#তাহার_আগমন

পর্ব:০৮

শায়নের লাশ ধরে কাঁদছে বিশু।নিজের একমাত্র ছেলের মৃত্যু বিশু মেনে নিতে পারছে না।বিশুর স্ত্রী কঙ্কা পাথরের মত ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে।ছেলের শোকে কাঁদতে কাঁদতে এখন যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে।গতকাল অজয়ের মৃত্যুর রেশ কাটতে না কাটতেই আরও একটি মৃত্যু যেন কৌতূহলী মানুষের সংখ্যা মুহূর্তে মুহূর্তে কমছে।গতকাল জড়ো হওয়া মানুষের সংখ্যা আজ অর্ধেকে নেমে এসেছে।কেউকেউ এক পলক দেখেই পালিয়ে বলছে,নাহ,আর থাকা যাইবো না।
সানাউল মির্জা হাসিনকে সঙ্গে নিয়ে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছেন।তিনি এখানে আসা প্রতিটা মানুষের উপর নজর রাখছেন।সন্দেহজনক তেমন কিছুই চোখে পড়েনি।মাটিতে রক্তের দাগ ছাড়াও কিছু নেই।তিনি হাসিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,শায়নের ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

হাসিন জিজ্ঞেস করল,কেমন স্যার?

সানাউল মির্জা বললেন,এইযে সুজয়কে অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।আর মাঝখানে শায়নের মৃত্যু্।এদিকে সুজয়ের জ্ঞানও ফিরছে না।আমার মনে হচ্ছে,সে কিছু একটা দেখে ভয় পেয়ে গেছে।জ্ঞান ফিরলে জানা যাবে।

-আর বিশুদার উপর সন্দেহ করাটা কি ঠিক হচ্ছে?মানে লোকটার নিজের ছেলেই তো শিকারে পরিণত হয়েছে।তাহলে সে কিভাবে জড়িত থাকবে?কিভাবে একমাত্র ছেলের লাশ ধরে আহাজারি করছে খেয়াল করেছেন?

সানাউল মির্জা মাথা নেড়ে বললেন,না,হাসিন।উনার গতিবিধি সত্যিই সন্দেহজনক।খাকি পোশাক পড়ে শহরে আসা-যাওয়া।এদিকে আবিদ সাহেবও খাকি পোশাকে কাউকে দেখেছেন।সব মিলিয়ে তাকে সন্দেহের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না।

-তাহলে শায়ন মাঝখানে মারা পড়ল কিভাবে?জিজ্ঞাসা দৃষ্টিতে তাকালো হাসিন।

সানাউল মির্জা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,আমার মনে হচ্ছে,সুজয় কোনো কারণে বাইরে গিয়েছিল।হয়তো তখন সেই শয়তান সুজয়ের সামনে চলে আসে।মাঝখানে শায়ন তাকে বাঁচাতে এসে প্রাণ চলে যায়।আর এমনটাও হতে পারে,শায়ন ভুলবশত ভেতরে ঢুকে পড়ে।আমি যতদূর জানি,শয়তান তাদের শিকারে ব্যর্থ হলে মাঝখানে ঢুকে পড়া মানুষটাকে মেরে চলে যায়।সুজয় ভাগ্যের জোরে বেঁচে ফিরেছে।বাকিটুকু জ্ঞান ফিরলেই বলা যাবে।হঠাৎ ভিড় থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ দুজনের কানে আসে।

হাসিন বলল,মনে হচ্ছে,কিছু বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে।চলুন গিয়ে দেখা যাক।

বিশু শর্মিলার গলা চেপে ধরেছে।সঙ্গে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।গ্রামের কয়েকজন এসে বিশুকে সামলাতে পারছে না।সানাউল মির্জা ছুটে এসে ধমকে বললেন,কি করছেন আপনি বিশুদা?মেরে ফেলবেন নাকি?

বিশু বলল,মেরেই ফেলবো।ওই শর্মিলাই আমার ছেলেকে খুন করেছে।

শর্মিলা হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,ছেলের শোকে বুড়া পাগল হয়ে গেছে।আমি জমিদারবাবুর কাছে আজই নালিশ করবো।

সানাউল মির্জা দুজনকে থামাতে যাবেন এমন সময়ে একটি ছেলে দৌঁড়ে এসে বলল,সুজয়বাবুর জ্ঞান ফিরছে।আপনাদের জমিদারকর্তা যেতে বলেছে।

সানাউল মির্জা শর্মিলাকে ভেতরে যেতে বললো।এই ব্যাপারে পরে সমাধানের আশ্বাস দিলেন তিনি।হাসিনকে তার পেছনে আসার ইশারা দিয়ে ঝামেলা থেকে বেরিয়ে গেলেন।কামড়ায় ঢুকে দেখতে পেলেন,জমিদার বর্মণ সুজয়ের পাশে গম্ভীর মুখে বসে আছেন।পাশের গ্রাম থেকে ডাক্তার শান্তনু পালকে নিয়ে আসা হয়েছে।তিনি সুজয়ের চোখের পাঁতা উল্টিয়ে,হাতের কব্জি ধরে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারলেন বলে মনে হচ্ছে না।সানাউল মির্জাকে ঢুকতে দেখে বিরক্তমুখে বলল,উনি কে?

জমিদার বর্মণ সঙ্গে সঙ্গে বললেন,আমার কাছেরই লোক।সমস্যা নেই।তা কি বুঝলেন ডাক্তারবাবু?

ডাক্তার শান্তনু বলল,আপনার ভাগ্নের শরীর খুব দুর্বল হয়ে আছে।চোখদুটো বেশ ফ্যাঁকাশে।মনে হচ্ছে ভয় এখনও কাটেনি সুজয়ের।

-আমরা কি একটু কথা বলতে পারি সুজয়ের সঙ্গে?জিজ্ঞেস করলেন সানাউল মির্জা।

ডাক্তার শান্তনু পাল ভ্রুঁ কুচকে বলল,আপনি কি কথা বলবেন মশাই?সে তো ভয়ে কথা বলতেই ভুলে গেছে।জ্ঞান ফিরে কিছুই বলতে পারছে না।গভীর ভয়ে হয়তো কিছুক্ষণের জন্য এমনই হয়ে থাকবে।আশা করি,বিকালের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে সে।

হাসিন ফিসফিসিয়ে বলল,স্যার,তাহলে আর এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই।একটু বাইরে চলুন কথা আছে আপনার সাথে।

সানাউল মির্জা একফাঁকে বেরিয়ে গেলেন জমিদার বর্মণকে কিছু না বলে।লোকের ভিড় এড়িয়ে ফাঁকা জায়গায় এসে বললেন,কি কথা হাসিন?

হাসিনকে বেশ উত্তেজিত মনে হলো।বলল,আপনি তখন বিশুদার কথা খেয়াল করেননি?

সানাউল মির্জা ভেবে বললেন,কি কথা?সে তো কাঁদছে ছেলের শোকে।কথা বলবে কি করে?

হাসিন উত্তেজনার বশে বেশ জোরে কথা বলতে গিয়ে আবার থেমে গেল।আস্তে করে বলল,তখন রাগের মাথায় বিশুদা শর্মিলাদির উপর রেগে একটা কথা বলে ফেলেছে।আপনি ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন?বলল যে,তুই আমার ছেলের খুনী।

সানাউল মির্জা চমকে উঠে বললেন,আরে তাই তো।কথার মাঝে জমিদারবাবুর ভাগ্নে চলে আসায় আমি খেয়ালই করিনি।

হাসিন বলল,আমার কাছে মনে হচ্ছে,শর্মিলা আর বিশুদার মাঝে কোনো কিছু অবশ্যই আছে।নাহলে হঠাৎ বিশুদা এই কথা বলে গলা চেপে ধরতে যাবে কেন?

সানাউল মির্জা বললেন,শর্মিলার ঘর কোনদিকে,হাসিন?

জবাবে হাসিন উত্তর দিল,ওইযে পুকুরপাড়ে একটু দূরে বটগাছ দিয়ে ঘেরা একটি ছোট্ট দালানের মতো আছে।সেখানে কোনো একটায় জায়গা নিয়েছে শর্মিলাদি।আপনি সেখানে কি করবেন?যাবেন নাকি?

সানাউল মির্জা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললেন,যাবো তবে চুপিচুপি।আমার মন বলছে,সেখানে অবশ্যই রহস্যের সমাধানের অংশবিশেষ লুকিয়ে আছে।

বারো.

শায়নের লাশ দাহ করতে করতে দুপুর পেরিয়ে বিকালের সময় হয়ে গেল।জঙ্গের পাশে নদীর ধারে গ্রামের পরিচিত চিতায় শায়নের শেষকৃত্য সম্পূর্ণ হয়েছে।গ্রামে লোকজন কম থাকায় হাসিন নিজেও বিশুদার সাথে হাতে হাতে কাজ করেছে।কাঠ নিয়ে আসা,সেগুলো সাজিয়ে রাখাসহ সবকিছু।অবশ্য হাসিন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেনি।হাতের কাজ শেষ করে সে দূরের অর্জুন গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে শেষকৃত্য দেখছে।হাসিনের খারাপও লাগলো।বিশুদার সন্তান বলতে শায়নই ছিল।লোকটা এখন বড্ড একা হয়ে গেল।একটু পরে বিশুদা একটা হাড়িতে কি যেন নিয়ে নদীর পানিতে নেমে পড়ল।আগুনের ধোঁয়া শেষ হতেই হাসিন গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এবার বাড়ির পথে হাঁটা দিল।জঙ্গলের রাস্তা দিয়েই ফিরতে হবে ভেবে হাসিন জোরে হাঁটতে লাগলো।এমনিতেই বিকেল গড়িয়েছে।সন্ধ্যার আগে খেয়ে আবার কাজে নেমে পড়তে হবে।তার উপর এই জায়গাও সুবিধার না।এইতো সেদিন অজয় মারা গেছে।কিছুটা পথ যেতেই হাসিনের মনে হলো,আড়াল হতে কেউ তাকে দেখছে।সে তাকাতেই মাঝেমাঝে গাছের সবুজ পাতায় মিশে যাচ্ছে।হাসিন ব্যাপারটা কয়েকবার খেয়াল করেছে।সে এবার একটু তাড়াতাড়ি পা ফেলতে লাগলো।হাসিনের মনে হলো,এবার যেন তাকে সে ডাকছে।হাসিন থমকে দাঁড়ালো।ভুল শুনেনি সে।একটি বৃদ্ধ লোকের গলার আওয়াজ ভেসে আসছে ওই পুরানো কয়েদখানার সামনে থেকে।হাসিন ভেতরে ভেতরে ভয় পেলেও কৌতূহল দমাতে না পেরে সেদিকেই পা বাড়ালো।ঝোপ এড়িয়ে এবার একটু সামনে যেতেই পাতার ফাঁকে দুটি চোখ যেন দেখতে পেল।একটি সাধু লোক বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে,পুরোহিত।হাসিন ভয়ে ভয়ে বলল,আপনি এখানে বসে আছেন কেন?

পুরোহিত স্থির দৃষ্টিতে হাসিনের দিকে তাকিয়ে বলল,তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি বালক।

হাসিন অবাক হয়ে বলল,আমার জন্য?কিন্তু আপনি এখান থেকে চলে যান।নাহলে খুব বিপদ হবে।এই জায়গাটা তেমন ভালো নয়।ওইযে বাঁশে লাল কাপড় বাঁধা আছে।

লোকটি হাসিনের কথায় খুব একটা বিচলিত হয়েছে বলে মনে হয়না।স্বাভাবিকভাবেই বলল,তোমাকে আমার খুব দরকার।আজ রাতে তোমাদের জমিদার সাহেবের খুব বিপদ।তার সাথে পুরো গ্রামের মানুষের।তুমি কি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?

হাসিন বেশ উত্তেজিত হয়ে বলল,জমিদার সাহেবের বিপদ!কিন্তু আপনাকে আমি কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

-আজ অমাবস্যা।আজ রাতেই এই পিশাচ শেষ করতে হবে।নাহলে আর কখনো সম্ভব হবে না।আরও প্রাণ যাবে।লোভের কারণে আরও ক্ষতি হবে।সন্ধ্যার আগে তোমাকে আমার জন্য কিছু জিনিস যোগাড় করে দিতে হবে।পারবে বালক?

হাসিন বেশ দৃঢ় কন্ঠে বলল,আমাকে পারতেই হবে।আমার গ্রামের জন্য আমি সব করতে রাজি।বলুন কি আনতে হবে?

পুরোহিত লোকটি উঠে এসে বলল,সব কথা এভাবে বলা যায় না।তিনি হাসিনের আরও কাছে এসে কানে কানে কি যেন বলল।হাসিনের চোখদুটো তখন অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে পুরোহিতের দিকে।সে ভাবছে,সত্যিই সে পারবে তো?

সন্ধ্যার একটু আগে সানাউল মির্জা তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লেন।অন্ধকারে পথ চলতে ছোট্ট একটা টর্চ লাইটও নিতে ভুললেন না তিনি।জমিদার বর্মণ এই ব্যাপারে কিছুই জানে না।অবশ্য তিনি এখন ভাগ্নে সুজয়কে নিয়ে চিন্তিত বেশি।কে কোথায় যাচ্ছে এসব বিষয়ে ভাবার সময় এখন নেই।সবার চোখ এড়িয়ে জমিদার দালানের পেছনে চলে আসলেন সানাউল মির্জা।কারো চোখে পড়েনি ভাগ্য ভালো।সবাই এখন সুজয়কে নিয়ে ব্যস্ত এই যা ভরসা।তিনি সাবধানে পা ফেলে পুকুরপাড়ের দিকে হাঁটতে লাগলেন।হাসিন বলেছিল,পুকুরপাড়ের দিকে বটগাছে ঘেরা ছোট্ট দালানের মতো খাপড়াগুলোর একটিতে শর্মিলা থাকে।কিন্তু এখানে তো অনেকগুলোই চোখে পড়ছে।সবগুলোই বেশ পুরানো।কয়েকটার ছাদ ভেঙে পড়ছে।এগুলো একসময় জমিদার বাড়ির লোকদের জন্য করা হয়েছিল।এখন লোকজনও নেই,যত্নও নেই।সানাউল মির্জা এতগুলো ছোট দালানের মাঝে কোনটায় শর্মিলা থাকে বুঝতে পারছেন না।একটি জায়গায় উনার চোখ পড়ল।যাওয়ার পথটা বেশ পরিষ্কার।মানুষের চলাচল আছে।সানাউল মির্জা সেই পথেই আন্দাজে পা বাড়ালেন।ভেতরে একটি দরজা দেখতে পেলেন।দরজায় তালা নেই।এই ঘরেই হয়তো শর্মিলা থাকে।তিনি ভেতরে একবার উঁকি দিলেন।কাউকে দেখতে পেলেন না।আস্তে করে দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুলে পড়লেন।ভেতরে তেমন কিছুই নেই।একটা পুরানো দিনের বড় পালঙ্ক পড়ে আছে,নোংরা বিছানা।তার পাশে পানি রাখার পাত্র।পাত্রের পাশেই একটা বাক্সে চোখ পড়ল সানাউল মির্জার।তিনি এগিয়ে গিয়ে বাক্সটা হাতে নিয়ে খুলতেই সানাউল মির্জার চোখ চানাবড়া।একটা আংটি পড়ে আছে।তবে দেখে সাধারণ কোনো আংটি মনে হচ্ছে না।বেশ দামি আংটি।সানাউল মির্জা ভাবছেন,শর্মিলা কাজের লোক হয়ে এত দামি আংটি কোথায় পেল?তিনি এবার ভালো করে খেয়াল করতেই চমকে উঠলেন।আংটির মাথায় খোদাই করা সিংহের চিহ্ন।কিন্তু জমিদার বর্মণ বলেছিলেন,এই আংটি শুধু জমিদার বংশের জন্যই বানানো হয়।চুরি করা অসম্ভব।তাহলে কি শর্মিলা জমিদার বংশের কেউ?কিন্তু শর্মিলা জমিদার বংশের কেউ হয়ে থাকলে এখানে কাজের লোক সেজে আছে কেন?সবকিছু কেমন যে ঝট পাকিয়ে যাচ্ছে সানাউল মির্জার।হঠাৎ কোথায় যেন কারো গলার আওয়াজ শুনতে পেলেন তিনি।সঙ্গে সঙ্গে সাবধান হয়ে গেলেন।

গলার আওয়াজ নিচ থেকেই আসছে মনে হচ্ছে সানাউল মির্জার।তাহলে কি নিচে কোনো সুরঙ্গ আছে?তিনি বাক্সের ভেতর আংটি রেখে দিয়ে তা পকেটে ঢুকিয়ে শব্দের উৎসের দিকে পা বাড়ালেন।একটু সামনে যেতেই একটা কাঠের দরজা খোলা দেখতে পেলেন।তিনি নিচে একবার উঁকি দিলেন।খুব একটা গভীর নয়।তবে দেখে মনে হচ্ছে,আশপাশে রাস্তা চলে গেছে দূরে কোথাও।তিনি টর্চের আলো কমিয়ে সাবধানে পা ফেলে নিচে নেমে পড়লেন।সানাউল মির্জার আন্দাজই ঠিক।বামদিকে সরু একটা রাস্তা অনেক দূর পর্যন্ত চলে গিয়েছে।তিনি বেশ সাবধানে এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলেন।টর্চের আলো নিভিয়ে অন্ধকারে আন্দাজে পা ফেলছেন।মাঝেমাঝে উপরে বাদুড়ের দেখাও মিলছে।তাহলে নিশ্চয় বাইরে বের হওয়ার রাস্তা আছে।একটু সামনে যেতেই ক্ষীণ আলোর দেখা পেলেন।তার মানে সূর্য ডুবে গেছে।এবার গলার আওয়াজ স্পষ্ট শুনতে পেলেন সানাউল মির্জা।কোনো মেয়ের গলা।সম্ভবত কাউকে ধমকে কথা বলছে।আর সামনে যাওয়া ঠিক হবেনা ভেবে তিনি দাঁড়িয়ে পড়লেন।খুব সাবধানে আড়াল থেকে ওইদিকে উঁকি দিতেই চমকে উঠলেন।শর্মিলা বিশুদার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।শর্মিলাকে কোনো বিষয় নিয়ে বেশ রেগে আছে মনে হচ্ছে।কান পেতে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করলেন সানাউল মির্জা।

-তোমার এত বড় সাহস হয় কি করে,আমার গলা চেপে ধরার,রেগে বলল শর্মিলা।

বিশুকে দেখে মনে হচ্ছে,শর্মিলার কথা শুনে সে বেশ ভয় পেয়েছে।বলল,তুমি আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছো।আমার তখন মাথা ঠিক ছিল না।

শর্মিলা এবার চিৎকার দিয়ে বলল,উফফ,কতবার এক কথা বলবো!আমি তোমার ছেলেকে মারিনি।তোমার ছেলে সামনে পড়ে গেলে আমি কি করবো?

বিশু কেঁদে বলল,শায়নকে না মেরে ছেড়ে দিলেও তো পারতে।

-চুপ,আর একটা কথাও বলবি না।তোর মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই।আর একটা কথা বললে তোকেও মেরে ফেলবো।এখন যা বলছি শোন।

বিশু চোখের পানি মুছে বলল,কি?

-এমনিতেই হীরে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য দেরি হয়ে গেছে।ওই শহর থেকে নতুন আসা লোকটাকেও সুবিধার মনে হচ্ছে না।আজকের ভেতরেই জমিদারকে মারতে হবে।তার সঙ্গে সুজয়।কি পারবে না?

বিশু মাথায় নেড়ে সায় দিলে বলল,কিন্তু গ্রামের কি হবে?মৃত্যু তো থামছে না।

শর্মিলা চেঁচিয়ে বলল,সে আমি কি করবো?দোষটা কি আমার?আমি শুধু জমিদারের বংশকে শেষ করতে চেয়েছিলাম।কিন্তু ওই হারামি হীরে চুরি করে মাঝখানে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।এখন চল,আসল কাজ করতে হবে।

সানাউল মির্জা আর দাঁড়িয়ে না থেকে উল্টোদিকে হাঁটা শুরু করলেন।উনার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরছে।জমিদার বংশের প্রতি শর্মিলার এত রাগ কেন?তাহলে শর্মিলাই সেই পিশাচ সাধক।কিন্তু কে এই শর্মিলা?আর আংটি শর্মিলার হলে জমিদার বাড়ির সাথে তার সম্পর্ক কি?অন্যদিকে শর্মিলা শুধু জমিদার বংশের ক্ষতি করতে চায়।কিন্তু মাঝে কেউ একজন এমন কিছু করে যার কারণে গ্রামের লোকদের মৃত্যু হতে শুরু করে।কিন্তু কে সেই লোক?

হঠাৎ সানাউল মির্জার হাতের ধাক্কায় একটা ছবি নিচে পড়ে যায়।ছবি হাতে নিতেই এবার আরও অবাক হওয়ার পালা সানাউল মির্জার।ছবিতে দাঁড়িয়ে আছেন জমিদার বর্মণ।সঙ্গে একটি মাঝবয়সী মেয়ে।সেই মেয়েটির পাশে বছর পাঁচের একটি মেয়ে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।মাঝবয়সী মেয়েটির দিকে চোখ পড়তেই কি যেন ভাবলেন সানাউল মির্জা।মুখ দিয়ে অস্ফুটভাবে বললেন,সর্বনাশ।যা করার এখনই করতে হবে।তিনি আর দেরি না করে একপ্রকার দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলেন বাইরে।

শর্মিলা কি সত্যিই জমিদার বংশের কেউ?আর যদি হয়েও থাকে,তাহলে নিজ বংশের মানুষদের প্রতি এত ক্ষোভ কেন?

………চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here