তুমি আমার
পর্বঃ ০৪
লেখকঃ আদ্রিয়ান নাজমুল
“কথাটা” বলেই নিজেই হাসছি “বেশুমার”। হাহা। আর অন্যদিকে নাতাশা লজ্জায় মরে যাচ্ছে। হঠাৎই ও উঠে যেতে নিলে আমি ওর হাত ধরে ফেলি। আর ও চমকে যায়। আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। সময়টা এখন “গোধূলি” বিকেল। নদীর পানিগুলো “ঝিকিমিকি” করছে “সূর্য” মামার আলোতে। সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে এসে আমাদের গায়ে পরছে। নাতাশার চোখে মুখে লজ্জার ছাপ। হয়তো ও ভাবে নি এই নাজমুল কখনো ওর হাতটা ধরবে। নদীর উপর থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা হাওয়া আমাদের ছুঁয়ে যাচ্ছে। সেই হাওয়ায় ভর করে পাখিরা উড়ে উড়ে তার নীড়ে ফিরে যাচ্ছে৷ আর এই হাওয়ায় নাতাশার কেশগুলো উড়ছে তার আপন মনে। আমি নাতাশার হাত ধরে আছি। ও সেই অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে৷ পড়ন্ত বিকেল আর ওর দুলতে থাকা কেশ। মুহূর্তটা যেন কোনো সিনেমার মতো। তবে এখন বাস্তব। দুজন দুজনের চোখে হারিয়ে গিয়েছি। বাহিরে হয়তো সময় তার আপন গতিতে অতিক্রম করেছে। কিন্তু আমাদের মাঝে তখন সময়টা যেন থমকে গিয়েছে। এই চির সবুজের মাঝে আমরা দুজন যেন হারিয়ে গিয়েছি।
অন্যদিকে “ইশা” এই দৃশ্য দেখে মুহূর্তেই কয়েকটি ছবি তুলে ফেলে। আর সাথে সাথেই আমাদের এই মুহূর্তটি আলোকচিত্রে বন্দী হয়ে যায়। সময়টা অনেক হয়েছে এখন। তাই আমি আস্তে করে ওকে বললাম,
আমিঃ “যেও” না বসো৷ দুটো কথা বলি।
কথাটা বলেই আমি “নাতাশার” “স্পর্শের” বাইরে চলে আসি। মানে ওর নরম হাতখানা ছেড়ে দি। ও কোনো কথা না বলে চুপ করে আমার পাশে এসে বসে। আমি একটু হাসি দিয়ে পরিবেশটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করি। তারপর বলি,
আমিঃ এই গোধূলি বিকেলে গ্রাম বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য্য আজ আমার দেখা হয়ে গেল। সত্যিই নিজেকে আজ ধন্য লাগছে।
ও বোধহয় বুঝতে পারে নি আমার কথার অর্থ। তাই জিজ্ঞেস করল,
নাতাশাঃ “কীভাবে” দেখলেন??
আমি “কিঞ্চিৎ” হেসে বললাম,
আমিঃ এই চারপাশে চির সবুজ আর বয়ে যাওয়া শান্ত নদী। “গোধূলি” বিকেল আর তার মাঝে গ্রাম বাংলার “রূপসী” মেয়ে তুমি। আজ তো আমি “ধন্য”।
“নাতাশা” অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমিঃ “অবাক” হলে বুঝি??
নাতাশাঃ “না” হয়ে আর উপায় কি?? আমি তো কোনো “সাদা” চামড়ার কন্যা নই। না আছে আমার কামুক “অঙ্গ” “ভঙ্গি”। তাহলে কীভাবে হলাম আমি “রূপসী”??
আমিঃ “রূপসীকে” হতে হবে সাদা চামড়ার আর তার থাকবে “কামুক” “অঙ্গ” “ভঙ্গি”, এ কথা বলেছে কে শুনি?? “রূপসী” তো সে, যার গায়ের চামড়া সাদা না হয়েও তার মধ্যে “কামুকতা” না থেকেও যে আকর্ষনীয় সবার কাছে। যার মধ্যে আছে শুধু মায়া আর মায়া। যে মায়ার বাঁধনে সবাই চায় আবদ্ধ হতে। সেই তো আসল “রূপসী”। আর আমার নজরে সেই “রূপসী” শুধু তুমি আর তুমি।
নাতাশাঃ “আপনি” কি “হ্যাঁ”?? কেউ যে এভাবে কারো মনের দরজায় কড়া নাড়তে পারে জানা ছিল না।
আমিঃ তা দরজাটা কি খুলবে নাকি “হরতাল” করব??হুম?? মজা করে।
নাতাশাঃ “ভেবে” “দেখব”। আপনি কড়া নাড়িয়ে যান। হিহি।
বলেই “নাতাশা” উঠে দাঁড়ালো। আর বলল,
নাতাশাঃ এবার যদি বাড়ি না যাই “আঁধার” নেমে আসবে। চলুন এখন নীড়ে ফিরে যাই।
আমি উঠতে উঠতে বললাম,
আমিঃ যাওয়া ইচ্ছা যে নাই এই পাখির। সে তো ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে চায় এই গোধূলি বিকেলে কারো মনের গহীনে।
নাতাশাঃ পাখিকে বলে দিন, সময় শেষ হয়নি। গোধূলি বিকেল আবার আসবে। হয়তো তখন মনের দরজাও খোলা থাকবে।
আমি বুঝে গিয়েছি “নাতাশার” কথা। ওর দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলাম। ও হাসলো। কিন্তু আমি হারিয়ে গেলাম সেই হাসির মাঝে। হঠাৎ,
ইশাঃ “ভাইয়া”, ফোনে আর ছবি তোলার জায়গা নেই। চল বাসায় যাই।
ইশার কথায় বাস্তবে ফিরে আসি। বোনটা আজ আমায় অনেক খুশী করেছে। আজ ওর জন্য জীবনে কিছু সুন্দর মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছি। তাই ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে গাল দুটো একটু টেনে দিয়ে বললাম,
আমিঃ আমার “তরফ” থেকে তোর জন্য একটা “ট্রিট” পাওনা রইলো। সময় পেলে দিয়ে দিব। যা বলবি তাই দিব।
ইশাঃ “সত্যি” ভাইয়া?? অনেক খুশী হয়ে।
আমিঃ “তিন” “সত্যি”। আর এই যে “রূপসী” আপনাকেই বলছি, আজকে এতো মজার রান্নার জন্য আপনিও একটা ট্রিট পাবেন আমার তরফ থেকে।
নাতাশাঃ বলেছেন তাই অনেক। না দিলেও হবে৷
ইশাঃ বোকা আপু তুমি!! ফ্রী জিনিস কেউ ছাড়ে নাকি??
নাতাশাঃ হজম হবে তো তাই ভাবছি।
আমিঃ নাজমুলের ট্রিট হতেই হবে। না হলে জোর করে করাবো। হাহা।
নাতাশাঃ আপনিও না। চলো ইশা আমরা যাই। তোমার ভাইয়া আজ মনে হয় আর বাসায় যাবে না। কোন “সাহিত্যিকের” ভূত যেন আজ তার ঘাড়ে এসে চেপেছে। আমরা বরং যাই। আসো। রসিকতার স্বরে।
আমিঃ না না আমিও যাব।
ইশা আর নাতাশা হাসছে সাথে আমিও। এরপর অনেক মজা করতে করতে আমরা বাসায় ফিরে আসি। এসে হাত মুখ ধুয়ে মায়ের কাছে রান্নাঘরে যাই।
মাঃ “কেমন” লাগলো গ্রামটা??
আমিঃ খুব ভালো মা। আজ গ্রাম বাংলার সব কিছু একসাথে দেখেছি৷ যান্ত্রিক শহরে হয়তো জীবন অনেক সহজ কিন্তু এখানে জীবন অনেক স্বচ্ছ। শান্ত আর মনোরম পরিবেশ মনটাকে ভালো করে দেয়।
মাঃ ঠিক বলেছিস বাবা। গ্রাম গ্রামের মতো আর শহর শহরের মতো। গ্রামে থাকার মজাই আলাদা। তা বাবা তোর পড়াশোনার খবর কি??
আমিঃ মা, এই বন্ধের পর কয়টা ক্লাস হবে। তারপর “পরীক্ষা”। ব্যাস। তারপর তোমার ছেলের আপাতত পড়াশোনা মোটামুটি শেষ।
মাঃ যাক আল্লাহ তোর সহায়ক হোন।
আমিঃ “আমিন”।
মাঃ তুই রুমে যা। আমি চা আর পিঠা পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আমিঃ “পিঠা” বানাবা?? অবাক হয়ে।
মাঃ “হ্যাঁ” তোর না পছন্দ তাই।
আমিঃ “আচ্ছা”।
আমি এরপর আমার রুমে চলে গেলাম। গিয়ে বিছানায় গা’টা এলিয়ে দিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ছবিগুলো দেখতে লাগলাম। লাস্ট ছবিগুলো দেখেতো আমি পুরো “অবাক” !! আমাদের সেই গোধূলি বিকেলের বিশেষ মুহূর্তের ছবি। আমার আদুরে বোনটা তুলেছে। নাহ ওকে অনেক বড় একটা “ট্রিট” দিতে হবে। আমি ছবিগুলো সব একে একে দেখছি মন ভরে। লুকিয়ে রাখা ছবি গুলোও। সত্যি “নাতাশা” রূপসী একটা মেয়ে। কতটা মায়া ওর “মায়াবী” মুখখানায় তা বলে বুঝতে পারবো না। জীবনে এতোটা সময় পাড় করে এসেছি। অনেক মেয়ে দেখেছি এই দুচোখে। তারাও আমার জন্য পাগল ছিল। কিন্তু আমার মনের গহীনে একমাত্র নাতাশাই বাসা বেঁধেছে। কিন্তু আমি কি পারবো ওর মনের গহীনে বাসা বাঁধতে?? আমি ওর ছবিকে প্রশ্ন করলাম, এই দিবে আমায় বাসা বাঁধতে তোমার মনে?? বলা শেষ হওয়ার আগেই নাতাশা নাস্তা হাতে আমার রুমে ঢুকে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঘটনার “আকষ্মিকতায়” পুরো থতমত খেয়ে গিয়েছি। কোনো রকম তাড়াতাড়ি ফোনটা পাশে লুকিয়ে নিজেকে ধরপাকড় করে সামলে নেই। আমি ওর দিকে তাকিয়ে দেখি মহারাণী আমার অবস্থা দেখে হাসছেন।
নাতাশাঃ আপনি কি “পাগল” নাকি??
আমিঃ “কেন”?? ভয়ে ভয়ে।
নাতাশাঃ ওরকম ফোনের দিকে তাকিয়ে একা একা হাসছিলেন আর কথা বলছিলেন কেন??
আমিঃ “না” মানে… ও হ্যাঁ… ভিডিও কলে কথা বলছিলাম। (যাক বেঁচে গেলাম)
নাতাশাঃ “ওও”…আচ্ছা বুঝলাম। নিন আপনার নাস্তা। খালা পাঠিয়েছে।
আমিঃ “হুম” রাখো ওখানে।
নাতাশা নাস্তা রেখে চলে যাচ্ছিল। আমি ডাক দিলাম,
আমিঃ “নাতাশা”…
নাতাশা আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল,
নাতাশাঃ “জ্বি”??
আমিঃ “তুমি” কাউকে ভালোবাসো?? মানে তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে??
নাতাশা হা হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আজ একদিনের দেখায় অনেক বড় একটা প্রশ্ন করে ফেলেছি বোধহয়। কিন্তু আমার এটা জানা দরকার নাহলে ওর মনে বাসা বাঁধবো কি করে।
আমিঃ “কি” হলো?? এই চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকাকে কি হ্যাঁ বলে ভেবে নিব??
নাতাশা শুধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমার কেন জানি ভয় হচ্ছে। ও যদি বলে হ্যাঁ আছে। তাহলেতো সব শেষ।
আমিঃ “আছে” তাইনা?? অসহায় ভাবে।
নাতাশা এবার বলল,
নাতাশাঃ যে কন্যা আরো একটি গোধূলি বিকেল পাখিকে দিতে পারে তার মনের গহীনে উড়ে বেড়ানোর জন্য। তার মনে কি কেউ থাকতে পারে??
বলেই “নাতাশা” হাসি দিয়ে চলে গেল। আমি বসে বসে হিসাব মিলাচ্ছি। অংক করতে দিয়ে গেল “নাতাশা”। হ্যাঁ উত্তর পেয়েছি। নাতাশার মনে কেউ নেই। তার মানে আমাকে এবার হরতালে নামতে হবে। “ইয়েএএএ”…খুশীতে আমি আটখানা হয়ে গিয়েছি। বিছানা থেকে নেমে একটা লুঙ্গি ড্যান্স দিলাম। তারপর মায়ের হাতের পিঠা খেতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম। বড্ড বেসামাল আমি।
অন্যদিকে ইশার রুমে,
নাতাশা নাস্তা হাতে ইশার রুমে ঢুকে ইশাকে নাস্তা দিয়ে ওর পাশে বসে। “নাতাশার” চোখেমুখে উজ্জ্বলতায় ভরে আছে। “ঠোঁটের” কোণায় এক চিলতি স্পষ্ট হাসি৷ ব্যাপারটা ইশার কাছে অন্যরকম লাগছে। তাই ইশা নাতাশার কাছে গিয়ে ওকে দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলো,
ইশাঃ “আপুমনি”, আজ তোমাকে এতো খুশী খুশী লাগছে কেন হুম??
“নাতাশা” বেশ লজ্জা পাচ্ছে। কেন জানি আজ ওর অনেক খুশী খুশী লাগছে। কি কারণ তাও জানা নেই। হয়তো নাজমুল।
নাতাশাঃ “কই”। লজ্জা নিয়ে।
ইশাঃ “উহুম”। আমি তো দেখছি। তুমি আজ অনেক খুশী। না বললেও সমস্যা নেই। অবশ্য আমি জানি এই খুশীর কারণ।
নাতাশাঃ “কি” বলতো।
ইশাঃ “ভাইয়া”। হিহি।
নাতাশাঃ “এহহ” আসছে। ওই পাজি লোকটার জন্য আমি খুশী হব ক্যান! পঁচা একটা।
ইশাঃ তুমি হয়তো ভুলে গেছো আমিও একজন মেয়ে। তোমার মনের খবর আমার কাছেও আছে ভাবি। হিহি।
নাতাশা ইশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
নাতাশাঃ তুমিও তোমার ভাইয়ার মতো অনেক দুষ্ট। তবে অনেক ভালো। এখন নাস্তা খেয়ে পড়ো মন দিয়ে। সামনে এক্সাম না। আসো আমি পড়তে হেল্প করি।
ইশাঃ আচ্ছা ভাবি।
নাতাশাঃ দুষ্ট একটা। পড়ো।
নাতাশা মনে মনে হাসছে। ইশার মুখে ভাবি ডাকটা ওর খুব ভালো লাগছে। নাজমুলকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছাটা নাতাশার মনে একটু একটু করে জাগছে। নাজমুলের আচার আচরণ নাতাশাকে শুধু প্রতিনিয়ত অবাকই করে। কারণ নাজমুল সবার থেকে আলাদা।
রাত ৯.৫৩ মিনিট,
বাবাঃ নাজমুল…নাজমুল…
বাবার মুখে আমার ডাক শুনে তাড়াতাড়ি ছুটে যাই বাবার কাছে।
আমিঃ আসসালামু আলাইকুম।
লোকঃ অলাইকুম আসসালাম।
বাবাঃ এই হলো আমার একমাত্র ছেলে, আদ্রিয়ান নাজমুল।
লোকঃ মাশাল্লাহ। তোমার কথা তোমার বাবা আমাকে সারাদিন বলে।
আমিঃ জ্বি।
বাবাঃ আহহা চিনতে পারিস নি?? ওনি হচ্ছে নাতাশার বাবা।
চলবে…… { ইনশাআল্লাহ }