#ডাক্তার সাহেব পর্ব-৩২+৩৩
#শারমিন আঁচল নিপা
সকালে উঠার সাথে সাথেই মিহুর কল পেলাম। মিহুর কন্ঠটা ভাঙা শরীরটা বেশ দুর্বল মনে হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম মিহু হয়তো ঘুমের ট্যাবলেট বেশি খেয়েছে তাই তার এই বেহাল দশা ৷ সেজন্য কিছুটা ঝাড়ি দিয়ে বললাম
– ঘুমের ট্যাবলেট কী বেশি খেয়েছিস নাকি? এমন করছিস কেন? সুইসাইড করতে চেয়েছিলি নাকি? মতিগতি তো ভালো ঠেকছে না।
মিহুর রাগ আকাশম। বজ্রকন্ঠে বলে উঠল
– তোর নীল কী করেছে জানিস?
মনে মনে ভাবতে লাগলাম সুনীল ভূতটা আবার মিহুকে কিছু করল না তো? হয়তো সেই ভূতটা কিছু করেছে আর মিহু রেগে গেছে। এর মধ্যেই মিহু বলে উঠল
– কী রে চুপ কেন? কী করেছে শুনবি না?
বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম
– কী?
– আমাকে যে ট্যাবলেট দিয়েছে সেটা আমি রাতে খেয়েছিলাম। একটা খাওয়ার পর ঘুম আসতেছিলো না৷ তাই আরেকটা খেলাম। তারপর ও ঘুম আসলো না আবার খেলাম। মোট ৭,৮ টা খাওয়ার পর গা কেমন জানি গুলাচ্ছিল। মাথা ঘুরাচ্ছিল প্রচুর সে সাথে বমি তো আছেই। আমার অবস্থা খারাপ হওয়ার উপক্রম। এমন সময় মা আমার রুমে এসে ট্যাবলেটের প্যাকেটটা দেখে গালে ঠাস করে কয়েকটা থাপ্পর কষিয়ে দিল। সেই সাথে বলে উঠল
– কার সাথে আকাম করেছিস তুই? তলে তলে এত দূর? নাক টিপলে দুধ বের হবে আর সেই তুই কী না মানসম্মান ডুবাতে নেমে পড়েছিস।
মায়ের কথার মানে আমি বুঝতেছিলাম না৷ আমার গাল দুটো দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে চিৎকার দিয়ে বললাম।
– সামান্য ঘুমের ট্যাবলেটের জন্য আমাকে এভাবে মারছো? আর মুখে যা আসছে তাই বলছো? এটা কী বাংলা সিনেমা পেয়েছো যে বমি করলেই বাচ্চা হয়ে যাবে? আর আমি বাচ্চা কী করব সেই ভয়ে ঘুমের ঔষধ খেয়ে মরে যাব। এত নোংরা কথা বলতে তোমার মুখে বাঁধল না। আমার প্রতি তোমার এতটুকু বিশ্বাসও নেই।
মা আমার গালে আরও চার পাঁচটা কষিয়ে চড় দিলেন৷ সন্দেহের কড়া দাবানলে আমাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে চেপে ধরলেন। সেই সাথে সন্দেহের মাত্রারিক্ত নেশায় হয়তো ডুবে গিয়েছেন তাই সন্দেহের দৃষ্টিতেই তাকিয়ে বললেন
– আমাকে কী তোর বোকা মনে হয়? সাত পাঁচ যা বলবি বিশ্বাস করে নিব?
বলেই ইচ্চামতো আমাকে ঝাড়ু দিয়ে পিটাতে লাগল। আর বলতে লাগল ছেলেটা কে বলার জন্য। আমি মায়ের এমন আচরণের মানে বুঝতেছিলাম না। অগত্যা বুঝতে না পেরে মাকে শান্ত করে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম এভাবে মারছে কেন আর এত সন্দেহই বা করছে কেন? তারপর মা যা বলল তা শুনে আমার চোখ কপালে উঠল।
বলেই মিহু থেমে গেল। মিহুর নীরবতায় কাহিনির থ্রিলটা বুঝতে পারছিলাম না আমি। তাই দ্রূত গলায় বলললাম
– চুপ না থেকে বল কী হয়েছে? আর কেনই বা আন্টি তোকে এ সামান্য ব্যাপারে এত সন্দেহ করেছে এত মেরেছে? আন্টি কী বলেছে বল জলধি।
মিহু বজ্র কন্ঠে বলে উঠল
– তোর নীল আমাকে পিল দিয়েছে মানে গর্ভনিরোধক ট্যাবলেট। আর আমি বুঝতে না পেরে একসাথে এতগুলো খেয়ে ফেলেছিলাম। আমি তো ভেবেছিলাম ঘুমের ট্যাবলেট তাই একটা খাওয়ার পর যখন ঘুম আসছিল না তাই অনেকগুলো একসাথে খাই। যে কারণে আমার গা গুলিয়ে বমি চলে এসেছিল৷ আর মাও সেই ট্যাবলেট গুলো দেখে আমায় কড়া সন্দেহ করল। আমি তো পিলের প্যাকেট দেখেছি ফর্মেসীতে তবে ভেতরের পাতা দেখিনি। আর ভাইয়াও প্যাকেট ফেলে শুধু পাতাটা কাগজে দিয়ে দিয়েছিল। কী মাইর গুলাই না আমি খেলাম। এটা ভাইয়া একদম ঠিক করেনি। ইচ্ছা করেই এমন করেছে। এ দায় তোর আর ভাইয়ার।
মিহুর কথা শুনে হাসব নাকি মিহুর বেদনায় কাঁদব আমি বুঝতে পারছিলাম না। তবে হাসি চেপে রাখতে পারছিলাম না। বেশ জোরে সোরেই হেসে দিলাম। মিহু আমার হাসির শব্দে বেশ বিরক্তবোধ করল সে সাথে সন্দেহ নিয়ে বলে উঠল
– কিরে সিঁথি নীল ভাইয়ার সাথে কী তুই কিছু করেছিস?
– আসতাগফিরুল্লাহ। কী বলিস এগুলো।
– সন্দেহ হচ্ছে কট্টর। কারণ নীল ভাইয়া তো জানতেন না আমি ঘুমের ট্যাবলেট খাব তিনি জানতেন তুই খাবি৷ তাহলে তোকে এ ট্যাবলেট কেন দিল? নিশ্চয় কিছু করেছিস। লুকাবি না বল।
– তুই কী যা’ তা বলছিস মিহু। রাগ তুলবি না একদম। চরম রাগ উঠছে তোর কথায়।
আরও কিছু বলতে নিব এর মধ্যেই দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ পেলাম। রান্না ঘর থেকে মা বলে উঠলেন
– সিঁথি দেখতো দরজায় কে?
আমি ফোনটা রেখে দরজা খুললাম। নীল দাঁড়িয়ে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললাম
– নীল নাকি সুনীল কোনটা?
– বাহ! মিস জরিনা আজকে ভুল করার আগেই জিজ্ঞেস করে নিয়েছেন দেখা যায়।আমি সুনীল….। ভাইয়া আপনার জন্য এ কাগজটা পাঠিয়েছে।
এবার আমায় ঠেকায় কে। এটা আমার সিজোফ্রেনিয়া রোগ নাকি ভূত প্রমাণ করার এটাই সঠিক সময়। অনেকটা শক্তি নিয়ে এই সুনীলের কলার আমি চেপে ধরলাম। বেচারা কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি কলার ধরে ঘরের ভেতরে এনে অন্য একটা রুমে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম। ভেতর থেকে সুনীল দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলতে লাগল দরজা খোলার জন্য। চেঁচামেচিতে মা আমার কাছে এসে বলল
– কাকে আটকে রেখেছিস? নীলের কন্ঠের মতো মনে হচ্ছে।
বলেই মা দরজা খুলতে নিলে আমি মাকে আটকে দিয়ে বললাম
– চুপ করে বসো। ভূত আটকে রেখেছি এবার ভূতের ভাইকে আসতে বলব।
মা আমার কথার অর্থ বুঝতেছিল না। আমার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আমি মায়ের চাহনীতে তেমন কোনো ইয়াত্তা না দিয়ে সরাসরি নীলকে কল দিলাম। নীল কলটা ধরেই বলল
– এত সকালে কল দিয়েছো কেন? সারা রাত রোগী নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম ঘুমোতে পারিনি। এখন একটু ঘুমোতে দাও।
নীলের কথায় পাত্তা দিলাম না তেমন। অনেকটা কান্না গলায় বলতে লাগলাম
– মায়ের শরীর খারাপ তাড়াতাড়ি এসো।
বলেই কলটা কেটে দিলাম। এ কথা বলার কারণ হচ্ছে সে যেন দ্রূত আসে। কারণ সুনীলের কথা বললে আরও কয়েকটা কথা শুনিয়ে কলটা রেখে দিত। অপর দিকে মায়ের রাগী দৃষ্টি এখনও আমার দিকে।
– জলজ্যান্ত সুস্থ মানুষ তোর সামনে দাঁড়িয়ে তুই কাকে কল দিয়ে বললি আমি অসুস্থ আর আসার জন্য? সিঁথি ঠিক করে বল তুই ঠিক কী করছিস? তোর পাগলামি আমি ঝাঁটিয়ে বিদায় করব। আর নীলকে আটকে রেখেছিস কেন? দরজা খোল।
– মা তুমি শান্ত হয়ে বসো তো। একদম চুপ থাকো। ভেতরের ভূতটা দরজার কড়া নাড়তে নাড়তে যেমন চুপ হয়ে গেছে তুমিও হয়ে যাও। ভূতের ভাই আসলেই সব জানতে পারবে। এত ভাবতে তোমায় কে বলেছে।
– সিঁথি….
-মা….
রাগারাগীর ধাপটা আর বেশি দূর এগুতে পারল না নীলের আগমনে। মা নীলকে তার সামনে দেখে বিস্মিত হয়ে গেল। মায়ের চোখ ছানা বড়া। বিস্ময়ের রেশ নিয়েই নীলের দিকে তাকিয়ে বলল
– বাবা তুমি আমার সামনে তাহলে সিঁথি কাকে ঘরে আটকে রাখল? কাহিনি কী? বুঝতে পারছি না তো!
নীল একদম চুপ। নিস্তব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দড়িয়ার এ প্রান্তরে থেকে ওপারে না বুঝে চলে যাওয়ার পর মানুষ যখন নিস্তব হয়ে যায় নীলের অবস্থাটাও ঠিক এরকমই। নিস্তবতার রেশ কাটানোর আগেই আমি আটকে রাখা সুনীলকে দরজা খুলে কলার ধরে বের করে নীলের সামনে দাঁড় করালাম। একসাথে দুটো নীল সামনে দাঁড়ানো একটা সুনীল একটা অনীল। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে আর মা একবার অনীলের দিকে আরেকবার সুনীলের দিকে তাকিয়ে চোখ উল্টে ভূত ভূত বলে মেঝেতে পড়ে গেল।
#পর্ব-৩৩
ভাবান্তর ঘটার পূর্বেই আমরা তিনজনই মাকে ধরে বিছানায় শুয়ালাম। কাহিনীর রহস্য এখনও রয়ে গেছে। মাকে শুইয়ে সেটারেই উদঘাটন করার চেষ্টা করলাম৷ এবার নীলের দিকে তাকিয়ে বললাম
– তোমার মতো দেখতে এই সুনীলটা কে?
সুনীলের মুখটা ততক্ষণে চুপসে গেছে৷ বেচারা হয়তো ভাবতেও পারেনি এমন মসিবতে পড়বে। ভাবনার দূরগোড়া এত কঠিন অবকাশ নিবে সেটা হয়তো টের ও পায়নি। শুধু ঢুক গিলতে লাগল। নীল হালকা গলায় বলে উঠল
– আমার জমজ ভাই সুনীল। বিদেশে পড়াশোনা করে সেখানেই স্যাটেল। দেশে এসেছে কিছুদিন হলো। যেহেতু সুনীলের কথা কেউ জানত না তাই একটু মজা নিতে চেয়েছিলাম। মিহু ব্যাপারটা জানত তাই তোমাকে গোলক ধাঁধায় ফেলার জন্য ঐদিন ঐ কথা বলেছিল।
আমি আর সুনীল তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। কারণ তোমার বাবা আর আমার বাবা এর মধ্যে কথা বলে আমাদের কাবিনের তারিখ ধার্য করেছেন আগামি সপ্তাহে। আমি সবাইকে নিষেধ করেছিলাম তোমাকে বিষয়টা বলতে কারণ চেয়েছিলাম একটা বড় সারপ্রাইজ তোমাকে দিতে।
তাই সুনীলের সাহায্য নিই। সে বলল সে আমার জিন হয়ে তোমাকে বিভিন্ন সারপ্রাইজ দিবে। তারপর কাবিনের আগের দিন তোমাকে সে বলবে পরদিন তোমার আমার সাথে কাবিন। স্বাভাবিকভাবেই তুমি সেটা সহজে বিশ্বাস করবে না কিন্তু পরদিন তুমি লক্ষ্য করবে সত্যি সত্যিই তোমার কাবিন হয়েছে আমার সাথে। তখন তুমি সুনীলকে জিন ভাবা শুরু করবে আর সেটা নিয়েই তোমার সাথে মজা করব ভেবেছিলাম। কিন্তু তোমার মতো নাছোরবান্দা পাবলিক যে জিনকেও কলার ধরে আটকে রাখবে সেটা কে জানত?
অনীলের কথা শুনে কপালটা ভাঁজ করে বললাম
– ভাইয়া তো বলেছিল প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করে।
পাশ থেকে সুনীলের নম্র কন্ঠে উত্তর আসলো।
– কাহিনীর প্রয়োজনে একটু মিথ্যা বলেছিলাম। তবে আপনি সত্যিই পাগল একজন মহিলা। এভাবে কেউ কারও কলার চেপে ধরে৷
কপালের ভাঁজটা আরও প্রখর হলো। কন্ঠটা ভারী করে বললাম
– আমার সাথে মজা নেওয়া কী এত সহজ? দুজন মিলে আমাকে যে গোলক ধাঁধায় ফেলেছিলেন তার উচিত জবাব হয়েছে। কে বলেছে এমন করতে? এমনিতেই এক নীলের চিন্তায় মাথা পাগল হওয়ার উপক্রম তারপর জুটেছিল আরেক নীল। এত প্যারা নিতে পারব নাকি।
মা শুধু শুয়ে শুয়ে আমাদের কথা শুনছিল। ঘটনা বুঝতে মায়ের বাকি নেই। তবে মা লজ্জাও পাচ্ছে একটু। এমন একটা পরিস্থিতির শিকার হবে বুঝতে পারেননি তিনি। তবুও লজ্জা ভেঙে অনীল আর সুনীলকে বলল
– বাবারা যা হওয়ার হয়েছে। আমার ছেলে নেই বলে খুব মন খারাপ করেছিলাম এখন আল্লাহ আমাকে একসাথে দুটো ছেলে দিয়েছে। তোমরা বসো আমি পায়েস রান্না করে নিয়ে আসি।
বলেই মা রান্না ঘরের দিকে ছুট লাগালেন। এবার আমারও ভীষণ লজ্জা লাগছে। যতইহোক দেবরের কলার চেপে ধরাটা কোনো কম্যের কম্য না বরং অকম্য। সুনীল ভাইয়ার দিকে বেশ লজ্জা চোখে তাকিয়ে বললাম
– ভাইয়া দুঃখিত আমি বুঝতে পারিনি তাই এমনটা করে ফেলেছি। কলার চেপে ধরা উচিত হয়নি। আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
– থাক মিস জরিনা ভাবি অনেক হয়েছে। আপনার জন্য চিন্তা হচ্ছে না চিন্তা হচ্ছে আমার ভাইয়ের জন্য। বেচারা সারাজীবন কীভাবে কাটাবে সেই ভয়ে আছি।
কথার মানে বুঝতে খুব একটা সমস্যা হলো না। তবে উত্তর দিলাম না। চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। সুনীল ভাইকে বসতে দিয়ে নীলকে ইশারা করলাম আমার রুমে আসতে। নীল আমার ইশারা টের পেয়ে আস্তে করে আমার পিছু পিছু আমার রুমে চলে আসলো। রুমে আসতেই নীলের কলার চেপে ধরে বললাম
– আমি কী বাঘ নাকি ভাল্লুক যে তোমার ভাই ঐ কথা বলল?
নীল কলারে চেপে রাখা আমার দুটো হাত ধরে বলল
– তুমি বাঘ আর ভাল্লুকের চেয়েও ডেন্জারাস। আমার তো মনে হয় বাঘ ভাল্লুকও তোমাকে দেখে ভয় পাবে।
– ও তাই??
বলেই নীলের কলার চেপে নীলকে একটু ঝুঁকিয়ে নিজের কাছে এনে কাঁধে জোরগতিতে কামড় বসালাম। নীল আমাকে আরও জোরে চেপে ধরল। কানের কাছে এসে বলল
– আর গুণে গুণে চারটা দিন অপেক্ষা করো। একেবারে নিজের করে নিব। আগে কাবিন হবে পরে প্রোগ্রাম। কেন যে তুমি এত ছোট? আরেকটু বড় হলে কী হত?
– আরেকটু বড় হলে তোমার সাথে তো পাগলামি করতে পারতাম না। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসতে পারতাম না। আচ্ছা মিহুকে তুমি পিল দিয়েছিলে কেন?
– মজা করে দিয়েছিলাম। একটা খেলে তেমন কিছুই হবে না। আজকে বলেও দিতাম বিষয়টা।
– ও তো একটা না ৭,৮ টা খেয়েছে। আর এটা নিয়ে বড় একটা কাহিনিও হয়েছে, আন্টির ঝাঁটার পিটানিও খেয়েছে। কী যে করো না তুমি?
– তোমার মতো পাগল বউ যার কপালে জুটবে তার তো এমন হবেই। ভুলেও আমি সার্জারির ডাক্তার হব না। কারণ দেখা যাবে তোমার প্যারাতে রোগীর পেটে অপারেশন থিয়েটারে কাঁচি,ব্যান্ডেজ রেখে অপারেশন সাকসেসফুল করে ফেলব।
– তুমি একটু বেশি কথায় বলো সবসময়। মোটেও আমি এতটা পাগল না। তুমি কী চাও পাগলামি ছেড়ে দিব?
নীল আমার কপালে তার ঠোঁট আলতো ছু্ইয়ে দিয়ে বলল
– আমি চাই আমার পাগলি বুড়ি সারা জীবন পাগলামি করুক।
কারও গলার আওয়াজ কানে আসতেই দুজন দুদিকে ছিটকে পড়লাম। লক্ষ্য করলাম মা এসেছে। নীলকে ডাকছে পায়েস খেতে৷
//
শোঁ শোঁ বাতাস এসে শরীরে ঝাঁপটা দিচ্ছে। কপালের চুলগুলো অবাধে উড়ছে। আজকে কেন জানি ভীষণ ফুরফুরা লাগছে৷ দেখতে দেখতে চারটা দিন পার হয়ে গেল কীভাবে যেন। কোন ঘোরে চারটা দিন পার করলাম টের পাইনি একদম। কাল আমার কাবিন। মনের ভেতরটা কেমন জানি উথাল পাতাল করছে। ভালোবাসার মানুষটাকে আপন করে পাওয়ার মাঝে বড্ড আনন্দ। যে আনন্দের অনুভূতি প্রকাশ করা বড় দায়।
সারা রাত নীলের সাথে কথা বললাম। সংসার বুনার স্বপ্ন দেখলাম। কতই না মধুর সময়। ইশ সময়টা যদি কোনো ফ্রেমে বন্দি করা যেত কতই না ভালো হত। মনে মনে ভাবছিলাম কাল তো কবুল বলব। কবুল বলার অনুভূতিটা ঠিক কেমন! কবুল বলার সময় কী চোখ বন্ধ হয়ে যায় অনুভূতির দাবানলে নাকি চোখ খোলে কবুল বলতে হয়। কত উদ্ভট প্রশ্নই না মনে জাগছে। ভালোবাসা পূর্নতা পাবে ভেবেই যেন বুকের ভেতরটায় শীতলতা অনুভূত হচ্ছে। একটা বাজি যে আমাকে এত পূর্ণতা দিবে বুঝতে পারিনি। ভালোবাসার অনুভূতির শুরুটায় হয়েছিল নীলকে দিয়ে আর প্রাপ্তিও হবে তাকে দিয়ে। নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। ঘুম যেন চোখে আসছেই না। যতই চোখ বন্ধ করছি ততই যেন সব স্বপ্ন ঘিরে ধরছে। উফ এটা কেমন মিষ্টি যন্ত্রণা যে যন্ত্রণা উপভোগ করতেই ভীষণ ভালো লাগছে।
মিহুর রাগটাও এর মধ্যে মলিন হয়ে গেছে। তাকেও আসতে বলেছি কাল। যেহেতু প্রোগ্রাম পরে হবে তাই বাকিদের বলতে নিষেধ করা হয়েছে পরিবার থেকে।
\\
রান্না ঘর থেকে বাসন কোসনের আওয়াজ আসছিল টুংটাং। হয়তো সাজেদা খালা এসে বাসন কোসন ধুচ্ছে। আওয়াজ প্রখর হয়েও মৃদু হয়ে গেল। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলাম বেলা বাজে ১২ টা ৩০। রাতে ছটফট করতে করতে ঘুম হয়নি। ফজরের নামাজের পর দু চোখ লেগে এসেছিল। মা রান্না ঘর থেকে চেঁচিয়ে বলতে লাগল এ দিনও কেউ এত বেলা করে ঘুমায়। নানু মাকে থামিয়ে দিয়ে কী যেন বলছে৷ বাড়িটায় বেশ বিয়ে বাড়ি ভাব লাগছে৷
বাইরে থেকে আজানের ধ্বনি আসছে। চট জলধি উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলাম নীলের মেসেজ
“প্রিয়তম তিনটায় দেখা হচ্ছে। লাল শাড়ি পরে থেকো। চোখে মোটা করে কাজল আর ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক দিও। এখন আর কথা বলব না কবুল বলার পরেই কথা হবে।”
মেসেজ টা পড়ার পড় অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে। শোরগোলের শব্দ আসছে বাইরে থেকে। শোরগোলের কন্ঠের মালিক হলো মিহু। এসেই মা আর নানুর সাথে গল্পে মত্ত হয়ে গেছে৷ আমি আর সেদিকে না গিয়ে সরাসরি বাথরুমে ঢুকে পড়লাম গোসল করার জন্য। গোসল শেষ করে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালাম। চুল গুলো তোয়ালে দিয়ে আলতো করে মুছছিলাম। নিজের প্রতিচ্ছবিটাও আয়নাতে আজকে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে। মনে হচ্ছে এরপর থেকে আমার পেছনে নীল দাঁড়িয়ে থাকবে। আমার চুল মুছে দিবে। মাঝে মাঝে চুল গুলো ঘাড় থেকে সরিয়ে ঘাড়ে কামড় কষবে। কত শত চিন্তা করতে করতেই যেন আমি আয়ানার দিকে তাকিয়ে মজে গেলাম।
আচমকা একটা আওয়াজ কানে ধেয়ে আসতেই চমকে গেলাম। বুকের ভেতরটাও যেন ধুক করে উঠল।
চলবে?
(কপি করা নিষেধ)