#জুনিয়র_পদ্ম
#পর্ব–০৬
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

কেউ সংকোচ বোধ করবেন না, নিজের বাড়ি মনে করে খাবেন।আর হ্যা প্রান ভরে ছেলে মেয়ে দুটোর জন্য দো’আ করবেন। তাদের ভবিষ্যৎ যেন উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো হয়।আরে ভাবিসাব আপনি তো কিছুই নিচ্ছেন না? এই ওয়েটার এখানে দেখ ভদ্রমহিলার কি লাগবে।
–“জ্বি স্যার।
–“ভাইজান আপনি এতো ব্যাতিব্যাস্ত হবেন না। আমি আর কিছু নিব না।
–“কি বলেন, এখনো তো গরুর গোশত নিলেন ই না?
–“না ভাই ডায়বেটিসের জন্য অল্প স্বল্প খেয়ে কোন রকম দিন পার করে চলেছি।

এরশাদ হোসেন বেশ প্রফুল্ল একজন মানুষ। ছেলের বিয়ে নিয়ে খুবই উৎসাহিত।ঘুরে ঘুরে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যাস্ত তিনি। সাথে তার তিন ভাই তো আছেন ই।ভাই বোনদের মধ্যে এখনো খুব সুন্দর সখ্যতা বিদ্যমান। আজকাল কার যুগে এমন যৌথ পরিবার খুব কমে‌ই চোখে পড়ে।

_________

–“আচ্ছা জায়ান মুস্তাফি তোমাদের বাসায় কি আছে আজকে? চারিদিকে এত ডেকোরেশন করা হয়েছে নিশ্চয়ই কোন পার্টি থ্রু করেছ,তাই না?

জায়ান খানিকক্ষণ পদ্মর পানে তাকিয়ে থেকে, কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বললো,
–“তেমন কিছু নয় জেসি!চলো আম্মুর সাথে দেখা করবে।
–“আচ্ছা চলো,আন্টি তো আমাকে দেখে চমকে যাবেন,,,

দুজন কথা বলতে বলতে, দুতলা থেকে নিচে নেমে গেল। এদিকে যেন,বাতাসের বেগে ছুটে এসে পদ্মর আঁখিপল্লবে পানি জমে গেল। অনিতা খেয়াল করে বললো,
–“ভাবিমনি তুমি কাঁদছো? মেয়েটা ভাইয়ার যাষ্ট ফ্রেন্ড আর কিছু নয়।

আসলে জায়ানের এরকম খামখেয়ালি জবাবে কষ্ট পায় পদ্ম। আজকের এরকম একটা বিশেষ দিন কে জায়ান কিভাবে পারলো বলতে?”তেমন কিছু নয়”।

–“আমার জুনিয়র পদ্ম কোথায়?

বলতে বলতে পদ্মর বাবা তৈমুর রহমান রুমে ঢুকলো। সাথে পদ্ম’দের বাড়ি থেকে আসা সকল মেহমান। সবকিছু ভুলে দৌড়ে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। তৈমুর রহমান মেয়ের মাথায় আলতো হাত রেখে বললো,
–“কেমন আছিস মা?
–“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আব্বু তুমি কেমন আছো? আম্মু কোথায়, আব্বু আম্মু কে সাথে আনো নি?
–“মেয়ের বৌভাতের অনুষ্ঠানে মায়েরা আসে না রে মা।
–“এইটা কোন হাদীস শরীফে আছে আব্বু!আমায় বলোতো?
–“এগুলো যুগ যুগ ধরে মানুষ মেনে আসছে,সব কিছু হাদীস মোতাবেক মানা হয় না।
–“হাদীসে যদি নাইবা থাকে তাহলে তো এগুলো কুসংস্কার আব্বু।
–“ঠিক কিন্তু, আমরা দুএকজনে তো আর এই কুসংস্কার গুলো তুলে নিতে পারি না।

শুধু কি বাপের সাথেই কথা বলবে পদ্ম? বাবা কে ছেড়ে মামির কাছে যায় পদ্ম। পদ্ম কে তিনি জড়িয়ে নেন। তারপর পদ্মর বড় বোন জামিয়া বোন কে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“শ্বশুর বাড়ি এসে তো বাপের বাড়ির সবাইকে ভুলে বসে আছিস!
–“এটা কি করে হয় আপু! আমি কি তোমাদের ভুলতে পারি বলো?
–“কতোবার কল করেছি, রিসিভ করার নাম ই নেই তোর।
–“ইশশ্ সরি আপু, এই দেখ কান ধরছি। ফোন হাতে নেওয়ার একদম সময় পাইনি।

দুদিন পর নিজের আপনজনের দেখে খুশিতে আত্মহারা পদ্ম, সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। জান্নাত, এরশাদ হোসেন এসে এবং জান্নাতের জায়েরা সবাই মিলে মেহমানদের আপ্যায়ন করতে ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে ওঠে।
সবাই জায়ান কে খুঁজে। পদ্ম কি উত্তর দেবে ভেবে পায় না। তার মেয়ে বন্ধুর হাত ধরে কোথাও গেছে এটা তো আর বলা যায় না তাই চুপ করে থাকে। জামিয়া পদ্ম কে কিছুটা দূরত্বে টেনে নিয়ে যায় আর সন্দেহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–“জায়ানের সাথে তোর সবকিছু মিটমাট হয়েছে তো?
আমতা আমতা করতে থাকে পদ্ম। বোন’কে সবটা জানানো ঠিক হবে কিনা ভেবে পায় না।

তখনি জায়ান কোথা থেকে যেন এসে বললো,
–“এই তো আমি।
তারপর সবাইকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে।সবার সাথে কথায় একদম আসর জমিয়ে ফেলে।
তখন অর্পিতা এসে সবাইকে একসাথে ছবি তোলার জন্য তাগাদা দেয়।জায়ানের বড় বোন অর্পিতা আর তার বর সুমন খুব ভালো ফটোগ্রাফার। একমাত্র শালাবাবুর বিয়ের ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব তিনি নিজেই নিয়েছেন। তাছাড়া বাহির থেকে লোক এনে বাড়ির মেয়ে ব‌উদের ছবি তোলাটা জায়ানের একদম পছন্দ নয়।যাই হোক প্রথমে সবাই একসাথে ছবি তোলবে বলে ঠিক করলো তারপর দুই পরিবার আলাদা আলাদা।তো সে মোতাবেক পরিবার পর্ব শেষ করে, ছোট ছোট বাবুদের ছবি তোলে,সিংগেল জনগণের তোলা শেষে কাঁপল পিক তোলা শুরু হয়। আগে বড়দের দিয়ে শুরু নয় যেমন মাহমুদা-ইমান হোসেন, শাহনাজ-ফেরদাউস রহমান, জান্নাত-এরশাদ হোসেন, রাশেদা-বাবলুর রহমান। তারপর জায়ানের কাজিন এবং তাদের বর। সবশেষে জায়ান আর পদ্মর। স্টেজে জায়ানের পাশে পদ্ম কে ডাকা হলে, জেসি গিয়ে হাজির হয়।জায়ানের বাহু জড়িয়ে ধরে বলে,
–“ভাইয়া আমরা রেডি!

থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে থাকে পদ্ম।জেসির সাথে জায়ান কে কিছুতেই মানতে পারছে না পদ্ম। মেয়েটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করছে বটে।ইতোমধ্যে সবার মাঝে গুন গুন করে কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। যেখানে বরের পাশে ব‌উয়ের ছবি তোলা হবে সেখানে এই মেয়েটা কি লাফালাফি কান্ড করে চলেছে!
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে জান্নাত জেসিকে ডেকে নিয়ে যায়। তারপর পদ্ম’র সাথে জায়ানের ছবি তোলা হয়, তবে পদ্মর অধরে হাসির কোন রেশ নেই।সুমন বহুবার বলেও এবং কতোসতো হাসি ঠাট্টা করেও পদ্ম’র মুখে হাসি ফোটাতে পারেনি।

–“ভাইয়া কেউ কি জানে, হাসি না দিলে তাকে কতটা বাজে দেখতে লাগে!

এই বলে জায়ান পদ্মর একদম কাছাকাছি গিয়ে মুখশ্রির পানে তাকিয়ে থাকে। সবাই দেখছে ভেবে পদ্ম লজ্জায় লাল টমেটো হয়ে যায়। তাদের মধ্যে মাত্র কিঞ্চিৎ দূরত্ব অবশিষ্ট আছে, মনে হচ্ছে জায়ান এই দূরত্ব ও গুছিয়ে ফেলবে! এরমধ্যে সিংগেলবাসীরা চেঁচিয়ে বললো,
ভাবিমনি হাসি দাও, পদ্ম হাসি দাও, জুনিয়র পদ্ম হাসি দাও,ভাবিসাব হাসি দেওয়ার দরকার নাই আমরা সিংগেলবাসীরা একটু রোমান্টিক সিন শিখি, ভবিষ্যতে কাজে লাগবে!হা হা হা..
শেষের কথা টা শুনে পদ্ম হাসি ধরে রাখতে পারলো না। মুচকি হাসি পার করে গেল, এরমধ্যে কিছু ছবি সুমন তার ক্যামেরাতে বন্দি করে নিল।

সবশেষে বর কনের খাবার খাওয়ার পালা,এখানেও পিছু ছাড়লো না নেকার ষষ্টি জেসি!জায়ানের ডান পাশে পদ্ম আর বাম পাশে বসলো জেসি। সাথে অনিতা, জামিয়া, অর্পিতা,সুমন জায়ানের আরো কাজিন সহ। খাবার খাওয়ার এক পর্যায়ে অনিতা বললো, –“ভাইয়া ভাবিমনি কে খাইয়ে দে।

জায়ান দ্বিরুক্তি না করে, খাবারের লোকমান নিল পদ্ম কে খাওয়াবে বলে, কিন্তু পদ্ম’র দিকে এগিয়ে নেওয়ার আগেই জেসি হাত টেনে নিয়ে নিজে খেয়ে নিল! পদ্ম এবার নিজেকে সামলাতে পারলো না, রেগে গিয়ে বললো,
–“অন্যের খাবার কেরে নিয়ে খাওয়া একটা অসভ্যতা!যা আপনি ক্রস করে ফেলছেন।

জেসি নেকামো করে বললো,
–“এই সামান্য কারণে মেয়েটা আমাকে অসভ্য বললো,জায়ান মুস্তাফি তুমি কিছু বলবে না?
–“ওনার হয়ে আমি তোমাকে সরি বলছি জেসি।প্লিজ তুমি খাবার টা শেষ করো।আর পদ্ম এই সামান্য কারণে এভাবে বলার কিছু হয়নি। আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি হাঁ করুন।

পদ্মর আঁখিপল্লব দুটো পানি গতিকে আটকাতে পারলো না,তারা অবাধ্য হয়ে গাল বেয়ে ঝরে পড়লো। খাবার ছেড়ে দৌড়ে রুমের দিকে চলে গেল পদ্ম। পদ্ম চলে যেতে, অর্পিতা সহ সবাই বকাঝকা শুরু করলো জায়ান কে। শেষে জায়ান ও না খেয়ে টেবিল ছাড়লো। এতে যেন কেউ পৈশাচিক আনন্দ পেল!

ধীরে ধীরে মেহমানরা বিদায় নিতে শুরু করলো। তৈমুর রহমান তার বেয়াই এরশাদ হোসেন’কে বললো,
–“ভাই এবার মেয়ে জামাই কে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিলে খুব খুশি হবো?
–“ভাই এভাবে বলে আমাকে লজ্জা দিবেন না। ওরা অবশ্যই যাবে।

তারপর জান্নাত’কে ডেকে বললো,
–“বেয়াইসাব তো বিদায় নিতে চাচ্ছেন, জায়ান পদ্ম’কে বলো তৈরি হতে।
–“আমি এক্ষুনি ওদের কে পাঠাচ্ছি।

পদ্ম বোরকা পরে তৈরি হয়ে আসে, এসে সবাইকে বলে,
–“বড় আব্বু-বড় আম্মু,মেজ আব্বু-মেজ আম্মু,সেজ আম্মু-সেজ আব্বু, ছোট আব্বু-ছোট আম্মু তোমরা সবাই চলো আমাদের সাথে? ছোট ফুপ্পি,বড় ফুপ্পি আপনারা ও চলুন।

খোরশেদা টিপ্পনি কেটে বলো,
–“পোশাক আশাক প‌ইরা অনে ক‌ইতাছো চলো সবাই! আমাগো লগে কি মশকরা করতাছো?

খোরশেদার এমন কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে পদ্ম। গতকাল রাতের ঘটনা নিয়ে যে খোরশেদা রেগে এভাবে কথা বলছেন জান্নাত বেশ বুঝতে পারলো।
তাই যারা পদ্ম’র সাথে যাবে তাদের তাগাদা দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলে তারপর পদ্ম কে আর জায়ান কে নিয়ে যায় গাড়ির কাছে।জায়ান ক্ষীণ স্বরে বললো,
–“আম্মু জেসি আমাদের সাথে আসুক? অনিতা সহ সবাই যাচ্ছে, বেচারি একা একা মন খারাপ করবে।
–“মেয়েটা যেভাবে সবার সামনে সিনক্রিয়েট করে। ওকে সাথে নেওয়া কি ঠিক হবে?
–“তুমি চিন্তা করো না আম্মু আমি ম্যানেজ করে নিব।
–“আচ্ছা, তবে দেখিস কিন্তু?
–“তুমি চিন্তা করো না আম্মু।
–“আচ্ছা সাবধানে যাস”আল্লাহ হাফেজ”।
–“আল্লাহ হাফেজ।

এতক্ষণ জায়ানের কথা গুলো শুনে শুনে ভিতরে ভিতরে রাগে ফুঁসছে পদ্ম। মনে মনে ঠিক করলো নেকা ষষ্টির একটা ব্যবস্থা করবে। তারপর শ্বাশুড়ি মাকে সালাম জানিয়ে গাড়িতে ওঠে পদ্ম। এবার দেখার পালা নেকার ষষ্টি পদ্ম’র বাড়িতে গিয়ে কি করে!!

#চলবে.. ইনশা আল্লাহ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here