তুমি_আমারই_রবে
পর্ব_৭
#Nishat_Jahan_Raat (ছদ্মনাম)

—“আমি আপনাকে নাবিলার কাছে নিয়ে যাবো হিমু। প্লিজ আপনি শান্ত হোন। শান্ত হয়ে বসুন। আমার কথাটা বুঝার চেষ্টা করুন।”

শরীরের ব্যাথায় উনি কুঁকিয়ে উঠছে। ব্যান্ডেজ করা জায়গা গুলো থেকে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বের হচ্ছে। এক্টা ছেলে এক্টা মেয়েকে কতোটা ভালোবাসলে শরীরের সমস্ত জখম উপেক্ষা করে নিজেকে হাজারো কষ্ট দিয়ে ঐ প্রিয় মানুষটার কাছে ছুটে যেতে চায়? তাই আমার মাথায় আসছে না! উনার শরীরটা কিন্তু এখন জখমে পূর্ণ হয়ে আছে৷ শুধু জেদের বসে উনি এভাবে শোয়া থেকে উঠে এতটুকু আসতে পেরেছে। ছেলেদের রক্ত এমনিতে ও অনেক গরম থাকে। ওদের সহ্য ক্ষমতা ও এক্টু বেশি থাকে৷ শরীরে যতই জখম, ক্ষত থাকুক না কেনো সব ক্ষত উনারা সহ্য করার শক্তি রাখে। তাছাড়া আমি যেভাবে উনাকে ঝাপটে ধরেছি উনার এখন এক্টু ও সাধ্য নেই ব্যাথা আর আমাকে উপেক্ষা করে হসপিটাল থেকে বের হওয়া!

উনি ব্যাথায় চোখ, মুখ খিঁচে দাঁড়িয়ে আছে। একদম সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রতি উত্তরে উনি এখনো আমাকে কিছু বলে নি। ব্যাথাটা হয়তো এখন উনার সহ্য ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। আমি তাড়াহুড়ো করে উনাকে ছেড়ে দিলাম। আর রাহাত ভাইকে ইশারা করে বললাম উনাকে বেডে শুইয়ে দিতে। রাহাত ভাই ও শুড়শুড়িয়ে এসে হিমুকে এক হাতের বাহু ডোরে আবদ্ধ করে আস্তে ধীরে উনাকে বেডে শুইয়ে দিলো। চোখ বুজে স্ট্রেইট হয়ে শুয়ে আছে হিমু। চোখ বেয়ে উনার টলটলিয়ে পানি পড়ছে৷ ব্যাথায় কাতরাচ্ছে উনি। সাথে হয়তো অসুস্থ নাবিলাকে ও মিস করছে। আমি রাহাত ভাইয়ের কাছে এগিয়ে এসে উনাকে মিনিমিনিয়ে বললাম,,,

—“রাহাত ভাই। আমি হিমুর সাথে কিছু ব্যক্তিগত কথা বলতে চাই। আপনি যদি এক্টু…

কথা সম্পূর্ণ শেষ করার আগেই রাহাত ভাই বুঝে গেছে আমি কি বলতে চাইছি। উনি মাথা নাঁড়িয়ে দ্রুত পায়ে হেঁটে কেবিন থেকে বের হয়ে গেলো। কয়েকটা বড় বড় শ্বাস ফেলে আমি চোখের কোণে জমে থাকা জল গুলো শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালোভাবে মুছে জোর পূর্বক হাসি টেনে হিমুর বেডের পাশটায় এসে বসলাম। উনি এখনো চোখ বুজে চোখের জল ছাড়ছে। উনার কান্না দেখে আমার ও কান্না আসছে। চোখ দুটো জলে ভরে আসছে। না চাইতে ও আমি আমার ডান হাতটা উনার কপালে আলতো করে ছোঁয়ালাম। সাথে সাথেই উনি চোখ খুলে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“ছোঁবে না আমায়। একদম ছোঁবে না।”

কিছুটা বিচলিত হয়ে আমি উনার কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,

—“ভয় পাবেন না হিমু। আমার ছোঁয়ায় পাপ নেই। একজন ভালো বন্ধু তার বন্ধুকে যেভাবে স্পর্শ করে, আমি ও আপনাকে ঠিক সেভাবেই স্পর্শ করেছি।”

উনি শান্ত চোখে এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“বন্ধু?”

আমি মলিন হেসে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“হ্যাঁ বন্ধু। ধরে নিতে পারেন আমি আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড। খুব কাছের বন্ধু।”

উনি সম্পূর্ণ স্তম্ভিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো আমার মুখের কথা উনার বিশ্বাস হচ্ছে না। উনার বিশ্বাস ফেরানোর জন্য আমি বললাম,,

—“আমি আপনার খুব ভালো বন্ধু হতে চাই হিমু। জাস্ট কয়েকটা দিনের জন্য।”

হিমু কিছু বলছে না। শুধু তাজ্জব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কিছুটা সিরিয়াস হয়ে উনাকে বললাম,,,

—“হিমু আপনার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। আপনার যদি সম্মতি থাকে তাহলে এখনি আমি কথাগুলো বলতে চাই।”

উনি আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল,,,

—“বলো কি বলবে!”

নিচের দিকে তাকিয়ে আমি নাক টেনে টেনে উনাকে বললাম,,,

—“আপনি যা চাইছেন তাই হবে হিমু। আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো৷ এবং সেটা খুব শীঘ্রই।”

সাথে সাথেই উনি মুখ ফিরিয়ে হতবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি টলমল দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আমি বেঁচে থাকতে আপনার কোনো ইচ্ছেই অপূর্ণ থাকবে না হিমু। প্রথমত, আমি একজন মানুষ। দ্বিতীয়ত, আমি আপনার খুব ভালো একজন বন্ধু। বন্ধু হয়ে বন্ধুর কষ্ট আমি সইতে পারছি না।”

উনি বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—মামানে তুমি কি বলতে চাইছ?”

—“আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি যে, আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমি আপনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো।”

কথাটা শোনার সাথে সাথেই খুশিতে উনার চোখ বেয়ে জল গড়াতে শুরু হলো। খুশিতে উনার সমস্ত মুখ ঝিলমিল করছে। বাধ ভাঙ্গা চোখের জল নিয়ে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“ডিভোর্সের পর আমি আপনাকে নাবিলার হাতে তুলে দিবো। নাবিলা যে কয়েকটা দিন বেঁচে থাকবে সে কয়েকটা দিন আপনার বিয়ে করা বৌ হিসেবে বেঁচে থাকবে। দুজনে একসাথে মুক্ত ভাবে শ্বাস নিবেন। আর এটাই হবে আমার জীবনের সবচে বড় প্রাপ্তি!”

—“তুতুতুমি সত্যি বলছ রূপা? তুমি নাবিলার হাতে আমাকে তুলে দিবে?”

ভেতরটা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাচ্ছে আমার। বুকে লক্ষ শতাধিক কষ্ট চেঁপে আমি মলিন হেসে মাথা নাড়ালাম। মুহূর্তের মধ্যে উনি মুখটা কালো করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“কিন্তু নাবিলা তো আমার সাথে দেখাই করতে চায় না রূপা। তুমি কিভাবে ওর হাতে আমাকে তুলে দিবে?”

কান্নাজড়িত কন্ঠে আমি উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আমি আছি তো হিমু৷ নাবিলা ঠিক আপনাকে মেনে নিবে। প্রয়োজনে আমি নাবিলার সাথে কথা বলব।”

উনি আবারো হেসে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,,,

—“তাহলে চলো, এক্ষনি আমাকে নাবিলার কাছে নিয়ে চলো। ওকে ছাড়া আর এক্টা মুহূর্ত ও আমার ভালো লাগছে না রূপা।”

আমি উনাকে থামিয়ে উনার কপালে আবারো আলতো ছোঁয়ে বললাম,,,

—“এখন আমরা কোথাও যাচ্ছি না হিমু। আপনি যেদিন পুরোপুরি সুস্থ হবেন, ঐ দিনই আমরা নাবিলার সাথে দেখা করতে যাবো। ধরে নিতে পারেন, এটা আমার শর্ত!”

আচমকাই উনি বেশ সিরিয়াস হয়ে আমার হাত চেঁপে ধরে বলল,,,

—“মা কে তুমি ম্যানেজ করতে পারবে তো রূপা? মা যদি আমাদের ডিভোর্সের ব্যাপারটা না মানে?”

—“এই নিয়ে আপনি কোনো দুশ্চিন্তা করবেন না হিমু। মা এই বিষয়ে কিছু জানতে পারবে না।”

—“মানে? মা কে এই বিষয়ে কিছু জানাবে না?

—“না হিমু। ডিভোর্সের পর উনি সব জানতে পারবে।”

আর বসে থাকতে পারলাম না উনার সামনে। দুর্বল হয়ে পড়ছি এক্টু এক্টু করে। ভেতরটায় এক অদ্ভুত জ্বালা হচ্ছে। ঠিক কি ভাবে জ্বলছে ভিতরটা তার হয়তো সঠিক বিশ্লেষণ আমার কাছে নেই। তাড়াহুড়ো করে আমি উনার পাশ থেকে উঠে কেবিন থেকে বের হতে নিলেই হিমু পেছন থেকে চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,

—“বাঁচালে বন্ধু। থ্যাংকস দিয়ে তোমায় ছোট করব না।”

কোনো কথা না বলেই আমি দৌঁড়ে কেবিন থেকে বের হয়ে এলাম। বারান্দার গ্রীল ধরে চোখ বুজে অনবরত কাঁদছি আমি। এক্টা নিরিবিলি পরিবেশ চাইছি। যেখানে আমি চিৎকার করে কাঁদতে পারব। চাইলে ও যেনো কেউ আমার দম ফাঁটা চিৎকারের আওয়াজ শুনতে না পারে। আমার আর্তনাদ শুনে কেউ যেনো আমায় শান্তনা দিতে না আসে। ভেতরের পাহাড় সমান কষ্ট গুলো যেনো কেউ বুঝতে না পারে। আমাকে যেনো কেউ খুঁজতে ও না আসে!

এর মাঝেই পেছন থেকে রাহাত ভাই এসে আমাকে ডেকে বলল,,,

—“কি হলো রূপা? তুমি কাঁদছ কেনো?”

কোনো রূপ কথা না বলে আমি ভেতরে ভেতরে হু হা করে কেঁদেই চলছি। প্রায় অনেকক্ষন পর আমি চোখে কান্না নিয়েই রাহাত ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,

—“আমি বাড়ি যাচ্ছি রাহাত ভাই। হিমুর খেয়াল রাখবেন। মা-বাবা রা হয়তো এক্ষনি চলে আসবে। উনাদের বলবেন আমার জন্য টেনশান না করতে। আমি ঠিক বাড়িতে পৌঁছে যাবো।”

আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালাম না আমি। এই রাতের অন্ধকারে টাকার পার্সটা হাতে নিয়ে দৌঁড়ে হসপিটাল থেকে বের হয়ে এলাম। রাহাত ভাই পেছন থেকে ডাকছে আমায়। কে শুনে কার কথা। আমি তো এখন আলাদা এক্টা স্পেস চাইছি। যেখানে আমি কেঁদে কেটে মনের কষ্ট গুলো কমাতে পারব। চিৎকার করে কাঁদতে পারব। যেখানে দু চোখ যাবে সেখানেই হারিয়ে যেতে পারব! তবে এখন হয়তো এর জোঁ নেই! হিমুকে মুক্ত করে দিয়েই আমাকে হারিয়ে যেতে হবে! কোনো এক বেনামী ঠিকানায়। যে ঠিকানায় চাইলে ও কোনো চিঠি আসবে না!

রাস্তায় পা রাখতেই বুঝতে পারলাম আকাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে। এক্টু পরেই হয়তো খুব বর্ষণ হবে। রাতের আকাশটা ল্যাম্প পোস্টের আলোতে ঝলমল করছে। বাড়ির রাস্তা ধরে হেঁটে চলছি আমি। শাড়ির আঁচল রাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। সাথে রাস্তায় থাকা সমস্ত ধূলা বালিকে ঝাঁড় দিয়ে দিচ্ছে। আমি আনমনে নিচের দিকে তাকিয়ে শুধু চোখের জল ছাড়ছি। এক্টু এক্টু করে বৃষ্টির কণা গুলো বড় বড় ফোঁটায় পরিণত হচ্ছে। রাস্তায় জমে থাকা ধূলো গুলো কাঁদায় পরিণত হচ্ছে। রাস্তায় চলাচল করা সব পথচারী গুলো মাথায় ছাতা টেনে নিচ্ছে। অনেকে আবার বড় বড় গাছের নিচে, দোকানে, বাজারের ছাউনীর নিচে নিজেদের দাঁড়ানোর এক্টু আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে। চোখ তুলে তাকিয়ে আমি আশপাশটা দেখছি। নিজেদের বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর তাগিদে মানুষ কতোটাই না মরিয়া হয়ে উঠছে। আর আমি কিনা মনের অবিলাসে বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপ হয়ে যাচ্ছি। নিজেকে বৃষ্টি থেকে বাঁচানোর বিন্দুমাএ চেষ্টা ও করছি না। এই মুহূর্তে নিজেকে মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, আমার মধ্যে কোনো অনুভূতি ই কাজ করছে না!

রাস্তার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলছি আমি একা। কেউ নেই যে এসে আমার পাশে এক্টু দাঁড়াবে। আমার হাতটা ধরে মনের হাল চাল জানতে চাইবে। আমাকে এক্টু বোঝার চেষ্টা করবে! বৃষ্টির ছন্দে তাল মিলিয়ে আমি খানিক চিৎকার করে কেঁদে চলছি। লোকজন আমার কান্নার আওয়াজ শুনতে পারছে না। বরং সবাই অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাচ্ছে। হয়তো আমার এভাবে বৃষ্টিতে ভেজাটা উনারা মানতে পারছে না। এভাবে কতোক্ষন হেঁটেছি জানি না। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। চোখের জল ও ফুরিয়ে আসছিলো। রাস্তার পাশে বড় এক্টা বট গাছের নিচে বসে পড়লাম আমি। মাথা নিচু করে চোখ বুজে ঠান্ডায় কাঁপছি আমি৷ প্রায় ঘন্টা খানিক বসে ছিলাম এই একই জায়গায়। যখনই ঠান্ডার অনুভূতি বেশি বেড়ে গেলো তখনই আর দেরি না করে আমি এক্টা অটো ধরে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম।

কিছুক্ষনের মধ্যে আমি বাড়ি এসে পৌঁছে গেলাম। বাড়িতে পৌঁছেই আমি ভেজা শাড়ি নিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়লাম। বাড়িতে কেউ নেই। মা-বাবা রা হয়তো অনেক আগেই রওনা হয়ে হসপিটালে চলে গেছে। ভাগ্যিস আমার কাছে বাড়ির এক্সট্রা চাবি ছিলো। না হয় ভেজা কাপড় নিয়েই বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো।

নাক টানতে টানতে আমি কাবার্ড থেকে শাড়ি নিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম। শাওয়ার অন করে থম মেরে দাঁড়িয়ে আছি আমি। নিজের নেওয়া সিদ্ধান্তটা বড্ড পোঁড়াচ্ছে আমায়। কারো কাছে কোনো রকম পরামর্শ না নিয়েই আমি সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম। তাই এই নিয়ে খুব টেনশান হচ্ছে। জানি না আমার মা,বাবা, বোন এতে কি রিয়েক্ট করবে। ওরা আদৌ আমাকে মেনে নিবে কিনা তা ও জানি না! সমাজ নিয়ে আমি কখনো ভাবি নি। প্রতিবেশীরা কি ভাববে তা ও আমার জানার বিষয় না! তবে ছোট বোনটার জন্য এক্টু টেনশান হচ্ছে আমার। ডিভোর্সি মেয়ের ছোট বোনকে সমাজের মানুষ ঠিক চোখে দেখবে তো? ভবিষ্যতে ওর বিয়ে দিতে কোনো সমস্যা হবে না তো? এই বিষয়টাই আমাকে দারুনভাবে ভাবাচ্ছে! হয়তো আমার জন্য আমার ছোট বোনটার জীবন নষ্ট হয়ে যাবে!

তাড়াহুড়ো করে আমি শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চুলে টাওয়াল জড়িয়েই আমার মায়ের নাম্বারে কল করলাম। অলরেডি মায়ের নাম্বার থেকে অনেক গুলো কল এসেছে আমার নাম্বারে। বিয়ের পাঁচ মাসে এই প্রথমবার মাকে খুব মনে পড়ছে আমার। আর এক্ষনি, এই মুহূর্তে আমার মায়ের সাথে কথা বলতে হবে। মায়ের নাম্বারে কল করতেই মা কলটা রিসিভ করে বেশ রেগে বলল,,,

—“এতোক্ষনে মনে পড়ল আমার কথা? সেই কখন থেকে তোকে কল করেই যাচ্ছি কিছুতেই কলটা তুলছিলিস না। কি হয়েছে বল তো? তোর শরীর এখন ঠিক আছে তো?”

মায়ের কন্ঠটা শুনতেই আমার দুনিয়া নিয়ে কান্না আরম্ভ হলো। মুখ বুজে চোখের জল ছাড়ছি আমি। কথা বলার সাহসটা ও পর্যন্ত যোগাতে পারছি না। আমার মৌণতা দেখে মা কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,

—“কি হয়েছে রূপা? তুই কথা বলছিস না কেনো?”

মুখ খুলে এবার আমি শান্ত কন্ঠে মা কে বললাম,,,

—“মা। তুমি তোমার মেয়েকে খুব ভালোবাসো তাই না?”

—“হ্যাঁ বাসি। খুব ভালোবাসি। হঠাৎ এ কথা বললি কেনো রূপা? তাছাড়া তোর কন্ঠ টা ও কেমন ছাড়া ছাড়া লাগছে। কি হয়েছে বল তো?”

—“কিছু না মা। হঠাৎ জানতে ইচ্ছে করল। তাই জানতে চাইলাম। তাছাড়া তুমি আমায় খুব ভরসা ও করো তাই না মা?”

—“হ্যাঁ তা ও করি। আমার মেয়ে তো লাখে এক্টা। এমন মেয়ে পাওয়া তো ভাগ্যের ব্যাপার! আমি নিশ্চয়ই খুব লাকী মা!”

আমি আনমনেই বলে উঠলাম,,,

—“আমি যদি তোমার কাছে একেবারের জন্য চলে আসি। তখন তুমি আমাকে তোমার কাছে রাখবে তো মা?”

আমার এমন কথায় মা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল,,,

—“এসব তুই কি বলছিস রূপা? তোর তো এখন বিয়ে হয়ে গেছে। তুই আমার কাছে একেবারে চলে আসবি মানে?”

আমি কিছুটা থতমত খেয়ে মাকে বললাম,,,

—“কিছু না মা। আসলে আমি কয়েকদিনের জন্য তোমার কাছে বেড়াতে আসব। তাই এক্টু মজা করছিলাম!”

মা বেশ খুশি হয়ে বলল,,,

—“সত্যি রূপা? তুই আমার কাছে বেড়াতে আসবি?”

—“হ্যাঁ মা ঐ আর কি। তোমাদের জামাই এক্টু সুস্থ হয়ে নিক এরপর আমি বেড়াতে আসছি।”

কথাটা শোনা মাএই মা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,,

—“জামাই এক্টু সুস্থ হয়ে নিক মানে? জামাইয়ের কি হয়েছে রূপা?”

—“তোমাকে বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম মা। তোমাদের জামাই আজ এক্সিডেন্ট করেছে। এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছে৷ এই নিয়ে তুমি চিন্তা করো না মা। কয়েকদিনের ঠিকঠাক সেবা যত্নে উনি সুস্থ হয়ে উঠবে।”

—“এসব তুই কি বলছিস রূপা? চিন্তা করব না মানে? আমার তো বেশ চিন্তা হচ্ছে। আমি আর তোর বাবা কাল সকালেই রওনা দিচ্ছি। ইসসস তুই আমাকে আগে বললি না কেনো বল তো?”

—“আরে না না মা। তোমাদের আসতে হবে না। বললাম তো কয়েকদিন ভালোভাবে সেবা যত্ন করলেই উনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। তোমাদের প্লিজ এখন আসতে হবে না। তাছাড়া উনি সুস্থ হয়ে উঠলে তো আমি তোমাদের কাছে আসবই।”

এর মাঝেই মনে হলো কেউ মায়ের থেকে ফোনটা ছিনিয়ে নিলো। সে কেউ টা আর অন্য কেউ না। আমার ছোট বোন লোপা। লোপা অভিমানী স্বরে আমাকে বলল,,,

—“আপু জানিস তোর জামাইটা না খুব রগচটা। যখন তুই অসুস্থ ছিলি তোর নাম্বারটা বন্ধ পেয়ে আমি জিজুকে কল করেছিলাম। তোর শরীরের খবর জানার জন্য। মা, বাবা খুব টেনশান করছিলো তো তাই। আর তখনই জিজু ফোনটা রিসিভ করে কি বলেছে জানিস?”

—“কি বলেছে?”

—“আমার পরিচয়টা দেওয়ার পরে ও উনি বলল এটা নাকি রং নাম্বার। আর সাথে সাথেই আমার মুখের উপর কলটা কেটে দিলো।”

আমি চাঁপা এক্টা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম,,,

—“উনি এক্টু এমনই লোপা। তুই প্লিজ উনার আচরণে কিছু মনে করিস না।”

লোপা হঠাৎ বেশ সিরিয়াস হয়ে আমাকে বলল,,,

—“তুই ভালো আছিস তো আপু?”

না চাইতে ও আমি হু হা করে কেঁদে দিলাম। খুব বলতে চাইছিলাম আমি ভালো নেই লোপা। ভিতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে আমার। কিন্তু পরিস্থিতির হয়ে মুখে কিছু বলতে পারছি না। আমার কান্নার আওয়াজ শুনে লোপা বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,,

—“কি হলো আপু? তুই কাঁদছিস কেনো?”

কান্না চেঁপে আমি লোপাকে বললাম,,,

—“তোদের খুব মিস করছি লোপা। তাই অজান্তেই কান্না চলে এলো। রাখছি আমি। ভালো থাকিস তোরা। আমি আবার পরে তোদের সাথে কথা বলে নিবো!”

কলটা কেটে আমি বিছানায় শুয়ে মাথায় বালিশ চাঁপা দিয়ে কান্না জুড়ে দিলাম। কিছুদিন পর কি মুখ নিয়ে আমি পরিবারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবো তাই মাথায় আসছে না। কিছুতেই মা বাবাকে এখন ঢাকায় আসতে দেওয়া যাবে না। উনারা কোনো রকমে ডিভোর্সের ব্যাপারটা জেনে গেলে ডিভোর্সটাই ভেস্তে দিবে। আমি চুপিসারে হিমুকে মুক্তি দিতে চাই। সারা জীবনের জন্য মুক্তি দিতে চাই। কোনো বাঁধনে উনাকে বেঁধে রাখতে চাই না। ডিভোর্সের ব্যাপারটা আমি আমার শ্বাশুড়ী মাকে ও জানাবো না। কাউকে জানাবো না আমি এই ব্যাপারটা কাউকে না। ডিভোর্সের পরে একদিন হঠাৎ করেই আমি মা, বাবার বাড়িতে গিয়ে উঠব। ঐ দিন নিশ্চয়ই উনারা আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না! আর ফিরিয়ে দিলে ও অন্য কোথাও হারিয়ে যেতে আমার বেশি সময় লাগবে না!

কাঁদতে কাঁদতেই ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। এই রাতে আর হসপিটাল থেকে হিমুর মা, বাবারা বাড়ি এলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই বুঝতে পারলাম শরীরে ভীষণ জ্বর হয়েছে আমার। গাঁ, হাত জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে৷ এই জ্বর নিয়েই আমি হসপিটালে ছুটে গেলাম। হিমুকে এক্টা নজর দেখব বলে!

#চলবে,,,,,,?

(আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। দয়া করে সবাই মনযোগ দিয়ে আমার কথা গুলো শুনবেন। গল্পের এই পর্যায়ে এসে যা বুঝলাম পাঠক/পাঠিকাদের ধৈর্য্য খুব কম। উনারা সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে পারছেন না। গল্পটা গুছাতে কিছুটা সময় লাগছে আমার। তাই হয়তো উনারা ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছেন। গল্পের শুরুতে যাই হয়ে যাক না কেনো, তবে গল্পের সমাপ্তিটা খুব মিষ্টি হবে। দয়া করে লেখিকার উপর আপনারা ভরসা রাখুন। শেষ হাসিটা আপনারাই হাসবেন। গল্পটা আমার মতো করে চালিয়ে নিতে দিন প্লিজ! আমাকে উৎসাহিত করুন। গল্পের শেষে কে কার রবে সব পরিষ্কার হবে৷ ততোদিন পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ গল্পটা মাএ শুরু হয়েছে। শেষ হতে অনেকটা সময় লাগবে। তাই আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি। ধন্যবাদ সবাইকে। ভালোবাসা নিবেন😊)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here