#গল্প
বৃষ্টি_ভেজা_অরণ্য
#পর্ব_৩
-শাতিল রাফিয়া
বেশ কয়েকদিন পর। আমি ধরেই নিয়েছি ইন্টারভিউতে আমাকে ডাকবে না। এপ্লাই করার লাস্ট ডেট অনেক আগেই পাড় হয়ে গিয়েছে। ধুর! এই পদ্ধতিও কাজ করল না! এতদিন রেকর্ডিং শুনে শুনে নিজের মন আর কানকে শান্ত করেছি যদিও তা অতি দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল আমার জন্য!
বসে বসে ভাবছি এবার আর দেরি নয়। কথা বলে বলে মানুষটার সাথে ভাব জমাতে হবে। কি কথা বললে সহজে পাখি ধরা দেবে ভাবছি! একেবারেই অফিসে চলে যাব নাকি সেটা ভাবতে ভাবতেই মোবাইলে দেখি ইমেইল এসেছে। ইমেইল খুলে আমি খুশিতে চিৎকার করে উঠি! আমাকে ইন্টারভিউর জন্য সিলেক্ট করেছে! আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে সবাই ছুটে আসে।
আমি কোনমতে বললাম- একটা অফিসে ইন্টারভিউর জন্য ডেকেছে।
বাবা জিজ্ঞেস করলেন- এতে এত পুলকিত কেন তুমি? এখন তো ডাকবেই সিভি দিলে।
– না মানে নাম করা কোম্পানি তো!
মা বললেন – এত তাড়াতাড়ি চাকরির জন্য ট্রাই না করে আগে মাস্টার্স করে নিলেই পারতি।
সে যাই হোক, এতদিন পরে আমার স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। যাকে এতদিন কাছ থেকে দেখার জন্য ভেতরে ভেতরে ফেটে পড়ছিলাম তাকে দেখার সুযোগ এসেছে। আমি এবার যে করেই হোক তার সাথে দেখা করবই। আর যেহেতু তার ডিপার্টমেন্টেই আমার ইন্টারভিউ আর সে বেশ বড় পোস্টে আছে নিশ্চয়ই তার সাথে আমার দেখা হবেই। সে থাকবেই থাকবে।
আমার দিন আর কাটছিল না। অবশেষে সেই দিন এল যার জন্য আমি ছটফট করেছি! ইন্টারভিউ দেওয়া আসলে কিছু না, অরণ্যের সাথে দেখা করাটাই তো আমার উদ্দেশ্য!
অফিসের কাছে যেতেই আমার বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করতে লাগল! একটা প্রশ্ন মাথায় আসল ‘দেখা হবে তো?’ আমি তাড়াতাড়ি সেই চিন্তাটা সরিয়ে দিলাম। দেখা না করে আজ আমি বাসায় যাব না। অফিসের ভেতরে ঢুকে রিসিপশনে বললাম ইন্টারভিউয়ের কথা। আমাকে তিন তলায় যেতে বলল। অফিসটা খুব সুন্দর! স্বাভাবিক। তিন তলায় উঠতে উঠতে ভাবতে লাগলাম মানুষটার নামটা অনেক সুন্দর, কণ্ঠ তো অদ্ভুত ভাল লাগার! তাই মনে হচ্ছে সে দেখতে মোটামুটি হবে। অবশ্য চেহারার ক্ষেত্রে কখনোই কোন হিসাব মিলে না। তিনতলায় যেতে একজন মেয়ে এগিয়ে এসে আমার নাম পরিচয় জিজ্ঞেস করে, কম্পিউটারে মিলিয়ে নিয়ে ওয়েটিং রুমে পাঠিয়ে দিল। সেখানে দেখি আমার মত আরো দশ-বারো জন। আমি বসেই আবার উঠে পড়লাম। আমি তো বসে থাকতে আসিনি! ওয়েটিং রুম থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক দেখছি। আশেপাশে বেশ কয়েকজন আছে। এর মধ্যে কে অরণ্য আমি কি করে বুঝব?
হঠাৎ একজনের দিকে আমার চোখ আটকে গেল! তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম! এত সুন্দর ছেলে আমি আগে দ্বিতীয়টি দেখিনি! ইংলিশে ‘টল, ডার্ক অ্যান্ড হ্যান্ডসাম’ বলে একটা কথা আছে। তাকে দেখে আমার সেই কথাটাই মাথায় এল! রাজপুত্রের মত এই ছেলেটি কে? তবে সে যে অরণ্য নয় সেটা হান্ড্রেড পার্সেন্ট শিওর! তার কারণ সে কোন ফর্মাল ড্রেসে আসেনি। নর্মাল জিন্স আর টি-শার্ট পরে এসেছে। এত বড় অফিসার তো আর যা খুশি তাই পরে আসবে না! এই প্রিন্স চার্মিংকে বাদ দিয়ে অন্যদিকে চোখ ফেরালাম। অরণ্য কোনটা তুমি? কোথায় তুমি? দেখতে দেখতে আরেকটা মানুষকে মনে মনে অরণ্য বলে ভেবে ফেলছিলাম ঠিক তক্ষুনি একজন এসে আমার নাম ধরে ডাকে।
আমি ওয়েটিংরুমের দিকে তাকালে সে বাইরে বেরিয়ে এসে বলে- যান ভেতরে।
– আ..আমি?
– হুমম।
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি ইন্টারভিউ দেওয়ার উছিলায় এসেছি! আর এসেছি যখন ভেতরে তো ঢুকতে হবেই।
চারজন বসে আছেন। তিনজন বয়ষ্ক আর একজন ইয়াং। সেই ইয়াং মানুষটাই অরণ্য আহমেদ নয় তো? সে যেহেতু ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ম্যানেজার, ইন্টারভিউ বোর্ডে থাকাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আর কথাটা মনে হতেই আমার সারা শরীরে একটা অদ্ভুত শিহরণ হল!
আমি জিজ্ঞেস করলাম- মে আই কাম ইন?
একজন বললেন – প্লিজ।
মানুষটাকে চিনতে পারলাম। সেদিন প্রজেক্ট ‘সার্চ অরণ্য’ করার সময় উনার ছবি দেখেছিলাম ইন্টারনেটে। উনি এই কোম্পানির মালিক- ইমতিয়াজ হোসেন।
ভেতরে ঢুকে সালাম দিলাম।
ইমতিয়াজ হোসেন সালামের উত্তর নিয়ে বললেন – বসুন।
আমি বসার পর অন্য একজন আমার হাত থেকে ফাইলগুলো নিয়ে দেখতে থাকলেন। আমি এদিকে ভাবছি এই মানুষটিই কি অরণ্য? মনে হয় সেই হবে! কিন্তু সে তো একবারও কথা বলছে না। সে কথা বললেই তো আমি তার জাদুকরী কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারতাম! ছেলেটা দেখতে খারাপ নয়। তবে বেশ ফর্সা। আমার এত ফর্সা ছেলে আবার ভাল লাগে না। তবে এই যদি অরণ্য হয় তাহলে আজ থেকে আমার ফর্সা ছেলেও ভাল লাগে!
ইমতিয়াজ হোসেন বললেন – বাহ! আপনার নামটা তো বেশ কাব্যিক! বৃষ্টিলেখা!
আমি হেসে ‘থ্যাঙ্কিউ’ বললাম।
কয়েকটা সাধারণ কথাবার্তার পর আমাকে ইন্টারভিউ রিলেটেড প্রশ্ন শুরু করলেন তারা।
আমি আসলে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। আমার মাথায় তো এই ছেলেটি অরণ্য কি না সেটা ঘুরছে! অথচ সে একটি কথাও বলছে না। মাথা নিচু করে একটা কাগজে কি কি যেন লিখছে আর চেক করছে! একটাবার, মাত্র একটাবার যদি কথা বলত!
আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর পারলাম। কিছু পারলাম না। কিছু বেসিক নলেজ দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলাম। ঠিকঠাক মনোযোগ দিতে পারলে হয়তো আরও কিছু পারতাম!
একসময় শুনলাম একজন বললেন – ওকে থ্যাংক ইউ বৃষ্টিলেখা। আমরা দরকার হলে আপনার সাথে যোগাযোগ করব।
শেষ তো বুঝলাম! কিন্তু আমি তো জানতে পারলাম না এই মানুষটার পরিচয়! সে যদি অরণ্য না হয় তাহলে অরণ্য কোথায়? আমি তো তাকে খুঁজে বের না করে যাব না!
আমি ফাইল নিয়ে বের হওয়ার আগে ইমতিয়াজ হোসেন আস্তে আস্তে সেই ইয়াং ছেলেটিকে কি যেন বললেন।
তার কথা শুনে মনে হল সে ‘অ’ দিয়ে কোন একটা নাম উচ্চারণ করেছে! আমি চমকে উঠলাম! অরণ্য বলেননি তো? ইমতিয়াজ হোসেনের কথা শুনে মানুষটি মাথা নেড়ে আমার আগেই বেরিয়ে গেল। আমিও তাড়াতাড়ি করে ‘থ্যাংক ইউ’ বলে ফাইলপত্র নিয়ে বের হয়ে আসলাম!
বের হয়ে ওই মানুষটাকে দেখলাম একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কয়েকজন তাকিয়ে কি যেন বলছে! কি করব আমি এখন? গিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করব অরণ্য কে? নাকি রিসিপশনে জিজ্ঞেস করব? রিসিপশনে জিজ্ঞেস করলে আমাকে বলবে? যদি জিজ্ঞেস করে কি দরকার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে নাকি তখন?
আমি হঠাৎই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। যা হয় হবে। সেই ইয়াং ছেলেটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানে আরও অনেকেই দাঁড়িয়ে ছিল। সকালের সেই প্রিন্স চার্মিং এর মত দেখতে মানুষটাও আছে। থাকুক। আমি পায়ে পায়ে এগিয়ে গেলাম।
সেই ইয়াং মানুষটার একটু কাছাকাছি গিয়ে আস্তে কিন্তু শোনা যায় এমন গলায় বললাম- মিস্টার অরণ্য!
আমার প্ল্যানটা ছিল আমি ডাকলে সে অরণ্য হলে ঘুরে তাকাবে। আর না হলে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই কিছু জিজ্ঞেস করবে, ভাগ্য ভাল থাকলে অরণ্য কোথায় সেটা কেউ বলেও দিতে পারে। আর কেউ যদি রেসপন্স না করে আমি তাহলে অন্যখানে খুঁজে দেখতে পারব!
আমার প্ল্যান কাজ করল! কিন্তু সেটার ফল যে এরকম হবে তা আমি সুস্বপ্নেও কল্পনা করিনি!
আমি ‘মিস্টার অরণ্য’ বলে ডাক দেয়ার পর সেই ইয়াং মানুষের কোন প্রতিক্রিয়া হল না! কিন্তু..কিন্তু আমার পেছনে থেকে সেই কণ্ঠ শুনলাম – জ্বি বলুন!
আমি তড়িৎ গতিতে ঘুরে তাকিয়ে দেখি সকালের সেই রাজপুত্রের মত দেখতে ছেলেটা আমার দিকে কৌতুহল নিয়ে তাকিয়ে হাসিমুখে বলছে- আমি অরণ্য। কিছু বলবেন? কোন দরকার ছিল?
আমি আরেকটু হলে হার্ট অ্যাটাক করে, মাথা ঘুরিয়ে পড়েই যাচ্ছিলাম! এও কি সম্ভব? এই এত সুন্দর মানুষটা অরণ্য! হায়! আমার ভাগ্য কি এতই ভাল! আহা!
আমি কিছু বলার আগেই অন্য একটা মেয়ে এসে বলে- স্যার আপনি আজকে ছুটি নিয়েও অফিসে এসেছেন? তাহলে ছুটি নিলেন কেন?
– আর বলবেন না সোনিয়া! এই তিন-চারদিন ধরে ইন্টারভিউ নিতে নিতে টায়ার্ড! তাই আজকে স্যারকে বলেছি অর্জুন সাহেবকে দায়িত্ব দিতে আর আমার ছুটি!
অরণ্য হাত দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডের সেই ইয়াং মানুষটাকে দেখায়!
সোনিয়া হাসতে হাসতে বলল- অর্জুন স্যারের গলা ভাঙা! কথাই বেরোচ্ছে না!
অরণ্য বলে- গতকাল ঠিকই বেরোচ্ছিল! নিশ্চয়ই রাতে বৌদির সাথে ঝগড়া করে ভেঙে গেছে!
অরণ্য হাসে! ইশশ! কি সুন্দর হাসি! আমি তার হাসি দেখতে দেখতে একপা, দুইপা করে পিছিয়ে আসি।
অর্জুন সাহেবকে দেখলাম অরণ্যদের কাছে গিয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে!
অরণ্য বলে- কিন্তু বাসায় বসে বোর হচ্ছিলাম! তাই একবারে ক্যাজুয়াল ড্রেসে চলে এসেছি!
আমি এদিকে নিচে নেমে যাই। হঠাৎই আমার খুব কান্না পাচ্ছে! কেন পাচ্ছে জানি না! সাথে রাগও উঠছে নিজের ওপর! আমি চাইলে পড়াশোনা করে আরেকটু ভাল করে ইন্টারভিউ দিতে পারতাম! আমাকে এমন কোন কঠিন প্রশ্ন করা হয়নি! পড়লেই পারতাম! কিন্তু অরণ্যকে দেখার নেশায় আমি এতটাই বুঁদ হয়ে ছিলাম যে ইন্টারভিউ দিয়ে জব পেলে সারাক্ষণ যে অরণ্যের কাছাকাছি থাকতে পারব সেই ব্যাপারটাই মাথায় আসেনি!
বের হয়ে দুলাভাই আর নিশার অনেকগুলো মিসডকল দেখতে পেলাম। আমি কারও ফোন ব্যাক করলাম না! পুরো মনটা বিতৃষ্ণায় ভরে গেছে! বারবার অরণ্যের আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলা কথাগুলো মনে হচ্ছে! ইশশ! কোনভাবে কি একটা মিরাকল হতে পারে না? কোনভাবে কি আমি চাকরিটা পেতে পারি না? কোনভাবে?
প্রচন্ডরকম খারাপ হয়ে থাকা মনটা ভাল করার জন্য রাতে অরণ্যের নম্বরে ফোন দিলাম!
– হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!
– ভালো আছেন?
– স্যরি! কে বলছিলেন? তবে হ্যাঁ আমি ভালো আছি।
– নিশা! আমি নিশা!
ওইপাশ থেকে অরণ্য জিজ্ঞেস করে- কোন নিশা? স্যরি চিনতে পারলাম না!
আমি শান্ত গলায় বললাম- আমি কয়েকদিন আগে একবার ফোন করেছিলাম। বলেছিলাম আমি আপনাকে চিনি কিন্তু আপনি আমাকে চিনবেন না!
– হুমম.. একটু একটু মনে পড়ছে!
– আমরা কি একটু কথা বলতে পারি?
অরণ্য হেসে জিজ্ঞেস করে – প্রয়োজন না থাকলে কথা বলব কেন?
– কেন আপনি অপ্রয়োজনীয় কথা বলেন না?
অরণ্য আবার হেসে বলে- ঠিক আছে। বলুন কি বলবেন!
– আমি আজকে একটা অফিসে ইন্টারভিউ দিয়েছি!
– কংগ্রাচুলেশনস!
– চাকরিটা হবে না তো!
– না হলে না হবে! দিয়েছেন এটাই বড় কথা! আপনি তো প্রথমবার ইন্টারভিউ দিয়েছেন। প্রথমটাই লেগে যায় এরকম মানুষ খুব কম আছে!
আমি খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম- আপনি কি করে জানলেন আমি প্রথমবার ইন্টারভিউ দিয়েছি?
– আন্দাজ করলাম! আপনি যে আগ্রহ নিয়ে কথাটা বললেন তাতে মনে হল! কেন ঠিক বলিনি?
– হ্যাঁ! ঠিক বলেছেন!
– আমরা কি আজকে রাখতে পারি? আমার আগামীকাল অফিস আছে!
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম – ঠিক আছে। গুড নাইট!
ফোন রেখে আবার কাঁদলাম! আমি এত গাধা কেন? কেন? আমি সবসময় শুধু ভেবেছি অরণ্যকে দেখার কথা! তাকে দেখার পর কি করব, কি করে তার আশেপাশে থাকব সেই কথাগুলো কেন একবারও মাথায় আসেনি?
দুইদিন পর আপাদের বাসায় আমাদের দাওয়াত! আপার শ্বশুর-শাশুড়ি এসেছেন। তারা দেশের বাড়িতে তাদের বিশাল জায়গাজমি দেখাশোনা করেন। এরসাথে আপার দেবরকে দেখতে পেলাম! দুলাভাইয়ের ফুপাতো ভাই! এই লোকটাকে আমার অসহ্য লাগে! দুলাভাইয়ের মত এত ভাল একটা মানুষের ভাই কি করে এরকম চোরা টাইপের হয় আমার মাথায়ই আসে না! দুলাভাইয়ের এই ফুপাতো ভাইয়ের নাম আরিফ। সে এতদিন দেশের বাইরে ছিল। কয়েকদিনের জন্য বেড়াতে এসেছে!
আমাকে দেখেই আপা ‘বৃষ্টি’ বলে জড়িয়ে ধরলেন! কারণটা বুঝতে পারলাম না! আপার সাথে আমার গতকালই দেখা হয়েছে!
আপার দেবর আমাকে দেখে অবাক হওয়ার ভান করে বলে- ও মাই গড! বৃষ্টিলেখা! তুমি তো বড় হয়ে গেছ!
যেন সে আমাকে অনেক ছোটবেলায় দেখেছে! আপার যখন বিয়ে হয় আমি তখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি! যথেষ্ট বড় ছিলাম!
কিছুক্ষণ পর আমার কাছে সব পরিষ্কার হয়ে যায়! আজকে এখানে দাওয়াতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আপা তার দেবরের সাথে আমার বিয়ের কথা আগাতে চায়! আমার ইচ্ছা করল প্রচন্ড আক্রোশে সবকিছু ভেঙে ফেলি!
সবচেয়ে অবাক হয়ে গেলাম দুলাভাই একটাবার আমাকে জানাল না!
আমি আড়ালে তাকে ডেকে নিয়ে কঠিন গলায় বললাম – এসব কি হচ্ছে ভাইয়া? তুমি জান না আমি অন্য একজনকে ভালবাসি? আমাকে তুমি একবারও কিছু বললে না?
দুলাভাই শান্ত গলায় উত্তর দিলেন- কি করে বলতাম বল তো? এই দুইদিন তুই ফোন ধরেছিস? কতবার কল দিয়েছি মোবাইল চেক করেছিস?
আমি চুপ করে গেলাম!
এরপর বললাম – একটা মেসেজ অন্তত দিতে পারতে!
– পেয়েছিস অরণ্যকে?
– পেয়েছি!
বলে আমি কাঁদতে কাঁদতে সব খুলে বললাম!
– বৃষ্টি প্লিজ এখন কাঁদিস না! সবাই কি ভাববে বল তো? আমি দেখছি! এখানে আমি কথা আগাতে দেব না!
একটুপর আপা জোর করে আমাকে তিতুনের কাছে বসিয়ে রেখে তার দেবরকে ভেতরে ঢুকিয়ে তিতুনকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল!
আরিফ আমাকে বলে- তুমি এত বড় হয়ে গেলে কি করে বল তো?
রাগে গা রি রি করতে লাগল!
কঠিন মুখে বললাম- ঠিক সেভাবে যেভাবে আপনি একটা বুড়োলোক হয়ে গেছেন!
আরিফ থতমত খেয়ে বলে- আমাকে তোমার বুড়ো লাগে?
– এখন লাগছে! আপনি কি ফোরটি ক্রস করে ফেলেছেন?
আরিফ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে- ইউ মিন আই লুক লাইক ফোরটি প্লাস! ওএমজি! এরপর সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা বিশ্লেষণ করা শুরু করে!
বাইরে থেকে দুলাভাইয়ের গলা পেলাম!
আপাকে বললেন – এসব কি ছেলেমানুষি রূপরেখা! দরজা খোল!
ও তার মানে আপা আড়ি পেতে ছিল!
আমি বেরিয়ে গেলে আপা আমাকে জিজ্ঞেস করল- এটা একটা কাজ করলি তুই? এসব কেন বলেছিস?
– আমিও বুঝতে পারছি না তোমরা সবাই মিলে হাত ধুয়ে আমার বিয়ের পেছনে কেন পড়েছ?
– এরকম রেগে যাচ্ছিস কেন? পছন্দ আছে কোন?
আমি রেগেমেগে বললাম – আপা হাত জোর করছি। আমার বিয়ে নিয়ে এত চিন্তা তোমার না করলেও হবে! আমার লাইফ, আমার ডিসিশন!
আমি গটগট করে সেখান থেকে চলে আসি! যা হওয়ার তাই হল! আপা কেঁদেকেটে একাকার করলেন! আমি তাকে পর করে দিয়েছি এই জাতীয় কথাবার্তা শুরু করলেন! মা-বাবা আমাকেই বকা দিলেন! আমি পুরোটা সময় কঠিন মুখে বসে থাকলাম!
একটুপর আপার শাশুড়ি যখন বললেন – মা বড় হয়েছ। এখন তো বিয়ে করতে হবে.. তোমার আপা তো ভুল বলেনি..
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম – প্লিজ আমাকে নিয়ে কেউ এত ভাববেন না! প্লিজ! আমি স্যরি আমি এভাবে কথা বলছি বাট আই হ্যাভ নাথিং টু ডু! স্যরি!
বলেই আমি সবার সামনেই হাউহাউ করে কান্না করে দিলাম! সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইল।
আমার শ্বশুর জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কাঁদছ কেন?
দুলাভাই বললেন – বৃষ্টি চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি। তোর মেজাজ খারাপ বুঝতে পারছি!
আমি দুলাভাইয়ের সাথে বাসায় চলে আসলাম!
সন্ধ্যায় মা-বাবা প্রচন্ড বকাবকি করলেন! সাথে ভাইয়ার গোয়েন্দাগিরি শুরু হল!
– দেখি তোর মোবাইলটা দে তো! কি কোন বয়ফ্রেন্ড জুটেছে নাকি? এ তো ভাল লক্ষণ নয়!
– আশ্চর্য! আমার মোবাইল তোমাকে কেন দেব? এটা আমার পার্সোনাল জিনিস!
– তোর কয়েকজন বন্ধুবান্ধবের নাম বল দেখি!
ভাবী ভাইয়াকে টেনে নিয়ে গেল।
– কি শুরু করলে? ও বড় হয়েছে না এখন?
রাতে আমি আবার অরণ্যকে ফোন করলাম!
তার প্রথম কথাটা শুনে মনটা ভাল হয়ে গেল!
সে ফোন ধরেই বলে- নিশা! কেমন আছেন?
আমি আনন্দিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলাম- কি করে বুঝলেন এটা আমি?
অরণ্য তার ভুবন ভোলানো হাসি হেসে বলে- নাম্বারটা সেভ করে রেখেছি!
[চলবে]