#তুমি_আমারই_রবে
বোনাস_পর্ব
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)
মেহুল প্রতি উত্তরে কি বললেন আমি ঠিক বুঝতে পারি নি। বৃষ্টির ঝিরিঝিরি শব্দে উনার কথা আমার কান অব্দি পৌঁছায় নি। সামনে দৌঁড়াতে গিয়ে ও আমি হুট করে থেমে গেলাম। পিটপিট চোখে রাস্তার দিকে তাকাতেই হুড খোলা রিকশায় আকাশকে দেখতে পেলাম! আকাশের পাশে একটা সুন্দুরী মেয়েকে ও দেখতে পেলাম!
রিকশাটা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে আমার সামনে থেকে অনেকটা সামনে এগিয়ে গেলো। সম্মতি ফিরে আসতেই আমি অহেতুক রিকশাটার পেছনে ছুটছি আর জোরে জোরে চিৎকার করে বলছি,,,
“আকাকাকাকাশ। প্লিজ থামো। আমি রূপা বলছি। প্লিজ একবার পিছনে তাকাও।”
জানি না আকাশ আমার কথা শুনছে কি না। একবারের জন্যে ও সে পিছু ফিরে তাকাচ্ছে না। হয়তো বৃষ্টির রিমঝিম শব্দে আমার গলার আওয়াজ তার কান অব্দি পৌঁছাচ্ছে না। আমি ছুটছি রিকশার পিছনে। আর মেহুল ছুটছেন আমার পিছনে। উনি পিছন থেকে চিৎকার করে আমাকে ডেকে বলছেন,,,
“রূপা দাঁড়াও। আকাশ কে? তুমি কাকে ডাকছ?”
হেচকি তুলে কেঁদে আমি সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম রিকশাটা হাওয়া হয়ে গেলো। দু চোখে হতাশা নিয়ে আমি থম মেরে দাঁড়িয়ে পড়লাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেহুল হাঁফাতে হাঁফাতে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,,
“কি হয়েছে রূপা? তুমি কার পিছনে ছুটছিলে?”
চিৎকার করে কেঁদে আমি মেহুলকে বললাম,,,
“আকাশ চলে গেলো মেহুল। একবারের জন্যে ও পিছু ফিরে আমার দিকে তাকালো না।”
উনি আমাকে ঝাঁকিয়ে বললেন,,,
“আকাশ রে রূপা?”
“আকাশ আমার এক্স বয়ফ্রেন্ড, মেহুল। আজ থেকে চার বছর আগে আকাশের সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিলো!”
উনি আমার থেকে কিছুটা দূরে সরে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললেন,,,
“মামামানে? আআআকাশ সত্যি তোমার এএক্স বয়ফ্রেন্ড ছিলো?”
“হুম মেহুল। আকাশ কথা দিয়ে কথা রাখে নি। আমাকে বিয়ে করতে আসে নি। সারা দিন আমি রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে চাতক পাখির মতো আকাশের জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। রাতে হতাশ হয়ে বাড়িতে ফিরে যখন আকাশের নাম্বারে কল করলাম তখন থেকে দুই বছর আগ পর্যন্ত আমি আকাশের নম্বরটা একটানা বন্ধ পেয়েছিলাম। একবারের জন্যে ও নাম্বারটা খোলা পাই নি।”
কাঁদতে কাঁদতে আমি মাটিতে হাঁটু গুজে বসে পড়লাম। মেহুল নিবার্ক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি নাক টেনে কেঁদে মেহুলের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“আকাশ আমাকে ঠকিয়েছে, এতে আমার কোনো আপসোস নেই। তবে আকাশ কেনো আমাকে ঠকিয়েছিলো, কেনো ঐ দিন আমাকে বিয়ে করতে আসে নি শুধু এই প্রশ্নের উত্তর গুলোই আমি আকাশের থেকে জানতে চাই। এই কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর এখনো আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। ভিতরটাকে ভীষণভাবে যন্ত্রণা দেয়, জীবনের কাছে বার বার ঠকে যাওয়ার ব্যর্থতা গুলো মনে করিয়ে দেয়। বার বার নিজেকে নিজের কাছে হারিয়ে দেয়। এতো কষ্ট, যন্ত্রণা নিয়ে আমি বাঁচতে পারছি না মেহুল। আমার একটু শান্তি চাই, একটু সুখ চাই।”
কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছি আমি। অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে বুকটায়। মেহুল হঠাৎ হাঁটু গুজে আমার পাশে বসে উনার গাঁয়ের শার্টটা আমার গাঁয়ে জড়িয়ে দিয়ে বললেন,,,
“আকাশকে খুঁজে আনার দায়িত্ব আমার। তোমার সব প্রশ্নের উত্তর তুমি খুব শীঘ্রই পাবে রূপা। এখন বাড়ি চলো। যে কোনো সময় বৃষ্টি থেকে ঝড়, তুফান হতে পারে।”
আমি পিটপিট চোখে উনার দিকে তাকালাম। গাঁয়ে আলাদা একটা টি শার্ট আছে উনার। উনি আমাকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বললেন বসা থেকে উঠে দাঁড়াতে। উনার শার্ট টা দুহাতে আঁকড়ে ধরে আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। উনি কাঁপা কাঁপা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
“একটু হাঁটতে রূপা। গাড়িটা অনেক পিছনে পড়ে গেছে।”
আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। ফুটপাতের রাস্তা ধরে দুজন হেঁটে চলছি৷ দুজন খুব পাশাপাশি হাঁটলে ও একজন আরেকজনের গাঁয়ের সাথে লাগছি না। মেহুল নিচের দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে হেঁটে চলছেন। আমি কিছুক্ষণ পর পর আড়চোখে উনার দিকে তাকাচ্ছি। মুখটা খুব বিষন্ন হয়ে আছে উনার। কেনো জানি না মনে হচ্ছে উনি কাঁদছেন। নাক টেনে আমি উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,
“মেহুল? আপনি কাঁদছেন?”
সাথে সাথেই উনি মাথা তুলে আমার দিকে তাকালেন। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে উনার। খুব বেশি লাল হয়ে আছে। আমি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“আপনার চোখ দেখে তো মনে হচ্ছে আপনি খুব কেঁদেছেন মেহুল। কি হয়েছে আপনার বলুন তো?”
উনি হঠাৎ অট্ট হেসে বললেন,,,
“ছেলেরা কখনো কাঁদে না রূপা। তুমি ভুল দেখেছ।”
“তাহলে আপনার চোখ গুলো এমন লাল হয়ে আছে কেনো?”
“বললাম তো ছেলে রা কাঁদে না। তাদের চোখ থেকে জল পড়ে না। ভেতরে ভেতরে তারা গুমড়ে মরে, তাই বাইরে এর তীব্র প্রতিফলন দেখা যায়। আর এজন্যই হয়তো চোখ লাল হয়ে আছে।”
আমি উনার কথার আগা মাথা কিছু বুঝলাম না। তবে এটা বুঝতে পারছি উনি ভেতরে ভেতরে খুব কষ্ট পাচ্ছেন। হয়তো কষ্টের কারণটা আমাকে বলতে চাইছেন না। কিছুদূর হাঁটার পর আমরা গাড়ির কাছে এসে পৌঁছে গেলাম। মেহুল গাড়ির দরজাটা খুলে দিলেন। আমি গাড়ির ভেতর ঢুকতেই মেহুল দরজাটা লাগিয়ে ঐ দিক দিয়ে ঘুড়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লেন। সিটবেল্ট লাগিয়ে উনি গাড়িটা ছেড়ে দিলেন। ব্যাক সিটে হেলান দিয়ে আমি সামনের দিকে তাকিয়ে কাঁচে লেগে থাকা বৃষ্টি গুলোকে দেখছি। চোখে জল নিয়ে কৌতুহল নিয়ে আমি মেহুলের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
“আপনি সত্যিই আকাশকে খুঁজে দিবেন মেহুল?”
“আকাশ যদি এই শহরেই থাকে কথা দিচ্ছি কয়েকদিনের মধ্যেই আমি আকাশকে খুঁজে তোমার মুখোমুখি এনে দাঁড় করাব।”
“সত্যিটা জানার পরই আমি আকাশকে মুক্ত করে দিবো। মন থেকে তাকে ক্ষমা করে দিবো। শুধু আমি একটা বারের জন্য সত্যিটা জানতে চাই।”
“সব জানতে পারবে রূপা। এই মেহুল তোমাকে সব সত্যি জানার সুযোগ করে দিবে। শুধু আমার উপর ভরসা রাখো আর ধৈর্য্য ধরো।”
আমি নাক টেনে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। মেহুল হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে গলা জড়ানো কন্ঠে বললেন,,,
“শুধু একটাই রিকুয়েস্ট রূপা। আর কখনো, আমার সামনে তুমি এভাবে কাঁদবে না। নিজেকে ঠিক রাখতে পারি না আমি। ইউ নো হোয়াট? আমার ভেতরটা ভেঙ্গে, চূড়ে আসে। একটা অদৃশ্য যন্ত্রণা হয় ভেতরটায়। তুমি হয়তো বুঝবে না রূপা!”
“আপনার কথার মাঝে আমি কেনো এতো টান খুঁজে পাই মেহুল? হারিয়ে যাওয়া কিছু অনুভূতি খুঁজে পাই। আপনি জানেন কেনো এমন হয়?”
উনি ঠোঁট দুটো চেঁপে ধরে সামনের দিকে তাকিয়ে মাথা নাঁড়িয়ে না বুঝালেন। মনে হচ্ছে উনি কান্না চেঁপে আছেন। কেনো যেনো লোকটা আমার কাছে দিন দিন রহস্যময় হয়ে উঠছে। কিছু একটা অজানা সত্য উনার মাঝে লুকিয়ে আছে। যা আমি ধীরে ধীরে টের পাচ্ছি। তবে সঠিক ধরতে পারছি না।
বাড়ির কাছাকাছি আসতেই আমার হঠাৎ তীব্র ঠান্ডার অনুভূতি হলো। কিছুক্ষণ পর পর গাঁ টা কেঁপে কেঁপে উঠছে, গাঁয়ে থাকা ভেঁজা জামাটা বরফের মতো লাগছে। শরীরে মোটে ও জোর পাচ্ছি না। খুব দুর্বল লাগছে। হাত, পা নিস্তেজ হয়ে আসছে, মাথা টা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। বুঝতে পারছিলাম আমার জ্বর আসছে। আজ রাতেই হয়তো খুব ভয়াবহভাবে জ্বর উঠবে।
বাড়ির পার্কিং এরিয়ায় গাড়িটা পার্ক করে মেহুল গাড়ি থেকে নেমে পড়লেন। আমি ও গাড়ির দরজা খুলে যেই না পা টা মাটিতে রাখতে যাবো অমনি আমার মাথাটা ঘুড়ে এলো। ছোট আওয়াজে “আহ্” করে আমি গাড়ির ব্যাক সিটে মাথাটা হেলিয়ে দিলাম। মেহুল জলদি দৌঁড়ে এসে আমাকে দুহাত দিয়ে ঝাপটে ধরে বললেন,,,
“কি হয়েছে রূপা? ব্যাথা পেয়েছ?”
আমি অস্পষ্ট স্বরে বললাম,,
“আমার মাথাটা খুব ঘুড়ছে মেহুল৷ প্লিজ আমাকে রুমে নিয়ে চলুন।”
মুহূর্তের মধ্যেই চোখ দুটো বুজে ফেললাম আমি। তবে টের পাচ্ছিলাম মেহুল আমাকে কোলে নিয়েছে। ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির মধ্যে শুধু আমার অনুভূতি শক্তিটাই জাগ্রত আছে। বাকি সব ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে অনুভূতি শক্তিটা ও আমার নুইয়ে পড়ছে। কিছুক্ষন পর সব শক্তি কাজ করা বন্ধ করে দিলো আমার। পুরোপুরি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম আমি।
জানি না কতোক্ষন এভাবে অজ্ঞান ছিলাম। চোখ খুলতেই টের পেলাম আমি আমাদের ফ্ল্যাটে নেই৷ সফট ফোমের গদিতে শুয়ে আছি। পিটপিট চোখে আমি আশপাশটাতে ও চোখ বুলাচ্ছি। বুঝতে আর দেরি হলো না এটা মেহুলের রুম। একটু সামনে তাকাতেই দেখলাম মেহুল ভেঙ্গে চূড়ে, সম্পূর্ণ এলোমেলো হয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখতে উনাকে খুব বিষন্ন লাগছে। ছন্নছাড়া বৈরাগ্য একজন মানুষ। সাজানো গোছানো চুল গুলো লেপ্টে আছে, শার্টের বোতাম দুটো খোলা, ফর্সা মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে, শার্টের হাতা গুলো ঝুলে আছে, চোখে, মুখে চিন্তার ছাপ, ভীষণ ক্লান্ত ও দেখাচ্ছে উনাকে। আমি মুখটা হা করে উনাকে কিছু বলার আগেই উনি আমার পাশে বসে আমার ডান হাতটা চেঁপে ধরে বললেন,,,
“আর কখনো বৃষ্টিতে ভিজবে না তুমি। ১০৩° জ্বর হয়েছে। এবার বুঝতে পারছ তো তোমার শরীর কতোটা খারাপ?”
কাঁপা কাঁপা চোখে আমি, আমার গাঁয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঐ সময়ের ড্রেসটা আমার গাঁয়ে আর নেই। অন্য একটা ড্রেস আমার গাঁয়ে। সাথে সাথেই আমি খানিক চেঁচিয়ে মেহুলকে বললাম,,
“মেহুল, আমার ড্রেস পাল্টেছে কে?”
“এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই রূপা। আমি তোমার ড্রেস পাল্টাই নি। লামিয়া এসে তোমার ড্রেস পাল্টে দিয়ে গেছে। এতোক্ষন সবাই এই রুমেই ছিলো। তোমার জ্ঞান ফেরার কিছুক্ষন আগেই ওরা রুম থেকে বের হয়ে গেছে।”
মেহুল এখনো আমার হাত ধরে বসে আছেন। খুব অস্বস্তি হচ্ছে আমার। আমি এক ঝটকায় উনার থেকে হাতটা সরিয়ে মাথায় হাত দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে উনাকে বললাম,,,
“এভাবে হুটহাট আমার গাঁয়ে হাত দিবেন না মেহুল৷ “আমি বিবাহিত।” বিবাহিত মহিলাদের গাঁয়ে এভাবে হুটহাট হাত দেওয়া যায় না।”
কি হলো বুঝলাম না। মেহুল হঠাৎ হালকা হেসে বললেন,,,
“কি বললে আবার বলো?”
“আমি বিবাহিত মেহুল।”
মুহূর্তের মধ্যে উনি মুখটা কালো করে বসা থেকে উঠে আমার থেকে অনেকটা দূরে দাঁড়িয়ে বললেন,,,
“আমার বিশ্বাস হচ্ছে না রূপা, তুমি বিবাহিত!”
“সত্যি বলছি মেহুল, আমি বিবাহিত।”
“আমি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না রূপা। তুমি মিথ্যে বলছ!”
“এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি মেহুল। আমি সত্যি বিবাহিত। আমার হাজবেন্ডের নাম হিমু! আমি একটু ও মিথ্যে বলছি না।”
চোখে জল নিয়ে মেহুল আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
“কিন্তু হিমু তো তোমার বন্ধু ছিলো!”
“বন্ধু + স্বামী ছিলো।”
“তাহলে, আগে বললে না কেনো তুমি বিবাহিত? হিমু তোমার হাজবেন্ড?”
“কারণ, আমার তরফ থেকেই কেবল হিমু আমার হাজবেন্ড ছিলো এবং আছে। উনার তরফ থেকে আমি নার্থিং। কিছু ছিলাম না। না কখনো হবো!”
উনি হঠাৎ ঘাঁড়ের রগ গুলো টান টান করে প্যান্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করে লাইটার দিয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে সমানে সিগারেটটা ফুঁকছেন আর আমার দিকে তাকিয়ে বলছেন,,
“তোমার হাজবেন্ড এখন কোথায় রূপা?”
“কিচ্ছু জানি না আমি। উনার ব্যাপারে আমি কিচ্ছু জানি না।”
“না জানার কারণ? হাজবেন্ডের খোঁজ খবর রাখো না তুমি?”
“প্রয়োজন নেই আমার উনার খোঁজ খবর রাখার। কারণ, দুই বছর আগেই আমি উনাকে ছেড়ে এসেছি।”
“কেনো ছেড়ে এলো? কি কারণে? তোমার হাজবেন্ড তোমাকে কষ্ট দিতো?”
আমি খুব জোরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম,,,
“আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছে মেহুল। এসব বিষয় নিয়ে আমি এখন কোনো কথা বলতে চাইছি না।”
উনি সিগারেটটা টানতে টানতে বেডের কাছাকাছি দাঁড়িয়ে ক্ষীপ্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
“এই বিষয়ে তোমার কথা বলতেই হবে রূপা। বলো, কেনো তুমি তোমার হাজবেন্ডকে ছেড়ে এলে?”
“বললাম তো আমি এই বিষয় নিয়ে কোনো বলতে চাই না। মাথায় যন্ত্রণা হয় আমার। ভেতরটা কষ্টে ফেঁটে যায়।”
চোখে ভাসা ভাসা জল নিয়ে উনি শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
“কেনো কষ্ট হয় তোমার? এখনো ভালোবাসো হিমুকে?”
কিছু বললাম না আমি৷ উনার চোখের দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছি। হঠাৎ আমার চোখ গেলো মেহুলের সিগারেট খাওয়ার দিকে। আমি টলটল চোখে উনার দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,
“আপনি বাম হাতে সিগারেট খাচ্ছেন মেহুল? হিমু ও সবসময় বাম হাতে সিগারোট খেতো!”
উনি তাড়াহুড়ো করে ডান হাতে সিগারেটটা নিয়ে চোখ লাল করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,,,
“হিমু নামটার প্রতি আমার খুব হিংসে হচ্ছে রূপা। প্লিজ এই নামটা আর ভুলে ও আমার সামনে উচ্চারণ করবে না।”
হনহনিয়ে উনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। কৌতুহল নিয়ে আমি উনার যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছি৷ উনাকে একটু ও বুঝতে পারছি না আমি। এই মুহূর্তে উনাকে সম্পূর্ণ হিমুর মতো লাগছে আমার। রাগলে হিমুকে যেমন দেখাতো উনাকে ও ঠিক তেমন দেখাচ্ছে৷ তবে এটাই বুঝতে পারলাম না, হিমুর নাম শুনে কেনো উনার হিংসে হচ্ছে!
#চলবে…..🥴
(আস্তে আস্তে মেহুল, হিমুর রহস্য সামনে আসবে৷ সবাই ধৈর্য্য নিয়ে গল্পটা পড়ুন। অনুরোধ রইল।)