#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_19
আকাশের কুয়াশা গুলো একটু একটু করে মাটিতে নেমে আসছে। জঙ্গলের মাঝে আর লঞ্চের মাঝে দুরুত্ব বেশ খানিকটা।
অদূর পর্যন্ত শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। পরিবেশ ভারী হয়ে গেছে। সবাই অনেক আগেই ঘুমোতে চলে গেছে।
তবে আশে পাশে আরো অনেক গুলো লঞ্চ কটকাতেই নাইট হোল্ড করছে।
অভিনবর কাঁধে মাথা রেখে শুইয়ে আছে ঝিল। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দুজনে গল্প করছিলো। তার ই মাঝে ঘুমিয়ে যায় ঝিল। ছাঁদের রেলিং এ ভর করে উঠার চেষ্টা করলো অভিনব।
কিন্তু এতে মেয়েটা বেশ বিরক্ত হচ্ছে। ঘুমের চোখে বার বার নাক কুঁচকাচ্ছে। অভিনব ছোট করে দুবার ডাক ও দিলো। কিন্তু ঝিল উঠার বদলে অভিনবর বুকে এসে জড়িয়ে ধরলো।
অভিনব খানিকটা চমকে উঠলো। ঝিলের গরম নিশ্বাস অভিনবর বুকে এসে বারি খাচ্ছে। এতে যেন অভিনবর শ্বাস থমকে যাচ্ছে। তবে দারুন এক অনুভূতি ও হচ্ছে। শীতের কারনে গুটিশুটি মেরে আছে ঝিল। অভিনব মৃদু হেসে ঝিলের দিকে তাকালো। শুভ্র উজ্জ্বল মুখ টা একটু শুষ্ক লাগছে। তবে ঠোঁট উল্টিয়ে ঘুমানোর বিষয় টা ঝিলের মাঝে বাচ্চা বাচ্চা ভাব প্রকাশ করছে।
অভিনব হাসলো , পরক্ষনেই কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ ফেলে নিলো।
মেয়েটার বেবি হেয়ার গুলো বার বার চোখের কাছে চলে আসছে।
বিরক্তি তে ভরে উঠছে ঝিলের মুখ। অভিনব ধীর হস্তে চুল গুলো গুছিয়ে দিলো। ব্যাস এবার আর সমস্যা হবে না। ঝিল কে ডাকার ইচ্ছে হলো না আর। মেয়েটার সদ্য ঘুম যেন অভিনবর বুকে আলো হয়ে ঝরছে।
অভিনব ঝরা হেসে মেয়েটাকে কোলে তুলে নিলো।
এমন ভাবে তুললো যেন ঝিলের ঘুমের ব্যাঘাত না ঘটে।
ঘুমের ঘরেই ঝিল অভিনবর গলা জড়িয়ে ধরলো।
অভিনবর অধর কোনে ক্ষীন হাসি ফুঁটে উঠলো।
ঝিল কে নিয়ে কেবিনে চলে আসলো। বেডে শুইয়ে দিলো ঠিক ই কিন্তু ঝিল অভিনবর গলা জড়িয়ে ই আছে।
অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। বেশ অনেক ক্ষণ সময় নিয়ে ঝিলের হাত টা ছাড়ালো।
ঝিল উবু হয়ে শুইয়ে রইলো। অভিনব বেশ ভাবনায় পরে গেল ঝিলের পাশে শুবে কি না।
দ্বিধাহীন মন নিয়ে শুতে গিয়ে ও উঠে পরলো। ঝিল ঘুমিয়ে আছে , ওর অনুমতি যদি ও আছে তবু ও শোয়া টা উচিত নয়।
অভিনব ঝিলের পাশে বসে রইলো। কাল যেহেতু কটকার জামতলা সি বিচে ঘুরবে তাই কটকা সম্পর্কে কিছু যেনে নিলে ভালো হয়।
তাই নেট ট্রাই করলো , একটু খানি ও নেটওয়ার্ক নেই।
অভিনব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে রইলো। ব্যাগ প্যাক থেকে একটা ইংলিশ বই বের করে পরতে লাগলো।
” The art of travel ”
এই বইয়ের একটি অংশে বলা হয়েছে
“ভ্রমণের একটি শিল্প আছে।
ডি বোটন ব্যাখ্যা করেছেন, এমন কিছু যা আমাদের সুখের সাথে আমাদের চিন্তা করার চেয়ে বেশি জটিল। তার বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করার জন্য, তিনি লেখক, কবি এবং চিন্তাবিদদের সাথে আত্মার অবস্থাকে পর্যবেক্ষণ করেন এবং সমান্তরাল করেন কারণ তিনি নিজেই এর শিল্পে নিযুক্ত হন।”
অভিনব লাইন গুলো পড়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো। একজন ভ্রমন প্রেমি হিসেবে অভিনবর কাছে প্রকৃতি মানেই শান্তি।
আর ওর ভালো থাকার বিষয়ের একটা হচ্ছে ভ্রমন।
যার কারনে ওহ ছুটে চলে এক দেশ থেকে আরেক দেশে।
*
ভোর 5 টা বাজতেই চোখ পিট পিট করে তাকালো ঝিল। লম্বা হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে নিলো। পাশে অভিনব কে বসে বসে ঘুমাতে দেখে খানিক টা চমকে গেল।
অভিনব কে ডাকার আগেই ফোনের এলাম বেজে উঠলো।
অভিনব হালকা চোখে তাকাতেই দেখলো ঝিল উঠে গেছে।
ঝিল কে দেখে লম্বা এক হাসি দিয়ে বলল
_ গুড মর্নিং।
_ গুড মর্নিং। আপনি বসে বসে ঘুমিয়েছেন কেন ?
_ না মানে আপনি ঘুমিয়ে ছিলেন আমি যদি পাশে শুইয়ে পরতাম।
আই মিন আপনার
অভিনব কে তুতলাতে দেখে ঝিলের খারাপ লাগলো।
অভিনব ওর কথা ভেবে সারা রাত বসে বসে ঘুমালো।
অভিনবর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
অভিনব ঘড়িতে টাইম দেখে বলল
_ 5 টা বেজে গেছে আমাদের সাড়ে পাঁচ টায় বের হতে হবে।
ঝিল মাথা কাত করে সম্মতি জানালো। অভিনব ফ্রেস হতে বাথরুমে চলে গেল।
ঝিল মুখ টা ছোট করে রইলো। ইসস ওর জন্য অভিনব এতো টা সাফার করলো ?
পরক্ষণেই মনে পরলো কাল রাতে তো ওরা ছাঁদে বসে বসে গল্প করছিলো।
তাহলে কেবিনে কি করে আসলো ?
ঝিলের ভ্রু যুগল কুঁচকে গেল। অভিনব ফ্রেস হয়ে এসে বলল
_ ঝিল তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে আসুন।
ঝিলের কানে সে কথা পৌছালো না। ঝিল গভীর ভাবনাতে মগ্ন। অভিনব ঝিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো ঝিলের দৃষ্টি মেঝে তে।
অভিনব গলা কেশে পরিষ্কার করে নিলো। ঝিলের বাহু তে হালকা করে ধাক্কা মেরে বলল
_ ঝিল কি ভাবছেন ?
ঝিল চমকে তাকালো । অভিনব কে দেখে অপ্রস্তুত হাসলো। অভিনব ভ্রু নাচিয়ে বলল
_ কি ভাবছিলেন ?
_ নাহহ কিছু না।
_ আচ্ছা দ্রুত ফ্রেস হয়ে আসুন।
ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে চলে গেল। অভিনব দ্রুত রেডি হয়ে লাগলো।
ঝিল বাথরুম থেকে বেরিয়ে ট্রাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বলল
_ অভিনব একটা কথা জিঙেস করার ছিলো ।
_ হুমম বলুন।
_ না মানে আমরা তো ছাঁদে ছিলাম। তাহলে এখানে
অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে নিলো। ঝিল মৃদু হাসার চেষ্টা করলো। অভিনব ব্যাগ গোছাতে গোছাতে বলল
_ আমি ই নিয়ে এসেছি। আপনাকে দু বার ডেকে ও ছিলাম।আপনি ঘুমের মাঝেই বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন।
তাই কোলে করেই নিয়ে এসেছি।
_ ওহহ। আচ্ছা আরেক টা কথা বলবো ?
_ হুমম বলুন।
_ আপনি আমার পাশেই ঘুমাতে পারেন। আমার কোনো সমস্যা নেই।
অভিনব মিষ্টি এক হাসি দিয়ে নিলো। ঝিল বোকার মতো চেয়ে রইলো। অভিনব কাঁধে ব্যাগ নিয়ে বলল
_ আমি পাশে ঘুমালে ও কোনো সমস্যা যে নেই এটা আমি জানি।
ঝিল একটু সন্দিহান চোখে তাকালো। অভিনব সরস হেসে বলল
_ আফটার অল কাগজে কলমে কিংবা ধর্ম মতে আপনি এখনো আমার স্ত্রী।
কথা টা অভিনব রসিকতার ছলেই বললো।
তবে অভিনবর মুখে স্ত্রী কথা টা শোনা মাত্র ঝিলের চিত্ত কেঁপে উঠলো।
গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। ঠোঁট দুটো যেন ফেঁটে রক্ত ঝরে যাবে।
জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট টা ভিজিয়ে নিলো ঝিল।
ঝিলের এমন করুন অবস্থা দেখে অভিনব হাসলো।
কেবিন থেকে বের হতে হতে বলল
_ ঝিল তাড়াতাড়ি আসুন।
ঝিলের কোনো মতিভ্রম হলো না। ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। অভিনব ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো।
তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
_ ডোন্ট ওরি আমি অধিকার ফলাবো না। আর ট্যুর শেষে আপনাকে মুক্ত করে দিবো।
ঝিল খানিকটা চমকে তাকালো। অভিনব মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল
_ আই মিন ডিভোর্স টা দিয়ে দিবো।
যাতে আপনি ইনসিকিউর ফিল না করেন। ডোন্ট ওরি আমাকে এখন বিশ্বাস করতে পারেন।
ঝিল থমথমে মুখে তাকিয়ে রইলো। অভিনব ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে প্রস্থান করলো।
*
পাঁচ মিনিট পেরিয়ে গেল । তবু ও ঝিলের কোনো মতিভ্রম হলো না। অভিনবর কথাটা এখনো কানে বেজে যাচ্ছে।
অভিনব ট্যুর শেষে ওকে মুক্ত করে দিবে।
এটাই কি স্বাভাবিক নয় ?
তবে ওর কেন এতো কষ্ট হচ্ছে ?
বুকের ভেতর টা কেন এতো জ্বলছে? ওহ তো এটাই চায়।
যে বিয়ে টা ওদের ভাগ্যের পরিহাসে হয়েছে।
যে বিয়েটা ওরা কেউ ই মেনে নেয় নি সেটার জন্য এতো কেন কষ্ট হচ্ছে ওর ?
চোখ দুটো জ্বলছে , কান্না গুলো গলায় দলা পাকিয়ে আছে।
ভেতর থেকে বের ও হচ্ছে না । আর না শান্তি দিচ্ছে।
অভিনবর মুখ টা মনে হতেই ঝিলের ইচ্ছে হচ্ছে সব ভেঙে ফেলতে।
কেন কেন ডিভোর্স এর কথা বলে গেল অভিনব ?
ঝিলের মাথা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কিচ্ছু ভালো লাগছে না ওর।
বেডে থম করে বসে পরলো। অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করতে লাগলো।
চুল গুলো খামচে ধরলো। চোখ বুঝে ডুব দিলো অতীতের স্মৃতি গুলোতে
ওদের বিয়ে , অভিনব কে ভয় পাওয়া। সব কিছু ভাবতেই ঝিলের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো।
এই দেড় বছরে কেন মনে পরলো না অভিনব কে ?
তবে কি দুদিনেই মায়ায় পরে গেছে ওহহ ?
এর উত্তর ওর কাছে নেই। খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে অতীতে ফিরে গিয়ে সেই সময় টা কে আষ্ঠে পৃষ্ঠে জড়িয়ে নিতে।
তবে সে উপায় যে নেই । সময় আর নদীর স্রোত প্রবহমান।
যা চলে তো যায় , তবে আর ফিরে পাওয়া যায় না।
_ ঝিল এভাবে বসে আছেন কেন? শরীর খারাপ লাগছে ?
ঝিলের কানে অভিনবর ডাক পৌছাতেই ঝিল থতমত খেয়ে গেল।
নিজেকে যথাসম্ভব স্বাভাবিক করে বলল
_ না এমনি আর কি।
_ সময় নেই প্লিজ তাড়াতাড়ি করুন নাস্তা করতে হবে তো ?
ঝিল মুচকি হেসে সম্মতি জানালো। দ্রুত চুল ঠিক করে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে নিলো।
অভিনব সরু চোখে তাকিয়ে আছে দেখে ঝিল কাঁচুমাচু করতে লাগলো।
অভিনব কোনো কথা না বলে ঝিলের কাছে এসে কয়েকটা বেবি হেয়ার বের করে নিয়ে কানের কাছে গুঁজে দিলো।
অভিনবর হাতের কোমল স্পর্শ পেতেই ঝিল কেঁপে উঠলো।
আবেশে চোখ বুজে নিলো। অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে গেল পুরো শরীর।
অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ নাও পারফেক্ট। আপনার কোনো মেকআপের প্রয়োজন নেই।
এমনি তেই মিষ্টি লাগছে।
অভিনবর কথাতে ঝিলের লজ্জা লাগলো। ঝিল খানিকটা তুতলিয়ে বলল
_ চলুন।
অভিনব ঝরা হেসে সম্মতি জানালো ।
হ্যাপি জার্নি
কাল আমরা জামতলা সি বিচ ঘুরবো ইনশআল্লাহ 😍
কমেন্টে সুন্দরবনের সন্ধ্যার কিংবা ভোরের একটা ছবি দিয়ে দিবো ।
চলবে