#চাঁদ_সুন্দরী

সুরমা
পর্ব : ১২

এভাবে কেটে যায় কয়েক মাস।এতো দিন এই বাড়িতে থাকার পরও পরাগ আর জুঁইয়ের মাঝে তেমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়নি।জুঁই তেমন পরাগের সামনে যায় না।মাঝে মাঝে দুই তিনদিনেও পরাগ জুঁইয়ের দেখা পায় না।তখন পরাগ চটপট করতে থাকে।তার কেন এমন হয় পরাগ বুঝতে পারে না।তবে পরাগ জানে,জুঁইকে দেখলে তার দিনটাই ভালো কাটে।
আজ পরাগের জন্মদিন।বাড়িতে চলছে তোরজোড় আয়োজন। সারা বাড়ি ডেকোরেশন করা হয়েছে।সন্ধ্যার দিকে সকল আত্মীয়স্বজন চলে আসবে।এই দিনটায় সবাই আসে।নাচ,গান আনন্দ সব হয়।পরাগ এখন বাসায় নেই।সে কোনো একটা কাজে বাইরে গিয়েছে।আয়েশা বেগম ছেলের জন্য পায়েস রাঁধছেন। পায়েস ছাড়া জন্মদিন ঠিক জন্মদিন মনে হয়না।এদিকে আনিকা গাল ফুলিয়ে বসে আছে।বাসায় আজ একটা অনুষ্ঠান আর তার পরার মতো কোনো জামা সিলেক্ট করতে পারছে না।এদের কাণ্ড দেখে জুঁই হতভম্ব।এতো বড় ছেলের জন্মদিন নাকি আজ।তাও আবার অনুষ্ঠান করে আয়োজন করা হচ্ছে।এমন ঘটনা আগে কোথাও দেখেনি।আল্লাহ জানে এই রঙের দুনিয়ায় আর কতো রকম ঘটনা ঘটতে দেখা হবে তাকে।আসলে বড়লোকদের সব বড় বড় কাণ্ড।আনিকার মুড অফ দেখে জুঁই বলে,,,,,
-এখানে এমন মন খারাপ করে বসে আছো কেন?
-আমি আজ কোন ড্রেস পরবো?আমার একটাও ড্রেস নাই।আনিকার কথা শোনে জুঁইয়ের চোখ কপালে।জুঁই দেখে আনিকার কম হলেও ১০০ জামা আছে আলমারিতে।আর বিছানায়ও ২০/৫০ টা ড্রেস নিয়ে বসে আছে।তাও বলছে জামা নেই।জুঁই বিছানা থেকে কতোগুলো জামা হাতে নিয়ে বলে,,,
-এগুলো কার জামা?
-আমার
-তাহলে বললে যে তোমার জামা নেই।
-নেই তো।
-তাহলে এগুলো কি?
-আরে এগুলো আগেও ইউজ করেছি।সব গুলো দিয়েই পিক তুলা।নতুন একটাও নেই।আমি কি পরবো আজ?আনিকার কথা গুলো জুঁইয়ের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।এই মাইয়া এসব কি বলছে।নিশ্চয় মাথায় প্রবলেম হয়েছে।আনিকা রুম থেকে বের হয়ে আয়েশা বেগমের সামনে দাঁড়ায়।সাথে জুঁইও যায়।আনিকা বলে,,,,
-আম্মু,আমি আজ কি পরবো?আমার একটাও জামা নেই।আয়েশা বেগম কাজ করতে করতে বললেন,,,,
-পরাগ তোদের দুজনের জন্য লেহেঙ্গা কিনেছে।আয়েশা বেগমের কথা শোনে আনিকা খুশিতে লাফিয়ে উঠে।সে দৌঁড়ে গিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে।আয়েশা বেগম বলেন,,,,
-আহা,রান্না করছি তো।কি করছিস এসব।যাতো এখান থেকে।
-আম্মু থ্যাংকইউ।
-আমি কিছু করি নি।যা করার পরাগ করেছে।তোদের জামা কাপড় লাগবে আমার মনে ছিল না।পরাগ আনার পরেই আমার মনে হলো।এখন যা,সাজগোজ কর গিয়ে।সন্ধ্যা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হবে।
-ঠিক আছে।আনিকা জুঁইকে নিয়ে নিজের রুমে ডুকে লেহেঙ্গা গুলো খুঁজতে থাকে।কিন্তু কোথাও লেহেঙ্গা পায় নি।আনিকা জুঁইকে বলে,,,
-তুমি গিয়ে দেখো তো ভাইয়ার রুমে কিনা।
-আমি যাবো?
-হু,তুমি যাবে।
-তুমি যাও।আমি এই রুমে দেখি।
-তুমি যাও তো।ভাইয়ার রুমে গিয়ে দেখো।না পেলে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করো।জুঁই না চাইতেও আনিকা জুঁইকে জোর করে পরাগের রুমে পাঠায়।জুঁই গিয়ে দেখে পরাগ রুমে নাই।এই বাড়িতে আসার পর আজ প্রথম জুঁই পরাগের বেডরুমে প্রবেশ করছে।পরাগ কি বলে কে জানে।ভয়ে জুঁইয়ের শরীর কাঁপছিল।রুমটা খুবই সুন্দর করে গোছানো। জিনিসপত্র সব কিছু ঝলমল করছে।জুঁই জানে পরাগ সৌখিন মানুষ।কিন্তু আজ তার রুমে প্রবেশ করে বুঝতে পারলো পরাগ রুচিশীলও বটে।জুঁই এই গোছানো রুমে কোনো লেহেঙ্গা দেখতে পাচ্ছে না।আর পরাগের অনুমতি ছাড়া পরাগের আলমারিতে হাত দিতে জুঁইয়ের ইচ্ছে করছে না।
-তুমি আমার রুমে কি করছো?পরাগের কথা শোনে জুঁই চমকে উঠে।পেছনে ফিরে দেখে পরাগ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।পরাগকে দেখেই জুঁই মাথা নিচু করে ফেলে।ভয়ে ভয়ে বলে
-আ,মি আ,স,লে
-হু,তুমি।আমার রুমে কি??
-ভা,ই,য়া আ,নি,কা পা,ঠি,য়ে,ছে আ,মা,কে
-ওয়েট ওয়েট,কি বললে?ভাইয়া???আমি তোমার ভাইয়া?এটা তোমাকে কে বললো???
-মামামানেনেেেেে
-তোমাকে কে বলেছে আমাকে ভাইয়া ডাকতে?পরাগের কথা শোনে জুঁই ঘাবড়ে যায়।
-কেউ বলে নি।আমি নিজেই ডাকছি।
-কোন দুঃখে তুমি আমাকে ভাইয়া ডাকছো?হুম??
-মানে,আপনার মাকে মামনি ডাকি,আনিকাকে বোন বলি।তাহলে তো আপনি,,,,,
-ওয়েট ওয়েট,তোমার ভাই হওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই।বুঝছো?আর কখনও আমাকে ভাইয়া ডাকবে না।
-ভাইয়া না ডাকলে কি ডাকবো?
-যা খুশি ডাকো।কিন্তু কখনও ভাইয়া ডাকবে না।
-ভাইয়া,,,
-জাস্ট সেটআপ।আমি না করছি না আমাকে ভাইয়া ডাকতে!আমি তোর কোন জন্মের ভাই হই?! আর একবার যদি এই কথাটা শোনি,কষে একটা থাপ্পড় খাবে বেয়াদব মেয়ে।
-ভ্যাঁ ভ্যাঁ।পরাগ এতো জোর ধমক দেয় যে জুঁই ভয়ে কান্না করে দেয়।জুঁইয়ের কান্না দেখে পরাগ আবুল হয়ে যায়।মাথাটা নিচু করে দুই হাত দিয়ে চোখ কচলাতে থাকে।পরাগ কিছুক্ষণ জুঁইয়ের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।পরাগ বলে,,,,,
-এই মেয়ে তুমি কাঁদছো কেন?
-আপনি আমাকে বকেছেন।আমি কিচ্ছু করি নি।ভ্যাঁ ভ্যাঁ।আমি মামনির কাছে যাবো।কথা গুলো বলে যেই জুঁই রুম থেকে বের হতে যাবে এমনি পরাগ জুঁইয়ের দুটি হাত ধরে ফেলে।
-আম্মুর কাছে যাচ্ছো কেন?এসব গিয়ে বলবে নাকি?
-হু
-হু মানে।সব কথা আম্মুকে বলতে হবে?আচ্ছা দাঁড়াও সরি।আমি তোমাকে কিছু বলি নি।জুঁই নাক টানতে টানতে বলে,,,,
-বলেছেন।আমাকে বেয়াদব বলেছেন।একটা জোরে ধমক দিয়েছেন।
-তার জন্যতো সরি বলেছি।সরি বলার পর মনে করতে হয় কিছু বলে নি।মানে আমি কিছু বলি নি।
-আপনি এতো মিথ্যাবাদী কেন?একটু আগেই তো বলেছেন।আমি আনিকার লেহেঙ্গা নিতে এসেছি তখনেই তো বলেছেন।বড়দের মিথ্যা কথা বলতে নাই।পাপ হয়।পরাগ গিয়ে নিজের আলমারি থেকে লেহেঙ্গা গুলো বের করে জুঁইয়ের হাতে দিয়ে বলে,,,,
-নে বইন,তোদের লেহেঙ্গা গুলো নিয়ে গিয়ে সাজগোজ কর।আমি যা বলেছি ভুল বলেছি।আর কখনও বলবো না।পরাগের কথা শেষ হতেই জুঁই বলে,,,,,
-আমি আপনার বইন লাগি না।
-আমার কোনো ইচ্ছা নাই তোকে আমার বোন বানানোর।আমার বোন আছে।এটা কথার কথা বললাম।
-কথার কথাও বলবেন না।আপনার মতো ভাই আমার চাই না। আমার মামনি আছে,আমার আনিকা আছে।
-এএএএ এই বাড়িতে আমি তোমাকে এনেছি।আর এখন আমারেই দাম নাই।এই হলো পাবলিম।কোনো দিন উপকারীর উপকার স্বীকার করবে না।যাও যাও।তুমি থাকো তোমার মামনি আর আনিকাকে নিয়ে।জুঁই লেহেঙ্গা গুলো নিয়ে আনিকার রুমে যায়।দুইটা লেহেঙ্গাই ওরেঞ্জ কালার।খুবই গর্জিয়াছ। আনিকা বলে,,,,,
-ওয়াও।ভাইয়ার পছন্দের তুলনা হয় না।কি সুন্দর লেহেঙ্গা। তাই না?
-হু
-তোমার কি মন খারাপ?
-না,
-তাহলে যাও,লেহেঙ্গাটা পরে ফেলো।অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে।আজ আনিকা আর জুঁই দুজনেই খুব সাজগোজ করে।দুজনকেই বেশ সুন্দর লাগছে।জুঁই এমনিতেই পরীর মতো।আজ সেজে একদম অন্যরকম হয়ে গেছে।

সন্ধ্যার দিকে সারা বাড়িতে হৈচৈ পড়ে যায়।পরাগের সব বন্ধুরা আত্মীয়স্বজন চলে এসেছে।একটু পরেই কেক কাটা হবে।পরাগ কালো পাঞ্জাবি পরেছে।পরাগকে অসম্ভব হেন্ডসাম লাগছে।পরাগ চারদিক হেন্ডেল করার চেষ্টা করছে।কার কি প্রয়োজন সব দিক খেয়াল করছে সে।অফিসের কলিগরাও আছে।পরাগ তার বন্ধুদের সাথে কথা বলছে।কথার ফাকে সিঁড়িতে চোখ যেতেই পরাগ ভূত দেখার মতো চোখ গুলো বড় করে তাকিয়ে থাকে।জুঁই আসছে।আজ তার বর্ণনা দেওয়ার মতো ভাষা নাই।বিশ্বসুন্দরী কিলোপেক্টর যদি আজ বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো জুঁইকে দেখে নিজেকে তুচ্ছ মনে করতো।পরাগকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবির,নিলয়,আকাশ সবাই পরাগের দৃষ্টি ফলো করে।জুঁইকে দেখে সবাই হা হয়ে যায়।আকাশ বলে,,,
-আমি কি ঠিক দেখছি?এ কি কোন মানুষ নাকি কোনো পরী চলে এসেছে????

চলবে——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here