###জীবন যখন যেমন(৬ষ্ঠ পর্ব)
###লাকি রশীদ

সেদিন রাত সাড়ে আটটায় অবশেষে ভাইয়ার দেয়া কলিং বেল বেজে উঠলো। মায়ের অপেক্ষা এতোটাই বেশি ছিল যে, দরজার নীচের সিটকিনি শুধু লাগিয়েছিল। মা ই আমাদের বাসায় সবসময় দরজাতে লাগানো দুটো সিটকিনি যেন লাগানো হয় তার আদেশদাতা ছিল। কিন্তু, এখন সে কি পরিমান উন্মুখ এতেই বুঝতে পারছি। ভাইয়া আসবে বলে তাড়াতাড়ি এশার নামাজ পড়েছে। মেঘলা মায়ের অস্থিরতা দেখে সাথে সাথে ছিল। দরজা মেঘলাই খুলে দিয়েছে। ভাইয়ার হাতে ২টা মিষ্টির প্যাকেট। টেবিলে রাখতেই মা হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব যদি এই মুহূর্তে বাইরের কেউ দেখতো, তবে নিঃসন্দেহে ভাবতো তিন দিন পর নয়, নিশ্চিত তিন বছর পর মা ছেলের দেখা পেয়েছে।

এবার মা বলছে, মিষ্টি নিয়ে এসেছিস কেন রে?
ভাইয়া কুন্ঠিত স্বরে বলল,এমনি এনেছি মা। এটা খুবই মজার মিষ্টি,ক্ষীরতোষ মিষ্টি বলে। বেশি করে তরল দুধে ভেজানো থাকে। এই মেঘলা, কিরে তোরা খা না। সাদি আর মাকে দে। দোলা কোথায় রে? পড়তে বসেছে নাকি,ডাক দে তো সাদি। মিষ্টি খেয়ে যাক্। মেঘলা বলছে,চা খাবে তো ভাইয়া? এবার সে বলছে, খেতে তো ইচ্ছে করছে, কিন্তু রাত পৌণে নয়টা বাজে। তখন মাত্র দোলারাণী পদার্পণ করছেন,ভাইয়া দেখেনি ওকে। নইলে হয়তো বলতো না।

তীক্ষ্মস্বরে এবার দোলা বলছে, কেন তোমার বৌ কি এবার নিষেধ করেছে রাত পৌনে নয়টার পর চা খেতে? শোনো ভাইয়া, ঘুম থেকে উঠেই সেই ভোরে মা তোমার জন্য কিছু পোয়াপিঠা বানিয়ে রেখেছে। তুমি তো গরম চা এর সাথে এগুলো খাও,চা বানিয়ে দিচ্ছি। দয়া করে মায়ের কষ্টের মর্যাদা দাও। এবার ভাইয়া অপ্রস্তুত হয়ে বলছে, মায়ের হাতের পোয়াপিঠা অনেক দিন খাইনি। ঠিক আছে, আমার সাথে মাকেও চা দে। আর তোরা মিষ্টি খা। মেঘলা বাটি, চামচ আনতেই এক বাটিতে দুইটি মিষ্টি নিয়ে ভাইয়া মাকে দিল। মা খেতে খেতে বললো, ছোট বোন নাহয় একটা কথা
বলেই ফেলছে। সেজন্য নিজের খোঁজ খবর দেয়া
বন্ধ করে দিবি বাবা? তা কোথায় ছিলি বৌমা কে নিয়ে এতো দিন?

চা এসে গেছে, ভাইয়া পিঠাতে এক কামড় দেয়, সাথে সাথে এক চুমুক চা খায়। অনেক আগের অভ্যাস ওর। ছোটচাচা দেখে একবার বকেছিল,
এতো আগুন গরম খেলে তোর গ্যাষ্ট্রিকের সমস্যা হবে রে। কে শোনে কার কথা !!! চাচা যাবার পর
আমাকে হেসে হেসে বলেছিল,শোন সাদি দেখবি দুই ধরনের লোক উপদেশ দেয় বেশি। এক হচ্ছে
ডাক্তার আর দুই হচ্ছে টিচার। তাদের অবশ্য দোষ দিয়ে লাভ নেই, সারাক্ষণ উপদেশ দেয়ার উপরে থাকে তো……. সেজন্য সবাইকে তাই মনে করে।
এসব এক কান দিয়ে শোনে অন্য কান দিয়ে বের করে দিবি। ওর এরকম খাওয়া দেখে, অনেক দিন
আগের কথা আমার হঠাৎ করে মনে পড়ে গেল।

মা আবার বললো, কিরে তুই বললি না কোথায় ছিলি? ভাইয়া বলছে, কোথায় আবার থাকবো
সিমার বাবার বাসায় ছিলাম। ওইদিন সিমা জোরে আমাকে ধরে নিয়ে যায় ওর বাবার বাসায়। ভাগ্য ভালো ছিল, সকাল বলে ওর বাবা তখনো তার জুয়েলার্সে যাননি। সিমার সব কথা শুনে বললেন,
এখানে তোমাদের দুজনকে রাখতে পারি। তবে, আমার একটা শর্ত আছে। জানো মনে হয় আমার
একমাত্র ছেলে ইংল্যান্ড এ পড়তে গিয়ে ওখানেই থেকে গেছে। ছ’মাসে ন’মাসে একবার ফোন করে। আসবে বলে মনে হয়না। কিসে মজে আছে সে ই
জানে !!!

যেহেতু আমার একটা ই মেয়ে, আমি তো অনেক আগেই ভেবে রেখেছিলাম আমার মেয়ে জামাই দোকানের কাজ শিখে এগুলো ও ই চালাবে। আমার মেয়ের পক্ষে যে দোকান চালানো আদৌও সম্ভব নয়, সেটা আমি খুব ভালো করে ই জানি।
এবার তুমি দেখো হাদি, ঘরজামাই থাকতে তুমি রাজি কিনা? আমার ৪ তলা বাসাতে দোতলায় আমি থাকি। বাকিগুলো ভাড়া দিয়েছি। তোমরা আমাদের সাথেই থাকবে, খাওয়া দাওয়া এখানেই
একসাথে করবে। রাজি থাকলে থাকো,আর না থাকলে লোক হাসিও না। তাড়াতাড়ি চলে যাও।

এতোক্ষণ আমরা ৪ জন খুব মনোযোগ দিয়ে যেন, রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর কোনো উপন্যাসের পান্ডুলিপি শোনছিলাম। এবার মা বললো, এরপর
তুই কি জবাব দিলি? ভাইয়া চায়ের শেষ চুমুক মুখে দিয়ে বললো, কি আবার বলবো,রাজি হয়ে গেলাম। মায়ের আর্তনাদ এবার স্পষ্ট, ঘরজামাই থাকতে রাজি হয়ে গেলি? ভাইয়া এবার বেশ রাগী গলায় বললো, তো কি করবো? জানো নাতো তুমি
চাকরির বাজারে কতটুকু মন্দা চলছে। তাছাড়া আমাদের কোনো লিঙ্ক আছে কি? চাকরি কি হাতের মোয়া না কি? এভাবে কোনো চ্যানেল ছাড়া
চাকরি পাওয়া এখন প্রায় অসম্ভব ব্যাপার মা।

মা এবার চোখ বড়বড় করে বললো, লজ্জা করে না এসব আবার বড়গলায় বলছিস? তোর বাবা চলে যাওয়ার পর আমি খেয়ে না খেয়ে,পরে না পরে তোদের নিয়ে অকূল সাগরে ভেসে ভেসে তোকে মাষ্টার্স করিয়েছি। আমি জানি আমার উপর কি রকম চাপ গেছে। তোর কি মনে হয়, ঘরজামাই থাকবি বলে এতো কষ্ট করেছি আমি? ভাইয়া এবার চুপ করে আছে। আমি ভাবছি,এখন মা কি করবে? ভেঙ্গে পড়বে না সেদিনের মতো ঠিকই সামলে নিবে? একমাত্র আল্লাহ তাআলা ই মালুম।

ভাইয়াকে চুপ দেখে মা মনে হয় ভেবেছে, ছেলেকে বুঝালেও হয়তো ঠিকই বুঝবে। এবার বলছে, তোর ছোট ৩ টা ভাইবোন। বাবা না থাকলে বড় ভাইয়ের উপর অনেক দ্বায়িত্ব কর্তব্য থাকে হাদি। আমার বাবা বলতেন,”ঘর নষ্ট বড়ভাই পাগল”। মানে বড়ভাই ঠিক না থাকলে এই পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়,আগে বাড়তে পারে না সোনা। তুই তোর শশুর কে বল্, এটা সম্ভব নয়। আমি আমার বাসা
তেই থাকবো। কালকেই বৌমা কে সাথে নিয়ে চলে আয়। এবার ভাইয়া বলছে, তোমার বৌ এখানে আর আসবে না মা। এবার দোলা বললো, তাহলে তুমি চলে আসো। চাকরি যোগাড় করে ছুটিরদিন
গুলোতে না হয় শশুরবাড়ি তে গিয়ে থাকলে। ভাইয়া এবার দোলাকে হুংকার দিলো, তোর এসব কথায় মনে হচ্ছে আমার জন্য চাকরি নিয়ে অফিসগুলো বসে আছে। যা বুঝিস না তা নিয়ে কথা বলতে যাস্ না। তুই তো বেশি বুঝে, বেশি কথা বলতে গিয়েই সব ভেজাল বাধিয়ে বসে আছিস। দয়া করে মাকে আর বুদ্ধি দিতে যাস্ না।

মা এবার চিৎকার দিয়ে উঠলো, মাকে ও বুদ্ধি দিবে কেন? মায়ের মাথা তো আল্লাহ এখনো ভালো রেখেছেন। মা বলছি, তুই বিধবা মা আর তিনটা এতিম ভাইবোনদের ছেড়ে শশুরবাড়ি তে যাবার কথা………. ভুলেও মনে আনিস না বাপ। এতোটাও হারামী হোস্ না। বাপ সারাজীবনেও একটা হারাম পয়সা তোদেরকে খাইয়ে, তোদের গায়ের গোশত হারাম দিয়ে বানায়নি। তুই এসব হারামীপনা কথা বলছিস কি করে? এখানে থাক্,
বৌমাকে জানিয়ে দে। আগামীকাল থেকে চাকরি খুঁজতে শুরু কর্। আল্লাহ এতিমদের এমনিতেই সাহায্য করেন। আর বৌমা এখানে আসলে তো আরো ভালো কথা। সবাই একসাথে মিলেমিশে আমরা থাকব। কোনো সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ।

এবার ভাইয়া ঠোঁট টিপে হেসে বলে,সিমা ঠিকই বলেছিল ওখানে গেলে তোমাকে ওরা ছাড়বে না।
তোমাদের এতো ভয় পেয়েছে, এখন ওদের গাড়ি দিয়ে আমায় পাঠিয়েছে। আমি তো দুদিন ধরে আমার শ্বশুরের সাথে দোকানে গিয়ে কাজ শিখছি। অভিজাত এরিয়ায় এয়ার কন্ডিশনড সুন্দর সুন্দর সাজানো গোছানো দোকান, কোনো কষ্ট হয়না। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না। আমি তোমাকে মাসের প্রথমদিকে এসে সংসার খরচের টাকা দিয়ে যাবো। কোনো সমস্যা নেই। সবকিছুই হবে আমার শ্বশুরের শর্ত মেনে চললে। ওনার কথার অন্যথা হলে কিছুই পাবো না। সেটা আমাদের সবার জন্য খারাপ হবে মা। প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করো।

সাথে সাথেই মা এতো জোরে একটা চড় মেরেছে ভাইয়াকে যে, সে হকচকিয়ে গেছে। ক্লাশ এইটে থাকতে,বন্ধুদের কথায় সিগারেটে টানার অপরাধে
একবার খেয়েছিল,আর এই খেলো। মা দুই চোখ বড় বড় করে বললো, আমাদের খারাপ/ ভালো তোকে আর চিন্তা করতে হবে না। আমাদের জন্য আমাদের আল্লাহ ই যথেষ্ট। উনি ই আমাদের এতো দিন চালিয়েছেন, এখনো চালাবেন। তুই আর কক্ষনো এই বাড়িতে পা দিবি না। আমার মরা মুখও দেখবি না বলে দিলাম। বেরিয়ে যা এক্ষুনি এখান থেকে। অকৃতজ্ঞ,চশমখোর ছেলে।

চোখের পর্দা নেই তোর। এদের কথায় কিভাবে রাজি হলি আর কোন মুখে তুই বললি সবাইকে ছেড়ে যাবার কথা? এতোদিন পাললাম, পোষলাম আমি,কষ্ট করলাম আমি, এত বড় সিদ্ধান্ত নেবার মতো বড় বানালাম আমি………… আর লোভী, স্বার্থপর ছেলে এয়ার কন্ডিশনড দোকান দেখে, বিশাল বড় বাসা দেখে, বড়লোকের জামাই হতে কতো মজা ভেবে……….. ড্যাংড্যাং করে নাচতে নাচতে চলে যাচ্ছে। ঝাড়ু মারি এমন ছেলের কপালে। তুই আমার চোখের সামনে থেকে এক্ষুনি দূর হয়ে যা বললাম আমি। আর কান খুলে শোন,
জীবনেও কোনোদিন আমাকে মা বলে ডাকবি না।
আমি আজ থেকে মনে করবো আমার ১টা ছেলে ও ২টা মেয়ে। ভাইয়া মাথা নিচু করে চলে গেল।

আমি দেখি মার মুখ অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। চোখ দুটো বড় বড় করে এবার চিৎকার দিলেন,
এই হারামীর মিষ্টির প্যাকেট এখনো টেবিলের উপরে কেন শুনি? এই মেঘলা এই প্যাকেটগুলো এক্ষুনি ডাষ্টবিনে ফেলে দিয়ে আয় বললাম। এই
ঘরে আর কোনদিন যেন ওর প্রসঙ্গ না উঠে।

আমি এবার একগ্লাস পানি ঢেলে মায়ের পিঠে হাত বুলিয়ে বলি,যে থাকতে চায় না তাকে জোর করে ধরে রাখা যায় না মা। তুমি মেজাজ দেখিয়ে দয়া করে শরীরটা খারাপ করো না। তুমি ছাড়া আমাদের আর কে আছে বলো? মা এবার বলছে, কি করে পারলো বল্? ছোট ছোট ভাই-বোন ও মাকে ছেড়ে যেতে? আমি হঠাৎ খেয়াল করি, মা কাঁপছে। ভেবেছিলাম কথা বলে একটু স্বাভাবিক বানিয়ে মাকে বিছানায় নিবো। কিন্তু শরীরের এতো
কাঁপা দেখে মুখে পানি দিতে যাই, দোলা চিৎকার করে বলে এখন পানি দিস না। দেখছিস না, মা পড়ে যাচ্ছে। গ্লাস রেখে মাকে ধর ভালো করে। আমি যেন আমাতে নেই, বুদ্ধি হবার পর থেকে মা
কে কখনো এমন দেখিনি। মেঘলা চট করে গ্লাসটা নিতেই মা আমার হাতের উপর এলিয়ে পড়ে।

আমার আর কিছুই মনে নেই। মাকে ধরে ঝাকুনি দিচ্ছি আর বলছি উঠো না মা…….. এটুকু ছাড়া।ভাগ্য ভালো ছিল দোলা বাসায় থাকায় এম্বূলেন্স কল করে,অভিকে ফোন দিয়ে বলে মেডিকেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে যেন আমাদের জন্য অপেক্ষা করে। শুধু ডাঃ খালেদা হককে পাওয়া যায়নি, তিনি ওটিতে ছিলেন বলে। মেঘলা কাঁদছে দেখে দোলা ধমক দিয়েছে, কেঁদে কি হবে? মায়ের কিছু কাপড় ব্যাগে নে, তাতে বরং কাজ হবে। তালা চাবি হাতে নে তোর। চুলা বন্ধ আছে কিনা দেখ। এভাবেই ইস্পাত কঠিন নার্ভের অধিকারী দোলা সবকিছু ঠিক করলে আমরা মাকে নিয়ে হাসপাতালে রওয়ানা হই। এর পরের ঘন্টা দুয়েক এর কথা আমাকে কেউ জিজ্ঞেস করলে পাবে না। আমার এতো বছরের জীবনে যতোটা কাঁদিনি তার কয়েক গুণ বেশি কেঁদেছি।

বাবা সবসময় বলতো,পৃথিবীতে অণু পরিমাণ মন্দ করলে যেমন তার কর্মফল মিলবে ঠিক তেমনি ভালো কাজ করলে দুনিয়া ও আখেরাতে কর্মফল
মিলবেই। অভিকে মা আমাদের চেয়েও আদর করে। মায়ের সৎকর্ম ই হয়তো ঘুরে ঘুরে এসেছে, অভি আজ মায়ের জন্য যা করেছে, তা আমরা সারা জীবনে কখনোই শোধ করতে পারব না। যে
জায়গায় হাসপাতালে গেছে,যার কাছে গেছে…….
সবখানে বলেছে আমার মা ইনি। সে থাকায় ও সবাইকে চিনে বলে খুব তাড়াতাড়ি মাকে ভর্তি করা সম্ভব হয়েছে। তারপর ঘর্মাক্ত অবস্থায় বলে
উঠে,এই সাদি ভাই কোনো কাজের না। মেয়েদের মতো শুধু কাঁদতে পারে।

বিপদের সময় এতো কান্নাকাটি কাজে লাগে না। তাও,ভাগ্য ভালো যে শক্ত মনের অধিকারী আমাদের দোলা রাণী নিপুণ হাতে সবকিছু সময়মত সামলে নিয়েছেন। আর হবু ডাক্তার মেঘলা এতো কাঁদলে,ভবিষ্যতে রোগি নিয়ে একসাথে কাঁদবে। আমি বেশ বুঝতে পারছি,
অভি পরিবেশ বদলে দিতে চাইছে। মেঘলা খুব কাঁদছে। এবার দোলা বিরক্ত হয়ে ওকে ধমক দিল, এবার অন্তত চুপ কর। দেখিস মা ঠিকই ইনশাআল্লাহ ভালো হয়ে যাবে।

বেশ কিছুক্ষণ পর,আমরা জানতে পারলাম, মায়ের মাইল্ড হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তারা আজকে
রাতে আইসিইউতে রেখে কালকে কেবিনে দিয়ে দিবেন। আপাতত চিন্তার কিছু নেই, তবে সবাই যেন আবার বাসায় না যাই সেটা সাবধান করে দিল। অভি এবার বলছে, আমি তো এখানে থাকতে থাকতে অভ্যস্ত। তাই আমি রাতে থাকি। তোমরা তিনজন বাসায় চলে যাও। আমি বলি,এ
টা সম্ভব নয়। আমি বাসায় গেলে স্বস্তি পাবো না। দোলা বললো,সবাই রাতে থেকে সকালে ঘুমে ঢুলুঢুলু করা……… মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাহলে তুমি থাকো, আমরা দুইবোন চলে যাই। আমি বলি বেশ রাত হয়ে গেছে। তোরা যাবি কিভাবে? সব সমস্যার সমাধানকারী অভি এবার বলল, তুমি চিন্তা করো না। আমি এদের নামিয়ে দিয়ে বাসায় যাবো।

ওরা চলে গেল,ক্ষিদে তৃঞ্চা কিছুই আমার নেই। কিন্তু জোর করে বিস্কিট ও কলা খেলাম। চেয়ারে বসে বসে ঝিমুচ্ছিলাম, হঠাৎ দেখি বৃদ্ধ একজন লোককে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে। বাইরে তার পরিবারের ৩/৪ জন দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে তরুণ যে ছেলেটা সে দেখি এক কোণে সেজদায়
পড়ে আল্লাহর কাছে আহাজারি করছে। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবছি, এটাই হলো বিশ্বাস।

ওখানে থাকা এক ভদ্রলোক কে বললাম, রোগীর কে ওই ছেলেটা? বললেন, সবচেয়ে ছোট ছেলে। আমি উনার বড় ছেলে। গল্প করলেন, উনার বাবা তিন তারা হোটেলের হেড বাবুর্চি। প্রতিদিন পুরো এক প্যাকেট সিগারেট খাওয়া তার লাগে। অনেক আগে থেকেই ডাক্তার বারণ করেছিল,যা তিনি মানেননি। এই এক সিগারেট ই যে কতো ক্ষতি কতো পরিবারের করছে তার হিসাব খুঁজে পাওয়া যাবে না। হঠাৎ করে মনে হলো আমার মায়ের যদি কিছু হয়ে যায়? আমি অপদার্থ তো এখনও মাকে একফোঁটা সুখও দিতে পারলাম না। মাথার চুল মুঠো করে ধরে ভাবি, সেদিন কোন বুদ্ধিতে, কোন পাপে যে মায়ের কথা মতো ভাইয়াকে ফোন দিতে গেলাম !!! সেই ভুলের মাশুল এখন কতটুকু গুনতে হবে কে জানে?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here