#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৮
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

উগান্ডা পাঠিয়ে দিয়েছে!নেকার ষষ্টি কে!
জায়ান চমকে বললো,
–“কি বললেন?
পদ্ম ফিচেল গলায় বললো,
–“কক‌ই কিছু না। আচ্ছা আপনার মনে আছে আপনি একদিন বলেছিলেন, আমাকে ঠিক এইভাবে পাশে নিয়ে রাতের আকাশ দেখবেন।আর বাসাটা হবে পুরান ঢাকার মধ্যে।পুরান ঢাকায় একটা ছোট খাটো বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে আমাদের একটা ছোট্ট টুনাটুনির সংসার হবে। আমাদের মাঝে খুনসুটি ঝগড়া হবে, অভিমান হবে কিন্তু রাগ হবে না। আপনার তো রাতে জেগে থাকার অভ্যাস,তো আপনি জেগে থাকবেন আর আমি ঘুমিয়ে পড়বো। কিন্তু আপনি দুষ্টুমি করে আমার ঘুম ভেঙ্গে দিবেন কিছুতেই আমাকে ঘুমাতে দিবেন না। তারপর কাঁচা ঘুম ভাঙ্গিয়ে, পাঁজা কোলে করে বারান্দায় নয়তো ছাদে নিয়ে যাবেন। রাতের নির্মল আকাশ অবলোকন করতে। আমি তখন ঘুমে বিভোর হয়ে পড়লে আপনি তখন, মাদুর বিছিয়ে বসে আপনার কোলে আমার মাথা রেখে হাত বুলিয়ে দিবেন। আবার কখনো সখনো আমার‌ও ঘুম আসবে না তখন আপনার প্রশস্ত বুকে মুখ গুঁজে আঁকিবুঁকি করবো। তারপর তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বো একসাথে। তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ে জায়নামাজে একে অপরের কাঁদে মাথা রেখে তসবিহ পড়বো আর ফজরের আযানের অপেক্ষা করবো। তারপর যখন আযান হবে তখন আপনি মসজিদে যাবেন নামাজ পড়তে আর আমি ঘরে পড়বো, আপনি নামাজ পড়ে আসার পর কোর‌আন তেলোয়াত করে ঘুমাবো আর উঠবো বেলা বারোটায়।হা হা হা,,,

জায়ান মনোযোগ দিয়ে পদ্ম’র কথা শুনে চলেছে। পায়ের জুতা গুলো এক পাশে রেখে দিয়েছে, গরমের কারণে। নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে ছাদের ফ্লুরে আঁকিবুঁকি করছে। তখন পদ্ম নিজের বৃদ্ধাঙ্গুল জায়ানের আঙুলের উপর রাখে!জায়ানের পা দুটো থেমে যায়। ফিরে তাকায় পদ্ম’র দিকে, ছোট করে বলে,
–“আমাকে এতোটা যন্ত্রনা না দিলেও পারতেন ঘুমবাবু!
–“সেদিন আপনি ভুল করেন নি? একটা মেয়েকে তার মতামত না নিয়ে বিয়ে করাটা ভুল ছিল না আপনার! কি জবাব দিতাম আব্বু কে আম্মু কে? তাদের মনে কষ্ট দিয়ে আপনার সাথে সংসার করতাম,সুখি হতে পারতাম কখনো?আর আজ দেখুন তারা কতটা খুশি।
_______

চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে, জেসি কাঁপা কাঁপা পায়ে একবার এদিকে আরেক বার ওদিকে ছোটাছুটি করে চলেছে! মাঝে মাঝে জায়ান মুস্তাফি বলে ডাকছে কিন্তু কোন সাড়া শব্দ নেই। মাঝে মাঝে কিসব প্রানি ডাকছে, পাখির কিচিরমিচির শব্দ ও আসছে। ভয়ে জড়সড় হয়ে মাটিতে বসে পড়ে জেসি। দুহাতে মুখ চেপে ধরে আল্লাহ আল্লাহ বলে চলেছে।

ফ্ল্যাশব্যাক,
পদ্মর ঠিক করা গোয়েন্দা বাহিনী ছাদে এসে জায়ান এবং জেসিকে দেখে নেয়, কে কোন অবস্থায় আছে।তারপর পরিকল্পনা করে, সুযোগ বুঝে স্প্রে করা রুমাল জেসির মুখে ধরতেই মিনিটের জন্য জ্ঞান হারিয়ে পরে জেসি।(কাল্পনিক ঘটনা,বাস্তবের সাথে মিলাবেন না দয়া করে) জায়ান তার ঘুমবাবু কে দেখতে এতটাই মগ্ন ছিল যে, এত কান্ড করে ফেলল পদ্মর গোয়েন্দা বাহিনী যা ঘুণাক্ষরেও টের পেল না। জেসিকে নিচে নিয়ে যেতেই পদ্ম কান মলে দেয় জ্ঞানহারা জেসির! তারপর বাড়ির পাশে বাড়বাড়িতে রেখে আসতে বলে! যেখানে চারিদিকে গাছপালায় ছেয়ে আছে, মানুষের কোন গতগম্ব নেই। গাছের ছায়ার কারণে জোছনার আলো প্রবেশ করতে অক্ষম চারিদিকে নির্জন হয়ে আছে। দিনের বেলা হলে অন্য কথা, কেউ কেউ ওখানে গাছের পাতা কুড়িয়ে নিতে যায় মাটির চুলায় রান্না করার জন্য। আবার কেউ কেউ সখের বসে ফটোশুট করতেও যায় তবে রাতের বেলা কেউ যাওয়ার সাহস করে না ভুলেও কারণ এই জায়গাটা নিয়ে অনেক ভুতুড়ে কাহিনী রয়েছে। ওখানে একটা দু তিন রুমের দালান বাড়ী আছে, অনেকের ধারণা ওই বাড়িটা সাপেদের বাড়ি যেখানে নাগ নাগিন থাকে! যদিও বাস্তবে নাগ নাগিন বলতেন কিছু নেই, সব‌ই মানুষের মনগড়া গল্প। কিন্তু বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটা খুব কাজে দেয়,কারণ যখন ওরা খাবার খাবে না বলে বায়না ধরে তখন ওদের বাড়বাড়ির সাপেদের কথা বলে ভয় দেখিয়ে খাবার খাওয়ানো যায়।

জেসিকে রেখে আসার তিন মিনিটের মাথায় জ্ঞান ফিরে আসে। এ কোন জগতে এসে পড়েছে জেসি কিছুই বুঝতে পারেনা! এদিক-ওদিক হেঁটে কয়েকবার গাছের সাথে লেগে ব্যথাও পেয়েছে।

এদিকে জায়ান জেসির কথা ভুলে বসে আছে, অবশ্য জায়ান হয়তো ভাবছে,জেসি নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে।
_______
শিমু কতবার এসে দরজায় কড়াঘাত করছে কিন্তু পদ্ম আর জায়ানের ঘুম ভাঙ্গার কোন নাম গন্ধ নেই। সারারাত জেগে থেকে ফজর নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে কিনা!

এদিকে জেসি চিৎকার করে বাড়ি একাকার করে চলেছে!জেসির চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই হাজির। তৈমুর রহমান আর ইলোরা মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করছে কি হয়েছে?জেসি কিছু না বলে কেঁদেই যাচ্ছে।
রেশমা, সুমাইয়া,শিমু,কলি একে অপরের দিকে আড়চোখে দেখছে। তখন রেশমা ফিসফিস করে বললো,
–“আমরা আবার ধরা পড়ে যাবো না তো?

সুমাইয়া ধমকে ওঠে বললো,
–“ভিতুর ডিম কোথাকার! তুই এরকম মুখ করে রাখলে তো ধরা পড়বোই। তুই বরং এদিক থেকে যা।
রেশমা খুব ভিতু মেয়ে, তাই এরকম ভয় পাচ্ছে। সবাই ব্যাপারটা জানতে পারলে মা তাকে বাড়ি ছাড়া করবে, মনে মনে এসব আবল তাবল ভেবে কাপাকাপি অবস্থা।
সুমাইয়া সাহস যুগিয়ে বললো,
–“আপু আপনি বাচ্চাদের মত এমনে কান্না করছেন কেন?কিক হয়েছে বলেন?অহ আচ্ছা আপনি নিশ্চয়ই কোন দুঃস্বপ্ন দেখেছেন তাই না। আসলে এরকম হয়। আমিও ত সেদিন রাতে কি ভয়ংকর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছি কি বলবো তোমায়!

সাথে শিমুও তাল মিলিয়ে বললো,
–“আচ্ছা আপু আপনি কি কোন ভয়ংকর জঙ্গলের দুঃস্বপ্ন দেখেছেন?

রেশমা ভয়ে চুপসে যায়, চোখ গুলো বড় বড় করে তাকায়!আর মনে মনে বলে, এই শিমুর বাচ্চা শিমু তো নিজেই আমাদের ফাঁসিয়ে দিবে। পেতনি টা জঙ্গলের কথা কেন বলছে?
এদিকে শিমুর কথা শুনে জেসি ভয়ে আরো জড়োসড়ো হয়ে বসে, তার সাথে চিৎকারের গতি বেড়ে যায়। শেষ মেষ কলিও মুখ খুললো,
–“আচ্ছা আপু এরকম দেখছো না তো,জঙ্গলে চারিদিকে অন্ধকারে ডুবে আছে,কাছের মানুষ কে ডাকছো কিন্তু শুনছে না, পায়ের নিচে শুকনো পাতা করমর করে শব্দ করে ওঠছে! মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক শুনা যাচ্ছে, সাথে পাখির হই হুল্লোর!

জেসি কান্না থামিয়ে তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,
–“তুমি কি করে জানলে!যে আমার সাথে ঠিক এগুলো‌ই হয়েছে?

তৈমুর আর ইলোরা কিছুই বুঝতে পারছে না, মেয়ে গুলো এসব কি বলে চলেছে। তবে ইলোরার একটু সন্দেহ হচ্ছে, কারণ মেয়ে গুলো যে কি হারে দুষ্টু হয়েছে তা বেশ ভালো ভাবে জানা আছে।তাই ইলোরা বললো,
–“তোদের মতলব কী বল তো? মেয়েটা কে কি সব আজেবাজে কথা বলে ভয় দেখাচ্ছিস?

শিমু মুখের কথা কেরে নিয়ে বললো,
–“আরে মামি আমি তো আমার স্বপ্নের কথা ডংগি আপুকে বলছি।
তখন জেসি রেগে গিয়ে বললো,
–“হোয়াট?হু ইজ সি!(ডংগি)

ইলোরা রেগে বললো,
–“মারবো এক চর ফাজিল কোথাকার।সব গুলো বদের হাড্ডি। মা তুমি কিছু মনে করো না। আমি নাস্তা তৈরি করছি। খেতে আসো।

তারপর ইলোরা আর তৈমুর বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
শিমু তখন বলে,
–“চল আমরা যাই, এখানে থেকে নেকামো দেখার চেয়ে ক্রাম খেলা ডের ভালো।
তারপর রেশমা যেতে যেতে বলে,অন্যের বর কে নিয়ে টানাটানি করলে শুধু বাংলাদেশের জঙ্গল
নয় আফ্রিকার জঙ্গলে ও গিয়ে পড়তে হবে!এই বলে হাসতে হাসতে দ্রুত পায়ে সব গুলো বেড়িয়ে যায়। জেসি তখন বুঝতে পারে সত্যি সত্যি ই তার সাথে রাতে ঐ ভয়ানক কান্ড ঘটেছিল।
সকাল বেলা নিজেকে রুমে শুয়ে থাকতে দেখে তার উপর শিমুর স্বপ্নের কথা শুনে কনফিউশনে পড়ে যায় জেসি। কিন্তু এখন জেসি নিশ্চিত যে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা সত্য ছিল।

রাতের বেলা জেসি যখন ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে পরে তখন, রেশমা,শিমু, সুমাইয়া,কলি চার জন মিলে খুব কষ্ট করে জেসির নিথর দেহটা ভয়ে নিয়ে এসেছে তারপর সুন্দর করে খাটে শুয়ে দিয়েছে। পাতলা গড়নের দেহ হ‌ওয়ায় কষ্ট টা একটু কম হয়েছে তাদের।
______
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই, নাস্তা করবে বলে। তখন জায়ান আর পদ্ম আসে। জেসি দৌড়ে গিয়ে জায়ান কে জড়িয়ে ধরে! আকস্মিক ঘটনায় বরকে যায় জায়ান! বড়দের থেকে শুরু করে ছোটরা পর্যন্ত অতবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।জেসির এহেন কান্ডে পদ্ম রেগে মেগে আগুন, তাই দাঁড়িয়ে না থেকে জেসি কে হেঁচকা টানে ছাড়িয়ে নেয়। ফলস্বরূপ জেসি ছিটকে দূরে সরে যায়,,,,

চলবে,,, ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here