” ও কীভাবে পারলো নিজের বোনের হবু স্বামীকে বিয়ে করতে।রাফা, এই রাফা কী হলো কথা বলছিস না কেন?এই বোন?”

আজ বাদে কাল যার সাথে রাফার বিয়ের কথা সেই মানুষটা নিজের আপন ছোটো বোনকে বিয়ে করেছে।কথাটা বুঝতেই হাত পা অবশ হয়ে এলো রাফার।মূর্ছা যাওয়ার পূর্ব মুহুর্তে মানসপটে ভেসে উঠলো গতকাল রাতের সবকিছু।

শুকিয়ে যাওয়া মেহেদী হাতে ফোনটা রিসিভ করলো রাফা।স্ক্রিনে জাবিরের নাম ভেসে উঠেছে।অন্য হাতে কানের পিঠে মসৃণ চুলগুলো গুঁজে দিলো।ঘন ঘন উষ্ণ শ্বাস ফেলে ঠোঁট কা”ম”ড়ে শুধালো,

“বন্ধুর বোন দেখে আমাকে বিয়ে করতে এতো সমস্যা আপনার?বিষয়টা কী ঠিক জাবির ভাই?যেখানে দুটো পরিবার সবটা সঠিক মনে করেছে।”

গম্ভীর কণ্ঠে জবাব মিললো,

“যদি বলি তোমাকে আমার পছন্দ নয় রাফা?”

“কেন?আমি দেখতে খারাপ?অশিক্ষিত?কিংবা আব্বুর, ভাইয়ার কম অর্থ আছে মনে হয়?”

“তোমার কেন মনে হলো আমি অর্থলোভী?সেরকম আচরণ কখনও পেয়েছো?”

অভিমানী কণ্ঠে রাফা জবাব দিলো,

“আমাকে বিনা কারণে রিজেক্ট করা একদম অনুচিত কাজ হবে জাবির ভাই।তাও এই অন্তিম সময়ে এসে।তাছাড়া আপনি আইনের লোক।নীতি তো ঠিক রাখুন।”

“আমার পেশা দিয়ে ব্যক্তিগত জীবনকে জড়াবেনা রাফা।সম্ভব নয় তোমার সঙ্গে বিয়ে নামক সম্পর্কে আবদ্ধ হওয়া।আমি মানা করে দিচ্ছি বিয়েতে।তুমিও সেম কাজ করবে।”

বাক্যের শেষাংশে জাবিরের কণ্ঠে ক্রোধের অনল মিশে ছিল।রাফা শুকনো ঢোক গিললো।মানুষটাকে সে কেন এতো পছন্দ করে?উহু,কখনো বিয়ে তে না করবেনা।নিজ কণ্ঠে আরো বেশী গাঢ়তা এনে বলল,

“আমি বিয়েতে না করবো না।যদি আপনি নিজের চাকরি ছেড়ে রাস্তায় থা/লা নিয়ে বসে যান তাও না।আচ্ছা আপনি কী ভাবছেন বয়স বেশী দেখে মাইন্ড করবো?একদম ভুল।অনেকদিন ধরে একটা কথা বলা হয়না জানেন।”

জাবির একটিবারও কথাটি জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো না।তার অন্তঃকরণে সহ্যের ভার সইতে সইতে নুইয়ে পড়েছে।রাফাকে কিছু চরম কথা শুনাতে পারলে হয়তোবা শান্তি মিলতো।

“রাফা প্লিজ সিচুয়েশনে বোঝার চেষ্টা করো।”

“জাবির ভাই।আপনি যথেষ্ট সেন্সিবল একজন মানুষ।ছোটবেলা থেকে কী একবারও মনে হয়নি কেন ভাইয়ার আর সকল বন্ধুর থেকে বেশী মিশতাম আপনার সঙ্গে?কখনো মনে হয়নি?ভীষণ নির্লজ্জ হয়ে বলছি।হয়তো তীব্র অনুভূতি আছে আপনার প্রতি।ঠোঁটকাঁটা মেয়ে তো।”

“তুমি কী জানো একজনের সাথে দুই বছর ধরে সম্পর্কে আছি আমি?কখনো বুঝেছো?”

জাবিরের কথায় হেসে ফেললো রাফা।তার সুমধুর হাসির ঝংকার পুরুষটার মনে জ্বা/লা ধরিয়ে দিলো।ভালবাসার মানুষটিকে নিয়ে অনেকটা সংকীর্ণ সে।কণ্ঠে লাল নীল রাগের ছোঁয়া মিশিয়ে পুনরায় বলল,

“হেসে কী আমার অনুভূতিকে অপমান করছো না?”

“আর আপনি?মনে আছে ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে আমার জন্য কী পা/গ/লা/মি করেছিলেন?নিজের মায়ের শেষ স্মৃতিও তো এই অ” ধ”ম নারীর হাতেই শোভা পাচ্ছে।আপনার ব্যবহার সবকিছু অনেক আগে থেকে জানান দিতো আমি আপনার।রাফা আপনার।তাহলে আজ অধৈর্য্য করছেন কেন আমাকে?”

গলা ধরে এলো রাফার।দৃষ্টি নামক আকাশে বৃষ্টি নামবে।আপ্রাণ চেষ্টা করে অশ্রু গুলো গিলে নিচ্ছে সে।

“তোমার সাথে থাকলে আমার মানসিক শান্তি মিলতো।সেজন্য উপহারস্বরুপ চুড়ি গুলো উপহার দিয়েছিলাম।আমার দোষ এখানে।ভালোবাসিনা রাফা।বিয়েটা ভেঙে দাও প্লিজ।তোমার কথা রোহান সহ সকলে শুনবে।ইভেন আমার বাবাও।”

“নিজে ভালো থাকতে আশা জাগিয়েছেন এবার আমি ভালো থাকার না বেস্ট থাকার জন্য বিয়েটা করবো।”

“পস্তাবে রাফা।বিয়ে তো আমার বিশেষ মানুষটাকেই করবো।”

“বিশেষ মানুষটা নিশ্চয় স্বপ্ন মানবী।যার বাস্তবে অস্তিত্ব নেই।জাবির ভাই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে।ফোন রাখছি।”

“আমার কথা তোমার বিশ্বাস করা উচিত ছিল রাফা।”

চট করে ফোনটা অফ করে দিলো রাফা।মাথার যন্ত্রণাটি বেড়ে চলেছে।হাতের মেহেদী শুকিয়ে ঝড়ে পড়ছে হলুদ- সবুজ রাঙা শাড়ীটিতে।আজ রাতে মেহেদীর অনুষ্ঠান ছিল।সে করতে চায়নি।তবুও রোহানের যেন বোনের বিয়েতে সবকিছু ধুমধামে করতে একটু বেশীই আগ্রহ।হতেই পারে বিয়েটা যে তার বাল্যকালের বন্ধু জাবিরের সঙ্গে।

রাফার মা আবিদা এতোক্ষণ মেয়ের জন্য খাবার নিয়ে বাহিরে অপেক্ষা করছিলো।সবগুলো কথা শুনেছে সে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে থালা হাতে ভেতরে ঢুকলো।তাকে দেখে মলিন হাসলো রাফা।

“মেহেদী শুকিয়েছে?খেতে পারবি?কী বলল জাবির?”

“সব তো শুনলে মা।তবুও কেন?”

থতমত খেয়ে গেলো আবিদা।ধরা পড়ায় বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই।মেয়ের পাশে পরম আয়েশ করে বসলো।

“বিয়েটা না করার হলে জাবির আগে কেন বলল না?পরশু বিয়ে।”

“লোকটা এমনই মা।দেখিও ঠিক মানিয়ে নিবে আমার সাথে।আচ্ছা মা আমি তো জোর করছিনা?”

মেয়ের চোখের দিকে তাঁকালো আবিদা।কী সুন্দর গভীর দৃষ্টি।মাথা ভর্তি চুল।শুভ্র গায়ের রঙ।মেদুর কায়া।যেকোনো পুরুষের মন গলাবে।

“তুই জোর করবি কেন?এতো সমস্যা থাকলে জাবির আগে না করতো।তা নয় আজীবন তোর থেকে দূরে থাকতো।ছেলেটার ব্যবহারে মনে হতো তুই বলতে পাগল।অথচ যাক সেসব কথা বাদ দে।বিষয়টা তোর বাবাকে জানানো উচিত?”

“একদম না মা।আমার অনুভূতি নিয়ে খেলার শাস্তি এটা।রিনি কোথায়?ও আজ এতো মনমরা হয়ে কেন বসেছিল?”

“তুই চলে যাবি তাই।ঘুমাচ্ছে নিজের রুমে।আজ আমি তোর সাথেই থাকবো।দাঁড়া ট্রে রেখে আসছি।”

আবিদা চট জলদি ট্রে রেখে এলো রান্নাঘরে।রাফা সেভাবেই বিছানাতে গা এলিয়ে দিলো।লাইটটা অফ করে তার পাশে মায়ের উষ্ণ স্পর্শ পেতেই কেঁদে ফেললো।আবিদা বাঁধা দিচ্ছে না মেয়েটিকে।জাবিরের প্রতি হঠাৎ খুব রাগ অনুভব হলো তার।মেয়েটিকে এতোদিনে বিভ্রমে রেখে এসব এলেমেলো করে দিলো?যখন একটা সম্পর্কে জড়াতে চলেছে তারা।

রাতে বিশেষ ঘুম হয়নি রাফার।অবিন্যস্ত শাড়ীখানা ঠিক করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।তার চাচাচো বোনেরা একে একে তাড়া দিতে লাগলো ফ্রেশ হওয়ার জন্য।দীর্ঘসময় গোসল শেষে বেরিয়েছে।কান্নার দরুণ নাকী বিয়ের ছোঁয়ায় আলাদা উজ্জ্বলতা জমে আছে চেহারাতে।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছে নিচ্ছে এমন সময় তার বড় ভাই রোহান ফোনে কল করলো।রিসিভ করতেই ওপাশ হতে উত্তেজিত হয়ে বলতে লাগলো,

“জাবির ও রিনি কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে করে নিয়েছে।একটু আগে ফোন করে জানালো আমাকে।বোন আমার তুই সামান্যতম কাঁদবিনা।অন্য কেউ বলার আগে নিজে জানানো প্রয়োজন করলাম।রিনিকে কী করবো জানিনা।ও কীভাবে পারলো নিজের বোনের হবু স্বামীকে বিয়ে করতে।রাফা, রাফা কী হলো কথা বলছিস না কেন?এই বোন।”

রোহান এতো কথার কোনো জবাব পেলো না।কারণ অতি নগন্য ফোনের ওপাশে থাকা বিষাদিনী মূর্ছা যাচ্ছে ধীরে ধীরে।জবাব দিবে কে তাহলে?

চলবে।
#নীরদের_বিষাদিনী
#সূচনা পর্ব
লেখাঃসামিয়া খান প্রিয়া

(এডিট ছাড়া।যারা গল্প পড়েন তারা রেসপন্স করবেন।পেজের রিচ নেই।আপনি রেসপন্স করলে অন্যরাও পড়তে পারবে।যে গল্পটা চলমান ছিল তা কেন অফ হলো খুব ভালো করে জানেন আপনারা।তবুও বিস্তারিত পোস্ট করবো।)

ছবিয়ালঃঅদিতি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here