###জীবন যখন যেমন(৩য় পর্ব)
###লাকি রশীদ

আমার ছাত্রের নাম আরিয়ান। ওর মায়ের নাম প্রথমদিন ভদ্রমহিলা নিজেই বলেছিলেন, আমি মিসেস আইরীন। আরিয়ান কে পড়ানো শুরু করতেই কোথা থেকে দৌড়ে ব্যস্তসমস্ত হয়ে এসে বললেন, আপনি কালকে রাতে আমাদের বাসায় খাবেন। আকাশ বাইরে থেকে এসেছে বলে আমি কাছের কিছু মানুষকে বলেছি। আমি কুন্ঠিত স্বরে বলি,স্যরি আপু আমি তো একটা কাজে বাইরে যাবো। এখন আহ্লাদী স্বরে বলছেন,ও কাজ অন্য
দিন করলে হয় না সাদি? যেন আমি অনুপস্থিত থাকলে বিরাট কোনো ক্ষতি হবে তার। আমি বলি, জরুরি কাজ আপু, নয়তো ঠিকই আসতাম। দরজা সম্পুর্ন খোলা থাকায় দেখা যাচ্ছে উনার হাজব্যান্ড ওই দিকে যাচ্ছেন, এবার উনাকে ডাকছেন আকাশ এই আকাশ শোনো তো,সাদি আগামীকাল রাতে আসতে চাচ্ছেন না। তুমি একটু বলে দেখো না প্লিজ। উনার মতো উনার স্বামী যে এতো চপল নয়, সেটাই রক্ষা।

ঝকঝকে সাদা দাঁতের সারিতে ভদ্রলোক এবার হাসিমুখে বললেন, আপনি তো আমার চেয়ে অনেক বেশি সাহসী সাদি। কি সুন্দর আমার বৌটাকে না বলে দিলেন। আমি তো ভয়ে বলতাম ই পারতাম না। এবার স্ত্রী বলছেন, তোমাকে ঠাট্টা করার জন্য এনেছি নাকি, উনাকে বলার জন্য ডেকেছি। উনি এবার আমার অসহায় মুখ দেখে বলছেন,আইরীন একান্ত অসম্ভব মনে হলে না হয় এবারের টা থাক না। নেক্সটাতে আসবেন না হয়।
এবার আইরীন আপু অনিচ্ছাসত্ত্বেও টেনেটুনে বলছেন, ঠিক আছে তাহলে কি আর করা? একটু
এগুতেই ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে থ্যাংকস বললাম। উনিও হেসে প্রত্যুত্তর দিয়ে চলে গেলেন।

আমি আপনমনে ভাবছি,এরা এতো এতো আনন্দ নিয়ে থাকে,আনন্দে জীবন অতিবাহিত করে…….. এদের কখনো হয়তো রোগে ধরবে না। আমার ছোট চাচা ডাক্তার, এমবিবিএস না রীতিমতো এসোসিয়েট প্রফেসার………. উনি কথায় কথায় বলেন টেনশন মানুষ কে ঘুণপোকার মতো কুরে কুরে খায়। টেনশন ফ্রি হাসিখুশি মানুষ অনেক দিন বাঁচে। এরাও হচ্ছে এই টাইপের মানুষ। শুধু আমার মা ই টেনশনে ভরা এক মানুষ। দুনিয়াতে সূখ দেখে যেতে পারবেন কি না কে জানে?

আরিয়ান এর পড়াগুলো যতটুকু সম্ভব ঝালাই করিয়ে গেলাম। বাকিটুকু পরের দিন পড়তে বলে উঠলাম। পা বাড়াবো ঠিক তক্ষুনি সে বলছে, স্যার আপনি না বললেন প্রতিবার পরীক্ষার আগে আমার জন্য দোয়া করবেন। কই করলেন না তো?
আমি হেসে বলি, বোকা ছেলে দোয়া কি তোমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে করবো নাকি? পরের সপ্তাহে পরীক্ষা,আজ রাতে অবশ্যই দোয়া করবো,দেখবে প্রতিবারের মতো ইনশাআল্লাহ তোমার পরীক্ষা খুব ভালো হবে। তবে, বাকিগুলো রিভিশন দিবে অবশ্যই,পরশু দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমি ছাত্রদের কাছে কিছু টা কঠোর মনোভাব দেখাতে চাই। কিন্তু চেষ্টা করে করেও অনেক সময় সেটা ধরে রাখতে পারি না।

রাত ৮টায় ঘরের দিকে যাচ্ছি। মাত্র কয়েকটা ঘন্টা………. কিন্তু মনে হচ্ছে অনেক পরে মায়ের সাথে দেখা হবে। মাও মনে হয় আমার জন্য আকুলি বিকুলি করছে। কলিং বেল দিতেই দোলা খুলে দিয়েছে দরজা। বললাম,মা কোথায় রে? বললো, নামাজ পড়তে গেছে মনে হয়। জিজ্ঞেস করছে চানাচুর মাখা খাবি ছোটভাই? আরিয়ানের বাসায় নাস্তা করে এসেছি,পেট ঠাসা মনে হচ্ছে। কিন্তু দোলার একটা সমস্যা হলো,ও কোনো জিনিস সাধলে যদি না করা হয় তবে খ্যাক করে উঠে। বললাম, খুব সামান্য দিস, নয়তো ভাত খেতে পারবো না। বসে বসে ভাবছি,যদি কেউ পারফেকশন দেখতে চায়, তবে দোলার কাজ দেখলেই সেটা দৃশ্যমান হবে।

আমি দেখি মেঘলা বাটি, চামচ টেবিলে রাখছে। দোলা বঁটি দিয়ে কুচি কুচি করে পেঁয়াজ, টমেটো, লেবু,শসা ও ধনেপাতা কাটছে। একদম শেষে হাতে ছোট পলিথিন ব্যাগ পেঁচিয়ে,বোম্বাই মরিচ কুচি কুচি করছে। সবকিছু টেবিলে এনে বড় বড় দুটো চানাচুরের প্যাকেট ভাতের গামলায় ঢাললো। তারপর সরিষার তেল দিয়ে মাখাচ্ছে আর বলছে,বুঝলি ছোট ভাই আজ বাসায় ফেরার পথে ঝালমুড়ি খেতে খুব ইচ্ছে করছিলো। তারপর মনে হলো,একা একা খেয়ে কি লাভ? এগুলো নিয়ে যাই, মাখিয়ে সবাই মিলে খাবো। কাঁচাবাজার পেছনে ফেলে এসেছি বলে আবার ঘুরে গেলাম। একদিন না হয়,ভাত দেরিতে খাওয়া যাবে। সমস্যা কি বল্? আমি বলি, তা তো ঠিকই। এখন দয়া করে আমাকে তাড়াতাড়ি দিয়ে দে। ফ্রেশ হতে হবে,আর ভাইয়া কোথায় খাবে না সে?

মেঘলা গিয়ে দরজা নক করতেই,ভাইয়া ও ভাবী এসে বসেছে। দোলা বলেছে ইনি নাকি পড়াশোনা তে ভীষণ খারাপ রেজাল্ট করেছেন। তাই, তার বাবা ভাইয়া পড়িয়ে পাস করাতে পারবে……….এই
শর্তে ভাইয়া কে গৃহশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
একমাত্র মেয়ে,এসব শুনে পরদিনই নাকি মেয়ের কাপড় চোপড় সব বাইরে নিয়ে পুড়িয়ে ফেলেন। সকালের মতো এখনো দেখি,ভাবীর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দোলা সবার জন্য একেকটা হাফপ্লেটে তুলে দিচ্ছে, ভাইয়া ভাবীকে দিল প্রথমে। তার তাকানো দেখে মনে হচ্ছে, পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্টতম খাবার তাকে দেয়া হয়েছে।

আমার ভীষণ ভয় লাগছে, দোলা খেয়াল করলে আবার কোন যুদ্ধ না বাঁধে। ঝগড়া আমার দুই চোখের বিষ। দেখি এবার পানি খাচ্ছেন আর ভাইয়াকে বলছে, এতো ঝাল কি করে খাও শুনি? এগুলো খেলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। দোলা বলছে, তোমার ননীর জিহ্বা এসব খেলে গলে পড়ে যাবে। সমস্যা নেই, সবকিছু সবার জন্য না, ভাইয়াকে দিয়ে দাও।ভাবী ভ্রু কুঁচকে বললেন,এই জিনিস দুই প্লেট খেলে কি তোমার ভাই ঠিক থাকবে? দোলা এবার হেসে বলে, খুব ভালো থাকবে। তুমি দিয়ে তো দেখো, পাগলের মতো খাবে এবং সুস্থ্য স্বাভাবিক থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ঠিক সেই মুহূর্তে কলিংবেল বেজে উঠল। দরজা খুলে দেখি আমার বড়ফুপুর ছোট ছেলে অভি এসেছে। সে মেডিকেল কলেজে থার্ড ইয়ারে পড়ে। আমাদের বাসায় আত্মীয়দের মধ্যে যে গুটিকয়েক জন আসে, তার মধ্যে অভি অন্যতম‌। নয়তো দেখা গেছে, অনেকেই এসে চাচাদের বাসায় এসে দিব্যি ঘুরে যাচ্ছে, দরকার ছাড়া আমাদের এদিকে পাও মাড়াচ্ছে না। মা মাঝে মধ্যে বলে, তখন বিচার বা পারিবারিক ঝামেলা মেটাতে তোর বাবাকে তাদের প্রয়োজন ছিল। এখন কেন আসবে বাপ? আর কখনো আসলেও অনেকেই বসতে চায় না, আমরাও জোর করি না।

এই ছেলেটা ভীষণ আমুদে স্বভাবের। তাই,সবাই তাকে ভীষণ পছন্দ করে। ভেতরে ঢুকেই একদম
হৈচৈ লাগিয়ে দিয়েছে। সবাই কি সুন্দর চানাচুর মাখা খাচ্ছ, আমাকেও দাও। দোলা এবার দেখি গজগজ করছে, তুমি বড় অদ্ভুত পাবলিক অভি ভাই। আজব আজব সময় চলে আসো। মেঘলার আবার এসব ভীষণ লজ্জা লাগে। ও একটা প্লেটে অনেক গুলো চানাচুর মাখা ও চামচ দিয়ে বলে,
এইতো আছে খাও অভি ভাই। অভি বলছে,আচ্ছা সাদি ভাই তোমাদের পরিবারে কেউ তো কৃপণ নয়। এই দোলাটা এরকম হলো কেন? আমার মনে হয়,বড়মামা ওকে কোনো ষ্টেশন থেকে তুলে এনেছিলেন। দোলা এবার চেঁচাচ্ছে, ভালো হবে না কিন্তু অভি ভাই। অভি জানে দুই বোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করছে

দোলা শহরের সেরা কার্ডিওলজিষ্ট আমিনুল হক ও গাইনোকলজিস্ট খালেদা হক এর ২ বাচ্চাকে
প্রায় বছর তিনেক ধরে পড়ায়। উনাদের সাথে ওর
কিছুদিন আগে কথা হয়েছে,যদি দোলা সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পায় তবে এই ৫ বছর বইপত্র ও আনুষঙ্গিক যা খরচ লাগে……… তা তারা তাকে ধার হিসেবে দিবেন। সে পরে শোধ দিয়ে দিবে ইনশাআল্লাহ। খালেদা হক না কি বলে ছেন, তোমার যা মেধা সরকারি মেডিকেল কলেজ
এ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। যদি ধরো এতে নাও হয়, বেসরকারি মেডিকেলের খরচও দিতে রাজি আছি আমি। কিন্তু দোলা আমাদের বলেছে, আমি তক্ষুনি না করে দিয়েছি মা। বেসরকারি তে অনেক টাকা খরচ হবে। পরে তাদের মনে হতে পারে, এতো দেখি বসতে দিলে শুতে চায়। দোলা সব দিনের ই চটপটে,চালাক চতুর। মেঘলা চুপচাপ থাকে আর আমার মতো সবসময় ভয় পায়, কোনো কারণে কেউ তার অসম্মান করে ফেলল কিনা এই ভেবে। এবার সে বলছে, তুই তো দিব্যি তোর ব্যবস্থা করে ফেলি, আমি চান্স পেলে কাকে এটা বলবো বলতো? তখন পরিবারের সবাই আমরা বসে ছিলাম। কথাটা শুনে আমার মনে হয়েছে, কেউ যেন আমার হৃদয়টা তীক্ষ্ম ছুরি দিয়ে ফালাফালা করে তাতে মরিচ লাগাচ্ছে।

মেধাবী বোন পড়ালেখার খরচের জন্য আফসোস করছে আর আমরা অপারগ দুই ভাই বসে বসে শুনছি। আমি তক্ষুনি বলি, সেটা নিয়ে তোকে মোটেও ভাবতে হবে না। তুই চান্স পেলেই আমি একজনকে ধার হিসেবে দিতে বলবো যতদিন আমার চাকরি হচ্ছে না। চাকরি পেলেই ওটা বন্ধ করে আমি খরচ চালাবো ইনশাআল্লাহ। ভাইয়া তখন বিয়ে করেনি,সেও বলেছে তুই চিন্তা করিস না তো। আমরা দুই ভাই আছি না? আমি তখন ভেবেছি,আইরীন আপুকে বলবো। আর আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, উনি বা আকাশ ভাই না করবেন না। ধার হিসেবে নিয়ে চুকিয়ে দিবো। সেই রাতে শুয়ে শুয়ে আমি হেসে ভাইয়াকে বলি,দেখো ভাইয়া যাদেরকে সাহায্য দেবার কথা বলবো
ভাবছি এরা কিন্তু কেউই আমাদের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় নয়। চাইলে আমাদের বড়লোক চাচা ফুপুরা এগিয়ে আসতে পারতো না? ওরা জিজ্ঞেস ই করে না ভয়ে,যদি কোনো কিছুতে আমরা ওদের সাহায্য চাই। ভাইয়া সেদিন বলেছে,মানুষ জন্মগত
ভাবেই স্বার্থপর সাদি। এটাই অপ্রিয় সত্য, মনে রাখিস।আমি বলি, মিথ্যে কথা।সবাই এমন হয়না।

অভি ভাবীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে। উনি হুম হাম বলে দায়সারা উত্তর দিচ্ছেন। অভি এবার
ভাইয়াকে পাকড়াও করেছে, কি ব্যাপার ভাইয়া? লুকিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করলে, বিয়ের খাওয়া ও হলো না। কিন্তু ওই যে একটা অনুষ্ঠান আছে না,
বর মাছ কিনে এনে বৌকে দেয়। নতুন বৌ সেটা রেঁধে সবাইকে পরিবেশন করে……ফর গডস্ সেক
এটা অন্তত করো। মজা হবে কিন্তু। এবার ভাবী বললেন, আমার জীবনেও আমি মাছ কাটিওনি
আর রাধিওনি। অভি এবার বলছে,ওই জীবন কে
আর এই বিবাহিত জীবনে আর টেনে এনে লাভ নেই ভাবী। না পারলে মামীর কাছে থেকে শিখে নিবেন। আমাদের মামী সবজান্তা, এমন কিছু নেই
যা উনি পারে না। মেয়েদের কেও শিখিয়েছেন।আমি বেশ বুঝতে পারছি,অভির ভাবীকে ভালো লাগেনি,তাই এসব বলছে।

ভাবী এবার রেগে গেছে, তুমি অন্য বাসার ছেলে এসে আমাকে কি শেখাবে, আমি কি করবো না করবো? এতো বেশি কথা বলবে না বলে দিলাম। এবার দোলা বলে,ভাবী মাছ কেটে রান্না করবে
……… তুমিও অসম্ভব সব কথাবার্তা বলো অভি ভাই। উনি মনে হয় গ্লাসে পানি ঢালাও ভুলে গেছেন। অভি এবার চেঁচাচ্ছে,হায় হায় !!! পড়তেন যদি আমার মায়ের হাতে তাহলে বুঝতেন কতো ধানে কতো চাল। বড়মামী ভালোমানুষ তো,তাই কিছু বলে না। আমার মা তার ইন্জিনিয়ার বৌকে বিয়ের পরেরদিন বলে,বড়মাছের মাথা কাটতে পারবে না তো বুঝেছি। মাছ ভাজা তো করতে পারবে। মাছে হাত দিয়ে ফটো তুলে নাও। ওরা কেটে ধুয়ে রাখলে তুমি এসে মাছভাজা বসাবে। আমার তো মনে হয়, আমার বৌ ভালোই মাছ কাটতে পারবে। মানে এমন কাউকে বিয়ে করতে হবে,যে রান্নাবান্না জানে। দুজনে মিলে মিশে চট করে রেঁধে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবো।

এবার ভাবীকে বলছে, আপনি তো প্রাইভেটে বি,এ
দিবেন শুনেছি। দিনের এতো সময় তাহলে কি করে কাটে? এবার ভদ্রমহিলা চেয়ার ছেড়ে উঠে চলে গেলেন। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দোলা বলে, বসে বসে কি দেখছো? যাও,
বৌকে শান্তনা দাও গিয়ে। ভাইয়া চলে যেতেই অভি বলছে,হাদি ভাইয়ের অবস্থা তো সিরিয়াস দেখছি। ইস্, আমার শুধু বড়মামীর জন্য ভীষণ দুঃখ হচ্ছে। কেন যে উনার কপালেই এসব থাকে?
তোমরা তো সবাই বাইরে থাকো,উনাকেই তো এই
মহিলাকে নিয়ে চলতে হবে। মায়ের প্রতি অভির এই ফিলিংস একদম খাঁটি, সেটা আমরা সবাই জানি।

ছোটবেলায় নাকি অভি ভীষণ রকম ডিম খেতে ভালবাসত। আমাদের বাসায় এলেই মা দুটো ডিম
পোঁচ করে দিতো ওকে। অভির সামনে মেজচাচি
একবার নাকি মার বদনাম করেছিল। সাথে সাথে অভি একঘর লোকের সামনে চেঁচিয়ে বলেছে,
বড়মামীর নামে কেউ অপবাদ দিলে ভবিষ্যতে এর
খুব খারাপ অবস্থা হবে। এই বিশাল বাউন্ডারির বাড়িতে যদি কেউ মানুষ থাকে…তবে সে বড়মামী।
এই কথা নিয়ে পরবর্তীতে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। কিন্তু,বড়লোক বড়ফুপুর পরিবারের কাউকে কিছু বলার সাহস কারো নেই। এমনিতেই বড়ফুপু কে সবাই ভয় পায়। তার এতো বড় বড় ম্যারিড ছেলেদের ই রাগ উঠলে হ্যাঙ্গার দিয়ে দমাদ্দম মারতে থাকেন। আর ঠোঁট কাটা অভির মুখ কোনো সময়ই বন্ধ করা কারো সম্ভব হয় না।

এতোক্ষণে মা এসেছে, মাগরিব ও এশার নামাজে
মা অনেকক্ষণ প্রার্থনাতে কাটায়। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, মনে হয় খুব কেঁদেছে। অভি মাকে দেখেই উঠে চেয়ারে বসিয়ে বললো, এবার মনে হচ্ছে বাড়িতে এসেছি। এতোক্ষণে বিরানভূমিতে বসে ছিলাম। তা কি ব্যাপার বলো তো বড়মামী,
এতো কান্না কেঁদেছো মে চোখ দুটো জবা ফুল করে ফেলেছো? মা হেসে বলে, প্রার্থনাতে আকুতি না থাকলে, সেটা কি কবুল হবে বাবা? এবার অভি
বলল, আমি সিওর তুমি তোমার ছেলে মেয়ে চার জনের জন্য দোয়া করেই টায়ার্ড হয়ে যাও। মা বলে, তুই হয়তো ভাবিস আমার ছেলে মেয়ে চার
জন। কিন্তু আমি তো ভাবি তোকে নিয়ে আমার ছেলে মেয়ে পাঁচ জন। এবার অভি হুররে বলে চিৎকার করে, ঘুরে ঘুরে কি এক অদ্ভুত তালে নাচ
শুরু করেছে।

মা এবার বকা দিচ্ছে,কি পাগল ছেলে রে বাবা !!! দাঁড়া তোর জন্য ভাত বাড়ছি। এবার দোলা
বলছে, হয়েছে আর ভাত খেতে হবে না। চানাচুর মাখা খেয়েছে। মা কঠিন চোখে তাকিয়ে বলছে, কেন? তোর কম পড়বে না কি? এতো রাতে ছেলে টা না খেয়ে যাবে? দোলা বলছে,মা অভি ভাই কি পাটশাক দিয়ে শুঁটকি তরকারি খায় না কি? শুধু তোমার কথা রক্ষার্থে বসবে, তরকারি নষ্ট করবে আর বাসায় গিয়ে বলবে,বড়মামী হাবিজাবি দিয়ে
খাইয়ে বমি করাচ্ছে। মা এবার বললো, ইদানিং তুই অতিরিক্ত কথা বলছিস্। কথা বলা কমা,নয়ত
কপালে দুর্গতি আছে। মা রান্নাঘরে চলে গেছে,
মেঘলা সাথে সাথে ই মাকে সাহায্য করতে গেল।
দোলা এবার নিচু গলায় বলছে, এই অভি ভাই যখনি আসে একটা না একটা ঝামেলা লাগিয়ে যায়। নিজের ঘরে ভাত নাই, এখানে জ্বালাতে আসো তুমি? এবার অভির চিৎকার,বড়মামী। মা জবাব দিলো,কিরে? সাথে সাথে দোলা হাতজোড় করে বললো,মাফ চাচ্ছি।

টমেটো, কাঁচামরিচ দিয়ে দুইটা ডিমভাজি করে দিয়েছে মা। ভাবীর মুরগীর তরকারি থেকে দুই টুকরো গোশতও এনে দিয়েছে। সাথে মুশুরির ডাল। আমি চেয়ে দেখি, সবসময় দামী ও সরু কাটারীভোগ চাল খাওয়া অভ্যস্ত অভি মোটা সিদ্ধ চালের ভাত গুলি ডিমভাজা ও ডাল দিয়ে মাখিয়ে পরমানন্দে খাচ্ছে। আর মা পাশে বসে আদর করে বলছে, লেবু চিপে খাঁ সোনা, মজা লাগবে। পাগলা অভি এবার চেঁচাচ্ছে,লেবু লাগবে নাগো। তোমার হাত ডালে লেগে অনেক মজা হয়ে গেছে এমনিতেই। কি করে এতো মজা করে রাধো বলো তো? মা জোর করেও মুরগির গোশত তাকে
খাওয়াতে পারেনি। এতো আনন্দ নিয়ে খাচ্ছে আর মা দুটো ভাত দেই নারে বাবা করছে।

এসব দেখে আমার দুটো কথা মনে হচ্ছে, মা পরের বাচ্চাকে এতো আদর দেয় বলেই হয়তো বা আপনজনের চাইতে পররা আমাদের এতো বেশি ভালবাসে। আর অভি যেভাবে একজন দুঃখি মাকে খুশি করছে তার ভবিষ্যৎ ইনশাআল্লাহ অনেক ভালো হবে। আল্লাহতাআলা কখনো বিধবা, মজলুম মায়ের দোয়া ইনশাআল্লাহ ফিরিয়ে দিবেন না। পাগলা অভির কাছে বিদায় নিয়ে ফ্রেশ হতে নিজের রুমে গেলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here