#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_23

দুবলার চর বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের দক্ষিণে, কটকার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং হিরণ পয়েন্টের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি দ্বীপ যা চর নামে হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং হরিণের জন্য বহুল পরিচিত। কুঙ্গা ও মরা পশুর নদের মাঝে এটি একটি বিচ্ছিন্ন চর।[১] এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, হলদিখালি, কবরখালি, মাঝেরকিল্লা, অফিসকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয় এবং মেহের আলির চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত। দুবলার চরে শুধু মাত্র টেলিটক এর নেটওয়ার্ক রয়েছে।
ভ্রমন গাইড দের কাছেই টেলিটক সিম আছে । যা দেখে সবাই আফসোস করছে। সবার এই বিষয়ে তেমন আইডিয়া ছিলো না। তাই টেলিটক সিম ও নেই। কিছুক্ষণ আগেই দুবলার চরের উদ্দেশ্যে বোর্ট ছাড়া হয়েছে। বরাবরের মতোই অভিনব ঝিল কে নিয়ে কর্নারে বসেছে। ঝিল বায়নার সুরে বলছে সে পানি তে পা ভেজাবে। অভিনব বার বার নাকোচ করে যাচ্ছে।যার জন্য ঝিল মুখ ভার করে রইলো। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেললো। এই মেয়েটা কোনো কথাই শুনবে না।
_ ঝিল ।

_ কি ?

_ যান ।

_ কোথায় যাবো ?

_ পানিতে পা ভেজান ।

_ সত্যি ?

অভিনব মৃদু হেসে সম্মতি জানালো। ঝিল উঠে দাঁড়ালো। অভিনব দাঁড়িয়ে ঝিল কে ঘুরিয়ে বসালো। ঝিল কে ব্যালেন্স করতে অভিনব নিজে ও ঝিলের পাশে বসলো।
ঝিল জিন্স টা ফোল্ড করে পানিতে পা ভিজাতে লাগলো। অভিনব ও পানি তে পা রাখলো। ঝিল কিছু টা পানি অভিনবর দিকে ছিটিয়ে দিলো। অভিনব রাগি চোখে তাকালে ই ঝিল খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
এতোটাই হাসছিলো যে বোর্ট থেকে পরেই যাচ্ছিলো। অভিনব রাগী চোখে তাকিয়ে ঝিলের কোমর জড়িয়ে বসলো। ঝিলের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। অভিনব একটু আলগা করেই ধরলো। ঝিল কাচু মাচু করতে লাগলো। অস্বস্তি আর শিহরনে নুইয়ে যাচ্ছে। অভিনব সে দিকে পাত্তা দিলো না। মেয়েটার চরম শাস্তি হওয়া দরকার । এতো বেশি বাচ্চামো শুরু করেছে যে অভিনব হিম শীম খাচ্ছে।
_ অভিনব।

_ হুসসস একটা কথা ও না। অস্বস্তি হলে হোক।

_ কিন্তু

_ আমি ছুইয়েছি দেখে কোনো সমস্যা ?

অভিনব কথা টা রগরগা কন্ঠেই বললো। ঝিল সামান্য ভরকে গেল। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল
_ না।

অভিনব হাসলো। ঝিলের অস্বস্তি কমলো না। অভিনব তবু ও ঝিল কে এক হাতে জড়িয়ে আছে। মেয়েটাকে অস্বস্তি দিতেই মজাই লাগছে। অভিনব কিছু টা পানি উঠিয়ে ঝিলের মুখে ছিটিয়ে দিলো। ঝিল রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই অভিনব মুখ চেপে হাসতে লাগলো।
ঝিল আর কিছুই বললো না। ধীরে ধীরে অভিনবর কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। অভিনব মৃদু হাসলো। মেয়েটা বড্ড চাঁপা স্বভাবের। এভাবে চলতে লাগলো অন্ত নিশ্চিত।
আলতো হাতে ঝিল কে আরেকটু কাছে টেনে নিলো। ঝিল ও কোনো প্রতিক্রিয়া না করে অভিনব কে অনুভব করতে লাগলো।
দারুন এক অনুভূতি বিরাজ করছে। মনে হচ্ছে সময় টা এখানেই থেমে যাক।
এই মানুষটার হাতে হাত রেখে আরেকটু পথ চলা যাক।
আচ্ছা এই মৃদু ছন্দে মাতাল করা হাওয়া গুলো কি থেমে যাবে ?
কয়েক দিনের মাঝেই যে ওরা পুরোপুরি আলাদা হয়ে যাবে ।
তখন ও কি পাখির কূজন শোনা যাবে ? নাকি থেমে যাবে সকল প্রক্রিয়া। কোনো এক ধূসর আকাশ থেকে ডানা মেলে এক ঝাঁক ধূসর রঙের প্রজাপতি এসে কি স্পর্শ করে যাবে। অনুভূতি তে কি শিউরে উঠবে ঝিল। আর অভিনব বুক ভরে শ্বাস নিয়ে ঝিল কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিবে। নাকি সব এখানেই শেষ।
ঝিল হাসলো, মৃদু ছন্দে দু এক লাইন গান ও আওরালো।
অভিনব অনুভব করলো সে সুর। যে সুরে প্রেমের আহ্বান। যে সুরে পরিপূর্নতার আহ্বান। অভিনবর শ্বাস ঘন হয়ে গেল। এ কেমন অনুভূতি হচ্ছে ?
কিসের এতো ভয় ? কাছে আসার নাকি হারিয়ে ফেলার ?
অভিনবর উত্তর মিললো না। তার ই আগে দুবলার চরে এসে বোর্ট ভিরে গেল।

*

দুবলার চর মূলত শুঁটকির কারবার। পর্যটক দের শুঁটকি মাছ বানানোর প্রক্রিয়া দেখানো এবং শুঁটকি কেনার জন্য ই এখানেই নামানো হয়।
অভিনব বরাবর ই বাঙালি কালচার বেশ পছন্দ করে। আমেরিকান হলে ও রক্তের টান তো থেকেই যায়।
অভিনব খুব বেশি এক্সাইটেড তবে শুঁটকি মাছের কথা শুনেই ঝিলের মন খারাপ হয়ে গেছে।
শুঁটকি মাছের উগ্র গন্ধ ঝিলের অপছন্দ। এই দিকে বিদেশী ফর্সা বকের নাকি শুঁটকি মাছের প্রতি ঝোঁক রয়েছে। ঝিল অবাক হয়ে তাই ভাবছে। তার ভাবনার ছেদ ঘটলো অভিনবর ধাক্কাতে।
ঝিল সরু চোখে অভিনবর দিকে তাকালো। এই ছেলেটা যখন তখন ধাক্কা মারে। ক্যান রে সুন্দর করে নাম ধরে ডাকলেই তো হয় ?

ঝিলের দৃষ্টি অনুসরণ করে অভিনব তাকালো। সামনে বেলাভূমি ছাড়া তো কিছু নেই। এই মেয়ে দেখে টা কি ?
_ ঐ দিকে তাকিয়ে কি দেখছেন ?

_ দেখছি না ভাবছি ।

_ আচ্ছা তো কি ভাবছেন ?

_ এই যে আপনি যখন তখন আমাকে ধাক্কা মারেন। সুন্দর করে ডাকলেই তো আমি সাড়া দেই তাই না ?

_উমম তা ঠিক। তবে আপনাকে যে কয়েক বার ডেকেছি আপনার ধ্যানের ছন্দপতন কি ঘটেছে ?

_ ডেকেছিলেন বুঝি ?

_ না ডাকি নি। এবার চলুন , সবাই এগিয়ে গেছে।

_ অভিনব আমি যাবো না। প্লিজ প্লিজ , শুঁটকি মাছের উগ্র গন্ধ তে আমার গা গুলিয়ে আসে।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল
_ আপনি তাহলে বোর্ট চালকের সাথে বোর্ট এ গিয়ে বসুন।
আমি মাহেরার সাথে যাচ্ছি। কোথাও যাবেন না কিন্তু।

বলেই অভিনব হাঁটা লাগালো। কাজ টা অভিনব ইচ্ছে করে করলো নাকি তা বোঝার উপায় নেই। ঝিল কোমরে হাত গুঁজে দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। নিশ্চয়ই এখন মাহেরার সাথে ঢলাঢলি করবে। শালার সবাই এক , এই বিদেশী বক টার ও চরিত্রের দোষ আছে।
ঝিল লম্বা করে শ্বাস নিলো। শুঁটকির সাথে আজ মহা যুদ্ধ করবে ওহ। তবু ও অভিনব কে জ্বলন্ত লাভা মাহেরার হাতে ছাড়বে না।
সুযোগ পেলেই খপ করে অভিনবর গাঁয়ে এসে পরবে।
ঝিল আল্লাহর নাম স্মরন করে দৌড় দিলো। কি জানি আজ শুঁটকির সাথে মহাযুদ্ধ তে হেরে গিয়ে প্রান টা না দিতে হয়।
ঝিল হাঁফাতে লাগলো। অভিনব ক্যামেরা দিয়ে ফটো ক্লিক করতে করতে বলল
_ কি হলো ? চলে আসলেন কেন ? আরে বোর্টের মামা রোগা পাতলা মানুষ। কিছু করতে আসলেই খপ করে ফেলে দিবেন।

তাছাড়া আপনি তো এই টুকু বলেই ঝিলের পকেটের ভাঁজে থাকা লুকিয়ে রাখা ছোট্ট নাইফ টা টান মেরে বের করে ফেললো অভিনব।
নাইফ টা ফোল্ড থেকে একটু একটু করে খুলে বলল
_ এটা দিয়ে না হয় পেট ফুটো করে দিবেন।

ঝিল ভয়ার্ত চোখে তাকালো। অভিনব এটার খোঁজ পেল কি করে ?
ঝিল কে ঘামতে দেখে অভিনয় হাসলো। অভিনবর হাসি দেখে ঝিল আরো ভরকে এলো। অভিনব খানিটা ঝুঁকে নিয়ে ঝিলের কানের কাছে ফিস ফিস করে বলল
_ আমি ছুঁইয়ে দিলে বুঝি এই নাইফ দিয়ে আমার পেট ফুটো করে দিবেন ?

ঝিলের রন্ধে রন্ধে শীতল এক তরল নেমে গেল। লজ্জা তে একদম মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। অভিনব ঝিল কে আরেকটু অস্বস্তি দিতে ঝিলের চুল গুলো যত্ন করে গুছিয়ে দিলো।
একটু কাছে এসে ঝিলের পিঠ জড়িয়ে বলল
_ এখন ? এই যে আমি ছুঁইয়ে যাচ্ছি?

ঝিল চোখ নামিয়ে ফেললো। অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের জিন্সের পকেটের ফোল্ডে যত্ন করে নাইফ টা রেখে দিলো।
ঝিল মৃদু শ্বাস ফেলে বলল
_ আসলে

_ আসলে আপনি নিজের সেফটির জন্য এই সব কিছু শিখে রেখেছেন।
কিন্তু লাভ কি হলো আমি তো সব ধরে ফেললাম।

ঝিল চোখ ছোট ছোট করে তাকালো। অভিনব ঝিলের হাতার ফোল্ডে রাখা একটা মিশ্র পাউডারের মতোন বের করে সামনে রাখলো।
ঝিল ফাঁকা ঢোক গিলে নিলো।
অভিনব ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্যাকেট টা দেখে বলল
_ আচ্ছা এটার ব্যবহার কি এটা কি চোখে মেরে দেয় ?

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বোঝালো। অভিনব এক ফালি হেসে ঝিল কে নিয়ে হাঁটা লাগালো।
ঝিলের কাছে এসব আছে তা প্রথম দিন ই বুঝেছিলো অভিনব।
মেয়েটার সাহসিকতার প্রশংসা অবশ্য ই করতে হয়।
তবে অভিনব এ ও জানে ঝিল ওকে পরিপূর্ন বিশ্বাস করে। অবিশ্বাসের খাতায় অভিনবর নাম টা কাঁটা পরে গেছে।
ঝিল নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল
_ স্যরি। আমি আসলে

_ ইটস ওকে। এটা কোনো অন্যায় নয়। নিজের সেফটির জন্য ছোট নাইফ এসিড এই সব অবশ্যই রাখা উচিত। ঘরে থাকতেই আপনি সেইফ নন। আর এটা তো বাইরের জগত। এখানে বিশ্বাস অবিশ্বাসের খেলা চলবেই। আর বিষাক্ত হায়নার অভাব নেই। যারা মেয়ে মানুষ পেলেই ঝাঁপিয়ে পরে।
ঝিল ফোস করে দম ফেললো। অভিনব তাকে ভুল বুঝে নি তাহলে।

কিছুদূর যেতেই অভিনব বলল
_ বালির দিকে তাকান ঝিল ।

ঝিল তাকাতেই কেমন এক অদ্ভুত প্রানী দেখতে পেল। অভিনবর দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টি তে তাকালো । অভিনব ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে বলল
_ এটা জেলি ফিস

*

সবাই দুবলার চরের বিখ্যাত নিউ মার্কেটে যাওয়া শুরু করেছে। শীত কালে এখানে খড়ের কিংবা গোলপাতার ছাউনি দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়।
সেখানে নানা রকমের দ্রব্য বিক্রি করা হয়। অভিনবর হাতে ভর করে হাঁটছে ঝিল। ক্লান্ত লাগছে খুব। খানিক টা খিদে ও পেয়েছে। আরেকটু হাটতেই একটা দোকানে মিষ্টির মতো একটা জিনিস দেখতে পেল ঝিল ।
চোখ দুটো যেন চকচক করে উঠলো। অভিনবর হাত ধরে বাচ্চা দের মতো বায়না করতে লাগলো।
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে বলল
_ আচ্ছা চলুন। কিন্ত বেশি খাওয়া যাবে না।

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। দোকানদার অভিনব কে দেখে জড়সড়ো হয়ে পরলো। এমন সুন্দর বিদেশী দেখে সাধারন মানুষের অবস্থা যা হয় আর কি।
অভিনব পাত্রে রাখা ছোট আকারের মিষ্টি দেখিয়ে বলল
_ এটা কি ধরনের মিষ্টি?

লোকটা ভারী অবাক হলো। এতোটাই আশ্চর্য হয়েছে যে অভিনবর দিকে ড্যাপ ড্যাপ করে তাকিয়ে রইলো।
হয়তো ভেবেছিলো বিদেশী ছেলেটা ইংরেজি তে এক গাঁদা বুলি ছুড়বে আর সে থমথমে মুখ করে তাকিয়ে থাকবে। কিন্তু তার ভাবনার বারো টা বাজিয়ে দিয়ে অভিনব বাংলা বললো।
অভিনব আবার প্রশ্ন ছুঁড়লো। এবারো কোনো উত্তর দিলো না। ঝিলের মনে দারুন এক সন্দেহ জন্ম নিলো। আচ্ছা লোকটার কি গে দোষ আছে ?
ঝিল গলা ছেড়ে বলল
_ মামা এই মিষ্টির নাম কি ?

এবার লোকটা জবাব দিলো।
_ মধু জাম।

অভিনব মিষ্টি গুলোর দিকে তাকিয়ে বলল
_ বাহহ বেশ ভালো নাম তো।

আচ্ছা চারটে চারটে আটটা মিষ্টি দিন আর সাথে দুটো পরোটা।

পরোটার সাইজ ছোট তাই অভিনব দুজনের জন্য দুটো পরোটাই নিলো।
এখান থেকে ফিরে আবার লাঞ্চ করতে হবে।
লোকটা মাথা ঝাঁকিয়ে মিষ্টি আর পরোটা দিলো। ঝিল আর অভিনব পাশা পাশি বসে খেতে লাগলো।
ঝিল গোগ্রাসে খাচ্ছে। অভিনব একটা প্রশ্ন করেই ফেলল
_ একটা কথা বলুন তো আপনি কি সব সময় ই ক্ষুধার্ত থাকেন ?

_ কেন ?

_ যখনি খেতে দেই কেমন গোগ্রাসে খেতে থাকেন ।

ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো। পরটো মুখে পুরে দিয়ে বলল
_ শুনুন আমি অল্প অল্প করে খাই। তাই হুটহাট আমার খিদে পায়। আপনি তো একবেলাই আমার মতো তিনজনের খাবার গিলে ফেলেন।

অভিনব ঝিলের কথা তে ক্ষীন হাসলো। মেয়েটা ঝগড়ায় বেশ পারদর্শী। অভিনব কল্পনা করলো তার ফ্যামিলি পঞ্চাশ জন সদস্যর জয়েন ফ্যামিলি।
সেখানে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে ঝিল। আর সবাই একটার পর একটা কথা বলছে। হঠাৎ করেই জ্বলন্ত লাভার মতো ঝিল তেতে উঠলো।
কোমরে আঁচল পেঁচিয়ে ঝগড়া করতে লাগলো।
অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। নিজের ভাবনাতে নিজেই আশ্চর্য হলো। ঝিল শুধু মাত্র ওর সাথেই ঝগড়া করতে পারে। আর সবার সামনে মাথা নিচু করে থাকে।
সবাই হেসে ছিলো দেখে কি কান্না টাই না করলো সেদিন।

ঝিল খাবার খেয়ে ঢকঢক করে পানি গিলে নিলো।
অভিনব বিল পে করে আবার হাঁটতে লাগলো । নদীর ধারে অনেক গুলো বোর্ট দাড় করানো।
মূলত জেলেরা বোর্ট কিংবা নৌকা দিয়ে মাছ ধরে আনে। আর তারপর ই সেগুলো কে শুঁটকি করা হয়।
দুবলার চরের মানুষের অর্থনীতির প্রধান অংশ এই শুঁটকি থেকেই আসে।
শুঁটকি পল্লি তে ঢুকেই ঝিলের গা গুলিয়ে আসলো। অভিনব বিষয় টা বুঝতে পেরে কড়া ধাঁচের লেমন ফ্লেবার মাস্ক এ লাগিয়ে দিলো।
তারপর মাস্ক টা ঝিল কে পরিয়ে দিলো। ঝিল যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
পুরো মাঠ জুড়ে শুঁটকি শুকানো হচ্ছে । তবে ছুড়ি মাছের সংখ্যা বেশি ।
দুবলার চরের নিউ মার্কেটে সিঙ্গারা আর জিলাপি দেখে ও ঝিল বায়না ধরলো। কিন্ত অভিনব এবার তা খেতে দিলো না। এভাবে খেলে নির্ঘাত পেট খারাপ হবে।
আর অভিনব বরাবর ই খাবারের ব্যপারে সচেতন।
তাছাড়া আজ বিকেলে আস্ত খাসি বারবিকিউ করা হবে।
ঝিল তাই নুইয়ে গেল। দুবলার চরে মোটামুটি সব রকম জিনিস ই পাওয়া যায়।
এখানের অধিকাংশ মানুষ ই জেলে। সবাই শুঁটকি পল্লি ঘুরে ফিরে আসলো। এখন মোটামুটি সাড়ে এগারোটা বাজে।
সবাই বোর্টে উঠে বসলো। তবে এবার বিপত্তি ঘটলো মাহেরা কে নিয়ে । সে অভিনবর পাশে গিয়ে বসলো। অভিনব কে রিকোয়েস্ট করলো যাতে ঝিলের মতো ওকে ও ধরে রাখে আর পানিতে পা ভেজাতে সাহায্য করে।
ঝিল রগরগে মেজাজ নিয়ে দাড়িয়ে থাকলে ও কিছু বলতে পারছে না।
কোথাও একটা বাঁধা কাজ করছে। কারন এখন সে অভিনবর পরিচিত বই কিছুই নয়। ঝিলের খুব রাগ হলো। কেন ওহহ অভিনবর কেউ নয় ?
কেন অধিকার খাটিয়ে বলতে পারছে না কিছু। অভিনব জানে ঝিল ভেতরে ভেতরে জ্বলছে। তবু ও এক পলক ঝিলের দিকে তাকালো। ঝিল চোখ ফিরিয়ে নিলো । অবশেষে মাহেরার দিকে ফিরে নাকোচ করবে তখনি ঝিলের উদ্দেশ্যে মাহেরা বলল
_ ঝিল আমি এখানে বসলে নিশ্চয়ই তোমার কোনো সমস্যা হবে না ?

ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো অভিনবর দিকে। অভিনব ইশারা করলো যাতে মাহেরা কে না করে দেয়। কিন্তু ঝিল তো ঝিল ই প্রচন্ড রাগে আক্রোশে বলল
_ না আপু আমার কোনো সমস্যা নেই।

মাহেরা তো বেজায় খুশি। অভিনব ঝিলের দিকে রাগি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। ঝিল ছলছল নয়নে চোখ ফিরিয়ে নিলো। অভিনব ঝিলের দিকে আবেক মাখা চোখে তাকিয়ে আছে । মেয়েটা এতো বোকা কেন ?
ঝিল মাহেরার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে স্থান ত্যাগ করতে চাইলো। কিন্তু অভিনব ঝিলের হাত আঁকড়ে ধরলো। ঝিল কিছু বলবে তার আগেই ঝিল কে অভিনব এক পাশে বসিয়ে নিলো। মাহেরার দিকে তাকিয়ে বলল
_ ঝিল তো সবার সাথে কমফার্টেবল নয় তাই ঝিল এই পাশে বসুক তুমি আমার এই সাইডে বসো ।
আমি তোমার হাত ধরে রাখবো।

মাহেরা মুখ টা কালো বর্ন করে ফেললো ওহহ প্লাস্টিকের হাসি রেখে অভিনবর ডান পাশে বসে পরলো। অভিনব একটু নিচু হয়ে ঝিল কে বলল
_ একদম পানি তে ফেলে দিবো। এতো বোকা কেন হুহহ ?

ঝিল কিছু বললো না। অভিমানের পাল্লা টা ভারী হয়ে গেছে। অভিনব ধীর হাতে ঝিল কে পাশে বসিয়ে দিলো। মাঝে বসে ঝিল কে এক হাতে জড়িয়ে ধরলো। আর অন্য হাতে মাহেরার হাত ধরে রাখলো। মাহেরা স্পষ্ট লক্ষ্য করলো অভিনব ঝিলের কোমর জড়িয়ে আছে।
যা দেখে মাহেরার রাগ হলো। ওহহ চাইছিলো অভিনব ঝিলের মতো করে ওকে ধরে রাখুক। কিন্তু অভিনব শুধু হাত ধরে রাখলো।
মাহেরা মিনিট কয়েক পা ভিজিয়ে সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে উঠে চলে গেল। অভিনব এক ফালি হেসে ঝিলের সাথে লেপ্টে বসলো।
ঝিল অভিনবর শার্ট খামচে ধরে কাঁধে মাথা রাখলো।
ঝিলের কেন জানি বলতে ইচ্ছে হচ্ছে
_ অভিনব আমার হিংসে হচ্ছিলো।

কিন্তু আর বলা হলো না। কিছুক্ষণ পর অভিনব ফিস ফিস করে বলল
_ মাহেরার হাত ধরেছিলাম বলে হিংসে হচ্ছিলো ?

ঝিল না বোঝার ভান করে তাকিয়ে রইলো। অভিনব মৃদু হেসে বলল
_ আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন ঝিল।
আমি কাউকে টাচ করবো না। এই যে শুধু আপনাকেই জড়িয়ে আছি।

অভিনবর কথাতে ঝিল মৃদু হাসলো। কেমন এক অদ্ভুত অনুভূতি এসে দরজায় কড়া নেড়ে যাচ্ছে। সুখ সুখ অনুভূতি তে নুইয়ে যাচ্ছে ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here