#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–১৩
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
জান্নাত পদ্মর মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“আল্লাহ তা’আলার কাছে অনেক শুকরিয়া তোকে বউমা হিসেবে পেয়ে।
পদ্ম জান্নাত কে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আল্লাহ তা’আলা আমাকেও আরেকটা আম্মু দিয়েছে,তাই তার কাছে হাজারো শুকরিয়া।
জান্নাত পদ্মর কপালে চুমু এঁকে দেয়, এতে পদ্ম পরম আবেশে চোখ বন্ধ করে বলে,
–“আচ্ছা আম্মু আমি যখন তোমার ছেলে কে ডিবোর্স পেপার পাঠিয়েছি, তখন আমার উপর রাগ হয়নি তোমাদের? তোমার ছেলে তো ধরে বসে আছে তাকে ডিবোর্স দিয়ে আমি আরেকটা বিয়ে করেছি।
জান্নাত পদ্মর চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,
–“প্রথমে খুব রাগ হয়েছিলাম তোর প্রতি, তার উপর জায়ানের অবস্থা দেখে খুব কষ্ট হতো। ছেলেটা আমার এমনিতেই রাতে ঘুম আসে না এর পরে তো একদমই ঘুম চলে যায়। শুধু বলতো আম্মু আমি চোখ বন্ধ করলেই উনাকে দেখতে পাই, উনি কেন এতো বড় শাস্তি দিলেন আমাকে?এ ছাড়া অন্য যেকোনো শাস্তি দিতে পারতেন তো। আম্মু জানো আমার না একদমই খেতে ইচ্ছে করে না। কিছুই ভালো লাগে না।সব কিছু কেমন অসহ্য লাগে।
তখন খুব বকতাম তোকে, তোর কারনেই তো আমার ছেলের এমন অবস্থা। তারপর যখন ধীরে ধীরে জায়ান স্বাভাবিক হয়ে উঠে তখন ভাবলাম আমাদের হয়তো ভুল ছিল, আমাদের উচিৎ ছিল না,তোর মতামত না নিয়ে এভাবে বিয়ে দেওয়া। তাছাড়া এর দুই বছর পর তুই আমার যোগাযোগ করলি, এবং তোর সমস্যার কথা জানালি তখন তোর উপর থেকে সব রাগ চলে যায়।
–“আমার আব্বু জানলে আমাকে কখনো মাফ করতো না জানো। কিন্তু দেখ এখন আব্বু আম্মু সবাই কতো খুশি।
–“হা রে বুঝতে পারছি,কোন বাবা মা ই এটা মেনে নিবেন না। এগুলো বলে আমায় আর লজ্জা দিস না।
–“ইমান চাচা আর ইরার সাহায্য তেই আমি ডিবোর্স পেপার পাঠাতে পেরেছি না হয় এত বড় একটা কাজ আমি একা কিছুতেই করতে পারতাম না।
জান্নাত চমকে উঠে বললো,
–“কি বলছিস পদ্ম?ইমান ভাই আর ইরা তোকে সাহায্য করেছে! এটা কিভাবে সম্ভব?তারা নিজেরাই তো বলেছিল যে তোর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে! কিন্তু তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে উনারা জানতেন তোর কোন বিয়ে হয়নি। তাছাড়া এটাও কখনো বলেনি যে উনারা তোকে সাহায্য করেছেন।
–“কিন্তু আম্মু চাচা কেনো এরকমটা বললেন যে আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এরকম কোন কথা তো উনাদের সাথে হয়নি আমার। আচ্ছা আম্মু ইরা কোথায়? আমাদের বিয়েতে ওকে তো দেখলাম না, ওকে আসেনি তাহলে।
–“আচ্ছা আমি কি একবার ভাইজান কে জিজ্ঞাসা করে দেখব? উনি কেন এরকমটা বললেন?
–“না আম্মু থাক, এতে যদি পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাহলে আমার একদম ভালো লাগছে না, তোমরা কত সুন্দর মিলেমিশে এখনো থাকো। এটা না হয় অজানাই থাক।
–“আচ্ছা ঠিক আছে, তুই এবার নাস্তা করে নে কত বেলা হয়েছে এখনো কিছু খাস নি। মাথা ব্যথা কমেছে?
–“এখনো কিছুটা হয়ে গেছে, ভাবছি আগে শাওয়ার নিব তারপর খাব। তোমরা সবাই খেয়েছ? অনিতা কোথায় আম্মু?
–“ওর কথা আর বলিস না এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।এই মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গেলে কি যে অবস্থা হবে আল্লাহ তালাই জানেন, ঝাটার বাড়ি কপালে আছে দেখে নিস তুই!
–“হা হা হা,,, আমার আম্মু ও এই কথা বলতো আমাকে। কিন্তু দেখ হলো তার উল্টো।
–“তাই না?
–“হুম তাই তো।
_______
পদ্ম শাওয়ার নিয়ে এসে ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়ে চুলগুলো শুকিয়ে নিল, তারপর ফোন হাতে নিয়ে জায়ান কে কল করে। কিন্তু জায়ানের ফোন বন্ধ বলছে।তাই ফোন রেখে অনিতা কে ডেকে নিয়ে একসাথে নাস্তা খেয়ে নিল।
এমনি করে দিন অতিবাহিত হতে লাগলো, কিন্তু জায়ান পদ্মর সাথে কোন কথা বলে না। জান্নাতের সাথে একটু কথা বলে আবার ফোন বন্ধ করে রাখে। এভাবে এক সপ্তাহ কেটে যায়। জায়ান কোন কথা বলে না, পদ্ম’র খুব খারাপ লাগে।তাই অনিতা কে সাথে নিয়ে রওনা হয় ঢাকায়।
জায়ান মাত্র ফিরেছে বাসায়, মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে তারপর এসেছে বাসায়। কলেজ শেষে বন্ধুর বাসায় ইনভাইট ছিল সেই কারণে বাসায় ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এশেই বাথরুমে যায় ফ্রেস হতে, ফ্রেশ হয়ে এসে সবুজ রঙের টি-শার্ট পরে গায়ে দেয়। তারপর দেয়ালের দিকে নজর পরলো, দেয়ালে থাকা দৃশ্যের পেন্টিং টা বাঁকা হয়ে আছে তাই সেখানে গিয়ে পেন্টিং টা সোজা করে দিল। তখন পিছন থেকে দুটো হাত আষ্টেপিষ্টে জরিয়ে ধরে জায়ান কে! হঠাৎ ঘটনার আকস্মিকতায় বরকে যায় জায়ান।হাত দুটোর দিকে খেয়াল করতে, মালিক কে চিনতে বেশি সময় লাগলো না। ফলস্বরূপ মুচকি হাসি দিয়ে আবার মুখ গোমরা করে ফেলে। পদ্ম করুন কন্ঠে বললো,
–“আমাকে একদম ভুলে গেছেন আপনি মি.নির্ঘুম? একটা কল দিলেন না এবং আমার টাও রিসিভ করলেন না।
জায়ান পদ্মর হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অভিমান ভরা কন্ঠে বললো,
–“তাতে তো আপনার কিছু যায় আসে না তাই না। আপনি তো এখনো আপনার প্রাক্তন স্বামীকে ভালোবাসেন, তার সাথে কথা বলেন! আচ্ছা তাকে যদি এতো ভালোবাসেন তাহলে ডিবোর্স দেওয়ার কি প্রয়োজন ছিল বলতে পারেন?
জায়ানের এহেন কথায় মাথা ঘুরিয়ে আসে পদ্মর। কি সব আবোল তাবোল বকছে জায়ান?তাই আজ চুপ করে থাকল না পদ্ম,দারাজ গলায় বললো,
–“যেখানে আপনি ছাড়া অন্য কোন পুরুষ কে বিয়েই করিনি সেখানে ভালোবাসা কোথায় থেকে আসবে? আস্তাগফিরুল্লা । আপনি আমার এক এবং একমাত্র স্বামী।
আপনাকে এরকম বাজে কথা কে বলেছে বলুন তো যে আমার আন্য কারো সাথে বিয়ে হয়েছে, আবার ডিবোর্স ও হয়েছে?
–“আমি নিজেই জানি।
–“কিভাবে জানলেন শুনি?
–“আমি আপনার মামার বাসায় গিয়েছিলাম, সেখান এক ভদ্রমহিলা বলেছিলেন যে বাড়ি ওয়ালার ভাগ্নীর বিয়ে বলে সবাই গ্রামের বাড়ি গিয়েছে।
–“আচ্ছা তো বাড়ি ওয়ালার ভাগ্নী কি আমি একা? আমার আপু কি বাড়ি ওয়ালার ভাগ্নী নয়?
জায়ান বড় বড় চোখে তাকায় পদ্ম দিকে, আসলেই তো সে তো এটা ভেবে দেখেনি কখনো।
খাটে বসে বললো,
–“আচ্ছা দ্বিতীয় বার আমাদের বিয়েটা কিভাবে হলো বলেন তো?
কিছুটা দূরত্ব নিয়ে পদ্ম ও খাটে গিয়ে বসে, তারপর নিজের আঙ্গুল গুলো খুঁটতে খুঁটতে বলে,
–“একটা সরকারি কলেজে ডিগ্রিতে ভর্তি হই আমি,মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা শুরু করি। এর মধ্যে কিছু কিছু বিয়ের ঘর আসতে থাকে। বিয়ে যেন পাকাপাকি না হয়, সেই টেকনিক অবলম্বন করি। একদিন কি হয়েছে জানেন পাত্র নিজে আসবে দেখতে, পছন্দ হলেই বিয়ে। তো আমি করলাম কি সকাল বেলা থেকে ডিপে রাখা পানি যেগুলা কিছুটা বরফ জমেছে।ঐ পানি গুলো ইচ্ছে মতো খেয়েছি, জানেন তো আমার ঠান্ডার প্রকোপ রয়েছে তো সেটা কেই কাজে লাগাই আমি। ঠান্ডা পানি খেতে খেতে এক সময় নাকের পানি চোখের পানি পরে করুন অবস্থা আমার। তো যথা সময়ে পাত্র পক্ষে দেখতে আসলো। ঠান্ডা সাধারণত মানুষের হয় এটা কোন ব্যাপার না, কিন্তু সাধারণ ব্যাপার টাকে অসাধারণ বানিয়ে দিলাম আমি।
জায়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“কিভাবে?
–“বলছি শুনুন।
পাত্রের মনি বললো,আহারে আজকেই ঠান্ডা লাগতে হলো। ডেসলর ঔষধ টা খেয়ে নিও ঠিক হয়ে যাবে। আমি বললাম হবে না আন্টি,ইনফেক্ট কখনোই ঠিক হবে না। ভদ্রমহিলার সাথে আসা সবাই অবাক হয়ে তাকায় আমার দিকে। তখন আমি বললাম, এই ঠান্ডার সমস্যা আমার জন্মগত তাই কখনোই ভালো হবে না। এটা বলে আরচোখে তাকালাম পাত্রর দিকে,মশাই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তখন আমার খুব হাসি পায়, খুব কষ্টে হাসি সংবরন করি। সবার সামনেই লম্বা করে নাক টেনে নিজের ওরনা দিয়ে মুছে নিলাম। এতে করে সবার মুখশ্রী গুলো দেখার মতো হয় তখন।
হা হা হা,,,
–“আচ্ছা আপনার বাসর কেউ ছিল না সেখান? তখন আপনাকে কিছু বলেনি?
–“ছিল,আপু ।আপু আমাকে কিছু বলবে না আমি খুব ভালো করেই জানতাম।
–“তারপর কি হলো?
–“কি আর হবে, আমার ঘরের চৌকাঠে পা রাখেনি দ্বিতীয় বার। এরকম করে বিয়ের ঘর ভেঙ্গেছি। তবে পারা প্রতিবেশী দের কাছ থেকে কম কথা শুনতে হয়নি। আম্মুকে শুধু তারা কথা শুনিয়ে বলতো মেয়ের বয়স হয়ে যাচ্ছে বিয়ে দিচ্ছো না কেন, হচ্ছে না কেন।এ নিয়ে আম্মু খুব দুশ্চিন্তা করতো।আর হ্যা এর মধ্যে আমি আপনার আম্মুর সাথে যোগাযোগ করি। তখন দুই বছর হয়ে গেছে আপনার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। আম্মুর থেকে জানতে পারি আপনি চাকরির ট্রাই করছেন, আল্লাহ তা’আলার কাছে খুব করে চাইছিলাম আপনার যেন ভালো একটা চাকরি হয়।যাতে আব্বু আপনাকে পছন্দ করে। আমার আব্বু একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন তাই আব্বু সবসময় চাইতো সরকারি চাকরি করে এমন ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে। একদিন তাই হলো আপনার সরকারি কলেজে চাকরি হলো এবং আপনার আম্মু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসলেন! সেদিন কতোটা খুশি হয়েছি বলে বুঝাতে পারবো না আপনাকে। আল্লাহ তা’আলার শুকরিয়া আদায় করতে দশ রাকাত নফল নামাজ আদায় করেছিলাম। তারপর অনিতা, অর্পিতা আপু জানালো আপনি আমার কথা কিছু জানেন না, তারা আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। তারপর কি হয়েছে আপনার তো জানা আছে তাই না?
–“হুম। আচ্ছা আপনি এখানে কিভাবে আসলেন?
–“অনিতার সাথে এসেছি,ও আমাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে হোস্টেলে চলে গেছে।
–“ওহ্ আচ্ছা।
জায়ানের ফোনে কল আসে জায়ান ফোন হাতে নিয়ে দেখে রফিক কল করেছে।জায়ান ফোন রিসিভ করে বারান্দায় চলে যায়।আর পদ্ম চা বানাতে যায় কিচেনে। তারপর চা নিয়ে রুমে আসলে জায়ান বললো,
–“আগামীকাল জেসি দের বাসায় যাবো আমরা, আপনি সব কিছু গুছিয়ে রাইখেন। কলেজ থেকে এসে বিকালের দিকে যাবো।
হঠাৎ জেসি দের বাসায় কেন যাবে তারা?এ নিয়ে ভাবতে থাকে পদ্ম।
#চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।