#জলছবি
#পার্ট_১২
#কাজী_সানজিদা_আফরিন_মারজিয়া
.
ফয়সাল আর ইশান মন্দিরের কাছে এসে দেখে শ্রেয়া নোলকের হাত ধরে রেখে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মেয়েটার হাত, হাতে রাখা ফোন মৃদু কাঁপছে।
পাশেই দ্বীপ, সৃজন, লুবনা, নোলক সকলেই বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আছে। এবং ফয়সাল আর ইশান দেখতে পেলো বাকিরাও তাদের মতোই কোনো কারণ জানে না।
সবাই কারণ জানতে চাইলেও কিছুই বলছে না মেয়েটা। শ্রেয়ার থেকে উত্তর না পেয়ে সবাই নোলকের দিকে চায়। কারণ শ্রেয়ার কাছে নোলকই ছিলো এবং আছে। নোলক নিজেও হতভম্ব হয়ে গেল। থেমে থেমে বলল,
“ও-ওর বাসা থেকে কল এলো। তারপর ওপাশ থেকে কি বলল জানি না। ও কেঁদে ফেললো! এরপর থেকে কিছুই বলছে না, শুধু কাঁদছে। আমি বুঝতে পারছি না।”
আদ্র নম্রতার সহিত জিজ্ঞেস করে,
“এক্সকিউজ মি? কি সমস্যা শেয়ার করুন। কিছু হয়েছে কি? না বললে তো কেউ বুঝতে পারছি না।”
সবার প্রশ্নের মুখে শ্রেয়ার দুঃখ যেন আরো বেড়ে গেলো। নোলক শ্রেয়ার কাঁধে হাত রেখে বলে,
“কিছু বল দোস্ত!”
শ্রেয়া নোলকের কমল আশ্বাস পেয়ে তাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপাতে ফুঁপাতে বলে, “দোস্ত দা-দাদা বলল, বাবাই স্ট্রোক করেছে। হসপিটাল নেয়া হচ্ছে। দোস্ত আমি আমার বাসায় যাবো। প্লিজ বাবাইর কাছে নিয়ে চল।”
বলেই কান্নায় ভেঙে পড়লো। নোলক হতভম্ব। সবাই চমকালো। ব্যাপারটা যে শ্রেয়ার জন্য সত্যি খুব দুঃখজনক তা বুঝতে পেরে সবাই চুপ হয়ে গেলো।
দ্বীপ সবাইকে শান্ত থাকতে বলে। তারপর শান্তনার স্বরে বলে,
“আচ্ছা যেও। চলো, নিচে নামি আগে। চিন্তা করো না শ্রেয়া। ঈশ্বর আছেন তো। আগেই ভেঙে পড়লে চলবে?”
ফেরার আগে শ্রেয়া উল্টো ঘুরে। শিব মূর্তির কাছে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে কিছু বলল বোধহয়। তারপর দ্রুত পা চালিয়ে নিচে নামতে লাগে। নিষাদ হাত ধরে আটকে বলে, “এমন করলে কিছু হবে? আস্তে নাম।”
বলা শেষে শ্রেয়াকে ধরে ধরে নিচে নামে। বাকিরাও আগেপিছে আস্তেধীরে নামে। সবার চোখেমুখে দুশ্চিন্তার ছাপ।
পাহার থেকে নেমে শ্রেয়া জানালো সে এখান থেকেই ডিরেক্ট কুমিল্লা যাবে। দ্বীপ বলে, আচ্ছা ঠিক আছে কুমিল্লা বেশি দূর না।
কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই শ্রেয়া আবার বলে,
“কুমিল্লা না, ঢাকা যাবো। বাবাইকে ঢাকা নেয়া হয়েছে। আমি ঢাকা ফিরবো প্লিজ।”
তখন বাঁধলো বিপাক। কারন সবার সব কিছু দ্বীপদের বাসায়। হুট করেই কি ফেরা যায়?
শ্রেয়া জানালো তার কিছু লাগবে না, সে শুধু তার বাবাই কেই দেখতে চায়। নোলক বলল,
“আমার আর শ্রেয়ার সব থাকুক এখানে। আমরা দুজন ফিরে যাই!”
শেষমেশ না পেরে শ্রেয়ার পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঠিক হলো অর্ধেক শ্রেয়ার সঙ্গে আগে যাবে বাকিরা পরে যাবে জিনিসপত্র নিয়ে।
এই সিদ্ধান্তেই সবাই সহমত হলো।
সেই অনুপাতেই ঠিক হলো নোলক, লুবনা আর সৃজন যাবে শ্রেয়ার সঙ্গে। প্রথমে ফয়সাল যেতে চাইলেও সৃজন জানায় ওর সঙ্গে শ্রেয়ার পরিবারের ভালো পরিচিতি আছে। ও থাকলে সুবিধা হবে। তাছাড়া সবাই ফেরত চলে এলে শ্রীতমা ফিরতি এসে কাউকে না দেখতে পেলে খারাপ লাগতে পারে। তাই সব ভেবে ফয়সালও আর বাঁধ সাধে না।
গাড়ি ছাড়ার আগ মুহূর্তে আদ্র গাড়িতে উঠে বসে জানালো, সেও যাবে। কেউ আর নিষেধ করে না। গাড়ি ঢাকার উদ্দেশ্যে রৌয়ানা হলো।
ভয়, আতংক আর দুশ্চিন্তা নিয়ে। শহরের বুকে অন্ধকার নেমে এসেছে ততক্ষণে। সেই অন্ধকার ভেদ করেই শো শো করে এগিয়ে চলে গাড়ি।
নোলক শ্রেয়াকে জড়িয়ে রেখে শান্তনা দিচ্ছিলো, সঙ্গে বাকিরাও। মেয়েটা কিছুতেই যেন মানছে না। নোলক বারবার বুঝাচ্ছে,
“কিচ্ছু হবে না দোস্ত, কিচ্ছু হবে না। আল্লাহর উপর একটু ভরসা রাখ। সৃষ্টিকর্তা যা করেন মঙ্গের জন্যই করেন, দোস্ত।”
শ্রেয়া সাহস পায়-কি-পায়-না কে জানে, তবে কিছুক্ষণের জন্য শান্ত হয়। আদ্র ড্রাইভারের পাশ বসে বার বার পেছন ফিরে দেখে। সে সবচাইতে অবাক হয় বিপদেও নোলকের শক্ত মনোভাব দেখে। বাচ্চাবাচ্চা এলোমেলো স্বভাবের মানুষগুলো বোধহয় এমনই হয়। ক্ষেত্র বিশেষে এরাই খুব গোছালো বুদ্ধিমত্তার পরিচয় বহন করে। সামলে নিতে জানে সব। দুশ্চিন্তায় পাহার সম ভরসা দিতে জানে। আদ্র নোলককে পানির বোতল দিয়ে বলে,
“তাকে এই পানিটা পান করান তাকে।”
নোলক বোতলটা নেয়। দুর্বল কন্ঠে বলে,
“ধন্যবাদ।”
লুবনা শ্রেয়ার অন্যপাশে বসে ওর হাত ধরে রাখে।
সৃজন শ্রেয়ার দা’ভাইকে টেক্সট করে সব ডিটেইল’স জেনে নেয়। যা জানতে পারে তার সারসংক্ষেপ এই যে, শ্রেয়ার বাবা সকালে আকস্মিক স্ট্রোক করে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে কুমিল্লা হসপিটাল নেয়া হয়েছিলো। সেখানে রাখেনি। সেখানে থেকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়েছে। ঢাকার পি.জি’র আইসিইউতে আছে।
শ্রেয়াকে প্রথমে জানাতে চায়নি। কিন্তু বাবার অবস্থা ক্রিটিকাল দেখে জানাতে বাধ্য হয়েছে।
সৃজন জানায়, তারা আসছে।
কাঁদতে কাঁদতে শ্রেয়া এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে। মেয়েটার ঘুমন্ত মুখ দেখে নোলকের বুকটা হু হু করে উঠে। শ্রেয়ার কপালের চন্দনের ফোঁটার নিচে বাঁকা হয়ে যাওয়া লাল টিপটা খুলে সোজা করে ঠিক মাঝ বরাবর দেয়। কপালের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দেয়। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
আদ্র লুকিং-গ্লাসে দেখে সব।
নোলক শ্রেয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবে। লুবনা জিজ্ঞেস করে,
“কি ভাবছিস?”
নোলক এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়ায়। যার অর্থ ‘কিছু না!’ আদতে সে ভাবছে অনেক কিছুই।
বন্ধুমহলের সবাই জানে, শ্রেয়া তার বাপের নেউটা। তাই হয়তো বাবা অসুস্থতায় পাগল প্রায় দশা। নোলক মন খুলে দোয়া করে খারাপ কিছু যেন না হয়। বাবাকে যে অত্যান্ত বেশি ভালোবাসে মেয়েটা।
নোলকের মন বিষাদে ভোরে আসে। সে তো জানেই না সে কাকে বেশি ভালোবাসে। বাবাকে নাকি মাকে! কাউওকেই তো ভাল মতো মনে নেই! ব্যবধান করবে কি করে? মা-বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত মেয়েটা বোঝে বাবা-মায়ের ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার মর্ম। কিংবা তারা না থাকার বেদনা। আদ্র পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে নোলকের চোখ ভেদ করে অশ্রুকণা গাল গড়িয়ে পড়ছে। পড়ছে ঠিক বলা যায় না, কারণ পড়ার আগেই তা আবার মুছে নিচ্ছে ঝটপট। কেউ দেখে ফেলুক তা বোধহয় চায় না। এ যেন অন্য নোলক! আদ্র দরদ ভরা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“নোলক? আপনি ঠিক আছেন?”
নোলক নিজেকে সামলে নেয়ার আপ্রাণ চেষ্টাকরে বলে,
“হ্যা! আমি ঠিক আছি, একদম ঠিক আছি।”
আদ্র তার টিস্যুর প্যাকেটটা এগিয়ে দেয়। নোলক একবার আদ্র’র দিকে চায়। কি করুন সেই চাহনি! আদ্র’র মায়া হয়। খুব মায়া। শ্রেয়ার দুঃখ যেন সবার দুঃখ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে বের করে আনছে।
দুঃখ বুঝি এমনই। ছোঁয়াচে ভাইরাসের ন্যায় অল্প সময়ে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে সকলকে গ্রাস করে ফেলে!
টিস্যুর প্যাকেটটা নিয়ে নোলক কমল কন্ঠে বলে,
“থ্যাংক ইউ। এসিটা একটু বাড়িয়ে দিতে বলুন। শ্রেয়া ঘামছে।”
আদ্র ড্রাইভারকে তাই বলে। পেছন থেকে সৃজন জিজ্ঞেস করে,
“শ্রেয়া কি ঘুমাচ্ছে দোস্ত?”
“হুম।”
এরপর কিছুক্ষণ সব চুপ, সবাই চুপ। ওরা যখন কুমিল্লা ক্রস করলো তখন সৃজনের ফোন বেজে উঠলো। সবাই যেন কেঁপে উঠে। কি এক আতঙ্ক আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে সকলকে। সৃজন বলে,
“শ্রেয়ার দাদার ফোন।”
নোলক বলে,
“রিসিভ কর।”
কাঁপাকাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করে সৃজন। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে কান্না মিশ্রিত আহাজারি ভেসে আসে। ওপাশ থেকে যা বলে তা শুনে বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠে। সৃজনের মুখ দেখেই বাকিরা অনুমান করে ফেলে, ভালো কোনো খবর নয়!
সৃজন কিছু বলতে যাবে তার আগেই শ্রেয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সৃজন সঙ্গে সঙ্গে ফোন কেটে দেয়। শ্রেয়া অস্থির হয়ে সকলকে জিজ্ঞেস করে,
“কার সাথে কথা বলছিলি? বাসা থেকে কল করেছে কেউ? কি-কিছু বলেছে বাবাইকে নিয়ে?”
সৃজন মিছে হাসার ভান করে মিথ্যে শান্তনা দিয়ে বলে,
“হ্যাঁ হ্যাঁ। এই তো কিছুক্ষণ আগেই কথা বললাম। টেনশন করতে নিষেধ করলো। কিছু হবে না দোস্ত। তুই অযথা এভাবে ভেঙে পড়িস না। তুই না আংকেলের স্ট্রং গার্ল? তুই এভাবে ভেঙে পড়লে কি উনি শান্তি পাবেন বল? কষ্ট পাবে না?”
শ্রেয়া মাথা নেড়ে সায় দেয়। অশ্রুমাখা কন্ঠে বলে,
“কিন্তু দাদা কাঁদছিল তখন!”
নোলক শ্রেয়াকে নিজের বাহুতে আগলে নিয়ে বলে,
“কাঁদবেই তো বোকা। তুই কাঁদছিস না? কিন্তু কেঁদে কিছু হবে? কাঁদবি না একদমই, প্রার্থনা কর। অনেক অনেক প্রার্থনা কর।”
এরপর আবার নিরবতা। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট, ঘন্টা কেটে যায় কিন্তু নিরবতা কাটে না। আদ্রর কাছ থেকে ইশান আর দ্বীপ সব খোঁজখবর নেয়। ইশান জানায় সেও রাতে ঢাকা ব্যাক করবে। আদ্র কিছুই বলে না। তাকে যেন কিসে পোড়াচ্ছে। পেছন ফিরে শ্রেয়াকে দেখে, নোলককে দেখে তারপর যেন কি ভাবে! ফোন বের করে কপাল কুঁচকে একটা ছবি দেখে। এক যুবক এবং তার পাশে দাঁড়ান হাস্যজ্জ্বল রমনী! চাপা রাগ, ক্ষোভ, অভিমানে মাথা ধরে যায়। অভিমানের আড়ালেই এই যুবক-যুবতির জন্য সদ্য জন্ম নেয়া মায়া চাপা পড়ে যায়। গ্যালারী থেকে বেড়িয়ে ফোন পকেটে রেখে চোখ বুজে সিটে শরীর এলিয়ে দেয়।
এই পৃথীবিতে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন বৈচিত্র্যময় দুঃখ, কষ্ট, আক্ষেপ, অপ্রাপ্তির গল্পে আঁকা এই জীবন।
গাড়ি যখন হসপিটালের সামনে এসে থামলো তখন ঘড়ির কাটা রাত এগারোটা পেরিয়ে গিয়েছে। সবাই গাড়ি থেকে নামার পর সবার শেষে শ্রেয়ার হাত ধরে গাড়ি থেকে নামালো নোলক। আদ্র কাউন্টার থেকে সব ডিটেইল’স জেনে নিয়ে উপরে গেলো। শ্রেয়াকে দেখতে পেয়েই ওর পিসি জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললো। পাশে তাকিয়ে দেখলো তার দাদারাও কাঁদছে।
মেয়েটা যা বুঝার তখনই বুঝে ফেললো। তবুও জিজ্ঞেস করলো,
“বাবাই ঠিক আছে তো, না পিসি?”
পিসি কিছু না বলে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। হসপিটালে আছে তার দুই দাদা, পিসি, আর জেঠু! সবাই-ই কাঁদছে।
শ্রেয়া তার দুই দাদাকে জিজ্ঞেস করে, জেঠুকে জিজ্ঞেস করে সবাই নিশ্চুপ। শ্রেয়া তার প্রশ্নের জবাব পায় তখন, যখন নার্স এসে বলে,’আপনারা চাইলে এখন ডেড বডি নিয়ে যেতে পারবেন!’
এরপর? এরপর একজন বাপভক্ত মেয়ের আহাজারি ছুঁয়ে বেড়ায় নিষ্ঠুর হসপিটালের আনাচকানাচ!
লুবনা, সৃজন শ্রেয়াকে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যার্থ হয়। যার ব্যথা কেবল সে-ই বোঝে। মিছে শান্তনার বাণী কি মন মানে?
রাত বাড়ছে, চিরন্তন সত্যর ভার বয়ে বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এলো। শ্রেয়ার দাদারা হসপিটালের সকল ফর্মালিটি শেষ করে।
তারপর তারা ডেডবডি নিয়ে এক গাড়িতে যায় অন্য গাড়িতে বহু কষ্টে শ্রেয়াকে নিয়ে বাকিরা উঠে। শ্রেয়া পরপর দুইবার সেন্সলেস হয়। শ্রেয়ার কষ্ট বাকিদেরও স্পর্শ করে। খুব গভীর ভাবেই করে। লুবনা এবং সৃজন তাদের বাড়িতে সব জানায়।
গাড়ি ছাড়ার আগে আদ্র হঠাৎ-ই লক্ষ্য করে নোলক নেই! তার স্পষ্ট মনে আছে নোলকই শ্রেয়াকে ধরে উপরে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু নামার সময় দেখেনি! এখন গাড়িতেও নেই!
আদ্র চারপাশে চোখ বুলিয়েও যখন দেখতে পেলো না তখন বেশ অবাক হলো। এই রাতে মেয়েটা গেলো কই? সৃজনকে বলার পর গাড়ি থামিয়ে ওরা দুজন পুনরায় হসপিটালের ভেতর আসে। সৃজন নোলককে ফোন করলেও ফোন রিসিভ হয় না। হসপিটালের উপর-নিচ খুঁজেও যখন পায় না তখন রাগ হয়। আবার এও ভাবে, কোনো সমস্যা হলো না তো? রাত বারোটা পেরিয়ে গিয়েছে।
তখনই সৃজনের ফোনে মেসেজ আসে। মেসেজ পড়ে সৃজন জানায়, “নোলক আমাদের চলে যেতে বলছে। ও হসপিটালে নেই।”
তারপর আবার বিস্ময় নিয়ে বলে,
“আশ্চর্য! না বলে, হুট করে বাসায় চলে গেলো মেয়েটা? এমন তো করে না কখনো!”
আদ্র একটা দীর্ঘশ্বাঃস ছেড়ে বলে,
“আসুন, ফেরা যাক। গাড়ি ছাড়া উচিত। নয়তো শ্রেয়াকে সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।”
তারা ফিরে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। এবং সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি চলতেও শুরু করে।
আদ্র সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে একদৃষ্টিতে বাহিরে তাকিয়ে থাকে। এই প্রথম নোলকের কোনো কর্মকান্ডে আদ্র’র রাগ কিংবা বিরক্তি কোনোটাই লাগলো না। কারন আর কেউ না বুঝলেও সে বুঝতে পেরেছে, নোলকের এই হুট করে চলে যাওয়া কেন!
কিছু মানুষ থাকে, যারা পাগলামি করে, ভুলভাল কাজ করে, হাসিতে মাতিয়ে রাখতে জানে, খুশি ছড়িয়ে দিতে জানে, জানে না কেবল তাদের দুঃখ, কষ্ট, খারাপলাগাটা অন্যদের দেখাতে! নোলক তাদেরই একজন। তাই হয়তো শেষ বেলায় আর শ্রেয়া পাশে থাকতে পারলো না। তার দুঃখগুলোও যে প্রকাশ পেয়ে যাবে! যা সে একেবারেই চায় না।
আদ্র শ্রেয়াকে দেখে। মেয়েটা ক্ষণে ক্ষণে কেঁদে উঠছে। এই মেয়েটা এই মূহুর্তে পৃথীবির দুঃখে জর্জরিত মানুষদের একজন!….(চলবে)