#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-2)
লেখনীতে–ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
“তোমাকে কিন্তু আজ আর ছোট লাগছেনা মেহজা।”
কথাটা মেহজার কানে বাজছে বারবার। পেছনে থাকা ইয়াজিদের দিকে তাঁকিয়ে সে কিছুটা অবাক হলো। ইয়াজিদ তো গভীর মনযোগ দিয়ে ফোন চালাচ্ছে। দেখে মনে হচ্ছেনা এমন কিছু ইয়াজিদ বলেছে। নাকি ওর ভ্রম! এইতো, তখনও সাজার সময় বারবার ভাবছিল ইয়াজিদ তাকে যদি কখনো এমন সাজে দেখতো তাহলে কি বলতো তাকে সুন্দর লাগছে, ভালো লাগছে! কিন্তু এমন কিছুই তো বলল না যা বলেছে তা কিছুটা অন্যরকমই বটে। ইয়াজিদ এমন কিছুই বলেনি তাকে। কিন্তু স্পষ্ট শুনেছে ও। মেহজার এখন খুবই অস্বস্তি লাগছে। কেমন হাসফাস করছে। স্থির থাকতে পারছেনা। ইয়াজিদ আড়চোখে মেহজাকেই দেখে চলেছে। সে বুঝছেনা সামান্য একটা কথায় এতটা ঘাবড়ানোর কি আছে! মেহজা হুট করেই ইয়াজিদের দিকে তাঁকালো তাতে তাদের চোখে চোখ পড়ে। কি একটা অবস্থা! কল্পনাতে তো ইয়াজিদ সাথে থাকলে সে প্রশান্তি অনুভব করে কিন্তু বাস্তবে! বাস্তবে তো তার সামনে দাঁড়ানোই যায়না। এমন কেন হয়! ইয়াজিদ হুট করেই হাসে। মৃদু হাসি দেয় মেহজার দিকে তাঁকিয়ে তাতে মেহজা ঘেমে নেয়ে একাকার। হাত কাঁপছে পা কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে। খুব বেশিই কাঁপছে। সত্যিই মেহজা কাঁপতে কাঁপতে ব্যালেন্স হারিয়ে সিটকে গিয়ে লিফ্টের সাথে লেপ্টে যায়। ইয়াজিদ মেহজার এসব কান্ডে হতভম্ব। মেয়েটা এমন করছে কেন সেটাই ভেবে পাচ্ছেনা। লিফ্ট নিচে নেমে গেছে। বের হওয়ার আগে ইয়াজিদ মেহজাকে একবার জিজ্ঞেস করে
“তুমি ঠিক আছো?”
মেহজা কোনো মতে কাঁপতে কাঁপতেই জবাব দেয়
“জ জ জ্বী।”
ইয়াজিদ আরো ভড়কে গেল। সামান্য একটা প্রশ্নও করতে পারবেনা বোধ হয়। কিছু হলেই কাঁপাকাঁপি শুরু করে দেয়। ইয়াজিদ আর অপেক্ষা করলোনা। বেরিয়ে পড়ে সেখান থেকে। তার এক সহকর্মী রাজনীতিবীদের আজ বিয়ে। সেখানেই যাচ্ছে সে। কালো কোর্টটা গা থেকে খুলে ফেলে গাড়িতে বসে। এটুকুতেই সে ভিজে গেছে। এসিটা অন করে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালু দেয়। ইশ অনেক দেরি হয়ে গেছে। সামনে তো আরো জ্যাম আছেই।
মেহজার এখন আর কোথাও যেতে ইচ্ছা করছেনা কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই। গাড়ি নিয়ে তার ভাইয়া আর রাফসান অপেক্ষা করছে তার জন্য। তার সেজেগুজে আসতেই অনেক দেরি হয়েছে। আরো দেরি হলে ওরা ওকে চিবিয়ে খাবে।
🍁🍁🍁🍁🍁
“ভাইয়া আমি ভেতরে গেলাম তোমরা গাড়ি পার্ক করে আসো।” (গাড়ি থেকে নেমে আঁচল ঠিক করতে করতে মেহজা বলে)
“হুম যা এই রাফসান! তুইও যা।”
“উহু আমি তোমার সাথে যাবো। একসাথে এন্ট্রি নিব সবাই তাঁকিয়ে আমাদের দুজনকে দেখবে। একই হেয়ার স্টাইল একই রকম ড্রেসআপ। ভাবটাই আলাদা।”
রাফসানের কথা শুনে রাদিফ হাসে আর মেহজা মুখ ভেঙিয়ে বলে
“ইশ! তার আবার ভাব।”
“এই তুই চুপ কর। চলো ভাইয়া এমনিতেও এই দাদীর জন্য আমাদের অনেক লেট হয়েছে।”
“রাফসান! ভদ্রভাবে কথা বল। দিনদিন বড় হচ্ছিস আক্কেল জ্ঞান সব হারাচ্ছিস।”
রাদিফের মৃদু ধমকে রাফসান দমে যায়।
মেহজা কমিউনিটি সেন্টারটির দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। ভালোই সাজিয়েছে। অনেক সুন্দর সুন্দর ছবি তোলা যাবে। আহা! ভেবেই মনটা চাঙ্গা হয়ে গেল। ভেতরে ঢুকতে নিলে পুরো একটি টিম ওর পাশ দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় এতগুলো ছেলের ভিড়ে ও নিজের খেই হাঁরিয়ে ফেলে। তখনিই একটা বলিষ্ঠ হাত ওকে আকড়ে ধরে। তারপর সবাইকে সরিয়ে দিয়ে ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকে। ইয়াজিদের বাহু বন্ধনে নিজেকে দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে যায় মেহজা। ইয়াজিদ গম্ভীর হয়ে আছে। যেমনটা সে সবসময় থাকে।
ভেতরে এসে মেহজাকে একপাশে দাঁড় করিয়ে ইয়াজিদ বলে
“রাদিফ আর রাফসানকেও তো দেখেছি। তাদের সাথেই আসতে পারতে এত তাড়াহুড়োর কি আছে!”
“আসলে আমি….
“তুমি তো খুব চটজলদিই সব করে থাকো তাইতো!”
মেহজার মনে হলো ইয়াজিদ তাকে টিপ্পনি কাটছে। সে কিছুটা রেগে বলল
“আপনার এত কথা বলতে হবেনা। উপকার করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ। আমাকে এভাবে কথা শুনাতে পারেন না আপনি। আপনার সেই অধিকার …..”
“নেই তো! তোমার থেকে আমি বয়সে বড়। সো রেসপেক্ট দিয়ে কথা বলবে। তোমার আসলেই কমনসেন্সের বড্ড অভাব। চুপচাপ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো যতক্ষণ না রাদিফরা আসছে। তোমার আব্বু আম্মু কোথায়?”
“তারাও এইখানেই আছে।” (কিছুটা ক্ষোভের স্বরে)
“দেখছি না তো। আচ্ছা দেখো আশেপাশে কেউ আছে পরিচিত! থাকলে ডাকো। বাচ্চা একটা মেয়েকে ওরা কীভাবে ছাঁড়ে একা!” (কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করে)
কথাটা মেহজার গায়ে লাগে। সবসময় এমন বাচ্চা বাচ্চা করে কেন লোকটা! আরে তার সমান কত মেয়ে তো বিয়ে করে বাচ্চা পয়দা করে বসে আছে। তাকে কেন বাচ্চা মনে হবে! আজ বিয়ে দিলে কাল সে একটা বাচ্চার জন্ম দিতে পারবে আর তাকে বারবার বাচ্চা বলছে! রেগে গিয়ে যতসব উদ্ভট কথা বলছে মেহজা।
শেষ কথাটা একটু জরে ছিল বলে ইয়াজিদ শুনে ফেলে। এই মেয়ের চিন্তা এতদূর! ভাবতেই কেমন একটা লাগছে ইয়াজিদের। তবে হাসিও পাচ্ছে কারণ তার বাচ্চা কথাটা মেহজার উপর খুব বেশিই প্রভাব ফেলছে।
“আরে মেহজা যে! কখন এসেছো?”
পাশ ফিরে সিনানকে দেখে মেহজা হালকা হাসে। সিনান মেহজার মামাতো ভাইয়ের খুব কাছের বন্ধু। নিজামের সাথে কয়েকবার ওদের আগের বাসাতেও গিয়েছে। লোকটি ভালোই খুব মজার মানুষ।
“এইতো কিছুক্ষণ হলো।”
“আজকে তো চেনাই যাচ্ছিল না তোমাকে। শাড়ি পড়ে এসেছো এক্কেবারে পার্ফেক্ট।”
“পার্ফেক্ট!”
“মানে বাকিরাও পড়েছে তুমি না পড়লে কেমন একটা হতো না!”
“হ্যাঁ তা তো হতোই। আমার নিজেরই নিজেকে ভিনগ্রহের প্রাণী মনে হতো।”
“ইনি তোমার কে হয় মেহজা?”
ইয়াজিদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগেই সিনান বলে উঠে
“স্পেশাল একজন। থাকেনা এমন! খুব স্পেশাল।”
বলেই হাসতে থাকে মেহজাও হেসে দেয়। মেহজা এটা সিনানের নিছক মজা ভেবে উড়িয়ে দেয়। ইয়াজিদ অবাক হয়। মেহজার লাইফে স্পেশাল একজন আছে তাহলে। কিন্তু ইয়াজিদের পেছনে পড়ে ছিল কেন ? আজকালকার ট্রেন্ড একটা তো আছেই। ঐ ক্রাশ টাশ কিছু একটা ছিল হয়তো। যাক এতো মাথা ঘামানোর কিছু নেই। সে বলল
“আচ্ছা তাহলে ওকে দেখে রাখুন। আমি আসছি।”
“আপনি কে বলুন তো!”
“ইরফান, ইরফান ইয়াজিদ।”
“ওহ। আমি সিনান শেখ। নাইস টু মিট ইউ। তবে আপনি মেহজা…..
“প্রতিবেশি।”
“আচ্ছা আচ্ছা।”
ইয়াজিদ চলে যায়। মেহজার খুব খারাপ লাগে আবার ভালোও লাগে। কিছুসময় হলেও ইয়াজিদ যে তাকে নিয়ে ভেবেছে তাতেই সে খুশি। পাশ ফিরে দেখে সিনান তার দিকে তাকিয়ে আছে বদৌলতে সে একটি মিষ্টি হাসি দেয়। দূর থেকে মেহজার দিকে তাঁকিয়ে থাকা ইয়াজিদ হালকা স্বরে বলে
“প্রিটি স্মাইল!”
#চলবে।
প্রথম পর্ব।
https://m.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3152876521607745/