#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৯
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

বাহিরে কে যেন ডাকছে তামুর বাপ তুই বাইত আছোছ? তৈমুর খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে বাহিরের দিকে যায়।জায়ান যেন এরকম কিছুই চেয়েছিল।দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে থাকা জেসির সম্মুখে দাঁড়িয়ে দারাজ গলায়, জায়ান বললো,
–“তোমার কোন কমন সেন্স নেই? এভাবে বড়দের সামনে সিনক্রেট করা ঠিক হয়েছে তোমার? তোমাকে বুঝতে হবে তুমি কোন বাচ্চা মেয়ে ন‌ও জেসি। পরিস্থিতি বুঝতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা এটা আমার শশুর বাড়ি। কোন বাবা মা তার মেয়ে জামাইয়ের সাথে অন্য মেয়েকে ভালো চোখে দেখবেন না,ইনফেক্ট দেখাও উচিৎ নয়। ভবিষ্যতে এরকম পরিস্থিতিতে যেন আমাকে না পড়তে হয়।

জেসি ভিতু গলায় বললো,
–“জায়ান মুস্তাফি তুমি জানো না গতকাল রাতে আমার সাথে কি কি হয়েছে!

জায়ান রাগ নিয়েই বললো,
–“শুনি কি হয়েছে তোমার সাথে?
–“জায়ান আমাকে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে আসা হয়েছে! শুধু তাই নয়,,

পদ্ম মুখের কথা কেরে নিয়ে বললো,
–“তুমি কি এখন জঙ্গল থেকে বের হয়ে আসলে নাকি? কি হলো বলো?

জেসি মাথা নাড়িয়ে না বুঝায়, পরক্ষনেই আবার বলে,
–” জায়ান মুস্তাফি আমার সাথে এরকম টাই হয়েছে। কিন্তু সকাল বেলা নিজেকে রুমে দেখে আমিও খুব অবাক হয়েছি।
–“জেসি তোমার মনগড়া গল্প শেষ হলে খেতে আসো প্লিজ সবাই অপেক্ষা করছে।

জায়ান সবাই কে খেতে বলে,নিজেও খেতে বসে। পদ্ম নিচু গলায় জেসি কে বললো,
–“আমার বরের দিকে কুনজর দিলে এর চেয়েও বড় কিছু হবে তোমার সাথে! তাই ভালোয় ভালোয় বলছি বন্ধু বন্ধুর মতো থাকো।

জেসি রাগে ফুঁসছে তখন পদ্ম জেসির হাত ধরে নিয়ে বসায় খাবার খাওয়ার জন্য।
সবাই খাচ্ছে কিন্তু জেসি খাচ্ছে না বলে অনিতা বললো,আপু খাও না কেন? খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
সকালের নাস্তা হিসেবে ভুনা খিচুড়ি, গরুর গোশত আর ডিম ভুনা তৈরি করা হয়েছে। সবাই খুব তৃপ্তি ভরে খাচ্ছে। জায়ান রাগ করবে বলে জেসি খাওয়া শুরু করলো।
_______
জেসির সাথে জায়ানের দেখাটা আকস্মিক একদিন হয়। বেখেয়ালি ভাবে রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল জায়ান, আচমকা কোথা থেকে যেন এক বাইক এসে এক্সিডেন্ট করে জায়ান কে! ফলস্বরূপ ছিটকে রাস্তার মাঝ বরাবর পরে জায়ান! এর সাথে সাথেই অন্য একটা মালামালের ট্রাক চলে আসে, সেদিন জেসি না থাকলে ট্রাকটা পিষেই ফেলতো জায়ান কে! আল্লাহ তাআলার রহমত ছিল বলে, সেদিন জেসি মুশকিল আসান হয়ে আসে জায়ানের জীবনে। কাউকে রাস্তায় মাঝপথে পড়ে থাকতে দেখে জেসি প্রাইভেটকার থেকে দৌড়ে যায় রাস্তার মাঝে। একপ্রকার টেনে হিচরে নাস্তার বাম পাশে জায়ান কে টেনে আনে জেসি! তারপর জেসির গাড়ির ড্রাইভার দৌড়ে আসে,জেসি ড্রাইভারকে বলে,
–“চাচা দ্রুত লোকটাকে গাড়িতে তুলে দিন, হসপিটালে নিতে হবে প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে বেশি সময় নিলে বাঁচা মুশকিল হয়ে দাঁড়াবে!
–“কিন্তু মামনি এরকম অচেনা আজানা একটা ছেলেকে গাড়িতে করে নেওয়া কি ঠিক হবে আমি একবার স্যার কে কল করে জিজ্ঞাসা করে নেই?

জেসি তখন খুব রেগে যায়, রেগে গিয়ে উল্টোপাল্টা বলে দেয় ড্রাইভার গ্রামীণ কে! কথাগুলো ছিল এরকম, ড্রাইভার ড্রাইভার এর মতো থাকো। একটা মানুষ মরে যাচ্ছে আর তুমি আছো তোমার স্যারের পারমিশন নিয়ে। আমি বলছি এটুকুই কি যথেষ্ট নয়, এরকম হলে বাপি কে বলে তোমাকে বিদায় করে দেবো আজকে শেষবারের মতো তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি। জেসি রেগে গেলে খুব ভয়ানক কিছু করে বসে রামিম খুব ভালোভাবে জানে তাই আর কথা না বাড়িয়ে আহত ছেলেটিকে গাড়িতে তুলে দেয়। তারপর হসপিটালের দিকে রওনা হয়।
তারপর কাছাকাছি ঢাকা হসপিটাল থাকায় ঢাকা হসপিটালেই নিয়ে যায় জায়ান কে। জায়ান কে দেখে ডাক্তার জানান প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে যার কারণে ব্লাড লাগবে। জেসি তখন জিজ্ঞাসা করলো,
–“ডাক্তার ব্যান্ড গ্রুপ কি?
–“ও পজেটিভ।
–“ডাক্তার আমারও ও পজেটিভ আমার থেকে নিয়ে নিন!
–“আসুন কিছু টেস্ট করতে হবে?
–“জ্বি চলুন।

ড্রাইভার রামিম সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল, জেসি ব্লাড দিবে বলে তৎক্ষণাৎ তার স্যারকে কল করে জানায় যে জেসি অচেনা একটা ছেলেকে নিজের ব্লাড দিচ্ছে।
এদিকে জেসির কিছু টেস্টের পরে ডাক্তার জানান ব্লাড দেওয়া রিস্ক হয়ে যাবে জেসির জন্য। জেসি এর তোয়াক্কা না করে বললো,
–“আমি এই রিস্ক টা নিবো ডাক্তার আপনি ব্লাড দেওয়ার ব্যবস্থা করুন!
–“এক পেসেন্ট কে বাঁচাতে, আরেক প্যাসেন্ট কে মারতে পারি না আমরা। আমি বুঝতে পারছেন না, অন্য কাউকে দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ ব্লাড নেই আপনার শরীরে।
–“আমি স‌ইচ্ছায় দিতে চাইছি, তাই আপনি দিবেন ব্যাস।

ডাক্তার এক হাতের ভাজে অন্য হাত রেখে বললো,
–“আপনি কি আমাকে কোন ভাবে হুমকি দিচ্ছেন? না আপনার আচরণে তাই প্রকাশ পাচ্ছে। এরকম কোন মনোভাব পোষণ করে থাকলে আপনি আসতে পারেন। আর হ্যা যাওয়ার সময় দরজা বন্ধ করে যাবেন।

তারপর ডাক্তার আয়েস ভঙ্গিতে মাথা হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। জেসি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
–“আপনি জানেন আমি কে? আমার একটা কলে আপনি এই ঘুম ছাড়া হাতে বাধ্য!

ডাক্তার খানিক হেসে বললো,
–“আপনি নিজেই তো জানেন না আপনি কে? লোকে কিভাবে জানবে।

জেসি ডাক্তারের টেবিল থেকে বুকমার্ক টা ছুড়ে ফেলে দেয়, আর বলে,
–“আপনি একজন ডাক্তার হয়ে মশকরা করছেন আমার সাথে?

ডাক্তার জিসান আজকে অতিরিক্ত পরিমাণে ক্লান্ত আছে যার দরুন চেয়ারে মাথা হেলান দিয়ে রেখেছে। জেসির কথাগুলো যেন আরো মাথা ধরিয়ে দিচ্ছে। তাই বললো,
–“আচ্ছা চলুন।

যেতে যেতে জিসান জিজ্ঞাসা করলো প্রেসেন্ট কি হয় আপনার?
জেসি সহজ ভাবে উওর দেয় কিছুই না। এতে করে খুব চমকায় জিসান। অচেনা একটা ছেলেকে ব্লাড দিতে এতো পাগলামি কেউ করে? পাগলী মেয়ে একটা।

ঘন্টাখানেক পর ব্লাড দিয়ে নেতিয়ে পড়ে জেসি!ডাক্তার তো আগেই বলেছিল। জিসান জেসি কে একটা ইনজেকশন পুশ করে দেয়।আর নার্স কে বলে জ্ঞান ফিরলে তাকে যেন খবর দেওয়া হয়।এর কিছুক্ষণ পর হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে রফিক। মেয়ের এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে চেয়ারে বসে পরে। তারপর এক্সিডেন্ট হওয়া ছেলেটাকে দেখতে চায়।নার্স পাশের রুম দেখিয়ে দেয়, রফিক দরজার সাদা পর্দা ভেদ করে ভিতরে ঢুকে। গিয়ে যাকে দেখতে পায়,পিলে চমকে উঠে!

দুমাস হলো পদ্ম ডিবোর্স পাঠিয়ে দিয়েছে জায়ান কে। নিজেকে এই নিদারুণ কষ্ট থেকে রেহাই দিতে, টিউশন করে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে জায়ান।আর তাই দুটো টিউশনি, তার মধ্যে একটা হলো জেসির ছোট বোন জারা।এই দের মাসে কখনো জায়ানের সাথে দেখা হয়নি জেসির তাই তারা অপরিচিত। রফিক ড্রাইভার রামিম কে দিয়ে খবর পাঠায় জায়ানদের বাসায়। তারপর মেয়ের কাছে এসে বসে। এরমধ্যে জেসির জ্ঞান ফিরে আসে। তখন বাবার থেকে জানতে পারে জায়ান জারার টিচার।

জেসি কে একদিন পর রিলিজ করে দেয় ডাক্তার। কিন্তু জায়ান কে তেরো দিন কাটাতে হয় হসপিটালে! মাথা ফেটে গেছে অনেকটা যার ফলে নয়টা সেলাই দিতে হয়েছে। পায়ে কিছু ইনজুরি হয়েছে।
জেসি নিজের জীবন বিপন্ন রেখে ব্লাড দিয়েছে জেনে জান্নাত আর এরশাদ অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। জেসি তখন বলে,
–“আন্টি আংকেল এভাবে বলবেন না প্লিজ। মানুষ হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব। তাছাড়া উনার কিছু হয়ে গেলে আমার বোন কে পড়াতো
বলেন তো?

শেষের কথাটা হেসে বললো জেসি। জান্নাত চোখের পানি ছেড়ে দেয়। জেসি শান্তনা দিয়ে বললো,
–“আন্টি আপনার ছেলে এখন বিপদমুক্ত। আপনি প্লিজ এভাবে কাঁদবেন না। তারপর চোখের পানি মুছে দেয়।

জান্নাত চুমু এঁকে দেয় জেসির কপালে। এতে জেসিও কেঁদে দেয়, মায়ের কথা মনে পড়ে যায় তাই।
এরপর থেকে দুই পরিবারের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।জায়ান আর জেসির মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে।জেসির সাথে হাসি ঠাট্টায় করে নিজেকে ডিপ্রেশন অনেকটা দূর করে।
______
বর্তমান,
সবাই নদীর তীরে হাঁটতে বের হয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে নৌকার কাছে আসে। তখন পদ্ম বললো, –“চলো সবাই নৌকা ভ্রমণ করি।

পদ্ম’র নৌকা ভ্রমণ খুব পছন্দ।তাই সবাই নৌকায় চড়ে বসে। পদ্ম নৌকার মাথায় বসতে পছন্দ করে তাই দৌড়ে গিয়ে জেসির আগে বসতে যায়। ফলস্বরূপ নৌকা নদীর মাঝখানে চলে যায়। এদিকে জেসি পা সামনে রেখে দেয়,যার ফলে পদ্ম নিজেকে সামলাতে না পেরে নৌকা থেকে পরে যায়!,,,,

#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here