কিয়ৎক্ষন আগে জায়ানের পরিবারের সদস্যদের সাথে পরিচয় হলো পদ্ম’র।এর মধ্যে তারা পদ্ম’র মতামত না নিয়েই পদ্ম’কে সাজাতে ব্যস্ত! পদ্ম বার বার বলে চলেছে
–“আপু,আন্টি আমাকে এভাবে সাজানো হচ্ছে কেন?

জান্নাত আর অর্পিতা যেন পদ্মর কথা শুনতেই পাচ্ছে না।তারা নিজেদের মতো করে সাজাতে ব্যস্ত।গারো লাল রঙের গাউন পড়িয়েছে পদ্ম’কে। তারপর মেকআপ করাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে অর্পিতা। পদ্মর কোমর ছাড়িয়ে লম্বা চুল গুলো বেনুনি করে দেয় জান্নাত। পদ্ম নিজ বাসা থেকে নরমাল কালো বোরখা সাথে ছয় পার্ট হিজাব,নরমাল বেল্টের জুতা পায়ে এসেছে। চুল গুলো হিজাব ধারা আবৃত থাকবে বলে চিরুনি পর্যন্ত করেনি। অবশ্য জায়ানদের বাসায় আসবে তাই জানতো না পদ্ম!

জায়ান পদ্ম’র ফেসবুক ফ্রেন্ড।দুই বছর হলো তাদের পরিচয়। এতো দিন শুধু মেসেজেই কথা বার্তা হতো।জায়ানের রিকোয়েস্টে আজকে প্রথমবারের মতো দেখা করতে আসে পদ্ম। কথা ছিল একটা রেস্তোরাঁয় দেখা করবে,হলো ও তাই। কিন্তু জায়ান রেস্তোরাঁয় এসে বললো, তার আম্মু জান্নাত খুব দেখতে চায় পদ্ম কে। এবং কি জান্নাত অসুস্থ! তাই তো পদ্ম আর দ্বিরুক্তি করতে পারেনি।জায়ানের সাথে প্রথমবারের মতো পা রাখে জায়ানদের বাসায়।
পদ্ম এ বাসায় এসে খুব চমকায়! এই প্রথম দেখা জায়ানের পরিবারের সদস্যদের সাথে অথচ তাদের ব্যাবহারে কেউ বলবে না সেটা। পদ্ম আসতে না আসতেই নিজ হাতে খাইয়ে দেয় জান্নাত।যখন শুনেছে পদ্ম এক পিস ব্রেড খেয়ে এসেছে। এছাড়াও জায়ানের আব্বু,বড় আপু,বড় আম্মু বাসার অন্যরা ও খুব আদর পদ্ম কে।

পদ্ম’কে সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসে জান্নাত। সবাই মুগ্ধ হয়ে দেখে, পদ্ম এখনো অবধি বুঝতে পারছে না তার সাথে কি হতে চলেছে। জায়ান মুচকি হেসে মাথা চুলকায় পদ্ম কে দেখে, যেভাবে ছেলেরা একধরনের ভাব নিয়ে থাকে।তার পরনেও গারো লাল রঙের পাঞ্জাবি! সবার অগোচরে পদ্ম ইঙ্গিত করে বুঝায় কি হচ্ছে এখানে?জায়ান আশস্ত করে পদ্ম কে।যে তেমন কিছু নয়, তবে একটা কিছু আছে! পদ্ম কে নিয়ে সোফায় বসায় জান্নাত, সবার মুখে হাসির রেখা ফুটে আছে।ইমান হোসেন বিভিন্ন তথ্য জিজ্ঞাসা করলেন পদ্ম’কে। পদ্ম’র বাবার নাম কি তিনি কি করেন না করেন এগুলো তারপর নিজেদের মধ্যে কথা বার্তা চললো কিছু সময়।এক পর্যায়ে পদ্ম কে একটা পেপারে সাইন করতে বলা হলো! পদ্ম ফিচেল গলায় বললো,
–“কিসের পেপার এটা?

ইমান হোসেন ক্ষীণ স্বরে বললো,
–“আগে স‌ই টা করো তারপর বলছি।

পদ্ম’র মন খচখচ করছে, মনে হচ্ছে এ কোন ঝরের পূর্বাভাস! জান্নাত আবারো তারা দিয়ে বললো,
–“সাইন টা করে দাও মা।

পদ্ম কি করবে ভেবে পায় না, বড়দের মুখের উপর কিছু বলতে ও পারছে না। তবুও সাহস যুগিয়ে বললো,
–“আমি একটু পেপার টা পড়ে নেই আন্টি?

ইমান হোসেন বললো, ঠিক আছে তুমি যখন আমাদের বিশ্বাস করতে পারছো না তখন আর কি করা। পদ্ম বললো,
–“না না আংকেল আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি তা বলতে চাইনি। আচ্ছা আমি সাইন করে দিচ্ছি।

তারপর আর দ্বিরুক্তি না করে সাইন করে দেয় পদ্ম! তারপর জায়ান সাইন করে!একে একে আরো তিন জন সাইন করে। সবশেষে মিষ্টি আনা হয়, সবাই মিষ্টি মুখ করে। পদ্ম কিছুই বুঝতে পারছে না। এদিকে বাসায় ফিরতে হবে বলতে ও পারছে না কাউকে।জায়ান কে যে বলবে তার ও উপায় নেই, সবাই কি না কি ভাবে।
সন্ধ্যা হয়ে আসছে, বাসায় কি জবাব দিবে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায় পদ্ম’র!এর আগে এভাবে বাহিরে কখনো থাকেনি পদ্ম।ঢাকা শহরে পড়াশোনা করার সুবাদে মামার বাসায় থাকে পদ্ম। একটু পান থেকে চুন খসলেই মামি বিচারের ঝুড়ি নিয়ে বসে। সেখানে ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যদি এতো সময় নেয় তাহলে কি করবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতোক্ষণে হয়তো পদ্মর আম্মু কে জানানো ও হয়ে গেছে।
না এভাবে আর বসে থাকা যায় না,পদ্ম জান্নাত কে বললো,
–“আন্টি আমাকে এবার বাসায় যেতে হবে।ড্রেস টা চেঞ্জ করে নেই?
–“সেকি! এই সময় কোথায় যাবে তুমি? তুমি আজকে এখানেই থাকবে।

পদ্ম বিদ্যুৎ এর ন্যায় চমকায়!ওর মামি কোরক্ষেত্র বাঁধিয়ে ফেলবে আজকে যদি পদ্ম বাসায় না ফিরে। তাই জান্নাত কে বললো,
–“আন্টি মামি খুব দুশ্চিন্তা করবে, হয়তো এর মধ্যে করছেও। আন্টি আমি কিছুতেই এখানে থাকতে পারবো না।
–“আমি তোমার মামি কে কল করে বুঝিয়ে বলবো তুমি ফোন নাম্বার টা দাও।

পদ্ম রিতীমতো ঘামছে, মাথার উপরে সিলিং ফ্যান থাকা সত্ত্বেও।মামি যে কি বিস্রি গালিগালাজ করবে তা ভেবে কান্না পাচ্ছে পদ্মর।জায়ানের দিকে লক্ষ্য করে দেখে ফাজিল টা মিটি মিটি হাসছে। পদ্ম’র ইচ্ছে করছে মাথা ফাটিয়ে দিতে!
এমন পরিবার জীবনেও দেখেনি পদ্ম। ছেলের মেয়ে বন্ধু কে এভাবে কেউ আদর স্নেহ করে! আমার আম্মু হলে তো বাসায় ই ডুকতে দিত না।আর ভাইয়ের অবস্থা যে কি করতো আল্লাহ মালুম। এসব মনে মনে জপে পদ্ম।
তখন অনিতা হন্তদন্ত হয়ে বাসায় এসে, আকস্মিক জড়িয়ে ধরে পদ্ম কে!জায়ানের ছোট বোন অনিতা অভিমান করে বলে,আমাকে ছাড়াই তোমরা বিয়ে শেরে ফেললে! তোমরা খুব পচা।
পদ্ম কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো,
–“কার বিয়ের কথা বলছো তুমি?

অনিতা সরল গলায় বললো,
–“ভাবিমনি তোমার আর ভাইয়ার বিয়ের কথা বলছি আমি! তুমি এতো অবাক হলে কেন বলো তো?

পদ্ম কিছু বলতে পারলো না,সব কিছু কেমন ঝাপসা হয়ে আসলো। ফলস্বরূপ জ্ঞান হারিয়ে পরে গেল।জায়ান দৌড়ে এসে পদ্মর গালে হাত রেখে ডাকতে লাগলো। জান্নাত ধমকে ওঠে অনিতা কে। অনিতা বেচারি কিছুই বুঝতে পারলো না। হঠাৎ ভাইয়ের বিয়ের কথা শুনে কুমিল্লা থেকে র‌ওনা হয়ে আসে, ফলস্বরূপ মাত্র‌ই এসে পৌঁছায়। বেচারি কি আর জানতো যে বিয়ের পাত্রীই জানে না তার বিয়ে হয়ে গেছে!

রাত বারোটা বেজে দশ।
কিয়ৎক্ষন আগে জ্ঞান ফিরলো পদ্ম’র।জায়ান পাশেই বসে আছে। চোখের জলে নাকের জলে কেঁদে কেটে একাকার করে চলেছে পদ্ম। বাসায় কি জবাব দিবে সে? এই খবর জানতে পারলে তার আব্বু যে তেজ্য কন্যা করবে এর কোন সন্দেহ নেই। আব্বু আম্মুর রাগি মাখা মুখমন্ডল চোখের পর্দায় ভেসে ওঠে পদ্মর। তাঁতে করে আর ডুকরে কেঁদে ওঠে সে।এতো সময় জান্নাত অনেক বুঝানো চেষ্টা করেছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি। খাবার এনে খাইয়ে দিতেও চেয়েছিল কিন্তু পদ্ম এক ফোঁটা পানিও খায়নি।
পদ্ম জানতো জায়ান তাকে পছন্দ করে, কিন্তু এতো বড় একটা দুঃসাহসী কাজ করে বসবে তা স্বপ্নেও ভাবেনি।আর ওর পরিবারের কথা কি বলবো, আধুনিক পরিবার হলে যা হয় আরকি।তার উপর একমাত্র ছেলের আবদার রাখতে তারা ও এরকম একটা কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়। পদ্ম জায়ানের ব্যাপারে কিছুটা দুর্বল হলেও কোন দিন বুঝতে দেয়নি জায়ান কে।দিবেই বা কি করে, পদ্ম’র জন্য পাত্র খোঁজা হচ্ছে।জায়ান পড়াশোনা করে তার কথা তো আর বলতে পারবে না তাই পরিবারের ঠিক করা পাত্র কেই বিয়ে করে নিতে হবে। তাই এই চিন্তা ভাবনা অনেক দূরের।
পদ্ম পারছে না ছুটে বেরিয়ে যায় এ বাসা থেকে শুধু রাত বলে পারছে না।বার বার নিজের বাবার কথা মনে পড়ছে, এরকম একটা খবর তার কানে পৌছালে ঠিক তিনি হার্ট অ্যাটাক করবে।ইনফেক্ট কোন বাবাই এটা মেনে নিতে পারবে না।

পদ্ম বাসায় থেকে যে সাদা মাটা থ্রিপিস পরে এসেছিল, সেই গুলো আবার পরে নিয়েছে সাথে করে তো ওরনা নিয়ে আসে নি তাই ছয় পার্ট হিজাবটা পরেছে।জায়ান কে এই মুহূর্তে একদম সহ্য করতে পারছে না, কথা গুলো ও যেন ঘৃণা লাগছে।১৪৮
আইনত ভাবে বিয়ে হলেও ইসলামের দৃষ্টিকোণ মোতাবেক এখনো তাদের বিয়ে হয়নি তাই জায়ান দূরত্ব বজায় রেখেছে। তাছাড়া অন্য কোন সিনক্রিয়েট চাইছে না জায়ান। এরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে তা পূর্বেই জানা আছে। তবে ভরসা আছে পদ্ম কে ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারবে।

________

ফজরের আযানের ধ্বনি শুনে পদ্মর ঘুম ভেঙ্গে যায়। নড়েচড়ে বসতেই,দেখলো জায়ান তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে!দু’জনেই দু’জনের কাঁধে মাথা রেখে সারা রাত পার করেছে। পদ্ম’র ইচ্ছে হলো জায়ানের গাল দুটো ছুয়ে দিতে! পরক্ষনেই মনে পড়লো গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা। তাই রাগে রিরি করে ওঠে শরীর। দ্রুত নেমে আসে খাট থেকে কাঁদতে কাঁদতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ে বলতে পারে না। হঠাৎ হেলান দেওয়া মানুষ টা সরে যেতে ডুলে পরে যায় জায়ান ফলস্বরূপ ঘুম ভেঙ্গে যায়। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখে পদ্ম কোথাও নেই। পদ্ম কে খুঁজতে রুমের বাহিরে যেই যাবে তখন দেখলো বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসছে পদ্ম। এসে বললো,
–“জায়নামাজ টা দয়া করে দিলে উপকৃত হবো।
–“এক্ষুনি দিচ্ছি।

তারপর জায়ান জায়নামাজ এনে কেবলা মুখি করে বিছিয়ে দেয়।

সাথে জায়ান ও পড়ে।
পদ্ম নামাজ শেষ করে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। ভোরের আলো ফুটতে আর বেশি সময় নেই। পদ্ম আলো ফুটার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে,আলো ফুটতেই বেড়িয়ে পড়বে এই কীট থেকে!

#চলবে… ইনশা আল্লাহ।

#জুনিয়র_পদ্ম
#সূচনা পর্ব
#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here