#ধূসর_রঙের_প্রজাপতি
#ফাতেমা_তুজ
#part_13

করমজলের হিরন পয়েন্টে সবাই আর ও কিছু সময় কাটিয়ে নিলো।
তারপর রওনা হলো পাশে থাকা মাছের জাদুঘরের দিকে। করমজলে ছোট্ট একটা মাছের জাদুঘর ও রয়েছে। যেখান থেকে পশুর নদী টা ও দেখা যায়। সবাই হাঁটতে হাঁটতে মাছের জাদুঘরে এসে পৌছালো।
তেমন আহামরি কিছু না হলে ও বেশ সুন্দর জাদুঘর টা।
একদম ছোট্ট, এখানে বিলুপ্ত প্রায় মাছের কিছু ধ্বংসাবশেষ রয়েছে ।
অভিনব সেগুলোর কয়েক টা ফটো ক্লিক করে নিলো। ঝিল বাইরে দাঁড়িয়ে আছে দেখে অভিনব ঝিলের কাছে গেল।
ঝিল এক পলক তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো । অভিনব ব্যাগ প্যাক থেকে পানির বোতল বের করে ঝিলের সামনে ধরলো।
ঝিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। অভিনব সহজ ভাবেই বলল
_ চোখ মুখ শুকনো লাগছে পানি টা খেয়ে নিন।

ঝিল পানি টা ঢকঢক করে গিলে নিলো। অভিনব ভ্রু বাঁকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো।
_ আপনার কি অস্বস্তি হচ্ছে ? কিংবা শরীর খারাপ লাগছে ঝিল ?

_ উহহুহ আম ফুল ওকে ।

_ আর ইউ সিউর ?

_ ইয়াহ।

_ তাহলে এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন ? আরে ভেতরে আসুন

_ আমি

ঝিল কে আর কিছু বলতে না দিয়ে ঝিলের হাত ধরে একপ্রকার টেনে ই নিয়ে গেল অভিনব ।
ঝিল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।
সবাই বেশ হাসি মজা করছে। কাঁচের ফ্রেমের নিচে মাছের কঙ্কাল রাখা ।
ঝিল উজ্বল চোখে তাকিয়ে রইলো। কার্টুনে মাছের কঙ্কাল দেখলে ও কখনো বিশ্বাস করতো না ওহহ।
এখানে এসে প্র্যাকটিক্যাল দেখে ঝিলের খুশি দ্বিগুন হয়ে গেল। অভিনব ঝিল কে ঘুরে ঘুরে দেখাচ্ছে।
ঝিল এটা ওটা প্রশ্ন করে যাচ্ছে। অভিনব মলিন হেসে ভাবলো মেয়ে টা হুটহাট কেমন হয়ে যায়। আবার চট করেই উল্লাসে মেতে উঠে। এর কারন টা অভিনবর অজ্ঞাত ।

_ এই যে মিস্টার কি ভাবছেন এতো ?

ঝিলের কথাতে চমকে তাকালো অভিনব। মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ ভাবছিলাম এই মাছের কঙ্কাল গুলো যদি আপনার মাথায় দেওয়া হয় তো কেমন লাগবে আপনাকে।

ঝিল নাক ফুলিয়ে রাগি চোখে তাকালো। অভিনব এক গাল হেসে বলল
_ রিলাক্স। এতো হাইপার হবেন না । আপনার রাগ দেখা শেষ আমার , উফফ তখন কি মার টাই না মারলেন।
হাড়ে হাড়ে ব্যাথা রয়ে গেছে।

ঝিল লজ্জা হাসলো। অভিনব একটু ঝুকে বলল
_ দয়া করে আবার হামলা চালাবেন না প্লিজ।

ঝিল মুখ বাঁকিয়ে বলল
_ প্রয়োজন হলো একশ বার মারবো। আর বালিশ দিয়ে কি ব্যাথা লাগে নাকি।

অভিনব হো হো করে হেসে উঠলো । সাথে ঝিল ওহহহ।
সবাই মাছের জাদুঘর টা ঘুরে পাশে থাকা কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রে আসলো।
রটের রেলিং এর মধ্যে চারটে ছোট কুমির দেখতে পেল।
ঝিল কুমির দেখে বলল
_ এমা কুমির তো তাহলে আমি এর আগে ও অনেক বার দেখেছি।

_ কোথায় দেখেছেন ?

_ আমাদের নদীতে ইনফেক্ট বিভিন্ন ডোবা টা তে দেখেছি।

অভিনব ভ্রু কুঁচকে বলল
_ আপনাদের নদীতে কুমির আছে ?

_ অবশ্যই। কিন্তু একটা গভীর কনফিউশন হচ্ছে।

_ কি কনফিউশন?

_ আমাদের এলাকাতে কুমির কে গৈরল বলে কেন ?

অভিনব ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। ঝিল ভাবুক হয়ে বিষয় টা ভাবছে। হঠাৎ ই অভিনব গগন কাঁপিয়ে হাসতে লাগলো । ঝিল কোমরে হাত গুঁজে বলল
_ হাসছেন কেন ?

_ হাসার মতো কথা বললেন যে , তো হাসবো না ?

_ আজব। আমি কি এমন হাসার কথা বলেছি ?

_ আরে ঝিল শুনুন আপনি যেটা কে কুমির ভাবছেন সেটা এক প্রকারের সাপ।

ঝিল মৃদু হেসে বলল
_ ওহহ। কিন্তু সেম ই তো লাগে।

অভিনব মুচকি হেসে বলল
_ বোধহয় এদের পূর্বজন্মের প্রাক্টিক্যাল কোনো সমস্যা আছে।

_ কেমন ?

_ উহুহ বলা যাবে না।

_ প্লিজ বলুন না।

_ আচ্ছা বলছি। আই মিন আমি বলতে চাচ্ছি এদের দেখতে সেম লাগার কারন হতে পারে

_ কি কারন ?

অভিনব হাত দিয়ে ইশারা করে ঝিল কে খানিকটা কাছে আসতে বলল।
ঝিল কাছে আসতেই অভিনব ফিসফিস করে বলল
_ এদের মাঝে নিশ্চয় কোনো ঘাপলা করেছে।
কুমির আর সাপের ফিজিক্যাল রিলেশন ছিলো নিশ্চয়ই। আর তার থেকেই এই বিশেষ সাপ সৃষ্টি হয়েছে।

ঝিল নাক মুখ কুঁচকে বলল
_ হোয়াট ।

অভিনব সিরিয়াস মুখ করে রইলো। ঝিল মুখ দিয়ে একটা শব্দ করে ভাবনাতে মজে গেল। অভিনব তপ্ত শ্বাস ফেলে নিলো।
কিছুক্ষণ ভেবে ঝিল বলল
_ এটাই তাহলে আসল কারন ?

অভিনব ফিক করে হেসে দিলো। ঝিলের সরু ভ্রু যুগল বেঁকে গেল। অভিনবর হাসি থামার নাম ই নেই।
ঝিল অভিনবর বিষয় টা বুঝতে পেরে রাগি লুকে তাকালো।
তারপর সেখান থেকে চলে গেল। অভিনব হাসি থামিয়ে দৌড়ে ঝিলের কাছে এসে দাঁড়ালো ।
ঝিল কোনো কথাই বলছে না। অভিনব অনুনয়ের স্বরে বলল
_ আম সরি। ঝিল প্লিজ রাগ করবেন না। আমি তো মজা করছিলাম।
আসলেই আপনি এভাবে রিয়েক্ট করবেন বুঝি নি।

ঝিল শুনোন না। অভিনবর কোনো কথার ই পাত্তা দিচ্ছে না ঝিল।
অভিনব সামনে এসে কান ধরে বলল
_ সরি।

অভিনবর চোখের ঘন পাপড়ি গুলো কেমন নড়ছে। ঝিল একটু তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলো।
তারপর ই হো হো করে হেসে উঠলো। অভিনব মুখ গোমড়া করে বলল
_ আপনি আমার সাথে মজা করছিলেন ?
_ অবশ্যই। আপনি করতে পারেন আর আমি বুঝি মজা করতে পারবো না।

অভিনব বোকার মতো চেয়ে রইলো। ঝিল কনুই দিয়ে অভিনবর হাতে ধাক্কা দিয়ে বলল
_ এবার কেমন লাগে হুম?

অভিনব বুকের বা পাশে হাত দিয়ে মজার ছলে বলল
_ হার্টে লাগে।

তারপর দুজনেই হো হো করে হাসতে লাগলো। ঝিল হাসতে হাসতে অভিনবর হুডির হাতা খামচে ধরেছে।
অভিনব ও ঝিলের সাথে লাঘাতার মজা করছে। দুজনের নিজেদের মাঝের দুরুত্বর প্রতি খেয়াল ই নেই।
যে কেউ ই বলবে এরা হ্যাপি কাপল।
অথচ সত্যি টা উল্টো , এদের মাঝে আত্মার বন্ধন হলে ও শারীরিক কোনো বন্ধন নেই।

*

কুমিরের প্রজনন কেন্দ্রের একটু দূরে সবাই পুকুর পারে চলে আসলো।
পুকুর পাশটা রেলিং দিয়ে বাঁধাই করা। এখানে বড় বড় কুমির রয়েছে। একটা কুমির পাড়ে উঠে রয়েছে। রেলিং এর বাইরে থেকে ই সেটা কে ঘিরেই সবাই মজা করছে।
ঝিল লাফিয়ে লাফিয়ে দেখার চেষ্টা করছে। অভিনব লম্বা করে শ্বাস নিয়ে বলল
_ আপনি এতো টা ও খাটো নন যে লাফিয়ে দেখতে হবে।
এমনিতেই দেখতে পারছেন।

_ উহহুহহহ আমি কুমির টাকে জাগানোর চেষ্টা করছি।
দেখুন না কেমন চোখ বন্ধ করে আছে। নড়াচড়া ও করছে না।

অভিনব মৃদু হেসে বলল
_Crocodile পেছনে লাগলে বুঝতেন। কতো ধানে কতো চাল।

_ উহুহহহ আপনার ঘাড়ে উঠে বসে থাকতাম।

_ এহহ তখন কি আমি থাকতাম নাকি ?

অভিনবর কথাতে ঝিল ভেঙ্চি কাটলো। অভিনব ট্রাভেলিং ড্রিক গিলে নিয়ে বলল
_ এই গ স্টাইলের ভেঙ্চি কাটেন কি করে ?

_ গ স্টাইল মানে ?

_ এই যে মুখ বাঁকান কতো সুন্দর করে। আমি তো পারি না।

_ পারবেন ও না । এতে এক্সট্রা টেলেন্ট লাগে।
ডোন্ট ওরি আমার সাথে থাকতে থাকতে শিখে যাবেন।

_ আচ্ছা। আরেক বার ভেঙ্চি কাটুন তো একটু দেখি ।

ঝিল ভ্রু কুঁচকে নিলো। অভিনব মেকি হাসি দিয়ে বলল
_ না না ভেঙ্চি কাটতে হবে না।

ঝিল ভ্রু যুগল অভিজ্ঞ দের মতো বাকালো। তারপর নিজের অজান্তেই ভেঙ্চি কাটলো।
ঝিল নিজের অজান্তেই ভেঙ্চি কাটলে ও অভিনব ফটো ক্লিক করতে ভুলে নি।

ঝিল কিছুক্ষণ ঐ খানে থেকে বলল
_ চলুন ঐ সাইটের বেঞ্চ গুলো তে গিয়ে বসি।

অভিনব সম্মতি জানালো। মাঠের মতো স্থান টা তে কয়েকটা খড়কুটো দিয়ে ছাতা স্টাইলের ঘর বানানো।
তার সাইটে বেঞ্চ বসানো। সবাই কুমিরের সাথে হৈ হুল্লর করতে লাগলো।
অভিনব আর ঝিল বেঞ্চ এ গিয়ে বসলো।
ঝিল হালকা ক্লান্ত , অভিনব ভ্রু কুঁচকে থেকে ট্রাভেলিং ড্রিঙ্কস এগিয়ে দিলো।

ঝিল মাথা ঝাঁকিয়ে বারন করলো । অভিনব কোনো কথা শুনলো না। ঝিল কে ড্রিঙ্কস টা খাওয়ালো।
এটা একটা মেডিসিন কোম্পানির ড্রিঙ্কস । এটা খেলে ক্লান্তি দূর হয় আর শরীরে বল পাওয়া যায়।
খানিকটা সেলাইন টাইপের ই , তবে এটা লেমন ফ্লেবারের।

ঝিল বোতল টা বাড়িয়ে বলল
_ থ্যাংকস।

প্রতিউত্তরে অভিনব মুচকি হাসলো। ঝিল আর অভিনব পাশাপাশি বসে রইলো। দুজনের মাঝে কিছুক্ষণ নীরবতা ছেয়ে গেল। ঝিল নীরবতা ভেঙে বলল
_ অভিনব

_হুমম

_আচ্ছা একটা কথা বলি ?

_ হুমম বলুন। এভাবে জিজ্ঞাসা করার কি আছে ?

_ এমনি জিজ্ঞাসা করলাম।

অভিনব ঝিলের দিকে ফিরে বলল
_ হ্যাঁ বলুন এবার।

ঝিল সঙ্কোচ কাটিয়ে বলল
_ এই যে ঘুরছি আমরা , ট্রাভেলিং এর বিল সহ সব কিছুই তো আপনি পে করছেন।

অভিনব একপলক তাকিয়ে লম্বা করে দম ফেলে বলল
_ এখানেই থেমে জান ঝিল। এটা নিয়ে কথা বললে আমার নিজেকে ছোট মনে হবে।

_ কিন্তু অভিনব

_ উহহু কোনো কথা নয়। ট্যুর এ এমন আহামরি টাকা খরচ হচ্ছে না যার জন্য আপনি আমাকে সেটা বেক করে দিবেন।
আমরা প্রথম থেকে ফ্রেন্ড হয়ে এসেছি না ?

ঝিল মাথা ঝাঁকালো। অভিনব অধরে হাসি ফুটিয়ে বলল
_ তাহলে আর কোনো কথা হবে না।
এটা নিয়ে আর কিছু বলবেন না ঠিক আছে। তাহলে আমি কিন্তু খুব hurt হবো।
আই থিংক আপনি সেটা চান না। এম আই রাইট ?

ঝিল ঝরা হাসলো। অভিনব লম্বা করে দম নিয়ে বলল _দেখুন সূর্য টাকে কেমন হাসছে।
আর কিছুক্ষনের মাঝেই কুয়াশা এসে জড়িয়ে নিবে।

ঝিল সূর্য টার দিকে তাকালো। অভিনব ও তাকালো। একটু একটু করে কুয়াশা সূর্য কে আড়াল করে যাচ্ছে।
সাথে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। দুপুর যে পেরিয়ে গেছে।
ঝিলের গা শিউরে উঠলো। অভিনব এক হাত ঝিলের কাঁধ বরাবর ছড়িয়ে দিলো।
দুজন ই কুয়াশার মাঝে সূর্যের বিলীন হওয়া উপভোগ করতে লাগলো।
সাথে নিজেদের অজান্তেই সুপ্ত অনুভূতি গুলো গাঢ় হতে লাগলো ।

** কেমন লাগছে সুন্দরবনের করমজল । অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
রাতে স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন টু দেওয়ার চেষ্টা করবো ইনশআল্লাহ । প্রচন্ড চাপে আছি সাথে অসুস্থ ওহ, কেউ রাগ করবেন না প্লিজ ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন ।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here