#দলছুট ১

“মিস নোরা, ইনি আমাদের ব্র্যান্ড ম্যানেজার নাবিল হাসান। আর নাবিল মিস নোরা আমাদের নতুন সোয়াপ প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার।”
আমি ‘হ্যালো’ বলে তার দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম। ধ্বক করে ওঠা বুক জানান দিলো, স্মৃতি শক্তি এখনো বেশ ঝরঝরে আছে। কাজেই এতো সহজে ভুলে যাওয়ার কথা না। খুব বেশি না দেখলেও চিনতে ভুল হলোনা। এ তো সেই চেনা মুখ কি করে ভুলি এই চেহারা? সেও আমাকেই দেখছে একদৃষ্টিতে পলকহীন ভাবে। দু’জনে দু’জনের দিকে তাকিয়ে আছি। কতবছর পরে দেখা আমাদের? পাঁচ বছর না না পাঁচ বছর সাত মাস পঁচিশ দিন। আমার ঠিক ঠিক মনে আছে, হিসেবে আমার কখনো ভুল হয়না। তার মুখে রা নেই। আমাকে দেখে এতোটাই অবাক হয়েছে যে কথা বলছে না কোনো।
“কি ব্যাপার তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? দু’জন দু’জনকে আগে থেকেই চেন নাকি?”
ডিপার্টমেন্ট হেড আফজাল ভাইয়ের কথায় চোখ সরিয়ে নিলাম। আমি মাথা নেড়ে না করলাম-
“চিনি না। ওনার চেহারা আমার পরিচিত একজনার সাথে মিলে যায়। শুরুতে ভেবেছিলাম উনিই কিনা তাই একটু থমকে গেছিলাম।”
আমার কথা শুনতে শুনতে নাবিলের চোখ বড় বড় হলেও কোনো প্রতিবাদ করলো না। একটু ম্রিয়মান হয়ে নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো-
“নাইস টু মিট ইউ মিস নোরা।”
“সেম টু ইউ মিস্টার নাবিল।”
আমার হাতে একটু চাপ পড়তেই আমি হাত সরিয়ে আনলাম। আফজাল ভাই বাকি সবার সাথেই ঘুরে ঘুরে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। আমি মনের ভেতর চাপা অসস্তি নিয়ে সবার সাথে হাসি মুখে সম্ভাষণ বিনিময় করছি। না তাকিয়েও বুঝতে পারছি নাবিল ভীষণ মন দিয়ে আমাকে দেখছে। আমার মনে হলো এখনই ইস্তফা দেই চাকরি থেকে। যদি জানতাম এই অফিসে নাবিল আছে তবে কখনোই জয়েন করতাম না, কখনোই না। দু’দিন ইন্টারভিউ দিতে এসেছি, ঘুনাক্ষরেও টের পাইনি তার উপস্থিতি। কি করবো এখন? নাবিলের সাথে পাশাপাশি বসে অফিস করতে হবে এটা ভাবতেই প্রচন্ড পানির পিপাসা পেয়ে গেলো আমার। বার বার ঘাম মুছতে দেখে আফজাল ভাই খান্ত দিলেন-
“নোরা, কি হলো আপনার? শরীর খারাপ লাগছে?”
“ভাইয়া, পানির পিপাসা পেয়েছে আর মাথাটাও ঘুরছে।”
“আচ্ছা চলুন, আপনার ডেস্ক দেখিয়ে দেই। কিছুক্ষণ একটু রেস্ট করুন তারপর না হয় কাজ বুঝে নেবেন?”
আমি মাথা নাড়তেই আফজাল ভাই নাবিলের ঠিক অপজিটের দিকে একটু কোনাকুনি টেবিলের কাছে নিয়ে এলেন আমাকে। সরাসরি না হলেও নাবিল বা আমি দু’জনারই দুজনার দিকে চোখ যাবে। আমার ভীষণ অকওয়ার্ড ফিল হলো। একসময় যার দিকে একবার তাকিয়ে দেখাটাও আমার অপচ্ছন্দের ছিলো তাকে এখন সবসময় নিজের চোখের সামনে হজম করতে হবে ভেবে মনটা বিষিয়ে গেলো। কিন্তু কিছু করার নেই। এই অফিসে একমাত্র আফজাল ভাই ছাড়া কারো জন্যই কোনো কেবিন নেই। খোলা বড় হলরুমে টেবিল পাতা আছে, চেয়ার আছে। সবাই যার যার নির্ধারিত জায়গায় বসে কাজ করবে। হয়তো মনিটরিং এর জন্য এমনটা করা হয়েছে। যাতে কেউ কাজে ফাঁকি দিতে না পারে। আমার অভ্যেস নেই এমন পরিবেশ। আগের অফিসটা যথেষ্ট ভালো ছিলো তবুও পদোন্নতি আর হিউজ স্যালারি ইনক্রিমেন্ট নিয়ে এখানে জয়েন করেছি। কারন আইটি সেক্টরে জবে উন্নতি করতে গেলে চাকরি চেঞ্জ করা জরুরি। দীর্ঘদিন এক জায়গায় পরে থাকা মানে নিজেকে নিঃশেষ করা, কোনো উন্নতি হবে না। আমি পিয়নের এনে দেওয়া পানি পান করছি আনমনে। মনটা বার বার আজ দলছুট মেঘেদের মত ছুটোছুটি করছে। দলছুট! শব্দটা খুব স্যুট করে আমার বেলায়। আমি সারাজীবন দলছুট ছিলাম। অনেক হইচই শোরগোলের মধ্যেও দেখা যাবে আমি একা চুপচাপ বসে আছি। বাবা মায়ের সব সন্তানদের মধ্যে আমি ছিলাম মুডি, চুপচাপ, আর নিজের মতো থাকা মানুষ। এই স্বভাবের কারণেই বন্ধুর সংখ্যা খুব বেশি না। নিজ থেকে কারো সাথে কথা বলে আলাপ জমানো আমার স্বভাবে ছিলোনা। কেউ যেচে কথা বলতে এলেই কেবল আমি কথা বলতাম। মনোহতো আমি নিজ থেকে কথা বললে সবাই আমাকে সস্তা ভাববে। এখন অবশ্য সেসব স্বভাব আর নেই। এখন এতো কথা বলি যে আগের দুটো অফিসে আমাকে মিশুকে খেতাম দিয়েছিলো। ভাবতেই হাসি এলো। পুরনো দিন পুরনো স্বভাব সবকিছুই কতো পাল্টে গেছে। এলোমেলো ভাবনার মাঝেই হঠাৎ চোখ পড়লো নাবিলের দিকে। দেখলাম ভ্রু জোড়া কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে ফাইলে মন দিলো। আমি ভাবছি এই ছেলে এখানে কেন? ওদের তো ফ্যামিলি বিজনেস ছিলো। আর ইলোরা! ও কি করছে এখন? ওরা কি বিয়ে করে ফেলেছে? অবশ্য বিয়ে তো অনেক আগেই করার কথা। পাশ করে বেরুনোর পরপরই। এতোদিনে নিশ্চয়ই দু’চারটা বাচ্চাও হয়ে গেছে? এসব ভাবনা আসতেই কেমন একটা চিনচিনে অনুভুতি ছড়িয়ে পড়লো বুকের মাঝে। আমি নিজেকে ভুলাতে দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠলাম। এখন বরং কাজ বুঝে নেই। ফালতু সময় নষ্ট করে লাভ নেই।

★★★

অফিস জয়েনিং এর দিন সাতেক পেরিয়েছে। আমি আমার প্রজেক্টের কাজ নিয়ে ব্যাপক ব্যস্ত থাকি। সারাদিন কখনো নিজ অফিস আবার কখনো ক্লায়েন্টের অফিসে মিটিং, প্রজেক্ট প্ল্যানিং, অধীনস্থদের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া এককথায় দম ফেলার সময় পাওয়া যায় না। আমি আসলে এমনটাই চাইছিলাম। এতো ব্যস্ত থাকবো যেন নাবিলের সাথে আমার দেখা না হয়, কথা বলার সুযোগ না পাই। তবুও কোনো কোনো দিন সকালে অফিসে গেলে দেখা যায় কেউ না থাকলেও নাবিল ঠিকই তার ডেস্কে বসে আছে। মাঝে মাঝে না চাইতেই চোখে চোখ পড়ে যায়, নাবিল হয়তো স্মিত হাসি দেয় আমি না দেখার ভান করে নিজের কাজে মন দেই। আমি আসলে কোনো ভাবেই চাই না নাবিল আমার সাথে কথা বলুক কিংবা কথা বলার সুযোগটাও পাক। এতো সাবধানতার পরও শেষ পর্যন্ত নাবিল সুযোগ পেয়েই গেলো আমার সাথে কথা বলার। একেই হয়তো অদৃষ্টের খেলা বলে।

বৃষ্টির মধ্যে আঁটকে আছি অফিসের নীচে। কাজ শেষ করে নামতে নামতেই ঝুম বৃষ্টি। ছাউনির নিচে দাড়িয়ে থাকার পরেও বৃষ্টির ছাট গায়ে লাগছে তাই বাধ্য হয়ে কাঁচের দরোজার ভেতর যেয়ে দাঁড়ালাম। অফিস থেকে বাসার দুরত্ব বিশ কিলো। উবারের জন্য অপেক্ষা করছি। একটা গাড়ি কনফার্ম করার পরে আবার ক্যানসেল করলো বৃষ্টি বলে। নতুন একজন কনফার্ম করেছে যদিও সে বেশ দূরে আছে। প্যাসেন্জার নামিয়ে আসবে। ততক্ষণ আমার অপেক্ষা করতে হবে। অবশ্য এখন অপেক্ষা করতে খারাপ লাগবে না আমার। বৃষ্টি দেখে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেওয়া যাবে।
“কেমন আছো নোরা?”
আমি চোখ ফেরাতেই দেখলাম নাবিলকে। আমার দিকে তাকিয়ে আছে গভীর ভাবে। তার ফর্সা মুখ জুড়ে বিষন্নতা, গালে হালকা দাঁড়ির আভা দেখা যাচ্ছে। আমি আবার বৃষ্টি দেখতে দেখতে যেন কিছুই হয়নি এমনভাবে উত্তর দিলাম-
“ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“ভালোই আছি মনেহয়।”
উত্তর শুনে কিঞ্চিৎ রহস্য লাগলেও নিজেকে সামলে নিলাম। আরো একবার দেখলাম নাবিলকে। চেহারার বাচ্চা ভাব কেটে গিয়েছে, আমার দেখা সেই সদ্য তরুণ অথচ দেখতে কিশোর ছেলের ছিটেফোঁটাও এখন তার মধ্যে বিদ্যমান নেই। ইলোরা এখন নিশ্চয়ই খুব হ্যাপি নাবিলের এই লুকে? ওহহ, ভালোই হলো ইলোরার কথা মনে পড়ে। ওর খোঁজ টা বরং নেওয়া যাক।
“তারপর, সংসার কেমন চলছে? লোরা কেমন আছে?”
আমার প্রশ্ন শুনে মিনিট দুয়েক চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আমাকে দেখলো তারপর হো হো করে হেসে উঠলো। তার হাসি থামছে না বরং সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। নাবিলের হাসি দেখে বিরক্ত লাগছে আমার। এতো হাসির কি আছে? হাসার মতো কি কিছু জানতে চেয়েছি আমি? আমার বিরক্তি বুঝলেও সে তার হাসি থামাতে পারলো না। আমি রেগেমেগে অন্য দিকে তাকালাম। আশ্চর্য! সংসার কেমন চলছে এটাই তো জানতে চেয়েছি শুধু? অথচ নাবিলকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো জোকস বলেছি। ভাগ্যিস তখনই আমার গাড়িটা এলো। আমি বৃষ্টি মাথায় নিয়েই দৌড় দিলাম। পেছন থেকে নাবিল চিৎকার করলো-
“এই নোরা, শুনবে না সংসার কেমন চলছে? আমার একার সংসার তো ভালোই চলছে। তোমার লোরার এতোদিনে নিশ্চয়ই দোকার সংসার হয়েছে। সেও বোধহয় ভালোই আছে। বুঝলে কিছু?”

★★★

ভাবনাগুলো শিকলের মতো, একটা আরেকটার সাথে লেগে কেবল লম্বা হতে থাকে। ধুয়ো ওঠা কড়া লিকারের ঘন দুধ চায়ে চুমুক দিতে দিতে ভাবি। নাবিলের কথাগুলো মস্তিস্কে আলোড়ন তুলেছে সেই কখন। হিসেব মেলাতে পারছি না। নাবিল বললো ওর একার সংসার, আবার ইলোরার দোকার সংসার। মানে কি এ কথার? ওরা দু’জনে কি আর একসাথে নেই? দু’জনে যে হরিহর আত্মা ছিলো আলাদা হওয়াটা কি পসিবল? আমার ভাবনাগুলো জট পাকিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। যাগগে যা খুশি করুক দু’জনে আমার কি? আমি ওদের থেকে দূরে সরে এসেছি সেই বহু আগে। নিজের ভালো থাকার জন্য এই দূরত্বটুকু দরকার ছিল ভীষণ। আমি অনেক কষ্টে ভালো থাকতে শুরু করেছি। ওদের ভেবে নিজের ভালো থাকাটুকু নষ্ট করতে চাই না। মনকে সান্ত্বনা দিয়ে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আকাশপানে চাইলাম। এই রাতের বেলা ঘোর আঁধারে আকাশে কালো মেঘ ছাড়া কিছু নেই। আজ বুঝি সারারাত বাদল নামবে। আমি না চাইতেও নষ্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। মনটা বারে বারে ফিরে যেতে চাইছে সেই ক্যাম্পাস লাইফে। আশ্চর্য! এতোদিন বাদেও কিছুই ভুলিনি দেখছি। ওই তো আমাকে দেখতে পাচ্ছি ভার্সিটিতে ডিপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সামনে বাগানবিলাস গাছের নিচে আসন পাতা বেদিতে মন উদাস করে বসে আছি। কাউকে চিনিনা, হলরুমে নবীন বরনের অনুষ্ঠান চলছে। নিচ থেকে বসেও সব শুনতে পাচ্ছি। আমিও কিছুক্ষণ আগে ছিলাম ওখানে। বিরক্ত লাগছিলো তাই বেড়িয়ে এসেছি। প্রথম ক্লাস আছে সাড়ে ন’টায়, আমি অপেক্ষা করছি কখন সাড়ে নয়টা বাজবে। আমার খারাপ লাগছে না একা একা বসে থাকতে। আমি আসলে এই বাগানবিলাসের প্রেমে পড়েছি কলেজে প্রথমদিন এসেই। আজ প্রেমিক প্রবরের ছায়াতলে বসে আমার ভালো লাগছে। সামনে খোলা মাঠ, উদাস হয়ে মাঝে মাঝে মাঠে জমে থাকা বৃষ্টির জমে থাকা জলে স্নান করা শালিক জোড়া দেখছি। ওরা ভালোবেসে মাঝে মাঝে একে অপরের অধর ছুয়ে দিচ্ছে। দেখতে দেখতে আমার ঠোঁট দুটো প্রশস্ত হচ্ছে আপনাতেই। আমি নিজেতেই নিজে মগ্ন হয়ে আছি এমন মুহুর্তে পিঠে চাপড় খেয়ে ভীষণ রকম চমকে উঠলাম। এরকম বেয়াদব মার্কা আচরণ আমার সহ্য হয় না। বেয়াদব মানুষটাকে কষে চড় মারব ভেবে হাত উঠিয়ে মেজাজের দফারফা করে সামনে তাকিয়ে দেখি বাদরটা দাঁত বের করে হাসছে।
“উপরে এতো হইচই হচ্ছে সেসব বাদ দিয়ে তুই এখানে এসে লুকিয়ে আছিস কেন? কি সমস্যা তোর? তুই কি ফিজিক্যালি আনফিট যে নিজেকে লুকিয়ে রাখছিস?”
তার কথা শুনতে শুনতে আমার চোখ কপালে। বলে কি মেয়ে? এসব কথা জীবনেও শুনিনি। আমার চড় মারার জন্য উঠানো হাত আপনাতেই নিচে নেমে এলো। এই ডাকাত মেয়েকে আমি কি চড় মারবো উল্টো মেয়েই আমাকে বল মনে করে চার ছক্কা পিটিয়ে যাচ্ছে। আমি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা। এই ডেঞ্জারাস মেয়ে যেভাবে আমার ইজ্জতের ফালুদা বানাচ্ছে কথাগুলো কেউ শুনলে আমি শেষ। আমি মিনমিন করলাম-
“কি বলছো এসব? আর কে তুমি? আমি কি তোমাকে চিনি?”
“যা বলছি ঠিকই বলছি। ঠিকই যদি না বলে থাকি তবে তুই এমন মিনমিনে কন্ঠে কথা বলছিস কেন? আর আমি কে মানে কি? আমাকে চিনিস না? পুরো কলেজ চিনে গেলো এখনো তুই চিনলি না। হায় আল্লাহ! এ আমি কার সাথে কথা বলছি? এ কেমন বন্ধু পেলাম জীবনে?”
কপাল চাপরাতে চাপরাতে আমার পাশে বসলো বাদরটা। এই দাঁড়ান গো, বাঁদর বলছি বলে আপনারা আবার তাকে ছেলে ভেবে নিয়েন না। যদিও চেহারায় ছেলেমানুষী ভাব প্রচুর। বয়কাট চুল কপালে এসে বাম চোখ ঢেকে রেখেছে। কিছুক্ষন পর পর হাত দিয়ে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। পাতলা ঠোঁট আর চমশার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে বুদ্ধিদীপ্ত একজোড়া চোখ। পরনে জিনসের প্যান্ট আর ফতুয়া সাথে ছোট ওড়না বুকের ওপর। স্মার্ট লুকের মেয়েটাকে একবার দেখলে লোকে আবার চাইবে তার দিকে। নামটা এখনো জানি না। আমার উচিত নামটা জেনে নেওয়া। কিন্তু নাম জানার আগ্রহের চাইতে বেশি রাগ লাগছে। চিনি না জানি না মানুষ গায়ে পড়ে এসে কথা বললে বড্ড মেজাজ খারাপ হয় আমার। আর এতো সাক্ষাৎ বাঁদর। আমি উঠে দাড়াতেই বাঁদরটা খপ করে আমার হাত ধরে ফেললো-
“কোথায় যাচ্ছিস? চুপচাপ বয় এখানে। অফিসিয়ালি তোর সাথে এখনো পরিচিত হইনি তো?”
যেন কমান্ড দিলো। আমি তর্ক না করে বসে পড়লাম।
“আমি ইলোরা, সবাই আদর করে ডাকে লোরা। তুই আমি সেম ডিপার্টমেন্ট। তোর নামটা বল।”
আমি চমতকৃৎ হলাম। আমি কোন ডিপার্টমেন্ট সেটা এই মেয়ে কিভাবে জানলো? আমার মনের ভেতর উকি দিয়ে যেন প্রশ্নটা পড়ে নিলো ইলোরা। মিষ্টি হেসে উত্তর দিলো-
“এতো অবাক হওয়ার কি আছে? তোকে দেখেছি বার দুয়েক। তুই তো সবসময় এমন মুখ করে ঘুরিস যেন তিতো চিরতার রস খেয়েছিস। তা না হলে তোর সাথে আগেই কথা বলতাম। আচ্ছা সেসব বাদ, এখন তোর নামটা বল তো।”
“নোরা, আমার নাম নোরা।”
“নোরা! বাহ খুব সুন্দর নাম তো। অবশ্য তোকে দেখে আন্দাজ করেছিলাম তোর এমনই সুন্দর একটা নাম হবে। ভাবনাটা মিলে গেলো। খেয়াল করে দেখেছিস তোর আর আমার নামে মিল আছে? তুই নোরা আর আমি লোরা হিহিহি।”
আমি মুগ্ধ হয়ে ওর হাসি দেখছিলাম। লোরা হাসলে ওর গজ দাঁত দেখা যায় তখন ওকে দেখতে দারুণ লাগে। ওকে দেখতে দেখতে ভাবছিলাম আমাকে দেখে কত কিছু বুঝে ফেলেছে লোরা। একজনকে দেখে এতো কিছু আন্দাজ করা যায় কি? যায় হয়তো বাট আমি পারি না। আমার লোক চেনার ক্ষমতা জিরো। আমি কৌতুহল ভরে জানতে চাই-
“কিভাবে আন্দাজ করলে? আমার সাথে তো তুমি কথাই বলোনি?”
ইলোরা আমার থুঁতনিটা একটু নেড়ে দিয়ে বলে-
“এটা তো খুবই সহজ ব্যাপার। যেমন ধর তুই ভাবুক স্বভাবের, সবসময় নিজের জগতে থাকতে পচ্ছন্দ করিস তাই তোর মধ্যে প্যাচ কম। আর যাদের মধ্যে প্যাচ কম তারা অল্পতেই অবাক হয়, আনন্দিত হয়।”
আমি আবার চমৎকৃত হলাম। বুঝলাম লোরার অবজারভেশন পাওয়ার ভালো। মানুষ চেনার ক্ষেত্রে ও আমার থেকে বেশি এগিয়ে।
“আচ্ছা বল, তুই এখানে বসেছিলি কেন?”
“এমনি। উপরে এতো হই হট্টগোলে ভালো লাগছিলো না। ক্লাসের টাইম হলে ক্লাসে যাবো ভেবে বসে আছি।”
লোরা কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই কেউ ওর নাম ধরে ডাকলো। ইলোরা তার দিকে ইশারায় হাত নাড়লো, দ্রুত নিজের ব্যাগ কাঁধে চড়িয়ে হাটা ধরলো-
“আমি আসছি ক্লাসে দেখা হবে তোর সাথে।”
ও প্রায় ছুটে গেলো ছেলেটার দিকে। এতো দ্রুত সব ঘটলো যে আমি কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ পেলাম না আর না সুযোগ পেলাম ছেলেটাকে দেখার। দু’জনেই দু’মিনিট দাঁড়িয়ে কথা বলে হাটা ধরলো। ছেলেটা কিছু বলতেই লোরা শরীর দুলিয়ে হাসলো। ছেলেটা মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছে আর আমি ভাবছি-
“কে ছেলেটা?”

চলবে—
©Farhana_Yesmin

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here