সময়টায় কোম্পানীর বিভিন্ন নথিপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করে কোম্পানীর বিভিন্ন ক্লায়েন্টের হাল হকিকত বিশ্লেষণ করে। হিসাব পত্র কোথায় কেমন সবকিছু খুব ভালো করেই খোঁজখবর করে। কারো সাথে খুব বেশি বাজে সময় খরচ করেনা। কোম্পানীর জন্য এমন দায়িত্বশীল ইমপ্লয়ী খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু দিলরুবা বেগমের জন্য বিশেষ হুমকি স্বরূপ।
মাসুদ সাহেবের জালিয়াতি ধরার পরে তো একদম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে ভাবনা। মাসুদ সাহেবের ব্যাপারটা সেও অনেক আগে থেকেই কিছুটা টের পেলেও চাকরি হারাবার ভয়ে মুখ খোলেনি। কিন্তু এই পুঁচকে মেয়েটার সাহস আছে বলা চলে। বছর না ঘুরতেই রাঘব বোয়াল শিকার করেছে একদম।
মাসুদ সাহেব কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ সাহেবের ছোটবেলার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তাই তার ব্যাপারে মুখ খোলার সাহস কোনোদিন কারো হয়নি। অথচ সেই অসম্ভব কাজটি করেছে ভাবনা।
মাসুদ সাহেব যে অন্যায় করেছে তাতে তার জায়গা অন্য কেউ হলে কবেই চাকরি তো যেতই উল্টা এতদিন জেল হাজতে থাকতে হতো। মালিক পক্ষের সদয় দৃষ্টির জন্য এখনো বহাল তবিয়তে আছে।
এদিকে ভাবনা আছে মহা চিন্তায় । মাসুদ সাহেব আবার তার চাকরির বারোটা না বাজিয়ে দেয়! আহত বাঘের মত সে এখন নিশ্চয়ই সুযোগ খুঁজছে শিকারের আশায়। মাসুদ সাহেব যতবার অফিসে বসে ভাবনাকে দেখে ততবারই চোখ দিয়ে যেন গিলে খায় তাকে। ভাবনার উনার চোখের দিকে তাকালে খুব ভয় হয় । তাই ইদানিং পারতপক্ষে ওনার সামনাসামনি না হওয়ার চেষ্টা করে। যদিও ম্যানেজার সাহেব ভাবনাকে অভয় দিয়েছেন তবুও ভয় হয় ভাবনার। চীফ ম্যানেজার এই ব্রাঞ্চে এসেছে ভাবনার আসার মাস কয়েক আগে। বয়সে আর অভিজ্ঞতায় মাসুদ সাহেবের চেয়ে ছোট । যোগ্যতাবলে সে এই পদ অর্জন করেছেন । তার চেয়ে পদমর্যাদায় মাসুদ সাহেব নিচে হলেও সেই অবশ্য খবরদারি করে বেশি।
এই অফিসের দায়িত্ব এখন এমডি স্যারের বড় ছেলে রায়হানের উপর। উনি এখানকার ডিরেক্টর। ভাবনার সাথে এই এক বছরে মাত্র একদিন কথা হয়েছে। উনার সাথে চাইলেই দেখা করা যায়না। ভাবনা মনে মনে ভাবছে উনার কাছে মাসুদ সাহেবের ব্যাপারে কথা বলবে। তার চাকরিটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছে সে। কিন্তু উনার সাথে দেখা করার সুযোগ তার মত চুনোপুঁটির কোথায়? ম্যানেজার সাহেব যদিও বারবার তাকে আশ্বস্ত করেছে তারপরেও খুব টেনশন হচ্ছে।
আজ অফিস থেকে ফিরেই আবিরের মুখটা কেমন থমথমে। ভাবনা বারবার জিজ্ঞেস করেও আবিরের থেকে কোনো উত্তর পাচ্ছেনা। খাওয়ার পরে আবির মেয়েকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসেছে টিভি দেখার জন্য । ভাবনা অনেকক্ষণ ধরেই খেয়াল করছে আবির অন্যদিনের মত জারার সাথে গল্প করছেনা। জারা যতটুকু জিজ্ঞেস করছে ততটুকুই উত্তর দিচ্ছে। কিছু তো হয়েছে!
খাবার টেবিল গোছগাছ করে ভাবনা আবিরের পাশে এসে বসলো। জারাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
– মামণি, আমি একটু পাপার সাথে গল্প করি তুমি তোমার টেডির সাথে যেয়ে খেল।
– আচ্ছা, মাম্মি। বলেই জারা বেডরুমে চলে গেল।
ভাবনা একটা বাটিতে কতটুকু নারিকেল তেল এনে রেখেছে । সেখান থেকে কিছু অংশ হাতে নিয়ে আবিরের মাথায় ম্যাসাজ করতে করতে বলল,
– কি হয়েছে ,জনাব! আমি কি কিছুই জানতে পারিনা?
আবির চুপচাপ দেখে সে আবার বলল, কি ব্যাপার মায়ের শরীর ভালো তো! আজ মার সাথে আমার কথা হয়নি। সব খবর ভালো তো! নাকি নীতুর সাথে আবার কিছু হয়েছে?
– এই আছে। এখন কি আর ভালো থাকা সম্ভব? ডাক্তার ডায়ালসিস করতে বলেছে। এখন তো মাসে একটা করে। ধীরে ধীরে দেখা যাবে বাড়তেই থাকবে। খুব ভয় হচ্ছে। মার কতই বা বয়স হয়েছে? আর নীতুর সাথের কাহিনী সে তো চলবেই। মাও ছাড় দেবার পাত্রী না আর নীতু তো একটা চরম সেলফিস! যাই হোক, চল ঘুমাতে যাই।
– চিন্তা করোনা । আল্লাহ যা করেছেন সেটাকে পরিবর্তন করার ক্ষমতা আমাদের কই? আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করবো । কি আর করা। আচ্ছা ,চল!
রাতে হঠাৎ পাশ ঘুরে দেখে আবির পাশে নেই। লাইট অন করে দেখে সে রুমে বা ওয়াশরুমেও নেই। চিন্তা হলো খুব ভাবনার। এত রাতে রুমের বাইরে সে কেনো যাবে? পানি খেতে চাইলে রুমেই পানির জগ গ্লাস সব রাখা আছে। রাতে আবির তার মায়ের ব্যাপারটা বলে তখনকার পরিস্থিতি ধামাচাপা দিলেও ভাবনা ঠিকই টের পেয়েছে ব্যাপার অন্য কিছু। আবির যেহেতু বলতে চাচ্ছেনা তাই আর সে জোরাজুরি করলোনা। এখন তার সন্দেহ দৃঢ় হলো নিশ্চয়ই আবির কিছু লুকাচ্ছে।
সে রুমের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাত তখন সাড়ে তিনটা। রুম থেকে বেরুতেই দেখলো আবির ড্রয়িংরুমে পায়চারী করছে।
কিছু যে লুকাচ্ছে এটা সে শিওর। কিন্তু আবির তাকে লুকাচ্ছে কেনো ? কি এমন হয়েছে যা তাকে বলতে চাচ্ছেনা। আবির আবার কোনো বিপদে পড়লোনা তো ! মনের মধ্যে নানান ধরণের কু ডাক ডাকছে তার। হঠাৎ পেছন থেকে যেয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরলো সে।
আবির কে, কে? বলেই চমকে উঠলো।
চলবে….
–