#ত্রিকোণ পঞ্চম_পর্ব(অন্তিম_পর্ব)
#সুচন্দ্রা_চক্রবর্তী
#পঞ্চম_পর্ব(অন্তিম_পর্ব)
— ‘সংসার?’ অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ঐশিক, ‘যে সংসার গড়েই ওঠেনি কোনোদিন, সেটা আবার ভাঙবে কি করে? আর যেটুকুও বা অবশিষ্ট ছিল তাতেও শেষ পেরেক পুঁতে দিয়েছে তোমার গীতালি ম্যাডাম, এই দেখো’, বলেই একটা কাগজ তুলে দিল ঐশিক অভিনন্দার হাতে।
— ‘ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছেন গীতালি ম্যাডাম?’
— ‘হ্যাঁ, গত দুদিন হল ও বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে, আর কালকেই পাঠিয়েছে এটা, ও সাইন করেই পাঠিয়েছে, নীচে আমার সাইনটাও দেখতে পাচ্ছ নিশ্চয়ই?’
— ‘আপনাদের এভাবে বিচ্ছেদ হোক আমি সত্যিই চাইনি…..’
— ‘আমি চেয়েছিলাম। আর ও যদি ডিভোর্স পেপার না পাঠাতো তাহলে আমিই পাঠাতাম।’ একটু থেমে ঐশিক বলে, ‘কারণ হীরে ছেড়ে অতি সাধারণ কাচ আগলে আমিও আর বসে থাকতে চাই না।’
অভিনন্দা নীরবে দাঁড়িয়ে ছিল, ওর হাতটা ধরে ঐশিক বলে উঠল, ‘চলো অভিনন্দা, ফিরে চলো!’
— ‘সবটা শুনেও আপনি আমায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন?’
— ‘হ্যাঁ, নতুন করে সংসার সাজাব বলেই তো নিয়ে যাচ্ছি, আর শুধু আমি একা তো নই, ওদিকে তোমার সোনাবাবুও তো তার অভি আন্টিকে একবার দেখবে বলে কি কান্ডটাই না করছে!’
— ‘স্যার, আপনি সৎ, ন্যায়পরায়ণ মানুষ, সবটা শুনে আপনার বিবেকে বেধেছে, আর তাই একটা মেয়েকে সমাজের অপমানের তীর থেকে বাঁচাবেন বলেই নিয়ে যাচ্ছেন, আমায় করুণা করছেন আপনার অপরাধবোধ থেকে, কিন্তু স্যার, আমি যে কারোর করুণার পাত্রী হয়ে বাঁচতে পারব না, আর ভালোবাসাহীন দয়ার সম্পর্কে জড়ালে আপনিও সুখী হবেন না, দুদিন পরেই ওই সম্পর্কের শিকল আপনাকে দম বন্ধ করে শেষ করে দেবে, তাই বলছি স্যার, হঠকারিতায় কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না প্লিজ!’
— ‘অভিনন্দা, তুমি আমায় ভালোবেসেছ ঠিকই, কিন্তু বোধহয় চিনতে পারোনি আমায় ঠিক, যদি চিনতে তাহলে এই কথাটা বলতে না যে আমি করুণা করছি তোমায়। কাউকে করুণা করার মতো স্পর্ধা আমার নেই, আর তোমাকে তো নেই ই। আসলে অভিনন্দা, আমিও মনে মনে তোমায় ভালোবেসেছি, শুধু ইমনের মতো শিশু নই তো তাই মুখ ফুটে বলতে পারিনি কখনো। আমি যদি তোমায় দয়া করতাম, তাহলে হয়তো তোমার ফ্ল্যাটে ছুটে যেতাম না তোমার অসুস্থতার কথা শুনে, তুমি না বলে গ্রামে চলে আসার পর ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে জোর করে তোমার রিপোর্টটা আদায় করতাম না, এমনকি এই গ্রামেও আসতাম না। আসলে কি জানো অভিনন্দা, আমার বিবাহিত স্ত্রীর কাছে আমি কোনোদিন সামান্যতম ভালো ব্যবহারটুকুও পাইনি, কিন্তু আমার পি.এ. যে মেয়েটি, তার কাছে পেয়েছি দুঃখের দিনে সান্ত্বনা, সুখের দিনে একরাশ হাসি। শুধু কি তাই, ইমনকেও তুমি দিয়েছ মাতৃস্নেহ। আর অভিনন্দা’, কিছুটা থেমে ঐশিক বলতে থাকে, ‘সেদিন যদি তোমার জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকত, আমি যতই ড্রিংক করি না কেন এই আচরণ তার সাথে করতাম না কখনো। কারণ মানুষের মনে যে কথা থাকে, ড্রিংকড অবস্থায় সেটা বেরিয়ে আসে মাত্র, ড্রিংক মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটায় না। আর আমি চরিত্রহীন নই অভিনন্দা, বিশ্বাস করো!’ অভিনন্দার হাতদুটো ধরে শিশুর মতোই কাঁদতে থাকে ঐশিক।
— ‘স্যার বিশ্বাস করুন, আমি একবারও কিন্তু সেটা….’
— ‘না অভিনন্দা, তুমি সেটাই বলেছ! নইলে অ্যাটলিস্ট এটা বলতে না যে তোমায় আমি দয়া দেখাচ্ছি মাত্র!’
অভিনন্দাও আর সামলাতে পারে না নিজেকে। চোখের জল আর বাঁধ মানে না তার। কাঁপা কাঁপা হাতে ঐশিকের চোখের জল মুছিয়ে দেয় সে।
ঐশিক বুকে টেনে নেয় অভিনন্দাকে। বলতে থাকে, ‘তোমায় কখনো বলা হয়নি ভালোবাসি, কিন্তু আজ বলছি। অভিনন্দা, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ সো মাচ।’
— ‘আই লাভ ইউ টু,’ অভিনন্দা বলে ওঠে, ‘আমিও আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি স্যার।’
— ‘এখনও তুমি আমায় স্যার বলেই ডাকবে অভিনন্দা?’
— ‘আসলে ওটা অনেকদিনের অভ্যেস তো, ছাড়তে তো একটু সময় লাগবেই।’
— ‘আচ্ছা, তাহলে আমার সাথে ফিরছ তো আজ?’
অভিনন্দা স্মিত হেসে বলে উঠল, ‘হুম।’
(সমাপ্ত)