#চাঁদ_সুন্দরী
সুরমা
পর্ব : ১৩
পরাগ আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আকাশ জুঁইয়ের দিকে চেয়ে আছে।আকাশের চোখের পলক পড়ছিল না।বিষয়টা পরাগের একদম ভালো লাগছিল না।উল্টে রাগ লাগছিল।ইচ্ছে করছিল নিজের চুল গুলো নিজেই টেনে ছিড়ে ফেলতে।আয়েশা বেগম এগিয়ে গেলেন জুঁইয়ের দিকে।জুঁইয়ের গালে হাত দিয়ে বললেন,,,,,
-বাহ!আজতো আমার মেয়েকে চিনায় যাচ্ছে না।কি সুন্দর লাগছে তোকে।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের চোখ থেকে একটু কাজল নিয়ে জুঁইয়ের চুলের নিচে লাগিয়ে দিয়ে বললেন,,,,
-মাশআল্লাহ,আমার মেয়ের যেন নজর না লাগে।আয়েশা বেগম জুঁইয়ের কপালে একটা চুমু খেলেন।আকাশ পরাগের কাছে গিয়ে বলে,,,,
-দোস,এই পরীটা কে??আকাশের কথা গুলো পরাগের কাছে অসহ্য লাগছিল।পরাগ কিছু না বলে চুপ করে থাকে।আকাশ আবার বলে,,,,
-কি হলো কিছু বলছিস না কেন?এই মেয়েটা কে?তোদের পরিচিত মনে হলো।
-আমাদের বাসায় থাকে।আম্মু ওকে নিজের মেয়ে মনে করে।মনে করে বললে ভুল হবে।মেয়েই বলে।
-ওহহ আচ্ছা।মেয়েটা কিন্তু অনেক সুন্দর।আকাশ ঘুরে ফিরে জুঁইকেই দেখছিল।আর পরাগের চোখ ছিল আকাশের উপর।আকাশ সুযোগ খুঁজছিল জুঁইয়ের সাথে কথা বলতে।কিন্তু জুঁইকে একা পাওয়া যাচ্ছে না।জুঁই সব সময় আনিকার সাথে লেগে আছে।পরাগের খুবই ইচ্ছে করছে জুঁইকে ডেকে এনে বলতে,’তুমি যেদিন সাজবে সেদিন অন্য কোনো ছেলের সামনে যাবে না।সবাই লোভাতুর ভাবে তোমাকে দেখে।আমি এটা সহ্য করতে পারি না।সেজে আমার কাছে এসো।আমি তোমাকে দেখবো।তোমাকে দেখার অধিকার শুধু আমার।কথা গুলো চিন্তা করে পরাগ থমকে গেলো।জুঁই যদি উল্টে বলে,আমাকে দেখার অধিকারতো আপনারও নেই,তখন সে কি বলবে???এই বিষয়টা নিয়ে জুঁইয়ের সাথে কথা বলা উচিত।জুঁইকে বলা উচিত,’আমি তোমাকে ভালোবাসি।I love u.আজকেই বলতে হবে।ভালোবাসা মনের মাঝে গোপন রাখলে যখন তখন পাখি খাঁচা থেকে উড়ে যাবে।পরাগ জুঁইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখে জুঁই আনিকার সাথে দাঁড়িয়ে আছে।পরাগ জুঁইয়ের কাছে যেতে নিলে কোথায় থেকে রিয়া উড়ে এসে পরাগকে জড়িয়ে ধরে।পরাগ অবাক।এতএত লোকজনের সামনে এভাবে কেউ কোনো ছেলেকে জড়িয়ে ধরতে পারে?পরাগ চারপাশে নজর দিয়ে দেখে সবার চোখ তাদের দিকে।এমনকি জুঁইও কেমন অদ্ভুত ভাবে তাকে দেখছে।পরাগ রিয়াকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে,,,,,,
-কি হচ্ছে কি রিয়া?এখানে লোকজন আছে।কি মনে করবে সবাই।
-মনে করার কি আছে?কয়দিন পর তো আমাদের বিয়ে।দেখুক যে দেখতে চায়।রিয়ার কাণ্ড দেখে জুঁই হতভম্ব।এই মেয়ের একটুকুও লজ্জাশরম নেই।এতো লোকজনের সামনে একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরা যায়?জুঁই আনিকাকে জিজ্ঞেস করে,,,,,,
-এই মেয়েটা কে?
-ভাইয়ার গার্ল ফ্রেন্ড। ভাইয়া মনে হয় বিয়ে করবে।আমার আর আম্মুর একটুকুও পছন্দ না এই মেয়েকে। ড্রামাকুইন।নেকামি দেখলে রাগে গা জ্বলে যায়।পরাগ রিয়াকে ছেড়ে আসতে নিলে রিয়া পরাগের হাত ধরে বলে,,,
-বাবু,কোথায় যাচ্ছো?কেক কাটবে না?
-আসতেছি।তুমি সবার সাথে এনজয় করো।রিয়ার এসব আজগুবি কাজের জন্য পরাগ রিয়াকে ইনভাইট করে নি।কিন্তু রিয়া সেই এসে উপস্থিত। এদিকে পরাগকে বাবু ডাকার কারণে জুঁই হাসতে হাসতে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে।জুঁইকে এভাবে হাসতে দেখে আনিকা বলে,,,,
-এতো হাসছো কেন?
-হাসবো না?তোমার ভাই নাকি বাবু।তোমার ভাইকে বিয়ে করালে এতদিনে বাবুর বাবা থাকতো।আর এই মেয়ে এতো বড় ছেলেকে বাবু ডাকছে।কথাগুলো বলে জুঁই আবার হাসতে শুরু করে দেয়।আনিকা বলে,,,,,
-এখনকার গার্ল ফ্রেন্ড বয় ফ্রেন্ডরা একে অপরকে বাবু বলেই ডাকে।ছোট বড় এসব বিচার করে না।এদিকে আকাশ জুঁইকে এতো হাসতে দেখে বেশ ভালো লাগছে।তার ইচ্ছে করছে জুঁইয়ের সাথে পরিচিত হতে।আকাশ গিয়ে জুঁইয়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,,,,
-হাই,আমি আকাশ।পরাগের বন্ধু।আকাশের কথা শোনে আনিকা বলে,,,
-ভাইয়া,আমরা পরাগ ভাইয়ার ছোট বোন।
-হু,জানি তো।তা তোমরা কি নিয়ে এতো হাসা হাসি করছো?আমাদের বলো আমরাও একটু হাসি।
-তেমন কোনো বিষয় না ভাইয়া।পরাগ এদিকে এসে দেখে আনিকা জুঁই আকাশের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।এটা দেখে রাগে পরাগের মাথার চুল গুলো দাঁড়িয়ে যায়।ইচ্ছে করছে এই মুহূর্তে সব কিছু ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে।রাগে পরাগের চোখে রক্ত জমা হয়ে যায়।পরাগ জুঁইদের দিকে যেতে নিলে আয়েশা বেগম এসে পরাগের সামনে দাঁড়ায়।
-কোথায় যাচ্ছিস?
-কোথাও না।কেন?
-অনুষ্ঠানে সবাই উপস্থিত।এবার চল কেকটা কাটবি।আয়েশা বেগম পরাগের হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে আসে।সবাই এসে পরাগকে ঘিরে ধরে। এবার কেক কাটার পালা।পরাগের এক পাশে আয়েশা বেগম আনিকা আর আনিকার সাথে জুঁই।অপর পাশে রিয়া আর পরাগের বন্ধুরা।আকাশের অনুষ্ঠানের থেকে জুঁইয়ের দিকে নজর ছিল বেশি।যদিও এই বিষয়টা পরাগের চোখ এড়ায় নি।পরাগের এতো রাগ উঠেছিল।ইচ্ছে করছিল এক্ষণি আকাশকে মেরে লাশ বানিয়ে ফেলতে।কিন্তু আজ একটা অনুষ্ঠান সাথে আকাশ তার বন্ধু।তাই চাইলেও কিছু করতে পারছে না।পরাগ কেক কাটে।যত তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান শেষ হবে ততই মঙ্গল। আকাশরাও নিজেদের বাসায় চলে যাবে।পরাগ কেক কাটছে আর সবাই একসাথে বলেছে,”হেপি বার্থডে পরাগ”।পরাগ প্রথম কেকটা আয়েশা বেগমকে খাইয়ে দেয়।আয়েশা বেগমও পরাগকে একটু কেক খাইয়ে দেয়।তারপর পরাগ আনিকাকে,তারপর জুঁইকে কেক খাইয়ে দেয়।জুঁইকে খাইয়ে দিতে দেখে রিয়ার রাগে গা জ্বলে যায়।রিয়া আসার পর থেকেই খেয়াল করছে পরাগ জুইয়ের দিকে একটু বেশি মনোযোগী। তাকে কোনো পাত্তা দিচ্ছে না।উল্টে এই মেয়েটার দিকে নজর দিচ্ছে।যা রিয়ার একদম পছন্দ হচ্ছে না।কেক কাটার পর যে যার মতো আনন্দ করছে।ফুল স্পিডে গান বাজছে।অনেকেই গানের তালে তালে নাচছে।পরাগের চোখ শুধু জুঁইকে খুঁজছে।আনিকা সবার সাথে আনন্দ করছে।কিন্তু জুঁই পাশে নেই।পরাগ আকাশকেও কোথাও দেখতে পাচ্ছে না।এবার ভেতরে ভেতরে পরাগের ভয় লাগছিল।পরাগ এদিক সেদিক জুঁইকে খুঁজতে থাকে।হঠাৎ পরাগের সামনে রিয়া এসে বলে,,,,,
-জানু,,,,আজ তুমি আমার দিকে একটুকুও নজর দিচ্ছো না।তোমার কি হয়েছে বলোতো?
-রিয়া প্লীজ,তোমার এই আজাইরা বকবক শোনতে আমার একদম ভালো লাগছে না।তুমি যাও।সবার সাথে গিয়ে এনজয় করো।
-তুমি এটা আমাকে বলতে পারলে?আমি আজাইরা বকবক করি?
-প্লীজ,এমনি আমার মেজাজ ঠিক নেই।কি থেকে কি বলবো ঠিক নেই।তুমি যাও।তোমার সাথে পরে কথা বলবো।
-কি হয়েছে তোমার?আমাকে বলো।
-কিছু হয়নি।
-তাহলে এমন ছটফট করছো কেন?
-রিয়া তুমি থাকো আমি আমার রুম থেকে আসছি।বলে পরাগ উপরে চলে আসে।পরাগ সোজা আনিকার রুমে চলে যায়।দরজার কাছে যেতেই শুনে আকাশ জুঁইয়ের সাথে কথা বলছে।পরাগ দরজার পর্দা সরিয়ে দেখে জুঁই আর আকাশ হেসে হেসে কথা বলছে।পরাগের এবার সত্যি সত্যি রাগ লাগছে।পরাগ একটু ভেতরে ডুকে গিয়ে বলে,,,,,
-আকাশ, তুই এখানে কি করছিস??পরাগের কথা শোনে আকাশ জুঁই দুজনেই চমকে উঠে।আকাশ পরাগের কাছে এসে বলে,,,,,
-ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।দেখি তোর বোন এখানে।তাই একটু কথা বলতে চলে আসলাম।
-তুই নিচে যা।সবাই তোকে খোঁজছে।
-ওও আচ্ছা।ঠিক আছে।তুই যা আমি আসছি।
-তুই আগে যা।জুঁইয়ের সাথে আমার একটু কথা আছে।পরাগের কথা শোনে আকাশ জুইয়ের ককাছ থেকে হাত নেড়ে বিদায় নিয়ে নিচে চলে আসে।জুঁই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।পরাগ রাগে গজগজ করতে থাকে।কিছুতেই রাগটা দূর করতে পারছে না।হঠাৎ করে গিয়ে পরাগ জুঁইয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দেয়।চড় খেয়ে জুঁই নিচে পড়ে যায়।চড়টা এতো জোরে লাগে যে,জুঁইয়ের মনে হচ্ছে এই ঘরটা ঘুরছে।চারপাশের সব কিছু কেমন ডাবল ডাবল লাগছে।পরাগ গিয়ে জুঁইয়ের হাত ধরে টেনে তুলে বলে,,,,
-এই মেয়ে,তুমি আকাশের সাথে কথা বলছিলে কেন?আবার হেসে হেসে কথা বলা হচ্ছিল?আমার সাথে কোনোদিন এভাবে কথা বলেছো?স্টুপিড, বেয়াদব মেয়ে।পরাগের কথার কোনো আগা মাথাই জুঁই বুঝতে পারছে না।এখনো তার চোখে সব কিছু ঝাপসা লাগছে।মাথা চিনচিন করছে।পরাগের কথা গুলো তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
চলবে——–