###জীবন যখন যেমন(১৭তম পর্ব)
###লাকি রশীদ
দুই প্লেটে সাদা জুঁই ফুলের মতো ভাত ও দুটি বাটিতে বেশ বড় দুই পিস রুই মাছ আর সাথে সালাদ দিয়ে গেছে। মাছে আবার ঘন ঝোলে এক পিস করে আলু,সীম ও টমেটো দেয়া। অদ্ভুত সুন্দর এক খুশবু বের হচ্ছে তরকারি থেকে। আমি শুরু করে দেখি শাওন আস্তেধীরে তরকারি নিচ্ছে সামান্য করে। মুখ দেখেই বুঝা যায়, খেতে ভালো লাগছে না। আমি বলি, শুধু শুধু জেদ করে একই তরকারি দিয়ে খেতে হবে না কি? দাঁড়া,বয়কে ডেকে দেই। চিকেনের কি খাবি বলে দে। ওরা এনে দিবে।
মাথা নেড়ে বলল,খেলে এটা দিয়েই খাবো। তুমি শুধু আমাকে কাঁটা বেছে দাও। গলায় গিয়ে যদি আটকায়, তবে সর্বনাশ। আমি খ্যাক করে উঠি, তুই কি বাচ্চা নাকি যে কাটা বেছে দিবো? আর রুই মাছের এতো বড় পেটি বাচ্চাও বাছতে পারে। এবার বলছে,দাও না? একদিন ই তো বললাম। কাঁটা বেছে দিলাম, আর ও ঝোল কম নিয়ে মাছ দিয়ে ভাত মেখে মেখে খাচ্ছে। তার দিকে তাকাতে চাইছি না,মায়া বাড়াতে চাইছি না। কিন্তু অবাধ্য চোখ বারবার দৃষ্টি দিচ্ছে,কষ্ট করে আমার নেয়া সেইম আইটেম দিয়ে খাওয়ারত শাওনের দিকে। এতো কম ঝোল নিয়েও ঝালে সে অনবরত আহ্ ওহ্ করছে। আর পানি খাচ্ছে।
মাছ বেছে দিয়ে আমি আমারটা খুব মজা করে খেলাম। ওর প্লেটের অর্ধেক ভাতও শেষ করতে পারেনি। এগুলো আমাকে দিয়ে বলছে, এঁটো করিনি কিন্তু। খেয়ে নাও প্লিজ। খাবার মধ্যে বেছে দেয়া মাছ,সামান্য ভাত ও ঝোল দিয়ে খেয়েছে। আমি বলি, তোর নিশ্চয়ই পেট ভরে নি? অন্যকিছু
খা। নারীদের তূণে অনেক ধরনের তীর থাকে। সে
রকম একটা বের করে হাসি দিয়ে বলল, তোমার হাতে বেছে দেয়া মাছ দিয়ে গেলাম……. আর পেট
ভরবে না বলো? এবার আমি খেয়ে খেয়ে বলি,
সামান্য জিনিসে খেয়াল করে দেখ্ কি হয়েছে।
এতো ভালো হোটেলের খাওয়াও কিন্তু আমার মতো তুই খেতে পারছিস না। আর আমার গরীব মা যখন ভাত ভাজি করে দিবে…….. তখন তুই কি
করবি? রাতারাতি খাদ্যাভ্যাস তো আর বদলানো সম্ভব নয়। একদিন কষ্ট হলে হয়তো বা মেনে নেয়া যায়। কিন্তু নিত্যদিনের কষ্ট একদিন বিরাট ক্ষোভ হয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। সেটাই আমার বুদ্ধিমতী মা
বুঝাতে চাচ্ছে।
মুহূর্তেই কঠিন মুখ করে বললো, এটা তুমি বলতে পারলে? একমাত্র তুমি খুশি হবে বলে, আমি সব কিছু তোমার মতো খেতে চাই, করতে চাই। আমি ভাবছি, এই মেয়েকে খাজুর বেগম ও তার ছেলে রাও বুঝাতে পারেনি,আর তুমি সাদি তো কোন ছার? হেসে বললাম, এদের এখানে আইসক্রিম আছে খাবি? বললো,হ্যা খাবো। দুজনের জন্য নিয়ে এসো। গিয়ে দেখি কাপ আইসক্রিম ছাড়া
আর কিছু নেই। নিলাম দুটো,দেখেই বলছে কাপ এনেছো কেন? আর কিছু নেই?আমি বলি, যেহেতু
আইসক্রিম এর বিল আমি দিবো,কাপ আনাটাই বেটার মনে হলো। ঘটে একেবারে বুদ্ধি যে নেই…..
তা কিন্তু না। হাতে হালকা চাপড় দিয়ে বললো,সব
সময় কথায় জিতে যাবার চেষ্টা। আমি জানি ঠিক, এরকম হলে তুমি তোমার জন্য না এনে আমার জন্য অন্যটা নিয়ে আসতে।
আমি তখন চোখ ২টা বুজে আপনমনে নিজেকে বলছি, তোর ভাবনা ১০০% সঠিক। কিন্তু, পৃথিবীর মানুষ তো আমাদের জন্য ফুলের বিছানা বিছিয়ে রাখেনি। ছোটবেলার সবার আদরের সেই সাদি, পিতৃহারা হয়ে, বর্তমানে ভাই থেকেও নেই………. এমন অবস্থায় তোকে বিয়ে করার সাহস সঞ্চয় করে কিভাবে বল্? মা ভাবছে বড় ছেলেটাও দূরে সরে গেছে, এবার হয়তো ছোটটার পালা। কি করি বলতো শাওন? বোকা সাদি বদ্ধ, দমবন্ধ করা গুহা থেকে পালোনোর দরজা খুঁজে পাবে কি করে
জানা থাকলে আমাকে জানা। রিনরিন আওয়াজ কানে এলো,কি ব্যাপার মৌনী বাবা হয়ে গেলে যে?
দুঃখের হাসি হেসে বলি, চল্ তোকে ফোর ষ্ট্রোকে
তুলে দিয়ে আমি বাসে উঠবো। হাত ধরে বলছে,
আর কবে দেখা করবে বলো? সত্যি কথা ই বলি,
আসলেই আমি জানি না রে। ওকে বিদায় দিয়ে বাসে উঠে যে হাতটা ধরেছিল শাওন,সে হাত ধরে
চুপচাপ বসে আছি। মনে হচ্ছে, কেউ ওর ধরা হাতে ছুলেই যেন কোন বিশাল কিছু হারিয়ে যাবে।
প্রথম রুম প্রায় শেষের দিকে। এতো শব্দের জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে মার। ছোট চাচা এসে বলেছিল,ভাবি এই ক’দিন আমাদের বাসায় এসে আপনারা সবাই থাকুন। চাচীও বলেছেন, অনেক গুলো রুম আছে। বাবুর্চি রেঁধে দিবে, আপনাদের কোনো সমস্যা হবে না দেখবেন। মা হাসিমুখে বলেছে, বেশি অসুবিধা হলে তখন অবশ্যই যাবো।তোমরা কি আমার পর নাকি? বড়চাচা যখন ই দেশে আসে তখন আগে থেকেই তার ঘর রং হয়। একদিন সব কাছের আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ান। গান বাজনা হয়। ওইদিন মায়ের না শুনে যাবার পর একমাত্র বড়ফুপু ই মাইন্ড করেছেন। বাকি সবাই বুঝেছে, একসময় খাজুর বেগমের অতিরিক্ত দুর্ব্যবহার মায়ের মনে স্থায়ী ছাপ ফেলেছে। নয়তো মা এতো কঠোর সিদ্ধান্ত হয়তো নিত না।
এবারও বড়চাচা প্রায় ৬০/৭০ জন নিকটাত্মীয় কে বল্লেন। গরমের দিন বলে ডিনারের দাওয়াত।
বাসার সামনে অনেক জায়গা, কিছু দূর পর পর ই ষ্ট্যান্ডফ্যান ও চেয়ার দিয়ে দিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে যার যার সার্কল নিয়ে আরামে সবাই গল্প গুজব করতে পারে। আমাদেরকে যাবার কথা বলতে এসে দেখেছেন, আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ করাচ্ছি তাই বললেন, তুই তো অনেক ব্যস্ত
দেখি। তাহলে,অভিকে ফোন দে তো বাবা ও আসুক। বাবুর্চি, বাজার সব কাজই পড়ে রয়েছে।
অভি তো আর অভি ই, ফোন ধরেই বলছে এসব কাজ করে দিলে তুমি আমাকে কতো টাকা দিবে
শুনি? বড়চাচা অবাক হয়ে গেলেন যেন, তুই কি রে? মামাকে এটুকু সাহায্য করবি,তাতেও টাকার চিন্তা !!! প্রতিবছর সাদি এতো কিছু করে……..কই
৫ টাকাও তো চায়নি। অভি এবার হেসে বলল,
এইতো তুমি অনেক ভুল করলে মেজমামা। কই সাদি ভাই আর কই এই অধম অভি। সাদি ভাই এক ধরনের মহাপুরুষের পর্যায়ে চলে গেছে মনে করো। কিন্তু আমি টাকা ছাড়া একপাও এগুই না।
আমি মনে মনে হাসি, চক্ষুলজ্জা,বিনয়, সম্মান করে তর্ক না করা……… এগুলো কে বড়চাচাও আমার নিজের দুর্বলতা ভাবতেন। প্রতিবার মাটন হোক আর বীফ হোক আর চিকেন ই হোক,আনা
হলে বলতেন আর একটু দর কষাকষি করতি,
তাহলে হয়তো কম হতো। গতবার দোলা, মেঘলা ও অভির সাথে ব্যপারটা শেয়ার করেছিলাম। দুষ্টু অভি যে মনে রেখে এটা বলবে…….. আমি স্বপ্নেও
ভাবিনি। বড়চাচা বলছেন, ঠিক আছে ৫ হাজার দেবো, কখন আসবি? অভি বলছে, তোমাকে রাতে জানাবো আমি। বড়চাচা ফোন রেখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, এমবিবিএস ডাক্তারও এখনো হয়নি। চামড়া তোলা শুরু করে দিয়েছে। আমি মনে মনে বলি, তোমার জন্য এটাই ঠিক।
বড়চাচা এবার যেন সবকিছু পারফেক্ট হওয়ার নেশায় মেতেছেন। বললেন, মেঘলা কে একটা ফোন দে তো। বললেন, দাওয়াতের দিন তো ছুটির দিনে ফেলবো। চলে আসিস রে মা। একসাথে ডিনার করবো। মেঘলা সাফ না করে দিলো, আমার পড়ার অনেক চাপ চাচা। স্যরি আসতে পারবো না। দোলাকে সবাই আড়ালে ক্যাটক্যাটি ডাকে। কিন্তু মেঘলা কে কেউ ভয় পায় না। তার এতো রুঢ় জবাব পাওয়ার জন্য চাচা প্রস্তুত ছিলেন না। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে এবার বললেন,
আসলেই মেডিকেলে চান্স পেলেই অনেক চাপ।
রাতে যখন মাকে লুকিয়ে দোলাকে আজকের ঘটনা বললাম,ও হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। বললো,অভি ভাই মানুষটা অনেক উদ্ভট, কিন্তু বড় চাচাকে এই কথা বলার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
তুই চিন্তা কর, বড়ফুপুর গাড়ি ও তাদের বাবুর্চি নিয়ে অভি ভাই বাজারের আশেপাশে ভালো কোনো রেষ্টুরেন্টে এসির বাতাস খাবে। বাবুর্চি কে
দিয়ে যেভাবে তাদের বাজার আনায় আনাবে। তারপর,বড়চাচার কাছে বাজার পৌঁছে দিয়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে চলে যাবে। দুজনে মিলে প্রান খুলে হাসছি। দোলা যা বলেছে আমি জানি ঠিক সেরকম ই হবে। সংসারের কাজে অভি প্রচুর পরিমাণে ফাঁকিবাজি করে বলে বড়ফুপুর প্রচুর গাল খায়। আর সে করবে দাওয়াতের বাজার !!!
ঠিক সেই সময় মেঘলা সিলেট থেকে ফোন দিয়েছে আমাকে। স্পীকারে না দিলে শোনা যায় না বলে, সব কথা পাশের জন সহ শুনতে পাই। ধরে বলছে, কোন বুদ্ধিতে তুই বড়চাচাকে আমার সাথে কথা বলিয়ে দিলি? আমি এদের যে দেখতে পারি না……. তুই সেটা জানিস না ছোটভাই? আমি বলি, কি করবো উনি চাচ্ছেন পার্টিতে তুই উপস্থিত যেন থাকিস। বারবার করে বলছেন।
মেঘলা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, তুই ভুলে গেছিস নাকি গতবার বড়চাচা তার ফ্যামিলি নিয়ে যখন এসেছিলেন,সবার জন্য নতুন ড্রেস এনেছেন। শুধু দোলা ও আমার জন্য মেয়ের পরা দুটো ড্রেস দিয়েছিলেন। দোলা লাগবে না বলে ফিরিয়ে দিয়ে এসেছিল। তার এতো বড় সাহস !!! কোন সাহসে
আবার আমাদের বাসায় ঢুকে? চাচা বলতেও ঘেন্না লাগে আমার। ফাহিম টাকা খাওয়াইছে মনে হয়। এজন্যই ফাহিমের বোনের সাথে তোকে বিয়ে দিতে চায়। ফাহিম হোক আর চাচা হোক,সবাই এক খুরে মাথা কামানো।খবরদার ছোটভাই,এসব তোর মাথায় আনবি না। এরা সারাজীবন কখনো আমাদের মানুষ বলে গণ্য করেনি ভবিষ্যতেও কখনো করবে না। বড় বড় কথা শুধু। মাকে এখন ভজভজ করে, আগে কখনো খোঁজ করেছে, আমরা বেঁচে আছি না মরে গেছি? ঝাড়ুপেটা করা দরকার এদের, লজ্জা শরম বলতে তো কিছু নেই।
শোনছিস ছোট ভাই? আমি বলি,হ্যা হ্যা শুনছি তো। তুই বলে যা। কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে যাওয়া স্বল্পভাষী মেঘলা এবার বলছে,আজ খুব খুশির মুডে ছিলাম। আমার সহপাঠী যুথীর মা অনেক পিঠে দিয়ে গেছেন। এরা এখানকার স্থানীয় মানুষ।
আতিথেয়তার জন্য সিলেটিরা অনেক ভালো মনে হচ্ছে। আমি এবার থামিয়ে দিয়ে বলি,ওসব পরে
শুনবো। প্রথমেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি, তোর এতো ভালো মুড কে রাতারাতি খারাপ করে কতো কতো
অপমানের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলাম বলে।
দোলা এবার ইশারা দিয়ে বলছে ওকে ফোন না দিতে। আমি বলি,মেঘলার সব কথাই অকাট্য সত্য দেখ। শাওনকে জোর দিয়ে না করে দেবো। কিছু কিছু সম্পর্ক শুধু অশান্তি সৃষ্টি করে। এদের শেষ কখনো ই ভালো হয় না। মার খুশিই আমার খুশি। এটার এখানেই ইতি ঘটুক। দোলা বিছানায় বসা ছিল আমি বেতের চেয়ারে। ও এবার নেমে
এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, পৃথিবীতে কোনো কিছুই আনপেইড থাকে না। দেখিস তোকে আল্লাহ এর উত্তম প্রতিদান দান করবেন। আমার কেন যেন তোর জন্য ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট।
মনে হচ্ছে শাওন আপুর সাথে দেখা করিয়ে দিয়ে, তোর কষ্টের সূচনাকারী হলাম না তো। আমি বলি,
তুই আবার কি করলি? এতো আমার ভাগ্যের খেলা। বাবা মারা গেছেন, ভাইয়া থেকেও নেই। সে জন্য ই এতো চাপ। কিন্তু কোনো ভাবেই মাকে কষ্ট দেয়া যাবে না।
আরিয়ান কে পড়াচ্ছি কোথা থেকে উড়ে উড়ে এসে আইরিন আপু বললেন, আপনার জন্য দুটো
টিউশনি যোগাড় করেছি। একটা ক্লাশ নাইনের ও
একটা ক্লাশ ফোর এর। এখন আপনি বলেন তো কাকে পড়াবেন? আমি বলি,ক্লাশ নাইনের টাই দেখেন প্লিজ। যেভাবে ফড়িং এর মতো এসেছি লেন ঠিক সেভাবেই চলেও গেলেন। কিছুক্ষণ পর এসে যা পারিশ্রমিক বললেন,তা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হবে।আমি এ ব্যাপারে কথা বলতেই ধমক খেলাম, এই বেশি বেশি ভালো হওয়া বন্ধ করেন তো। তাদের অনেক আছে, আপনি হেজিটেট করছেন কেন সেটাই তো
বুঝতে পারছি না। তাছাড়া আমার তো মনে হয়,
পৃথিবীর সবকিছু শিক্ষককে দিয়ে দিলেও কিছুই দেয়া হবে না।
বাসে উঠে মনে মনে ভাবছি,কি অদ্ভুত তোমার এই
পৃথিবী মাবুদ আর তার চেয়েও বৈচিত্র্যময় এর মানবকূল। কে যে কিসের নেশায় কাকে ভালবাসে
আর কাকে ঘৃণা করে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই মালুম। মালাবুর কথা মনে হলো,রক্ত কাটলে তো দুইভাগ হয় না। আজকের কাগজের গরম খবর
হলো, সম্পত্তির জন্য ভাই ভাইকে নৃশংস ভাবে খুন করে ফেলেছে। তাহলে আবার কি রইলো এ
কঠিন দুনিয়ায়? মা ঠিক ই বলে,সব পাপের মা হচ্ছে লোভ।
ভাইয়া গতকাল আমাকে ফোন করেছিল। বললো
ভাবির একমাত্র ভাই ইংল্যান্ড থেকে ফিরে এসেছে
এতো দিন দেশে আসেনি কারণ পাঞ্জাবি একটি মেয়েকে নাকি বিয়ে করেছিল। মেয়েটি ডিভোর্স দিয়ে চলে যাওয়ায় দেশের কথা মনে পড়েছে। এখন এসে নাকি বলছে, তিনতলা বিল্ডিং এর যে
কোনো একতলা ভাবিকে দিয়ে বাকি সবকিছু তাকে দিতে হবে। ভাইয়া জুয়েলার্সে কাজ করে নায্য পারিশ্রমিক পাবে কিন্তু স্বত্ব বা মালিকানা সব
ভাবির ভাইয়ের হবে। আমি বলি, তোমার শশুর কি আগে লিখিত ভাবে তোমার নামে কিছু করে রাখেননি?
বিমর্ষ গলায় বলল না, আমি ও সিমা ভেবেছিলাম
আছেই তো। অস্থির হয়ে কি লাভ? এর মধ্যেই
এই মূর্তিমান সমস্যা চলে আসবে কে ভেবেছিল? আমি বলি, তোমার চিন্তা ভাবনা করার কিছু নেই, ভাবি একলাই একশো। ঠিক ই চেঁচামেচি করে সব
কিছু আদায় করে ছাড়বে। এবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে
বললো, সেটাই তো ভয় লাগছে রে। এতোদিন পর ছেলে ঘরে ফিরে এসেছে বলে, স্বাভাবিক ভাবেই তার মা বাবা খুব খুশি হয়ে ছেলের হ্যা তে হ্যা মেলাচ্ছেন। বলবো না বলবো না করেও বলে উঠি,তুমি না বললে তোমার শশুর শাশুড়ি তোমায়
ভীষণ ভালবাসেন। তবে আর চিন্তা কি। এবার আরো বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,তা তো এরা করতেনই। এখন কি করবে,কে জানে? দেখ্ আমি সুখের আশায় বাড়ি ছাড়লাম, এখন কতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। আসলে সব মায়ের বদদোয়া, না হয়
আমার এই দশা হয়। একটু স্বাধীনতা নেই…… এই
জীবন কি আসলেই আমি চেয়েছিলাম। ইদানিং নিজেকে কেমন যেন চিড়িয়াখানার পশু বলে মনে হয়। আমি তখন নিজেকে নিজেই বলি,কি সাদি তুমিও কি হাদির মতো অসম্পুর্ণ জীবন চাও? না
চাইলে শাওনের লোভ এক্ষুনি মন থেকে ছাড়ো।
সেলিম জানিয়ে দিয়েছে যে,আর একদিন কাজ করলেই তার কাজ শেষ। আমার অতি খুঁতখুঁতে মা বারবার গিয়ে দেখেছেন, রুম বড় হয়েছে কিনা
ও আলো বাতাস ঢুকবে কিনা। মা সন্তূষ্ট হওয়ায়
সেলিম নিজেও খুব খুশি। আমাকে সেদিন বলছে, ভাইজান রঙের মিস্ত্রী দেখেন আর রঙ কিনে আনেন। মাকে কি রঙ হবে জিজ্ঞেস করতেই বলে
তোমরা ৪জন ঠিক করো। রাতে অভি ও মেঘলা কে ভিডিওকল দিলাম। ভাইয়া কে আমি ফোন দিতে চেয়েছিলাম। মা কঠিন মুখ করে বললো,
তোমাকে যা বলা হয়েছে তা করো।রাগ উঠলে মা তুমি করে বলে। মেঘলা স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলে,
তোমাদের পছন্দ মতো একটা রঙ দিয়ে দাও। শুধু
হালকা রঙের হলেই হলো। আমারো সেই মত। কিন্তু ঝামেলা পাকিয়েছে অভি আর দোলা। এক
জন একটা রঙ বললে অপরজন রুচিহীন বলছে।
এবার আমি মাকে কানে কানে বলি, তুমি না কথা
বললে রঙ নির্বাচন আজ আর হচ্ছেনা। অবশেষে
মা কিছুক্ষণ কথা বলায় এ পর্বের এখানেই সমাপ্তি
ঘটলো।
আজ সেলিম তার বাকি পাওনা টাকা নিয়ে বিদায় নিল। মাকে সালাম দিয়ে বলছে,যে কোনো সময় শুধু মনে করবেন। কিভাবে উড়ে চলে আসি সেটা
দেখবেন। নিজের খেয়াল রাখবেন,আপনি বাঁচলে
আমরা গরীবরা খুশি হবো। আমি মাত্র কিছুদিন ধরে এসব দেখেই বিরক্ত লাগছে। মনে হচ্ছে কবে যে কাজ শেষ হবে। রঙের মিস্ত্রী বললো,৫/৬ দিন লাগবে। মা বলছে, লাগুক তবে সুন্দর যেন হয়।
প্লাষ্টিক পেইন্টে আস্তে আস্তে রুমগুলো রাজকীয় রুপ ধারণ করছে। সবকিছু শেষ হলে,আমি ও দোলা কোন রুমে পুরানো কোন কোন ফার্ণিচার যাবে………. তা ঠিক করতে বসি। কিন্তু পরদিন দুপুরেই পাগলা অভি হইহই করে এক ট্রাক ভরা ফার্ণিচার নিয়ে চলে এসেছে। সে বিস্মিত হবার সুযোগটুকুও কাউকে দেয়নি।
মা বললো, তুই কিন্তু এবার বাড়াবাড়ি করছিস অভি। ফেরত নিয়ে যা এইসব। অভি বললো, তুমি সেদিন বললে না, আমার বাচ্চাদের মধ্যে যার বিয়ে আগে হবে তার রুম হবে এগুলো। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, খুব শিগগিরই আমার বিয়ে হবে। হয়তো বা সাদি ভাই এর আগেই। সেজন্য পছন্দ করে ফার্নিচার নিয়ে এলাম। মা এবার অবাক হয়েই বললো,কনেটা কে? দোলা হেসে উঠলো, এতো দিন ধরে তোমায় যে গল্প করে যাচ্ছেন বন্ধুর প্রেমের সেটা তার নিজেরই গল্প মা। আর বন্ধুর প্রেমিকার যা গল্প শুনেছ সব তার প্রেমিকা রুহামা আপুর। এই অভি ভাই, মাকে তুমি আপুর ছবিটা দেখাও না। এতো সব ধাক্কা একসাথে পেয়ে, আমি আর মা নীরব দর্শক হয়ে বসে আছি।
(চলবে)