#তোমার_সমাপ্তিতে_আমার_প্রাপ্তি সমাপ্তি
লেখা : মান্নাত মিম
পর্ব : ৬
______
আমরা বেশিরভাগ যা ভেবে থাকি, তেমনটা হতে দেখা যায় না হয় অন্যটা। যেমনটা চোখে দেখি, কানে শুনি আসলে তার উলটোপিঠে অন্য চিত্র আঁকা থাকে। সম্ভাবনার কাঙ্ক্ষিত বৈচিত্র্যময় চরিত্রটা অনেক সময় আমাদের চোখে গতানুগতিক ধারার মতো ধরা দেয়।
ইউশ্যানের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। সে ভেবেছিল, এভিগ্রিল তার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে প্রতিশোধ নিয়ে ভয় দেখানোর জন্য। অথচ বাড়ি থেকে র্যাংকন ফোনে জানালো মেয়ে তার বাড়িতে সহিসালামত রয়েছে। সারা পথ কাঁদতে কাঁদতে কীভাবে যে এসেছে একমাত্র সে-ই জানে। মেয়েকে যে পর্যন্ত চোখে না দেখবে ততক্ষণে অস্থিরতা গলায় আটকে কাটা হয়ে থাকবে। বাড়িতে এসে গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত পদে বসাররুমে গিয়ে মেয়েকে সাথে সাথে জড়িয়ে ধরে চোখে-মুখে চুমুতে ভরিয়ে দিলো। ভয়ে এখনও তার বুকটা তিরতির করে কাঁপছে। আটকে থাকা দমটা ছেড়ে কোনোরকমে জিজ্ঞাসা করল,
“কে দিয়ে গেল?”
“তোমার স্টুডেন্ট।”
“স্টুডেন্ট!”
কিঞ্চিৎ অবাকতা খেলে গেল ইউশ্যানের মুখাবয়বে র্যাংকনের করা প্রত্যুত্তরে। স্টুডেন্ট বাড়ি চিনে এমন অনেকে রয়েছে। এভিগ্রিল নিয়ে না গেলে তাহলে কোন স্টুডেন্ট দিয়ে গেল? আর সে-ই বা কীভাবে পেল ম্যাশাকে? এমনই সকল প্রশ্নরা একজোট হয়ে মাথায় কুটকুট করতে লাগলেও পরক্ষণেই উত্তর পেয়ে গেল সে।
“এভিগ্রিল।”
চমকে তাকালো র্যাংকনের পানে। ভয় না কাটতে কাটতে আবার ঝেঁকে বসে কামড়ে ধরল কলিজায়, ধক করে উঠল। এভিগ্রিল কিছু বলে দেয়নি তো র্যাংকনকে? তাহলে তো এতক্ষণে র্যাংকনকে এমন শান্ত দেখার কথা নয়। বোঝাই যাচ্ছে এভিগ্রিল কিছু বলেনি। তবুও একবার যাচাই করে দেখার প্রচেষ্টা চালিয়ে বলল,
“চলে গেছে নাকি?”
এদিক-ওদিক মাথা ঘুরিয়ে প্রশ্নটা করল। যেন কাঙ্ক্ষিত উপকারী ব্যক্তি আশেপাশে রয়েছে, তাকে আপ্যায়নের জন্য বলার জন্য খোঁজ চালানো।
“হ্যাঁ, চলে গেছে।”
“আহা! তুমি কী বলো তো? বসতে বলবে না?”
“বলেছি তবে সে বলল, তার নাকি কাজ আছে।”
“তাই বলে জোর ছেলেটাকে খাতিরযত্ন করবে না। মেয়েটাকে দিয়ে গেল।”
ভান এমন যেন সে কিছুই জানে না নবাগত পৃথিবীতে তার মাত্রই পদার্পণ করা। যেহেতু র্যাংকনের সাথে বেশি আলাপচারিতা হয়নি তাই সে-ও বেশিকিছু বলল না এবিষয়ে। কথাবার্তা ঘুরিয়ে ম্যাশার দিকে নিয়ে গেল।
______
গত হওয়া রাতে ইউশ্যানের খুব একটা ঘুম হয়নি। দুশ্চিন্তায় সারারাত পার করেছে বেচারি। তার দুশ্চিন্তার কারণ এভিগ্রিল। রাতে একটু চোখ দু’টো লেগে আসলে, ঘুমের ঘরে এভিগ্রিলের ভয়ংকর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় তার। সে প্রতিশোধ নিতে চায়, তার সম্মানহানি করার প্রতিশোধ। এমন সব আতঙ্ক নিয়ে আর কতদিন এভাবে থাকবে, সেটাই ভেবে ভেবে রাত জাগা ইউশ্যানের। এভাবে আতঙ্কিত হয়ে থাকতে থাকতে কখন না জানি সে মানসিক রোগীতে পরিণত হয়। পরিবারের কোনো একটা ক্ষতি হলেই তার মস্তিষ্কে বলে, এটা এভিগ্রিলের কাজ। ছেলেটা সাইকো, বদ্ধ উন্মাদ, অভিশপ্ত। তার জীবনে এসে অন্ধকার করে দিয়েছে এখন আলোর দিশা খোঁজে পাচ্ছে না। একটা বিহিত করা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে নাহলে তিনটি জীবনের ঝুঁকি রয়েছে।
“কী হয়েছে তোমার?”
“কী হবে? কিছু না তো।”
“নাহ, কিছু একটা হয়েছে। সকাল থেকে তোমাকে কেমন চিন্তিত, বেখেয়ালি দেখছি।”
“ওই আরকি, গতকালের বিষয়টা নিয়ে।”
“সেটা চিন্তা করার কী হলো? ম্যাশা এখন আমাদের কাছে আছে তো। জাস্ট কাল হারিয়ে গিয়েছিল, পেয়েছি এবং সামনে থেকে খেয়াল রাখবে ব্যস। চিন্তা করো না আর।”
র্যাংকন সকাল থেকে ইউশ্যানকে অমনোযোগী খেয়াল করেছে বিধায় সেটার কারণ জিজ্ঞেস করে নিলো। অথচ ইউশ্যানের মনে তখন ধ্বংসলীলার তাণ্ডব চলছিল, যেটা সে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি।
র্যাংকন ও ম্যাশাকে ব্রেকফাস্ট করিয়ে তৈরি হয়ে নিলো। র্যাংকন ব্যাংকের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেলে সে-ও বেরিয়ে পড়ল ম্যাশার স্কুলের উদ্দেশে। যথাস্থানে পৌঁছে গেটের সামনে মেয়েকে নামিয়ে গাড়ি ঘুরালো এভিগ্রিলের বাড়ির দিকে। এভিগ্রিলের বাড়ির ঠিকানা সে আগে থেকেই জানতো। মিস স্টেলার সাথে সেদিনই কথায় কথায় জেনে নিয়েছিল।
_______
বাড়ির থেকে বেশকিছুটা দূরে গাড়ি পার্ক করে বসে রইল ইউশ্যান বেশ চুপচাপ ও শান্তভাবে। নিঃশ্বাসও ফেলছে অত্যন্ত ধীরলয়ে। কোনো ভুলচুক করা যাবে না। অতি সাবধানতা অবলম্বন করছে সে৷ তাকে দেখে বোঝার উপায় নেই যে গাড়ির ভেতর মানুষ রয়েছে আর না ঘুনাক্ষরেও বোঝা যাবে যে সে-ই মানুষটার ভেতরেও চলছে প্রলয়ঙ্কারী ঝড়। ইউশ্যানের দেড় ঘন্টা যাবৎ করা অপেক্ষার ফল বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। এসেই নিজের বাইকে চড়ে বসলো। টান দিয়ে সামনে এগুতে লাগলে তাকে ফলো করে তার পিছন পিছন চলতে লাগল ইউশ্যানের গাড়িটা।
বেশকিছু দূরে এসে থামল এভিগ্রিলের বাইক। জনমানবহীন স্থানে এটা ছিল ইউশ্যানের জন্য হাতে পাওয়া সুবর্ণ সুযোগ। সেই সুযোগে পিছন থেকে ধেয়ে এসে রাস্তার সাইডে পার্ক করতে নেওয়া এভিগ্রিল ও তার বাইকসহ প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা দিয়ে দ্রুত এগিয়ে চলল ইউশ্যানের গাড়ি। অতঃপর অনেক দূরে গিয়ে থামাল ইউশ্যান তার গাড়িটা আর ভাবতে লাগল মরেছে তো এভিগ্রিল? কারণ তার সমাপ্তিতে যে ইউশ্যানের প্রাপ্তি নিহিত।
সমাপ্ত।