###জীবন যখন যেমন (১২তম পর্ব)
###লাকি রশীদ

ট্রে টেবিলে রেখেই শাওন মাকে জড়িয়ে ধরেছে।হাত দিয়ে গলার দুইপাশে বেষ্টনী গড়ে বলছে,
কেমন আছো বড়চাচী? মা পাল্টা আদর দিয়ে বললো, ভালো আছি রে। এবার বলছে, মানুষ অসুখে পড়লে ক্লান্ত, রোগী দেখায়। কিন্তু তোমায়
তো দেখি আমাদের চেয়েও বাচ্চা লাগছে। তাই না
ছোট ফুপু? মা হেসে বলল, আমি তোর মার মতো
টাকাওয়ালা নাকি,হাতে মুখে তোর মা কি কি সব মাখে তা মাখবো আর নিজেকে বাচ্চা লাগবে? শাওন আদুরে গলায় বলল, আমার মা সবকিছু মেখেও তোমার ধারেকাছেও আসতে পারবে না। ছোট ফুপু বলছেন,ওরে মেয়ে সাবধানে কথা বল্।
কখন তোর মা এসে পড়বে,আর শেষে কুরুক্ষেত্র বাধাবে। শাওন মাকে টিপট থেকে চা ঢেলে দিয়ে বলছে, কুরুক্ষেত্র বাঁধাতে হবে না ফুপু, ওটা মার সাথে সাথেই চলে। চায়ের সাথে ঘন দুধে ভেজানো সেমাই বাটিতে তুলে মাকে দিলে, মা খাবে না বলে মানা করে দিলো।

শাওন বললো, তুমি আসছো শুনে আমি নিজে রান্না করেছি। এবার ফুপু বল্লেন,এটা সত্যি কথা।
আসলেই ভাবী ও আপনার জন্য সকালে উঠেই এসব করেছে। আমার ভাইঝি অনেক ভালবাসে আপনাকে। দোলা এবার ফিসফিস করে আমাকে বললো, এতো শাশুড়ি আদর দেখছি রে। আমি হেসে বলি, মিসেস খাজুর বেগম এখানে নাই বলে এসব হচ্ছে। আসুক,দেখবি সব হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে। না থাকবে বাঁশ আর না বাজবে বাঁশরী। মা খেয়ে খেয়ে বলছে, এতো মজার সেমাই আমি খুব কম খেয়েছি। দোয়া করি মেয়েটা ভালো ঘর বর
পাক্। শাওন এবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলছে,আচ্ছা বড়চাচী তুমি তো অনেক কিছু জানো। বলো তো,যদি মন থেকে কেউ কোনো কিছু ভীষণ ভাবে চায়…….তবে সে কি সেটা পায়?

মা বলছে, সেটা যদি অবৈধ কিছু না হয় তবে হয়তো বা আল্লাহতাআলা ইচ্ছে করলে দিয়েও দিতে পারেন। সব তার মর্জি রে মা। এবার বলছে,
তুমি কথা দাও আমার জন্য দোয়া করবে। আমি যা চাই, তাই যেন পাই। মা হেসে বলছে, এমন ভাবে বলছিস যেন আমি কে না কে? ঠিক আছে,
দোয়া করি আল্লাহ তোর মনস্কামনা পূর্ণ করেন।
দোলা এবার বলছে,বাব্বাহ্ এতো করে দোয়া চাচ্ছ, সেটা এমন কি মূল্যবান জিনিস এর জন্য সেটা তো বলো। দোলা হেসে বলল, হাতে পাই তো আগে তারপর না হয় তোদের সবাইকে বলবো।

আমরা ডাইনিং টেবিলে বসা অবস্থাতেই নাস্তা খেতে ফুপুর ছোট ছেলে নাসির তার বৌ সহ উপস্থিত। ফুপু বলছেন,দেখ আমাদের কতো বেশি সৌভাগ্য। তোর বড়মামীকে অনেক বলে কয়ে নিয়ে এসেছি। নাসির বৌকে বলছে, এই শোভা বড়মামীকে সালাম করো। মা ও নীচু হবার আগেই
ধরে বললো, সালাম করতে হবে না মা। একটা আদর দেই তোমাকে। বলে,পার্স থেকে একটা খাম বের করে বললো, এখানে ৫০০০/ টাকা আছে। তুমি কিছু কিনে নিও। নাসির চেঁচিয়ে উঠলো, বড়মামী শুধু শুধু এসব দিচ্ছ কেন? তুমি সবাইকে নিয়ে এসেছো এতেই আমরা খুশি। মা এবার বলছে, বেশি কথা বলিস্ না তো,খালি হাতে কি নতুন বৌ এর মুখ দেখবো না কি? নাসির নাস্তা করতে করতে এবার আমার সাথে গল্প করতে শুরু করলো।

কিছু করার নেই,যেখানে রান্না হচ্ছে মানে বাসার পেছনে সেখানে গিয়ে কতোক্ষণ বাবুর্চিদের রান্না দেখলাম। ঘি আর গরমমশলার খুশবুতে চারদিক
ভরে গেছে। ফুপু আবার অনেক গুলো মাছের আইটেমও করেছেন। আমি দেখে দেখে ভাবছি, সন্তান যতোই ভুল করুক, মায়েদের এতো কিছু মনে রাখলে চলে না। নয়তো কতো শত শত বাচ্চা রা যে খানাখন্দে পড়ে, ধুঁকে ধুঁকে মরতো তার হিসেব নেই। ওদের মূল বাবুর্চির অনেক বয়স, সে এবার জিজ্ঞেস করছে আপনি কি বরের আপন ভাই? বললাম,না মামাতো ভাই। তরকারি নাড়তে নাড়তে দম নিতে কষ্ট হওয়া ভদ্রলোক এবার অন্য আরেক জনকে নাড়তে দিলেন। কিন্তু উনার নাড়া পছন্দ হয়নি বলে, আবার নিজেই নাড়া শুরু করলেন। অবশেষে পানি ঢেলে নাড়াপর্ব শেষ হলো।

ফুপুর বাগানের মালি এসব বসে বসে দেখছিল।
হঠাৎ সে বলে উঠলো এই বয়সে এত্তো কষ্ট করো বুড়া মিয়া,তোমার কি ছাওয়াল পুত নাই? দুঃখের হাসি হেসে বুড়া মিয়া বলছে,জিন্দেগীতে পরের বোঝা হই নাই। দোয়া কইরো বোঝা বননের (হওয়ার) আগে আল্লাহ যেন তুইল্যা নেয়। মালি আবার জিজ্ঞেস করছে, হেইটা তো সবার ই ইচ্ছা মিয়া। বলতাছি ছাওয়াল পুত নাই তোমার? ফূপুর তেজপাতা গাছের নীচে বসা হালকা বাতাসে সাদাপাকা ধবধবে দাড়ি চুলগুলো নড়তে থাকা বুড়া মিয়া এবার বিবর্ণ হাসি হেসে বলছে,মন তো চায় বলি মইরা সওব্ সাফ অইয়া গেছে গা। কিন্তু,ফেরেস্তা যদি আমিন বইল্যা ফেলে তাই হাচা( সত্য) কথা কই,তিনটা পুত বড় করনের পরে ভিন্ন(আলাদা) হইছে। মাইয়্যা দুইডার বিয়া দিছি। বুড়া বুড়ি থাকি। চিইন্তা বেবাক আমার বুড়ির লাইগ্যা, আমি মইরা গেলে বেফানাহ্( অসহায়) অইয়া যাইবো।

আমি মনে মনে হাসছি আর ভাবছি,এতো শ্রেণী বৈষম্য করে করে কি লাভ দুনিয়াতে? কোটিপতির যে সমস্যা,মধ্যবিত্তের সেই সমস্যা, আমার নিম্ন মধ্যবিত্ত মায়েরও একই সমস্যা আবার নিম্নবিত্তের
ও সেই সমস্যা। তারপরও চারটা পয়সা হাতে এলে আমরা কিভাবে নাক উঁচু স্বভাবের হয়ে যাই।
কিছুই বলা যায় না, দিন পাল্টালে এতো বড় বড় কথা ভাবা সাদিও হয়তো পাল্টে যাবে।

এখন মায়ের উপর একটু একটু রাগও লাগছে। এতো সকাল বেলা এসে কি লাভ হয়েছে, এখনও কতো সময় বাকি মূল অনুষ্ঠানের। হঠাৎ পিচ্চি ১টা মেয়ে কোথা থেকে দৌড়ে এসে বলছে,এই যে
আফনারে আফা ছাদে বুলায়। আমি বলি, তুমি কে? বলল,দারোয়ানের মেয়ে। জিজ্ঞেস করি,
আফাটা কে? বলে, নাম জানি না তো। কোথাকার আপু আর কোথায় ছাদ……… আমি পথও চিনি না। তাই বললাম, তুমি যাও আমি যাবো না। সে এবার হেসে বলে,আফনার বইন বুলায় তো। এতো আচ্ছা মুশকিল, মেয়েটার সাথে হাঁটতে শুরু করি।
ছাদের শেষ সিড়িতে এসে বললো,আফনে যান।
উঠে দেখি বিশাল ছাদ। আসলে এই দিকটা পেছনের দিকে পড়ায় বেশ নিরিবিলি। নীচের দুই তলাতে ভাড়াটে থাকে। এটা ফুপুদের অনেক দিন আগের বাস্তুভিটা বলা যায়। পরে ফুপা আধুনিক ডিজাইনে ওই বাসা বানান। বন্টন প্রক্রিয়ায় এতো
দিন ধরে ঝামেলা হওয়ায় এই জায়গা এখনো এমনি পড়ে আছে। নয়তো কবেই হয়তো বিক্রি করে দিতো। এরা আবার বিক্রি করতে খুব উস্তাদ।

ছিরিছাদ বিহীন এক ছাদ। একপাশে ছোট ছোট ঘাস আর আগাছায় ভরা। পাশেই কয়েকটি শাড়ি কাপড় মেলা। কোথায় কে? কেউই নেই। বাচ্চা টা
আমার সাথে ফাজলামি করলো না কি? ওপাশ টা
দেখেই নেমে যাবো ভাবছি। ওপাশে দেখি শাওন তার এলোচুল ছেড়ে দাঁড়িয়ে আছে। একা দেখছি,
অবাক হয়ে বলি তুই আমাকে ডেকেছিস নাকি?
বললো, কখন থেকে তোমার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
এতো দেরি করলে কেন? আমি বলি, আমাকে তুই এই বাড়িতে আজকে মার খাওয়াতে চাস না কি?হ্যাচকা টানে পানির ট্যাংকের গায়ে নিয়ে গেছে। হিসহিসিয়ে বলছে,এক কথা সবসময় শুনতে কিন্তু ভালো লাগে না। সেদিন হোটেলে তো ভালো ব্যবহার করলে? এখন আবার এরকম করছো !!!

আমি হাত সরিয়ে দিয়ে বলি, খবরদার মুখ দিয়ে কথা বল্। গায়ে টান দিয়ে কথা বলা লাগে নাকি? সে এসবে পাত্তা না দিয়ে বলছে, কি ঠিক করলে বলো? ভালবাসবে আমাকে? দেখো সারাটা জীবন খুব সুখে রাখব তোমায়। আমার মতো এত
ভালবাসা কেউ তোমাকে দিতে পারবে না। আমি হেসে বলি,দাদী বেঁচে থাকলে যা বলতেন তাই বলছি। পেটে নাই ভাত,চান্দো দিলাম হাত। আমি খাবো কিভাবে, বোনকে ধার এনে পড়ানোর টাকা শোধ করবো কিভাবে, ভাইয়ার মতো স্বার্থপর না হয়ে মাকে খুশি রাখবো কিভাবে……..এসব ভাবব
না তোকে ভালবাসার কথা ভাবব………সেটা বল্।
এতো চিন্তা মাথায় রেখে ভালবাসা আসবে কোথা থেকে? শোন পাগলামি করিস না, তুই অনেক ভালো বর পাবি। এবার শক্ত করে হাত ধরে বলে,
আমাকে তোমার ভালো লাগে কিনা বলো? আমি হেসে বলি, ভীষণ ভালো লাগে। নে সত্যি কথা বললাম, কোনো পার্থক্য কি দেখতে পাচ্ছিস? হাত
ছাড় এবার।

হাত ছেড়ে বললো, কেউ কিছু জানবে না, বুঝবে না। কারণ আমি তোমার সাথে দেখা করবো না,
কারো সামনে কথা বলবো না। তুমি যেভাবে বলবে সেভাবেই চলবো। যা বলবে তাই শোনবো। বলি,
এসব লুকোনো যায় না। তুই ভালো করেই জানিস্
তোর ভাইয়েরা বিশেষ করে ফাহিম ভাই কিরকম হিংস্র। আমি আমার মা বোন নিয়ে, তাদের সাথে একই বাউন্ডারির ভিতরে থাকবো………. আবার
তাদের বোনের সাথে প্রেম করবো……..এটা তোর
মা ও ভাইদের জন্য কতো শকিং জিনিস হবে তা
তুই বুঝিস্? আবেগে তো জীবনভর ভাসা যায়,
তীরে সাঁতরে উঠতে পারে কয়জন বল্? আমার
অনেক ভাবা হয়ে গেছে, এই সম্পর্ক হলে দুজনের
জীবন ই তছনছ হয়ে যাবে।

এবার প্রচন্ড জ্বরতপ্ত রোগীর মতো বিড়বিড় করে বলছে, এটা কি সাউথ ইন্ডিয়ান সিনেমা নাকি?
আমি আমার মতো পড়া শেষ করে চাকরি নিবো। আমার চাকরিও রেডি আছে। সবকিছু ঠিকঠাক চললে ধরো ৬ থেকে ৮ মাস। তোমার এরমধ্যে
চাকরি হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তারপর, এমন বুদ্ধি করে সবকিছু করবো……..তোমার বা তোমার
পরিবারের কোনো ক্ষতি হবে না দেখো। তুমি শুধু হ্যা বলে দাও প্লিজ। আমি বলি, এটা আফজাল সুবর্ণার নাটক নাকি? সব ঠিকঠাক স্ক্রীপ্ট মতো চলবে আর নায়ক নায়িকার মিল হয়ে যাবে।শোন্
একটা কথা বলি,কষ্ট হলেও মাথা থেকে বাদ দে
এসব চিন্তা। আমি নীচে নামছি, তুই ৫ মিনিট পর নীচে নাম। একসাথে নামলে আবার কে কোনদিক
থেকে দেখে কোন ঝামেলা পাকাবে কে জানে?

বলে ঘুরতে যাবো, কেন যে তাকাতে গেলাম……………… দেখি ছাদের রেলিং দুহাতে শক্ত করে ধরে অবিরল ধারায় কাঁদছে শাওন। দেখে মনে হচ্ছে, এইমাত্র বুলডোজার দিয়ে কেউ ওর হৃদয়,মন সব গুঁড়িয়ে দিয়ে গেছে। চোখের পলকে জগতের সব
আলো নিভে গেছে। ধূসর,বিবর্ণ পৃথিবীতে দুঃখী
এক রাজকন্যা একবুক অভিমান নিয়ে যেন কান্না করছে। এতো চেষ্টা করেও আর সিঁড়ির দিকে এগোতে পারলাম না। শাওনের পাশে গিয়ে বলি,
এতো কিছু বোঝানোর পরও তুই এতো অবুঝ হলে কি করা যায় বলতো? আমি একা হলে তো কথাই ছিল না। কান্না বন্ধ কর্,মুখ মুছে নীচে যা প্লিজ। এবার খপ্ করে শার্ট ধরে বলছে, তাহলে তুমি হ্যা বলছো? তুমি খুশিমনে রাজি হয়েছো?
আর কিছু বলার শক্তি নেই অধম সাদির, এবার
ওর হাত ছাড়িয়ে হাত চাপড়ে বলি, কথা দিলাম
আরো কিছুদিন খুব ভালো করে ভেবে তোকে জানাবো। তবে এখন কিছু বলছি না কিন্তু। তুই এবার শান্ত হয়ে নীচে নেমে স্বাভাবিক ভাবে চল্।
আমি নামছি, তুই আস্তে আস্তে তবে চলে আয়।

ফুপুর ড্রইংরুমে অনেক গেষ্টদের ভিড়। আমি এদের বেশীরভাগ কেই চিনি না। পরে শুনেছি এরা ফুপুর শশুর বাড়ির লোক। এতো সাজসজ্জা ও
কড়া পারফিউম এর সুগন্ধে রুম যেন একদম ভুরভুর করছে। ভেতরের রুমে ঢুকতেই মা বলছে,
কিরে কোথায় ছিলি এতোক্ষণ? বললাম বাবুর্চির
রান্না দেখছিলাম আমি। নামাজ পড়ে লাঞ্চ করে মনে হলো, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে হয়তো পুরো পার্টি শুরু হবে। এতো সময় এখানে বসে বোর হওয়ার চেয়ে, রাকিবের বাসা থেকে একবার ঢু মেরে আসি‌। বাসে উঠে আমার হাতের এবং
শার্টের যেখানে শাওন হাত রেখেছিল সে জায়গায় হাত বুলাই। মনে হচ্ছে এখানে হাত দিলে, হয়তো বা ওর হাতের ছোঁয়া পাওয়া যাবে। কি যে এক ঝামেলায় পড়লাম, শাওন কে হ্যা যদি বলি এর ফল যে ভালো হবে না………….সেটা বুঝতে অন্তত
বুদ্ধিমান হতে হয় না।

রাকিবের বাসায় গিয়ে দেখি এক হাফপ্লেটে ৪টা
স্যান্ডউইচ আর কফি এক মগ নিয়ে বসেছে। কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই বললো,আরে আজকে লিউনার বার্থডে ছিল ভুলে গেছি। দেখতো কেউ কি কারো ফাইনাল পরীক্ষা চলাকালে এরকম মনে রাখতে পারে? রেগে মেগে একদম শেষ,
এখন বলেও গেছি এই রেষ্টুরেন্টে আসার জন্য। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করে আছি। এখন বলে,আসতে পারব না। ফিরে যাও তুমি। আর খেতে ইচ্ছে হয়নি। খিদের চোটে চোখে অন্ধকার দেখছি, এখন এগুলো নিয়ে বসছি। দাঁড়া তোকে দিতে বলি। আমি মানা করি, এইমাত্র লাঞ্চ করে তবে এসেছি। তুই বরং আমার কিছু কথা শোন, তবেই হবে। আজকের ঘটনা সব খুলে বললাম।

শুনে বলছে, একটা মেয়ে কতোটা ডেসপারেট না হলে এভাবে বলে? কিন্তু এখন তোর কথা শুনে শুনে আমারো মনে হচ্ছে, দুঃখ পাবার পথ তৈরি করছিস না তো? আমি বলি, কি করি বলতো? মনটা একপা যেন ওর দিকে এগিয়ে আছে। এক
পা আবার পিছিয়ে আছে। এবার বলছে,শোন আরো ২টা পরীক্ষা বাকি আছে না? তুই এই এক সপ্তাহের জন্য এই বাসায় চলে আয়। পরে নাহয় চিন্তা ভাবনা করে কিছু একটা করা যাবে। আমি
কুঁচকে যাবে বলে শার্ট খুলে বললাম, আমি একটু
ঘুমোই। তুই শব্দ করিস্ না তো। রাকিব এবার ফিচেল হাসি হেসে বলে, দিনে স্বপ্ন দেখা মারাত্মক
বদভ্যাস। কিছু বললেই রাগানোর চেষ্টায় আরো বকবক করবে। তাই চুপচাপ শুয়ে পড়ি।

মাগরিবের নামাজ পর ফুপুর বাসায় গিয়ে দেখি শাওনের পুরো পরিবার একসাথে বসে আছে।
মা একমনে সুপারি কেটে জমাচ্ছে। দোলা, মেঘলা
ও শাওন কাউকেই দেখা যাচ্ছে না এখানে। শুধু অদ্ভুত, কঠিন দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন শাওনের মা। সালাম দিলাম, কোনো উত্তর নেই। শুধু মাথা নাড়লেন। ফাহিম ভাই পরীক্ষা শেষ নাকি জিজ্ঞেস করলেন। এবার শাওনের মা মানে মিসেস খাজুর বেগম বললেন, তোমাদের তো বৃহস্পতি এখন তুঙ্গে বাছা। বোন দুটো তো মেডিকেলে চান্স পেলো। মা একবার চোখ তুলে তাকিয়ে আবার সুপারি কাটায় মন দিয়েছে। আমি বলি,হ্যা দোয়া করবেন চাচী। মনে মনে ভাবছি,
ভাগ্যিস দোলা এখানে ছিল না। নয়তো ঝগড়া লাগিয়ে দিতো।

ভদ্রমহিলা এবার বলছেন,তা আমি তো জানি ওখানে বইপত্তর কিনতে কিনতেই পয়সার কাম শেষ। তোমরা এই খরচ চালাবে কিভাবে? আমি কিছু বলার আগেই মা বলছে,এতো বছর যেমন করে আল্লাহ চালিয়েছেন তেমনি করে এখনও চালাবেন ইনশাআল্লাহ। তোমার ভাই মারা গেছেন আজ কত বছর হল? আল্লাহ ই সহায় আছেন কারণ এতিমদের জন্য তার বড্ড ভালবাসা। এসব
নিয়ে চিন্তা করো না। নিম পাতার রস খাওয়া মুখ করে, শাওনের মা এবার বসে আছেন। আমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবছি, তোমার মেয়ে কি করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছে………. তুমি জানলে তো হার্ট অ্যাটাক হবে তোমার। পরের মেয়েদের জন্য না ভেবে, নিজের মেয়েটাকে নিয়ে অন্তত ভাবো। সেটাই বরং ভবিষ্যতে কাজে আসবে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here