তুমি আমার
পর্বঃ ০৬
লেখকঃ আদ্রিয়ান নাজমুল
আমি সেই সুযোগে হঠাৎ করে ওর হাত ধরে টান দিয়ে ওকে আমার রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দি। নাতাশা চমকে যায় ঘটনার আকষ্মিকতায়। প্রচন্ড ভয় পাচ্ছে ও। কারণ ও হয়তো ভাবতেই পারে নি ওর সাথে এমন কিছু হবে। আমার চোখগুলোও রাগে লাল হয়ে আছে। আমি নাতাশার কাছে যাচ্ছি আর নাতাশা পিছনে যাচ্ছে। ও ভয়ে রীতিমতো কাঁপছে। হঠাৎই ও পিছতে পিছতে দেয়ালের সাথে গিয়ে ধাক্কা খায়। আমি এখন ওর অনেক কাছে। আমার গরম নিঃশ্বাস ওর মুখের উপর পরছে। ও অনেক ভয় পাচ্ছে। ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। পালিয়ে যেতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার জন্য পারছে না। হঠাৎই আমার কাছ থেকে সরে যেতে নিলে ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরি। অনেক রাগ উঠেছে ওর উপর আমার। এই ক’টাদিন খুব কষ্ট দিয়েছে আমাকে এড়িয়ে চলে। আমার হাতের চাপ খেয়ে ওর চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু ঝরছে।
নাতাশাঃ আমার লাগছে ছাড়ুন৷ (কান্নাসিক্ত কণ্ঠে)
আমিঃ লাগুক। (রাগী ভাবে)
নাতাশাঃ আমি কি করেছি??
আমিঃ কি করছো জানো না!
নাতাশাঃ কেন আমার সাথে এমন করছেন??
আমিঃ তুমি আমাকে প্রশ্ন করছো?? আরে নিজেকে প্রশ্ন কর আগে। (তাচ্ছিল্য করে)
নাতাশাঃ আমি কিছুই করিনি। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল।
আমি ওকে ধরে আমার চোখে চোখ রাখালাম। আমিও ওর চোখে চোখ রাখলাম। তারপর রাগী ভাবে বললাম,
আমিঃ এখন বলো তো তুমি কিছু কর নাই??
নাতাশাঃ আমার ভয় করছে আপনাকে দেখে। প্লিজ আমাকে যেতে দিন।
আমিঃ আমাকে দিনের পর দিন কষ্ট দিয়ে তুমি দিব্বি ঘুরে বেড়াবে!! আমি কি মানুষ না??
নাতাশাঃ …..! ( চুপ করে আছে)
আমিঃ আমার অনুভূতি গুলো কি তোমার কাছে অস্পষ্ট?? কেন আমাকে এড়িয়ে চলছো?? বলো..কেন?? (এপর্যায় আমি কিছুটা ইমোশনাল হয়ে পরি)
নাতাশা একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখের কোণা হতে নোনা জল গড়িয়ে পরছে। তা দেখে ও হতভম্ব হয়ে যাচ্ছে। কতটা কষ্ট ও আমাকে দিয়ে ফেলেছে তা আমার চোখের জল ওকে সাক্ষী দিচ্ছে। আমি খেয়াল করলাম ও অঝোরে কান্নায় ভেঙে পরেছে। গলগল করে অশ্রু ঝরছে ওর চোখ থেকে। আমি নিতে পারি নি। ওকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরি। দুজনই কষ্টে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম। চাপা কষ্ট গুলো সব বের হয়ে যাচ্ছিলো। অনেকটা সময় নাতাশা আমার বুকের সাথে লেপ্টে ছিল।
আমিঃ কেন আমাকে এড়িয়ে চলছিলে কেন?? উত্তর দেও।
নাতাশা মাথা তুলে ভিজে চোখ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
নাতাশাঃ আমাদের ভালোর জন্য। আমি প্রতিনিয়ত আপনার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছিলাম। যা আমার জন্য মোটেও ঠিক নয়। তাই নিজেকে আপনার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে ফেলেছিলাম।
আমিঃ তোমার কি একবারও মনে হয়নি এই সিদ্ধান্তে আমি কতটা কষ্ট পেতে পারি?? আমার কথা, আমার অনুভূতি গুলো কি একবারও তোমার কাছে গুরুত্ব পায়নি?? অবাক কণ্ঠে।
নাতাশা অস্থির হয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
নাতাশাঃ আমি ভাবতেও পারিনি আপনি এতোটা কষ্ট পাবেন। আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ। আমি বুঝতে পারিনি। আমাদের ভালোর জন্যই এরকম করেছি।
আমিঃ আমাকে কষ্ট দেওয়াটা আমাদের ভালো!!
নাতাশাঃ আপনার কি মনে হয় আপনাকে এড়িয়ে চলে আমি ভালো ছিলাম?? দিনের আলোতে মনে মনে কেঁদেছি। রাতের আঁধারে সবার আড়ালে বালিশ ভিজিয়ে কেঁদেছি। কষ্ট আমারও হয়েছে অনেক গুন বেশি। অসহায় ভাবে।
আমিঃ তাহলে কেন এমন করলে??
নাতাশাঃ আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি। হ্যাঁ আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমাদের কখনোই কেউ মেনে নিবে না কখনোই না। তাই সরে গিয়েছি আপনার কাছ থেকে। (কাঁদতে কাঁদতে।)
আমিঃ আমার কি হবে?? আমি তোমাকে নিয়ে কি ভাবি একবারও জানতে চাইলে না। দূরে সরে গেলে?? দূরে চলে যাওয়াটাই বুঝি সবকিছুর সমাধান?? তাহলে আমিও এখনি চলে যাচ্ছি।
আমি যেতে নিলে নাতাশা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,
নাতাশাঃ দয়া করে এমন করবেন না। আমি পারবো না।
আমিঃ কি পারবে না তুমি??
নাতাশাঃ আপনাকে ছাড়া থাকতে। বাবার পর একমাত্র আপনাকে আমার অনেক আপন মনে হয়েছে। জানি না কেন। খুব ভালোবেসে ফেলেছি আমি। আমি খুবই সাধারণ আর সহজ সরল একটা মেয়ে। আপনার মতো ভালো মনের মানুষকে ভালো লাগবে এটাই স্বাভাবিক। জানেন, আমার সাথে আপনি যতটুকু সময় থাকেন আমার মনে হয় আমি তখন সবচেয়ে বেশি খুশী থাকি। আমার সাথে যে আপনি মজা করেন ঠাট্টা করেন, অনেক মিষ্টি মিষ্টি কথা বলেন, আমি অতি সুন্দরী না হয়েও আমাকে রূপসী বলেন, আমাকে সময় দেন আর আমাকে সবসময় খুশী করেন। এসব কিছু আমাকে আপনার প্রতি দুর্বল করে দিয়েছে। ভালোবেসে ফেলেছি আমি।
আমিঃ তোমার কি মনে হয়, ভালোবাসতে বুঝি শুধু তুমি একাই পারো আর কেউ পারে না?? সেদিন প্রথম যখন তোমাকে দেখি তখন থেকেই তোমার এই মায়াবী মুখখানার প্রেমে পরে যাই। সবসময়ই তোমার কথা ভাবি। মনে আছে সেদিন কলেজে যাওয়ার সময় বলেছিলে সত্যিকারের ভালোবাসার সংজ্ঞা। সেই সব কিছুই আমার সাথে হয় নাতাশা। তোমার মনে একটু জায়গা করে নেওয়ার জন্যই এতো কিছু করেছি। কারণ প্রথম দেখাই আমার তোমাকে ভালো লেগেছে। তোমার নিস্পাপ মায়াবী মুখখানা আমার মন কেড়ে নিয়েছে প্রথম দেখায়ই। হ্যাঁ নাতাশা আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি। তোমার আগ থেকেই তোমাকে
তোমার নিস্পাপ মায়াবী মুখখানা আমার মন কেড়ে নিয়েছে প্রথম দেখায়ই। হ্যাঁ নাতাশা আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। অনেক বেশি। তোমার আগ থেকেই তোমাকে ভালোবাসি।
নাতাশাঃ সত্যিইই??
আমিঃ তিন সত্যিইইই।
নাতাশা আমাকে আর আমি নাতাশাকে জড়িয়ে ধরি। দুজনেই আজ অনেক খুশী। কারণ দুজনের অনুভূতি গুলো আজ একে অপরের কাছে স্পষ্ট। তোমার যদি মনে হয়, তুমি যাকে পছন্দ কর বা ভালোবাসো সেও তোমাকে সেভাবে পছন্দ করে বা ভালোবাসে তাহলে দুজনের অনুভূতি গুলো বলে দেওয়াই ভালো। কারণ কিছু অপেক্ষা মাঝে মাঝে অনেক দূরত্ব আর কষ্টের সৃষ্টি করে। যা পরে আর ঠিক করা যায় না। আসলে তখন আর সময়ই পাওয়া যায় না। তবে অবশ্যই সেই অনুভূতিগুলো পবিত্র হতে হবে। যা হতে হবে সীমাহীন। নাতাশার প্রতি আমার অনুভূতি গুলো সবটাই সীমাহীন। কারণ আমি ওকে সীমাহীন ভালোবাসি। এই ছোট্ট জীবনের বাকিটা সময় শুধু ওকে সাথে নিয়েই কাটাতে চাই। শুধু ওকে আর কেউ নয়। এই মনোভাবটাকেই পবিত্র ভালোবাসা বলে।
আমি মাথা তুলে নাতাশার চোখের দিকে তাকাই। ওকে যে এখন কতটা মায়াবতী লাগছে তা লিখে বুঝাতে পারবো না।
ক্লান্ত দুপুরের শেষ ভাগে নাতাশা আমার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে আছে। শান্ত পরিবেশ। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। সবমিলিয়ে এ এক অন্যরকম অনুভূতি। হঠাৎ করে আমি ওর কপালে একটা ছোট্ট করে চুমু এঁকে দিলাম। ও চমকে উঠে। আর আমার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে থাকে।
আমিঃ আমাকে ভালোবাসার প্রথম উপহার এটা।
নাতাশা খুব লজ্জা পেয়ে আস্তে করে বলে,
নাতাশাঃ সারাজীবন মনে থাকবে এই উপহার আর এই মুহূর্তের কথা।
আমিঃ ভালোবাসি নাতাশা।
নাতাশা কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,
নাতাশাঃ আমিও।
এরপর কয়েকদিন কেটে যায়। আমার আর নাতাশার মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম চলতে থাকে। ও যখন কাজ করে আমি বিভিন্ন অজুহাতে মায়ের কাছে এসে ওকে দেখি। তখন ও যা লজ্জা পায়না। লজ্জায় ওর চোখমুখ একদম লাল হয়ে যায়৷ আমার খুব ভালো লাগে ওকে এভাবে দেখতে।
একদিন,
ইশাঃ ভাইয়া..ভাইয়া।
আমিঃ হ্যাঁ বল।
ইশাঃ আজ বিকেলে মেলায় নিয়ে যাবে প্লিজ??
আমিঃ ও যাবে তো??
ইশাঃ হুম। আপুই পাঠিয়েছে আমাকে। সে নাকি মেলায় যাবে৷
আমিঃ আচ্ছা যাবো। আল্লাহ বাঁচালে আজ তোকে অনেক কিছু খাওয়াবো। তুই যা চাবি তাই কিনে দিব।
ইশাঃ কি বলো ভাইয়া সত্যিইই?? (অনেক খুশী হয়ে)
আমিঃ জি। আমার আদুরে বইনা সত্যি।
ইশাঃ ইয়েএএএ…কি মজা কি মজা।
আমিঃ যা ওকে গিয়ে বল।
ইশাঃ আচ্ছা।
আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম।
আমিঃ মা…
মাঃ হ্যাঁ বল বাবা।
আমিঃ মা, ওরা আজ মেলায় যেতে চাচ্ছে নিয়ে যাবো??
মাঃ আচ্ছা যা। ওরা দুজনই সারাদিন বাসায় থাকে। যা ঘুরিয়ে নিয়ে আয়।
আমিঃ আচ্ছা মা। তুমিও চলো।
মাঃ না রে। আমি ঘুরাঘুরি করতে পারবো না বাপু। পরে শরীর খারাপ হবে।
আমিঃ আচ্ছা। সমস্যা নাই। তাহলে যাই আমি।
মাঃ আচ্ছা যা।
আমি মনে মনে ভাবছি, আসার সময় মা আর বাবার জন্যও কিছু কিনে আনবো। আর নাতাশার বাবার জন্যও। শত হলেও ফিউচার শ্বশুর আমার। হাহা।
যাক এরপর দুপুর পেড়িয়ে বিকেল আসলো। ইশা আর নাতাশাকে নিয়ে চলে গেলাম সূর্যমণি মেলায়। বছরে এই একটা সময় এই মেলাটা হয়। অনেক কিছু আছে এই মেলায়। সবই নতুন নতুন। বিভিন্ন রাইড, জামা কাপড়, খাবার, হাড়ি পাতিল আরো কত কি।
নাতাশাকে আজ পরীর মতো লাগছে৷ ওর এক হাত আমি ধরে নিয়েছি। আরেক হাতে ইশাকে। দুজন দুপাশে। মনে হচ্ছে একটা সুখী পরিবার। নাতাশা আর ইশা আজ বেজায় খুশী। নাতাশাকে এর আগে এত্তো খুশী কখনো দেখিনি। নাতাশা শুধু ঘুরাঘুরি করছে। কিন্তু কিচ্ছু কিনে দিতে বলছে না। ও যে কতটা ভালো এটাই তার প্রমাণ। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও অনেক প্রেমিকাই তার প্রেমিকের পকেট খালি করতে পছন্দ করে। কিন্তু আমার নাতাশা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। কিন্তু আমি তো আজ আমার পকেট খালি করবো সেই মন-মানষিকতা নিয়েই এসেছি। তাই,
আমিঃ ইশা চল তোদের আজ অনেক ধরনের মিষ্টি খাওয়াবো।
নাতাশাঃ আমি খাবো না।
আমিঃ একটা মার দিব। চুপ।
নাতাশাঃ আরে অযথা টাকা নষ্ট কইরেন না তো।
আমিঃ চুপ। বছরে একবার এই মেলা আসে। আর উনি আসছে আমার টাকা বাঁচাতে। চুপচাপ যা বলি তাই করবা।
নাতাশাঃ আপনিও না।
এরপর ইশা আর নাতাশাকে নিয়ে বসলাম মিষ্টির দোকানে। অনেক গুলো মিষ্টির দোকান থাকায় একটা খালি দোকানে বসলাম। এখানে সবার কাছেই একই মিষ্টি। অনেক ধরনের মিষ্টি নিলাম। ইশা তো মন ভরে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে সেই কবেই। একটা খাচ্ছে আর সেকি তার রিয়েকশন। অন্যদিকে নাতাশা আমাকে ওর কনুই দিয়ে খালি গুতো দিচ্ছে। আমি ওর দিকে তাকাতেই ও বলে,
নাতাশাঃ হা করেন।
আমি ওর কথা মতো হা করি। ও আমকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দেয়। আমিও সাথে সাথে ওকে একটা মিষ্টি খাইয়ে দি। খুব ভালো লাগলো আমাকে ছাড়া ও মিষ্টি প্রথমে মুখে নেয় নি। সত্যিই একজন স্ত্রী হিসেবে নাতাশার কোনো তুলনা হয় না। ওকে আমার এখন স্ত্রীই মনে হচ্ছে।
ইশাঃ ভাইয়া তোমাদের যা লাগছে না। একদম বউ জামাই। (মজা করে।)
আমিঃ আমারও তাই মনে হচ্ছে। হাহা।
চলবে……. [ ইনশাআল্লাহ]