#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৫
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
বেলা এগারোটা তেরো বাজে,ঘুম ঘুম চোখে শিড়ী দিয়ে নামছে জেসি,নেমে আসে পাশে তাকিয়ে দেখে লোকজন ঘর সাজাতে ব্যস্ত!এভাবে হঠাৎ করে কেন ঘর সাজাচ্ছে? জেসি কিছুই বুঝতে পারলো না। কিচেনে ও দুই জন মহিলা রান্না বান্না করতে ব্যস্ত! রফিক সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছে, সেখানে এগিয়ে গিয়ে জেসি জিজ্ঞাসা করলো,
–“বাপি বাসায় আজকে কিছু আছে নাকি? এতো আয়োজন কিসের জন্য?
রফিক পত্রিকার পাতা উল্টাতে উল্টাতে বললো,
–“ডাক্তার ছেলেটা কে আজকে আসতে বলেছি।
জেসি সোফায় বসে কুশন খুঁটতে খুঁটতে ভাবছে, আমি তো কাউকে বলিনি ঐ ছেলেকে আসার ব্যাপারে! তাহলে এরা কিভাবে জানলো?
তখন জারা অনেক গুলো শাড়ি নিয়ে এসে বললো,
–“বাপি দেখ তো কোন শাড়িটা পরবো আমি?
জেসি বললো,
–“শাড়ি পরে কোথায় যাবি তুই?
জারা লাজুক হেসে বললো,
–“কোথায় যাবো? আমি তো আজকে বাড়িতেই থাকবো।ডাক্তার মশাই আসবে আমাকে দেখতে!বাপি বলো না কোন শাড়িটা পরলে ডাক্তার মশাই আমাকে বেশি পছন্দ করবে?
জারার কথা শুনে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় জেসি।সে ভাবতেই পারেনি এমনটা,জারা যে সত্যি সত্যি বিয়ে করার জন্য এতো লাফাবে। অথচ কাল রাতে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বিয়ে করবে। এখন নিজের সাথে নিজের রাগ হচ্ছে আগে কেন রাজি হলো না সে? এখন সবাই কে কিভাবে বুঝাবে?এই মেয়ে বিয়ে করবে বলে যেভাবে লাফাচ্ছে।
এতোক্ষণে লোকগুলো বাড়িটা সুন্দর করে গুছিয়ে, সাজিয়ে চলে গেছে।তাই পদ্ম নিচে নেমে আসে। এসে জারা কে বললো,
–“জারা তুমি সবুজ রঙের শাড়িটা পরো। তোমাকে খুব মানাবে এই রঙটাতে।জেসি আপু আমি ঠিক বলেছি না?
জেসি আমতা আমতা করে বললো,
–“ওর কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?পুচকি একটা মেয়ে,এখনি বিয়ের জন্য ধেই ধেই করে নাচছে। পদ্ম তুমি ও কি ওর সাথে পাগল হলে?
–“জেসি আপু তুমি বুঝতে পারছ না এরকম ডাক্তার তো সচরাচর পাওয়া যায় না।
–“আমি বুঝতে পারছি না তোমরা ডাক্তারের জন্য এভাবে পাগল হয়েছ কেন? দেশে অন্যান্য ভালো পেশার মানুষ নেই নাকি? এর থেকে কতো ভালো পেশার মানুষ আছে।
জারা বাচ্চাদের মত বায়না ধরে বললো,
–“আপু আমি এই ডাক্তার কেই বিয়ে করবো।
জেসি ধমকের সুরে বললো,
–“বেয়াদব মেয়ে মারবো এক চর, তোর বড় বোন বিয়ে করেছে?যে তুই এভাবে ধেই ধেই করে নাচছিস?
–“তুমি কি বিয়ে করবে নাকি?
–“অবশ্যই করবো!
জেসি মুখ ফসকে বলে ফেলে কথাটা। সবাই বিষ্ময় নিয়ে তাকায় জেসির দিকে। জেসি করুন চোখে তাকায় সবার পানে। রফিক হাসতে হাসতে বললো,
–“এই না হলে আমার মেয়ে,সাবাস বেটি।
জায়ান আর ড্রাইবার বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে ডুকে বাসায়। রফিক কাছে গিয়ে বললো,
–“জায়ান মিষ্টি মনে করে এনেছো তো?
–“জ্বি আংকেল এনেছি।
তারপর জারা কে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“জারা তুমি এখনে দারিয়ে আছো কেন?রুপচর্যা শুরু করে দাও,ডাক্তার যেন এক দেখাতেই পছন্দ করে নেয়।
জেসি কোমরে হাত রেখে বললো জায়ান??
জারা কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী করে বললো,
–“ভাইয়া ডাক্তার কে আমার আর পাওয়া হবে না এ জীবনে।
–“কেন কেন?
–“আপুই নাকি ডাক্তার কে বিয়ে করবে।
জায়ান বাজারের ব্যাগ রেখে এসে বললো,
–“থাক দুঃখ করো না, তোমার বোনের আগে বিয়ে দেওয়া উচিৎ বুঝলে দিন দিন তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছে।ওর বিয়ে দিয়ে তোমার জন্য কিউট দেখে একটা বর খুঁজে আনবো কেমন?
জেসি বললো,
–“জায়ান ভালো হচ্ছে না কিন্তু, আমাকে কোন দিক থেকে তোমার বুড়ি মনে হয়?
সবাই হাসতে হাসতে শেষ এদের কথাপোকথনে।
________
যথা সময়ে পাত্র পক্ষ দেখতে আসলো জেসি কে। পদ্ম খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দেয় জেসি কে।জারা বোন কে নিয়ে আসে তাদের সামনে। একপর্যায়ে জেসি পাত্র কে দেখে চোখ গুলো বেশ বড় করে তাকায়। কারণ পাত্র হচ্ছে ঢাকা মেডিকেলের ডাক্তার জিসান!জায়ান কে ঘিরে যার সাথে ঝগড়া করে জেসি।
জেসির বিষ্ময় ভরা মুখশ্রী দেখে মুচকি হাসে জিসান। তারপর ভ্রু জোড়া নারিয়ে বোঝায়, কেমন চমক দিলাম বলেন?
অসহায় জেসি সকলের সামনে কিছু বলতে ও পারে না সহিতেও পারে না। জিসানের মা বললো,
–“ভাই আমাদের তো মেয়ে পছন্দ হয়েছে। আপনি যদি অনুমতি দিন তাহলে আমি ওকে আজকেই রিং পড়িয়ে যেতে চাই!
রফিক খুশি মনে সম্মতি দিয়ে দিল। তারপর তিনি ও জিসান কে রিং পড়িয়ে দিলেন। বিয়ের তারিখ ঠিক করা হলো দুই সপ্তাহ পর কারণ জিসান ছুটির জন্য আবেদন করেছে,এর মধ্যে আশা করা যায় আবেদন মঞ্জুর করা হবে। সবশেষে দু’জনকে আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয়। রফিক জেসি কে বললো তার রুমে জিসান কে নিয়ে যেতে।জেসি বাদ্য মেয়ের মত তাই করে।
রুমে গিয়ে জেসি মাথা নিচু করে চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে, এই মুহূর্তে সব লজ্জা গুলো যেন ঘিরে আছে তাকে। জিসান ঘুরে ঘুরে রুমটা এক পলক দেখে নেয়। তারপর বলে,
–“কি বসতে বলবে না?
জেসি কোনরকম বললো,জ্বি বসুন।
জিসান বসতে বসতে বললো,
–“আমি কিন্তু এখন থেকেই তোমাকে তুমি করে বলবো। আমার এতো ঘুরিয়ে কথা বলতে ভালো লাগে না।সব কথা সোজা সাপ্টা । তুমিও বসো?
–“না ঠিক আছে।
–“বসতে বলছি।
হঠাৎ উচ্চ কন্ঠস্বর শুনে বরকে যায় জেসি, সাথে সাথে এক পাশে বসে পরলো।জেসির ভিতু মুখশ্রী দেখে বিস্তর হাসে জিসান।যার কারণে তাকিয়ে থাকে জেসি। জিসান হাসির রেশ ধরেই বললো,
–“সরি একটু ফান করলাম, কিছু মনে করো না যেন। তোমার এই ভিতু মুখশ্রী টা দেখতে আমার সেই লাগে। বিয়ের পর তোমাকে এভাবেই চমকে দিব, তখন আবার রাগ করে বাপের বাড়ি আসা চলবে না কিন্তু।
জেসি চুপটি করে শুনেই যাচ্ছে, লোকটার কথা বলার ধরন খুব সুন্দর।তাই যেন শুনতেই ইচ্ছে করছে।
জিসান আবার বললো,
–“তো তোমাদের বিজনেস কেমন চলছে?কয়েক বছর হলো তুমি নাকি জয়েন করেছো ?
–“জ্বি ভালো।
–“তো বিয়ের পর প্লান কি?
–“কিসের প্লান?
–“এই যে সংসার তার উপর বাবার বিজনেস। কোন টা রেখে কোনটা সামলাবে? দুটো তে তো হিমসিম খেতে হবে।পারবে তো সামলাতে? অবশ্য তুমি চাইলে বিজনেস ছেড়ে দিতে পারো, অবশ্যই আমি ফোর্স করছি না কিন্তু।
–“আমি দুইটাই কনটিনিউ করতে চাই বাকি টা আল্লাহ তা’আলা ভালো জানেন। আমি থাকলে বাপির কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়।তাই আফিস করতে চাই আমি। এতে আপনার ফ্যামিলির কোন প্রবলেম হবে না তো?
–“অবশ্যই না। তুমি নিশ্চয় জানো না আমার মা একজন কলেজের শিক্ষিকা আমার বোন কিছুদিন পর ডাক্তার হবে ইনশা আল্লাহ। সেখানে তোমার কাজ টা অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে আমি কথা দিচ্ছি।
এরকম দুজনের মাঝে অনেক রকম কথা আদান প্রদান হয়। জিসান রা মাগরিব এর আযানের পূর্বেই চলে যায়। বাসায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায় যেন। রফিক ঠিক করেন এই খুশিতে গরিব মিশকিন দের এক বেলা খাবার এবং পোশাক বিতরণ করবেন।আর জায়ান পদ্ম’কে পুরষ্কার হিসেবে রাঙামাটি হানিমুনে যাওয়ার সমস্ত বন্দোবস্ত করে দেন এবং আগামীকাল ই রওনা হতে হবে তাদের।যেন জেসির বিয়ের আগেই ফিরে আসতে পারে তারা। পদ্ম খুব খুশি এই প্রথম সে এতো দূরে যেতে পারবে, তার উপর রাঙামাটি ঝুলন্ত ব্রিজে যাওয়ার খুব ইচ্ছে পদ্ম’র। যেখানে সিকান্দার বক্স এখন রাঙামাটি নাটকটা করা হয়েছে।
জারা কে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয়,ডায়মন্ড ইয়ারিং।
এর মধ্যে রফিক নিমন্ত্রণ কার্ড তৈরি করার জন্য অর্ডার দিয়ে দিয়েছেন।
জাহানারা আহসান বাড়িতে যেন খুশির আমেজ বিরাজ করছে চারিদিকে। রফিক তার মৃত স্ত্রী জাহানারা কে স্মরন করে চোখের পানি ফেলে বলে আজ জাহানারা বেঁচে থাকলে কতো খুশি হতো। সাথে জেসি জারা ও কেঁদে কেটে একাকার। মায়ের আদর পায়নি দুই বোন, একটা আফসোস সারাজীবনের জন্য তাদের রয়ে যাবে।
_______
জেসি বারান্দায় দাঁড়িয়ে কপির মগে চুমুক দিতে দিতে জিসান এর কথা ভাবছে। তখন ফোনে রিং টোন বেজে ওঠে। বারান্দা থেকে রুমে এসে মগটা রাখতে রাখতে কল কেটে যায়।জেসি বারান্দায় আবার পুনরায় ফিরে যেতে নিলে আবার কল বেজে ওঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার,কল রিসিভ করবে নাকি ভাবছে। তারপর রিসিভ করে নেয়।ওপাস থেকে কেউ কথা বলছে না দেখে জেসি রেগে গিয়ে বললো,
–“কথা না বলার ইচ্ছা না থাকলে কল করেন কেন?যত্তোসব।
তখন ওপাশ থেকে সালাম দেয়,
–“আসসালামু আলাইকুম।
জেসির কন্ঠস্বর চিনতে ভুল হলো না। কিছু সময় চুপ থেকে জবাব দেয়,
–“ওয়ালাইকুমুস সালাম।
#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।