###জীবন যখন যেমন(১০ম পর্ব)
###লাকি রশীদ

ভাইয়া এসেই মাকে সেই যে মা বলে জড়িয়ে ধরেছিল,ধরেই আছে। কাঁদতে কাঁদতে বলছে,এত
শুকিয়ে গেছো কেন মা? মা কিছুই বলছে না, কি
রকম প্রস্তরমুর্তির মতো বসে আছে। এবার ভাইয়া নীচে বসে পড়ে, তার দুই হাত দিয়ে মায়ের কোমর বেড় দিয়ে বলছে, কথা বলবে না আমার সাথে? একটু বলো মা? এবার মা বললো, আমার কোনো কথা নেই বাবা। সব কথা কাকে নিয়ে গেছে। কষ্ট
হচ্ছে মা এখন শরীরে? মা বললো না কষ্ট কিসের,
শরীরের চেয়ে মনে লক্ষগুণ কষ্ট নিয়ে বসে আছি।
যতদিন বেঁচে থাকবো, এরকম ই চলতে থাকবো।
আগে মায়ের বাতের ব্যথা বাড়লে, ভাইয়া টিপে দিতো। এবার দেখি মা না বললেও সে, হাঁটু থেকে একদম গোড়ালি পর্যন্ত টিপছে। মা এবার বললো, কিছু কিছু জিনিস অভ্যাসে কষ্ট বাড়ে শুধু, না পাওয়া গেলে বড় যন্ত্রণা। তাই পা টিপতে হবে না।

এবার ভাইয়া তার মুখ মায়ের দুই হাঁটুর ভিতরে রেখে বলছে, এতো চুপ করে থেকো না মা। বকা অন্তত দাও আমাকে। মা বলছে,বকা দেবার মতো ছোট তুই তো আর নেই বাবা। এবার চতুর ভাইয়া বলছে, অনেক ক্ষিদে পেয়েছে। খেতে দাও কিছু। মায়ের শীতল উত্তর,এসব তোর মুখে রুচবে নারে।ডিম ভুনা আর মুড়িঘণ্ট আজকের ম্যেনু। ভাইয়া এবার খুশি হয়ে বলছে, অনেক দিন তোমার হাতের মুড়িঘন্ট খাইনি মা। ভাত রাঁধতে হবে না,
যা আগের আছে তা দিয়েই হবে। এই একটা কথা
তেই মা ঘায়েল হয়ে যায়। যে কোনো কেউ
খাবার চাইলে, তৎক্ষণাৎ না দিলে যেন কিরকম একটা অস্থিরতা পেয়ে বসে থাকে। মা চলে যেতে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আপাতত এটাই মনে হলো। মনে হচ্ছে কাজ দিয়েছে রে।

আমি এবার ভাইয়াকে বললাম, নতুন জীবন কেমন লাগছে ভাইয়া? সে হেসে বললো, আমার শশুর, শাশুড়ি ভীষণ আদর করেন আমাকে। এই
বলা যায়, ভালবেসে শশুর আমার হাতে ধরে কাজ শিখাচ্ছেন। শুধু একটাই যন্ত্রণা, সিমা টাকা পয়সার ব্যাপারটা তার নিয়ন্ত্রনে রাখতে চায়। আমি বলি, বুঝেছি সিগারেটের পয়সাটাও খুঁজে আনতে হয় তোমার। ভাইয়া যে সরল সেটা ঠিকই,
আমাকে বলছে তূই জানলি কি করে? আমি বলি,
এইমাত্র জানলাম। এবার বলছে, কিছু টাকা নিয়ে এসেছি। মায়ের কাছে দিয়ে যাবো। আমি বলি, তুমি এটা ভুলেও করো না। মা বড়ফুপু কে পর্যন্ত
ছাড় দেয়নি। বড়ফুপু তোমার ব্যাপারৈ ফোন দিয়ে সুপারিশ করায় বলেছে, স্বীকার করছি আমি তোমাদের মতো এতো প্রগতিশীল বা উদারমনা নই। গোঁড়া ধ্যান ধারণার মানুষ আমি। আমি তো কারো গায়ে ঘেঁষার চেষ্টা করিনি। তোমরা উপরে পড়ে,যেচে আমার উপকার করতে যাও কেন? বড়ফুপু বলেছেন ঠিক আছে ভাবী, এরপর থেকে
আর কোনদিন এসব আপনাকে বলবো না। তুমি এসব বললে, মা আমাকে মাঝখানে বকা দেবে।

শুনি ডাক পড়েছে, সাদি ওকে খেতে আসতে বল্।
মালাবু ভাত,ডিমভুনা ও মুড়িঘণ্ট আগুন গরম করেছে। ভাইয়া চেয়ারে বসতেই মা বললো, মাকে ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিলে দেখেছো। খেয়ে বাসায় চলে যাও।আল্লাহর হাওলা তোমাকে। এবার দেখি আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, ভাই মাকে দেখতে এসেছে সেই খুশিতে, তুমি আবার তার কাছে থেকে টাকা নিও না। আমার অজান্তে যদি নাও,
তবে দাবিতে থাকবে। আমাদের জন্য আমাদের আল্লাহ ই যথেষ্ট সেটা মনে রেখো। আমি এখন গিয়ে শোবো, বিশ্রাম নিতে হবে।বলে ধীর পায়ে মা চলে গেল ভিতরে। আমি বুঝতে পারছি, শেষের কথার মানে হলো, আমাকে আর কেউ ডেকোনা।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বিষন্ন হাসি হেসে বলল,বরফ জমাট বাঁধাই আছে রে। আমি তো ভেবেছিলাম গলে গেছে। আমি বলি,সময় দাও। টাইম ক্যান হীল এনিথিং ভাইয়া। ইনশাআল্লাহ, দেখো সব একদিন ঠিক হবে।

আমার আরো কিছু পরীক্ষা বাকি আছে।যেগুলো
দিয়েছি, সেগুলো আমার মন মতো হয়েছে।সবাই
চিন্তিত, পরের দিন মেডিকেল কলেজের রেজাল্ট বেরিয়েছে। মেঘলা এতো ঘ্যানঘ্যান করার পরও দেখা গেল, দুজনেই সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পেয়েছে কিন্তু রেঙ্কিং এর হিসেবে দোলা ঢাকা মেডিকেল ও মেঘলা সিলেট ওসমানী মেডিকেলে চান্স পেয়েছে। খবর জেনে দোলা স্বাভাবিক ভাবে আছে যেন ও জানতোই ও পাবে। মেঘলা তার সেই স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে কাঁদছে ই। আমি বলি, কি আশ্চর্য্য কথায় কথায় তুই এতো কাঁদিস কেন বলতো? এটাতো খুশির খবর। এবার বলছে, খুশি বলেই তো কাঁদছি। মাকে রুমে গিয়ে বলতেই, দুই দিকে দুই জনকে জড়িয়ে ধরে বলছেন, নামাজ পড়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর্ দুইজনে। তোদের বাবা বেঁচে থাকলে আজ খুশির তুফান ছুটতো। কঠিন হৃদয়ের দোলা বলছে, তোমার জন্য সব তোমার জন্যই হয়েছে। মা সাথে সাথে ই ঠিক করে দিচ্ছে, এটা আবার কেমন কথা !!!আল্লাহ দিয়েছেন বল্। তাই বলে কখনো দুজনে অহংকার করো না। আল্লাহ দিতেও যেমন পারেন,
নিতেও তেমনি পারেন।

আমি মেঘলা কে বলি,চট্ করে রেডি হ। তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাবো। মা বললো, কোথায়?
বললাম, আইরিন আপুর বাসায়। ২/৩ দিন পরে গেলে যদি আকাশ ভাইয়াকে না পাই। মেঘলা বলে, তোকে যদি তারা আমার পড়ার খরচ দিতে রাজি না হয়? কি বেইজ্জতি হবে বলতো তোর?
এমনিতে তারা তোকে কতো ভালবাসে। আমার জন্য সম্পর্কটাও নষ্ট হবে। টিউশনি টাও যাবে। আমি বলি, ওরা অনেক ভালো মানুষ। আর যদি একান্তই না করে দেয়,তোর জন্য ভাই নাহয় একটু
লজ্জিত হলোই। কোনো সমস্যা নেই। তাছাড়া, আমি চাকরি পেলে তাদের আর দিতে হবে না।
আমি দেখছি আমার মা কথাগুলো শুনে বারবার চোখে আঁচল দিচ্ছেন। হায়রে আমার জনমদুঃখি
মা। সারাজীবন কাঁদতে কাঁদতেই শেষ। সুখ খুঁজে আর পেলো না। অধরা সেই সুখ পাখিটা এবার যদি ধরা দেয় তাকে।

ফোন দিয়ে মনে মনে দোয়া পড়ছি, আইরিন আপূ
রা যেন বাইরে না থাকে। ভদ্রমহিলা সারাক্ষণ যেন উড়ে উড়ে বেড়ান।ধরেই বললেন, তাড়াতাড়ি চলে আসুন সাদি। সন্ধ্যার পর আমি ও আকাশ একটা
পার্টিতে যাবো। আমি আর মেঘলা যখন তাদের গেটের ভেতরে পা দিয়েছি, ছাদের উপর থেকে আপু চেঁচিয়ে বললেন, সাদি আমরা এখানে, ছাদে
চলে আসুন। এবার মেঘলার পা আর সরছেই না।
নীচু স্বরে বলছে,এরা এতো বড়লোক আমি বুঝি নি। আমি ভেতরে যাবো না ছোটভাই প্লিজ। আমি এবার বিরক্ত হয়ে বলি, ওরা কি তোকে বলছে নাকি আমরা বড়লোক? এবার মেঘলা গুনগুন করে বলছে , আমার পরনে ৫০০/ টাকার বাটিক ড্রেস,১৫০/ টাকার স্যান্ডেল।আমি যাবো না প্লিজ।
আমি এবার ধমকে উঠি, তোদের মেয়েদের কেবল কি পরলাম……. এটাই মাথায় ঘুরে নাকি? ওরা সে
রকম মানুষ ই না। চল্, নিজেই গিয়ে দেখবি। দেরি দেখে এবার আকাশ ভাই মুখ বাড়িয়ে বলছেন,কি ব্যাপার সাদি এনি প্রবলেম? আমি বলি, না না কিছু না। এইতো আসছি আমরা ছাদে।

এরা স্বামী স্ত্রী ছাদের বিরাট এক দোলনায় বসে চা খাচ্ছেন। মেঘলা কে পরিচয় করিয়ে দিতেই, আপু উঠে এসে ওকে একটা চেয়ারে বসিয়ে বলছেন,
আপনারা ভাইবোনকে তো আল্লাহ সব রুপ দিয়ে দিয়েছেন। কি নাম তোমার? নাম বলতেই ফোনে কিচেনে অর্ডার দিচ্ছেন,চা ও নাস্তা পাঠানোর জন্য। আরিয়ান বল নিয়ে খেলছে। আমি কখনো এই বাড়ির ছাদে উঠিনি। টাকা থাকলে কতো কিছু যে করা যায় !!! কি সুন্দর সুন্দর ফুল টবগুলোতে ফোটে রয়েছে। কৃত্রিম একটা ডোবার মতো তৈরি করে, তাতে পদ্ম ফোটানো হয়েছে। ওখানে বসার জায়গাটাও খুব সুন্দর। টুকটাক কথাবার্তা চলছে,
চা নাস্তাও খেলাম। এরমধ্যে আপুর বিখ্যাত ওই টোষ্টও ছিল। মেঘলা দেখলাম ওগুলো খাচ্ছে।

আরিয়ানও পার্টিতে যাবে বলে, ওদের সহকর্মী একটু দূরে নিয়ে দুধ খাওয়াচ্ছে ওকে। ভাবলাম
এখন বলে ফেলি। আমি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে আকাশ ভাইকে বলতেই বললেন, আমি খুব খুশি হয়েছি আপনি আমার কাছে এসেছেন বলে। যা খরচ লাগে,যতদিন লাগে আমি দেবো। এতো কষ্ট করে আপনারা এখানে এসেছেন, একদিন আরো অনেক দূর যাবেন। এখানে ঢোকার সময় মেঘলার ইতস্তত ভাব আমার চোখে পড়েছে। তুমি যখন এমবিবিএস ডিগ্ৰি নিয়ে, তারপর বাইরে গিয়ে হায়ার ডিগ্ৰি ঝুলিতে ভরে, দেশে এসে চুটিয়ে প্র্যাকটিস করে এরচেয়ে সুন্দর, নতুন ডিজাইনের বাসা বানাবে তখন আমরা তোমার বাসায় গিয়ে থাকবো। ঠিক না আইরিন? আপু বলছেন,হ্যা খুব
মজা হবে কিন্তু। তুমি তোমার মতো সুন্দর করে আমাকেও মেহেদী মাখিয়ে দিবে মেঘলা। আমি বেশ বুঝতে পারছি,মেঘলার এই অপ্রস্তুত ভাব কাটানোর জন্যই, তারা এসব বলছেন। অনুমতি নিয়ে আমি ও মেঘলা এবার যাবার জন্য উঠে দাড়াই।

বাসে উঠে মেঘলা বারবার বলছে, এতো ভালো কি মানুষও হয়? আমার হাত ধরে বলছে,দেখবি
ছোটভাই মা খুব খুশি হবে। বাসায় গিয়ে দেখি,
অভি গাড়ি নিয়ে উপস্থিত,এডমিশন টেষ্টৈ দুইবোন টিকে যাওয়ায় পাঁচ তারা হোটেলে সবাইকে ডিনার করাবে। মা সবকিছু জিজ্ঞেস করে জেনে বললো, আমার গলা দিয়ে এতোক্ষণ চা ও ঢুকে নাই……. যদি এরা না করে দেয় ভেবে। মালা এখন আমাকে চা দে এককাপ। অভি বলছে, তুমি যাবে না আমাদের সাথে। মা হেসে বলল, তোরা খেয়ে আসার সময় নরমাল হোটেল থেকে আমার ও মালার জন্য দুই পিস সর্ষে ইলিশ নিয়ে আসিস। তাহলেই হবে। তোরা সবাই যা, মজা করে আয়।

অভিদের গাড়ি বেশ বড়,কালো রঙের HI ACE.
আমি ও অভি সামনের সিটে বসেছি। ভেতরের দিকটা অন্ধকার বলে দেখিনি কে কে এসেছে। তবে কলকাকলিতে মুখরিত বলে বুঝা যাচ্ছে,বেশ
কয়েকজন কেই অভি জুটিয়েছে। হোটেলে পৌঁছে
পেছনের দরজা খুলে দিতেই ক্লাশ নাইনে ও টেনে পড়া ছোট চাচার দুই ছেলে,ফাহিম ভাইর ছেলে, ছোট ফুপুর দুই পিচ্চি নাতনি,অভির বড় ও মেঝ
ভাই এর ছেলে মেয়ে, দোলা, মেঘলা এবং সম্পুর্ন শ্বেতবসনা শাওন নামলো। মুখ শক্ত, কঠিন করে রেখেছে। একবারও আমার দিকে তাকায়নি।যেন
এই মুহূর্তে সাদি বলে কারো উপস্থিতি এখানে নেই। কিন্তু তাতে তো আমার খুশি হবার কথা, সেটা হচ্ছে না কেন ভাবছি। হোটেলের বিশাল করিডরে পা দিয়ে ভাবছি, তোর এক মন সাদি !!! এতো দিন জ্বালায়, জ্বালায় বলে বিরক্ত। এবার সে কথা বলছে না কেন…….. সেটা ভেবে বিরক্ত !!!

হাঁটতে হাঁটতে অভিকে বলি, তোর তো অনেক টাকা খরচ হবে রে,যে দলবল নিয়ে এসেছিস। সে এখন বলছে,আরে সাদি ভাই আমাকে বোকা পেয়েছো না কি? অফার চলছে,পার পারসন ১৫০০/ টাকা করে পড়বে। রিসিপসনে আমার পূর্ব পরিচিত একজন আছেন,যাকে বলে গিয়েছি যে পিচ্চি দুজনের টা যেন হিসেবে একজনের ধরে। আমি বলি, মানলো তোর কথা? সে বলে,হ্যা
মানলো তো। তাও ভালো মেজমামী বাসায় নেই। নয়তো শাওনকে দেখে রাখার জন্য,আরো ২/৩ জনকে সাথে দিয়ে দিতো। আমরা মোট ১২ জন এসেছি। ১১ জনের বিল দেবো। আমার ২টা বোন এতো ভালো রেজাল্ট করেছে, এটুকু তো ডিজার্ভ করে,বলো? একদিন ই তো, এতো হিসেব করে কি হবে?

মেঘলা বাচ্চাদের ভীষণ ভালবাসে। তাই গোড়া থেকে ই দেখছি, ছোট ফুপুর পিচ্চি দুটো নাতনির সাথে জুড়ে আছে। বাকি ছেলেগুলো সবাই প্রায়
সমবয়সী হওয়ায় গল্পে মজে আছে। অভি বলছে,ব্যুফে সিষ্টেম বলে যার যা ইচ্ছে প্লেটে নিয়ে খেতে পারো। শুধু পিচ্চি দুজনের খাবার আমরা কেউ তুলে দেবো। মেঘলা বলছে, আমি দেখবো ওদের সমস্যা নেই। আমি এই ধরনের হোটেলে আগে কখনো আসিনি। ঘুরে ঘুরে গোণে গোণে দেখি প্রায় ৫০ টা আইটেম আছে। আরো অনেক আসছে। যার যার প্লেট নিয়ে যাচ্ছে, গিয়ে পছন্দ মতো খাবার তুলে এনে খাচ্ছে। বিরিয়ানি,ফ্রাইড রাইস সাথে চিকেনের বেশ কিছু আইটেম প্রায় প্রত্যেকে নিল। বীফ,মাটনও আছে,যার যা রুচি তুলে নিচ্ছে। আমি বাচ্চাদের বলি, আগে সামান্য সামান্য করে নিও। খেয়ে ভালো লাগলে আরো নিবে। কেউ খাবার নষ্ট করবে না প্লিজ।

কাকতালীয় ভাবে শাওন আর আমি একসাথে ই
নিচ্ছি। আমাদের পরিবারের সবাই মাছ ভীষণ পছন্দ করি। তাই চিকেন আইটেম রেখে ব্রেডেড ফ্রাইড ফিশ নিলাম। পরের টা থেকে নেবার সময় শাওনকে বলি, সারাবছর তো চিকেনের সাথে চলিস। আজ ফ্রাইড ফিশ খেয়ে দেখ, অনেক মজা পাবি। নিস্পলক তাকিয়ে বললো, আমি কাঁটা বেছে খেতে পারি না। আমি বলি, দূর বোকা এটায় কোনো কাঁটা নেই। এবার ঝটপট ৩ পিস ফ্রাইড ফিশ নিয়ে বললো, তুমি বললে আমি বিষও চোখ বুজে খেতে পারবো,আর এটাতো ফিশ। বললাম, আগে এতো মুড মেরে চুপ করে ছিলি কেন? ভেজা গলায় উত্তর আসছে, আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে আর কখনো কথা বলবো না………..পারলাম না তো,সেই কথা বলেই ফেললাম। তাই তিতলী আমাকে বলে, বেশি বেশি আহ্লাদ করিস বলেই তোকে মানুষ বলে গণ্য করে না। একদম কথা বলা বন্ধ করে দে। আমি বলি, তাহলে তাই হোক। বাচ্চাদের মতো এবার বলছে, আমি বলেছি না কি? ওটা তো তিতলী বলেছে।

হেসে বললাম,আজ একদম সাদা ড্রেস পরে এলি
যে? যৌবনে যোগিনী সাজার ইচ্ছে হয়েছে না কি?
হেসে বললো, তোমার ভালো লাগে না? তাহলে,
আর পরবো না। আমি বলি, আমার ভালো লাগা না লাগা দিয়ে তুই কাপড় পরবি না কি? চোখে সীমাহীন মিনতি নিয়ে মুখে বলছে,প্লিজ আজকে অন্তত উল্টৌপাল্টা কথা বলো না। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে,এই দিনটি আমার জন্য স্মরণীয় দিন হবে।

খাবার নিয়ে এসে খালি দুটো পাশাপাশি চেয়ারে বসেছি। অভি দোলাকে মেডিকেলের নানা জ্ঞান
দিচ্ছে। মেঘলা যথারীতি বাচ্চা মেয়েগুলোর সাথে
গল্পে মশগুল। আমি চুপচাপ খাচ্ছি, সামান্য নিয়ে ছিলাম শেষ হতে আবার আনতে গেলাম। মুস্কিল হলো বেশির ভাগ ডিশ ই আমার অচেনা। কাঁচা মাংসের মতো মনে হয় দেখে একটা স্কিপ করতে গেছি, পেছনে শুনি আরে এটা তো অনেক মজার ডিশ। খেয়ে দেখো,বীফ এন্ড চিকেন কোল্ড কাট্।
আমি বলি,নারে দেখতে কাঁচা লাগছে। বলছে,
খেয়ে তো দেখো। তোমার কথায় আমিও তো ফিশ
খেলাম। আমি বলি,কারণ তুই জানতি আমি ভুল বলব না। এবার বলছে, সেটা তো তোমার সমস্যা, তুমি আমাকে ভরসা করতে পারো না। সবসময় তুচ্ছতাচ্ছিল্য করো। আমি এবার হেসে বলি, বাবা
রে বাবা নিচ্ছি তোর কোল্ড কাট্, খাচ্ছি আমি।একে একে চিজ প্লেটার্স,থাই ফুড স্যালাড নিলাম।
আমি দেখি আমি যা নিচ্ছি শাওনও তাই নিচ্ছে।
তাকিয়ে কিছু বলবো এর আগেই বলছে, তোমার পছন্দ মতো আমি এগুলো নিচ্ছি। ডেজার্ট আইটেম গুলো নেবার সময় কিন্তু আমি আমার পছন্দ মতো তোমাকে দেবো। কথা বাড়ালেই দেখি বাড়বে, তাই টেবিলে গিয়ে চুপচাপ বসলাম।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here