###জীবন যখন যেমন(১৫ তম পর্ব)
###লাকি রশীদ
সারা রাতের ক্লান্তি, গোসল করে ঘুমিয়ে পড়লাম। তাছাড়া অদ্ভুত এক অবসাদে মনটা ভরে আছে। কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, মনে হচ্ছে কোথাও খুব দামী কিছু হারিয়ে ফেলেছি। হেলায় ফেলে দেয়া সেটার জন্য মনটা দিনরাত কেঁদেই যাচ্ছে। আজ থেকে দোলারও ক্লাশ শুরু হয়ে গেছে। সকাল ১১ টায় ঘুম থেকে উঠে দেখি মা নাস্তা নিয়ে বসে আছে। নিজেও খায়নি,বকছি আমাকে ডাকলে না
আবার নিজেও সময়মতো খেলে না……….. এসব কি মা? তোমার যে সবকিছু নিয়ম মাফিক করা উচিত…….. সেটা তুমি ভুলে যাও কেন বলোতো? বাচ্চারা কথা না শুনলে অভিভাবক বকলে যেমন
ধরা পড়ে যাওয়া মুখ করে…….. মা ঠিক তেমনি আমাকে বলছে,আরে বাবা আমি এইমাত্র খেতাম
তো। আমি চাপা স্বরে বলি,আমি নিশ্চিত মালাবুর নাস্তা করাও শেষ। সবারটা বুঝো শুধু নিজেরটাই
তুমি যেন বুঝতে চাও না। তোমার সমস্যাটা কি,
সেটাই তো বুঝিনা। ঠিক সেই সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। আমি বলি, তুমি বসো তো আমি দেখছি।
খুলে দেখি মেজমামা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেক বছর আগে দেখেছি, কিন্তু চেহারায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি বলে অবলীলায় চেনা যায়। হাতে মিষ্টির প্যাকেট,আড়ষ্ট হেসে বললেন
কি রে ভালো আছিস? আমি বলি, ভালো। ভেতরে আসুন। মামাকে দেখেই কঠিন মুখ করে থাকা মা এর সাথে একটু আগে আদুরে ভঙ্গিতে কথা বলা মায়ের মোটেই মিল নেই। মামা বলছেন, কিরে রেবু ভালো আছিস? মা বলল, আলহামদুলিল্লাহ। তুমি হঠাৎ,পথ ভুলে নাকি? মামা অপরাধী গলায় বলছে, বুঝতে পারছি খুব রেগে আছিস। ব্যবসা
নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকি, তোর আর খবর নেয়া হয়ে
উঠে না। এদিকে আমার প্রচন্ড ক্ষিদে পেয়েছে, আবার এইভাবে মামাকে রেখে একা একা খেতে ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে।
তাই সামনে প্লেট দিয়ে বললাম,মামা আমার সাথে নাস্তা করেন। উনি ঢাকা শহরে থাকেন না। বাড়ি থেকে আসতে কমপক্ষে ঘন্টা দুয়েক লেগেছে।ক্ষিদে পাবারই কথা, কিন্তু মায়ের এতো শীতল আচরণ দেখে হয়তো না করছেন। এবার আমার দিকে তাকিয়ে মা বললো,এসব শুকনো রুটি ভাজি কি ভাইজানের মুখে রুচবে রে বাবা? উনি উনার গরুর দুধ থেকে তৈরি খাঁটি ঘি দিয়ে পরোটা
খান। লজ্জায় মামা বললেন, না না সেজন্য না। বেসিনে হাত ধুয়ে আসি। আমি হিসেব করে রুটি খাই না বলে মা সকালে অনেক গুলো রুটি করে। মামা রুটি ও চিচিঙ্গা ভাজি নিয়েছে। খেয়ে বলছে,
এতে ডিম দিয়েছিস নাকি? খুব মজা হয়েছে তো।
মা বললো,সবাই দেয় ভাইজান। এটা কোনো নতুন
জিনিস না। এতো প্রতিকূল পরিবেশের জন্য হয়ত
মামা বিষম খেয়ে ফেললেন। মুহূর্তেই মা দেখি,
গ্লাস হাতে দৌড়ে মামাকে পানি দিচ্ছেন। সাথে সাথে মাথায় থাবড়া দিয়ে বলছেন, এভাবে কেউ এতো হুড়োহুড়ি করে খায় !!! বিষম তো খাবেই। আমি আপনমনে হাসছি, এতো রাগ সব বাইরে বাইরেই তোমার মা। ভাই হোক, ছেলে হোক………
এরা অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো থাকলেও,
তোমার আদর ভালবাসা ফল্গুধারার মতো বয়ে যাবেই। রাকিব ঠিকই বলে, তুমি কচি নারকেলের মতো। বাইরে কঠিন কিন্তু ভেতরটা একদম নরম।
এক বিষম খেয়ে মামা অনেক কিছু থেকে বেঁচে গেল। মা অনেকটা নমনীয় হয়েছে,চিনি খায় কিনা
জিজ্ঞেস করে চা দিয়েছে। আমার শান্তি লাগছে এখন,এই ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে আমার কেমন যেন সাফোকেশন হয়। চা খেতে খেতে মামা বললো,উত্তরপাড়ার জমি সব বিক্রি করে দিয়েছি রে। তোর ভাগের সোয়া ৮ লাখ টাকা কোন একাউন্টে জমা হবে……. সেটা জানতে আসা। মা বললো, পিছনের বিছরার(বাগানের) এতো জমি বিক্রি করে তোমরা ভাগ করে নিলে।
এক পয়সাও আমার হাতে আসে নাই। তাহলে, এখন এই টাকা দিতে এতো হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলে কেন? আমি আসলেই বুঝতে পারছি না।
মেজমামা বললেন,বড় ভাইজান আমাকে বলে গিয়েছিলেন জমি বিক্রি হওয়ার সাথে সাথেই যেন
তোর হাতে টাকা পৌঁছে যায়। মা রীতিমতো জেরা
করছে, তাহলে আগেরটা পড়লো না কেন শুনি?
মামা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,কারণটা হচ্ছে বয়স।
তখন রক্তের তেজ ছিল,আজ সেটা নেই। মা কেঁদে কেঁদে বলছে, তোমরা আমার এতো কষ্ট হচ্ছে জেনেও এতোটা বছর আমার প্রাপ্য টাকাও
দেওনি। একবার খোঁজও করোনি, বিধবা বোন তার ৪ টা বাচ্চা কিভাবে মানুষ করেছে। আমি জানি অনেকেই আমার ব্যপারে সবসময় তোমায় কানমন্ত্র দিতো। কিন্তু তুমি ভেবে দেখো তো ভাইজান, কবরে বোনের হক আদায় করেছো কি না জিজ্ঞেস করা হলে তুমি কি উত্তর দিবে? কেউ তো তোমার পাপের অংশ নিজের ঘাড়ে নিবে না।
বড় ভাইজান অনেক সাহায্য করেছেন, কিন্তু বাকি
দুজন সাহায্য করা তো দূরে থাক্, আমার টাকা টা
দিতেও রাজি না। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, কাফনের কাপড়ের তো পকেট থাকে না। তোমরা
এতো সব নিবে কি করে? মেজমামা দেখি মাথা হেঁট করে বসে আছেন। কিছুক্ষণ পর তিনি মায়ের একাউন্ট নং নিয়ে চলে গেলেন। যাবার পর দেখি
মা অঝোর ধারায় পাগল হয়ে কাঁদছে। পিঠে হাত দিতেই বললো, এই ভাইয়ের কতো আদরের বোন ছিলাম আমি। স্বার্থের জন্য সবাই পর হয়ে যায় রে বাবা। সম্পর্কগুলো এতো ঠুনকো কেন সেটাই বসে বসে এখন ভাবছি। শর্তহীন ভালবাসার বড্ড
অভাব পৃথিবীতে তাই না বল্? আমি বলি, তুমি ই তো বলো লোভ বড় কঠিন রিপু। সামলাতে পারা লোকের সংখ্যা খুব কম। তবে এসব ভেবে কি লাভ বলো মা? শুধু শুধু শরীর খারাপ করবে। বরং ভাবো টাকাটা কোথায় খরচ করবে? এক সেকেন্ড না ভেবেই মা বললো,ওয়াশরুম সহ বড় করে দুটি রুম বানাবো বাবা। জায়গার বড় অভাব আমাদের এখানে। হয়ে যাবে না বল্? আমি বলি, হবে ভালো ভাবেই হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
অনেক বছর আগের দুঃখে মা এতো কেঁদেছে যে,
আমি নিশ্চিত এবার ভীষণ মাথা ব্যথা করবে তার। বলি, মা আজ আর রান্নাঘরে যেও না। ভর্তা,
ডাল দিয়ে চালিয়ে দাও,মালাবু যা পারে করুক। আমি একটু রাকিবের বাসা থেকে আসছি। মা
এবার অস্থির হয়ে বলছে, কোনো বাইরে যাওয়া টাওয়া না। চূপচাপ বাসায় বসে থাক বললাম। হেসে বলি, এভাবে ঘরবন্দী হয়ে থাকা কি সম্ভব? তাছাড়া সবাই সন্দেহ করবে তাহলে। স্বাভাবিক চলাফেরা করলে বরং ভালো। দোটানায় পড়ে মা
এবার বলছে, তাড়াতাড়ি ফিরিস বাবা। না হলে আমি খুবই চিন্তায় থাকবো। কিন্তু,আজ মনে হয় আমার বিস্মিত হবার দিন ই।
বের হতে যাবো, কাপড় চেঞ্জ করে কেবল ডাইনিং টেবিলের কাছে পৌঁছেছি বড় চাচার দরাজ গলা,
কই রে সাদি? কোথায় গেলি বাবা? চেয়ে দেখি ছোট চাচাও পেছনে দাঁড়িয়ে হাসছে। মাকে সালাম দিয়ে বড়চাচা বলছেন, আমি জানি ভাবী আপনি আমার বিগত কয়েক বছরের কর্মকান্ডে ভীষণ রাগ করে আছেন। কিন্তু এখন আমি এমন একটা খবর দিবো যে,আপনি খুশি হয়ে যাবেন। মা তখন জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকাতেই বললেন,শাওন কে পাওয়া গেছে। মা এবার কঠিন স্বরে বললো, ছিল কোথায় মেয়েটা? বড়চাচা বললো, গত পরশু ও আমাকে ইংল্যান্ড এ ফোন করেছিল। আমি তখন বলি, তোর মা তোর কোনো খবর না পেয়ে বিছানা নিয়েছে। তুই এখন কোথায়?
শাওন তখন আমাকে বললো, চাচা আমি বাসায়
গেলে ভাইয়া জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবে। তুমি ও ছোট চাচা যদি দ্বায়িত্ব নিয়ে বলো, কেউ আমার অনিচ্ছায় বিয়ে দিবে না…….. তবে আমি বাসায় যেতে পারি। যদি ওরা জোর করে বিয়ে দেয়………
আমি জীবনেও তোমাদের মাফ করবো না। আর
তোমাদের বাচ্চাদের কক্ষণো ভালো হবে না। মা অবাক হয়ে বলছে,কি ডাকাত মেয়ে রে বাবা !!!
আর ক’দিন গেলে মাকে তো খুঁজে পাওয়া যেতো না। সেদিন শুনেছি কাঁদতে কাঁদতে নাকি নিজের খুব খারাপ অবস্থা করে ফেলেছে। আর শর্তারোপ দেখে মনে হচ্ছে তোমাদের ই ভাতিজি।
বড়চাচা বলছেন, আমি ওইসময় ই ফোন করে ফাহিম কে সবকিছু খুলে বলি। বুঝাই যায়,দাঁত কিড়মিড় করে সে সব শোনে। তারপর বলে, ওকে
তো চাচা আমি ঠিক করে ফেলতে পারতাম। কিন্তু
এই কয়দিনেই মার যে অবস্থা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে, মাকে সুস্থ রাখতে হলে ওর কথা ই মানতে হবে। আপনি ওকে বাসায় আসতে বলেন। আমি বলি, সে এখন আসবে না। পরশুদিন আমার ও
তোর ছোট চাচার সাথে আসবে। আমরা দুই ভাই যদি ওকে আনতে হয় তবে তো ওকে জোর করে তুই কিছু করতে পারবি না। আর যদি বলিস, আমি ওকে জোর করবো ই তবে আমরা এতে জড়িত থাকবো না। নাহলে বিশ্বাসঘাতকতা হবে।
মেয়েটি সারাজীবন আমাদেরকে বদদোয়া দিবে।তোর বোন তুই সামলা বাবা। কিন্তু আমাদের জড়ালে, অন্য কিছু মনে আনতে পারবি না। সে
এবার বলছে, ঠিক আছে ওকে তাহলে নিয়ে আসুন আপনারা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে দেখি শাওন ওর বান্ধবী নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে ওর বাসায় দিয়ে এলাম। মা মেয়ে দুজনেই
এখন গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। এই হলো ঘটনা।
চা খেতে খেতে ছোট চাচা বললো, সাদি কিছুতেই যে জড়িত না…….. সেটা ফাহিম বুঝে গেছে। তুই তোর স্বাভাবিক জীবন যাপন চালিয়ে যা। কোনো সমস্যা হলে আমরা তো আছিই। ওরা চলে গেলে মা আমাকে বললো, সারাজীবন বাবার বাড়ি ও শশুড়বাড়ির মানুষ এতো কষ্ট দিয়েছে, এখন আর কোনটি সত্য কোনটি মিথ্যা বুঝতে পারি না। ওই মেয়ে কথা বলতে চাইলেও বলবি না। ফাহিম নিজের বোনকে শাসন করতে না পেরে, হয়তো বা বিনা অপরাধে আমার ছেলেটাকে কি না কি করে।
দোলা এসে সব শুনে বলল,বড়চাচা এবার এতো ভালো সাজার চেষ্টা করছে কেন মা? আগে সবাই কে বুদ্ধি দিলো, এদেরকে কেউ সাহায্য করবে না।
উনি কি মনে করেছেন, আমরা এসব ভুলে গেছি? এদের লজ্জা বলতেও কিছু নেই। আচ্ছা আমি শাওন আপুর সাথে একটু দেখা করে আসি মা? কঠিন স্বরে মা এবার বলছে, খবরদার। কিসের দেখা করা? ওই বাসায় আর কক্ষণো যাবি না।
কান্ডজ্ঞানহীন একটা মেয়ে, কিছু না করেও আমার ছেলেকে কিভাবে ফাঁসানো হলো। আল্লাহ বাঁচিয়েছেন, নয়তো ছেলে ঘর থেকে বের করতেও
ভয় লেগেছে আমার। উনি আবার ঢ্যাং ঢ্যাং করে
ছুটলেন, শাওন আপুকে দেখবেন বলে।যত্তোসব।
মা যাই বলুক, আমার যেন ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল।
শাওন ভালো আছে,সুস্থ আছে এটাই হচ্ছে স্থস্তির
কথা। আমি তো ভয় পাচ্ছিলাম, কোথাও বিপদে পড়লো কিনা ভেবে। মায়ের রাগ খুবই স্বাভাবিক,
জীবনের প্রতিটি সেকেন্ড যেখানে শুধু প্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করতে হয়, সেখানে এসব উটকো ঝামেলা বিরক্তির জন্ম দিবেই। দুপুরে খেয়ে রাকিবের বাসায় গেলাম। ও কিছু জানে না, শুনে বললো এতো বড় বিপদেও তুই আমাকে
এসব বলার প্রয়োজন মনে করলি না? অনেক ভেবে দেখেছি আমি, তুই দিনদিন কেমন যেন এক
অনুভূতিহীন মানুষ হয়ে যাচ্ছিস।
বিকেলে খালা এলে মনে হয় রাকিব সবকিছু বলেছে,উনি দেখি অফিসের কাপড় পাল্টেই চলে এসেছেন। এসে মাথায় হাত রেখে বললেন, এখনো তুই এতো দূরের মানুষ মনে করিস আমাদের? খুব সাবধানে থাকিস বাবা,এই ধরনের মেয়েগুলো শুধু ঝামেলাই করে। আমি কিছু বলার আগেই রাকিব বলছে, এমনি এমনিই
মেয়েটাকে বকো না তো মা। সাড়ে ৩ বছর ধরে মেয়েটা তোমার ছেলের জন্য কোনো দিকে ই তাকায়নি। খালা কন্ঠে এবার মধু ঝরিয়ে বললেন,
ছেলেও আমার সেরকম বল্? হীরের টুকরো ১টা ছেলে,ফেলনা নাকি? কি খাবি বল আজকে? মা কে ফোন দিয়ে বল্,আজ এখানে রাতে থাকবি।আজ স্পেশাল ডিনার হবে।
রাকিব এবার জোরে চেঁচাচ্ছে,বারে তুমি তো ভালো বৈষম্যকারী মা। আমাকে কিরকম বকা দাও,ক্যারেক্টার ঠিক রাখো না কেন বলে। আর ওর বান্ধবী ফিরে এসেছে বলে ওকে স্পেশাল রান্না করে খাওয়াচ্ছো !!! খালা এবার হেসে বললেন, পার্থক্যটা কি সত্যিই চোখে পড়ছে না তোর? নাকি বুঝেও না বুঝার ভান করছিস? তোর ক্ষেত্রে তুই মেয়েদের পেছনে দৌড়াস্। আর
ওর ক্ষেত্রে ঠিক বিপরীত। রাকিব এবার বলছে,
একজন মানুষকে এতো দিন কষ্ট দেয়ার অপরাধে
ওর কিন্তু অনেক বেশি পাপ হবে মা। খালা ওর মাথায় চাটি মেরে বললেন, সবসময় উল্টো চিন্তা।
মাকে ফোন দিয়ে বলতেই বলছে,আহহারে !!! আমি জানি না বাবা তুই যে থাকবি। আমি সেলিম কে রাতে আসতে বলেছি। সেলিম হচ্ছে আমাদের পুরনো চেনা রাজমিস্ত্রী। আমি বলি, তাহলে খালা কে না করে দিয়ে বাসায় চলে আসছি। এবার মা বলছে, না না কিরকম বাজে লাগছে। ঠিক আছে, সেলিমকে ফোন দিয়ে বলি, সকাল ১০টায় যেন আসে। ক’দিন ধরে ফোনটা বেগড়বাই করছে বলে আমি স্পীকারে দিয়ে কথা বলি। নয়তো কিছু শোনা যায় না। সেজন্য রাকিব শুনে বলছে,বিল্ডিং তুলছিস নাকি? আমি মেজমামার সবকিছু খুলে বলি।
এবার সে আমার চেয়ে যেন বেশি উৎসাহী,শোন আমার এক দুলাভাই আছেন যিনি খুব সুন্দর করে বাসা ডিজাইন করে দেন। আমি বলি, লাগবে না রে। যে টাকা আছে খুব সাধারণ ভাবে হয়তো
দুটো রুম কোনো ভাবে করা যাবে। রাকিবের গলা
এবার চড়েছে, শালা তোর কাছে টাকা চেয়েছে কে? সবকিছুর মধ্যে টাকাকে টেনে আনিস কেন?
আমি বলে দেবো, দুই রুমের ডিজাইনের জন্য টাকা নিতে হবে নাকি? রাকিবের সমস্যা হলো যা ধরে সেটা অনেকটা কুমিরের কামড়ের মতো। আমি ভাবছি, কেন এখন আমি কথা বাড়াচ্ছি? পরে হয়তো বা এটার কথা তার মনেই থাকবে না। বললাম, ঠিক আছে সময়মতো তোকে আমি বলবো।
রাতে ভালো ভালো কিছু আইটেম দিয়ে খেলাম। এরমধ্যে একটা ছিল আমার খুবই প্রিয় চিকেন মাঞ্চুরিয়ান ও এগ ফ্রাইড রাইস। আমি ও খালু হই হই করে বাটিতে যা ছিল প্রায় সবই খেয়ে ফেলেছি। আগামী কাল ছুটির দিন তাই অনেক রাত পর্যন্ত ৪ জন আড্ডা দিয়েছি। সকালে ৯টায়
উঠে বাসায় গিয়ে দেখি মা ও দোলা চায়ে মাত্র চুমুক দিয়েছে। দোলা আবার আগুন গরম চা ছাড়া খায় না। আমি বলি, এই কাপ আমাকে দে।
তুই আরেক কাপ বানিয়ে খা তো। সে এবার জোরে চেঁচাচ্ছে, এটা আবার কেমন কথা হলো? সারাটা সপ্তাহে ছুটির দিনে একটু আয়েশ করে চা
খাবারও উপায় নেই? আমি বলি, এতো আয়েশ করে আর খেতে হবেনা। পিছনে থেকে অভি বলে,
হ্যা তাই তো। মেডিকেলে ঢুকে তোর কি নতুন হাত পা গজিয়েছে না কি? বড়ভাইদের চোখে পড়ে না?
যা আমার জন্যও চা নিয়ে আয় তো। আবার তুই নবাবী স্টাইলের হাঁটা হাঁটিস্ না। দোলা বলছে,বড় ভাই বলে বলে আমাকে দিয়ে তো অনেক কাজ করাচ্ছো। এসময় মেঘলা থাকলে ভালো হতো।
অভি চেঁচিয়ে উঠলো, মেঘলা অনেক করেছে, এবার তুই কর। ফাঁকিবাজ কোথাকার !!!
মা এবার অভির দিকে তাকিয়ে বলল, রাজমিস্ত্রী সেলিম আসবে। একটা কথা আছে,একা না বোকা? তোরা দুইভাই মিলে সুন্দর দূইটা রুমের কথা বলে দেখ্ কতো লাগে? আমি বলি,শোন্ আমাদের হাতে আসবে মোট সোয়া আট লাখ টাকা। অভি বলল, সেলিমকে বলতে হবে ৭লাখ.
নয়তো লম্বা ফর্দ হাতে ধরিয়ে দিবে। সেলিম এসে পড়েছে, এখন মা ওকে বলছে, এমন ভাবে করবে যেন দক্ষিণের বাতাস ঘরে ঢুকে আর ঘরটা যেন সুন্দর হয়। আমার যে বাচ্চার বিয়ে আগে হয়, সে
এই রুমগুলো তে থাকবে। সেলিম বলছে, হাদি ভাই তো করে ফেলেছে। মা এবার বললো,ও এই
হিসেবে নেই। আমি সাদি,অভি আর আমার মেয়ে
দুটোর কথা বলছি। সেলিম চলে যেতেই অভি এসে মাকে জড়িয়ে ধরে বলল, পৃথিবীতে তোমার মতো আর কেউ নেই। বড়মামীর কোনো বিকল্প হবে না। তুমি বাসা বানানোর সময়ও আমার কথা মাথায় রেখেছো? মা আলতো হেসে বলল, কেন
তুই আমার ছেলে নোস্?
সন্ধ্যায় মা বলছে, আনোয়ারার বাসায় একটু দিয়ে আয় তো বাবা। অনেক দিন দেখা হয় না। আনোয়ারা খালা মায়ের পাড়াতুতো বান্ধবী। ঠিক সেই সময় তীব্র শব্দে কলিং বেল জানান দিচ্ছে কেউ এসেছে। দোলা খুলে দিয়েছে, মেহমান দেখে আমরা বেশ অবাক। বড় ও ছোট চাচা, ছোট চাচী
আমার ২ ফুপু। মা হেসে বলছে,আজ তো দেখি আমার অনেক ভালো একটা দিন। গরীবের ঘরে সব বড়লোকদের আগমন !!!
(চলবে)