###জীবন যখন যেমন(১৮তম পর্ব)
###লাকি রশীদ

সুন্দর ফার্ণিচার যে একটা রুমের ছিরিছাদ কি পরিমান বদলে দিতে পারে,তার চাক্ষুষ প্রমাণ পেলাম এবার। রুমগুলো কে দামী কোনো হোটেল এর রুম মনে হচ্ছে। অবশ্য এই পর্যন্ত আসতে, মাকে ফার্ণিচার গছাতে অভিকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। ৭লাখ টাকার বাজেট সেলিম কে দিলেও আরো বাড়তি প্রায় ৮০ হাজার টাকা ওয়াশরুম সহ লেগেছে। সবকিছুর এতো দাম কাজে হাত না দিলে বুঝা যায় না। অভি দুই রুমের জন্য ২টা বেডরুম সেট ও লাল টকটকে দুইটা কার্পেট কিনে এনেছে। সবাই জানে লাল রঙের প্রতি আমার অশেষ দুর্বলতা। আমার ও মার অস্বস্তি লাগবে ভেবে শুধু তার ও তার ভাবী বৌ এর ইচ্ছের কথা বলছে। যেন বিয়ে করলেই তার বৌ এখানে এসে থাকতে পারবে !!! যে বড়ফুপু
আমার,হ্যাঙ্গার দিয়ে দমাদ্দম ছেলেকেই মারবেন।

তার বৌয়ের নাকি অনেক জুতা,তাই দুইটা সু ষ্ট্যান্ডও এনেছে। আমি বেশ বুঝতে পারছি, এই বুদ্ধিগুলো মাকে সামলানোর জন্য বলা। মা এসব রাখবে না এজন্য বলা। নয়তো সুদৃশ্য সু ষ্ট্যান্ড অন্যরুমেও একটা চলে যেত না। দোলা আমাকে বলেছে,অভি ভাই সব মিথ্যে কথা বলছে ছোট ভাই। কথা আছে, দুজনের এমবিবিএস শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে করবে না।

মা প্রাথমিক ঝাপটা সামলে উঠে প্রথমে বলেছে, তোর মা সেদিন কতো কিছু আমাকে বলে গেল। শাওনের ব্যাপারে রাজি হইনি বলে। এখন তার ছেলের আনা, তার টাকায় আনা ফার্ণিচার আমি ঘরে তুলি কেমন করে বলতো? আমাকে না বলে আনা তোর মোটেও উচিত হয়নি। তোদের বাসা অনেক বড়,এসব নিয়ে সেখানে কোথাও রেখে দে

অভি এবার চেঁচাচ্ছে,বড়মামী তুমি মাঝে মাঝে কি
যে বল্ আমি বুঝি না। আমার একাউন্টে প্রতি মাসে বাবার দেয়া দোতলার ভাড়া জমা হয়, সেটা তুমি সহ সবাই জানে। দুটো কোচিং সেন্টারে যে পড়াই সেটাও জানো। আমার মাথায় কি দোষ ধরেছে যে, মায়ের টাকা দিয়ে আমাদের ফার্নিচার
আমি কিনবো। তারপরও মা দোনোমোনা করছে দেখে গলা ভারী করে বলল, তুমি আসলে দোলার মতো আমাকে পর পর ভাবো। আমার মাসিক রোজগার আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো। তুমি মায়ের জন্য এটুকু না করলে শান্তি পাবো না। দয়া করে ভেবো না,অভি ওর মায়ের টাকায় আমাকে ফার্ণিচার কিনে দিয়ে প্রচন্ড অপমান করেছে। আমি আমার মাকে এতোটাও নীচে নামাতে পারব
না। এটা ভাবলে তুমি রীতিমত আমার উপর খুব অবিচার করবে। মায়ের চোখ দুটো দেখি ছলছল
হয় গেছে। চতুর অভি এবার চেঁচাচ্ছে, ছেলে যখন খেটে খুটে আসে তখন মা রা অস্থির হয়ে শরবত বানিয়ে দেয়,চা নাস্তা দেয়। তুমি আছো তোমার সম্মান নিয়ে !!! মা এবার ব্যস্ত হয়ে রান্নাঘরে গেল।

মা চলে যেতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
আখেরাতে আল্লাহ তাআলা আমার অনেক গোনাহ মাফ করে দিবেন ইনশাআল্লাহ। কারণ, ভেবে দেখো অনেক ব্যাপারে বড়মামীকে মানাতে আমি যতো এনার্জি ক্ষয় করেছি আমার এতো বছরের পড়া শোনায়ও মনে হয় এর অর্ধেক করিনি। বাড়তি বুক ঢিবঢিব করা তো আছেই। কি এক অসাধারণ ব্যাক্তিত্ব রে বাবা !!! সাদি ভাই ও মেঘলা অনেক কিছু পেলেও, ইডিয়ট দোলা তো মামীর কোনো গুনই পায়নি। শুধু চিনে ক্যাটক্যাট করে কথা বলা মানুষের সাথে।

এবার দোলা চেঁচাচ্ছে,সব কথায় গরুর রচনার মতো দোলার প্রসঙ্গ আসবেই। এতো বড় হারামী মানুষ তুমি !!! ছিঃ আবার নাকি তুমি বড় ভাই !!! দোলাকে রাগাতে পারলে অভি মনে করে, মিশন সাকসেসফুল হয়েছে। মন খুলে হাসতে থাকে সে
তখন। আমি দেখি আর মনে মনে বলি, কতো কতো সুন্দর নেয়ামত দান করে পরিবারটি সুন্দর রেখেছেন আপনি। কতো সুন্দর মনের মানুষ উপহার দিয়েছেন। সে শুকরিয়া আদায় না করে আমরা অভিযোগ আর অনুযোগের পাহাড় গড়ে তুলি। মাফ করে দিন রাহমানির রাহিম। আমার পরম করুণাময় আল্লাহ তাআলা, আপনি ক্ষমা না করলে আমরা অকৃতজ্ঞ নাফরমানদের কি উপায় হবে বলুন? ধ্বংস হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ থাকতো না আমাদের মাবুদে এলাহী।

অভি সঙ্গে করে ট্রাকে নাকি ৪ জন মানুষ নিয়ে এসেছিল। মাকে বুঝিয়ে নাস্তা শেষ করে ওদের দিয়ে ফার্নিচার গুলো দুই রুমে সেট করালো। সবচেয়ে খুশি হয়েছে মালাবু, বারবার সে অভিকে বলছে,আল্লাহ আপনার ভালা করুক ভাইজান। দোলার দিকে তাকিয়ে অভি রাগাচ্ছে,দেখো তো মালাবু আমার বৌয়ের পছন্দ হবে তো রুমটা? আর কিছু কি আনতে হবে? নতুন রুমগুলোর একটা রুম সাদি ভাইয়ের বৌ এর ও একটা রুম আমার বৌ এর। বাচাল মালাবু এবার কথা বলার প্রসঙ্গ পেয়ে গেছেন। অবাক হয়ে বলছে,আফনে বিয়া করছইন? অভি বলে, কেন আমি কি বিয়ে করতে পারি না? মালাবুর সহজ বিচার,এইডা ঠিক করেন নাই। বড়ভাই রাইখ্যা আগে ছোডভাই ক্যামনে বিয়া করে?

অভিও সমান তালে তার সঙ্গে ফাজলামি করছে, তোমার বড়ভাই কবে বিয়ে করবে সেজন্য আমি বসে থাকবো নাকি? পুরুষ মানুষ বেশি দেরিতে বিয়ে করতে নেই। দুনিয়ার বাতাস তো ভালো না। মেয়েগুলো সব আমাদের দেখে লোভে পড়ে যায়। মা এবার বলছে,কি সব বলছিস ওকে? সব কথা
রাষ্ট্র করে বেড়াবে। মালাবু এবার মাথা নেড়ে বলল
কথা অবিশ্যি ভুল কন নাই। বুঝলেন গেরামে তো রোজগার পাতি শুরু করলেই বিয়া দিয়া দেয়। খালা চলেন কাইলকা থাইকাই ভাইজানের বৌ দেখা শুরু করি। মা এবার ধমক দেয়, চুপ কর তো। রান্নাঘরে বাসন জমে আছে, সবগুলো ধুয়ে নে‌। ভাইয়ার বৌ নিয়ে পরে চিন্তা করা যাবে।

মায়ের ধারণা ই সঠিক,মালাবুর কানে যাওয়া এই কথা রাষ্ট্র হতে সময় লাগেনি। ডাষ্টবিনে ময়লা ফেলার জন্য গিয়ে মর্জিনা র সাথে দেখা হয়েছে। সবিস্তারে সবকিছু তাকে বলে শেষ কথা বলেছে,
সাদি ভাইয়ের বিয়ে লাগল বলে। সুন্দর বৌয়ের খুঁজে আমরা চারদিকে পাত্তা‌ লাগিয়েছি। দোয়া করো,ভালা একটা মেয়ে যেন পাই আমরা। এবার উৎসুক মর্জিনা নাকি বলেছে, এজন্যই তাড়াতাড়ি করে ঘর উঠাইছে। মালাবু অনেক দিন পর সুযোগ পেয়ে প্রতিপক্ষ কে শোনাচ্ছে,আরে তুমি বোঝো না কার্পেট বিছানোও শেষ। শুধু মনের মতো এক
টা মেয়ে পাওয়ার বাকি। মা বকবে ভেবে কাউকে বলেনি,সে এতো এতো কিছু বলেছে। সন্ধ্যার পর মা চিঁড়ে ভাজা ও নারকেল ভাজা একসাথে মেখে দিয়েছে। আমি ও দোলা খাচ্ছি। মার নারকেল খাওয়া বারণ। তাই শুধু চিঁড়ে ভাজা খাচ্ছে।

মালাবুর বোন এসে ওকে কোন একটা প্রয়োজনে নিয়ে গেছে। গল্প করে করে তিনজন চায়ের কাপে
মাত্র চুমুক দিয়েছি কলিং বেল বেজে উঠলো। খুলে দেখি ফাহিম ভাই, তার মা ও ছোট ভাই শামিম ভাইকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের
হাতে মিষ্টির প্যাকেট। জীবনে এই প্রথম খাজুর বেগম হাসিমুখে বললেন, ভালো আছো বাবা? ভদ্রমহিলা দেখা হলে যেখানে কথাই বলতেন না,
সেখানে সাদির এই সম্মান পাওয়া……… অসম্ভব অবাক হবার ব্যাপার ই বটে। আমি ভেতরে নিয়ে আসতেই চাচী মাকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, ভালো আছেন ভাবী? অনেক দিন ধরে আপনাকে দেখি না,তাই ভাবলাম দেখা করে আসি। মা ও আমার মধ্যে মিল হলো,মানুষ আমাদের সাথে যে ব্যবহার
ই করুক না কেন আমাদের সামনে এসে বিনীত ভাব দেখালে আমরা খারাপ ব্যবহার করতে পারি না। কিন্তু দোলা পারে,যেমন এই মুহূর্তে সে চেয়ার
ছেড়েই উঠে নি। খুব নিশ্চিন্ত মনে চিঁড়ে ভাজা খাচ্ছে। যেন এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় কাজ।

মা খুব সমাদর করে ওনাদের বসালো। খাজুর বেগম কে বললো, কোটিপতি মানুষ গরীবের দুয়ারে এসেছো, কি দিয়ে খাতির যত্ন করি বলো তো !!! মা দোলাকে চিনে তাই খুবই নিস্পৃহ ভাব নিয়ে থাকা দোলাকে বলছে,যা তো মা চট করে তোর চাচীর জন্য কয়েকটি পাকোড়া ভেজে দে।ডায়বেটিস তো, মিষ্টি খেতে পারবে না। ফ্রিজে দুধ সেমাই আছে, তোর ভাইয়াদের দে। ফাহিম ভাই বললেন,এসব কিছুই করা লাগবে না। আপনি ব্যস্ত হবেন না,বসেন গল্প করি। দোলা এবার চায়ে চুমুক দিয়ে দিয়ে তেরছা চোখে চেয়ে বলছে, কি যে বলো না মা !!! তারা কি আমাদের খাবার খেতে পারবেন নাকি?

এবার খাজুর বেগম অনেকটা বিগলিত হয়ে গিয়ে
বলছেন, কেন খেতে পারবো না? অভি তো বলে,
তোমাদের বাসার চা নাকি দেশের সেরা চা। খেতে খুব ভালো। দোলা এবার মাথা নেড়ে বলল, সেটা তো অভির মতামত। ওটা বিশ্বাস করে আপনারা কষ্ট করে খারাপ খাবার খাবেন কেন? মা এবার ভাবছে দোলা আরো কি উল্টোপাল্টা কিছু বলে ফেলে কিনা,তাই তাড়া দিলো,আহহা এতো কথা বলিস কেন? তাড়াতাড়ি যা তো। আর মালাকে একটা ফোন দিয়ে এক্ষুনি চলে আসতে বল্।

ফাহিম ভাই আমাকে রেজাল্ট কবে বেরুবে জিজ্ঞেস করছে। বললাম, ইনশাআল্লাহ খুব শীঘ্রই বের হবে। এবার শামীম ভাই বলছেন,
তোমার রেজাল্ট তো সারাজীবন ই ভালো হয়েছে।
এবারো হবে, কিন্তু চাকরির বাজার তো শুনি খুব মন্দা চলছে। অবশ্য তোমার সাবজেক্টের ডিমান্ড
অনেক শুনেছি। আমি হেসে বলি,দেখা যাক কি হয় ভাই। চাকরি মামা, কাকা ছাড়া যে একেবারেই
হয় না এটাও কিন্তু ঠিক না। অনেক সময় যোগ্যতা
চেনার মতো ঝানু বিচারকও ইন্টারভিউ টেবিলে থাকে। সবকিছুই হচ্ছে আল্লাহর হুকুম আসলে।
দুই ভাই খুব ভালো মানুষের মতো মাথা নাড়ছেন।

একথা সেকথা বলে চাচী এবার বল্লেন, আপনার রুমগুলো খুব সুন্দর হয়েছে ভাবী। মা হেসে বলে,
তুমি প্রাসাদসম বাসায় থাকো। আমাদের ঝুপড়ি ঘর কি আর ভালো লাগবে বলো? ফাহিম ভাই এবার বললেন,কত টাকা খরচ হলো বড়চাচী? মা
জবাব দেবার পর চাচী বলছেন, আপনার ভাই না
কি টাকাটা দিয়েছেন? জবাব পেলো, উনি নিজের টাকা দেননি খাজুর, আমার প্রাপ্য টাকা পৌঁছিয়ে দিয়েছেন শুধু। এবার অতি উৎসাহী চাচী বললেন
আপনার ভাগে তো আরো অনেক জমি পড়ার কথা। মা বললো, কথা ঠিকই কিন্তু সেগুলির টাকা আমি হাতে পাইনি। অনেক আগেই ভাইয়েরা বিক্রি করে আমার টাকাও নিয়ে গেছে। চাচী বলে,
তাহলে এখন কিভাবে দিলো? মা এবার বেশ সময় নিয়ে হেসে বললো, একটা কথা আছে খাজুর।
সাপও গর্তে ঢুকার সময় সোজা হয়ে ঢুকে। আর
এ তো মানুষ। কবরে যাবার সময় এসেছে তাই মনে ভয় ঢুকে বোনের পাওনা দিয়ে গেছেন। এতো সরাসরি উত্তর হয়তো বা চাচী আশা করেননি। তাই,আর কথা না বলে ৩ জন চুপ করে আছেন।

মালাবু কে দিয়ে দোলা নাস্তা পাঠিয়েছে। নাস্তা দেখে আমরা মা ছেলে দুজনের ই আক্কেল গুড়ুম।
কিসের সেমাই আর কিসের পাকোড়া, পাশের
অভিজাত রেষ্টুরেন্টের দামী পরোটা ও গ্ৰীল চিকেন। এই রেষ্টুরেন্ট আমাদের পাড়ার মোড় থেকে ১০ মিনিটের রাস্তা। পাশের বাসার শাকিবের বাবা সেটার মালিক। কিন্তু মালাবু এসে আবার গিয়ে এতো তাড়াতাড়ি আনলো কি করে? আর দোলা ই বা এতো টাকা খরচ করে নাস্তা আনাচ্ছে কেন? ভালো প্লেট, হাফপ্লেট ও গ্লাস দেয়া হয়েছে। আবার দেখি সেমাইও এসেছে। এসব নাস্তা দেখে এরা দুই ভাইয়ের এতো অস্বস্তি লাগছে বলার মতো না। শামীম ভাই “আমার কাজ আছে” বলে চলে যেতে চাচ্ছিল,মা খপ্ করে হাত ধরে বলছে
পথ ভুলে কতো বছর পর আজ চাচার বাসায় এসেছিস। খালি মুখে যেতে দেবো নাকি? চুপচাপ বেসিনে হাত ধুয়ে আয় তো। ফাহিম নে রে বাবা,
পরোটা ঠান্ডা হলে খেতে মজা পাবি না। খাজুর
হাত ধুয়ে আসো তো। এবার চাচী খুব জোর করে আমাকে তাদের সাথে বসিয়ে দিয়েছেন। এদের পরোটার বিশেষত্ব হচ্ছে,তেল আছে কিনা বুঝাই যায় না। তাই, খেতে বেশ ভালো লাগে।

মেজচাচীকে নিয়ে আমাদের পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে অনেক হাসাহাসি হয়। কারণ তিনি যে
বাসায় ই যান না কেন, খেতে বসলে এটা খাবো না
ওটা খাবো না বলে খাবারের একটা খুঁত বের করেন। আজ দেখি কিছু না বলে, ভালো মানুষের মতো খাচ্ছেন। ফাহিম ভাইকে মা জোরে আরো পরোটা ও মুরগির রান দিলো। কিন্তু অনেক জোর করেও শামীম ভাইকে আর দিতে পারেনি। তার মুখ লজ্জায় যেন তুলতেই পারছেন না। খাওয়া শেষে চলে যাবার জন্য পা বাড়াতেই দোলা বলে,
চা খেয়ে যাও। অনিচ্ছা সত্ত্বেও বসলেন, দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝাই যাচ্ছে সে এসব ভীষণ
উপভোগ করছে। মাঝে মাঝে আমি আসলেই দোলা কে চিনতে পারি না। এই যে কমপক্ষে এখন
হাজার খানেক টাকার উপরে খরচ করে এদেরকে
খাওয়ালো……..কোনো মানে হয় এসবের? আজব
এক একটা ঘটনা ঘটানোর জন্য যেন রেডি থাকে।

শামীম ভাই চলে গেছে,যাবার আগে মায়ের হাত
দুটো ধরে শুধু বলছে, অনেক অন্যায় করেছি চাচী
মাফ করে দিন আমায়। বলেই হনহন করে কারো
দিকে না তাকিয়ে চলে গেছে। এরা মা ছেলে চা শেষ করে বললেন, কিছু কথা আছে ভাবী। যদি আপনি অনুমতি দেন তবে বলতে পারি। মা বলল,
এমন ভাবে বলছো খাজুর যেন আমি কোন অতি
বড় সম্মানিত কেউ। মানুষ বলে, আমার অহংকার ছাড়া বাকি সবই নাকি ফকিরের মতো। আসলে মায়ের নামে এই কথাটা ছোট ফুপুকে বলেছিলেন চাচী। চতুর মহিলা মাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, আগের কথা বাঘে নিয়ে গেছে। নতুন করে কিছু কথা বলি। এই অবস্থায় আমি উঠে চলে যেতে চাইলে ফাহিম ভাই বললেন, পাঁচটা মিনিট বসো
সাদি। তুমি এখানে থাকারও প্রয়োজন আছে।

চাচী এবার বলছেন, আমার মেয়ে তো আপনার কাছে আসবে বলে গোঁ ধরে আছে ভাবী। কোনো
প্রস্তাবেই রাজি হচ্ছে না। এখন আপনি দয়া না করলে কিভাবে হবে বলেন? মা খুব মোলায়েম স্বরে এবার বললো, শোনো খাজুর মেয়ের বয়স কম তাই বুঝতে পারছে না। তুমি মেয়েকে ভালো করে বুঝাও। সে যে পরিবেশে বড় হয়েছে, যা খেয়ে বড় হয়েছে……… সম্পুর্ন বিপরীত টা হচ্ছে আমাদের। সামান্য একটা উদাহরণ দেই, তোমার বাচ্চারা তো প্রতিবেলা মুরগী ছাড়া খেতে পারেনা।
অথচ, আমাদের বাসায় ১৫ দিনে মুরগি আসে।
মাসে ২দিন আমাদের এখানে খাবে বাকি ২৮ দিন কি তোমার কাছে মুরগি খেতে যাবে নাকি?

এবার চাচী মরিয়া হয়ে বলছেন, আমি ওকে অনেক বুঝাতে চেষ্টা করেছি ভাবী। ও বলছে,ওরা
যা খাবে যা পরবে আমি সেরকম ই চলবো। আমি
কোনো অভিযোগ করবো না। আমি কারো সাথে কোনো দুর্ব্যবহার করবো না। মা বলছে,ও জীবন কি দেখেছে? কতো কঠিন হতে পারে তা জানে? আমি জানি, জীবনে এই ধরনের পরিস্থিতিতে কি এক অবস্থায় পড়ে মেয়েরা। কি প্রচন্ড অশান্তিতে ফেলে স্বামীকে। স্বামী না ঘরকা না ঘাটকা হয়ে দু
পক্ষের কাছেই অপরাধী হয়ে থাকে সারাজীবন। আমি আমার ছেলেকে এই অবস্থায় জেনেশুনে ফেলতে পারবো না খাজুর। আমাকে মাফ করো। তাছাড়া আমার ছেলের ঘাড়ে অনেক দ্বায়িত্ব।
মেডিকেলে পড়ার জন্য দোলা যার কাছে থেকে খরচ এনেছে, উনার সাথে কথা হয়েছে যে দোলা
সেটা পরিশোধ করবে। কিন্তু মেঘলার জন্য ধার হিসেবে আনা টাকা সাদিকেই মেটাতে হবে। দেখো আমার ছেলের এতো টুকু ঘাড়ে কত্তো কত্তো চাপ।
চাকরি পেলেই বিয়ে দিয়ে দিবো, তবে আমাদের মতো পরিবারের মেয়ে আনবো ইনশাআল্লাহ।

তোমার কাছে আমার তো লুকোনোর কিছু নেই। বড়ছেলেকে খেয়ে না খেয়ে,পরে না পরে মাষ্টার্স
করালাম। কতো ভালো রেজাল্ট হলো। সাথে সাথে হয়নি তো কি হয়েছে,২/৩ মাস পরে হয়তো
ইনশাআল্লাহ চাকরি হতোই। লোভে পড়ে মেয়েটা
কে বিয়ে করলো। মেয়েটাকে আমি দোষও দিতে চাইনা। এতো সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিয়ে কখনোই ভালো ফল আনে না,আনতে পারে ন। কিন্তু আমার পেটের ছেলে !!! তার তো অন্তত বিধবা মা,৩টা ভাইবোনের কথা ভাবা উচিত ছিল।যদি বুঝতাম চাকরির আশা নেই, বছর খানেক ধরে পাচ্ছে না তবেও মনকে বুঝাতে পারতাম। এখন আবার সেই একই রকম পথ ছোট ছেলের জন্য খুড়ি কেমন করে বলো? তাও যদি এমন হতো আমার ছেলে ফুঁসলিয়ে তোমার মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে গেছে, তবে আমি মাথা নিচু করে ঘরে তুলতাম। আমাকে ভুল বুঝো না খাজুর।

এতোক্ষণ ধরে চুপ থাকা ফাহিম ভাই ও তার মা এবার বিদায় নিলেন। এবার মা চোখ রাঙ্গিয়ে দোলাকে বললো, কি ব্যাপার? এই রাজকীয় নাস্তা
কেন শুনি? পয়সা বেশি হয়ে গেছে? দোলা বলল,
আমি কি করবো? আমি যখন পাকোড়ার জন্য পেঁয়াজ কাটছি তখন মেঘলা ফোন দিয়েছে। এরা এসেছে শুনে বললো, খবরদার তুই সেমাই ও পাকোড়া দিবি না। দোকান থেকে নান ও গ্ৰীল চিকেন আনা। এই টাকা মাসের শেষে টিউশনির টাকা পেলে আমি মাকে পাঠাবো। তাই আমি রেষ্টুরেন্টে শাকিব কে ফোন করে বলেছি মালাবু কে দিয়ে দিতে। কালকে বিল ক্লিয়ার করবো ইনশাআল্লাহ। এদিকে মালাবুকে ফোন দিয়ে এসব সাথে নিয়ে আসতে বলি। এখন বুঝেছো, কেন এসব করেছি?

মা ক্ষীণ কন্ঠে বলে, মেঘলা মেয়েটা এতো চাপা !!! এতো বছর কাউকে বুঝতে দেয়নি, এতো ব্যথা বুকে নিয়ে আছে। দোলা বললো,আজ চাচী ও ফাহিম ভাইকে দেখে মনে হয়েছে তোমার কথাই ঠিক মা। পৃথিবীতে ই সবকিছু শোধ হয়ে যায়। শুধু শাওন আপুর জন্য খারাপ লাগছে। মা বললো, এখন খারাপ লাগলেও পরে আমাকে সবাই ধন্যবাদ দিবি। কি রে সাদি, মা কি ভুল বললাম? আমি মৃদু হেসে বলি, আমার মা কখনো ভুল হতেই পারে না। কিন্তু তখন টুপটুপ করে আমার হৃদয়ে তাজা রক্ত ঝরছেই। আমি পরিস্কার সেটা শুনতেও পাচ্ছি।

ব্লক করবো করবো করেও, কেন জানি শাওনকে ব্লক করা হয়নি। রাতে দেখি ১টা মেসেজ এসেছে। আমার মা ও ভাই এতোক্ষণ নিচু হয়ে সব বলল।আর তুমি শুধু বড়চাচীকে এটুকু বলতে পারলে না যে, তুমি আমাকে পছন্দ করো। আমি যেচে তোমার কাছে যেতে চাই বলে, এতো সস্তা হয়ে গেলাম !!! এতো বড় হৃদয়হীন তুমি হও কি করে সাদি? উত্তর দিতে হবে না, নিজেকে জবাব দিও।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here