গল্পের নামঃ #প্রণয়
#পর্বসংখ্যা_০৯
লেখনীতেঃ #ফারিহা_জান্নাত

বাড়ির সামনে পৌঁছে মারুফ পৃথিশাকে একহাতে জড়িয়ে বলল, “সাবধানে থাকবি।আর হ্যাঁ ফোন দিলে ধরবি,ঘুমাবি না।”
পৃথিশা ছোট করে মাথা নেড়ে বলল, “আচ্ছা,আপনিও সাবধানে থাকবেন।আর শুনুন আপনার কাকীর সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না প্লিজ।”
মারুফ মৃদু হেসে বলল, “আচ্ছা,এবার যা তুই তাড়াতাড়ি।”

পৃথিশা বাড়ির ভেতর চলে গেলে মারুফ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে নিজের বাড়িতে ঢুকে যায়।
পৃথিশার মা-বাবা আর মারুফের মা আগেই বাড়িতে এসে পড়েছিল।

বাড়ির ভেতর ঢুকতেই পৃথিশার ছোট চাচী মুখ বেঁকিয়ে বলে উঠলেন, “চাকরির নামো কি কি কইরা বেড়াও বাহিরে যে এতো দেড়িতে বাড়ি আসো।”
পৃথিশা তাকে সম্পূরণ উপেক্ষা করে রুমে চলে গেলো।তার ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো সে যেন উনাকে দেখতেই পায়নি।রাগে গজগজ করতে করতে ছোট চাচী রুমে চলে গেলেন।তবে যাওয়ার আগে খাবারগুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে দিলেন।

সারাদিনের ধকল সামলাতে না পেরে রুমে গিয়েই বিছানায় নেতিয়ে পড়ে রইল পৃথিশা।অলসতা কাটিয়ে কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হতে গেলো।প্রচন্ড ক্ষুধায় পেট ব্যাথা করছে।চুল মুছতে মুছতে রুম থেকে বের হতেই দেখলো খাবার টেবিলের খাবারগুলো গুছানো।সবাই আগেই খেয়ে নিয়েছে শুধু পৃথিশা বাকি ছিল।ক্লান্তিতে আর খাবার বের করলো না পৃথিশা।না খেয়েই শুয়ে পড়লো সে।
বিছানায় শুয়ার কিছুক্ষণ পরেই ফোন আসলো।আননোন নাম্বার দেখে বুঝলো মারুফ ফোন দিয়েছে। বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ফোন ধরল পৃথিশা।
ফোন ধরার সাথে সাথেই মারুফ বলে উঠলো, “আজকে কপালে কিসের কাটা দাগ ছিলো?”
সকালের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো পৃথিশা।এড়িয়ে না গিয়ে নিচু স্বরে ঘটনাটা বলে দিলো মারুফকে। সবটা শুনে মারুফ কিছুক্ষণ চুপ থাকলো।
তারপর ধীর কন্ঠে বলে উঠল, “তোর চাকরি পাওয়ার কথা শুনে আমি প্রচুর খুশি হয়েছিলাম জানিস। ”
পৃথিশা চোখ বন্ধ করে মৃদু হাসলো।কোন কথা বলল না।
মারুফ জিজ্ঞেস করলল, “খাওয়া হয়েছে?”
পৃথিশা মিনমিন করে বলল, “হুম।আপনি খেয়েছেন?
মারুফ উত্তর দিলো, ” হুম খেয়েছি।কাল সকালে ছাদে আসবি আমার চা নিয়ে।কয়টায় আসতে হবে তা তো জানিসই।এখন ঘুমিয়ে পড়।ঘুমানোর আগে জানালা ভালো মতো আটকে নিবি, আর পাশে চুল শুকানোর পর ঘুমাবি।”
ছোট করে আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিলো পৃথিশা।

রাত তিনটার দিকে ব্যাথা প্রচুর বেড়ে গেলো পৃথিশার।গ্যাস্ট্রিক আর আলসারের সমস্যার কারনে ব্যাথার ছটফট করতে লাগলো পৃথিশা।শুয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে। কাউকে যে ডাকবে সে শক্তিটাও পাচ্ছে না।কিছুক্ষণ পর অতিরিক্ত ব্যাথায় অজ্ঞান হয়ে গেল পৃথিশা।

🍁

চোখ পিটপিট করে খুলার পর পৃথিশা প্রথমেই সুমিতা বেগমকে দেখতে পেলো।তিনি পৃথিশা দিকে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে ছিলেন।আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা হসপিটাল।
পৃথিশার ডান হাতে ক্যানেলা লাগানো,সেখানে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।সুমিতা বেগমকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে তিনি কেঁদেছেন।পৃথিশা নিজের বাম হাতটা সুমিতা বেগমের হাতের উপর রাখলে তিনি ফট করে চোখ খুলে তাকান।
পৃথিশাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ব্যাস্ত হয়ে বলেন,”কি রে এখন কেমন লাগছে?পেটে ব্যাথা করছে?
পৃথিশা মৃদু স্বরে বলে, “অল্প অল্প ব্যাথা করছে।”
তারপর আবার বলে, “তুমি এখানে কি করছ?আমাকে হসপিটালে কে এনেছে?বাবা কোথায়?
সুমিতা বেগম উত্তর দেন,” শান্ত হ।মারুফই সব করেছে।ভোর দিকে আমাকে ফোন দিয়ে তোর কথা জিজ্ঞেস করেছিলো।তখন আমি তোর রুমে গিয়ে দেখি এই অবস্হা।তোর বাবাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি কিছুক্ষণ আগে।আমাকেও পাঠিয়ে দিতে চেয়েছিলল কিন্তু আমি যাইনি।”
পৃথিশা কিছু না বলে চুপ করে রইলো।তার কপালে যে এখন শনি নাচছে এটা খুব ভালোভাবেই জানে।

কিছুক্ষণ পরই দরজা ঠেলে মারুফ প্রবেশ করলো।তার হাতে ঔষুধের ব্যাগ।পৃথিশার দিকে একপলক তাকিয়ে সুমিতা বেগমকে বলল, “আন্টি আপনি বাড়িতে গিয়ে ওর জন্য স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসেন।এখন বাহিরের খাবার খেলে আরও শরীর খারাপ করবে।আসুন আমি আপনাকে রিকশায় উঠিয়ে দেই।”
সুমিতা বেগম মারুফের কথায় সায় দেয়। পৃথিশার সাথে একটা নার্স রেখে মারুফ সুমিতা বেগমকে নিয়ে চলে যায়।
মিনিটখানেক পর আবারো ফিরে এসে নার্সকে চলে যেতে বলল।পৃথিশার দিকে একবারও তাকালো না। সিঙ্গেল সোফায়টায় গা এলিয়ে দিলো সে।
অনেকক্ষণ পার হয়ে গেলো কিন্তু কেউ কোন কথা বলল না।
কান্নারত স্বরে পৃথিশা বলে উঠল, “সরি!”
মারুফ গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো, “কিসের জন্য?”
পৃথিশা মিনমিনিয়ে বল উঠল,”মিথ্যা বলার জন্য।”

মারুফ কোন কথা না বলে আবারো চোখ বন্ধ করে রইলো।কিছুক্ষণ পর কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি পৃথিশার সামনে গিয়ে বসল।অভিজ্ঞ হাতে তার চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।
পৃথিশার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল, “কান্না থামা।আমি কি বকা দিয়েছি যে কান্না করতে হবে?”
পৃথিশা কান্নামাখা গলায় বলল, “আপনি তো কথা বলছিলেন না!”
মারুফ হেসে বলল, “এজন্য কাঁদতে হবে?”

পৃথিশা কোন কথা না বলে মুখ ফুলিয়ে রইলো।মারুফ হেসে সন্তপর্ণে তাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে চুপচাপ বসে রইলো পৃথিশা।

চলবে,
আজকে দুইটা পরিক্ষা দিয়ে হাত ব্যাথায় টনটন করছে,তাই পর্বটি ছোট হলো।দুঃখিত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here