#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৭
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)
পড়ন্ত বিকেলে সূর্য মামা ধীরে ধীরে যখন অস্ত যাচ্ছে পশ্চিমে। ঠিক তার পূর্ব দিকে,ধনাগদা নদীর তীরে দাঁড়ালে প্রকৃতির দৃশ্য টা দেখার মতো হয়। প্রথমে থৈ থৈ করে ভয়ে চলা নদীর পানি, তার সামনে বেরিবাঁধ! যেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গাছগাছাড়ি,আর এর উপরে সূর্য মামা। এছাড়াও নদী পার হয়ে এর দক্ষিণে অবস্থিত চৌধুরী সাহেবের ইটের ভাটা!শহর থেকে অনেকে গ্রামে বেড়াতে আসলে ঘুরতে যায় সেখানে। চারিদিকে ইট আর ইট দৃশ্য টা অবশ্য দেখার মতো বটে।আর ওখানকার একটি ছোট্ট গ্রামের মেয়ে জুনিয়র পদ্ম। কুমিল্লা জায়ানদের বাড়ি থেকে আসতে আসতে রাত হয়ে যায়, আজকে আর এই দৃশ্য দেখার নয়। তাই পদ্ম’র কাজিন রা ঠিক করে আগামীকাল জায়ান এবং তার সাথে আসা মেহমানদের সবটা ঘুরিয়ে দেখাবে।
পদ্ম’দের বড়িতে পিঠা তৈরি থেকে শুরু করে রান্না বান্নার ধুম পড়ে গেছে। বাড়ির ছোট জামাই’কে আপ্যায়নে যেন ত্রুটি না হয় সে দিকে খুব সতর্ক অবলম্বন করে চলেছে ইলোরা। পদ্ম নিজের বাড়ি এসে ফুরফুরে মেজাজে আছে।আর জায়ান কে ঘিরে আছে তার সব শালক শালিকারা,পাশে বসে আছে জেসি। সবাই খোশ মেজাজে গল্প গুজব করতে ব্যাস্ত।এর মধ্যে ইলোরা সকলের জন্য গরম গরম দুধ ক্ষিলি পিঠা নিয়ে এসেছে।সকলে আনন্দের সহিত পিঠা খেতে শুরু করে।
জায়ান অনেকক্ষণ যাবৎ লক্ষ্য করছে পদ্ম এই রুমে একবার ও আসেনি।তাই সবাই কে বললো,
–“আমি একটু আসছি?
নেকার ষষ্টি জেসি বললো,
–“পিঠা খেয়ে তারপর যাও?
–“চলে আসবো এক্ষুনি।
পদ্ম বারান্দায় বসে বসে খুশি মনে আইসক্রিম খাচ্ছে। আইসক্রিম তার খুব পছন্দের তালিকায় একটা। খেতে খেতে বাহিরে আকাশ দেখে চলেছে। বারান্দার সামনে হাসনেহেনা গাছের ফুলের সুবাসে সৌরভিত হয়ে আছে চারিদিক। এই মুহূর্তে পদ্ম পরিবেশ টা খুব উপভোগ করছে।
কোন আইসক্রিম খেতে খেতে শেষের একটুখানি বাকি আছে, পদ্ম হা করে যেই না শেষাংশ মুখে ঢুকাবে ঠিক তখন আচমকা কেউ এসে ছিনিয়ে নিয়ে যায়! এতে খুব বিরক্ত হয় পদ্ম। পাশে লক্ষ্য করতে দেখলো,জায়ান শেষাংশ টা খুব তৃপ্তি ভরে খাচ্ছে। পদ্ম বিরক্তি ভরা কন্ঠে বললো,
–“কি হলো এটা? আপনার কি ঐ নেকার ষষ্টি’র থেকে অন্যের খাবার কেরে নিয়ে খাওয়ার
ছোঁয়াচে লেগেছে!
জায়ান বুঝতে পারলো,কার কথা বলছে পদ্ম। তাই এ প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে বললো,
–“আমার আইসক্রিম খুব পছন্দ। আপনি তো সেটা জানতেন।তাও কেন একা একা বসে আইসক্রিম খাচ্ছেন?
চেয়ারে বসতে বসতে কথাটা বললো জায়ান। পদ্ম কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। আচমকা জায়ান পদ্ম কে নিজের উরুর উপর বসিয়ে দিল! ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে চক্ষু বিস্ফোরিত হয় পদ্ম’র।যা দেখে জায়ানের অধরে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। নিমগ্ন কন্ঠস্বরে বললো,
–“আপনাকে একদম বেবিদের মতো লাগছে!
–“আমি তো বেবি-ই!
–“হুম,ম্যাচিউর বেবি।
সাদা টি-সার্ট এর সাথে বেগুনি রঙের প্লাজু পরেছে পদ্ম।বলা বাহুল্য পদ্ম মাস খানেক আগে তেইশে বছরে পদার্পণ করেছে,অথচ ওকে দেখে ষোল-সতেরো বছরের কিশোরীর মতো মনে হয়।ফেইসে দেখতে বাচ্চা বাচ্চা কিনা!যে কিনা প্রথম ভালো লাগা জায়ানের।
পদ্ম’র ছোট ছোট চুল গুলো কপাল জুড়ে আছে, এতে করে পদ্ম’র সুন্দর্যো যেন দ্বিগুন হয়েছে।জায়ান এক ধ্যানে মগ্ন হয়ে,তার প্রিয়তমা স্ত্রীর রুপসুধা পান করে চলেছে। পদ্ম লজ্জায় মুখ লুকায় জায়ানের প্রশস্ত বুকে এতে করে বিস্তর হাসে জায়ান।
এভাবে নিরবে নিভৃতে বেশ কিছু সময় পার করে দুজনে। হঠাৎ কি যেন হলো, পদ্ম’র ঠান্ডা লেগে গেল। বেচারি কাশি দিতে দিতে নাজেহাল অবস্থা।জায়ান ব্যাস্ত পায়ে পদ্ম কে রুমে নিয়ে আসে। পদ্ম কে গায়ে ওরনা বা চাদর জড়িয়ে নিতে বলে, দ্রুত পায়ে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে। তারপর আবার দু মিনিটের মধ্যে ফিরে এসে বললো,
–“আপনি এখনো অবধি গায়ে কিছু জাড়ান নি কেন?
–“এতো ব্যাস্ত হবেন না, এরকম শুকনো কাশির সাথে আমি অভ্যস্ত আছি।
–“হুম,কাশি কম বেশি সবারই হয়। তা-ও আপনি আমার কথা শুনুন।
পদ্ম আর দ্বিরুক্তি না করে কাবার্ড থেকে, সাদার মধ্যে বেগুনি পারের একটা চাদর গায়ে জড়িয়ে নিল। তখন জামিয়া আসে চা নিয়ে।জায়ান বললো,
–“নিন চা টা খেয়ে নিন, দেখবেন কাশি দৌড়ে পালাবে।
জামিয়া চা দিতে দিতে বললো,
–“ব্যাপার কি বলতো? তুই কি আবার এই সময় আইসক্রিম খেয়েছিস নাকি?
পদ্ম আমতা আমতা করতে থাকে।জায়ান ভ্রু কিঞ্চিৎ উঁচু করে সন্দেহ নিয়ে পদ্ম’র পানে তাকায়! পদ্ম বলছে না দেখে জায়ান বললো,
–“হ্যা,আপু উনি তো কিছুক্ষণ আগে আইসক্রিম খেলেন! বারান্দায় বসে বসে।
পরক্ষনেই জামিয়া রেগে তাকায় পদ্ম’র দিকে।রাগ নিয়েই বললো,
–“পদ্ম তোকে না আম্মু উল্টো পাল্টা সময়ে আইসক্রিম খেতে নিষেধ করেছে আম্মু!তাও তুই লুকিয়ে লুকিয়ে আইসক্রিম খেতে গেলি? আবার কাশি ও বাধায় ফেললি?
–“আপু আর হবে না, আম্মু কে বলো না প্লিজ?
–“এই নিয়ে কতোবার বলেছিস”আর হবে না” হিসাব আছে?
পদ্ম হাতের কড়া গুনে বললো,
–“এইতো দশ থেকে পনেরো বার হবে হয়তো!
–“মারবো এক চর,ফাজিল কোথাকার।
জায়ান সাথে তাল মিলিয়ে বললো,
–“আপু মেরেই দিন, আমি আছি আপনার পক্ষে।হা হা হা হা
আচ্ছা আপু উনার কি ঠান্ডার প্রকোপ আছে?
–“হ্যা, তাই ওর অসময়ে ঠান্ডা জাতীয় কিছু খাওয়া নিষেধ। একবার টনসিল ফুলে যা অবস্থা হয়েছিল। বেশি বাড়াবাড়ি কিছু হয়নি আল্লাহ পাকের রহমতে না হয় তো অপারেশন করতে হতো।
জামিয়া চলে যায় রুম থেকে। জামিয়া যেতেই জায়ান বললো,
–“আপনি সেই জন্যই তখন চুপিচুপি আইসক্রিম খাচ্ছিলেন?যাই হোক শাস্তির খাতায় আরো একটা যোগ হলো!
–“মানে?
–“আজ থেকে আপনি আর আইসক্রিম খাচ্ছেন না।
পদ্ম ও কনফিডেন্ট নিয়ে বললো,
–” চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্ট করলাম।
________
রাতের খাবার খাওয়া শেষে যার যার রুমে চলে যায় সবাই। পদ্ম বসে বসে ফেসবুকে অনলাইন শপিং এ শাড়ি অর্নামেন্স দেখছে।জায়ান পদ্ম’র পাশে বসে বললো,
–“কি করছেন?
–“তেমন কিছু,,
পদ্ম’র কথা শেষ না হতেই দরজায় কড়াঘাত শুরু হলো।জায়ান বললো,
–“দেখুন তো কে এসেছে?
–“পারতাম না!
–“পারবেন পারবেন।
–“পারবো না মানে পারবো না।
–“আপনি সেই আগের মতই রয়ে গেছেন ঘুমবাবু!
বলতে বলতে ওঠে যায় জায়ান। পদ্ম যে খুব অলস প্রকৃতির তা পদ্ম নিজেই বলতো জায়ান কে। তখন জায়ান বলতো, আমাদের যদি বিয়ে হয় তাহলে আপনার সব আলসেমি ভেঙ্গে দিব আমি!
জায়ান দরজা খুলে দেখে জেসি দাঁড়িয়ে আছে।জায়ান পদ্মর দিকে তাকিয়ে মনে মনে দুষ্ট বুদ্ধি করে।বিস্তর হেসে বললো,
–“আরে জেসি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভেতরে এসো!
পদ্ম ফোন থেকে মনোযোগ সরিয়ে তাদের পানে তাকায়।জায়ানের জন্য স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে না কে এসেছে। জেসি বললো,
–“জায়ান মুস্তাফি তুমি তো এতো তাড়াতাড়ি ঘুমাও না রাইট?
ছোট বেলা থেকেই জায়ানের রাতে ঘুম আসে না!শেষ রাতে গিয়ে ঘুমায় নয়তো ফজর নামাজ পড়ে তারপর ঘুমায়!
জেসি আবার বললো,
–“খুব বোরিং লাগছে, চলো আমরা ছাদে যাই?
জায়ান যেন এরকম কিছুই ভাবছিল, তাই জেসির কথায় বললো,
–“আচ্ছা চলো, দু’জনে মিলে রাতের আকাশ দেখবো। আর চকলেট খাব।
–“ওয়াও চকলেট! কিন্তু এই মুহূর্তে কোথায় পাবে?
জায়ান রুমে এসে,পদ্ম’র টেবিল থেকে চকলেট বক্স টা নিয়ে জেসি কে নিয়ে এগিয়ে যায় ছাদে। পদ্ম এতোক্ষণ নিরব দর্শকের মতো সবটা অবলোকন করলেও এখন রাগে ফুঁসছে। ফুঁসতে ফুঁসতে সারা রুম জুড়ে পায়চারি করতে থাকে।
তারপর রুম থেকে বেরিয়ে কাজিন দের রুমে গিয়ে দরজায় টোকা দেয়। ফারিহা ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুলে। পদ্ম কে দেখে বললো,
–“আপু তুমি! কিছু লাগবে?
পদ্ম বললো তোমরা সবাই ঘুমিয়ে আছো আর এদিকে আমি একটু শান্তিতে থাকতেও পারছি না। ফারিহা দুশ্চিন্তা নিয়ে বললো,
–“কি হয়েছে আপু?
–“বলছি আগে ভিতরে চলো।
তারপর, রেশমা, সুমাইয়া,শিমু,কলি সবাই কে ডেকে তুলে ঘুম থেকে। সব গুলো ঘুমে বিভোর হয়ে আছে তাই পদ্ম বললো সবাই কে ফুচকা ট্রিট দিবে। এরকম ট্রিটের কথা শুনে সব গুলোর ঘুম দৌড়ে পালায়। তারপর সবাইকে নিয়ে প্লান করে জেসি কে উচিৎ শিক্ষা দিবে।
এদিকে জেসি বকবক করেই যাচ্ছে,জায়ানের খুব বিরক্ত লাগছে কিন্তু তা-ও সহ্য করে যাচ্ছে পদ্ম কে রাগাবে বলে এবং ঘুমাতে দেবে না বলে।জায়ান ছাদে না আসলে পদ্ম এতোক্ষণে ঠিক ঘুমিয়ে পড়তো।জায়ান নিশ্চিত এখন পদ্ম ঘুমাচ্ছে না, বসে বসে রাগে ফুঁসছে।জেসির বকবক আর ভালো লাগছে না বলে,ফোন বের করে গ্যালারির ছবি দেখতে থাকে জায়ান। দেখতে দেখতে পদ্ম’র একটা ছবি সামনে আসে।প্রায় তিন বছর আগের ছবিটা যেখানে পদ্ম বইঠা হাতে নৌকা চালাতে ব্যাস্ত। ছবিটা জুম করে পদ্ম’র মায়া জড়ানো ছোট ছোট চোখ দুটো দেখছে জায়ান।
তখন পাশ থেকে কেউ বললো,
–“এখনো মেয়েটা কে আগের মত ভালোবাসেন?
আকস্মিক পদ্ম’র কথা শুনে বরকে যায় জায়ান! ফোনটা লক করে ট্রাউজারের পকেটে রেখে দেয়। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
–“আপনি এখানে! জেসি কোথায়?
#চলবে,, ইনশা আল্লাহ।